G

শিখে নিন প্রতিবেদন লেখার সহজ নিয়ম

প্রতিবেদন কি: প্রতিবেদন বলতে কোনো নির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় তথ্যানুসন্ধানভিত্তিক বিবরণী বোঝায়। কোনো ঘটনা, তথ্য বা বক্তব্য সম্পর্কে সুচিন্তিত বক্তব্য প্রদানই প্রতিবেদন।

প্রতিবেদন কথাটি ইংরেজি রিপোর্ট কথাটির বাংলা পারিভাষিক শব্দ। সাধারণত কোনো বিষয়ের তথ্য-উপাত্ত, সিদ্ধান্ত, ফলাফল ইত্যাদি খুঁটিনাটি অনুসন্ধানের পর বিবরণী তৈরি করে কোনো ব্যক্তি, প্রতিষ্ঠান বা কোনো কর্তৃপক্ষের বিবেচনার জন্য প্রতিবেদন পেশ করা হয়।
প্রতিবেদন লেখার নিয়ম: বাংলা ২য় পত্র

প্রতিবেদনের উদ্দেশ্য: প্র্রতিবেদনের উদ্দেশ্য হলো নির্দিষ্ট কোনো বিষয়বস্তু সম্পর্কে কর্তৃপক্ষকে সুস্পষ্টভাবে অবহিত করা। এর বক্তব্য হবে নিরপেক্ষতার বৈশিষ্ট্য অনুসারী। এতে জটিল বিষয়ের ব্যাখ্যা থাকবে। প্র্রতিবেদনে কোনো বিষয় সম্পর্কে মতামত প্র্রকাশ করা হয়। প্র্রতিবেদন কাজের সমন্বয় সাধন ও সিদ্ধান্ত গ্রহণে সহায়তা করে।

প্রতিবেদনের শ্রেণিবিভাগ:
প্রতিবেদনকে নির্দিষ্টভাবে শ্রেণিবিভাগ করা সম্ভব নয়, কেননা বিষয়ের বৈচিত্র্য অনুযায়ী প্রতিবেদনও নানা প্রকার হয়ে থাকে। বিভিন্ন প্রেক্ষাপটে প্রতিবেদনকে নানা নামে ও বিশেষণে অভিহিত করা হয়। তবে মোটাদাগে প্রতিবেদনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। যথা:

১. সংবাদ প্রতিবেদন: সংবাদপত্রে প্রকাশিত কোনো ঘটনাসম্পর্কিত প্রতিবেদনকে সংবাদ প্রতিবেদন বলে। নিজস্ব সংবাদদাতা বা প্রতিবেদক এবং বিভিন্ন দেশি-বিদেশি সংবাদ সংস্থার মাধ্যমে এসব সংবাদ সংগ্রহ করা হয়।

২. দাপ্তরিক বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন: দাপ্তরিক বা প্রাতিষ্ঠানিক প্রতিবেদন এমন এক ধরনের বিবরণ যাতে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো ঘটনা, স্থান, অবস্থা প্রভৃতি বিষয় যাচাই করে সে-সম্পর্কিত তথ্য, তত্ত্ব, উপাত্ত তুলে ধরা হয়। দাপ্তরিক প্রতিবেদন দুই ধরনের হয়। যেমন:

(ক) তদন্ত প্রতিবেদন: এটি কোনো ঘটনা, দুর্ঘটনা, গোলযোগ, হত্যাকাণ্ড ইত্যাদি সম্পর্কে ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার নির্দেশ তদন্ত সাপেক্ষে প্রকাশ করা হয়।

(খ) কারিগরি প্রতিবেদন: এটি সাধারণত উন্নয়ন প্রকল্পের ব্যয়, প্রযুক্তিগত সম্ভাব্যতা, জনস্বার্থে অবদান, অর্থনৈতিক লাভালাভ ইত্যাদি বিষয়ে তথ্যভিত্তিক প্রতিবেদন প্রকাশ করা হয়।

প্রতিবেদনের উপযোগিতা:
বর্তমান সমাজব্যবস্থায় প্রতিবেদনের সীমা-পরিসীমা যেমন তেমনি এর উপযোগিতা ও গুরুত্ব অপরিসীম। বস্তুনিষ্ঠ সংবাদ বা বিবরণের জন্য প্রতিবেদনের কোনো বিকল্প নেই। প্রতিবেদনে কোনো বিশেষ ঘটনা বা বিষয়কে সরেজমিনে তদন্ত করে পরীক্ষা ও পর্যবেক্ষলব্ধ ফলাফল প্রকাশ করা হয় বলে, তা থেকে আলোচ্য বিষয় সম্পর্কে প্রয়োজনীয় খুঁটিনাটি তথ্য অবগত হওয়া যায়। কর্তৃপক্ষও সহজে সেই প্রতিবেদনের ওপর ভিত্তি করে সঠিক সিদ্ধান্ত নিরূপণ, সমন্বয়সাধন ইত্যাদি কাজে সহায়তা পাওয়া যায়। প্রতিষ্ঠানের সুষ্ঠু পরিচালনা, নীতি নির্ধারণে প্রতিবেদন সহায়ক হয়।

