G

বাংলা গল্প 'তথ্য প্রযুক্তি' -মুহম্মদ জাফর ইকবাল

[লেখক-পরিচিতি: মুহম্মদ জাফর ইকবালের জন্ম ১৯৫২ সালে সিলেট শহরে। তার গ্রামের বাড়ি নেত্রকোনা জেলায়। তিনি ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পদার্থবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেছেন। যুক্তরাষ্ট্রে দীর্ঘ আঠারো বছর থেকে তিনি দেশে ফিরে শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে কম্পিউটার সায়েন্স অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগে যোগ দেন। তিনি শিশু-কিশোরদের জন্যে লেখালেখি করেন। বিজ্ঞান বিষয়ক লেখার জন্যে তাঁকে ২০০৪ সালে বাংলা একাডেমি সাহিত্য পুরস্কার দেওয়া হয়। তাঁর রচিত গ্রন্থের মধ্যে আমি তপু, বৃষ্টির ঠিকানা, ‘প্রোজেক্ট নেবুলা, নিঃসঙ্গ গ্রহচারী’ ‘নিতু ও তার বন্ধুরা, ক্রমিয়াম অরণ্য ও দীপু নম্বর টু’ উল্লেখযোগ্য।]

গল্পঃ
তথ্য প্রযুক্তি
বর্তমান পৃথিবীটা হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির পৃথিবী। কথাটা যে সত্যি সেটা খুব সহজেই প্রমাণ পাওয়া যায়। আজ থেকে এক যুগ আগে কারো কোনো তথ্যের প্রয়োজন হলে মানুষ বই খুলে দেখত- এখন আর কেউ সেটা করে না। যখন কারো তথ্যের প্রয়োজন হয় সে কম্পিউটারের সামনে বসে, কী-বোর্ডে দুই একটি টোকা দেয়, মাউসে কয়েকবার ক্লিক করে।

সাথে সাথে তথ্য চোখের পলকে তার কাছে চলে আসে-তথ্যটি পাশের রাস্তা থেকে এসেছে নাকি পৃথিবীর অন্য পাশ থকে এসেছে সেটা আজকাল। কেউ জানতেও চায় না। জানার প্রয়োজনও নেই। কারণ পুরো পৃথিবীটা এখন সবার হাতের মুঠোয় চলে এসেছে। এই আসাধারণ ব্যাপারটি ঘটা সম্ভব হয়েছে তথ্য প্রযুক্তির একটা বিপ্লবের কারণে। তথ্য প্রযুক্তি নামে সারা পৃথিবীতে যে বিপ্লবটি ঘটেছে তার পিছনে যে যন্ত্রটি কাজ করছে তার নাম।

ডিজিটাল কম্পিউটার। কম্পিউটারের ভেতরকার ইলেকট্রনিক প্রক্রিয়া করার জন্যে সম্ভাব্য সব সিগনাল ব্যবহার না করে সুনির্দিষ্ট কিছু সিগনাল বা ডিজিটাল সিগনাল ব্যবহার করা হয় বলে এর নাম ডিজিটাল কম্পিউটার। আমাদের বর্তমান পৃথিবী এমন একটা পর্যায়ে পৌঁছেছে যে, এখন খুব কম লোেকই খুঁজে পাওয়া যাবে যার জীবনকে কোনো না কোনোভাবে কম্পিউটার স্পর্শ করে নি। হিসেবনিকেশ করতে কম্পিউটারের দরকার হয়, ব্যবসাপাতিতে কম্পিউটার দরকার হয়, এমনকি শিল্পসাহিত্য বা বিনোদন করতেও আজকাল কম্পিউটারের দরকার হয়।

তথ্য প্রযুক্তি - মুহম্মদ জাফর ইকবাল বাংলা ১ম নবম-দশম শ্রেণি
লেখকঃ মুহম্মদ জাফর ইকবাল

