HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Islamic History and Culture 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Islamic History and Culture 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩

HSC Islamic History and Culture 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

অধ্যায়ভিত্তিক প্রাথমিক আলোচনাঃ

খুলাফায়ে রাশেদিন
খিলাফত হচ্ছে ইসলামের ধর্মীয়, সামাজিক, রাজনৈতিক প্রতিষ্ঠান। মজিদ খাদ্দুরীর ভাষায় ‘‘খিলাফত হলো ধর্মীয় ভিত্তিতে রাষ্ট্রের পার্থিব শাসন কাঠামো।’’ খিলাফম শব্দটির উৎপত্তি ‘খলিফা' শব্দ থাকে। ইবনে খালদুনের মতে, হজরত মুহাম্মদ (স) এর উপর যারা ইসলামী প্রজাতন্ত্রে তাঁর আদর্শ ও নীতি অনুযায়ী ধর্মীয় ও পার্থিব ক্ষমতার অধিকারী হিসেবে শাসনকার্য পরিচালনা করেন তাদের খলিফা বলা হয়।' খলিফা পরিচালিত রাষ্ট্রই হল খিলাফত।

মহানবী (স) কর্তৃক প্রতিষ্ঠিত মদিনার ইসলামী প্রজাতন্ত্র পরিচালনার মাধ্যমেই খিলাফত নামক রাষ্ট্র ব্যবস্থার সূচনা হয়। মহানবীর মৃত্যুর পর সে সকল বিশিষ্ট সাহাবী আল্লাহ ও রাসূলের নির্দেশিত পদ্ধতি অনুযায়ী ইসলামী রাষ্ট্রের শাসন কার্যাদি সুষ্ঠুবাবে পরিচালনা করে গেছেন তারা ‘খোলাফায়ে রাশেদীন’ বা সত্যপথগামী খলিফা নামে পরিচিত। তাঁরা হলেন-
১. হযরত আবু বকর সিদ্দিক (রা) (৬৩২-৬৩৪ খ্রি.)
২. হযরত উমর ফারুক (রা) (৬৩৪-৬৪৪ খ্রি.)
৩. হযরত উসমান (রা) (৬৪৪-৬৫৬ খ্রি.) এবং
৪. হযরত আলী (রা) (৬৫৬-৬৬১ খ্রি.)

উক্ত চারজন খলিফা ছিলেন রাসূলুল্লাহর (স) ঘনিষ্ঠ সহচর। তাঁরা নবীর (স) শিক্ষা ও আদর্শের পুঙখানুপুঙখ অনুসরণ ও বাস্তবায়ন করেছেন। তাঁদের শাসন ছিল ন্যায় ও ইনসাফে পরিপূর্ণ। ধর্ম ও রাজনীতির সকল দিকে তাঁরা ছিলেন নবী (স)-এর সত্যিকার উত্তরসূরী। তাঁদের ত্রিশ বছরের খিলাফত কালই ইসলামী শাসনব্যবস্থার আদর্শ সোনালী যুগ।

খোলাফায়ে রাশেদীনের শাসন পদ্ধতি
১. প্রশাসন : খলিফা ছিলেন প্রশাসনিক সর্বোচ্চ কর্মকর্তা। শূরা বা উপদেষ্টাদের সাথে পরামর্শ করে তিনি শাসনকার্য পরিচালনা করতেন।

২. নির্বাচন পদ্ধতি : খোলাফায়ে রাশেদীনের নির্বাচন পদ্ধতি ছিল গণতান্ত্রিক। খোলাফায়ে রাশেদীনের খলিফাগণ যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্বাচিত হতেন। এ যুগের নির্বাচন পদ্ধতি দুটো। একটি সরাসরি নির্বাচন যেমন হযরত আবু বকর (রা) প্রথম খলিফা হিসেবে জনগণের সরাসরি সমর্থনে নির্বাচিত হয়েছিলেন। দ্বিতীয় হল নির্বাচকম-লী কর্তৃক মনোনয়ন দান। উচ্চ মর্যাদা সম্পন্ন, শিক্ষিত, ন্যায়বান, আদর্শবান কয়েকজন ব্যক্তিত্বকে নিয়ে খলিফাগণ মৃত্যুর পূর্বে একটি নির্বাচকম-লী গঠন করতেন। খলিফার মৃত্যুর পর তাঁরা পরবর্তী যোগ্য লোকদের মধ্য থেকে খলিফা নির্বাচন করতেন।

এ পদ্ধতিতে হযরত উমর (রা), উসমান (রা) ও আলী (রা) খলিফা নির্বাচিত হয়েছিলেন। আদর্শ বিজ্ঞ ব্যক্তিবর্গের সমন্বয়ে গঠিত নির্বাচন মন্ডলী একজন খোদাভীরু, সৎ, যোগ্য, পদের প্রতি লোভহীন সাহসী, কর্মঠ, সংযমী, উদ্ভাবনী ও বিশ্লেষণী শক্তিসম্পনণ ব্যক্তিকে খলিফা হিসেবে নিযুক্ত করতেন। সকলে তাঁর হাতে হাত রেখে আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করতেন। প্রশাসক বা কোন দায়িতবশীল পদে মনোনয়নের ক্ষেত্রে সে আমলে মনোনয়ন দান করা হত সবচেয়ে যোগ্য ব্যক্তিকে। কারণ জাতীয় স্বার্থকেই তাঁরা বড় করে দেখতেন।

৩. খলিফাদের বেতন-ভাতা : খোলাফায়ে রাশেদীনের খলিফাদের কোন বেতন দেয়া হত না সরকারি অর্থে বা বাইতুল মালে তাদের কোন প্রকার দাবি ছিল না। সাধারণ মুসলমানগণের মত সরকারি ভাতা গ্রহণ করে তারা সরকার পরিচালনার কাজ করতেন। অবশ্য তাঁরা অনেকেই এ ভাতা মৃত্যুর আগে নিজ সম্পত্তি থেকে বাইতুল মালে ফেরৎ দিয়ে গেছেন।
৪. জীবনযাত্রা : খোলাফায়ে রাশেদীনের আমলে খলিফাদের জীবনযাত্রা ছিল সাধারণ ও অনাড়ম্বর। খলিফাগণ মসজিদে বসেই রাজকার্য পরিচালনা করতেন।

হযরত আবু বকর (রা) (৬৩২-৬৩৪ খ্রি.)
মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা)। ইসলামে নবীর পরেই তাঁর স্থান। ইসলাম গ্রহণের আগেও তিনি অন্যান্যদের মত জাহেলিয়াতের পঙ্কে নিমজ্জিত ছিলেন না। পূত-পবিত্র চরিত্রের লোক ছিলেন তিনি। তিনি আজীবন রাসুলুল্লাহর পাশে ছিলেন ছায়ার মত। নবুওয়াতের আগে ও নবুওয়াত লাভের পরে নবী মুহাম্মদ (স)- কে সমানভাবে সম্মান ও মর্যাদা দিয়ে তিনি তাঁকে অনুসরণ করেছেন। ইসলাম গ্রহণের পর তাঁর জীবন-চরিত্র আরও উন্নততর হয়ে উঠে। প্রাথমিক জীবনে তিনি মানবতার সেবা করতেন। ইসলাম গ্রহণের পরে তিনি আরও বেশি দুর্গত মানবতার সাহায্যে এগিয়ে আসেন।

ইসলামের সেবায় তিনি তাঁর সমুদয় ধন-সম্পত্তি সম্পূর্ণরূপে বিলিয়ে দিয়েছিলেন। তাঁর মূল নাম আবদুল্লাহ। উপনাম ছিল আবু বকর। ‘আতিক' ও ‘সিদ্দীক' ছিল তাঁর উপাধি। তাঁর পিতা হলেন ওসমান ওরফে আবু কুহাফা এবং মাতা ছিলেন সালমা ওরফে উম্মুল খায়ের। তাঁর পিতা-মাতা উভয়ে ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তিনি মক্কায় কুরাইশ বংশের ‘তাইম' গোত্রে ৫৭৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তিনি হযরত মুহাম্মদ (স)- এর প্রায় তিন বছরের ছোট ছিলেন।

হযরত আবু বকর (রা) ইসলাম পূর্ব যুগে বিরাট ব্যবসায়ী ও সম্পদশালী ব্যক্তি ছিলেন। এ উপলক্ষে তিনি একাধিকবার সিরিয়া ও ইয়েমেন সফর করেন। তিনি কুরাইশ বংশের সবচেয়ে বেশি মর্যাদাসম্পন্ন গোত্র টাইম-এর বিভিন্ন সেবামূলক কার্যের যিম্মাদার ছিলেন। রক্তপণ আদায়ের যিম্মাদারী তাঁর উপর ন্যস্ত ছিল। সে যুগে মক্কায় অল্প যে কয়জন ব্যক্তি লেখাপড়া জানতেন, আবু বকর (রা) ছিলেন তাদের অন্যতম। বংশপঞ্জী বিষয়ে তাঁর বিশেষ পান্ডিত্য ছিল।

সমবয়সী ও একই প্রকৃতির অধিকারী হওয়ার কারণে হযরত আবু বকর ও রাসূলুল্লাহর মধ্যে ঘনিষ্ঠ বন্ধুতব স্থাপিত হয়। হাফিয ইবনে হাজার (রা) বর্ণনা করেছেন যে, হযরত আবু বকর (রা) বাহিরা রাহিবের ঘটনার পর হতেই নবী (স)- এর উপর বিশ্বাস স্থাপন করেছিলেন। এর দ্বারা প্রতীয়মান হয় যে, সম্ভবত হযরত আবু বকর (রা)-এর সিরিয়া সফরে নবী (স) তাঁর সাথী ছিলেন। নবী (স)-এর সাথে হযরত খাদীজা (রা)-এর বিবাহ সম্পর্ক স্থাপনে হযরত আবু বকর (রা) মধ্যস্থতা করেছিলেন।

হযরত ওমর (রা) (৬৩৪-৬৪৪ খ্রি.)
হযরত উমর ফারুক (রা) বিখ্যাত কুরাইশ বংশের আদিয়া গোত্রে ৫৮৩ খ্রিস্টাব্দে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম খাত্তাব এবং মাতার নাম খাত্মা। তাঁর ডাক নাম ছিল আবু হাফস। তিনি ছিলেন শক্তিশালী বীরপুরুষ। কুস্তিগীর, সুবক্তা ও কবি হিসেবে তাঁর খ্যাতি ছিল প্রচুর। ঐতিহাসিক বালাজুরির মতে - ‘জাহিলী যুগে কুরাইশ বংশের সতের জন শিক্ষিত ব্যক্তির মধ্যে তিনি ছিলেন অন্যতম।‘‘ তাঁর গোত্রের লোকেরা বিচার-আচার ও দূতের কাজে তাঁকে নিয়োগ করতেন। তাই তিনি এসব বিদ্যায় পারদর্শিতা লাভ করেছিলেন।

ঐতিহাসিক যুবইয়ানী বলেন- ‘‘হযরত উমর একজন মস্তবড় পাহলোয়ান ছিলেন। অশ্বারোহণে তাঁর পারদর্শিতা ছিল। কাব্যে তাঁর ছিল অসাধারণ দখল। সে সময়ের অনেক কবির কবিতা তাঁর মুখস্ত ছিল।’’ তাঁর প্রাথমিক জীবন সম্বন্ধে বেশি কিছু জানা যায় না। তিনি ব্যবসায়-বাণিজ্যে বেশ উন্নতি সাধন করতে পেরেছিলেন। ব্যবসায়-বাণিজ্য উপলক্ষে তিনি দেশ-বিদেশে গমন করেন। এ সুযোগে অনেক জ্ঞানী-গুণী ব্যক্তিগণের সাথে তাঁর মেলামেশা হয়েছিল। ইসলাম গ্রহণের আগেই উন্নত ব্যক্তিত্ব, আত্মমর্যাদা, বিচার বুদ্ধি ইত্যাদি গুণে বৈশিষ্ট্যমন্ডিত মানুষ হিসেবে আরবে তাঁর প্রচুর খ্যাতি ছিল।

খিলাফত লাভ : হযরত আবু বকর (রা)-এর শাসনামলে এমন কোন গুরুত্বপূর্ণ কাজ হয়নি যাতে হযরত উমরের (রা) সক্রিয় সহযোগিতা ছিল না। তিনি সর্বদাই হযরত আবু বকরের (রা) পরামর্শদাতা রূপে কাজ করে গিয়েছেন। তিনি সতত ইসলাম ও মুসলমানদের চিন্তায় মগ্ন থাকতেন।

হযরত আবু বকর (রা) যখন জীবন সায়াহ্নে উপনীত হলেন তখন তাঁর সামনে সবচেয়ে বড় কর্তব্য ছিল খিলাফতের একটা মীমাংসা করে যাওয়া। যেন মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি না হয়। ইসলামি সমাজের ঐক্য যাতে অক্ষুণ্ন থাকে। দীর্ঘদিনের অভিজ্ঞতায় আবু বকর (রা)-এর মনে এ বিশ্বাস জন্মে যে, তাঁর খিলাফতের এ গুরুভার হযরত উমর (রা) ব্যতীত আর কারো পক্ষে এই মুহূর্তে বহন করা সম্ভব নয়। তবুও হযরত আবু বকর (রা) তাঁর এ মনোভাবের পক্ষে জনমত যাচাই করার জন্য হযরত আবদুর রহমান (রা) এবং উসমান (রা)-এর মতামত গ্রহণ করেন। তাঁরাও হযরত আবু বকর (রা)-এর মতের পক্ষে জোর মত দেন। তালহা (রা) একটু অমত করতে চাইলে আবু বকর (রা) তাঁকে বুঝিয়ে দিলে তিনিও আর অমত করেননি। অতঃপর আবু বকর উসমান (রা)-কে ডেকে খিলাফতের সনদ লিখাতে আরম্ভ করেন।