একটি সাধারণ প্রতিবেদনের কাঠামো বা অংশবিভাজন
একটি প্রতিবেদনকে প্রধানত চারটি ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন:
১. শিরোনাম
২. সূচনা অংশ
৩. বিষয়বস্তু
৪. প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা, স্বাক্ষর ও অন্যান্য বিষয়।

১. শিরোনাম: প্রতিবেদনের শিরোনাম আকর্ষণীয় হতে হবে। প্রতিবেদনের যেটা সারাংশ, কিংবা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ অংশ বা প্রতিবেদনের যেটা জরুরি অংশ সেটাই শিরোনাম হবে। শিরোনাম যথাসম্ভব ছোট রাখা আবশ্যক।

২. সূচনা অংশ: প্রতিবেদনের যেটা একেবারে সূচনাংশ তা প্রতিবেদনের বাকি অংশের তুলনায় গুরুত্ব বেশি। তার কারণ, এটির দ্বারা আকৃষ্ট হলে তবেই একজন পাঠক গোটা খবরটি পড়তে উৎসাহী হবেন। সূচনা অংশ এমনভাবে লেখা উচিত যেন প্রতিবেদনের বাদ বাকি অংশ সম্পর্কে পাঠকের কৌত‚হল জাগ্রত হয়।

৩. বিষয়বস্তু: এ অংশে প্রতিবেদনের শিরোনাম অনুযায়ী বিষয়বস্তুর তথ্যনির্ভর বস্তুনিষ্ঠ আলোচনা থাকবে। অর্থাৎ ‘কে, কী, কেন, কবে ও কোথায়, এসব প্রশ্নের মাধমে প্রতিবেদনের মূল বিষয়গুলো খুঁজে গুরুত্বপূর্ণ বিষয়গুলো রেখে অপ্রয়োজনীয় কথাবার্তা ছাঁটাই করতে হবে এবং তথ্যনির্ভর সংবাদ উপস্থাপন করতে হবে।

৪. প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা, স্বাক্ষর ও অন্যান্য বিষয়: এ অংশে প্রতিবেদকের নাম-ঠিকানা, স্বাক্ষর, প্রতিবেদন তৈরির সময়, সংযুক্তি (কোনো প্রকার ছবি বা ডকুমেন্ট ইত্যাদি), তারিখ ইত্যাদি উল্লেখ করা যেতে পারে।

প্রতিবেদন রচনায় অনুসরণীয় বৈশিষ্ট্য
১। সুনির্দিষ্ট কাঠামো: কোনো প্রতিবেদন প্রণয়নকালে একটি নির্দিষ্ট কাঠামো অনুসারে করতে হয়। এতে থাকবে একটি শিরোনাম, প্রাপকের নাম-ঠিকানা, আলোচ্য বিষয়ের সূচিপত্র, বিষয়বস্তু, তথ্যপঞ্জি, স্বাক্ষর, তারিখ ইত্যাদি।

২। সঠিক তথ্য: প্রতিবেদন রচিত হবে সঠিক তথ্যের ওপর ভিত্তি করে। তথ্যানুসন্ধানই হলো প্রতিবেদকের প্রধান কাজ। সেজন্য তথ্যের যথার্থতার ওপর বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করতে হবে।

৩। সম্পূর্ণতা: প্রতিবেদনে যেসব তথ্য পরিবেশিত হবে তা হতে হবে নির্ভুল ও সম্পূর্ণ নির্ভরযোগ্য।

৪। স্পষ্টতা: প্রতিবেদনের বক্তব্যের মধ্যে স্পষ্টতা থাকবে যাতে বক্তব্য বিষয় সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ সহজ হয়।

৫। সংক্ষিপ্ততা: প্রতিবেদন হতে হবে বাহুল্যবর্জিত। বক্তব্য হবে সুনির্বাচিত এবং কোনো অনাবশ্যক বক্তব্য সংযোজিত হতে পারবে না।

৬। সুন্দর উপস্থাপনা: প্রতিবেদনের উপস্থাপন হতে হবে আকর্ষণীয়। এর বক্তব্য যেন সহজ-সরল ভাষায় প্রকাশ পায় সেদিকে লক্ষ রাখতে হবে।

৭। সুপারিশ: প্রতিবেদনের উপসংহারে সুপারিশ সংযোজন করতে হবে, যাতে উপযুক্ত কর্তৃপক্ষ সমস্যা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতে পারে।

1 comment: