HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 1st Paper Srijonshil Question Answer pdf download

পৌরনীতি ও সুশাসন
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৫

HSC Civics and Good Governance 1st Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer

১. জনাব মঈনুদ্দীন 'ক' রাষ্ট্রের একজন সচেতন নাগরিক। তিনি দেশের স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখেন। তিনি তাঁর ওপর আরোপিত করও নিয়মিত প্রদান করে থাকেন। তিনি তাঁর এলাকার অন্যদেরও তার মতো দায়িত্ব পালনের জন্য উদ্বুদ্ধ করেন।
ক. জনমতের সংজ্ঞা দাও। 
খ. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী কীভাবে সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে প্রভাব বিস্তার করে? 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মঈনুদ্দীনের যোগ্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম কোন ধরনের কর্তব্যকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. রাষ্ট্রের অন্য নাগরিকরাও যদি উদ্দীপকের জনাব মঈনুদ্দীনের মত দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে তাহলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় কীরূপ প্রভাব পড়বে বলে তুমি মনে কর? মতামত দাও। 

◈ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সংখ্যাগরিষ্ঠের যুক্তিসিদ্ধ ও সুচিন্তিত মতামতই জনমত যা সরকার ও জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে।

খ. চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী (Pressure Group) হচ্ছে কোনো সংগঠিত সামাজিক গোষ্ঠী যারা নিজেদের স্বার্থরক্ষা নিশ্চিত করতে রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষের আচরণকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সরকারকে আনুষ্ঠানিকভাবে নিয়ন্ত্রণের চেষ্টা করে না। এরা সরকারের কাছে তাদের দাবি-দাওয়া উত্থাপন করে। দাবি দাওয়া আদায় না হলে সরকারের বিরুদ্ধে আন্দোলন করে। আবার সরকারের নীতিবহির্ভূত কাজের বিরুদ্ধে জনসমর্থন গড়ে তোলে। গোষ্ঠীগুলো নানা বিষয়ে সরকারকে যৌক্তিক পরামর্শ প্রদান করে। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সক্রিয় ভূমিকার ফলে সরকার জনকল্যাণমুখী সিদ্ধান্ত গ্রহণে বাধ্য হয়।

গ. উদ্দীপকে মঈনুদ্দীনের যোগ্য প্রার্থী বাছাই কার্যক্রম নাগরিকের রাজনৈতিক কর্তব্যকে নির্দেশ করে। রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার ভোগ করতে গিয়ে নাগরিকরা যেসব দায়িত্ব পালন করে তাকে কর্তব্য বলে। রাষ্ট্রের কাছে নাগরিকের যেমন অধিকার রয়েছে তেমনি রাষ্ট্রের প্রতিও নাগরিকের কর্তব্য রয়েছে। রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে মানুষকে নানা ধরনের কর্তব্য পালন করতে হয়। এর অন্যতম হচ্ছে রাজনৈতিক কর্তব্য। নাগরিকরা রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে যে কর্তব্য পালন করে সেগুলোকে রাজনৈতিক কর্তব্য বলে। যেমন- রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করা, আইন মেনে চলা, যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেওয়া, নির্বাচনে প্রার্থী হওয়া, রাষ্ট্রের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্ব রক্ষায় এগিয়ে আসা প্রভৃতি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে মঈনুদ্দীন স্থানীয় ও জাতীয় নির্বাচনে ভোট দিয়ে যোগ্য প্রার্থী বাছাইয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেন। তিনি সততার সাথে ভোট দিয়ে যোগ্য প্রতিনিধি বাছাই করে রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্ব পালন করেছেন। তার এ কাজটি রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের রাজনৈতিক কর্তব্যকে নির্দেশ করে।

ঘ. রাষ্ট্রের জন্য নাগরিকরাও যদি জনাব মঈনুদ্দীনের মতো দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করে, তাহলে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ইতিবাচক প্রভাব পড়বে বলে আমি মনে করি।
সুশাসন হচ্ছে স্বচ্ছ, নিরপেক্ষ, দায়িত্বশীল, জবাবদিহিমূলক এবং কল্যাণধর্মী শাসনব্যবস্থা। জনগণের সর্বাধিক কল্যাণ সাধনই সুশাসনের লক্ষ্য। জনগণ রাষ্ট্র প্রদত্ত অধিকার ভোগের পাশাপাশি যদি রাষ্ট্রের প্রতি দায়িত্বশীল ও অনুগত থেকে সঠিকভাবে অর্পিত দায়িত্ব পালন করে, তবে কল্যাণধর্মী রাষ্ট্র ও সুশৃঙ্খল সমাজ গড়ে় উঠবে। এ ধরনের রাষ্ট্র ও সমাজেই সুশাসন প্রতিষ্ঠা করা সম্ভব।
উদ্দীপকের মঈনুদ্দীন একজন দায়িত্বশীল ও সচেতন নাগরিক। তিনি নির্বাচনে উপযুক্ত জনপ্রতিনিধিকে ভোট দিয়ে রাষ্ট্রের প্রতি একটি গুরুত্বপূর্ণ কর্তব্য পালন করেন। প্রত্যেক নাগরিক যদি তার মতো সচেতন হয় এবং দায়িত্বশীল ভূমিকা পালন করে, তবে একটি আদর্শ ও উন্নত সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে। অংশগ্রহণ, স্বচ্ছতা, জবাবদিহিতা সুশাসনের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। রাজনৈতিক কার্যক্রমে নাগরিকদের সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমেই এগুলো নিশ্চিত করা সম্ভব। নাগরিকদের আইনের প্রতি শ্রম্যা, নিয়মিত কর প্রদান, দেশের স্বাধীনতা রক্ষায় আত্মনিয়োগ ইত্যাদির মাধ্যমে সুশাসন বিকাশের পথ মসৃণ হয় এবং রাষ্ট্রব্যবস্থা কার্যকর ওঠে। পরিশেষে বলা যায়, রাষ্ট্রের প্রতিটি ক্ষেত্রে জনগণের সক্রিয় ভূমিকা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। নাগরিকরা যদি রাষ্ট্রের প্রতি যথাযথভাবে কর্তব্য পালন করে তবে সুশাসন প্রতিষ্ঠা এবং তা অব্যাহত রাখা সম্ভব হয়। সুতরাং, মঈনুদ্দীনের মতো প্রত্যেক নাগরিকের উচিত রাজনৈতিক কর্তব্যগুলো পালন করে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় ভূমিকা রাখা।

২. মি. 'X' একজন প্রতিষ্ঠিত শিল্পপতি। দেশে তার প্রতিটি শিল্প কারখানায় শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রয়েছে। তিনি প্রতিবছর সঠিকভাবে কর প্রদান করেন। কিন্তু 'X' এর বন্ধু 'Y’ বড় ব্যবসায়ী হলেও শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ না করে কলকারখানা পরিচালনা করেন এবং নিজের আয় গোপন করে কর ফাঁকি দেন।
ক. আইনগত অধিকার কী?
খ. তথ্য অধিকার আইন বলতে কী বোঝায়?
গ. মি. 'X' এর কর্তব্যের ধরন ব্যখ্যা করো।
ঘ. মি. 'Y' এর কর্মকা- কি উন্নয়নের অন্তরায়? বিশ্লেষণ করো। 

◈ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আইনগত অধিকার বলতে ব্যক্তির সেই অধিকারকে বোঝায়, যা রাষ্ট্রের মাধ্যমে স্বীকৃত, অনুমোদিত এবং সংরক্ষিত।

খ. বাংলাদেশ সরকার তথ্যের অবাধ প্রবাহ এবং জনগণের তথ্য অধিকার নিশ্চিতকরণের লক্ষ্যে ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল যে আইন পাস করে তাই তথ্য অধিকার আইন। তথ্য অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত মানবাধিকার। রাষ্ট্রের বিধানাবলি মান্য করা সাপেক্ষে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো নাগরিকের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে তথ্য অধিকার বলে। এর আওতায় আইনানুগ কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা কর্তৃপক্ষের গঠন, উদ্দেশ্য, কার্যাবলি, কর্মসূচি, দাপ্তরিক নথিপত্র, আর্থিক সম্পদের বিবরণ ইত্যাদি তথ্য হিসেবে বিবেচিত। রাষ্ট্রীয় নিরাপত্তার মতো বিশেষ ব্যতিক্রম ছাড়া প্রত্যেক নাগরিকেরই তথ্য জানার এবং জানানোর অধিকার রয়েছে।

