HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১০

HSC গার্হস্থ্য বিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Home Science 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

গার্হস্থ্য বিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১০ম অধ্যায়

HSC Home Science 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. রিতা তেলে ভাজা খাবার খুব পছন্দ করে। কিন্তু তেলে ভাজা খাবারে পেটে সমস্যা হয়। মা তাকে নরম ভাত ও ছোট মাছ রান্না করে দেন। রিতা খেয়ে বেশ আরাম অনুভব করে।
ক. পরিপাক কাকে বলে?
খ. যকৃতের কাজ সম্পর্কে লেখ।
গ. রিতার কেন তেলে ভাজা খাবারে সমস্যা হচ্ছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কী ধরনের খাবার রিতার পরিপার্ক ও শোষণে সহায়ক? বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্যদ্রব্য জারকরসের সহায়তায় ভেঙে সহজ, সরল, শোষণোপযোগী অণুতে পরিণত হয়, তাকে পরিপাক বলে।

খ. যকৃৎ অসংখ্য রাসায়নিক কাজ সম্পন্ন করে, এজন্য একে মানবদেহের গবেষণাগার বলা হয়। যকৃৎ থেকে এক প্রকার রসনিঃসৃত হয়ে যকৃৎ নালির মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এসে পিত্তথলিতে কাজ করে-
• চর্বি ও কোলেস্টেরল পরিপাক ও শোষণে সহায়তা করে।
• ক্ষুদ্রান্ত্রের অতিরিক্ত অম্লত্ব নিবারণে সহায়তা করে।
• চর্বিদ্রব্য, ভিটামিনের শোষণে সহায়তা করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত রিতার তেলে ভাজা খাবারে সমস্যা হচ্ছে কারণ এ খাবার ফ্যাটজাতীয় তাই রিতার পরিপাকতন্ত্র সহজে পরিপাক হজম করতে পারছে না পেটে সমস্যা হচ্ছে। খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের পর তা পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয় এবং রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে ও দেহে শোষিত হয়। জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়া জটিল খাদ্যদ্রব্য জারকরসের সহায়তায় ভেঙে সহজ, সরল, শোষণোপযোগী অণুতে পরিণত হওয়াই পরিপাক। এ পরিপাকক্রিয়া ঠিকভাবে সম্পন্ন না হলে পেটে সমস্যা হতে পারে। তেলে ভাজা খাবার মানে ফ্যাট বা চর্বিজাতীয় খাবার। ফ্যাটকে ঘনীভূত শক্তির উৎস হবে। কারণ খাদ্য উপাদানগুলোর মধ্যে ফ্যাটই সবচেয়ে বেশি তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে। উদ্দীপকের রিতার তেলে ভাজা খাবার খুব পছন্দ করে, কিন্তু এতে তার সমস্যা হচ্ছে। রিতার মা তাকে নরম ভাত ও ছোট মাছ রান্না করে দেন। এতে রিতা বেশ আরাম পায়। মুখবিবর, গলবিল ও অম্লনালিতে ফ্যাটের কোণো পরিপাক হয় না। পাকস্থলীতে তীব্র অম্লধর্মী পরিবেশ ও পিত্ত লবণের অভাব থাকায় ফ্যাটের পরিপাক সম্পূর্ণ হয় না। ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে পিত্তরস অগ্ন্যাশয়ের লাইপেজ ও আন্ত্রিক লাইপেজের প্রভাবে ফ্যাটের পরিপাক সম্পূর্ণ হয়। এ পরিপাকক্রিয়ায় যখন ব্যাঘাত ঘটে তখন পেটে সমস্যা হয়। অতএব বলা যায়, রিতার পরিপাকতন্ত্র ফ্যাটের পরিপাক সহজে সম্পন্ন করতে পারছে না বলে রিতার সমস্যা হচ্ছে।

ঘ. সহজপাচ্য খাবার রিতার পরিপাক ও শোষণে সহায়ক। উদ্দীপকের রিতা তেলে ভাজা খাবার খুব পছন্দ করে। কিন্তু তেলে ভাজা খাবারে তার সমস্যা হয়। তার মা তাকে নরম ভাত ও ছোট মাছ রান্না করে দেন। রিতা এগুলো খেয়ে বেশ আরাম অনুভব করে। কিন্তু নরম ভাত খাদ্যদ্রব্য গ্রহণের পর সেগুলো পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশে ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয় এবং রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে ও দেহে শোষিত হয়। পরিপাকের জন্য এনজাইমের প্রয়োজন হয়। এনজাইমসমূহ লালাগ্রন্থি, পাকস্থলী, অগ্ন্যাশয় থেকে নিঃসৃত হয়। পিত্তরস পরিপাক কাজে সহায়তা করে। আমাদের দৈনন্দিন খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য থাকে। এটি অতি সহজে পরিপাক হয়ে দেহে তাপ ও শক্তি উৎপাদন করে। উদ্দীপকের রিতাও নরম ভাত অর্থাৎ কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাবার অতি সহজে হজম করতে পেরেছে। কিন্তু তেলে ভাজা খাবার রিতার সহ্য হয়নি। তার পরিপাকতন্ত্র তেলে ভাজা খাবার সহজে পরিপাক ও শোষণ করতে পারেনি। রিতা ছোট মাছ অর্থাৎ সহজপাচ্য প্রোটিন সহজে হজম করতে পেরেছে। সহজপাচ্য প্রোটিন পরিপাকে ও শোষণে রিতার সমস্যা হয়নি। পরিশেষে বলা যায়, রিতাকে এখন সহজপাচ্য খাবার দিতে হবে যা তার পরিপাকতন্ত্র সহজে পরিপাক ও শোষণ করতে পারে।

২. স্বপন সাহেব একজন ব্যবসায়ী। সারাদিন তার কাজ হলো গাড়িতে চড়ে অফিসে যাওয়া এবং অফিসে কাজকর্ম বসে সম্পাদন করা। সকালে অফিসে যাওয়ার সময় শুধুমাত্র এক কাপ লাল চা খেয়ে যান এবং অফিসে ১০.০০টার দিকে তিনি ২টি রুটি, একটি ডিম ও সবজি দিয়ে তার সকালের নাস্থা করেন। দুপুরে তিনি ভাত, ডাল, সালাদ ও মাছ খান। বিকেলে ২টি বিস্কিট দিয়ে চা পান করেন। এভাবে তিনি তার অফিসে আহার কার্য সম্পাদন করেন। তার প্রায় বুকে ব্যথা করে ও মুখে টক ভাব হয়।
ক. পরিপাক গ্রন্থি কী?
খ. ‘‘খাদ্য শোষণযোগ্য অণুতে পরিণত হলেই পরিপাক সম্পন্ন হয়।’’- বুঝিয়ে দাও।
গ. উদ্দীপকে সকালে গ্রহণকৃত পুষ্টি উপাদানগুলো পরিপাক ক্রিয়ায় নিয়োজিত এনজাইমগুলো পরিপাকতন্ত্রের বিভিন্ন অংশ থেকে ক্ষরিত হয়।’’- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে স্বপন সাহেবের খাদ্য তালিকায় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য থেকে কী পরিমাণ ক্যালরি আসা প্রয়োজন?- আলোচনা কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব গ্রন্থি থেকে পাচক নিঃসৃত হয়ে খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে তাই পরিপাক গ্রন্থি।

খ. পরিপাকের পরে খাদ্য শোষণ যোগ্য অণুতে পরিণত হয়। পরিপাক প্রক্রিয়া বেশ কয়েকটি অঙ্গের মাধ্যমে সংঘটিত হয়। যেমন- দাঁত দিয়ে চিবানোর মাধ্যমে খাদ্য বস্তু ছোট ও নরম হয়। অন্ন নালি দিয়ে চর্বিত খাদ্যগুলো পাকস্থলিতে আসে এবং পরিপাকের সূত্রপাত ঘটে। এখানে পরিপাক সম্পূর্ণ হয় না, খাদ্যবস্তু ক্ষুদ্রান্তে চলে আসে। এখানেই প্রধান পরিপাক কাজ চলে। এরপর বৃহদন্ত্রে খাদ্যবস্তুগুলো প্রবেশ করে এবং পরিপাকক্রিয়া সম্পন্ন করে। এ পরিপাক ঘটে বিভিন্ন এনজাইমের সাহায্যে এরপর পরিপাকের ফলে উৎপন্ন সরল উপাদানগুলো শরীরের মধ্যে শোষিত হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পাকস্থলীর নিঃসৃত পাচকরসে বিভিন্ন খন্ডে পরিপাককারী এনজাইম; যেমন- পেপসিনোজেন, রেনিন, লাইপেজ থাকে। তাছাড়া অন্যান্য উপাদান পানি, অজৈব লবণ, হাইড্রোক্লোরিক এসিড ইত্যাদিও থাকে। খালি পেটে শুধু লাল চা খেলে পাকস্থলীতে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। গ্যাস উপরের দিকে ওঠে বুকে চাপ দেওয়ার ফলে বুকে ব্যথা হতে পারে, মুখে টকভাব হতে পারে।
উদ্দীপকের স্বপন সাহেবের সকালে শুধু লাল চা খাওয়া তার পরিপাক ক্রিয়ায় খারাপ প্রভাব ফেলে। উদ্দীপকের স্বপন সাহেব সকালে অফিসে যাওয়ার সময় শুধুমাত্র এক কাপ লাল চা খেয়ে যান এবং অফিসে ১০টার দিকে তিনি ২টি রুটি, একটি ডিম ও সবজি দিয়ে সকালের নাস্থা করেন। তার প্রায় বুকে ব্যথা করে এবং মুখে টক ভাব হয়। সারারাত পর সকালে স্বপন সাহেবের কিছু খাবার গ্রহণ করা উচিত খালি পেটে শুধু লাল চা খেয়ে দীর্ঘ সময় থাকা উচিত নয়। স্বপন সাহেব সকালে শুধু লাল চা খান বলে তার পরিপাকক্রিয়ায় বিরূপ প্রভাব পড়ে গ্যাসের সৃষ্টি হয়। তাই তার বুকে ব্যথা হয় এবং মুখে টক ভাব হয়।

ঘ. খাদ্যের বিভিন্ন উপাদানুগলোর মধ্যে কার্বোহাইড্রেটের পরিমাণ সবচেয়ে বেশি। এটি সহজে পরিপাক হয়ে দেহে তাপ ও শক্তি উৎপন্ন করে। যারা শারীরিক পরিশ্রম কম করেন তাদের দেহে কার্বোহাইড্রেট ও স্নেহ থেকে প্রাপ্ত তাপ ও শক্তি দেহে সঞ্চিত থাকে। ফলে দেহে চর্বি জমে, ওজন বেড়ে যায়। স্বপন সাহেব হালকা পরিশ্রমের কাজ করে থাকেন। স্বপন সাহেব গাড়িতে অফিসে যান। সারাদিন অফিসে বসে কাজ করেন। তিনি অফিসে যাওয়ার সময় শুধু লাল চা খেয়ে যান। সকাল ১০টার দিকে দুটি রুটি, একটি ডিম ও সবজি দিয়ে নাস্তা করেন। দুপুরে তিনি ভাত, ডাল, সালাদ ও মাছ খান। তিনি কোনো ভারী পরিশ্রমের কাজ করেন না, ব্যায়ামও করেন না।
ইদানীং প্রায় স্বপন সাহেবের বুকে ব্যথা করে এবং মুখে টকভাব হয়। যা হৃদরোগের সম্ভাবনাকে নির্দেশ করে। হৃদরোগে কার্বোহাইড্রেট ও স্নেহের পরিমাণ নিয়ন্ত্রণে রাখতে হয়। বলা যায়, তাই স্বপন সাহেবের খাদ্যতালিকায় কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য থেকে কম ক্যালরি আসা প্রয়োজন।

৩. হোসেন সাহেব একজন খামার ব্যবসায়ী। তার খামারে হাস-মুরগি, ছাড়াও গরু ও ছাগল আছে। খামারে ৩টি পুকুর আছে যেখানে মাছ চাষ করেন। তিনি নিয়মিত তাদের যত্ন নেন। খামার পরিষ্কার পরিচ্ছন্ন রাখেন। খামার করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ধরনের সবজি; যেমন- সিম, মটরশুঁটি ইত্যাদি গাছ লাগিয়েছেন। তার পারিবারিক মাছ, মাংসের চাহিদা তিনি তার খামার থেকে পূরণ করেন।
ক. এনজাইম কী?
খ. 'ক্ষুদ্রান্ত প্রাচীর থেকে ক্ষরিত ও ক্ষুদ্রান্ত্রে আগত 'এনজাইমগুলো খাদ্য পরিপাকে বিশেষ ভূমিকা রাখে। ব্যাখ্যা কর।
গ. হোসেন সাহেবের খামারে প্রোটিনের উৎসগুলো সম্পর্কে আলোচনা কর।
ঘ. হোসেন সাহেবের খামারে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত খাদ্য উপাদানের পরিপাক প্রণালি আলোচনা কর।
৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. এনজাইম হলো খাদ্য পরিপাককারী এক ধরনের অনুঘটক। যা জটিল খাদ্যদ্রব্যকে ভেঙে সহজ, সরল, শোষণোপযোগী অণুতে পরিণত করতে সহায়তা করে।

খ. ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রাচীরে অবস্থিত বিভিন্ন গ্রন্থি থেকে আন্ত্রিক রস ক্ষরিত হয়। ক্ষুদ্রান্ত থেকে ক্ষরিত এনজাইমগুলো হলো- সুক্রোজ, মল্টোজ, ল্যাকটোজ, অ্যামাইলেজ, অ্যামাইলো পেপটাইডেজ, ডাইপেপটাইডেজ, ট্রাইপেপটাইডেজ, আন্ত্রিক লাইপেজ, কোলেস্টেরল এস্টারেজ। পিত্তনালি ও অগ্ন্যাশয় থেকে একটি করে নালি একত্রে মিলিত হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের গ্রন্থিতে যুক্ত হয়। এ নালিপথে ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে পিত্ত ও অগ্ন্যাশয় রস আসে। যা খাদ্য পরিপাকে বিশেষ ভূমিকা রাখে।

গ. হোসেন সাহেবের খামারে প্রোটিনের উৎসগুলো হলো হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল ও মাছ। তার খামারে উদ্ভিদ হতে প্রাপ্ত উদ্ভিজ্জ প্রোটিনও রয়েছে। সিমের বিচি ও মটরশুঁটি উদ্ভিজ্জ প্রোটিনের ভালো উৎস। প্রাণিজ খাদ্য থেকে যে প্রোটিন পাওয়া যায়, সেটি প্রাণিজ প্রোটিন। যেমন- মাছ, মাংস, ডিম, দুধ, কলিজা ইত্যাদি। প্রাণিজ প্রোটিন উৎকৃষ্ট মানের ও উচ্চ জৈবমূল্যের হয়। কারণ এসব খাদ্যে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব অত্যাবশ্যকীয় এমাইনো এসিডগুলো সঠিক পরিমাণে থাকে। উদ্দীপকের হোসেন সাহেব একজন খামার ব্যবসায়ী। তার খামারে হাঁস-মুরগি, গুরু-ছাগল ও মাছ। উদ্দীপকের হোসেন সাহেব একজন খামার ব্যবসায়ী। তার খামারে হাঁস-মুরগি, গরু-ছাগল আছে। ৩টি পুকুরে তিনি মাছ চাষ করেন। খামার করার পাশাপাশি তিনি বিভিন্ন ধরনের সবজি; যেমন- সিম, মটরশুঁটি ইত্যাদি গাছ লাগিয়েছেন। তার খামারের হাঁস-মুরগি-গরু-ছাগলের মাংস ও মাছেই শুধু প্রোটিন বিদ্যমান নয়, তার লাগানো সিম ও মটরশুঁটিতেও উদ্ভিজ প্রোটিন বিদ্যমান। হোসেন সাহেবের খামারের হাঁস-মুরগি হতে যে ডিম উৎপাদন হয় তাও প্রোটিনের ভালো উৎস। গরু ও ছাগল হতে যে দুধ পাওয়া যায় তাও প্রোটিনের উৎকৃষ্ট উৎস।
হোসেন সাহেবের খামারে প্রাণিজ প্রোটিনের উৎস ব্যাপক।
তাই বলা যায়, হোসেন সাহেবের খামারে উদ্ভিজ ও প্রাণিজ উভয় ধরনের প্রোটিনই বিদ্যমান।

ঘ. হোসেন সাহেবের খামারে সবচেয়ে বেশি উৎপাদিত খাদ্য উপাদান হলো প্রোটিন।
প্রোটিন পরিপাক হয়ে এর গাঠনিক একক অ্যামাইনো এসিডে পরিণত হয়। মুখে, গলবিলে ও অন্ননালিতে প্রোটিন পরিপাকের কোনো এনজাইম নেই, তাই এ স্থানগুলোতে প্রোটিন পরিপাক হয় না। পাকস্থলীতেই প্রোটিন পরিপাকের প্রথম ক্রিয়া অনুষ্ঠিত হয়। পাকস্থলীর গাত্র থেকে নিঃসৃত রসে হাইড্রোক্লোরিক এসিড, পেপসিনোজেন, প্রোরেনিন, মিউসিন ও লাইপেজ থাকে। মিউসিন খাদ্যকে পিচ্ছিল করে। হাইড্রোক্লোরিক এসিড খাদ্যের সাথে আগত জীবাণু ধ্বংস করে এবং খাদ্যকে অম্লীয় করে। এছাড়া পেপসিনোজেন ও প্রোরেনিনকে সক্রিয় করে পেপসিন ও রেনিনে পরিণত করে এবং খাদ্যকে নরম করে। এ দুটি এনজাইম পাকস্থলীতে প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের ওপর কাজ করে। প্রোটিনকে প্রোটিওজ ও পেপটোনে পরিণত করে। আংশিকভাবে বিশ্লিষ্ট প্রোটিন উপজাতগুলো ক্ষুদ্রান্তে প্রবেশ করে। ক্ষুদ্রান্তে পরিপাক অর্ধ পরিপাককৃত প্রোটিন জাতীয় খাদ্য প্রোটিওজ ও পেপটোনরূপে আস্থে আস্থে ডিওডেনামে প্রবেশ করে। অগ্ন্যাশয় হতে অগ্ন্যাশয় রস ও পিত্তাশয় হতে পিত্তরস ডিওডেনামে প্রবেশ করে। এসময় ক্ষুদ্রান্ত হতে ক্ষুদ্রান্ত্র রসও ক্ষরিত হয়। অগ্ন্যাশয় রসের নিষি্ক্রয় ট্রিপসিনোজেন ক্ষুদ্রান্ত্র রসের এন্টারোকাইনেজের ক্রিয়ায় সক্রিয় ট্রিপসিনে পরিণত হয় এবং প্রোটিওজ ও পেপটোনের ওপর কাজ করে অ্যামাইনো এসিড ও পেপটাইডে পরিণত করে। অগ্ন্যাশয় রসের নিষি্ক্রয় কাইমোট্রিপসিনোজেন ক্ষুদ্রান্ত্রে ট্রিপসিনের ক্রিয়ায় কাইমোট্রিপসিনে পরিণত হয় এবং অন্যান্য প্রোটিন পলিপেপটাইডকে ক্ষুদ্রতর পেপটাইডে পরিণত করে। কার্বোক্সি পেপটাইডেজের প্রভাবে পেপটাইড ক্ষুদ্রতর পেপটাইডে পরিণত হয় ও এমাইনো এসিডকে মুক্ত করে।
ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পেপটাইডগুলো ক্ষুদ্রান্ত গাত্রের কোষগুলোর মধ্যে শোষিত হওয়ার সময় কোষ ঝিল্লিতে অথবা তার ঠিক পরেই কোষের মধ্যে ট্রাইপেপটাইডেজের ক্রিয়ায় টাইপেপটাইডগুলো বিশ্লিষ্ট হয়ে ডাইপেপটাইড ও এমাইলে এসিডে পরিণত হয়। এ ডাইপেপটাইডগুলো ক্ষুদ্রান্ত কোষের মধ্যে ডাইপেপটাইডেজ এনজাইমের ক্রিয়ায় বিশ্লিষ্ট হয়ে এমাইলে এসিডে পরিণত হয়। অর্থাৎ ক্ষুদ্রান্ত কোষের মধ্যে প্রোটিনের পরিপাক সম্পন্ন হয়।

৪. নিচের দৃশ্যকল্পদুটি দেখ এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
দৃশ্যকল্প-১ :
দৃশ্যকল্প-২ :

কার্বোহাইড্রেট

শোষণের স্থান

যে উপাদান রক্তে প্রবেশ করে

মল্টোজ

পাকস্থলী

গ্লুকোজ

সুক্রোজ

পাকস্থলীর শেষভাগ

গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ

ল্যাকটোজ

পাকস্থলীর মধ্যভাগ

গ্যালাকটোজ

গুকোজ

গ্রহণী ও মধ্য ক্ষুদ্রান্ত

গ্লুকাজ

ফ্রুকটোজ

ক্ষুদ্রান্ত

ফ্রুকটোজ

ক. কোলন কী?
খ. যকৃৎকে মানবদেহের গবেষণাগার বলা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. দৃশ্যকল্প-১ এর চিত্রের 'A' অংশটি মানবদেহের কোন অংশ? এর কাজ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. দৃশ্যকল্প-২ এ কার্বোহাইড্রেট শোষণের চার্টটি মূল্যায়ন কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সিকামের পরের অংশ কোলন। এর চারটি অংশ থাকে (ক) ঊর্ধ্বসীমা কোলন, (খ) অনুভূমিক কোলন, (গ) নিম্নগামী কোলন, (ঘ) সিগময়েড কোলন।

খ. যকৃৎকে শরীরের সবচেয়ে বড় গ্রন্থি। এটি অসংখ্য রাসায়নিক কাজ সম্পন্ন করে। এজন্য যকৃৎকে মানবদেহের গবেষণাগার বলা হয় যকৃত শরীরের ডানদিকে অবস্থিত যকৃত থেকে পিত্তরস নামক একপ্রকার রস নিঃসৃত হয় যা যকৃত নালীর মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এসে জমা হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দৃশ্যকল্প-১ এর চিত্রের 'A' অংশটি মানবদেহের অগ্ন্যাশয়। অগ্ন্যাশয় মিশ্র গ্রন্থি। অগ্ন্যাশয় পাকস্থলির নিচে ও বাম পাশে অবস্থিত প্রায় ২০ সে.মি. দৈর্ঘ্য ও ৫ সে.মি. প্র বিশিষ্ট গ্রন্থি। অগ্ন্যাশয় থেকে উৎপন্ন অগ্ন্যাশয় রস ক্ষুদ্রান্তে গিয়ে খাদ্য পরিপাকে সাহায্য করে। অগ্ন্যাশয়ে এক্সোক্রেইন ও এন্ডোক্রেইন নামক দুটি অংশ আছে। অগ্ন্যাশয়ের এক্সোক্রেইন অংশে খাদ্য পরিপাককারী জারক রস থাকে। এর মধ্যে ট্রিপসিন, কাইমোট্রিপসিন, কার্বোক্সিপেপটাইডেজ প্রোটিন জাতীয় খাদ্যের পরিপাক ঘটায়। অ্যামাইলোপসিন কার্বোহাইড্রেট এবং লাইপেজ চর্বি জাতীয় খাদ্যের পরিপাক ঘটায়। অগ্ন্যাশয়ের এন্ডোক্রেইন অংশ প্রধানত ইনসুলিন ও গুকানন নামক হরমোন নিঃসরণ করে। ইনসুলিন গ্লুকোজকে কোষে ব্যবহারে সহায়তা করে। এর অভাবে ডায়াবেটিস হয়। গ্লুকানন ইনসুলিনের বিপরীত কাজ করে।
তাই বলা যায়, মানবদেহের এ অংশটি অর্থাৎ অগ্ন্যাশয় গুরুত্বপূর্ণ কাজ করে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দৃশ্যকল্প-২ এর কার্বোহাইড্রেট শোষণের চার্টটি আংশিক সঠিক, পুরাপুরি নয়। দৃশ্যকল্প-২ এ মল্টোজের শোষণের স্থান বলা হয়েছে পাকস্থলী; কিন্তু মল্টোজের শোষণের স্থান হলো মধ্য ক্ষুদ্রান্ত ও নিম্ন ক্ষুদ্রান্তের প্রথমাংশে। মল্টোজ শোষিত হয়ে গুকোজ হিসেবে রক্তে প্রবেশ করে। এটি সঠিক বলা হয়েছে। দৃশ্যকল্প-২ এর চার্টে সুক্রোজের শোষণ স্থান বলা হয়েছে পাকস্থলীর শেষভাগ। এটি ভুল। সুক্রোজের শোষণের স্থান মধ্য ক্ষুদান্তের শেষভাগ ও নিম্ন ক্ষুদ্রান্ত। সুক্রোজ শোষিত হয়ে গ্লুকোজ ও ফ্রুকটোজ রক্তে প্রবেশ করে; এ বিষয়টি চার্টে সঠিক বলা হয়েছে। উদ্দীপকের চার্টে দেখানো হয়েছে ল্যাকটোজ শোষিত হয় গ্রহণী ও মধ্য ক্ষুদ্রান্তে। ল্যাকটোজ শোষিত হয়ে রক্তে গ্যালাকটোজ প্রবেশ করে, চার্টে এটি ঠিক দেখানো হয়েছে। চার্টে গ্লুকোজের ক্ষেত্রে বলা হয়েছে যে, এটি গ্রহণী ও মধ্য ক্ষুদ্রান্ত্রে শোষিত হয় এবং রক্তে গ্লুকোজ শোষিত হয়। এ বিষয়টি পুরাপুরি সঠিক বলা হয়েছে। উদ্দীপকের চার্টে ফ্রুটোজের শোষণ স্থান দেখানো হয়েছে ক্ষুদ্রান্ত্রে এবং ফ্রুকটোজ শোষিত হয়ে ফ্রুকটোজই রক্তে প্রবেশ করে। এ বিষয়টিও চার্টে সঠিক দেখানো হয়েছে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের কার্বোহাইড্রেট শোষণের চার্টটি পুরাপুরি সঠিক নয়, আংশিক সঠিক।

৫. লাবণী তার বড় ভাই পুষ্টিবিজ্ঞানের ছাত্র অর্ণবের কাছে কার্বোহাইড্রেট, ফ্যাট ও প্রোটি। সম্পর্কে জানতে চাইল। অর্ণব সংক্ষেপে বুঝিয়ে দিল। বর্ণনা করার সময় অর্ণব বলল, সামান্য পরিমাণ ফ্যাট থেকে আমরা প্রচুর তাপশক্তি পাই। সে আরও বলে, খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে প্রোটিন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
ক. প্রোটিন পরিপাক হয়ে কিসে পরিণত হয়?
খ. ফ্যাট পরিপাকের জন্য পিত্ত অপরিহার্য - বুঝিয়ে লেখ।
গ. অর্ণব যে উপাদান থেকে তাপশক্তি পাওয়ার কথা বলল সেটির পরিপাকক্রিয়া সম্পর্কে লেখ।
ঘ. অর্ণবের শেষের বক্তব্যটির যথার্থতা পাঠ্যবইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. প্রোটিন পরিপাক হয়ে অ্যামাইনো এসিডে পরিণত হয়।

খ. খাদ্য উৎপাদনগুলোর মধ্যে ফ্যাটই সবচেয়ে তাপ ও শক্তি সরবরাহ করে থাকে। তাই ফ্যাটকে ঘনীভূত শক্তির উৎসও বলা হয়। ফ্যাটজাতীয় খাদ্য ভেঙে গ্লিসারল ও ফ্যাটি এসিডে পরিণত হয়। ফ্যাটের পরিপাক হয় মুখ, গলবিল, অন্ননালি, পাকস্থলী ও ক্ষুদ্রান্তে। ক্ষুদ্রান্তের মধ্যে পিন্ড, প্যানক্রিয়াটিক লাইপেজ ও আন্ত্রিক লাইপেজের প্রভাবে ফ্যাটের পরিপাক সম্পূর্ণ হয়। পিত্ত লবণ ফ্যাটের বৃহৎ কণায় পরিণত করে অবদ্রবিত করে। ফলে এই ফ্যাট কণাগুলোর ওপর প্যানক্রিয়াটিক ও আন্ত্রিক লাইপেজের কাজ বহুগুণ বেড়ে যায়। তাই ফ্যাট পরিপাকের জন্য পিত্ত অপরিহার্য।