১৯৭৭ সালে ভয়েজার ১ আর ২ নামে দুটো মহাকাশযান সৌরজগতে তাদের যাত্রা শুরু করেছিল। সৌরজগৎ পাড়ি দেবার সময় মহাকাশযান দুটো গ্রহগুলোর পাশে দিয়ে গিয়েছে এবং যাবার সময় সেই গ্রহগুলো সম্পর্কে নানা তথ্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। ছোট একটি যন্ত্র হয়েও পৃথিবীর গবেষকদের কাছে সবচেয়ে বেশি তথ্য পাঠানোর কৃতিত্বটুকু ভয়েজার মহাকাশযানগুলোকে দেওয়া হয়। এই চমকপ্রদ কৃতিত্বটুকুর পিছনে ছিল একটা কম্পিউটার, যেটি ভয়েজার মহাকাশযানকে সৌরজগতের ভেতর দিয়ে উড়িয়ে নিয়ে গেছে, তথ্য সংগ্রহ করেছে এবং নিখুঁতভাবে সেই তথ্য পৃথিবীতে পাঠিয়েছে। কেউ যেন মনে না করে যে, ভয়েজার মহাকাশযানের কম্পিউটার বুঝি ছিল অসাধারণ কোনো কম্পিউটার। বস্তুত সেগুলো ছিল খুবই সাধারণ কম্পিউটার।

সত্যি কথা বলতে কি আমরা এখন যে কম্পিউটার ব্যবহার করি তার তুলনায় ১৯৭৭ সালের সেই কম্পিউটার ছিল প্রায় একটা খেলনার মতো। তারপরেও সেটি অসাধ্য সাধন করেছিল, কারণ বিজ্ঞানীরা পৃথিবীতে বসে যখন যেভাবে প্রয়োজন তখন সেভাবে প্রোগ্রাম করে কম্পিউটারটিতে পাঠাতেন। কম্পিউটারটিও তাই যখন যেরকম প্রয়োজন সেভাবে তার দায়িত্ব পালন করত। অন্য যে-কোনো যন্ত্র থেকে সে কারণে কম্পিউটার আলাদা এবং এটাই কম্পিউটারের সবচেয়ে বড় শক্তি। একটা কম্পিউটারকে কোন কাজে ব্যবহার করা হবে সেটা নির্ভর করে মানুষের ওপরে। একজন মানুষ যত সৃজনশীল হবে কম্পিউটারের কাজকর্ম হবে তত চমকপ্রদ।

কম্পিউটার ব্যবহার করে যে অসংখ্য কাজ করা যায় তার একটি হচ্ছে কম্পিউটার নেটওয়ার্ক, যেখানে কম্পিউটারকে একসাথে জুড়ে দেওয়া হয়। কেউ যেন মনে না করে, এতে শুধু একটা ঘরের কয়েকটা কম্পিউটার কিংবা একটা প্রতিষ্ঠানের কয়েকটা কম্পিউটার জুড়ে দেয়া হয়। আসলে সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ কম্পিউটারকে একসাথে জুড়ে দিয়ে বিশাল একটা নেটওয়ার্ক তৈরি করা হয়েছে। সেটা ঠিকভাবে করার জন্যে তথ্য বিনিময় বা তথ্য যোগাযোগের নতুন নতুন প্রযুক্তি গড়ে উঠেছে। তার একটি হচ্ছে ফাইবার অপটিক্স, যেখানে চুলের মতো সূক্ষ্ম একটা কাচের তন্তুর ভেতর দিয়ে তথ্য পাঠানো যায়।

সবচেয়ে চমকপ্রদ ব্যাপার হচ্ছে তথ্যটা বৈদ্যুতিক সংকেত হিসেবে যায় না, সেটা যায় আলো হিসেবে। সেই আলো কিন্তু দৃশ্যমান আলো নয়, সেটি অবলাল আলো, আমরা তাই চোখে সেটা দেখতেও পাই না। ফাইবার অপটিক প্রযুক্তির সাথে ব্যবহার করার জন্যে রকমারি প্রযুক্তি গড়ে উঠেছে এবং সব কিছু মিলিয়ে এখন রয়েছে পৃথিবী জোড়া বিশাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক। সারা পৃথিবীর লক্ষ লক্ষ কম্পিউটার একসাথে জুড়ে দেওয়ার পর সেটা দিয়ে অনেক কিছুই করা সম্ভব। কিছু করা হয়েছে, কিছু করা হচ্ছে এবং ভবিষ্যতে কী করা যাবে সেটা নিয়ে পৃথিবীর সৃজনশীল মানুষেরা সবসময় চিন্তা করছে। পৃথিবীজোড়া বিশাল নেটওয়ার্কের একটা ব্যবহারের কথা আমরা মোটামুটি সবাই শুনেছি- সেটি হচ্ছে ইন্টারনেট।