প্রাথমিক কয়েকটি কথা লিখার পর তিনি রোগযন্ত্রণায় কাতর হয়ে পড়েন। তখন হযরত উসমান (রা) নিজ হতেই লিখে দেন- ‘‘আমি হযরত উমর (রা)-কে আমার পর খলিফা নির্বাচন করতে চাই। কিছুক্ষণ পর হুঁশ হলে তিনি হযরত উসমানকে (রা) জিজ্ঞেস করলেন, কি পর্যন্ত লেখা হল?হযরত উসমান (রা) পড়ে শুনালে তিনি বলে ওঠেন, আল্লাহু আকবর, আল্লাহ তাআলা আপনাকে এর প্রতিদান দিন।’’

অঙ্গীকার পত্র সম্পাদিত হওয়ার পর হযরত আবু বকর (রা) তাঁর পরিচারকের হাতে দিয়ে বললেন, সমবেত জনতাকে এটা পড়ে শুনিয়ে দাও। অতি কষ্টে তিনি নিজের গৃহের দ্বারদেশে দন্ডায়মান হলেন এবং উপস্থিত জনতাকে সম্বোধন করে বললেন, ‘‘ভাইসব, আমি আমার কোন আত্মীয়-স্বজনকে খলিফা নির্বাচন করিনি। বরং হযরত উমর (রা)-কে নির্বাচিত করেছি’’ যেন আপনারা এই সিদ্ধান্তে সন্তুষ্ট হন। এ কথা শুনে উপস্থিত সকলে সমবেত কণ্ঠে বলে উঠল, আমরা আপনার কথা শুনলাম এবং সন্তুষ্টচিত্তে তা মেনে নিলাম। অতঃপর হযরত আবু বকর (রা) হযরত উসমান (রা)-কে ডেকে কতকগুলো মূল্যবান উপদেশ দান করলেন।

হযরত উমর (রা) দায়িত্ব গ্রহণের পর অভিষেক অনুষ্ঠানে প্রাথমিক ভাষণের দোয়া দ্বারা আরম্ভ করেন- ‘‘হে আল্লাহ! আমি দুর্বল, আমাকে শক্তিশালী করুন। হে আল্লাহ! আমি অপবিত্র, আমাকে পবিত্র করুন। হে আল্লাহ! আমি কৃপণ, আমাকে দানশীল করুন।’’ তারপর তিনি ঘোষণা করেন- ‘‘হে জনতা! যতদিন পর্যন্ত আপনারা রাসূলুল্লাহ (রা) এবং হযরত আবু বকর সিদ্দিকের (রা) বিরোধিতা করেছেন ততদিন আমি আপনাদের উপর কঠোর ছিলাম। এখন আমি আপনাদের ওয়ালী (অভিভাবক), আপনাদের ওপর কঠোরতা দেখাব না।

কেবল জালিম ও অসৎ লোকদের প্রতি আমি কঠোর হবো। বলুন, আমি যদি নবীর (স) ও আবু বকরের (রা) খেলাপ কোন আদেশ দেই- তবে আপনারা কি করবেন? ‘‘তাঁর কঠোর স্বভাবের কথা ভেবে প্রথমে কোন লোক-এর কোন উত্তর দেয়নি। তিনি পুনরায় একই প্রশ্ন করলেন। এবারে এক তরুন মুসলিম দাঁড়িয়ে তরবারী উঁচিয়ে বললেন- ‘আমি এ তরবারি দিয়ে আপনাকে শায়েস্তা করব।' এ উত্তরে হযরত উমর (রা) খুবই মুগ্ধ ও সন্তুষ্ট হলেন।

হযরত ওসমান (রা) (৬৪৪-৬৫৬ খ্রি.)
খুলাফয়ে রাশেদীনের তৃতীয় খলিফা ছিলেন হযরত উসমান (রা)। তিনি কুরাইশ বংশের অন্যতম শাখা উমাইয়া গোত্রে ৫৭৩ (মতান্তরে ৫৭৫) খ্রি. জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর পিতার নাম আফফান এবং মাতার নাম আরওয়া। উসমানের পারিবারিক নাম ছিল আব্দুল্লাহ ও আবু উমর। হযরত উসমান (রা) ছোটবেলায়ই লেখাপড়া শেখেন। কিশোর বয়সে কাপড়ের ব্যবসায় শুরু করেন। ব্যবসায়-বাণিজ্যে তিনি খুবই উন্নতি করেছিলেন। এমনকি তিনি সে সময়ের সেরা ধনী ছিলেন, এজন্য তাঁকে সবাই ‘উসমান গনী‘ (ধনী) বলে ডাকতেন। তিনি ছোটবেলা থেকেই নম্র ও সৎ চরিত্রবান ছিলেন। ভদ্র, মার্জিত রুচি, সত্যবাদিতা ও আমানতদারীর জন্য সকলের নিকট তাঁর খ্যাতি ছিল। দান-খয়রাত ও বদান্যতায় তাঁর সুনাম ছিল প্রচুর।

খিলাফত লাভ : হযরত উমর (রা)-এর অন্তিমকাল যখন ঘনিয়ে এল, তখন ইসলামি খিলাফতের উত্তরাধিকারী মনোনয়ন করার জন্য তিনি ব্যগ্র হয়ে উঠলেন। সর্বাপেক্ষা উপযুক্ত ব্যক্তি পাওয়া তাঁর পক্ষে দুঃসাধ্য হয়ে পড়ে। আবু ওবায়দা যদি জীবিত থাকতেন, তাহলে হয়ত তাঁকেই মনোনীত করা হত; কিন্তু তিনি ইত:পূর্বে পরলোক গমন করেছেন। আব্দুর রহমান (রা) অশেষ শ্রদ্ধাভাজন থাকলেও তিনি মুসলিম সাম্রাজ্যের খিলাফতের গুরুদায়িত্ব বহন করতে ইচ্ছুক ছিলেন না। হযরত উসমান, আলী, তালহা এবং সাদ ইবনে আবী ওয়াক্কাস প্রমুখ যোগ্য ব্যক্তিগণের মধ্য হতে যে কোন একজনের উপর এ প্রকার কর্তব্যভার অর্পণ করা যেত। হযরত উসমান (রা)-এর বয়স ছিল তখন ৭০ বছর। ইসলামের জন্য আর্থিক দান তাঁকে প্রভূত গৌরব দান করেছিল। এরূপে দেখা যায় যে, ইসলামের খেদমতে উল্লিখিত ব্যক্তিগণের অবদান প্রণিধানযোগ্য। সার্বিক বিবেচনায় এদের কেউ কারো অপেক্ষায় কম যোগ্যতাসম্পন্ন ছিলেন না। এ অবস্থায় তাদের মধ্য থেকে কোন একজন দায়িত্ব দেয়া খলিফার পক্ষে কঠিন হয়ে পড়ে। ইসলামি রাষ্ট্রের সার্বিক কল্যাণ চিন্তা করে খলিফা নির্বাচনের দায়িত্ব জনসাধারণের উপর ছেড়ে দেয়াটাও ছিল অত্যন্ত ঝুঁকিপূর্ণ।

যখন পরিস্থিতি এমন পর্যায়ে এসে দাঁড়াল, তখন হযরত উমর (রা) খলিফা নির্বাচনের ব্যাপারটি উসমান, আলী, যুবায়ের, তালহা, সা'দ ইবনে আবী ওয়াক্কাস এবং আবদুর রহমানকে নিয়ে এক নির্বাচনী পরিষদের ওপর ন্যস্ত করলেন। তাঁদের হযরত উমরের মৃত্যুর তিন দিনের মধ্যে মনোনয়ন কার্য সমাধা করতে নির্দেশ দেয়া হল। খলিফা উমর (রা)-এর মৃত্যুর পর নির্বাচনী পরিষদের পাঁচ জন সভ্য রাজধানী মদীনাতে উপস্থিত থেকে নির্বাচনী প্রশ্ন সম্পর্কে আলোচনা করতে লাগলেন। আলোচনা যখন চরম পর্যায়ে পৌঁছল তখন এই অপ্রীতিকর ও সংকটজনক পরিস্থিতির অবসান ঘটাবার জন্য আব্দুর রহমান খিলাফতের দাবি ত্যাগ করলেন। আলী (রা) ব্যতীত নির্বাচনী পরিষদের অন্যান্য সকল সভ্যই তাঁর দৃষ্টান্ত অনুসরণ করতে লাগলেন। আলী (রা) বললেন যে, তিনি আত্মীয়-স্বজন কারো কথার মূল্য না দিয়ে কেবলমাত্র অধিকার এবং জনমতের দাবি স্বীকার করবেন। তদুত্তরে আবদুর রহমান (রা) বললেন যে, আলী যদি তাঁর নির্বাচন মেনে নেয়, তাহলে তিনি মতামত গ্রহণ করতে প্রস্তুত আছেন। পরিশেষে আলী (রা) সম্মত হলেন।

আবদুর রহমান (রা) সেদিন বিনিদ্র রজনী যাপন করে নির্বাচনকারী প্রতিটি লোকের গৃহে গমন করলেন এবং তাদের মতামত গ্রহণ করলেন। তিনি দেখলেন যে, অধিকাংশ নির্বাচকম-লী উসমানের (রা) অনুকূলে। তাদের মতামত আরো দৃঢ় ভিত্তিতে প্রতিষ্ঠিত করার উদ্দেশ্যে তিনি তৎকালে হজ্জ উপলক্ষে মক্কায় আগত আরবের গণ্যমান্য ব্যক্তিবর্গের সাথেও আলোচনা করলেন। হযরত উমর (রা)-এর ইনতিকালের চর্তু দিনে উসমান (রা) ইসলামী খিলাফতের দায়িত্বপূর্ণ পদে নির্বাচিত ও অভিষিক্ত হলেন। সকলে তাঁর নিকট আনুগত্যের শপথ করলেন।

এ সময় তালহা (রা) রাজধানী মদীনাতে উপস্থিত ছিলেন। তিনি মদীনায় ফিরে আসলে হযরত উসমান (রা) তাঁর নিকট নির্বাচন সম্বন্ধীয় সমস্ত কাহিনী বর্ণনা করেন। তিনি বলেন যে, তালহা যদি মনোনয়নের বিরোধিতা করেন, তাহলে তিনি তা প্রত্যাহার করতে রাজি আছেন। তালহা (রা) যখন শুনলেন যে, সকলেই উসমান (রা)-কে খলিফা হিসেবে গ্রহণ করেছেন, তখন তিনিও তাঁর নিকট আনুগত্যের শপথ গ্রহণ করলেন। একে একে সমস্ত লোক এসে হযরত উসমানের হাতে বাইয়াত গ্রহণ করলেন।

হযরত আলী (রা) (৬৫৬-৬৬১ খ্রি.)
ইসলামের সোনালি যুগের চর্তু খলিফা হযরত আলী (রা) রাসূলে করীম (স)-এর চাচা আবু তালিবের পুত্র ছিলেন। তিনি রাসূলে করীম (স)-এর নবুওয়াত প্রাপ্তির দশ বছর পূর্বে ৬০০ খ্রি. বনু হাশিম গোত্রে জন্মগ্রহণ করেন। তাঁর মাতার নাম ছিল ফাতিমা। হযরত আলী (রা)-এর পিতা আবু তালিবের হাতে রাসূল (স) শৈশবে লালিত-পালিত হন। আর আবু তালিবের মৃত্যুর পর তাঁর পুত্র হযরত আলী (রা) রাসূলুল্লাহ (স)-এর হাতে লালিত-পালিত হন। হযরত আলী (রা)-কে রাসূলুল্লাহ (স) আবু তোরাব এবং আবুল হাসান সম্বোধনে সম্বোধিত করতেন।

খিলাফত লাভ : হযরত উসমান (রা)-এর শাহাদাতের পর তিন দিন পর্যন্ত খিলাফতের মসনদ খালি ছিল। মদীনাতে বিরাজমান ছিল অস্বস্তি ও অশান্ত পরিবেশ। সর্বত্র বিদ্রোহীদের আনাগোনা। এদিকে খলিফা নির্বাচনের কাজটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ। তখন শীর্ষস্থানীয় সাহাবীদের মধ্যে একমাত্র আলী (রা)-ই ছিলেন যাকে খলিফা নির্বাচনে সকলে একমত হতে পারে। মুহাজের ও আনসারদের মধ্যে তালহা ও যুবায়ের- ছিলেন। তাঁরা হযরত আলী (রা)-এর নিকট গেলেন এবং বললেন এ মুহূর্তে প্রধান জরুরী কাজ হল খলিফা নির্বাচন। হযরত আলী (রা) এ কথার ইঙ্গিত অনুভব করে বলতে লাগলেন, আমার এর প্রয়োজন নেই। আপনারা যাকে খুশি খলিফা নির্বাচন করুন আমিও তাঁকে মেনে নেব। উভয়ে আরজ করলেন আপনার বর্তমানে কেউ এ কাজের অধিকারী নয়।

সুতরাং আপনাকে ছাড়া আমরা অন্য কাউকে খলিফা নির্বাচন করব না। হযরত আলী (রা) পুনরায় নিজের অমত ব্যক্ত করলেন এবং বললেন আমীর হওয়ার চাইতে উজীর হওয়াটাই আমার পছন্দ। অবশেষে অন্যান্য সাহাবাগণ এসে পুনর্বার তাঁকে অনুরোধ জানালেন যে, আমরা একমাত্র আপনার হাতেই ‘বাইয়াত’ করব। মুসলিম জনগণের অনেক পীড়াপীড়িতে অতিষ্ঠ হয়ে এবং মুসলিম মিন্নাতের মঙ্গলের প্রতি লক্ষ করে তিনি পরিশেষে সম্মত হলেন। ২১ যিলহজ্জ ৩৫ হিজরি সোমবার তাঁর হাতে মুসলিম জনসাধারণের বাইয়াত হয়। এ বাইয়াতে মদীনার বিশিষ্ট সাহাবীগণ অংশগ্রহণ করেছিলেন। বাইয়াতের পর তিনি খিলাফতের আসনে সমাসীন হন।

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর

১. জনাব 'ক' অধ্যক্ষ হিসেবে কলেজের দায়িত্ব গ্রহণ করে কিছু বিষয়ের ওপর অধিক গুরুত্ব দেন। যেমন, কোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত তিনি একা গ্রহণ না করে বরং শিক্ষক পরিষদের সাথে আলোচনা করে তা গ্রহণ করেন। পূর্বে কলেজের কোনো আর্থিক ফান্ড ছিল না। নতুন অধ্যক্ষ ব্যাংকে একাউন্ট খুলে কলেজের সকল আয় সেখানে সংরক্ষণ করেন। দৈনন্দিন খরচ বাদ দিয়ে উদ্বৃত্ত অর্থ তিনি সেখানে সংরক্ষণ করেন। তাছাড়া উদ্বৃত্ত অর্থ তিনি কলেজের উন্নয়ন ও বৃত্তি আকারে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বণ্টন করে দেন।
ক. হযরত ওমর (রা) কত খ্রিস্টাব্দে খিলাফতে অধিষ্ঠিত হন।
খ. খালিদ বিন ওয়ালিদ ইতিহাসে বিখ্যাত কেন? ব্যাখ্যাসহ লেখো।
গ. সিদ্ধান্ত গ্রহণে নতুন অধ্যক্ষের গৃহীত ব্যবস্থার সাথে হযরত ওমর (রা)-এর কোন প্রশাসনিক ব্যবস্থার সামঞ্জস্য দেখা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের উদ্বৃত্ত অর্থ বিষয়ে অধ্যক্ষের পদক্ষেপে হযরত ওমর (রা)-এর নীতির প্রতিফলন লক্ষণীয় উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. হযরত ওমর (রা) ৬৩৪ খ্রিস্টাব্দে খিলাফতে অধিষ্ঠিত হন। দক্ষ ও সুকৌশলী বীর সেনাপতি হিসেবে খালিদ বিন ওয়ালিদ ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।

খ. প্রাথমিক জীবনে কুরাইশদের সেনাপতি হিসেবে যুদ্ধ করলেও হুদায়বিয়ার সন্ধির পর (৬২৮ খ্রি.) খালিদ বিন ওয়ালিদ ইসলাম গ্রহণ করেন। এরপর রাসুল (স)-এর সময়ে হুমায়ুনের যুদ্ধ, তায়েফ বিজয়, তাবুক অভিযানে দক্ষতার সাথে যুদ্ধ করে তিনি ইসলামের বিজয় ত্বরান্বিত করেন। তাছাড়া রাসূল (স)-এর মৃত্যুর পর ইয়ামামার যুদ্ধে বীরবিক্রমে যুদ্ধ করে তিনি ভন্ডনবিদের শায়েস্তা করেন। এরপর জীবিত থাকা পর্যন্ত তিনি ইসলামের সকল যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে ইসলামের বিজয় ছিনিয়ে এনেছেন। ইসলামের খেদমতে বীরত্বপূর্ণ অবদানের জন্যই তিনি ইতিহাসে বিখ্যাত হয়ে আছেন।

গ. সিদ্ধান্ত গ্রহণে নতুন অধ্যক্ষের গৃহীত ব্যবস্থার সাথে হযরত ওমর (রা)-এর প্রশাসনিক ব্যবস্থার অন্যতম দিক মজলিস-উশ-শুরা বা পরামর্শসভা গঠনের মিল রয়েছে।
হযরত ওমর (রা) ছিলেন গণতন্ত্রমনা। তার প্রশাসনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য ছিল গণতান্ত্রিক শাসন। আর এ আদর্শ দ্বারাই তিনি প্রশাসনিক ব্যবস্থায় ইসলামি গণতন্ত্রের পূর্ণ বিকাশ সাধন করেন। কুরআন-হাদিসের আলোকে জনগণের ইচ্ছার প্রতি খেয়াল রেখে তিনি পরামর্শভিত্তিক প্রশাসন ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। আর তার এ বৈশিষ্ট্যেরই প্রতিফলন লক্ষ করা যায় নতুন অধ্যক্ষের গৃহীত ব্যবস্থার মধ্যে।
কলেজের নতুন অধ্যক্ষ হিসেবে দায়িত্ব গ্রহণ করে জনাব 'ক' সকল বিষয়ে শিক্ষক পরিষদের সাথে আলোচনা করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন। হযরত ওমর (রা) ও শাসনকার্য পরিচালনার জন্য মজলিস-উশ-শুরা বা পরামর্শসভা গঠন করেছিলেন। যেকোনো সমস্যা তিনি কুরআন-সুন্নাহ মোতাবেক মজলিস-উশ-শুরার সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে সমাধান করতেন। তিনি দৃপ্তকণ্ঠে ঘোষণা করেন, 'পরামর্শ ব্যতীত কোনো খিলাফত চলতে পারে না। তার গঠিত পরামর্শসভা দুটি ভাগে বিভক্ত ছিল। যেমন ক. মজলিস-উল-আম এবং খ. মজলিস-উল-খাস। মহানবি (স)-এর ঘনিষ্ঠ ও বয়োজ্যেষ্ঠ সাহাবা এবং মদিনার গণ্যমান্য ব্যক্তিদের নিয়ে মতালিস-উল-আম গঠিত ছিল। এরা রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। অন্যদিকে দৈনন্দিন কার্যাদি সম্পাদনের জন্য অল্প সংখ্যক মুহাজিরিন নিয়ে মালিস-উল-খাস গঠিত ছিল। হযরত ওমর (রা) মজলিস-উশ-শুরা ছাড়াও রাজ্য শাসনের ব্যাপারে সাধারণ জনগণের মতামত গ্রহণ করতেন। হযরত ওমর (রা)-এর উল্লিখিত আদর্শেরই প্রতিফলন ঘটেছে নতুন অধ্যক্ষের গৃহীত কর্মকান্ডের।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'উদ্বৃত্ত অর্থ বিষয়ে অধ্যক্ষের গৃহীত পদক্ষেপে হযরত ওমর (রা)-এর রাষ্ট্রীয় কোষাগার হিসেবে বায়তুল মাল পুনর্গঠন নীতির প্রতিফলন লক্ষণীয়।
হযরত ওমর (রা) ছিলেন জনকল্যাণকামী ও ন্যায়ের উজ্জ্বল আদর্শ। খলিফা হিসেবে তিনি ইসলামের আদর্শকে ধারণ করে সর্বদা জনকল্যাণে ব্রতী হয়েছেন। তাই খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়ে তিনি যাকাতভিত্তিক অর্থব্যবস্থা গড়ে তোলেন। তিনি ইসলামি রাষ্ট্রব্যবস্থার সরকারি কোষাগার হিসেবে বায়তুল মালকে পুনর্গঠন করেন। বিভিন্ন উৎস থেকে অর্থ সংগ্রহ করে রাষ্ট্রীয় খরচ বাদে উদ্বৃত্ত অর্থ বায়তুল মাল বা কেন্দ্রীয় অর্থ তহবিলে জমা করা হতো। এ অর্থই বিভিন্ন খাতে সরকারিভাবে বণ্টন করা হতো। উল্লিখিত নীতিরই প্রতিফলন লক্ষ করা যায় উদ্বৃত্ত অর্থ বিষয়ে অধ্যক্ষের নেওয়া পদক্ষেপে। 
কলেজের নতুন অধ্যক্ষ কলেজের ব্যয়ভার বহনের জন্য একটি আর্থিক ফান্ড গড়ে তোলেন। এ ফান্ডে তিনি কলেজের যাবতীয় ব্যয় নির্বাহের পর উদ্বৃত্ত অর্থ জমা রাখেন এবং এ অর্থ কলেজের উন্নয়ন ও বৃত্তি হিসেবে শিক্ষার্থীদের মধ্যে বণ্টন করেন। একইভাবে হযরত ওমর (রা) বায়তুল মাল সংস্কার ও পুনর্গঠন করে সকল প্রদেশে এর শাখা প্রতিষ্ঠা করেন। বায়তুল মাল প্রধানত তিন প্রকারের ছিল। ক. বায়তুল মাল আল খাস -এটি ছিল শাসক ও অভিজাতদের ব্যক্তিগত সম্পত্তি। খ. বায়তুল মাল আল আম -এটি খিলাফতের রাষ্ট্রীয় বা কেন্দ্রীয় ব্যাংক হিসেবে পরিচিত ছিল। গ. বায়তুল মাল আল মুসলেমিন -এটি ছিল ইসলামি রাষ্ট্রের দ্বিতীয় রাজকোষাগার। বায়তুল মানের এ শাখা সমাজকল্যাণমূলক কাজ, যেমন রাস্তাঘাট, সেতু, মসজিদ, মাদ্রাসা নির্মাণ, এতিম ও দরিদ্রের সাহায্যদানবইত্যাদি কর্মকান্ড পরিচালনা করত। পরিশেষে বলা যায়, জনকল্যাণকামী চিন্তা-চেতনা ও কর্মকান্ডের দিক দিয়ে অধ্যক্ষের গৃহীত উদ্বৃত্ত অর্থ বিষয়ক হযরত ওমর (রা)-এর বায়তুল মাল নীতির আংশিক প্রতিফলন।

২. জনাব 'ক' পৌরসভার নির্বাচিত চেয়ারম্যান। মেয়াদের প্রথম দিকে তিনি জনগণের কাছে বেশ জনপ্রিয় ছিলেন। কিন্তু মেয়াদের শেষের দিকে পৌরসভার বেশ কিছু গুরুত্বপূর্ণ পদে আপনজনদের নিয়োগ দিয়ে তিনি সমালোচনার পাত্রে পরিণত হন। বিরোধীপক্ষ তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ছাড়াও আরও অনেক অভিযোগ আনয়ন করতে থাকে। জনাব 'ক' সকল অভিযোগ তদন্ত করে দেখবেন এবং প্রকৃত অপরাধীদের শাস্তি দিবেন- এই মর্মে আশ্বাস দিলে পরিস্থিতি কিছুটা শান্ত হয়। কিন্তু পৌরসভার সচিবের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে তিনি সফল হতে পারেননি। ফলে পৌরসভায় স্থায়ী অরাজকতা ও অশান্তি সৃষ্টি হয়।
ক. 'যুন্নুরাইন' অর্থ কী?
খ. হযরত ওসমান (রা) কীভাবে খলিফা নির্বাচিত হন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের সচিবের সাথে খলিফা ওসমান (রা)-এর প্রশাসনের কোন চরিত্রের মিল রয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে আনীত অভিযোগের আলোকে খলিফা ওসমান (রা)-এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ পর্যালোচনা করো। 

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'যুন্নুরাইন' অর্থ দুই জ্যোতি বা নুরের অধিকারী।

খ. সাহাবিদের দ্বারা গণতান্ত্রিক পদ্ধতিতে ওসমান (রা) খলিফা নির্বাচিত হন। খলিফা নির্বাচনের জটিলতা এড়াতে হযরত ওমর (রা) মৃত্যুর পূর্বে একটি নির্বাচনি পরিষদ গঠন করেন। যার সদস্য ছিলেন হযরত ওসমান (রা), হযরত আলী (রা), তালহা, যুবাইর, সাদ বিন আবি ওয়াক্কাস ও আবদুর রহমান। হযরত ওমর (রা)-এর মৃত্যুর পর (৬৪৪ খ্রি.) খলিফা নির্বাচন নিয়ে একটি বৈঠক বসে। তালহা এ সময় মদিনায় উপস্থিত ছিলেন না এবং আব্দুর রহমান খিলাফতের গুরুভার নিতে সম্মত ছিলেন না। আব্দুর রহমান, যুবাইর, ওসমান ও আলীকে সমর্থন করেন। অন্যদিকে, সাদ ওসমানকে, ওসমান আলীকে এবং আলী ওসমানকে সমর্থন করেন। ফলে এক ভোট বেশি পেয়ে হযরত ওসমান ৬৪৪ খ্রিস্টাব্দে মুসলিম বিশ্বের তৃতীয় খলিফা নির্বাচিত হন।