গ. উদ্দীপকে অর্ণব যে উপাদান থেকে তাপশক্তি পাওয়ার কথা বলল তা হলো ফ্যাট, যা থেকে আমরা প্রচুর তাপশক্তি পাই।
নিচে ফ্যাটের পরিপাকক্রিয়া সম্পর্কে আলোচনা করা হলো-
মুখবিবর, গলবিল ও অন্ননালিতে ফ্যার্টের কোনো পরিপাক হয় না। পাকস্থলীতে এর পরিপাক শুরু হয়।
পাকস্থলী : পাকস্থলিতে তীব্র অম্লধর্মী পরিবেশে ও পিত্তলবর্ণের অভাবে ফ্যাটের সম্পূর্ণ পরিপাক হয় না। তবে যেসব স্নেহজ খাদ্যদ্রব্য অতিক্ষুদ্র অদ্রব্যরূপে অবস্থান করে, যেমন- দুধের সর, ডিমের কুসুম, তাদের ওপর পাকস্থলীর লাইপেজ ক্রিয়া করে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারল উৎপন্ন করে।
ক্ষুদ্রান্ত্র : ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে পিত্তরস, অগ্ন্যাশয়ের লাইপেজ ও আন্ত্রিক লাইপেজের প্রভাবে ফ্যাটের পরিপাক সম্পূর্ণ হয়।
ক. পিত্তের ক্রিয়া : পিত্তরস ফ্যাটের বৃহৎ কণাকে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র কণায় পরিণত করে এবং অগ্ন্যাশয় রসের কোলেস্টেরল এস্টারেজকে সক্রিয় করে।
খ. লাইপেজের ক্রিয়া : লাইপেজ ট্রাইগ্লিসারাইডকে বিশ্লিষ্ট করে ডাইগ্লিসারাইড ও ফ্যাটি এসিড উৎপন্ন করে। এ ডাইগ্লিসারাইডের ওপর আবার লাইপেজ ক্রিয়া করে মনোগ্লিসারাইড ও ফ্যাটি এসিড উৎপন্ন করে। উৎপন্ন মনোগ্লিসারাইড লাইপেজ দ্বারা বিশ্লিষ্ট হয়ে গ্লিসারল ও ফ্যাটি এসিড উৎপন্ন করে।
গ. কোলেস্টেরল এস্টারেজের ক্রিয়া : অগ্ন্যাশয়ের এ এনজাইমটি পিত্তলবর্ণের ক্রিয়ায় সক্রিয় হয়ে খাদ্যের কোলেস্টেরল এস্টারগুলোকে বিশিষ্ট করে মুক্ত কোলেস্টেরল ও ফ্যাটি এসিডে পরিণত করে।
তাই বলা যায়, অর্ণব যে উপাদান থেকে তাপশক্তি পাওয়ার কথা বলল তা হলো ফ্যাট।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত অর্ণবের শেষের বক্তব্যটি ছিল, ‘‘খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে প্রোটিন স্বচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।’’ - তার এ উক্তিটি যথার্থ বলে আমি মনে করি। প্রোটিন গ্রিক শব্দ ‘প্রোটিওস’ থেকে এসেছে, যার অর্থ হলো সর্বপ্রথম গুরুত্বপূর্ণ বা প্রধান। প্রোটিন ছাড়া কোনো জীবের অস্ত্তিত্ব কল্পনা করা যায় না। প্রতিটি জীবকোষ প্রোটিনের সমন্বয়ে গঠিত। দেহ গঠনে প্রোটিনের প্রয়োজনীয়তা সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ। মাংসপেশি, অস্থি এমনকি রক্তেরও প্রধান উপাদান প্রোটিন। প্রোটিনসমূহ প্রভাবকরূপে কাজ করে, যা সকল জৈবিক বিক্রিয়ার হার নিয়ন্ত্রণ করে। যেমন- প্রাণীদেহের এনজাইমসমূহ। যে কারণে খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে প্রোটিন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ। প্রোটিন দেহকোষের গঠন ও বৃদ্ধি সাধন করে। আমাদের দেহের কোষগুলো প্রতিনিয়ত ক্ষয়প্রাপ্ত হয়। এ ক্ষয়প্রাপ্ত স্থানে নতুন কোষ গঠন করে প্রোটিন ক্ষয়পূরণের কাজ করে। যা দেহে রক্ত জমাট বাঁধতে সাহায্য করে। ক্ষতস্থান সারাতেও প্রোটিনের ভূমিকা অনেক। দেহে যখন ফ্যাট ও কার্বোহাইড্রেটের ঘাটতি থাকে তখন প্রোটিন তাপ উৎপাদনের কাজ করে থাকে। এছাড়া প্রোটিন রোগজীবাণু প্রতিরোধ করার জন্য দেহে এন্টিবডি তৈরি করে। প্রোটিন মস্থি ষ্কেরও বিকাশ ঘটায়। এর মাধ্যমে তৈরি এনজাইম, হরমোন ইত্যাদি দেহের অভ্যন্তরে বিপাকীয় কাজ পরিচালিত করে রক্তের প্রোটিন হিমোগ্লোবিন অক্সিজেনকে দেহের বিভিন্ন অংশে প্রেরণ করে ও দেহে পানির সমতা বজায় রাখে। চুল ও চামড়ার রঞ্জক পদার্থ হচ্ছে মেলানিন, যা প্রোটিন জাতীয়।
অতএব বলা যায়, খাদ্যের পুষ্টি উপাদানগুলোর মধ্যে প্রোটিন সবচেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ।

৬. টিনা খাদ্য ও পুষ্টিবিজ্ঞান বিভাগের ছাত্রী। তার চাচাতো বোন লিজা বুটি খেতে পছন্দ করে। টিনা লিজাকে রুটি জাতীয় খাদ্যের পরিপাক পদ্ধতি বুঝিয়ে বলল। এছাড়াও টিনা তাকে খাবার শরীরে শোষণের পরপরই যে কাজে লাগে, সে বিষয়ে অবহিত করল।
ক. মুখবিবর কয়টি অংশ নিয়ে গঠিত?
খ. বিশোষণ বলতে কী বোঝায়?
গ. লিজার পছন্দের খাবারটি কী জাতীয় খাবার? উক্ত খাবারের পরিপাক পদ্ধতি ব্যাখ্যা কর।
ঘ. লিজার পছন্দনীয় খাদ্যের শোষণ পদ্ধতিটি বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মুখবিবর তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত। যথা- ওষ্ঠ, জিহবা ও দাঁত।

খ. বিশোষণ বলতে যে প্রক্রিয়ায় পরিপাকের ফলে উৎপন্ন সরল খাদ্য উপাদান রক্তস্রোতে প্রবেশ করে তাকে বোঝায়। বিশোষণের পরই পুষ্টি উপাদানগুলো শরীরের কাজে লাগতে পারে। খাদ্য পরিপাকের পর যেসব সরল অণু উৎপন্ন হয়, সেগুলোর বিশোষণ অত্যাবশ্যক।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত লিজার পছন্দের খাবার হলো- রুটি। যা কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য।
কার্বোহাইড্রেটের পরিপাক বলতে জটিল শর্করাগুলো ভেঙে দেহে শোষণ উপযোগী সরল শর্করায় পরিণত হওয়াকে বোঝায়।
কার্বোহাইড্রেটের পরিপাক প্রক্রিয়াগুলো হলো-
মুখে ডাইস্যাকারাইড জাতীয় খাবার যেমন- সুক্রোজ, ল্যাকটোজ ও মল্টোজের কোনো পরিপাক ঘটে না। কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য গলবিল দিয়ে অন্ননালিতে প্রবেশ করে। সেখানে অন্ননালির পেশির সংকোচন ও প্রসারণের মাধ্যমে খাদ্য পাকস্থলীতে প্রবেশ করে। এরপর খাদ্যদ্রব্য অন্ননালি দিয়ে পাকস্থলীর উপরের অংশ ফান্ডাসে (Fundus) এসে পৌঁছায়। এই সময় লালার টায়ালিন (Ptyálin) খাদ্যের শ্বেতসার জাতীয় উপাদানের আরও কিছু অংশ মল্টোজে পরিণত করে। পাকস্থলীর হাইড্রোক্লোরিক এসিড খাদ্যম--র ভেতরে প্রবেশ করলে টায়ালিনের কাজ বন্ধ হয়ে যায়। হাইড্রোক্লোরিক এসিডের প্রভাবে সুক্রোজ অণুর কিছু অংশ ভেঙে গ্লুকোজ ও ফ্রুক্টোজে পরিণত হয়। ক্ষুদ্রান্তে অগ্ন্যাশয় রসের অ্যামাইলোপসিন খাদ্যের সিদ্ধ ও কাঁচা স্টার্চ, গ্লাইকোজেন ও ডেক্সট্রিনের আর্দ্র বিশ্লেষণ ঘটায়, ফলে মল্টোজ উৎপন্ন হয়। আন্ত্রিক রসের অ্যামাইলেজ এনজাইম স্টার্চ, ড্রেক্সট্রিন প্রভৃতি পরিস্যাকারাইডকে ভেঙে মল্টোজে পরিণত করে।
এরপর ক্ষুদ্রান্ত থেকে খাদ্যের অবশিষ্টাংশ বৃহদন্ত্রে যায়। বৃহদন্ত্র থেকে প্রধানত খাদ্যের জলীয় অংশটুকু দেহে শোষিত হয়। বাকি অংশ মলে পরিণত হয় এবং দেহ থেকে বের হয়ে যায়।
অতএব বলা যায়, কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্যের পরিপাকক্রিয়া এভাবেই সম্পন্ন হয়।