সাধারণ তথ্যের জন্যে এখন ইন্টারনেটের কোনো বিকল্প নেই। মানুষ তার দৈনন্দিন জীবনের সব খবরাখবর ইন্টারনেট থেকে নেয়। শুধু যে বাস ট্রেন বা প্লেনের সময়সূচি ইন্টারনেটে পাওয়া যায় তা নয়, সেগুলোর টিকেটও ইন্টারনেটে কেনা যায়। পৃথিবীর বেশির ভাগ মানুষ এখন সত্যিকারের খবরের কাগজ না পড়ে ইন্টারনেটে খবর পড়ে। গবেষণার জার্নাল এখন ইন্টারনেটে প্রকাশ করা হয়। কেনাকাটার সবচেয়ে বড়পদ্ধতি এখন ইন্টারনেট। জিনিসপত্র নিলামে বিক্রি করতে হলে এখন ইন্টারনেটের চাইতে ভালো কোনো উপায় নেই। রেডিও টেলিভিশন ইন্টারনেটে চলে এসেছে, বন্ধুত্ব বা নানারকম সামাজিক কর্মকাণ্ড এখন ইন্টারনেট ঘিরে গড়ে উঠেছে। বিজ্ঞাপন বা নির্বাচনী প্রচারণার জন্যে এখন ইন্টারনেটের চাইতে ভালো কোনো উপায় নেই। অর্থাৎ এক কথায় বলা যায়- সরল কিংবা জটিল, সহজ কিংবা কঠিন, গুরুত্বপূর্ণ কিংবা তুচ্ছ।

সব কাজই এখন ইন্টারনেট ব্যবহার করে করা হচ্ছে। যত দিন যাচ্ছে এর ব্যবহার বৃদ্ধি পাচ্ছে এবং মোটামুটি নিশ্চিতভাবে বলা যায়, যারা ইন্টারনেট থেকে বিচ্ছিন্ন, তারা জোর কদমে ছুটে চলা পৃথিবীর সাথে তাল মিলিয়ে চলতে পারবে না, দেখতে দেখতে তারা পিছিয়ে পড়বে। পৃথিবীজোড়া লক্ষ লক্ষ কম্পিউটারের নেটওয়ার্কের ওপর নির্ভর করে শুধু যে ইন্টারনেটে তথ্য বিনিময় গড়ে উঠেছে তা নয়, বিজ্ঞানীরা এবং গণিতবিদরা সেটাকে গবেষণার কাজেও ব্যবহার করেন।

একটা ছোট কম্পিউটার ছোট একটা কাজ করতে পারে কিন্তু লক্ষ লক্ষ কম্পিউটারকে যদি একসাথে করা হয় তাহলে তারা বিশাল কাজ করে ফেলতে পারে। পৃথিবীর সবচেয়ে বড় প্রাইম সংখ্যা এভাবে খুঁজে বের করা হয়েছে। কম্পিউটার যখন ব্যবহার করা হয় না তখন অলস হয়ে বসে না থেকে বিজ্ঞানী কিংবা গণিতবিদদের বড় বড় সমস্যা সমাধানের কাজে লেগে যেতে পারে। এটি হচ্ছে মাত্র একটি উদাহরণ, আরো অনেক উদাহরণ আছে এবং সবচেয়ে বড় কথা ভবিষ্যতে আরো সুন্দর। আরো চমকপ্রদ উদাহরণ আসবে সে ব্যাপারে বিন্দুমাত্র সন্দেহ নেই।