গ. উদ্দীপকের সচিবের সাথে হযরত ওসমান (রা)-এর প্রশাসনের প্রধান উপদেষ্টা মারোয়ানের মিল রয়েছে। 
ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান (রা) প্রশাসনিক স্বার্থে এবং খিলাফতের স্থিতিশীলতার জন্য তিনি বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করেন। কিন্তু কিছু স্বার্থান্বেষী মহল তার এসব উদ্যোগকে গণতন্ত্র বিরোধী এবং স্বজনপ্রীতিমূলক বলে অভিযোগ দেয়। যদিও তিনি এসব অভিযোগ খন্ডাতে পেরেছিলেন, কিন্তু লোভী, বিশ্বাসঘাতক মারোয়ানের চক্রান্তে তাকে প্রাণ দিতে হয়েছে। উদ্দীপকে বর্ণিত সচিবের মধ্যেও এ ধরনের বিশ্বাসঘাতকতামূলক কর্মকান্ডের প্রতিফলন লক্ষণীয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, পৌরসভার চেয়ারম্যান জনাব 'ক' তার বিরুদ্ধে সঠিক আনীত অভিযোগসমূহের ও শাস্তির ব্যবস্থার আশ্বাস দেওয়া সত্ত্বেও সচিবের ষড়যন্ত্রে তিনি সফল হতে পারেননি। একইভাবে হযরত ওসমান (রা) প্রথম হয় উপদেষ্টা তদন্ত ও খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়ে (৬৪৪ খ্রি.) বছর বেশ সুনামের সাথে শাসনকার্য পরিচালনা করেন। এরপর তার বিরুদ্ধে নানামুখী ষড়যন্ত্র শুরু হয়। তিনি একটু উদার এবং সরলমনা ছিলেন। আর এ সুযোগকে কাজে লাগিয়ে খিলাফতের প্রধান এবং খলিফার বেশ কিছু ধ্বংসাত্মক চাচাত ভাই জামাতা মারোয়ান বেশ ৬ নীতি গ্রহণ করেন। স্বার্থপর ও কূটনীতিবিদ মারোয়ানের উদ্দেশ্য ছিল রাষ্ট্রের সমস্ত ক্ষমতা করায়ত্ত করা। তাই তিনি উমাইয়াগণকে রাষ্ট্রীয় উচ্চপদে নিয়োগ দেন এবং হাশেমিদের অপসারণ করেন। হাশেমিদের ধনে-মানে দুর্বল করে উমাইয়াদের সুপ্রতিষ্ঠিত করাই ছিল তার একমাত্র উদ্দেশ্য। এ নীতি খিলাফতে বিশৃঙ্খলা সৃষ্টি করে। মারোয়ানের কুচক্রান্ত ও স্বার্থনীতি খলিফার বিরুদ্ধে বিদ্রোহকে উস্কে দেয় এবং শেষ পর্যন্ত তার বিশ্বাসঘাতকতায় খলিফা ওসমান (রা) কে মিথ্যা অভিযোগে প্রাণ দিতে হয়। সুতরাং দেখা যাচ্ছে, চরিত্রগত দিক দিয়ে মারোয়ান এবং উদ্দীপকের সচিব একে অন্যের প্রতিরূপ।

ঘ. উদ্দীপকে আনীত অভিযোগের মতো খলিফা ওসমান (রা)-এর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ এনে দুষ্কৃতকারীরা তাকে হত্যা করেছিল। কিন্তু এসব অভিযোগ ছিল সম্পূর্ণ মিথ্যা, বানোয়াট, ভিত্তিহীন এবং কল্পনাপ্রসূত।
ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান (রা) ছিলেন সরলমনা ও উদার প্রকৃতির। প্রশাসনিক সুবিধার্থে তিনি রদবদল সংক্রান্ত কিছু সিদ্ধান্ত নিলেও তা অযৌক্তিক ছিল না। কিন্তু তার সরলতার সুযোগ নিয়ে অনেকে তার বিরুদ্ধে স্বজনপ্রীতি ও রাষ্ট্রীয় সম্পদ আত্মসাতের অভিযোগ। আনে, যা উদ্দেশ্য প্রণোদিত ও ভিত্তিহীন। উদ্দীপকেও এ বিষয়টির প্রতিফলন লক্ষণীয়। উদ্দীপকে দেখা যায় যে, জনাব 'ক' এর বিরুদ্ধে কিছু অভিযোগ আনা হয়, দেখা যায় যে, জনাব যা ছিল ষড়যন্ত্রমূলক। অনুরূপভাবে হযরত ওসমানের বিরুদ্ধেও বেদুইন ও অনারব মুসলমানগণ স্বজনপ্রীতির অভিযোগ আনে। কিন্তু তিনি আত্মীয়স্বজনের প্রতি কিছুটা দুর্বল থাকলেও কোনো অনুপযুক্ত আত্মীয়কে কোনো গুরুত্বপূর্ণ পদে নিয়োগদান করেননি। পরিস্থিতির কারণে তিনি গভর্নর পরিবর্তন করলেও গভর্নর তার আত্মীয় ছিল না। হযরত ওসমান বিনদ্ধে আনীত (রা)-এর বিরুদ্ধে অভিযোগগুলোর মধ্যে অন্যতম গুরুতর অভিযোগ কুরআন। শরিফ দন্ধীকরণ। তার রাজত্বকালে ইসলামি রাষ্ট্রের বিভিন্ন অঞ্চলের জনসাধারণ নিজেদের সুবিধার্থে কুরআনের ভাষা ও উচ্চারণ পরিবর্তন করে পাঠ করতে থাকে। তাই তিনি কুরআন শরিফের উচ্চারণগত সমস্যা দূর করার জন্যই পদক্ষেপ নিয়েছিলেন এবং ত্রুটিপূর্ণ ও অসংগতিপূর্ণ কপিগুলো পুড়িয়ে ফেলেছিলেন। বায়তুল মালের অর্থ আত্মসাৎ তো দূরের কথা বরং তিনি নিজের সম্পদ ইসলামের জন্য অকাতরে দান করেছেন সরকারি চারণভূমি রাষ্ট্রীয় পশুপালনের জন্য ব্যবহার করেছিলেন এবং এক্ষেত্রে তিনি তার পূর্বের দুইজন খলিফাকে অনুসরণ করেছিলেন। রাষ্ট্রের শান্তি ও নিরাপত্তা বিধানের জন্যই তিনি আবু জর গিফারিকে নির্বাসন দিয়েছিলেন। পরিশেষে বলা যায়, ওসমান (রা)-এর বিরুদ্ধে আনীত অভিযোগ ছিল ভিত্তিহীন।

৩. বাংলায় মুসলিম শাসনের প্রাক্কালে বিভিন্ন অঞ্চলে অনেক ভন্ড পিরের আবির্ভাব হয়। তারা ইসলামের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে মন্দ ও পাপ কাজে লিপ্ত করায়, যা ইসলাম পরিপন্থি। তারা প্রকৃত সত্যের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ও যুদ্ধ ঘোষণা করে। নব্য ইসলাম ধর্ম গ্রহণকারীগণ সঠিকভাবে ইসলামের মর্মবাণী অনুধাবন করতে না পারায় এবং কোনো মহান নেতার সাহশ্চর্য না পাওয়ায় দুর্বল ইমানি শক্তি নিয়ে সঠিক পথের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে।
ক. ধর্মত্যাগী ভন্ডনবিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধের নাম কী?
খ. হুদায়বিয়ার সন্ধিকে প্রকাশ্য বিজয় বলা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের ভন্ডপিরের সাথে আবু বকর (রা)-এর সময়কালের ভন্ডনবিদের সাদৃশ্য ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. রিদা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ধর্মত্যাগী ভন্ডনবিদের বিরুদ্ধে পরিচালিত যুদ্ধের নাম রিদ্দার যুদ্ধ।

খ. ৬২৮ খ্রিস্টাব্দে মক্কার কুরাইশ ও রাসুল (স)-এর মধ্যে সম্পাদিত হুদায়বিয়ার সন্ধিতে পরোক্ষভাবে মুসলমানদের বিজয় নিহিত ছিল। তাই পবিত্র কুরআনে একে প্রকাশ্য বিজয় হিসেবে ঘোষণা দেওয়া হয়েছে। 
ইসলাম ও বিশ্বের ইতিহাসে হুদায়বিয়ার সন্ধি এক যুগান্তকারী ঘটনা। কারণ এটি সর্বতোভাবে মুসলিম স্বার্থের অনুকূলে ছিল। এ সন্ধির দ্বারা কুরাইশরা মহানবি (স) কে একজন মহান নেতা এবং মদিনা রাষ্ট্রের প্রধান হিসেবে মেনে নেয়। মুসলমানরা যে একটি স্বতন্ত্র শক্তি তার বহিঃপ্রকাশ ঘটে এ সন্ধির মাধ্যমে। মোট কথা, এ সন্ধি মুসলমানদের একটি স্থায়ী রাজনৈতিক মর্যাদা দান করে। এ কারণে হুদায়বিয়ার সন্ধিকে 'ফাতহুম মুবীন' বা শ্রেষ্ঠ বিজয় বলা হয়।

গ. মুসলিম জাহানের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা)-এর শাসনামলে ভন্ডনবির আবির্ভাবের ঘটনার সাথে উদ্দীপকে বর্ণিত ভন্ড পিরদের মিল রয়েছে।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, প্রাচীন বাংলায় বিভিন্ন অঞ্চলে ভন্ড পিরদের আবির্ভাব হয়। তারা ইসলামের ভ্রান্ত ব্যাখ্যা দিয়ে সাধারণ মানুষকে বিভ্রান্ত করে। তারা প্রকৃত সত্যের বিরুদ্ধে যুদ্ধ ঘোষণা করে। তাদের এরূপ কর্মকান্ডের সাথে মহানবি (স)-এর মৃত্যুর পর আবু বকর (রা)-এর খিলাফতকালের কিছু ভক্তনবির কর্মকান্ডের সামঞ্জস্য রয়েছে। আখেরি জামানার নবি। ও বিশ্বমানবতার উত্তম আদর্শ হযরত মুহাম্মদ (স) এর মৃত্যুর পর অর্থাৎ ৬৩২ খ্রিস্টাব্দের পর গোটা মুসলিম জাহানে ব্যাপক বিশৃঙ্খলা দেখা দেয়। এ সময় কিছু লোক হীনস্বার্থ উদ্ধারের জন্য নিজেদেরকে নবি হিসেবে দাবি করে। এদের মধ্যে আসওয়াদ আনাসি, মূসায়লামা, ভোলায়হা এবং সালাহ ছিল অন্যতম। এরা নিজেদের হিসেবে ঘোষণা করে জনসাধারণের মাঝে বিভ্রান্তির সৃষ্টি করেছিল। রাসুলের মৃত্যু পরবর্তী সময়ে যে পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় উদ্দীপকেও তা লক্ষণীয়। সুতরাং উদ্দীপকের সাথে রাসুল (স)-এর ওফাতের পর এবং হযরত আবু বকর (রা)-এর সময়কার ভন্ডনবিদের মিল রয়েছে।

ঘ. রিদ্দা যুদ্ধের প্রেক্ষাপট মুসলিম সম্প্রদায়ের জন্য অত্যন্ত স্পর্শকাতর অধ্যায়। 
মহানবি (স)-এর ইন্তেকালের পর বিভিন্ন আরব গোত্র ধর্ম ত্যাগ করে পূর্ব ধর্মে ফিরে যাচ্ছিল। এই সুযোগে কতিপয় ভন্ডনবির আবির্ভাব ঘটে। হযরত আবু বকর (রা) এ সমস্ত ধর্মত্যাগী ও ভন্ডনবিদের দমন করার জন্য যে যুদ্ধ পরিচালনা করেন তাই রিদা যুদ্ধ নামে পরিচিত। উদ্দীপকেও এ যুদ্ধের প্রেক্ষাপটের প্রতি ইঙ্গিত করা হয়েছে। উদ্দীপকে বাংলাদেশের বিভিন্ন অঞ্চলে ভন্ড পিরের আবির্ভাবের ঘটনায় ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা)-এর শাসনামলে স্বধর্মত্যাগী ও ভন্ডনবিদের প্রতিচ্ছবি ফুটে উঠেছে। তার শাসনামলে আসওয়াদ আনাসি, মুসায়লামা, তোলায়া এবং সালাহ নামে বেশ কয়েকজন ভন্ডনবির আবির্ভাব ঘটে। এ সমস্ত ভন্ডনবি ও স্বধর্মত্যাগীদের প্রবল আন্দোলনে আরব রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন হয়ে। পড়লে হযরত আবু বকর (রা) তার নির্ভীকতা, বিচক্ষণতা ও সত্যনিষ্ঠার মাধ্যমে তাদেরকে দমন করেন। আবু বকর (রা) প্রথমে ফিরোজ মাইলামীর মাধ্যমে আসওয়াদ আনাসিকে হত্যা করেন। পরবর্তীকালে সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদকে প্রেরণ করে তোলায়হা, সালাহ ও মুসায়লামাকে কঠোর হস্তে দমন করেন। এছাড়া আবু বকর (রা) দক্ষিণ সিরিয়ার যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি প্রকাশকারীদেরকেও কঠোর হস্তে দমন করেন। আর এভাবেই বিভিন্ন ঘটনা ও বিচক্ষণ পরিকল্পনার মাধ্যমে রিদ্দা যুদ্ধ পরিচালিত হয়। 
উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, ভন্ডনবি ও স্বধর্মত্যাগীদের দমনের প্রেক্ষিতে হযরত আবু বকর (রা) রিদ্দা যুদ্ধ পরিচালনা করেন।