গ. মি. 'X' রাষ্ট্রের নাগরিক হিসেবে অর্থনৈতিক কর্তব্য পালন করেছেন।
রাষ্ট্রের উৎপাদন, বণ্টন ও বিনিয়োগ কাজে নাগরিকের অংশগ্রহণ করাকে অর্থনৈতিক কর্তব্য বলে। যেমন: নিয়মিত খাজনা ও কর প্রদান, জাতীয় সম্পদের রক্ষণাবেক্ষণ, রাষ্ট্রীয় উৎপাদন ও উন্নয়ন কর্মকা- এবং কৃষি, শিল্প ও ব্যবসা-বাণিজ্য সংক্রান্ত কাজে অংশগ্রহণ ইত্যাদি নাগরিকের অর্থনৈতিক কর্তব্য। আধুনিক রাষ্ট্রগুলো কল্যাণমূলক নাগরিকের কল্যাণের জন্য রাষ্ট্র বহুবিধ উন্নয়নমূলক কাজ করে। এ উন্নয়নমূলক কাজের ব্যয়ভার মেটানোর মূল উৎস হলো নাগরিক প্রদত্ত প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ কর। তাই রাষ্ট্রের অধিকার ভোগের জন্য প্রত্যেক নাগরিকের উচিত নিয়মিত সঠিকভাবে কর প্রদান করা। তাছাড়া রাষ্ট্র বিশেষ প্রয়োজনেও নাগরিকদের কাছ থেকে অর্থ সাহায্য কামনা করতে পারে। রাষ্ট্রের এ ধরনের ডাকে সাড়া দেওয়া নাগরিকের কর্তব্য। যেমন- ঘূর্ণিঝড় সিডর-পরবর্তী পুনর্বাসনের জন্য এবং সাভারের পোশাক শিল্প কারখানা ভবন রানা পস্নাজা ধবসের পর ক্ষতিগ্রস্ত মানুষের পুনর্বাসনের জন্য রাষ্ট্র সামর্থ্যবান নাগরিকদের কাছে অর্থ সাহায্য কামনা করেছিল।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, মি. 'X' তার প্রতিটি শিল্প কারখানায় শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ ও নিরাপত্তার জন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা রেখেছেন। তিনি প্রতিবছর সঠিকভাবে কর প্রদান করেন। সুতরাং বলা যায়, মি. 'X' মূলত নাগরিক হিসেবে রাষ্ট্রের প্রতি তার অর্থনৈতিক কর্তব্যই পালন করেছেন।

ঘ. মি. 'Y' এর কর্মকা- রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায়। 
প্রত্যেক নাগরিককে রাষ্ট্র থেকে অধিকার ভোগের সাথে সাথে কতগুলো দায়িত্ব ও কর্তব্য পালন করতে হয়। অধিকার ভোগ ও কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়েই নাগরিক জীবন পূর্ণতা পায়। নাগরিকদের যেমন তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন থাকতে হবে, তেমনি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনেও আগ্রহ থাকতে হবে। রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকের অন্যতম কর্তব্য হলো নিয়মিত কর প্রদান করা। এটি নাগরিকের অর্থনৈতিক কর্তব্য। বিপুল পরিমাণ রাষ্ট্রীয় কাজ সম্পাদনের জন্য প্রচুর অর্থের প্রয়োজন। রাষ্ট্র। নাগরিকদের ওপর নানারকম কর আরোপসহ বিভিন্ন উপায়ে এ অর্থ সংগ্রহ করে থাকে। এজন্য নাগরিকদের উচিত নিয়মিত কর প্রদান করা। তারা স্বেচ্ছায় ঠিকমত কর না দিলে রাষ্ট্রের কাজ বাস্তবায়ন ব্যাহত হয়। আর নিয়মিত কর প্রদান না করলে রাষ্ট্রের উন্নয়ন বা অগ্রযাত্রা থেমে যায়। উদ্দীপকে দেখা যায়, "Y" বড় ব্যবসায়ী হলেও শ্রমিক স্বার্থ সংরক্ষণ করেন না এবং নিজের আয় গোপন করে কর ফাঁকি দেন। তিনি মূলত রাষ্ট্রের প্রতি তার অর্থনৈতিক কর্তব্য পালন করছেন না। "Y" এর এ। ধরনের কর্মকা- রাষ্ট্রের উন্নয়নকে বাধাগ্রস্ত করবে।
উপরিউক্ত আলোচনা থেকে বোঝা যায়, রাষ্ট্রের প্রতি নাগরিকদের অর্থনৈতিক কর্তব্য পালন ব্যাহত হলে রাষ্ট্রের অর্থনৈতিক উন্নয়নে বাধা তৈরি হয়। তাই বলা যায়, মি. "Y" এর কর্মকা- অর্থনৈতিক উন্নয়নের অন্তরায়।

৩. নারী দিবস উপলক্ষে নারী কর্মীরা সমান পারিশ্রমিক ও সব কাজে সমান সুযোগ প্রভৃতির দাবিতে এক বিশাল সমাবেশ করে। এসব দাবি বাস্তবায়ন হলে নারী যোগ্য সম্মান পাবে এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে।
ক. পৌরনীতি কী বিষয়ক বিজ্ঞান? 
খ. অর্থনৈতিক সাম্য বলতে কী বোঝ?
গ. প্রদত্ত উদ্দীপকে নারীর কোন অধিকার আদায়ের কথা বলা হয়েছে? 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত নারীর অধিকারসমূহ বাস্তবায়িত হলে সমাজে এর কীরূপ প্রভাব পড়বে? আলোচনা করো।

◈ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. পৌরনীতি নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান।

খ. অর্থনৈতিক সাম্য বলতে উৎপাদন ও বণ্টনের ক্ষেত্রে সব ধরনের বৈষম্য দূর করে প্রত্যেক ব্যক্তিকে সমান সুযোগ-সুবিধা প্রদান করাকে বোঝায়। অর্থনৈতিক সাম্য থাকলে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সব মানুষ কাজ করার ও ন্যায্য মজুরি পাবার সুবিধা লাভ করে। অর্থনৈতিক সাম্যের মূল কথা হচ্ছে যোগ্যতা অনুযায়ী সম্পদ ও সুযোগের বণ্টন। ব্রিটিশ রাজনৈতিক তাত্ত্বিক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হ্যারত জোসেফ লাস্কি ঐধৎড়ষফ ঔড়ংবঢ়য খধংশর. এর মতে, ‘ধনবৈষম্যের সাথে অর্থনৈতিক সাম্য অসঙ্গতিপূর্ণ হবে না, যদি এই। বৈষম্য দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে নির্ধারিত হয়।

গ. উদ্দীপকে নারীর অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের কথা বলা হয়েছে।
যে অধিকার ব্যক্তিকে অভাব ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে অর্থনৈতিক জীবনের নিরাপত্তা বিধান করে তাকে অর্থনৈতিক অধিকার বলে। রাষ্ট্র ও সমাজের সব মানুষের সুযোগ-সুবিধা, পারিশ্রমিক লাভ ও কাজের সমান অধিকার রয়েছে।
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই, নারী দিবস উপলক্ষে এক বিশাল সমাবেশে নারীরা কর্ম ও ন্যায্য মজুরি লাভের সমান সুযোগ দাবি করে। এর মাধ্যমে নারীর অর্থনৈতিক অধিকারসমূহ আদায়ের চেষ্টার ইঙ্গিত পাওয়া যায়। প্রতিটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে কর্মের অধিকার নাগরিকের জন্য। একটি গুরুত্বপূর্ণ আইনগত অধিকার। ব্যক্তির যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাওয়ার অধিকারই কর্মের অধিকার। শ্রমিকের ন্যায্য মজুরি লাভের অধিকারও একটি স্বীকৃত আইনগত অধিকার। তাই শ্রমের মান, পরিমাণ ও দায়িত্বের সঙ্গে সঙ্গতি রক্ষা করে শ্রমের যথার্থ মূল্য প্রদান করা উচিত। এ জন্য নারী-পুরুষের মধ্যে কোনো পার্থক্য করা উচিত নয়। কেননা আইন অনুযায়ী নারীদেরও যোগ্যতানুসারে পুরুষের সমান পারিশ্রমিক ও কাজের সমান সুযোগ লাভের অধিকার রয়েছে। কিন্তু বাস্তবক্ষেত্রে এ বিষয়ে আইনের যথাযথ প্রয়োগ লক্ষ করা যায় না। নারীরা বিভিন্নভাবে তাদের ন্যায্য অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়। সমান কাজ করেও অনেক সময় তারা পুরুষের তুলনায় অনেক কম পারিশ্রমিক পায়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে নারী সমাবেশে যে সব দাবির কথা উঠে এসেছে, তা মূলত নারীর অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ের বিষয়টিকেই নির্দেশ করেছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত নারীর অধিকারসমূহ বাস্তবায়িত হলে সমাজে ইতিবাচক প্রভাব পড়বে।
উদ্দীপকে বর্ণিত নারী দিবসের বিশাল সমাবেশে উত্থাপিত দাবিগুলো মূলত নারীর অর্থনৈতিক অধিকার নিশ্চিত করার দাবি। যে অধিকারগুলো অভাব অনটন ও অনিশ্চয়তা থেকে মুক্তি দিয়ে মানুষের জীবনকে সুখী, স্বাচ্ছন্দ্যময় ও নিরাপদ করে তোলে সেগুলোই অর্থনৈতিক অধিকার। কর্মের অধিকার, উপযুক্ত পারিশ্রমিক লাভ প্রভৃতি অর্থনৈতিক অধিকারের মধ্যে পড়ে।
আমাদের সমাজে মোট জনসংখ্যার প্রায় অর্ধেকই নারী। এই বিশাল জনগোষ্ঠীকে কর্মের বাইরে রেখে বা উপযুক্ত পারিশ্রমিক থেকে বঞ্চিত করে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কোনোভাবেই সম্ভব নয়। নারীদের কর্মের অধিকার ও ন্যায্য মজুরি প্রদান নিশ্চিত করা গেলে কর্মক্ষেত্রে নারীদের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পাবে। দেশের অর্থনীতি উন্নত হবে। নারীরা তাদের অর্জিত জ্ঞান কর্মক্ষেত্রে প্রয়োগের মাধ্যমে দেশের সেবা করতে পারবে। এর ফলে পরিবার, সমাজ ও রাষ্ট্রে নারীর মর্যাদা বৃদ্ধি পাবে, সিদ্ধান্ত গ্রহণে নারীর অংশগ্রহণ বাড়বে, নারী নির্যাতন ব্যাপক হারে হ্রাস পাবে এবং নারীদের সম্পর্কে সমাজে প্রচলিত বিভিন্ন কুসংস্কার ও নেতিবাচক ধারণা দূর হবে।
পরিশেষে বলা যায়, নারীদের অর্থনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠিত হলে তারা যোগ্য সম্মান পাবে এবং নারীর ক্ষমতায়ন নিশ্চিত হবে। সর্বোপরি, একটি সুশৃঙ্খল ও ভারসাম্যপূর্ণ সমাজ ও রাষ্ট্র প্রতিষ্ঠার পথ সুগম হবে।

৪. মি. 'ক' বাংলাদেশের নাগরিক। রাষ্ট্রপ্রদত্ত সুযোগ-সুবিধা ভোগ করলেও রাষ্ট্রের প্রতি করণীয় সম্পর্কে তিনি অসচেতন। তিনি নির্বাচনে ভোটদানে অংশগ্রহণ করেন না। সম্প্রতি তিনি তার প্রতিবেশীকে বিনা কারণে প্রহার করায় আদালতের মাধ্যমে শাস্তি ভোগ করেছেন।
ক. অধিকার কী?
খ. চারটি রাজনৈতিক অধিকারের নাম লেখো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত মি. 'ক' রাষ্ট্রপ্রদত্ত যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন তা ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বর্জনীয় কাজ দুটি কোন ধরনের কর্তব্যের পর্যায়ভুক্ত? বিশ্লেষণ করো। 

◈ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. অধিকার হলো সমাজ ও রাষ্ট্রস্বীকৃত কতগুলো সুযোগ-সুবিধা যা ভোগের মাধ্যমে নাগরিকের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে এবং সর্বজনীন কল্যাণ সাধিত হয়।

খ. যে সব অধিকার একজন নাগরিককে রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয় সেগুলোকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। রাজনৈতিক অধিকার সংবিধান অথবা আইনের মাধ্যমে স্বীকৃত থাকে। এ অধিকার ভোগের মাধ্যমে মানুষ নিজেকে রাষ্ট্রের উপযুক্ত নাগরিক হিসেবে গড়ে তুলতে এবং রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে ভূমিকা রাখতে পারে। চারটি রাজনৈতিক অধিকার হলো-
১. ভোটদান করা 
২. নির্বাচিত হওয়া
৩. সরকারি চাকরি লাভ ও
৪. বিদেশে অবস্থানকালে নিরাপত্তা লাভ।

গ. উদ্দীপকের মি. 'ক' রাষ্ট্রপ্রদত্ত সব রকম নাগরিক অধিকার বা সুযোগ-সুবিধা ভোগ করেন।
অধিকার হলো সমাজ ও রাষ্ট্রের মাধ্যমে স্বীকৃত কতগুলো সুযোগ-সুবিধা যা ভোগের মাধ্যমে নাগরিকের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে। প্রতিটি নাগরিকের সামাজিক ও রাজনৈতিক কর্মকান্ড অংশগ্রহণের সুযোগ সুবিধা থাকা প্রয়োজন। তেমনি প্রয়োজন অর্থনৈতিক স্বাধীনতা থাকা, যার মধ্যে পড়ে অন্ন, বস্তু ও কর্মের সংস্থান এবং অভাব থেকে মুক্তি। উদ্দীপকের মি. 'ক' রাষ্ট্রপ্রদত্ত আইনগত অধিকার যেমন- সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ইত্যাদি অধিকার ভোগ করে থাকেন। সামাজিক অধিকারের মধ্যে তিনি জীবনধারণ, চলাফেরা, সম্পত্তি ভোগ, চুক্তি, মত প্রকাশ, সভা-সমিতি, ধর্মপালন, আইনের দৃষ্টিতে সমতা, পরিবার গঠন, ভাষা ও বৃষ্টি সংরক্ষণ, শিক্ষা, খ্যাতি বা সম্মান লাভ ইত্যাদি অধিকার ভোগ করেন। রাজনৈতিক অধিকারের মধ্যে রাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস, নির্বাচন করা, সরকারি চাকরি লাভ, বিদেশে অবস্থানকালে নিরাপত্তা লাভ, সরকারি কার্যকলাপের সমালোচনা করার অধিকার ইত্যাদি ভোগ করেন। অর্থনৈতিক অধিকারের মধ্যে কর্ম, ন্যায্য মজুরি লাভ, অবকাশ লাভ, শ্রমিক সংঘ গঠন ইত্যাদি অধিকার ভোগ করে থাকেন।

ঘ. উদ্দীপকের মি. 'ক'-এর বর্জনীয় কাজ দুইটি রাজনৈতিক কর্তব্যের পর্যায়ভুক্ত। 
রাষ্ট্রের সদস্য হিসেবে নাগরিকরা আবশ্যিকভাবে রাষ্ট্রের প্রতি যেসব কর্তব্য পালন করে তাকে রাজনৈতিক কর্তব্য বলে। রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা, রাষ্ট্রের আইন মেনে চলা, রাষ্ট্রের সেবা করা, সততার সাথে ভোট দান ইত্যাদি নাগরিকের রাজনৈতিক কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। সুতরাং উদ্দীপকের মি. 'ক' এর নির্বাচনে ভোট না দেওয়া এবং আইন অমান্য করা রাজনৈতিক কর্তব্য বর্জনের মধ্যে পড়ে।
মি. 'ক' নির্বাচনে ভোট দেন না। এ ছাড়া সম্প্রতি তিনি তার প্রতিবেশীকে বিনা কারণে প্রহার করায় আদালতের মাধ্যমে শান্তিভোগ করেছেন। প্রতিবেশীকে প্রহার করার মাধ্যমে তার আইন অমান্য করার দিকটি ফুটে উঠেছে। মি. 'ক' এর বর্জন করা কাজ দুটি নাগরিকের রাজনৈতিক কর্তব্যের অন্তর্ভুক্ত। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় ভোটাধিকার নাগরিকের একটি গুরুত্বপূর্ণ অধিকার। সব গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত। সব স্থানীয় ও জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে ভোটদানের মাধ্যমে যোগ্য প্রার্থীকে নির্বাচিত করা একজন সুনাগরিকের রাজনৈতিক কর্তব্য। এ ছাড়াও রাষ্ট্রের প্রচলিত আইনের। প্রতি প্রধাশীল থাকা তথা আইন মান্য করা প্রতিটি নাগরিকের অন্যতম কর্তব্য। সব নাগরিকের উচিত রাষ্ট্রের সব আইন মেনে চলার মাধ্যমে রাষ্ট্রের শৃঙ্খলা রক্ষা করা এবং জনজীবনকে নিরাপদ রাখা। উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মি. 'ক' এর বর্ণনীয় দুটি কাজ অর্থাৎ ভোট না দেওয়া ও আইন অমান্য করার সঙ্গে নাগরিকের রাজনৈতিক কর্তব্যের সম্পর্ক রয়েছে।

৫. করিম ও রহিমা চাচাতো ভাইবোন। তাদের উভয়ের ভোট প্রদান, পেশা বাছাই ও ধর্মচর্চার সমান অধিকার রয়েছে। তারা একসাথে একটি ফ্যাক্টরিতে কাজ করে; কাজের ধরনও একই। কিন্তু করিমের মজুরি রহিমার চেয়ে বেশি।
ক. আইন কী?
খ. স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত অধিকার ছাড়াও নাগরিকের আর কী রাজনৈতিক অধিকার রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. রহিমা কোন ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে? নিবারণের উপায় ব্যাখ্যা করো।

◈ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আইন বলতে সমাজস্বীকৃত এবং রাষ্ট্রের মাধ্যমে অনুমোদিত নিয়ম কানুনকে বোঝায়, যা মানুষের বাহ্যিক আচরণকে নিয়ন্ত্রণ করে।

খ. স্বাধীনতাকে অক্ষুণ্ণ ও অটুট রাখার জন্য কতগুলো পদ্ধতি রয়েছে। এগুলোকে স্বাধীনতার রক্ষাকবচ বলা হয়। স্বাধীনতা মানুষের জন্মগত অধিকার। এটি সামাজিক সাম্য প্রতিষ্ঠার পাশাপাশি ব্যক্তির ব্যক্তিত্ব বিকাশের পথকে সুগম করে। স্বাধীনতা অর্জনের পর তা রক্ষা করাও অত্যন্ত জরুরি। ব্রিটিশ রাজনৈতিক তাত্তিবক, অর্থনীতিবিদ এবং লেখক হ্যারল্ড জোসেফ শাস্কি এর মতে, 'সংরক্ষণের বিশেষ ব্যবস্থা না থাকলে অধিকাংশ ব্যক্তি স্বাধীনতা ভোগ করতে পারে না। স্বাধীনতার অনেকগুলো রক্ষাকবচ রয়েছে। যেমন- আইন, সংবিধানে মৌলিক অধিকারের স্বীকৃতি, বিচার বিভাগের স্বাধীনতা, সামাজিক ন্যায়বিচার, দায়িত্বশীল সরকারব্যবস্থা, সুষ্ঠু গণতান্ত্রিক পদ্ধতি ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকে রাজনৈতিক অধিকার হিসেবে ভোট প্রদানের বিষয়টি উল্লেখ করা হয়েছে। 
নাগরিকরা রাষ্ট্রীয় কার্যক্রমে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণের জন্য যে সব অধিকার ভোগ করে তাকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। উদ্দীপকে বর্ণিত করিম ও রহিমার ভোট প্রদানের অধিকার রয়েছে যা রাজনৈতিক অধিকারের উপস্থিতিকে নির্দেশ করে। ভোট প্রদান ছাড়াও নাগরিকের আরও কিছু রাজনৈতিক অধিকার রয়েছে। যেমনতআইনসঙ্গত বিধি নিষেধ সাপেক্ষে সব নাগরিকের রাষ্ট্রের অভ্যন্তরে স্থায়ীভাবে বসবাসের অধিকার রয়েছে। জাতি-ধর্ম-বর্ণ-লিঙ্কা নির্বিশেষে যোগ্যতা অনুযায়ী প্রত্যেক নাগরিকের সরকারি চাকরি লাভের অধিকার রয়েছে। বিদেশে অবস্থানকালে একজন নাগরিক কোনো সমস্যায় পড়লে তার নিজ রাষ্ট্রের সাহায্য ও নিরাপত্তা সুবিধা লাভের অধিকার রয়েছে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সরকারের কোনো। সিদ্ধান্ত বা গণস্বার্থবিরোধী কার্যকলাপের সমালোচনা করার অধিকার প্রত্যেক নাগরিকের রয়েছে। প্রাপ্তবয়স্ক যোগ্যতাসম্পন্ন প্রত্যেক নাগরিকের জাতীয় কিংবা স্থানীয় যেকোনো পর্যায়ের জনপ্রতিনিধি হিসেবে নির্বাচিত হওয়ার অধিকার রয়েছে।
উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত ভোট প্রদানের অধিকার একজন নাগরিকের অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ রাজনৈতিক অধিকার। তবে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে বিভিন্ন রাষ্ট্রীয় কর্মকান্ড অংশগ্রহণের জন্য অন্যান্য রাজনৈতিক অধিকারের গুরুত্বও কোনো অংশে কম নয়।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত রহিমা অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হয়েছে। 
যে অধিকার ব্যক্তিকে অভাব ও দারিদ্র্য থেকে মুক্তি দিয়ে অর্থনৈতিক নিরাপত্তা বিধান করে তাকে অর্থনৈতিক অধিকার বলে। যেমন: যোগ্যতা অনুযায়ী কাজ পাওয়া, ন্যায্য মজুরি লাভ, অবকাশ যাপন, শ্রমিক সংঘ গঠন ইত্যাদি নাগরিকের অর্থনৈতিক অধিকার হিসেবে স্বীকৃত।
উদ্দীপকে উল্লিখিত করিম ও রহিমা চাচাতো ভাইবোন। তারা একসাথে এক কারখানায় একই ধরনের কাজ করে, কিন্তু করিম রহিমার চেয়ে বেশি মজুরি পায়। অর্থাৎ রহিমা শুধু নারী হওয়ার কারণে ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়। বিষয়টি তার অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত হওয়াকে নির্দেশ করে। এ ধরনের বিষয় প্রতিরোধে বেশকিছু পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। যেমনু লিঙ্গ বৈষম্য দূর করে নারী-পুরুষ নির্বিশেষে যোগ্যতা অনুযায়ী সমান সুযোগ-সুবিধা ও মজুরি নিশ্চিত করতে হবে। শ্রম ও অন্যান্য আইনের যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত করতে হবে। নাগরিকরা যে সব মৌলিক অধিকার ভোগ করবে সেগুলো দেশের সংবিধানে সুস্পষ্টভাবে লিপিবদ্ধ থাকতে হবে। মৌলিক অধিকারের কথা সংবিধানে থাকলে জনগণ কোনো অধিকার থেকে বঞ্চিত হলে আদালতের মাধ্যমে এর প্রতিকারের ব্যবস্থা নিতে পারবে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা আরো জোরদার করতে হবে। এ ব্যবস্থায় সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে নাগরিকরা তাদের অধিকার সংরক্ষণ করতে সক্ষম হবে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের রহিমা তার চাচাতো ভাই করিমের সমান কাজ করেও ন্যায্য মজুরি থেকে বঞ্চিত হয়েছে। উপরোল্লিখিত বিষয়গুলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব হলে এ ধরনের অর্থনৈতিক বৈষম্য অনেকাংশেই কমে যাবে।

৬. শিবলী দীর্ঘদিন 'ক' রাষ্ট্রে কর্মরত। ছুটিতে দেশে আসার সময় সে তার মালিককে নিয়ে বেড়াতে আসে। ইতোমধ্যে দেশে জাতীয় নির্বাচনের দিন ধার্য হয়। শিবলী ও তার স্ত্রী যোগ্য প্রার্থীকে ভোট দেয়। এছাড়া শিবলী কর অফিসে গিয়ে করও প্রদান করে। নির্বাচনে লাইনে দাঁড়িয়ে নারী-পুরুষ সমানভাবে ভোট দিতে দেখে তার মালিক খুব আশ্চর্য হয়। তাদের দেশে নারীদের ভোটাধিকার সীমিত। কর্মক্ষেত্রেও তাদের সীমাবদ্ধতা রয়েছে।
ক. অধিকার কী?
খ. তথ্য অধিকার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শিবলীর মালিকের দেশের নারীরা কোন ধরনের অধিকার থেকে বঞ্চিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত শিবলী ও তার মালিকের দেশের মধ্যে কোন দেশ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট রয়েছে? তার সপক্ষে যুক্তি দাও।

◈ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. অধিকার হলো সমাজ ও রাষ্ট্রস্বীকৃত কতগুলো সুযোগ-সুবিধা যা ভোগের মাধ্যমে নাগরিকের ব্যক্তিত্বের বিকাশ ঘটে এবং সর্বজনীন কল্যাণ সাধিত হয়।

খ. তথ্য অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি মানবাধিকার। রাষ্ট্রের বিধানাবলি মানা সাপেক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো বিষয়ে নাগরিকের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে তথ্য অধিকার বলে। আইনানুগ কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা কর্তৃপক্ষের গঠন, উদ্দেশ্য, কার্যাবলি, কর্মসূচি, দাপ্তরিক নথিপত্র, আর্থিক সম্পদের বিবরণ ইত্যাদিকে তথ্য বলা হয়। প্রত্যেক নাগরিকেরই তথ্য জানার এবং জানানোর অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল "তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯' পাস করে। এ আইনটি সাংবাদিক, গবেষক, মানবাধিকারকর্মী, সমাজসেবকসহ নাগরিক সমাজের উপকারে আসছে এবং কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও প্রশংসা কুড়িয়েছে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শিবলীর মালিকের দেশের নারীরা রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত। যেসব অধিকার একজন নাগরিককে রাষ্ট্রীয় কাজে প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয় তাকে রাজনৈতিক অধিকার বলা হয়। ভোটদান, নির্বাচন করা ও নির্বাচিত হওয়া, সরকারি চাকরি লাভ, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা প্রভৃতি রাজনৈতিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত। আবার, যে অধিকার ব্যক্তিকে অভাব ও দারিদ্র্যা থেকে মুক্তি দিয়ে অর্থনৈতিক জীবনের নিরাপত্তা বিধান করে তাকে অর্থনৈতিক অধিকার বলে। কর্মের অধিকার, ন্যায্য মজুরি লাভ, অবকাশ লাভ, শ্রমিক সংঘ বা ইউনিয়ন গঠন করার অধিকার, সম্পত্তি ও সামাজিক নিরাপত্তা লাভ প্রভৃতি অর্থনৈতিক অধিকারের অন্তর্ভুক্ত।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, শিবলী 'ক' রাষ্ট্রে কাজ করে। ছুটিতে সে তার মালিককে নিয়ে নিজ দেশে বেড়াতে আসে। ঐ সময় দেশের জাতীয় নির্বাচনে মহিলা-পুরুষ লাইনে দাঁড়িয়ে ভোট দেয়। শিবলী ও তার স্ত্রীও ভোট। দেয়। শিবলীর দেশের এ অবস্থা দেখে তার মালিক আশ্চর্য হয়। সে দেখে শিবলীর দেশের নারীরা যে অধিকার ভোগ করছে তার দেশের নারীদের মধ্যে সে অধিকার ভোগ খুবই সীমিত। এমনকি কর্মক্ষেত্রেও তাদের উপস্থিতি সীমিত। শিবলীর মালিকের আক্ষেপ থেকে এটাই বোঝা যায়, তার দেশের নারীরা রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক অধিকার থেকে বঞ্চিত।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত শিবলী ও তার মালিকের দেশের মধ্যে শিবলীর দেশ গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট রয়েছে। যে শাসনব্যবস্থায় সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে এবং জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শাসনকার্য পরিচালনা করে তাকে গণতন্ত্র বলে। এটি বর্তমান বিশ্বের সবচাইে কাঙি্ক্ষত ও জনপ্রিয় শাসনব্যবস্থা। মানবাধিকার, সার্বভৌমত্ব, শাসনব্যবস্থায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা ইত্যাদি প্রত্যয় গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার সাথে ওতপ্রোতভাবে জড়িত। উদ্দীপকে দেখা যায়, শিবলীর দেশে গণতান্ত্রিক প্রক্রিয়ার বেশকিছু বিষয় বিদ্যমান। এর মাধ্যমে বোঝা যায়, তার দেশের সরকার গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় সচেষ্ট রয়েছে।
উপরে বর্ণিত বিষয়গুলোর সাথে একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আরও যেসব বিষয় লক্ষ করা যায় তা হলো- ১. গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় ধনী-দরিদ্র, ধর্ম-বর্ণ, নারী-পুরুষ নির্বিশেষে সবাই সমান বলে বিবেচিত, ২.গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় জনগণ প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে রাষ্ট্র পরিচালনায় অনুগ্রগ্রহণ করে যাতে সর্বোত্তম শাসন নিশ্চিত হয়, ৩. শাসনব্যবস্থা শাসকদের দায়িত্বশীলতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করে। অর্থাৎ সরকার জনগণের কাছে তাদের কৃতকর্মের জন্য দায়বদ্ধ থাকে, ৪. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় নাগরিকের মৌলিক অধিকারসমূহ সংবিধানে লিপিবদ্ধকরণ এবং এর প্রয়োগের মাধ্যমে নিশ্চিত করা হয়। পরিশেষে বলা যায়, গণতন্ত্রে জনগণের অধিকার ও সার্বভৌমত্বকে স্বীকার করা হয়। এ ব্যবস্থায় সরকারের সামগ্রিক কর্মকা- জনকল্যাণে পরিচালিত হয় এবং জনগণই প্রত্যক্ষ বা পরোক্ষভাবে এসব কাজ চালায়। আর এসব বিষয় শিবলীর দেশে বিদ্যমান রয়েছে।

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৫ pdf download

৭. সম্প্রতি 'গ' দেশের একটি গোষ্ঠী ও সংস্থা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়কে অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন করছে। উক্ত সম্প্রদায়ের লোকেরা আত্মরক্ষার্থে 'ই' ও 'ঈ' দেশে আশ্রয় লাভের চেষ্টা করছে। এছাড়া আন্তর্জাতিক সংস্থাগুলো 'গ' দেশকে এ সমস্যা সমাধানের তাগিদ দিচ্ছে।
ক. নৈতিক কর্তব্য কী?
খ. লালফিতার দৌরাত্ম্য বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায় কোন কোন অধিকার থেকে বঞ্চিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর 'গ' রাষ্ট্রের আচরণ মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন"- উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ করো।

◈ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. যেসব কর্তব্য মানুষ ন্যায়নীতিবোধ থেকে পালন করে থাকে তাকে নৈতিক কর্তব্য বলে।