কম্পিউটার কথাটি বলা হলেই আমাদের চোখের সামনে কম্পিউটারের যে ছবিটি ভেসে ওঠে তা হলো- টেলিভিশনের মতো মনিটর, কী বোর্ড, মাউস এবং চৌকোণো বাক্সের মতো সি.পি.ইউ। কিন্তু সেটাই কম্পিউটারের একমাত্র রূপ নয়। আজকাল ব্যাটারি চালিত ল্যাপটপ চলে এসেছে, সেটা ব্যাগে নিয়ে চলাফেরা করা যায়। আবার বিশাল আকারের সুপার কম্পিউটার রয়েছে যেটাকে শীতল রাখার জনেই রীতিমতো দক্ষযজ্ঞের আয়োজন করতে হয়। যেরকম বড় কম্পিউটার রয়েছে ঠিক সেরকম ছোট কম্পিউটারও রয়েছে যেগুলো মোবাইল টেলিফোন, ক্যামেরা, ফ্রিজ, ওভেন কিংবা লিফটের মতো দৈনন্দিন ব্যবহারী জিনিসের মাঝে বসানো আছে।

আমরা আলাদাভাবে কম্পিউটারকে দেখি না, কিন্তু সেটা আমাদের চোখের আড়ালে অসংখ্য যন্ত্রপাতিকে সচল করে রাখছে। একসময় টেলিফোন ছিল একটা বুদ্ধিহীন কথা বলা এবং শোনার যন্ত্র। এখন আর তা নয়- মোবাইল টেলিফোন রীতিমতো বুদ্ধিমান যন্ত্র । এমন অনেক মোবাইল টেলিফোন আছে যেটা একই সাথে টেলিফোন, রেডিও, টেলিভিশন, ক্যামেরা, টেপ রেকর্ডার, ক্যালকুলেটর, জিপিএস এবং ছোটখাটো একটা কম্পিউটার। আমরা এটা হাতে নিয়ে যেখানে খুশি যেতে পারি, যে-কোনো রকম তথ্য সংগ্রহ করতে পারি, তথ্য সংরক্ষণ করতে পারি এবং তথ্য বিনিময় করতে পারি। কিছুদিন আগেও সেটা কল্পবিজ্ঞানের মতো ছিল, এখন পুরোপুরি বাস্তব।

যারা ইতিহাস পড়েছে তারা জানে, আজ থেকে প্রায় দুই-শবৎসর আগে পৃথিবীতে শিল্পবিপ্লব হয়েছিল। যারা সেই শিল্পবিপ্লবে অংশ নিয়েছিল তারা পৃথিবীটাকে শাসন করেছে-অনেক সময় শোষণ করেছে। এ মুহূর্তে শিল্পবিপ্লবের মতো গুরুত্বপূর্ণ একটা বিপ্লব হচ্ছে যেটাকে আমরা বলছি তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব। বলার অপেক্ষা রাখে না, যারা এই তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবে অংশ নেবে তারা পরবর্তী পৃথিবীকে শাসন করবে। আমরা শিল্পবিপ্লবে অংশ নিতে পারি নি বলে বাইরের দেশ আমাদের শাসন-শোষণ করেছে। আমরা আবার সেটা হতে দিতে পারি না।

এই নতুন তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবে আমাদের অংশ নিতেই হবে। সেই দায়িত্বটা পালন করতে হবে নতুন প্রজন্মকে, যারা নতুন বাংলাদেশের নেতৃত্ব দেবে জ্ঞানেবিজ্ঞানে এবং প্রযুক্তিতে। তারা ঠিকভাবে লেখাপড়া করবে, অন্য সব বিষয়ের সাথে সাথে গণিত এবং ইংরেজিতেও সমান দক্ষ হয়ে উঠবে, কম্পিউটারের সাথে পরিচিত হবে। যখন কম্পিউটার ব্যবহারের সুযোগ পাবে তখন সেটাকে বিনোদনের একটা মাধ্যম হিসেবে ব্যবহার না করে শেখার একটা মাধ্যমে হিসেবে ব্যবহার করবে, নিজেদের সৃজনশীল মানুষ হিসেবে গড়ে তুলবে। তারা বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ বিজ্ঞানী এবং প্রযুক্তিবিদ হিসেবে গড়ে উঠে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমিকে পৃথিবীর বুকে মাথা উঁচু করে তুলতে সাহায্য করবে।