৪. সমশের উদ্দিন একজন বড় ব্যবসায়ী ও ধনবান ব্যক্তি। তার উদারতার কথা কারো অজানা নয়। তিনি যেমন নম্র, ভদ্র ও চরিত্রবান তেমনি পরোপকারীও বটে। যে কোনো সমস্যা বা দুর্যোগের সময় তিনি মানুষের সাহায্যার্থে এগিয়ে আসেন। তার দয়া-দাক্ষিণ্য, উত্তম চরিত্র ও মহত্বের কারণে সকলেই তাকে সম্মান করে। ধর্মীয় ব্যাপারে তিনি যথেষ্ট আনুগত্যশীল। তিনি এলাকাবাসীর অনুরোধে নিজ খরচে একটি মসজিদ নির্মাণ করে দেন। এতে এলাকাবাসী খুবই খুশি হয়।
ক. হযরত ওমর (রা)-এর উপাধি কী ছিল?
খ. দিওয়ান বলতে কী বুঝ? ব্যাখ্যা করো।
গ. সমণের সাহেব কোন খলিফাকে অনুসরণ করে মসজিদের সকল ব্যয়ভার বহন করেছিলেন? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. আর্তমানবতার সেবায় সমণের সাহেবের মতো মানুষদের ভূমিকা সমাজে কী ধরনের অবদান রাখবে বলে তুমি মনে কর? মতামত দাও।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. হযরত ওমর (রা)-এর উপাধি ছিল 'ফারুক' বা সত্য-মিথ্যার প্রভেদকারী।

খ. হযরত ওমর (রা)-এর কেন্দ্রীয় প্রশাসনের একটি অন্যতম দক্ষতর ছিল দিওয়ান বা রাজস্ব বিভাগ। 
সাম্রাজ্যের আয়-ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষণের জন্য হযরত ওমর (রা) দিওয়ান নামক একটি স্থায়ী বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। প্রশাসনিক সুবিধার্থে একে দুভাগে বিন্যস্ত করা হয়। এর প্রথম ভাগে আয় এবং দ্বিতীয় ভাগে ব্যয়ের হিসাব সংরক্ষিত হয়। রাজস্ব আদায়ের উৎসগুলো ছিলত গনিমত, যাকাত, উপর, জিজিয়া, আল খারাজ (ভূমিকর), উপুর, ফাই (রাষ্ট্রীয় ভূমির আয়), আল-হিসা। এসব উৎস থেকে আয়কৃত অর্থ বায়তুল মালের মাধ্যমে জনকল্যাণে ব্যয় করা হতো।

গ. সমশের উদ্দিন সাহেব ইসলামের তৃতীয় খলিফা হযরত ওসমান (রা) কে অনুসরণ করে মসজিদের ব্যয়ভার বহন করেছিলেন।
হযরত ওসমান (রা)-এর খিলাফতকালে জনকল্যাণ ও খিলাফতের বিশেষ অগ্রগতি সাধিত হয়। এ সময় মাঝে মাঝে খায়বরের দিক হতে জলোচ্ছ্বাস আসায় জনসাধারণকে অনেক দুর্ভোগ পোহাতে হতো। তাই মদিনার কিছু দূরে হযরত ওসমান (রা) 'মাহজুর' নামক একটি বেড়িবাঁধ নির্মাণ করে দেন। মসজিদে নববির প্রাসাদের কাজ ২০ হিজরিতে বিশেষ ব্যবস্থাধীনে নতুন করে আরম্ভ করেন। মদিনার পার্শ্ববর্তী জমিগুলো ক্রয় করে দশ মাসের অবিরাম চেষ্টার পর ইট, পাথর ও চুনার সাহায্যে একটি সুদৃঢ় প্রাসাদ নির্মাণ করেন। উদ্দীপকে সমশের উদ্দিন হযরত ওসমান (রা)-এর এ নীতি অনুসরণ করেন।
উদ্দীপকে সমণের উদ্দিন ধর্মানুরাগী ব্যক্তি। তিনি মানুষের অনুভূতিকে সম্মান জানান। তাই এলাকার মানুষ তাকে অনুরোধ জানালে তিনি মসজিদ নির্মাণের ব্যয় ও জায়গার ব্যাপারে যাবতীয় ব্যয়ভার গ্রহণের ঘোষণা দেন। এতে সমণের উদ্দিনের মহানুভবতার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে একই বৈশিষ্ট্য হযরত ওসমান (রা)-এর ক্ষেত্রেও লক্ষ করা যায়। তিনি মুসলমানদের পানির কষ্ট লাঘবের জন্য এক ইহুদির কাছ থেকে ২০০০০ দিনারের বিনিময়ে মদিনার বীরকুমা নামক একটি কূপ ক্রয় করে দান করেন। হযরত ওসমান (রা)-এর এ উদ্যোগ জনকল্যাণে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। সুতরাং বলা যায়, সমশের উদ্দিন মসজিদের ব্যয়ভার বহনের ক্ষেত্রে হযরত ওসমান (রা) কে অনুসরণ করেছেন।

ঘ. আর্তমানবতার সেবায় সমশের সাহেবের মতো মানুষদের ভূমিকা সমাজ উন্নয়ন এবং দরিদ্র ও অসহায় মানুষদের দুঃখ-কষ্ট দূরীকরণে সহায়ক হবে।
ইসলাম মানবতা ও কল্যাণের ধর্ম। মানুষের সর্বাধিক কল্যাণ নিশ্চিতকরণে ইসলামের সকল বিধি-বিধান প্রণীত হয়েছে। আর ইসলামের অনুসারীগণ এসব বিধান অনুসরণ করেই যুগে যুগে মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করেছেন। রাসুল (স) থেকে শুরু করে চার খলিফার জীবন ছিল আর্তমানবতার সেবায় উৎসর্গকৃত। আর এ মহান ব্যক্তিদের ভূমিকায় একটি সুষ্ঠু, সুন্দর, সাবলীল, ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব হয়েছে। উদ্দীপকের সমশের উদ্দিনও তাদের আদর্শে অনুপ্রাণিত হয়ে নিজেকে মানবতার সেবায় উৎসর্গ করেছেন।
সমশের উদ্দিনের মতো সমাজের অন্যান্য ধনী ব্যক্তিরা যদি দরিদ্র অসহায়দের কল্যাণে দান করতে উৎসাহী হন, তবে সমাজ থেকে দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব হবে। সেই সাথে জনকল্যাণমূলক কাজের খলিফা হযরত ব্যয় করা হলে সমাজের সার্বিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। ইসলামের তৃতীয় ওসমান (রা) এক্ষেত্রে ধনীদের জন্য অনুকরণীয় আদর্শ। তিনি সমাজ বিনির্মাণে অকাতরে সম্পদ ব্যয় করেছেন। ইসলামের খেদমতে তার। বিপুল সম্পদ দান করে দিয়েছেন। ফলে ইসলামের প্রসার ও প্রচারে আর্থিক সমস্যার সমাধান হয়েছে। অন্যদিকে মসজিদ, রূপ নির্মাণে তার অবদান মুসলমানদের ধর্মীয় কাজকে সহজসাধ্য করে দিয়েছে। ফলে মানুষের মধ্যে ধর্ম পালনে আগ্রহ সৃষ্টি হয়েছে। উদ্দীপকের সমশের উদ্দিনও তার নীতি অনুসরণ করেছেন। এভাবে সমাজের বিত্তবান ও সম্পদশালীরা যদি ইসলামের সেবা ও মানুষের কল্যাপে সম্পদ বায়ে আত্মনিয়োগ করেন; তবে দারিদ্র্যমুক্ত, উন্নয়নমুখী ও কল্যাণধর্মী সমাজ বিনির্মাণ সম্ভব হবে।
পরিশেষে বলা যায়, ইসলামের নীতি ও আদর্শ অনুসরণ করে সমশের উদ্দিন যেভাবে সমাজে ভূমিকা রাখছেন, সমাজের প্রত্যেক বিত্তবানদের কর্তব্য সমাজের সার্বিক উন্নয়নে সম্পদ ব্যয় করে সমাজকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়া।

৫. সাধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান জনাব আল-আমীনের মৃত্যুর পর ইউনিয়নবাসী জনাব আসলামকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন। চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়ে তিনি অনেক সমস্যা ও বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হন। এ সময় কিছু ভন্ডপির ও ইউনিয়নের কর দিতে অস্বীকারকারীগণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটান। কিন্তু চেয়ারম্যান আসলাম সাহেব অসীম সাহস ও অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। বিশ্বস্ততার জন্য তাকে বিশেষ উপাধিতে ভূষিত করা হয়।
ক. হযরত ওমর (রা) তার বিশাল সাম্রাজ্যকে কতটি প্রদেশে বিভক্ত করেন?
খ. মহানবি (স) কাকে এবং কেন সিদ্দিক উপাধি দিয়েছিলেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আসলাম সাহেবের সাথে তোমার পাঠ্যপুস্তকের কোন খলিফার সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উক্ত খলিফাকে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা যায় কি? মতামত দাও। 

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. হযরত ওমর (রা) তার বিশাল সাম্রাজ্যকে ১৪টি প্রদেশে বিভক্ত করেন।

খ. মিরাজের কথা সর্বপ্রথম বিশ্বাস করার জন্য মহানবি (স) হযরত আবু বকর (রা) কে 'সিদ্দিক' উপাধি দিয়েছিলেন। হযরত আবু বকর (রা) ছিলেন মহানবি (স)-এর একান্ত সহযোগী। তাই রাসুল (স)-এর নবুয়ত লাভের পর বয়স্ক পুরুষ হিসেবে তিনি সর্বপ্রথম ইসলাম গ্রহণ করেন। এছাড়া রাসুল (স)-এর মেরাজ (আল্লাহর সাথে সাক্ষাতের জন্য ঊর্ধ্বগমন) গমনের কথা হযরত আবু বকর (রা) সর্বপ্রথম নির্ধিদ্বায় বিশ্বাস করেন। এসব কারণে মহানবি (স) তাঁকে ‘সিদ্দিক’ বা বিশ্বাসী উপাধিতে ভূষিত করেন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আসলাম সাহেবের সাথে আমার পাঠ্যপুস্তকে বর্ণিত খলিফা হযরত আবু বকর (রা)-এর সাদৃশ্য আছে।
হযরত মুহাম্মদ (স)-এর ওফাতের (মৃত্যুবরণ) পর যে চারজন সাহাবি তাঁর প্রতিনিধিরূপে মুসলিম রাষ্ট্র পরিচালনার দায়িত্ব পালন করেন তাদের মধ্যে আবু বকর (রা) একজন। তিনি ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম রাষ্ট্রের কল্যাণের জন্য অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এবং সুষ্ঠুভাবে রাজ্যের শাসনকার্যাদি পরিচালনা করেছেন। এ দক্ষ রাষ্ট্র পরিচালকের বৈশিষ্ট্যটিই আসলাম সাহেবের ক্ষেত্রে লক্ষণীয়। সাধুহাটি ইউনিয়নের চেয়ারম্যান আল-আমীনের মৃত্যুর ইউনিয়নবাসী আসলাম সাহেবকে চেয়ারম্যান নিযুক্ত করেন। চেয়ারম্যান হয়ে তিনি অনেক সমস্যা ও বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হন। এ সময় কিছু ভগুপির ও ও ইউনিয়নের কর অস্বীকারকারীগণ আইন-শৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটান। কিন্তু জনাব আসলাম অসীম সাহস ও অত্যন্ত দৃঢ়তার সাথে এ পরিস্থিতি মোকাবিলা করেন। এছাড়া বিশ্বস্ততার জন্য তিনি বিশেষ উপাধিতে ভূষিত হন। হযরত আবু বকর (রা)-এর ক্ষেত্রেও এমনটি লক্ষণীয়। তিনি ক্ষমতা গ্রহণের পর নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হন। মহানবি (স)-এর জীবনের শেষ দিকে এবং আবু বকর (রা)-এর ক্ষমতা গ্রহণের পর আসওয়াদ আনাসি, মুসায়লামা, তোলায়হা এবং সাজাহ নবুয়তের দাবি করে রাজ্যের সর্বত্র বিশৃঙ্খলা। সৃষ্টি করে।। কিন্তু তিনি বিশিষ্ট মুসলিম সেনাপতি খালিদ বিন ওয়ালিদদের সহায়তায় এদেরকে কঠোর হস্তে দমন করেন। এছাড়া মহানবি (স)-এর মেরাজ গমনের ঘটনা তিনিই প্রথম বিশ্বাস করে সিদ্দিক উপাধিপ্রাপ্ত হন। এসব কারণে বলা যায়, আসলাম সাহেবের সাথে ইসলামের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা)-এর সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. হ্যাঁ, ইসলামের সেবায় কল্যাণধর্মী ভূমিকা রাখায় হযরত আবু বকর (রা) কে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা যায়। মহানবি (স)-এর মৃত্যুর পর তার প্রতিনিধি হয়ে হযরত আবু বকর (রা) মুসলিম সাম্রাজ্য পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। তিনি ছিলেন মহানবি (স)-এর যোগ্য ও উপযুক্ত প্রতিনিধি। মহান আল্লাহ ও রাসুলের নির্দেশ অনুযায়ী ইসলামের একনিষ্ঠ সেবা করে তিনি ইসলামের ত্রাণকর্তা হিসেবে স্বীকৃতি পান।
মহানবি (স)-এর ওফাতের পর মুসলমানদের মধ্যে যে বিভ্রান্তি ও বিশৃঙ্খলা ছড়িয়ে পড়েছিল তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে তা দূর করে মুসলিম সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করেন। রাসুল (স)-এর পবিত্র দেহ সমাহিতকরণ ও খলিফা নির্বাচনকেন্দ্রিক সমস্যার সুষ্ঠু সমাধান করে তিনি প্রাথমিক পর্যায়ে ইসলামকে রক্ষা করেন। ইসলামের সংকটকালীন পরিস্থিতিতে খিলাফতের দায়িত্ব গ্রহণ করে তিনি নিয়ন্ত্রণহীন বিশৃঙ্খল জনগণকে সুনির্দিষ্ট ধর্মীয় অনুশাসন পালনে বাধ্য করেন। তাছাড়া যাকাত প্রদানে অস্বীকৃতি জ্ঞাপনকারী বেদুইন গোত্রগুলোর (আবস ও জুবিয়ান) বিরুদ্ধে তিনি উপযুক্ত ব্যবস্থা গ্রহণ করে ইসলামি বিধান অনুযায়ী, তাদের যাকাত প্রদানে বাধ্য করেন। তিনি দীনকে (ইসলাম) সকল আদর্শের উর্ধ্বে প্রতিষ্ঠা করেন। ভন্ডনবিদের সমুচিত শিক্ষা দিয়ে তিনি ইসলামের ভিত্তি সুপ্রতিষ্ঠিত করেন। আমির উল মুমেনীন (বিশ্বাসীদের নেতা) হিসেবে হযরত আবু বকর (রা) আরব ভূখন্ড থেকে প্রবন্ধনা, প্রতারণা, ভন্ডামি এবং অনৈসলামিক কার্যকলাপের মূলোৎপাটন করে ইসলামকে নিরাপদ করেন। এছাড়া তিনি বিক্ষিপ্তভাবে ছড়িয়ে থাকা পবিত্র কুরআনের বাণীগুলো সংগ্রহ করে পুস্তক আকারে লিখে রাখার ব্যবস্থা করেন।
পরিশেষে বলা যায়, খিলাফত লাভের পর ইসলাম ধর্ম ও মুসলিম রাষ্ট্রের একনিষ্ঠ সেবা করে হযরত আবু বকর (রা) ইসলামি খেলাফতকে যেভাবে রক্ষা করেছেন, তাতে নিঃসন্দেহে তাকে ইসলামের ত্রাণকর্তা বলা যায়।