ঘ. উদ্দীপকের লিজা রুটি খেতে পছন্দ করে। রুটি কার্বোহাইড্রেট জাতীয় খাদ্য। যে প্রক্রিয়ায় পরিপাকের ফলে উৎপন্ন সরল খাদ্য উপাদান রক্তস্রোতে প্রবেশ করে তাকে শোষণ বলে।
কার্বোহাইড্রেটের শোষণ প্রক্রিয়া হলো-
ডাইস্যাকারাইডগুলোর মধ্যে মল্টোজ প্রধানত মধ্য ও নিম্ন ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রথমাংশ, সুক্রোজ মধ্য ক্ষুদ্রান্ত্রের শেষভাগ ও নিম্ন ক্ষুদ্রান্ত্র থেকে এবং ল্যাকটোজ গ্রহণী (duodenum) ও মধ্য ক্ষুদ্রান্ত থেকে শোষিত হয়। ডাইস্যাকারাইডগুলো শোষণের সময় ক্ষুদ্রান্ত্রের কোষঝিল্লিতে ভেঙে মনোস্যাকারাইডে পরিণত হয় ও রক্তে প্রবেশ করে। সকল কার্বোহাইড্রেট পরিপাক শেষে মনোস্যাকারাইডরূপে ক্ষুদ্রান্ত্রে গিয়ে শোষিত হয়। মনোস্যাকারাইডগুলো অতি উচ্চমাত্রায় পানিতে দ্রবণীয় ও ব্যাপনযোগ্য হওয়ায় এরা দ্রুত আন্ত্রিক পর্দার বাধা অতিক্রম করতে পারে। ফ্রুক্টোজ ব্যাপন প্রক্রিয়ার মাধ্যমে রক্তে প্রবেশ করে। অন্ত্রের কোষঝিল্লিতে বিশেষ বাহক দ্বারা গ্লুকোজ ও গ্যালাকটোজের শোষণ সম্পন্ন হয়।
তাই বলা যায়, লিজার পছন্দনীয় কার্বোহাইড্রেট খাদ্যের শোষণ উক্ত পদ্ধতির মাধ্যমে হয়ে থাকে।

৭. নিচের চিত্রদুটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
ক. পৌষ্টিক নালি কাকে বলে?
খ. যকৃৎ কীভাবে চর্বি পরিপাকে সাহায্য করে?
গ. চিত্রে 'A' অংশটি চিহ্নিত করে মানবদেহে এর কাজ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. চিত্রে 'B' অংশটিতে রুটি, ভাত, মাছ, মাংস ইত্যাদির শোষণ পদ্ধতি বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মুখবিবর থেকে মলদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত নালিকে পৌষ্টিক নালি বলে।

খ. যকৃৎ মানবদেহের সর্ববৃহৎ গ্রন্থি যা অসংখ্য রাসায়নিক কাজ সম্পন্ন করে। চর্বি বা ফ্যাট পরিপাকে পিত্তরস অপরিহার্য ভূমিকা পালন করে। আর এ পিত্তরস যকৃৎ থেকেই নির্গত হয়। যকৃৎ থেকে পিত্তরস নামক একপ্রকার রসনিঃসৃত হয়ে যকৃৎ নালির মধ্য দিয়ে ধীরে ধীরে এসে পিত্তথলিতে জমা হয়। পিত্তনালির মাধ্যমে পিত্তরস যকৃৎ থেকে ডিওডেনামে আসে। যকৃৎ অতিরিক্ত গ্লুকোজকে চর্বিতে পরিণত করে সঞ্জিত রাখে এবং যকৃৎ থেকে নিঃসৃত পিত্তরস এ চর্বি পরিপাকে সাহায্য করে।

গ. চিত্রের 'A' চিহ্নিত অংশটি হলো পাকস্থলী। পাকস্থলী উদর গহবরে মধ্যচ্ছদার নিচে, অগ্ন্যাশয়ের সামনে এবং যকৃতের বামে ও নিচে অবস্থিত। এর তিনটি অংশ- ১. উপরের অংশ ফান্ডাস, ২. মধ্য অংশ বডি ও ৩. নিম্ন অংশ- পাইলোরাস। এটি ক্ষুদ্রান্ত্রের গ্রন্থির সাথে যুক্ত থাকে। পাকস্থলীর উপরে ও নিচের অংশে দুটি পেশিবলয় থাকে। চিত্রের 'অ' অংশটিতে একটি পাকস্থলীর চিত্র দেওয়া আছে। এটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ অঙ্গ। মানবদেহে পাকস্থলী নানা ধরনের কাজ করে থাকে। পাকস্থলী থেকে পাচকরস ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয়। পাকস্থলীর নিঃসৃত পাচকরসে বিভিন্ন খাদ্য পরিপাককারী এনজাইম; যেমন- পেপসিনোজেন, রেনিন, লাইপেজ থাকে। তাছাড়া অন্যান্য উপাদান- পানি, অজৈব লবণ, হাইড্রোক্লোরিক এসিড ইত্যাদিও থাকে। এসব এসিড জীবাণু ধ্বংস করে ও এনজাইম খাদ্যকে তরলীকৃত করে আংশিক পরিপাক ঘটায়। তবে পানি, গ্লুকোজ, অ্যালকোহল ও নানা প্রকার ওষুধ প্রত্যক্ষভাবে রক্তে শোষিত হয়। পাকস্থলীতে খাদ্য সাময়িকভাবে জমা থাকে এবং খাদ্য জীবাণুমুক্ত হয়।
তাই বলা যায়, পাকস্থলী মানবদেহে নানা ধরনের কাজ করে থাকে।

ঘ. চিত্রের 'B' অংশটি হলো ক্ষুদ্রান্ত্র, যা খাদ্য পরিপাক ও শোষণে সহায়তা করে। খাদ্রের পরিপাক ক্রিয়া পাকস্থলিতে শুরু হয় এবং ক্ষুদ্রান্তে গিয়ে শেষ হয়। ক্ষুদ্রান্ত্র পাইলোরিক স্পিংটারের পর থেকে শুরু হয়ে বৃহদন্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। এটি প্রায় ১৭ ফুট দীর্ঘ একটি নল। চিত্রের ‘B’ অংশটিতে ক্ষুদ্রান্ত্রের চিত্র দেওয়া হয়েছে। এর সাহায্যে রুটি, ভাত, মাছ, মাংস ইত্যাদি খাবার শোষিত হয়। ক্ষুদ্রান্ত্রটি কু-লী পাকিয়ে অবস্থান করে। একে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়। প্রথম অংশ গ্রহণী, দ্বিতীয় অংশ মধ্য ক্ষুদ্রান্ত্র এবং শেষ অংশ নিম্ন ক্ষুদ্রান্ত্র। পিত্তনালি ও অগ্ন্যাশয় থেকে একটি করে নালি একত্রে মিলিত হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রে যুক্ত হয়। এ নালিপথে ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে পিত্ত ও অগ্ন্যাশয় রস আসে। এছাড়া ক্ষুদ্রান্ত্রের সাথে অবস্থিত বিভিন্ন গ্রন্থি আন্ত্রিক রস নিঃসৃত করে এসব রসের মধ্যে খাদ্য পাচনকারী বিভিন্ন এনজাইম থাকে। ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রধান কাজ হলো বিভিন্ন প্রকারের পাচক রস নিঃসৃত করা এবং খাদ্য পরিপাক ও শোষণে সহায়তা করা"। রুটি, ভাত, মাছ, মাংস ইত্যাদি নানা ধরনের খাবার ক্ষুদ্রান্ত্রের মাধ্যমে মানবদেহে শোষিত হয়। তাই বলা যায়, ক্ষুদ্রান্ত্রের মাধ্যমে মানবদেহে খাদ্য পরিপাক ও শোষিত হয়।