শব্দার্থ ও টীকা:
ডিজিটাল (Digital): কম্পিউটারে ইলেকট্রনিক কাজকর্ম করার জন্যে যে বৈদ্যুতিক সংকেত ব্যবহার করা হয় তার নির্দিষ্ট মান রয়েছে। সুনির্দিষ্ট এই মানের একটিকে 0 অন্যদিকে 1 বিবেচনা করে বাইনারি সংখ্যা হিসেবে কম্পিউটারের ভেতরে  সকল হিসেব-নিকেশ করা হয়। সম্ভাব্য সব মান ব্যবহার না করে সুনির্দিষ্ট দুটি মান দুটি অঙ্ক (Digit) এর জন্যে রয়েছে। তাই ব্যবহার করার প্রক্রিয়াটিকে সাধারণভাবে ডিজিটাল বলা হয়।
প্রোগ্রাম: কম্পিউটারকে একটি নির্দেশ দেওয়া হলে সেটি সেই নির্দেশ অনুযায়ী কাজ করে। এরকম অসংখ্য নির্দেশকে পাশাপাশি সাজিয়ে কম্পিউটার প্রোগ্রাম লেখা হয় এবং কম্পিউটার প্রোগ্রাম লিখে কম্পিউটার দিয়ে অনেক জটিল কাজ করানো সম্ভব হয়।
অবলাল: আলো একটি তরঙ্গ। এই তরঙ্গদৈর্ঘ্য একটি নির্দিষ্ট মান থেকে কম হলে আমরা দেখতে পাই না। আবার তরঙ্গদৈর্ঘ্য যদি আরেকটি নির্দিষ্ট মান থেকে বড় হয় তবে সেটাও আমরা দেখতে পাই না। দৃশ্যমান আলোর তরঙ্গদৈর্ঘ্য থেকে বড় হওয়ার কারণে যে আলোকে আমরা দেখতে পাই না সেটাকে অবলাল বলে।
জিপিএস: Global Positioning System (GPS) দিয়ে পৃথিবীর যে কোনো জায়গার অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে বের করা যায়। মহাকাশে অনেকগুলো কৃত্রিম উপগ্রহ রয়েছে। এই উপগ্রহ থেকে পাঠানো সংকেত ব্যবহার করে জিপিএসের মাধ্যমে কোনো কিছুর অবস্থান সুনির্দিষ্টভাবে বের করা হয়।

পাঠ-পরিচিতি: বর্তমান পৃথিবী হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির যুগ অর্থাৎ তথ্য সংগ্রহ, তথ্য সংরক্ষণ আর তথ্য বিনিময়ের ক্ষেত্রে সারা পৃথিবীতে একটা যুগান্তকারী পরিবর্তন এসেছে। তথ্য প্রযুক্তির এই বিপ্লবের পিছনে সবচেয়ে বড় ভূমিকা রাখছে কম্পিউটার’ নামের যন্ত্রটি। এটি মানুষের নির্দেশে কাজ করে, তাই একজন মানুষ যতটুকু সৃজনশীল তার কম্পিউটারের কাজ করার ক্ষমতাও ঠিক ততটুকু চমকপ্রদ। দুই শ বছর আগে পৃথিবীতে একটা শিল্পবিপ্লব হয়েছিল, সেই বিপ্লবে যারা অংশ নিয়েছিল পরবর্তী সময়ে তারাই পৃথিবীকে শাসন করেছিল। ঠিক এই মুহূর্তে শিল্পবিপ্লবের মতোই গুরুত্বপূর্ণ তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লব ঘটছে- যারা এই বিপ্লবে অংশ নেবে তারাই নতুন পৃথিবীর নেতৃত্ব দেবে। বাংলাদেশকে পৃথিবীর সামনে মাথা উঁচু করে দাঁড় করানোর জন্যে নতুন প্রজন্ম তথ্য প্রযুক্তিতে নিজেদের দক্ষ করে তুলবে সেটি সবারই প্রত্যাশা।