৬. জনাব আলী আশরাফ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে রাজ্যে শান্তি শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্যে পূর্বের শাসকের নিযুক্ত প্রাদেশিক গভর্নরদের বরখাস্ত করেন। মুহিব নামক গভর্নর বাতীত সকল গভর্নর তার নির্দেশনার প্রতি সম্মান দেখান। তাছাড়া গভর্নর মুহিব সাহেব পূর্বের শাসনকর্তার সময়ে যেসব সরকারি সম্পত্তির মালিক হয়েছিলেন নতুন শাসনকর্তা তা রাজকোষে ফিরিয়ে নিলে উক্ত শাসনকর্তা ও গভর্নর মুহিবের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। 
ক. কত খ্রিষ্টাব্দে উস্ট্রের যুদ্ধ সংঘটিত হয়?
খ. দুমার মীমাংসা কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংঘর্ষ দ্বারা তোমার পঠিত কোন সংঘর্ষের ইঞ্জিত দেওয়া হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উক্ত সংঘর্ষে খলিফার ব্যর্থতার ফলে ইসলামে গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্রের উদ্ভব হয় তোমার উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. উস্ট্রের যুদ্ধ সংঘটিত হয় ৬৫৬ খ্রিষ্টাব্দে।

খ. ইসলামের চতুর্থ খলিফা হযরত আলী (রা)-এর সাথে আমির মুয়াবিয়ার সংঘর্ষের পরিসমাপ্তির জন্য যে সালিশির সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছিল সেটাই 'দুমার মীমাংসা' নামে পরিচিতি। সিফফিনের যুদ্ধের একপর্যায়ে হযরত আলী (রা) এবং মুয়াবিয়া মধ্যস্থতাকারী। নিযুক্ত করে নিজেদের মধ্যে বিরোধ নিষ্পত্তির সিদ্ধান্ত নেন। বিরোধ মীমাংসার জন্য আলী (রা) তার পক্ষে মুসা আল আশআরিক এবং মুয়াবিয়া আমর ইবন আল-আসকে প্রতিনিধি মনোনীত করেন। সিদ্ধান্ত মোতাবেক প্রতিনিধিরা প্রত্যেকে ৪০০ জন লোকসহ ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দে সিরিয়া ও ইরাকের মধ্যবর্তী দুমাতুল জন্দল' নামক স্থানে হাজির হন। তবে এ সালিশি বৈঠকে মুয়াবিয়ার প্রতিনিধি আমর ইবন আল-আসের ধূর্ততার জন্য হযরত আলী (রা) খলিফা পদ থেকে অপসারিত হন। ঐতিহাসিক এ ঘটনাই 'দুমার মীমাংসা' নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংঘর্ষ দ্বারা আমার পঠিত সিফফিনের যুদ্ধের ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে। হযরত আলী (রা)-এর খিলাফতকাল ছিল আত্মঃবিপ্লব ও গোলযোগে পরিপূর্ণ।
এ সময় হযরত ওসমান (রা)-এর হত্যাকান্ডকে কেন্দ্র করেই তিনটি। সংঘটিত হয়। এগুলোর মধ্যে সিফফিনের যুদ্ধ একটি। উদ্দীপকের বর্ণনায় এ যুদ্ধের ঘটনারই প্রতিফলন ঘটেছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, জনাব আলী, আশরাফ ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়ে রাজ্যে শান্তি-শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠার জন্য পূর্বের শাসকের নিযুক্ত প্রাদেশিক গভর্নরদের বরখাস্ত করেন। গভর্নর মুহিব বাতীত সকলে তার নির্দেশনার প্রতি সম্মান দেখান। এছাড়া আলী আশরাফ মুহিবের সম্পতি রাজকোষে ফিরিয়ে নিলে আলী আশরাফ ও মুহিবের মধ্যে সংঘর্ষ শুরু হয়। সিফফিনের। যুদ্ধের ক্ষেত্রেও এ এ ধরনের ঘটনা লক্ষণীয়। হযরত আলী (রা) খিলাফতে অধিষ্ঠিত হয়েই শান্তি স্থাপনের উদ্দেশ্যে হযরত ওসমান (রা) এর সময়কার প্রাদেশিক গভর্নরদের অপসারণের সিদ্ধান্ত নেন। সকল গভর্নর তার এ সিদ্ধান্তের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করলেও সিরিয়ার গভর্নর মুয়াবিয়া এ সিদ্ধান্ত মানতে অনীহা প্রকাশ করেন। তিনি হযরত ওসমান (রা)-এর খিলাফতকালে দুর্নীতি করে রাজকোষের অর্থের মাধ্যমে বিপুল সম্পত্তির মালিক হন। হযরত আলী (রা) এসব সম্পতি পুনরায় রাজকোষে ফিরিয়ে নিলে মুয়াবিয়ার স্বার্থে আঘাত লাগে। ফলে তিনি আলী (রা)-এর বিরুদ্ধে যুদ্ধের প্রস্তুতি নেন। এ খবর পেয়ে আলী (রা)-ও যুদ্ধে অবতীর্ণ হন। ফলে ৬৫৭ খ্রিস্টাব্দের ২৬ জুলাই সিফফিনের যুদ্ধ সংঘটিত হয়। সুতরাং দেখা যায়, উদ্দীপকের সংঘর্ষ সিফফিনের যুদ্ধেরই ইঙ্গিত বহন করে।

ঘ. উক্ত সংঘর্ষে খলিফার ব্যর্থতার ফলে ইসলামে গণতন্ত্রের পরিবর্তে রাজতন্ত্রের উদ্ভব হয়- মন্তব্যটি যথার্থ। 
উদ্দীপকে জনাব আলী আশরাফের সিদ্ধান্তের প্রতি জনাব মুহিবের আনুগত্যহীনতা, তার সম্পত্তি রাজকোষে ফিরিয়ে আনা এবং এর জের ধরে যে সংঘর্ষের কথা বলা হয়েছে তা মূলত সিফফিনের যুদ্ধকেই ইঙ্গিত করে। এ যুদ্ধ ছিল ইসলামের সংহতি রক্ষা এবং শান্তি ও সমৃদ্ধির পক্ষে ঘোর অমঙ্গলজনক। এ অমঙ্গলেরই একটি প্রতিচ্ছবি হলো গণতন্ত্রের অবসান এবং রাজতন্ত্রের সূচনা।
সিফফিনের যুদ্ধের পর ৬৬০ খ্রিষ্টাব্দে আমির মুয়াবিয়া নিজেকে আনুষ্ঠানিকভাবে খলিফা হিসেবে ঘোষণা দেন। অমীমাংসিত এ যুদ্ধে খলিফা আলী (রা)-এর সরলতার সুযোগ নিয়ে আমির মুয়াবিয়া দুমাতুল জদলে সালিশির আয়োজন করে ধূর্ততার মাধ্যমে নিজেকে খলিফা পদে অধিষ্ঠিত করেন। ফলে গণতন্ত্র ও খিলাফতের অবসান ঘটে এবং বংশানুক্রমিক রাজতন্ত্রের উদ্ভব হয়। সকল জনগণ শাসক ও শাসিত এ দু দলে বিভক্ত হয়ে পড়ে। এ যুদ্ধের ফলে শুধু আলী (রা)-এরই পরাজয় ঘটেনি বরং মহানবি (স)-এর আদর্শে প্রতিষ্ঠিত মুলাফায়ে রাশেদিনের প্রজাতন্ত্রের অবসান ঘটে এবং রাজতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সূচনা হয়, ইসলামের মৌলিক আদর্শে আঘাত হানে। তাছাড়া মুয়াবিয়ার সাথে আলী পুত্র হাসানের সন্ধি অনুযায়ী আলী (রা)-এর দ্বিতীয় পুত্র হুসাইনের খলিফা নিযুক্ত হওয়ার কথা থাকলেও ৬৭৬ খ্রিস্টাব্দে তিনি নিজ পুত্র ইয়ালিদকে খিলাফতের পরবর্তী উত্তরাধিকারী মনোনীত করেন। এভাবে নির্বাচনভিত্তিক খিলাফতকে উত্তরাধিকারভিত্তিক রাজতন্ত্রে রূপান্তর করা হয়।
পরিশেষে বলা যায়, সিফফিনের যুদ্ধে খলিফা আলীর দূরদর্শী চিন্তার অভাবে মুয়াবিয়া হঠকারিতা করার সুযোগ পায়। ফলে ইসলামের ভিত্তিমূল আলোড়িত হয় অর্থাৎ গণতন্ত্রের বিলোপ ঘটে। আর এটি রাজতন্ত্র উদ্ভবের পথ সহজ করে দিয়ে ইসলামকে শক্তিহীন করে দেয়।

HSC ইসলামের ইতিহাস ও সংস্কৃতি ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

৭. রহিমা বিবি মিরপুর শাহ আলীর মাজারের নিকটবর্তী এলাকায় বসবাস করে। সে মাজারের মান-মর্যাদা ও দান-দক্ষিণার মাধ্যমে প্রতিদিন মাজারের আয়-ইনকামের প্রাচুর্য দেখে নিজেই একটি মাজার প্রতিষ্ঠায় উদ্যোগী হয়। সে নিজের ঘরের মধ্যে একটি মিথ্যা মাজার নির্মাণ করে লোভন্ডলালসা দিয়ে কিছু ভক্তশ্রেণিও তৈরি করে। বিষয়টি সরকারের নজরে এলে সরকার রহিমা বিবিকে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসতে বলে। কিন্তু লোভের বশে সে তা অমান্য করে এবং সরকারের নিরাপত্তা বাহিনীকে নাস্তানাবুদ করে তোলে। তার প্ররোচনায় পার্শ্ববর্তী ব্যবসায়ীরাও সরকারকে ট্যাক্স প্রদানে বিরত থাকে। ফলে সরকার তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে। 
ক. হসিদ্দিক' কোন খলিফার উপাধি?
খ. হযরত ওমর (রা) হযরত আবু বকর (রা) কে প্রথম খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করতে চাইলেন কেন? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে ট্যাক্স প্রদানে বিরত থাকা ব্যবসায়ীদের সাথে মদিনার কোন সম্প্রদায়ের সামঞ্জস্য পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে রহিমা বিবির স্বার্থ ও ভন্ডনবি সাজাহর স্বার্থ একই সূত্রে গাঁথা- বিষয়টি বিশ্লেষণ করো।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. 'সিদ্দিক' হযরত আবু বকর (রা)-এর উপাধি।

খ. বয়স, পদমর্যাদা ও ইসলাম প্রতিষ্ঠায় অবদানের কথা বিবেচনা করে হযরত ওমর (রা) হযরত আবু বকর (রা) কে খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করেন।
হযরত ওমর (রা) ইসলামের প্রথম খলিফা হিসেবে হযরত আবু বকর (রা) কে নির্বাচনের ব্যাপারে জোরালো বক্তব্য প্রদান করেন। আবু বকর (রা)-এর ইমামতিতে মহানবি (স)-এর কয়েকবার নামাজ আদায় করা, বয়োজ্যেষ্ঠতা, নিঃস্বার্থ আত্মত্যাগ, তাঁর প্রতি মহানবির (স) আস্থা প্রভৃতি বিবেচনা করে ওমর (রা) আবু বকর (রা) কে প্রথম খলিফা হিসেবে নির্বাচিত করার পক্ষে মত দেন।

