যুব সমাজের অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরে পত্রিকায় প্রকাশের উপযোগী প্রতিবেদন

যুব সমাজের অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরে পত্রিকায় প্রকাশের উপযোগী একটি প্রতিবেদন রচনা করো।
যুব সমাজের অবক্ষয়ের চিত্র তুলে ধরে পত্রিকায় প্রকাশের উপযোগী প্রতিবেদন

ধ্বংসের মুখে জাতির ভবিষ্যৎ কাণ্ডারীরা
নিজস্ব প্রতিবেদক: যারা বয়সে নবীন, যাদের আত্মবিশ্বাস রয়েছে অগাধ, যারা অন্যায়ের কাছে মাথা নোয়ায় না, যারা পুরাতনকে ভেঙে নতুন কিছু গড়তে চায় তারাই যুবক। তারা স্থবির নয়, তারা চঞ্চল। তারা পরাজয় মানতে নারাজ। তারা দেশ ও জাতির গৌরব। এ তরুণরাই যদি বিপরীতমুখী রূপ ধারণ করে অন্যায়ের দিকে পা বাড়ায় তাহলে জাতি অনিবার্য ধ্বংসের দিকে এগিয়ে যায়। যুবসমাজের এ অবস্থাকেই বলা হয় অবক্ষয়। আমাদের যুবসমাজ নানা অবক্ষয়ের শিকার। বেকারত্ব, সন্ত্রাস, রাজনৈতিক কুপ্রভাব, অপসংস্কৃতি, অর্থনৈতিক দৈন্য ইত্যাদি যুবসমাজকে দারুণভাবে প্রভাবিত করছে। ফলে তারা সুস্থ জীবন থেকে আলাদা হয়ে ঝুঁকে পড়ছে অবক্ষয়ের গহীন আবর্তে। অবক্ষয়ের কারণগুলো নিম্নরূপ:

জীবনের আদর্শ ও মূল্যবোধের অভাব: আমাদের যুবসমাজের সামনে জীবন্ত আদর্শের একান্ত অভাব। বড়দের মাঝে তারা আদর্শবান ব্যক্তিত্ব খুব কমই খুঁজে পাচ্ছে- যাদের কাছ থেকে তারা সৎ পথের অনুপ্রেরণা পাবে। বরং দেখতে পাচ্ছে রাজনীতির নামে মিথ্যাচার, সমাজসেবার নামে স্বেচ্ছাচার, আদর্শের নামে প্রতারণা। মূলত সর্বত্র আজ যে মূল্যবোধের অভাব দেখা দিয়েছে, তার দ্বারা আক্রান্ত হচ্ছে বর্তমান যুবসমাজ।

অপসংস্কৃতির প্রভাব: যুবসমাজের ওপর সিনেমা, টিভি, বিভিন্ন প্রকার সংবাদপত্র, এসবের কুপ্রভাব অত্যন্ত বেশি। অধিকাংশ সিনেমার কাহিনি, নাচ-গান, পোশাক-পরিচ্ছদ ইত্যাদি এমনভাবে সন্নিবেশিত যে তাতে যুবকেরা অতি সস্তায় ও সহজে আমোদ-প্রমোদের উপকরণ খুঁজে পায়। তারা অনেক সময় এসব উদ্ভট ও অবাস্তব কাহিনিকে বাস্তব জীবন বলে চালিয়ে দিতে গিয়ে মারাত্মক ভুল করে বসে। অপসংস্কৃতি গ্রাস করছে যুবসমাজকে। বর্তমানে খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, ধর্ষণ এসব কার্যকলাপের মূলে রয়েছে অপসংস্কৃতির প্রভাব।

মাদকদ্রব্যের ভূমিকা: কোনো দেশের যুবসম্প্রদায় মাদকাসক্ত হওয়ার কারণ হচ্ছে সে দেশের নৈতিক চরিত্রের অনিবার্য অধঃপতন। গাঁজা, ভাং, আফিম, হেরোইন, প্যাথেড্রিন, কোকেন, হাসিস, মারিজুয়ানা ইত্যাদি নানা ক্ষতিকর মাদকদ্রব্য আজ সর্বত্র সহজেই পাওয়া যাচ্ছে। উঠতি বয়সের তরুণ-তরুণীরা এর অবাধ ব্যবহারের মাধ্যমে নিজেদের ধ্বংসের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাচ্ছে।

রাজনৈতিক দলের প্রভাব: রাজনৈতিক দলের অসৎ নেতারা নিজেদের উদ্দেশ্য হাসিল করার মানসে যুবসমাজকে অনেক সময় কুপথে পরিচালিত করে। মিথ্যা আশ্বাস দিয়ে যুবকদের ক্ষমতা ও অর্থ উপার্জনের হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করে। ক্যাডার তৈরি করে নানা অপকর্মে লিপ্ত করে। যার পরিণাম যুবসমাজের অধঃপতন।

বেকারত্ব: বেকারত্ব যুবসমাজের বিপথগামিতার অন্যতম প্রধান কারণ। লেখাপড়া শেষে যখন তারা কোনো কাজ পায় না, তখন অসৎ উপায়ে উপার্জনের জন্য রাস্তায় নামে। চুরি, ডাকাতি, খুন, রাহাজানি, ছিনতাই, অপহরণ ইত্যাদি অপরাধমূলক কাজ করতেও দ্বিধাবোধ করে না। এভাবে বেকার যুবসমাজ জীবন সম্পর্কে হতাশায় ভোগে এবং নানা অপরাধে লিপ্ত হয়।

শিক্ষাঙ্গনে সন্ত্রাস: শিক্ষায় অব্যবস্থার নানা অসঙ্গতিও যুবকদের অনেক সময় বিপথগামী করে। ভর্তি সমস্যা, পুস্তক সমস্যা, আবাসিক সমস্যা, খাদ্য সমস্যা, ফল প্রকাশে অহেতুক বিলম্ব, যখন তখন ধর্মঘট, দলবাজি-এসব ঘটনা তো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলোতে সাধারণ খুবই ব্যাপার। তরুণদের মানসিকতা নষ্ট করে দেয়। গুটিকয়েক সন্ত্রাসী সমগ্র ছাত্রসমাজকে জিম্মি করে রেখেছে। আর এর শিকার হচ্ছে আমাদের গোটা যুবসমাজ।

তরুণরাই জাতির ভবিষ্যৎ। তাদের বিপথগামিতা অবশ্যই রোধ করতে হবে। যুবসমাজকে সুপথে ফিরিয়ে আনা, আমাদের সবার নৈতিক দায়িত্ব। এ দায়িত্ব পালনের ভার সচেতন মহলের সবাইকে নিতে হবে। প্রচার মাধ্যমগুলো; বিশেষ করে টিভি, সিনেমা, পত্র-পত্রিকাগুলোকে গঠনমূলক ভূমিকা পালন করতে হবে। যুবসমাজের জন্য খেলাধুলা ও শরীর চর্চার ব্যবস্থা নিতে হবে। বেকারত্ব দূর করতে হবে। শিক্ষাঙ্গনকে সন্ত্রাসমুক্ত করে শিক্ষার সুষ্ঠু পরিবেশ তৈরি করতে হবে। সব প্রকার মাদকদ্রব্য নিষিদ্ধ ঘোষণা করতে হবে।

প্রতিবেদক
কামরুল হাসান 
হবিগঞ্জ, সিলেট। 

[এখানে পত্রিকার ঠিকানা সংবলিত খাম আঁকতে হবে]
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post