অনুশীলনীঃ
বহুনির্বাচনি প্রশ্নঃ

১। ফাইবার অপটিকে কীসের ভেতর দিয়ে তথ্য পাঠানো হয়?
ক. তামার তারের
খ. বিদ্যুৎ চৌম্বকীয় তরঙ্গে
গ. কাচের তন্তুর
ঘ. কার্বনের তন্তুর

২। তথ্য প্রযুক্তির বিপ্লবে নেতৃত্ব নিতে হলে কীসে দক্ষ ও পরিচিত হওয়া প্রয়োজন?
i. গণিত
ii. ইংরেজি
iii. কম্পিউটার

নিচের কোনটি সঠিক?
ক. i
খ. ii
গ. i ও iii
ঘ. i, ii ও iii

উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও:
ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন নিয়ে এগিয়ে চলছে একটি ল্যাপটপ, একটি মডেম ও একটি প্রজেক্টর নিয়ে পাওয়ার পয়েন্ট প্রোগ্রামের মাধ্যমে ডিজিটাল ক্লাস নেয়ার কার্যক্রম। শিশুদের ইংরেজি বর্ণমালা শেখানোর জন্য তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি সংক্রান্ত শব্দগুলো স্থান পাচ্ছে। শিক্ষার্থীরা ই-মেইল, ইন্টারনেট সম্পর্কে জানতে পারছে। মানুষের সৃজনশীল কাজকে সহায়তা প্রদান, সংরক্ষণ করা, তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে প্রধানতম ভূমিকা পালন করছে কম্পিউটার। রাশেদ অনুভব করলো তথ্যের মহাসড়কে যোগ্যতম সঙ্গী হওয়াই জাতীয় কর্তব্য।

৩। তথ্য প্রযুক্তি প্রবন্ধের যে দিকটি উদ্দীপকে উদ্ভাসিত হয়েছে তা হলো -
ক. কম্পিউটার নেটওয়ার্ক স্থাপন
খ. প্রযুক্তির উৎকর্ষ সাধন
গ. তথ্যপ্রযুক্তি বিপ্লবে যোগদান
ঘ. কম্পিউটারে দক্ষ হওয়া

৪। উদ্দীপকের অনুভব ‘তথ্য প্রযুক্তি’ প্রবন্ধের কোন উদ্ধৃতির সঙ্গে সাদৃশ্যপূর্ণ?
ক. বর্তমান পৃথিবীটা হচ্ছে তথ্য প্রযুক্তির পৃথিবী
খ. আগে কম্পিউটারের কাজ ছিল কল্পবিজ্ঞানের মতো
গ. তথ্যপ্রযুক্তির বিপ্লবের পিছনে রয়েছে ডিজিটাল কম্পিউটার
ঘ. ইন্টারনেটের মাধ্যমে তথ্য বিনিময় ব্যবস্থা গড়ে উঠেছে।
 
এসএসসি (SSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তরসহ: বাংলা ১ম পত্র গাইড

সৃজনশীল প্রশ্নঃ
উদ্দীপকটি পড় এবং প্রশ্নের উত্তর দাও : সোনিয়া আমেরিকার এম, আই. এস. টি-তে ভর্তি হবার জন্য প্রস্তুতি নিচ্ছে। বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হবার যাবতীয় তথ্য সে ইন্টারনেটের মাধ্যমে জোগাড় করলো। সেখানে অধ্যয়নরত শিক্ষার্থীদের ইমেইল ঠিকানা জেনে সোনিয়া তাদের সাথেও যোগাযোগ স্থাপন করলো। ইন্টারনেটের মাধ্যমে ভর্তি হবার সব তথ্য জেনে সোনিয়ার মনে হলো তথ্য প্রযুক্তিতে সমৃদ্ধ হলেই এদেশ সমৃদ্ধ হতে পারবে।
ক. জি.পি.এস. কী?
খ. ‘মোবাইল টেলিফোন বুদ্ধিমান যন্ত্র’ কেন?
গ. উদ্দীপকটিতে তথ্য প্রযুক্তি’ প্রবন্ধের কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে তথ্য প্রযুক্তি’ প্রবন্ধের মূল ভাবনা উন্মোচিত হয়নি – মূল্যায়ন কর।

No comments:

Post a Comment