গ. উদ্দীপকে ট্যাক্স প্রদানে বিরত থাকা ব্যবসায়ীদের সাথে মদিনার ধনী ও সম্পদশালী আরববাসী, বিশেষ করে বেদুইনগণ এবং ভন্ডনবি তোলায়হার সামঞ্জস্য পাওয়া যায়।
জাকাত ইসলামি রাষ্ট্রের প্রধানতম আয়ের উৎস এবং ইসলামের পাঁচটি স্তম্ভের অন্যতম স্তম্ভ। রাসুল (স)-এর মৃত্যুর পর ভন্ডনবি তোলায়হার প্ররোচনায় ধনী ও ও সম্পদশালী আরববাসী, বিশেষ করে আরক বেদুইনগণ এই কর প্রদানে অস্বীকৃতি জানায়। পরিস্থিতির জটিলতা বিবেচনা করে আবু বকর (রা) কে অনেক সাহাবি আপাতত জাকাত মাফ করে বিদ্রোহীদের সাথে আপসের পরামর্শ দেন। খলিফা সাহাবিদের পরামর্শ এবং বিদ্রোহীদের আবেদন দৃঢ়তার সাথে প্রত্যাখ্যান করলে, আন্দোলন প্রবল আকার ধারণ করে। খলিফা এই আন্দোলনকারীদের কঠোর হস্তে দমন করে জাকাত প্রদানে বাধ্য করেন। একইভাবে উদ্দীপকে যে সকল ব্যবসায়ী ট্যাক্স প্রদানে বিরত ছিল তাদের বিরুদ্ধে সরকার কঠোর ব্যবস্থা গ্রহণ করে।
ট্যাক্স প্রদানে অস্বীকার করে জনগণ মূলত রাষ্ট্রের আইনকেই অস্বীকার করেছে, যেমন যাকাত অস্বীকারকারীরা ইসলামের মৌলিক বিধান অমান্য করেছিল। উভয় অপব্যাখ্যাকারীদের উদ্দেশ্য হলো স্বার্থ হাসিল। তবে সরকার কঠোর হাতে দমন করে উদ্দীপকে ভন্ড পিরদের কর প্রদানে বাধ্য করে। ইসলামের ইতিহাসে এ ধরনের অস্বীকারকারীদের সাথে আবু বকরের শাসনামলের জাকাত অস্বীকারকারীদের সাদৃশ্য রয়েছে সুতরাং ট্যাক্স প্রদানে বিরত থাকা গোষ্ঠী ও যাকাত অস্বীকারকারীরা স্বার্থ হাসিলে অভিন্ন দুটি সম্প্রদায়।

ঘ. উদ্দীপকের রহিমা বিবির স্বার্থ ও ভন্ডনবি সালাহর স্বার্থ একই সূত্রে গাঁথা। 
হযরত আবু বকর (রা)-এর খিলাফতের প্রথম দিকে অনেকে ইসলাম ধর্ম ত্যাগ করে নিজেকে নবি বলে দাবি করেন। ফলে সমগ্র আরবে খ- বিপ্লব দেখা দেয়। মূলত ইসলাম প্রচারের অভাব, খাঁটি বিশ্বাসের অভাব, ইসলামের বিধি-নিষেধের বিরুদ্ধাচরণ মদিনার প্রাধান্য অস্বীকার ও নবুয়তের প্রতি লোভের কারণেই অনেকে নিজেকে নবি বলে দাবি করেছিল। এদের মধ্যে সাজাহ ছিল অন্যতম। মূলত নবুয়তকে লাভজনক ব্যবসা ভেবে এবং নিজের স্বার্থ হাসিলের জন্যই সাজাহ নিজেকে উনবি করে ইসলামের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ করে। তবে হযরত আবু বকর (রা)", এর সেনাপতি খালিদ কর্তৃক কঠোরভাবে বিদ্রোহ দমন করা হয়। সালাহর মতো। বিবিও মাজারের আয়-ইনকামের প্রাচুর্য দেখে নিজেই মাজার নির্মাণ করে, যা ছিল প্রতারণায় ভরা। তাছাড়া মালার। করে লোভন্ডলালসা দেখিয়ে সে কিছু ভক্তশ্রেণিও তৈরি করে। এর সাথে উদ্দীপকের রহিমা বিবির স্বার্থও জড়িত ছিল। খ্যাতি লাভের আশা মানুষকে বিপথে পরিচালিত করে। কিছু ভক্ত শ্রেণি তৈরি হওয়ায় রহিমা বিবি নিজেকে খ্যাতিমান ভেবে সরকারের নির্দেশ অমান্য করে। সাজাহ ছিলেন তার মতোই একজন নারী যে খ্যাতির আশায় নবুয়ত দাবি করে ঘৃণ্যতম কাজের অবতারণা করে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, সাজাহ ও রহিমা বিবির কর্মকান্ড একই সূত্রে গাঁথা। কারণ লোভ, ব্যবসা, অজ্ঞতাই তাদেরকে অন্যায় কাজে প্ররোচিত করেছে।

৮. এটলাস নামক সমবায় সমিতির কলেবর বৃদ্ধি পেলে এটির সম্পদ-সম্পত্তিও অনেক গুণ বেড়ে যায়। ফলে পরিচালনা কর্তৃপক্ষ সমিতির গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তসমূহ গ্রহণের নিমিতে একটি উপদেষ্টা পরিষদ গঠন করে। তাছাড়া সম্পদ-সম্পত্তি সংরক্ষণ ও পভ্যাংশ বিলি-বণ্টনের জন্য একটি আলাদা কার্যালয় প্রতিষ্ঠা করে সেখানে একটি ক্যাশ কাউন্টার স্থাপন করে। এই কার্যালয় সকল প্রকার মুনাফা সংগ্রহ করে কোষাগারে জমা রাখে এবং সদস্যদের মধ্যে তা সুষ্ঠুভাবে বন্টন করে দেয়। 
ক. ইসলামি রাষ্ট্রের প্রথম রাজধানী কোথায় স্থাপিত হয়?
খ. জিজিয়া কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের উপদেষ্টা পরিষদ গঠনে, হযরত ওমর (রা)-এর কোন নীতি অনুসত হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে সমিতির সম্পদ-সম্পত্তি সংরক্ষণ ও বিলি-বণ্টনে হযরত ওমর (রা) প্রতিষ্ঠিত দিওয়ান ও বাইতুল মাল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য লক্ষণীয় উদ্ভিটি বিশ্লেষণ করো।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ইসলামি রাষ্ট্রের প্রথম রাজধানী মদিনায় স্থাপিত হয়।

খ. জিজিয়া হচ্ছে মুসলিম রাষ্ট্রে অমুসলিমদের ওপর ধার্যকৃত নিরাপত্তা কর। 
জিজিয়া মাথাপিছু হারে নির্ধারিত হয়ে থাকে। অমুসলিম নাগরিকরা জিজিয়া প্রদানের মাধ্যমে যুদ্ধে অংশগ্রহণ থেকে অব্যাহতি পেত। জিজিয়া দেওয়ার বদৌলতে মুসলিম শাসকগণ অমুসলিম নাগরিকদের জানমালের নিরাপত্তা বিধানে অঙ্গীকারাবদ্ধ ছিল। তবে নারী, শিশু, বয়োবৃদ্ধ, উন্মাদ ও ধর্মীয় পুরোহিতরা এ কর হতে অব্যাহতি পেত।

গ. উদ্দীপকের উপদেষ্টা পরিষদ গঠনে হযরত ওমর (রা)-এর মালিশ উস-শূরার নীতি অনুসৃত হয়েছে। 
হযরত মুহাম্মদ (স) ও হযরত আবু বকর (রা)-এর অনুকরণে হযরত ওমর (রা) মালিস-উস-শুরা ব্যবস্থাকে আধুনিকীকরণের উদ্যোগ গ্রহণ করেন। কারণ তিনি সব সময় বলতেন পরামর্শ ব্যতীত বিদাত চলতে পারে না। এ গণতান্ত্রিক চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তিনি জনগণের সুযোগ সুবিধা নিশ্চিতকরণ এবং স্বচ্ছভাবে শাসনকার্যে পরিচালনার জন্য একটি উচ্চ ক্ষমতাসম্পন্ন মন্ত্রণা পরিষদ গঠন করেন, যা মজলিস-উস-শূরা বা মন্ত্রণা পরিষদ নামে পরিচিত। এটি মজলিস-উস-খাস ও মজলিস-উস আম এ দুটো ভাগে বিভক্ত ছিল। উদ্দীপকেও এ ধরনের পরিচালনা নীতি দেখা যায়।
এটলাস সমবায় সমিতির কলেবর বৃদ্ধি পেলে কর্তৃপক্ষ সম্পদ সংরক্ষণ ও বণ্টনের জন্য আলাদা বিভাগ গঠন করে। তাদের কাজটি ওমর (রা)-এর প্রশাসনিক বিকেন্দ্রীকরণের মাধ্যমে মজলিস-উস-শুরা গঠনের মতোই। সময়ের সাথে সাথে ওমর (রা)-এর খিলাফত অর্ধজাহান পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছিল। এত বড় খিলাফত পরিচালনার তাগিদেই তিনি আলাদাভাবে শক্তিশালী বিচার বিভাগ গঠন করেন। ভিন্ন ক্ষেত্র হলেও এটলাস সমিতি ওমর (রা)-এর ন্যায় নীতি গ্রহণ করেছে। সুতরাং, উদ্দীপকে ওমর (রা)-এর মজলিস-উস-শুরা গঠনের নীতি অনুসৃত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে সমিতির সংরক্ষণ ও বিলি-বণ্টনে হযরত ওমর (রা) প্রতিষ্ঠিত দিওয়ান ও বায়তুল মাল প্রতিষ্ঠার উদ্দেশ্য লক্ষণীয়।
বায়তুল মাল (রাষ্ট্রীয় কোষাগার) এর পুনর্গঠন খলিফা হযরত ওমরের (রা) একটি শ্রেষ্ঠ কৃতিত্ব। ওমর (রা) আব্দুল্লাহ বিন আকরামকে প্রধান কোষাধ্যক্ষরূপে নিযুক্ত করে মদিনায় বায়তুল মালের সংস্কার ও পুনর্গঠন করেন। সেখানে প্রদেশ হতে প্রেরিত উদ্বৃত্ত অর্থ জমা থাকত। ঐ কোষাগার পাহারার জন্য অস্ত্র সজ্জিত প্রহরীও নিযুক্ত করা হয়েছিল। এছাড়া খিলাফতের আয় বৃদ্ধি করার সাথে সাথে খলিফা দিওয়ান-উল খারাজ নামে একটি নতুন রাজস্ব বিভাগ প্রতিষ্ঠা করেন। এর কাজ ছিল রাজ্যের আয়-ব্যয়ের হিসাব নিকাশ রক্ষা করা এবং প্রয়োজনীয় খরচ নির্বাহের পর উদ্বৃত্ত অর্থ মুসলিম জনসাধারণের মধ্যে বন্টনের ব্যবস্থা করা।
উদ্দীপকেও এ ধরনের অর্থ সংগ্রহের বিষয়টি অর্থ বিভাগ রাষ্ট্রপরিচালনার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এটলাস সমিতি এ বিভাগ সংস্কারের মাধ্যমে সমিতিকে আর ও শক্তিশালী করার উদ্যোগ নিয়েছে। এটি ওমর (রা)-এর দিওয়ান উল খারাজ ও বাইতুল মাল প্রতিষ্ঠার অনুরূপ। ওমর (রা)-এর এ ব্যবস্থা রাষ্ট্র সম্পদের অপচয়ের হাত থেকে যেমন রক্ষা পেত, তেমনি সঠিক বণ্টন নিশ্চিত হতো। একইভাবে এটলাস সমিতিও সম্পদ সংরক্ষণ ও বিলি বন্টনের নিশ্চয়তার জন্য আলাদা বিভাগ ও ক্যাশ কাউন্টার চালু করে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, এটলাস সমিতি ওমর (রা)-এর দিওয়ান ও বাইতুল মাল গঠনের নীতিই অনুসরণ করেছে।

৯. মুর সম্প্রদায়ের দলনেতা আকস্মিকভাবে মৃত্যুবরণ করলেন। তিনি তার কোনো উত্তরাধিকারী মনোনীত করেননি। দলনেতা নির্বাচন নিয়ে গোত্রের লোকদের মধ্যে সংঘাত দেখা দিলো। দলের বয়োজ্যোষ্ঠ সাদার জ্ঞানী মানুষ হিসেবে সকলের শ্রদ্ধেয়। মৃত দলনেতার বিশেষ আস্থাভাজন ছিলেন তিনি। আকিব বললেন, আমাদের নেতা হবেন সাদার। সকলে তার কথা মেনে নিল। আসন্ন সংঘাত থেকে মুর সম্প্রদায় রক্ষা পেল।
ক. কাদেসিয়ার এ যুদ্ধ কতো দিনব্যাপী সংঘটিত হয়েছিল?
খ. বায়তুল মাল কী? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ঘটনার সঙ্গে মিল রয়েছে তোমার পঠিত কোন ঘটনার? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত ঘটনা আসন্ন সংঘাত থেকে মুসলিম উম্মাহকে রক্ষা করে ছিল বিশ্লেষণ করো।

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. কাদেসিয়ায় যুদ্ধ তিন দিনব্যাপী সংঘটিত হয়েছিল।