৮. কিশোর আরাফাত তার ‘মা’-এর সাথে কৌতূহলী হয়ে অনেক গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ে আলোচনায় লিপ্ত হয়। একদিন সে তার মাকে জিজ্ঞেস করল মানুষ নরম, শক্ত, তরল কত ধরনের খাবার খায়? এগুলো কীভাবে পেটের মধ্যে হজম হয়? মা তাকে জানাল মানুষ যত খাদ্যই গ্রহণ করে এগুলো একটি নির্দিষ্ট প্রক্রিয়ায় হজম হয় এবং খাদ্যদ্রব্যগুলো মানুষ যখন গ্রহণ করে তারপর এগুলো ভেঙে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র অংশে বিভক্ত হয় এবং রাসায়নিক পরিবর্তন ঘটে ও দেহে শোষিত হয়।
ক. মানুষের কয়টি ছেদন দাঁত থাকে?
খ. মানুষের ক্ষুদ্রান্ত্র সম্পর্কে ধারণা দাও।
গ. আরাফাতের মায়ের দেওয়া তথ্যে পাঠ্যবইয়ের যে ধারণার প্রতিফলন ঘটেছে তার ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. আরাফাতের মায়ের দেওয়া তথ্যমতে বলা যায় মুখবিবর মানবদেহের একটি অন্যতম অংশ- বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মানুষের ২টি ছেদন দাঁত থাকে।

খ. ক্ষুদান্ত পাইরোলিক স্পিংটারের পর থেকে শুরু হয়ে বৃহদান্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। এটি প্রায় ১৭ ফুট দীর্ঘ একটি নল। এটি কু-লী পাকিয়ে অবস্থান করে। একে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়। প্রথম অংশ- গ্রহণী (Duodenum), দ্বিতীয় অংশ- মধ্যক্ষুদ্রান্ত্র (Jejunum), শেষ অংশ- নিম্ন ক্ষুদ্রান্ত (Ileum)। পিত্তনালি ও অগ্ন্যাশয় থেকে একটি করে নালি’ একত্রে মিলিত হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রের সাথে যুক্ত হয়। এ নালিপথে ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে পিত্ত ও অগ্ন্যাশয় রস আসে। এছাড়া ক্ষুদ্রান্ত্রের গাত্রে অবস্থিত বিভিন্ন গ্রন্থি আন্ত্রিক রস নিঃসৃত করে। আর এসব রসের মধ্যে খাদ্য পচনকারী বিভিন্ন এনজাইম থাকে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আরাফাতের মায়ের দেওয়া তথ্যে পরিপাকতন্ত্রের প্রতিফলন ঘটেছে
যে জৈব রাসায়নিক প্রক্রিয়ায় জটিল খাদ্যদ্রব্য জারকরসের (Enzymes) সহায়তায় ভেঙে স্হজ, সরল, শোষণোপযোগী অণুতে পরিণত হয় তাকে পরিপাক বা (Digestion) বলে। পরিপাকতন্ত্রের মাধ্যমে খাদ্যের কার্বোহাইড্রেট ভেঙে গ্লুকোজ, প্রোটিন ভেঙে অ্যামাইনো এসিড, ফ্যাট ভেঙে ফ্যাটি এসিড ও গ্লিসারলে পরিণত হয়। খাদ্যদ্রব্যের পরিপাকক্রিয়া দেহের যে অংশে সম্পন্ন হয়, তা পরিপাকতন্ত্র। খাদ্য পরিপাকের ক্ষেত্রে বেশ কয়েকটি অঙ্গ কাজ করে। দেহের যে অংশের মাধ্যমে বিভিন্ন ধরনের খাদ্যবস্তু গ্রহণ, খাদ্যবস্তুর পরিপাক ও শোষণ হয় এবং অপাচ্য অংশটুকু দেহ থেকে নিষ্কাশিত হয়, তাকে পরিপাকতন্ত্র বলা হয়।
মানবদেহের পরিপাকতন্ত্র দুটি অংশ নিয়ে গঠিত পৌষ্টিক নালি এবং পৌষ্টিক গ্রন্থি।
মুখবিবর থেকে মলদ্বার পর্যন্ত বিস্তৃত নালিই হচ্ছে পৌষ্টিক নালি আরও বিভিন্ন পাচকরস নিঃসৃত হয়ে খাদ্য পরিপাকে সহায়তাকারী গ্রন্থি হচ্ছে পৌষ্টিক গ্রন্থি।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত আরাফাতের মায়ের দেওয়া তথ্য অনুযায়ী বলা যায়. মুখবিবর মানবদেহের একটি অন্যতম অংশ। মুখবিবর তিনটি অংশ নিয়ে গঠিত।
(i) ওষ্ঠ (Lip) : মুখের সম্মুখে উপরে ও নিচে দুটি ওষ্ঠ থাকে।
(ii) জিহবা (Tongue) : জিহবা প্রধানত দুই প্রকার কলা দ্বারা গঠিত। যথা-
(ক) পেশিস্তর : জিহবার অভ্যন্তরীণ ভাগ গুচ্ছ ঐচ্ছিক বা সরল পেশিতন্ত্র দ্বারা বিন্যস্থ।
(খ) শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি : জিহবার বহিঃপৃষ্ঠ শ্লৈষ্মিক ঝিল্লি পেশি স্তর দ্বারা আবৃত থাকে।
(iii) দন্ত (Teeth) : প্রাপ্তবয়স্ক মানুষের প্রত্যেক চোয়ালের অস্থির মধ্যে পৃথক পৃথক দন্ত কোটরে মোট ১৬টি দন্ত থাকে। এগুলো প্রত্যেক চোয়ালের সম্মুখ ভাগে থাকে।
কর্তন দাঁত- ৪টি সম্মুখ ভাগে।
ছেদন দাঁত- কর্তন দাঁতের দুপাশে ১টি করে মোট ২টি ছেদন দাঁত থাকে
চর্বণ দাঁত- ছেদন দাঁতের দুই পাশে ২টি করে মোট ৪টি চর্বণ দাঁত থাকে।
পেষণ দাঁত- চর্বণ দাঁতের দুই পাশে ৩টি করে মোট ৬টি পেষণ দাঁত থাকে।
পরিশেষে বলা যায়, উপরিউক্ত কারণে মুখবিবরকে মানবদেহের অন্যতম অংশ বলা হয়।