খ. লালফিতার দৌরাত্ম্য বলতে আমলাতন্ত্রের কেঠার আনুষ্ঠানিকতা, দীর্ঘসূত্রিতা, নিয়ম-কানুনের বাড়াবাড়ি বা পূর্ববর্তী নিয়ম-কানুনকে অন্যভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ করাকে বোঝায়। 
সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে Red Tapism বা 'পালফিতার দৌরাত্ম্য' প্রত্যয়টির প্রচলন হয়। সে সময় সরকারি ফাইলপত্র লাল রঙের ফিতায় বেঁধে রাখা হতো। তখন থেকেই আমলাতন্ত্রের অতি আনুষ্ঠানিকতা, দীর্ঘসূত্রিতা, নিয়মকানুনের বেশি কড়াকড়ি বোঝাতে লালফিতার দৌরাত্ম্য শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। লালফিতার দৌরাত্ম্যের ফলে মাসের পর মাস, এমনকি বছরের পর বছর বিভিন্ন বিষয় ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে। এতে প্রশাসনিক কাজকর্ম ব্যাহত হয় ও নাগরিকরা ভোগান্তির শিকার হয়। এ বিষয়টিই লালফিতার দৌরাত্ম্য বা Red Tapism নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার তথা মানবাধিকার থেকে বঞ্চিত। সুস্থ ও সুন্দরভাবে বেঁচে থাকার জন্য একজন মানুষের যেসব অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তা প্রয়োজন তাই মানবাধিকার। আর নাগরিক হিসেবে যেসব অধিকার ছাড়া ব্যক্তি সুষ্ঠুভাবে সামাজিক জীবন-যাপন করতে পারে না সেগুলোকে সামাজিক অধিকার বলা হয়। এ অধিকার মানুষের জীবন রক্ষা ও নিরাপত্তার জন্য অপরিহার্য। স্বাধীনভাবে জীবনধারণ, মত প্রকাশের স্বাধীনতা, যথাযথ শিক্ষা লাভ আইনের চোখে সমানাধিকার প্রভৃতি সামাজিক অধিকার। আবার রাষ্ট্রীয় কাজে প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষভাবে অংশগ্রহণের জন্য নাগরিকরা যে সব অধিকার লাভ করে তা রাজনৈতিক অধিকার। এ অধিকার ভোগের মাধ্যমেই একজন ব্যক্তি রাষ্ট্রের উপযুক্ত নাগরিক হয়ে উঠতে পারে। ভোট দান, নির্বাচন করা, সরকারের গঠনমূলক সমালোচনা করা, সরকারি চাকরি লাভ প্রভৃতি রাজনৈতিক অধিকার। অর্থনৈতিক অধিকার হলো অভাব ও দারিদ্র্য থেকে মুক্ত হয়ে একজন ব্যক্তির অর্থনৈতিক জীবনের নিরাপত্তা লাভ কর্মের অধিকার, ন্যায্য মজুরি লাভ, অবকাশ লাভ প্রভৃতি এধরনের অধিকার।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে 'গ' দেশের একটি গোষ্ঠী ও সংস্থা সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর অমানবিক অত্যাচার ও নির্যাতন করছে। ফলে তাদের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক অধিকার; সর্বোপরি মানবাধিকার ক্ষুণ্ন হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের ওপর 'গ' দেশে একটি গোষ্ঠী ও সংস্থা অমানবিক নির্যাতন করছে যা কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়। রোহিঙ্গাদের মানবাধিকার সুস্পষ্টভাবে লঙ্ঘন করা হয়েছে। 
মানুষের মান-মর্যাদা সংরক্ষণের জন্য যেসব অধিকারের নিশ্চয়তা বিধান অপরিহার্য সেগুলোই মানবাধিকার। জাতিসংঘ মানবাধিকার বিষয়টিকে সংজ্ঞায়িত করেছে এভাবে: মানুষ তার জীবনে যেসব সুযোগ-সুবিধা ভোগের দাবিদার এবং যেগুলো ব্যতীত তার ব্যক্তিত্ব বিকশিত হয় ন সেগুলোই হলো মানবাধিকার। জাতিসংঘের ঘোষণায় আরও বলা হয়েছে, মানবাধিকার ভোগের ক্ষেত্রে জাতি-ধর্ম-বর্ণ, ধনী-দরিদ্র নির্বিশেষে সকলেই সমান। এক্ষেত্রে কোনো রকম পার্থক্য বা ভেদাভেদ করা যাবে না। ১৯৪৮ সালের ১০ ডিসেম্বর জাতিসংঘ সাধারণ পরিষদে (General Assembly) মানুষের মৌলিক মানবাধিকারগুলো ঘোষিত হয়। জাতিসংঘ সনদের ৩ থেকে ৩০ নম্বর ধারা পর্যন্ত প্রায় ২৮ টি গুরুত্বপূর্ণ মানবাধিকারের ঘোষণা দেওয়া হয়েছে।
জাতিসংঘ যেসব মানবাধিকারের কথা উল্লেখ করেছে সেগুলো সবই রোহিঙ্গাদের ক্ষেত্রে অনুপস্থিত। তারা নাগরিক অধিকারের পাশাপাশি মেŠলিক অধিকার থেকেও বঞ্চিত। তাদের ভোটাধিকার, কর্মসংস্যানের অধিকার ও আইনের আশ্রয়লাভের অধিকার নেই। রোহিঙ্গারা সে দেশের সামরিক বাহিনী ও ধর্মীয় উগ্রপন্থী গোষ্ঠী দ্বারা প্রতিনিয়ত নির্যাতন ও হত্যার শিকার হচ্ছে। অত্যাচার থেকে বাঁচার জন্য তারা দলে দলে পার্শ্ববর্তী দেশগুলোতে আশ্রয় নিচ্ছে। উপরের আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, ‘গ’ রাষ্ট্রের আচরণের মাধ্যমে সংখ্যালঘু রোহিঙ্গা সম্প্রদায়ের মানবাধিকারের সুস্পষ্ট লঙ্ঘন হয়েছে।

৮. সম্প্রতি 'অ' ও 'ই' দেশের দীর্ঘদিনের ছিটমহল বিরোধ সমস্যার সমাধান হয়েছে। ফলে দীর্ঘদিন পর ছিটমহলবাসী তাদের নাগরিক অধিকার ফিরে পেল। কয়েক মাস আগে 'ই' দেশের ছিটমহলবাসী স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোটাধিকার প্রয়োগ করেছে। জীবনে প্রথমবারের মতো ভোট দিতে পেরে তারা মহাখুশি।
ক. মানবাধিকার কী?
খ. সামাজিক ন্যায়বিচার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ই' দেশের ছিটমহলবাসী ভোট প্রদানের পর কোন অধিকার ফিরে পেল? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. "স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে ছিটমহলবাসীকে অধিকার ভোগের পাশাপাশি কর্তব্যও পালন করতে হবে।" বিশ্লেষণ করো।

◈ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তির যেসব অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তা প্রাপ্য তাই মানবাধিকার।

খ. সামাজিক ন্যায়বিচার বলতে বোঝায় জাতি, ধর্ম, বর্ণ, নারী-পুরুষ, ধনী-গরিব নির্বিশেষে সমাজের সবার প্রতি বিচারের মানদ- হবে এক ও অভিন্ন।
আইনের চোখে সবাই সমান সমাজে বসবাসকারী সবার সুবিচার ও সমান সুযোগ পাওয়ার অধিকার রয়েছে। সামাজিক ন্যায়বিচার প্রতিষ্ঠিত হলে ব্যক্তিস্বাধীনতা ও সামাজিক মূল্যবোধ রক্ষিত হবে। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সামাজিক ন্যায়বিচার ব্যক্তিস্বাধীনতার অন্যতম রক্ষাকবচ।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ই' দেশের ছিটমহলবাসীরা ভোট প্রদানের পর রাজনৈতিক অধিকার ফিরে পেল।
যে সকল অধিকার একজন নাগরিককে রাষ্ট্রীয় কার্যে অংশগ্রহণের সুযোগ করে দেয় সেগুলোকে রাজনৈতিক অধিকার বলে। যেমন- ভোট দানের অধিকার, নির্বাচিত হওয়ার অধিকার, সরকারি চাকরি লাভের অধিকার, বিদেশে অবস্থানকালে নিরাপত্তা লাভের অধিকার, সরকারের সমালোচনা করার অধিকার প্রভৃতি। এই অধিকারগুলো নাগরিককে রাজনৈতিক কর্মকান্ড সম্পৃক্ত হওয়ার সুযোগ করে দেয়। রাজনৈতিক অধিকার সংবিধান অথবা আইনের দ্বারা স্বীকৃত। রাষ্ট্রে রাজনৈতিক অধিকার কেবল নাগরিকগণই ভোগ করতে পারেন। বিদেশিরা এ অধিকার ভোগ করতে পারে না।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে অ ও ই দেশের দীর্ঘদিনের ছিটমহলবিরোধ সমস্যার সমাধান হয়েছে। ফলে ই দেশের ছিটমহলবাসীরা স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে স্থানীয় সরকার নির্বাচনে ভোট দিয়েছে। এ ভোটদান প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে একটি দেশের নাগরিক হিসেবে তাদের রাজনৈতিক অধিকার ভোগের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে। কেননা সকল গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে সর্বজনীন প্রাপ্তবয়স্কের ভোটাধিকার স্বীকৃত। আর এ অধিকার বলেই একজন নাগরিক সরকারের প্রতিনিধি নির্বাচনে অংশগ্রহণ করে। উদ্দীপকের ই রাষ্ট্রের ছিটমহলবাসীর ক্ষেত্রেও একই ঘটনা ঘটেছে। দীর্ঘদিন পর হলেও তারা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিক অধিকার প্রতিষ্ঠা করেছে।