খ. বায়তুল মাল বলতে ইসলামি রাষ্ট্রের সরকারি কোষাগারকে বোঝায়। ইসলামি রাষ্ট্রে রাষ্ট্রের সমস্ত অর্থ এক স্থানে জমা থাকে। রাষ্ট্রীয় ব্যবস্থা পরিচালনায় এ অর্থ ব্যয় করা হয়। রাষ্ট্রের বাৎসরিক ব্যয় ভার নির্বাহের পর উদ্বৃত্ত অর্থ গরিবদের মাঝে বণ্টন করা হয়। রাষ্ট্রের সমগ্র অর্থনৈতিক ব্যবস্থা এ সম্পদের ওপর নির্ভর করে। এ ধরনের রাষ্ট্রীয় কোষাগারই বায়তুল মাল নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনার সাথে হযরত আবু বকর (রা)-এর খলিফা নির্বাচিত হওয়ার মিল পরিলক্ষিত হয়। 
মহানবী (স)-এর ওফাতের পর মুসলিম জগতে এক জটিল সমস্যার উদ্ভব হয়। কারণ মহানবি (স) কাউকে খলিফা নির্বাচিত করে যাননি। তিনি খলিফা বা প্রতিনিধি নির্বাচনের দায়িত্ব সমস্ত মুসলমানদের হাতে ন্যস্ত করে যান। এমতাবস্থায় খলিফা নির্বাচন নিয়ে বিভিন্ন গোত্র ভিন্ন ভিন্ন ব্যক্তির জন্য সুপারিশ করে। যার ফলে এক ভয়াবহ ও সংশয়পূর্ণ পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। তবে অনেক বাক-বিতন্ডার পরে শেষ হযরত আবু বকর (৩১) খলিফা নির্বাচিত হয়ে পরিস্থিতি শান্ত করেন। উদ্দীপকেও এরূপ অবস্থা পরিলক্ষিত হয়।
উদ্দীপকে দেখা যায়, মুর সম্প্রদায়ের দলনেতার হঠাৎ মৃত্যুতে গোত্রদ্বয়ের মধ্যে নৈরাজ্যকর পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। জ্ঞানী ও বয়োজ্যেষ্ঠ হিসেবে সাদাৰ সকলের কাছে সম্মানিত বলে পরিচিত ছিল। তাই আকিব নামক অন্য একজন ব্যক্তি সাদাবকে নেতা ঘোষণা করেন এবং সকলে তাকে দলনেতা হিসেবে মেনে নেয়। অনুরূপভাবে হযরত মুহাম্মদ (স)-এর শাহাদাতের পর মুসলিম সাম্রাজ্যে এক সঙ্কটময় পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়। কেননা মহানবি (স) কোন উত্তরাধিকারী মনোনীত করেননি ফলে খিলাফতকে কেন্দ্র। করে মুসলমানদের মধ্যে বিভেদ সৃষ্টি হয়। এ সময় বিভিন্ন গোত্রগুলো নিজ নিজ সম্প্রদায়ের শেখ তথা নেতাকে খলিফা নির্বাচনের দাবি জানায়। এ ধরনের পরিস্থিতিতে মুসলিম জাহান যখন খলিফা নির্বাচনে দ্বিধান্বিত তখন হযরত উমর (রা) খলিফা হিসেবে আবু বকর (রা) সমর্থনে জোরালো বক্তব্য রাখেন এবং আরবদের প্রচলিত প্রথা অনুযায়ী আবু বকর (রা) হাত চুম্বন করে খলিফা হিসেবে ঘোষণা করেন। এ ঘোষণার সাথে সাথে সকলে স্বতঃস্ফূর্তভাবে আবু বকর (রা) কে খলিফা হিসেবে স্বীকার করেন। উদ্দীপকে এ ঘটনারই প্রতিফলন দেখা যায়।

ঘ. মহানবি (স)-এর শাহাদাতের পর খলিফা নির্বাচনকে কেন্দ্র করে মুসলিম জাহানে যে চরম সংঘাতের আশঙ্কা সৃষ্টি হয়েছিল তা আবু বকর (রা)-এর খলিফা নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে দূরীভূত হয়।
মহানবি (স) ছিলেন গণতন্ত্রের একজন প্রবন্ধা। যার ফলে তিনি উত্তরাধিকারী মনোনীত করে যাননি। কিন্তু মৃত্যুর পর খিলাফতকে কেন্দ্র করে মুসলিম উম্মাহের মধ্যে ব্যাপক বিশৃঙ্খলার সৃষ্টি হয়। এই সমস্যাসঙ্কুল অবস্থায় বিভিন্ন গোত্রের মধ্যে আসন্ন দ্বনে্দ্বর আশঙ্কা দেখা দেয়। এমতাবস্থায় হযরত ওমর (রা) জোরালো সমর্থন এবং আরব প্রথানুযায়ী আবু বকর (রা)-এর হাত চুম্বনের মাধ্যমে তাকে খলিফা বলে ঘোষণা করেন। উদ্দীপকে এর প্রতিফলন লক্ষ করা যায়। উদ্দীপকে বর্ণিত মুর সম্প্রদায়ের দলনেতার আকস্মিক মৃত্যুতে উত্তরাধিকারী নিয়ে গোত্রস্বয়ের মধ্যে সংঘাতের সৃষ্টি হয়। কিন্তু সাদাব নেতা নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে এই পরিস্থিতি শান্ত হয়। অনুরূপভাবে মুসলিম উম্মাহ মহানবি (স)-এর ইন্তেকালের পর কঠিন অবস্থার মুখোমুখি হয়। কারণ গণতান্ত্রিক ভাবধারায় উদ্বুদ্ধ হয়ে মহানবি (স) খলিফা নির্বাচনের ভার মুসলিম উম্মাহর ওপর দিয়ে যান। তাই নেতা নির্বাচন নিয়ে এ সময় এক ভয়ঙ্কর অবস্থা সৃষ্টি হয়। পি.কে. হিট্টি বলেন, 'বিলাফত প্রশ্নই ছিল ইসলামের প্রথম সমস্যা এটি পি, কে অদ্যাবধিই একটি জীবন্ত সমস্যা। খলিফা নির্বাচনের উদ্দেশ্যে মুসলমানগণ সাকিফা বানি সাদিয়া' নামক স্থানে মিলিত হন। এখানে খলিফা নির্বাচনের প্রশ্নে চারটি রাজনৈতিক দলের উদ্ভব হয়। তারা নিজেদের পক্ষের লোকদের সমর্থনে কথা বলেন। অনেক বাক-বিতন্ডার পরে উমর (রা) বয়োজ্যেষ্ঠ, জ্ঞানী ও ইসলামে জন্য নিবেদিত প্রাণ হিসেবে আবু বকর (রা)-এর হাত চুম্বনের মাধ্যমে তার আনুগত্য স্বীকার করেন। ফলে সবাই আবু বকর (রা)-এর নেতৃত্ব গ্রহণ করেন। আবু কর অত্যন্ত সংকটময় মুহূর্তে মুসলিম সাম্রাজ্যের নেতা নির্বাচিত কেন্দ্র করে যে সমস্যার সৃষ্টি হয়েছিল আবু বকর (রা)-এর নির্বাচিত হওয়ার মাধ্যমে এ সমস্যার সমাধান হয়ে যায় না হলে ইসলামের বাণী সারা বিশ্বে ছড়িয়ে দেয়া অনিশ্চিত হয়ে যেত। উপর্যুক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, আবু বকর (রা) খলিফা নির্বাচিত হয়ে অরাজক পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণ করে শৃঙ্খলা প্রতিষ্ঠায় সক্ষম হন।

১০. মাওলানা আহম্মদ উন্নাহ সাহেব অনেক কষ্ট করে তার জনপদের লোকজনকে সুন্দর ও সঠিক পথে আনায়ন করেন। কিন্তু তার মৃত্যুর পর তারা পুনরায় অসৎ পথে ফিরে যায়। এমতাবস্থায়, তার পরবর্তী শিষ্য তাদের দমন করেন এবং সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেন। 
ক. ভন্ডনবিদের নেতা কে ছিলেন?
খ. কাকে এবং কেন 'সিদ্দিক' বলা হতো?
গ. উদ্দীপকের ঘটনার সাথে তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন ঘটনার মিল পাওয়া যায়? লিখ।
ঘ. শিষ্য কীভাবে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন? বিশ্লেষণ কর।

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. ভন্ডনবিদের নেতা ছিলেন মুসায়লামা।

খ. সত্যবাদিতা ও বিশ্বস্থতার জন্য হযরত আবু বকর (রা) কে সিদ্দিক' বলা হতো। হযরত আবু বকর (রা) ছিলেন মহানবি (স) এর একান্ত অনুগত। মহানবি (স) সব কিছুতেই তার ছিল অগাধ বিশ্বাস এবং তার সমস্ত কথাই আব বকর (রা) অকপটে বিশ্বাস করতেন। মহানির (স) মিরাজ গমনের কথা শুনা মাত্রই তিনি সন্ধিহানভাবে বিশ্বাস করেন। তিনিই সর্ব প্রথম মধ্যনিব (স)-এর মিরাজের ঘটনা বিশ্বাস করেন। এ জন্য মুহাম্মদ (স) তার উপাধি দেন 'সিদ্দিক' বা বিশ্বাসী। এরই পরিপ্রেক্ষিতে আবু বকর (রা) কে সিদ্দিক বলা হতো।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত ঘটনায় খুলাফায়ে রাশেদিনের প্রথম খলিফা হযরত আবু বকর (রা)-এর কর্মকান্ডের প্রতিফলন ঘটেছে। হযরত আবু বকর (রা) ছিলেন ইসলামের প্রথম খলিফা ও একনিষ্ঠ সেবক। মহানবি (স)-এর নবুয়ত লাভের পর বয়স্ক পুরুষদের মধ্যে তিনিই প্রথম ইসলাম গ্রহণ করেছিলেন। তাঁর খিলাফতকালে ইসলামের বিরুদ্ধে অনেকে আন্দোলন শুরু করে, যা ছিল ইসলাম ধর্মের জন্য ঋতিকর। তবে তিনি অত্যন্ত দক্ষতার সাথে এ গুলো নিরসন করেন। উদ্দীপকেও এ ঘটনার প্রতিফলন ঘটেছে।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই যে, একজন মহাপুরুষের পরলোকগমনের পর তার একজন সাথীকে প্রতিনিধি নির্বাচিত করা হয়। এ সময় তিনি অনেক বাধা-বিপত্তির সম্মুখীন হলেও যোগ্যতার সাথে তা সমাধান করেন। অনুরূপভাবে হযরত মুহাম্মদ (স) এর মৃত্যুর পর আরবের রাজনৈতিক পরিস্থিতি যখন সংকটাপন্ন সেই সময় হযরত আবু বকর (রা) ইসলামি খিলাফতের দায়িত্বভার গ্রহণ করেন। তখন স্বধর্মত্যাগী, যাকাত বিরোধীদের বিদ্রোহ, রোমান ও পারসিক সাম্রাজ্যয়ের ইসলাম বিরোধী তৎপরতায় আরব রাষ্ট্রের অস্তিত্ব বিপন্ন প্রায় ছিল। আবু বকর (রা) তার বিচক্ষণতা ও দূরদর্শিতার দ্বারা ইসলামি সাম্রাজ্যকে এ সকল বিপদের হাত থেকে রক্ষা করেন। উদ্দীপকে হযরত আবু বকর (রা)-এর এ বিচক্ষণ কার্যাবলিরই ইঙ্গিত দেওয়া হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের ন্যায় হযরত আবু বকর (রা) ভন্ডনবি ও স্বধর্মত্যাগীদের দমনের মাধ্যমে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন।
মহানবী (স)-এর ওফাতের পর নবদীক্ষিত আরববাসীর অধিকাংশই ইসলাম পরিত্যাগ করে বাপ-দাদার ধর্মে ফিরে যেতে থাকে। এই সুযোগে আসওয়াদ, আনাসি, মুসায়লামা, তোলায়হা ও সাজাহসহ বেশ কয়েকজন ভন্ডনবির আবির্ভাব হয়। হযরত আবু বকর (রা) এ সমস্ত স্বধর্মত্যাগী ও ভন্ডনবিদের বিরুদ্ধে বিদ্রোহ ঘোষণা করেন। আবার অনেক গোত্র যাকাত প্রদানেও অস্বীকৃতি জানায়। ফলে ইসলাম ও ইসলামি রাষ্ট্র চরম সংকটজনক পরিস্থিতিতে নিপতিত হয়। এমতাবস্থায় হযরত আবু বকর (রা) অত্যন্ত দক্ষতা ও সাহসিকতার সাথে এই কঠিন পরিস্থিতি মোকাবিলা করে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন। উদ্দীপকেও এরূপ ঘটনা পরিলক্ষিত হয়।
উদ্দীপকে আহম্মদ সাহেবের মৃত্যুর পর জনপদের লোকের মধ্যে বিশৃঙ্খলা দেখা যায়। তারা পুনরায় অসৎ পথে ফিরে যায়। এই পরিস্থিতিতে তার এক শিষ্য তাদের দমন করে সমাজে শান্তি আনয়ন করেন। অনুরূপভাবে হযরত আবু বকর (রা) ও ইসলামি রাষ্ট্রকে সুদৃঢ় ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিত করে। মহানবি (স)-এর ইন্তেকালের পর স্বধর্মত্যাগী ও ভন্ডনবিদের বিদ্রোহের ফলে ইসলামে চরম বিপর্যয়ের সৃষ্টি হয়ে ছিল। সে মুহূর্তে যদি আবু বকর (রা) তাদের দমন করতে ব্যর্থ হতেন তাহলে তারা রাজত্ব প্রতিষ্ঠা করত এবং ইসলামি রাষ্ট্রকে বিলীন করে দিত। কিন্তু আবু বকর (রা) দৃঢ়সংকল্প, গভীর আত্মপ্রত্যয় ও অনমনীয় মনোভাবের মাধ্যমে ভন্ডনবিদের দুরভিসন্ধি ধূলিসাৎ করে দেন। ফলে সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠিত হয়। 
উপযুক্ত আলোচনায় প্রতীয়মান হয় যে, ভন্ডনবি ও স্বধর্মত্যাগীদের দমনের মাধ্যমে উদ্দীপকের ন্যায় আবু বকর (রা) ও সমাজে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে সক্ষম হন।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post