ঘ. স্বাধীন দেশের নাগরিক হিসেবে ছিটমহলবাসীদেরকে অধিকার ভোগের পাশাপাশি কর্তব্যও পালন করতে হবে।
রাষ্ট্রের নিকট নাগরিকের যেমন অধিকার রয়েছে, অনুরুপ রাষ্ট্রের প্রতিও নাগরিকের কর্তব্য রয়েছে। কর্তব্য পালন ব্যতীত শুধু অধিকার ভোগ করা প্রত্যাশিত নয়। একমাত্র কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই নাগরিক অধিকার উপভোগ করা যায়। আর রাষ্ট্রের অধিকার ভোগের মাধ্যমে নাগরিক জীবন বিকশিত হয়। তাই বলা যায় অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ।
রাষ্ট্রপ্রদত্ত সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক অধিকার ভোগ করে। তার বিনিময়ে তাদের কর্তব্য পালন করতে হয়। যেমন- রাষ্ট্রের প্রতি অনুগত থাকা, আইন মান্য করা, কর প্রদান করা ইত্যাদি কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই রাষ্ট্রপ্রদত্ত অধিকার ভোগ করা যায়। সমাজের সদস্য হিসেবে শিক্ষালাভের অধিকার এবং সমাজের কল্যাণে আমাদের অর্পিত শিক্ষাকে প্রয়োগ করে সমাজের উন্নয়ন করা নাগরিকের কর্তব্য। উদ্দীপকের ৪ দেশের ছিটমহলবাসীরা তাদের ভোটাধিকার প্রয়োগের মাধ্যমে রাজনৈতিক অধিকার ভোগ করতে পেরেছে। এজন্য নাগরিক হিসেবে তাদের বিভিন্ন কর্তব্যও পালন করতে হবে। কেননা অধিকার ও কর্তব্য একে অপরের পরিপুরক।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায়, অধিকার ও কর্তব্য সমাজবোধ থেকে উৎপত্তি লাভ করে। মূলত অধিকার ও কর্তব্যের সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ। একটিকে বাদ দিয়ে অপরটি ভোগ করা সম্ভব নয়। তাই বলা যায়, অধিকার কর্তব্যের মধ্যেই নিহিত।

৯. জনাব চৌধুরী একজন প্রবীণ রাজনীতিবিদ। স্থানীয় পৌরসভা নির্বাচনে তিনি মেয়র নির্বাচিত হন। মেয়র অফিসে একজন কর্মচারী নিয়োগে এলাকার প্রভাবশালী এক রাজনৈতিক নেতার সুপারিশ তিনি গ্রহণ করেননি। যোগ্যতম প্রার্থীকে তিনি কর্মচারী নিয়োগ দেন। এতে করে জনাব চৌধুরীর গ্রহণযোগ্যতা আরো বৃদ্ধি পায়।
ক. নাগরিকের কর্তব্যকে কয়ভাগে ভাগ করা যায়?
খ. তথ্য অধিকার বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে জনাব চৌধুরীর ভূমিকায় কোন ধরনের কর্তব্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. জনাব চৌধুরীর কর্তব্য পালনের মাধ্যমে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। বিশ্লেষণ করো।

◈ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. নাগরিকের কর্তব্যকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়। যেমন- নৈতিক ও আইনগত কর্তব্য।

খ. তথ্য অধিকার আন্তর্জাতিকভাবে স্বীকৃত একটি মানবাধিকার। রাষ্ট্রের। বিধানাবলি সাপেক্ষে যথাযথ কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে কোনো বিষয়ে নাগরিকের তথ্য পাওয়ার অধিকারকে তথ্য অধিকার বলে।
আইনানুগ কোনো প্রতিষ্ঠান, সংগঠন বা কর্তৃপক্ষের গঠন, উদ্দেশ্য, কার্যাবলি, কর্মসূচি, দাপ্তরিক নথিপত্র, আর্থিক সম্পদের বিবরণ ইত্যাদিকে তথ্য বলা হয়। প্রত্যেক নাগরিকেরই তথ্য জানার এবং জানানোর অধিকার রয়েছে। বাংলাদেশ সরকার ২০০৯ সালের ৫ এপ্রিল তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯' পাস করে। এ আইনটি সাংবাদিক, গবেষক, মানবাধিকারকর্মী, সমাজসেবকসহ নাগরিক সমাজের উপকারে আসছে এবং কিছু সীমাবদ্ধতা সত্ত্বেও সবমহলের প্রশংসা কুড়িয়েছে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব চৌধুরীর ভূমিকায় একজন নাগরিক বা রাজনীতিবিদ হিসেবে তার নৈতিক ও আইনগত উভয় ধরনের কর্তব্য প্রতিষ্ঠা পেয়েছে।
সততা ও স্বচ্ছতা বজায় রেখে নিজ নিজ দায়িত্ব পালন করাই প্রত্যেক নাগরিকের নৈতিক দায়িত্ব। রাষ্ট্রের নাগরিকদের নৈতিক ও আইনগত এ দু'ধরনের কর্তব্য পালন করতে হয়। নৈতিক কর্তব্য বলতে নাগরিকের সেসব দায়িত্ব পালন করাকে বোঝায়, যেগুলো ব্যক্তি বা সমাজের নীতিবোধ ও বিবেকবোধের ওপর নির্ভরশীল। নৈতিক কর্তব্য পালন না করলে রাষ্ট্র থেকে শাস্তি পেতে হয় না। দরিদ্রকে সাহায্য করা, সমত্মানকে শিক্ষা দান, রাষ্ট্রীয় ত্রাণ তহবিলে অর্থ দান, অন্যায়ের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ করা ইত্যাদি নাগরিকের নৈতিক কর্তব্য। অপরদিকে, যেসব কর্তব্য রাষ্ট্রের আইনের মাধ্যমে নির্ধারিত সেগুলোকে আইনগত কর্তব্য বলা হয়। এ সব কর্তব্য ভা করলে রাষ্ট্র প্রদত্ত শাস্তি ভোগ করতে হয়। রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা, নিয়মিত কর প্রদান করা, আইন মেনে চলা ইত্যাদি আইনগত কর্তব্য।
আইনগত কর্তব্য রাষ্ট্র ও নাগরিকের কল্যাণের জন্য অত্যাবশ্যক। উদ্দীপকের জনাব চৌধুরীও তার ভূমিকায় নৈতিক ও আইনগত কর্তব্যের পরিচয় দিয়েছেন। তিনি কর্মচারী নিয়োগে এলাকার প্রভাবশালী রাজনৈতিক নেতার সুপারিশ গ্রহণ না করে নৈতিক কর্তব্য পালন করেছেন। আর যোগ্যতম প্রার্থীকে কর্মচারী নিয়োগ দিয়ে আইনগত কর্তব্য পালন করেছেন।

ঘ. হ্যাঁ, জনাব চৌধুরীর কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে জনগণের অধিকার প্রতিষ্ঠা পেয়েছে- এ কথাটির যথার্থতা রয়েছে। 
অধিকার ও কর্তব্য একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ। অধিকার ভোগ করলে যেমন কর্তব্য পালন করতে হয়, তেমনি একজন নাগরিকের কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে অন্যের অধিকার সুরক্ষিত হয়। কর্তব্যবিহীন লাগাএছাড়া অধিকার ভোগ করলে তা সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করে। তাই মানুষ যখন কিছু অধিকার ভোগ করে, তখন তাকে কিছু দায়িত্ব পালন করতে হয়। এর ফলে অন্যান্য মানুষের অধিকার সুরক্ষিত হয় এবং সামাজিক ভারসাম্য বজায় থাকে।
উদ্দীপকে বর্ণিত জনাব চৌধুরীর নৈতিক ও আইনগত কর্তব্য হলো, কোনো ধরনের স্বজনপ্রীতি বা সুপারিশকে উপেক্ষা করে সৎ, যোগ্য ও উপযুক্ত প্রার্থীকে কর্মে নিয়োগ প্রদান। আবার জনগণের সাংবিধানিক অধিকার রয়েছে দক্ষতা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে নিয়োগপ্রাপ্ত হবার এবং জীবিকা নির্বাহ করার। উদ্দীপকের জনাব চৌধুরীর আচরণেও নৈতিক ও আইনগত কর্তব্য পালনের দৃষ্টান্ত পাওয়া যায়। প্রভাব থাকা সত্ত্বেও তিনি নৈতিকতা বিরোধী কাজ করেননি। এ কারণে বলা যায়, জনাব চৌধুরীর কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে জনগণের অধিকার রক্ষিত হয়েছে।

১০. কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা গণমাধ্যম কর্মীদের তথ্য না দিলে তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী হাসানুল হক ইনু। ‘‘তথ্য নেবো, তথ্য দেবো, দেশ গড়ায় অংশ নেবো’’ এ প্রতিপাদ্যকে সামনে রেখে এবারের তথ্য অধিকার সপ্তাহ পালিত হচ্ছে। এ সম্পর্কে মন্ত্রী আরো বলেন, গণমাধ্যম কর্মীরা নাগরিকদের পক্ষ থেকে তথ্য অধিকার আইনের প্রয়োগ করলে গণমাধ্যম উপকৃত ও শক্তিশালী হয়। ফলে জবাবদিহিতা ও স্বচ্ছতার মানদ-- গণতন্ত্রও উন্নত হয়।
ক. মানবাধিকার কাকে বলে?
খ. নাগরিকদের কেন কর্তব্য পালন করা উচিত?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মন্ত্রীর আহবানে সাড়া না দিলে তথ্য অধিকার আইনে কী প্রতিকার রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. তুমি কি মনে কর, ২০১৫ সালের তথ্য অধিকার সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয়টি তথ্য অধিকার আইনের সুফল ভোগে সহায়ক হবে? মতামত দাও।

◈ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. মানুষ হিসেবে একজন ব্যক্তির সমাজ ও রাষ্ট্রের কাছে যেসব অধিকার, সম্মান ও নিরাপত্তা প্রাপ্য তাই মানবাধিকার।

খ. রাষ্ট্রের রাজনৈতিক, সামাজিক ও অর্থনৈতিক ব্যবস্থাকে গতিশীল ন্যায়ানুগ করার জন্য নাগরিকদের কর্তব্য পালন করা উচিত। রাষ্ট্রে নাগরিকদের কর্তব্য পালনের গুরুত্ব অপরিসীম। বাংলাদেশ সংবিধানের ২১নং অনুচ্ছেদে নাগরিকদের কর্তব্য পালনের কথা উল্লেখ করা হয়েছে। অধিকার ভোগের পাশাপাশি কর্তব্য পালনের মধ্য দিয়ে ব্যক্তি ও সমাজজীবনে উন্নতি লাভ করা যায়। রাষ্ট্র ও সমাজকে সুন্দরভাবে গড়ে় তোলা এবং রাষ্ট্রের প্রতি আনুগত্য প্রদর্শন করা কেবল কর্তব্য পালনের মাধ্যমেই সম্ভব। তাছাড়া রাষ্ট্রের কাছ থেকে অধিকার পেতে হলে নাগরিককে কর্তব্য পালন করতে হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত মন্ত্রীর আহবানে সাড়া না দিলে অর্থাৎ, কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা গণমাধ্যম কর্মীদের তথ্য সরবরাহ না করলে তথ্য অধিকার আইনে নির্দিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছে আপিল করা যাবে। 
তথ্য অধিকার আইন, ২০০৯ এর ধারা ৪ অনুসারে, সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের কাছ থেকে প্রত্যেক নাগরিকের তথ্য লাভের অধিকার রয়েছে এবং কোনো নাগরিকের অনুরোধের পরিপ্রেক্ষিতে ঐ কর্তৃপক্ষ তাকে তথ্য সরবরাহ করতে বাধ্য থাকবে। কোনো নাগরিক তথ্য লাভে ব্যর্থ হলে তথ্য অধিকার আইনের আওতায় ৩০ দিনের মধ্যে তথ্য কমিশনে আপিল ও অভিযোগ দায়ের করতে পারবে। আপিল কর্তৃপক্ষ আপিল আবেদন প্রাপ্তির ১৫ দিনের মধ্যে আবেদনকারীকে তথ্য প্রদান করতে সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাকে নির্দেশ দেবেন অথবা তথ্য প্রাপ্তির আবেদন বিবেচনাযোগ্য না হলে আপিল আবেদনটি খারিজ করে দেবেন। এক্ষেত্রে তথ্য কমিশন এই আইনের বিধানাবলি সাপেক্ষে অভিযোগ গ্রহণ এবং অনুসন্ধান করবেন। অভিযোগ প্রমাণিত হলে কমিশন দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তাকে অভিযোগের দিন থেকে তথ্য সরবরাহের তারিখ পর্যন্ত প্রতি দিনের জন্য ৫০ টাকা হারে জরিমানা আরোপ করবেন। তবে এই জরিমানা কোনোভাবেই ৫০০০ টাকার বেশি হবে না। আবার কমিশন প্রযোজ্য ক্ষেত্রে উল্লিখিত জরিমানা ছাড়াও সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাজ অসদাচরণ হিসেবে গণ্য করে তার বিরুদ্ধে বিভাগীয় শাস্তির ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ বরাবর সুপারিশ করবেন। এই ধারার অধীনে কোনো জরিমানা বা ক্ষতিপূরণ পরিশোধ না হলে তা সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তার কাছ থেকে Public Demands Recovery Act 1913 Act IX of 1913 এর বিধান অনুযায়ী বকেয়া ভূমি রাজস্ব যে পদ্ধতিতে আদায় করা হয় সেই পদ্ধতিতে আদায়যোগ্য হবে। উদ্দীপকে দেখা যায়, কোনো প্রশাসনিক কর্মকর্তা গণমাধ্যম কর্মীদের তথ্য না দিলে তথ্যমন্ত্রী তার বিরুদ্ধে আইনি পদক্ষেপ গ্রহণের আহবান জানিয়েছেন। এর আলোকে তথ্য চেয়ে না পেলে আইনি প্রতিকার কী হবে তাই উপরে উল্লেখ করা হয়েছে।

ঘ. তথ্য অধিকার সপ্তাহের প্রতিপাদ্য অর্থাৎ ‘‘তথ্য নেবো, তথ্য দেবো, দেশ গড়ায় অংশ নেবো’’ - বিষয়টি তথ্য অধিকার আইনের সুফল ভোগের সহায়ক হবে বলে আমি মনে করি।
জনগণের মৌলিক অধিকার রক্ষার ক্ষেত্রে ২০০৯ সালের তথ্য অধিকার আইন সরকারি ও বেসরকারি কর্তৃপক্ষগুলো নাগরিককে আবেদন সাপেক্ষে তথ্য প্রদানের জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করছে। এই আইনের মাধ্যমে জনগণ তাদের অধিকার সম্পর্কে সচেতন হয়েছে। ভূমি ও ভূমি ব্যবস্থাপনা, হাসপাতাল ও স্বাস্থ্যসেবা, সরকারি চাকরি, প্রশাসন ও মামলা মোকদ্দমা, স্থানীয় সরকারি প্রতিষ্ঠান, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, কৃষি ইত্যাদি বিষয়ের তথ্য প্রাপ্তির মাধ্যমে দুর্নীতির মাত্রা কমেছে নাগরিকরাও নানাভাবে উপকৃত হচ্ছে। এই আইন সরকারি সিদ্ধান্ত গ্রহণ, তা বাস্তবায়ন ও মনিটরিংয়ের ক্ষেত্রে নাগরিকের অংশগ্রহণের সুযোগ সৃষ্টি করেছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ২০১৫ সালের তথ্য অধিকার সপ্তাহের প্রতিপাদ্য বিষয়ের মধ্যে নাগরিকের তথ্য পাওয়ার অধিকার, তথ্য সরবরাহের দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার কর্তব্য এবং উভয় পক্ষের দায়িত্ব পালনের মাধ্যমে দেশকে এগিয়ে নেওয়ার কথা রয়েছে। তথ্য অধিকার আইনের যথাযথ প্রয়োগ প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে পারে। তথ্যের অবাধ সরবরাহের সাথে দুর্নীতি হ্রাসের সম্পর্ক বিদ্যমান। আর দুর্নীতি হ্রাস করা গেলে দেশের উন্নয়নের কাজ সহজ হয়।
পরিশেষে বলা যায়, নাগরিকের পক্ষ থেকে সক্রিয়ভাবে তথ্য চেয়ে আবেদন করা, দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তার দ্রুত সে আবেদনে সাড়া দেওয়া ও সবাই মিলে দেশগঠনের কাজে আত্মনিয়োগ করা অবশ্যই তথ্য অধিকার আইনের সুফল ভোগের সহায়ক হবে। সব পক্ষের সক্রিয় অংশগ্রহণ ছাড়া আইনটি কোনো কাজে আসবে না।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post