৯. নিচের চিত্রটি লক্ষ্য কর এবং প্রশ্নগুলোর উত্তর দাও।
চিত্র
ক. অগ্ন্যাশয় পেটের কোন অংশে অবস্থিত?
খ. মানবদেহের ক্ষুদ্রান্ত্রের বর্ণনা দাও।
গ. বক্স ‘ক’ যে পৌষ্টিক গ্রন্থিটি উপযুক্ত বলে বিবেচিত তার কার্যক্রম ও অবস্থান ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বক্স ‘গ’ এ যে পৌষ্টিক গ্রন্থির অবস্থান তার কার্যক্রম ও অবস্থান মূল্যায়ন কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অগ্ন্যাশয় পেটের উপরিভাগে পাকস্থলীর পিছনে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত।

খ. ক্ষুদ্রান্ত্রের পাইলোরিক স্পিংটারের পর থেকে শুরু হয়ে বৃহদান্ত্র পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। এটি প্রায় ১৭ ফুট দীর্ঘ একটি নল। এটি কু-লী পাকিয়ে অবস্থান করে। একে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়। প্রথম অংশ- গ্রহণী (Duodenum), দ্বিতীয় অংশ- মধ্য ক্ষুদ্রান্ত (Jejunum), শেষ অংশ- নিম্ন ক্ষুদ্রান্ত (lleum)। পিত্তনালি ও অগ্ন্যাশয় থেকে একটি করে নালি একত্রে মিলিত হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রে যুক্ত হয়। এ নালি পথে ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে পিত্ত ও অগ্ন্যাশয় রস আসে।
ক্ষুদ্রান্ত্রের প্রধান কাজ হলো বিভিন্ন প্রকারের পাচকরস নিঃসৃত করা এবং খাদ্য পরিপাক ও শোষণে সহায়তা করা।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বক্স ‘ক’ এ লালাগ্রন্থিটি উপযুক্ত বলে বিবেচিত। মানুষের মুখবিবরে তিন জোড়া লালাগ্রন্থি থাকে। যেমন-
(ক) সাবম্যান্ডিবুলার (Submandibular) এটি নিচের চোয়ালের পাশে অবস্থিত।
(খ) সাবলিঙ্গুয়াল (Sublingulal) এটি জিহবার নিচে অবস্থিত।
(গ) প্যারোটিড (Parotid) এটি কানের নিচে ও সামনে অবস্থিত।
এ তিনটি গ্রন্থি থেকে যে রস বের হয় তাকে লালারস বলে।
লালারসে টায়ালিন নামক এনজাইম শর্করাজাতীয় খাদ্য পরিপাকে সহায়তা করে। লালারস খাদ্যকে পিচ্ছিল করে ও গলাধঃকরণে সহায়তা করে।

ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বক্স ‘গ’ এ অগ্ন্যাশয় পৌষ্টিক গ্রন্থির অবস্থান। অগ্ন্যাশয় পেটের উপরিভাগে পাকস্থলীর পিছনে আড়াআড়িভাবে অবস্থিত। এটি প্রায় ১৫-২০ সে.মি. লম্বা ও ২-৪ সে.মি. চওড়া এবং ওজন ৯০ গ্রাম অগ্ন্যাশয় মিশ্র গ্রন্থি। এতে অক্সোক্রেইন ও এন্ডোক্রেইন নামক দটি অংশ আছ। অগ্ন্যাশয়ের রস বর্ণহীন, ক্ষারধর্মী ও পরিষ্কার জলীয় দ্রবণ। এক্সোক্রেইন অংশে খাদ্য পরিপাককারী জারক রস থাকে। এটির মধ্যে প্রধানত ট্রিপসিন প্রোটিন, অ্যামাইলোপসিন কার্বোহাইড্রেট এবং লাইপেজ চর্বি জাতীয় খাদ্যের পরিপাক ঘটায়। এ অংশ প্রধান ইনসুলিন ও গ্লুকাগন নামক হরমোন নিঃসরণ করে। ইনসুলিন গ্লুকোজকে কোষে ব্যবহারে সহায়তা করে। এর অভাবে ডায়াবেটিস রোগ হয়। গ্লুকাগন ইনসুলিনের বিপরীতে কাজ করে।

১০. মারওয়ান মারাত্মক এক পেট ব্যথা নিয়ে ভর্তি হয়েছে বাংলাদেশ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ডাক্তার জিয়াউল হক শারীরিক কয়েকটি মেডিকেল টেস্ট করানোর পর নিশ্চিত হয়েছেন যে, তার শরীরের যে অংশের প্রধান কাজ হলো বিভিন্ন প্রকার পাচকরস নিঃসৃত করা এবং খাদ্য পরিপাক ও পেষণে সহায়তা করা তা ঠিকমতো কাজ করছে না বলেই তার এ পেট ব্যথা। তবে তার পাকস্থলী, কার্ডিয়াক স্প্রিন্টার, পাইলোরিক স্প্রিন্টারে কোনো সমস্যা নেই।
ক. যকৃৎ পেটের কোন অংশে অবস্থিত?
খ. মানবদেহে পাকস্থলীর কাজ ব্যাখ্যা কর।
গ. পৌষ্টিক নালির যে অংশের সমস্যার কারণে মারওয়ান পেট ব্যথায় ভুগছে সে অংশের ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. মারওয়ানের শরীরের যে অংশে কোনো সমস্যা নেই বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন মানবদেহের সে অংশের কার্যক্রম বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যকৃৎ পেটের উপরিভাগের ডানদিকে অবস্থিত।

খ. পাকস্থলী উদর গহবরে মধ্যচ্ছদার নিচে, অগ্ন্যাশয়ের সামনে এবং যকৃতের বামে ও নিচে অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ২৫ সে. মি. এবং প্রস্থ ১৫ সে. মি. হয়। মানবদেহে পাকস্থলী থেকে পাচকরস ও হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয়। এ পাচকরসে বিভিন্ন খাদ্য পরিপাককারী এনজাইম থাকে। যেমন- পেপসিনোজেন, রেনিন, লাইপেজ। এ এসিড জীবাণু ধ্বংস করে ও এনজাইম খাদ্যকে তরলীকৃত করে আংশিক পরিপাক ঘটায়। তবে পানি, গ্লুকোজ, অ্যালকোহল ও নানা প্রকার ওষুধ প্রত্যক্ষভাবে রক্তে শোষিত হয়।

গ. পৌষ্টিক নালির ক্ষুদ্রান্ত অংশের সমস্যার কারণে মারওয়ান পেট ব্যথায় ভুগছে।
ক্ষুদ্রান্ত্র পাইলোরিক স্পিংটারের পর থেকে শুরু করে বৃহদান্ত পর্যন্ত বিস্তৃত থাকে। এটি প্রায় ১৭ ফুট দীর্ঘ একটি নল। এটি কু-লী পাকিয়ে অবস্থান করে। একে তিনটি অংশে ভাগ করা যায়। প্রথম অংশ গ্রহণী (Doudenum), দ্বিতীয় অংশ- মধ্য ক্ষুদ্রান্ত্র (Jejunum), শেষ অংশ- নিম্ন ক্ষুদ্রান্ত্র (Ileum)।
পিত্তনালি ও অগ্ন্যাশয় থেকে একটি করে নালি একত্রে মিলিত হয়ে ক্ষুদ্রান্ত্রে যুক্ত হয়। এ নালি পথের ক্ষুদ্রান্ত্রের মধ্যে পিত্ত অগ্ন্যাশয় রস আসে। এছাড়া ক্ষুদ্রান্ত্রের অবস্থিত বিভিন্ন গ্রন্থি আন্ত্রিক রসনিঃসৃত করে। এসব রসের মধ্যে খাদ্য পাচনকারী বিভিন্ন এনজাইম থাকে।
ক্ষূদ্রান্তের প্রধান কাজ হলো বিভিন্ন প্রকারের পাচকরস নিঃসৃত করা এবং খাদ্য পরিপাক ও শোষণে সহায়তা করা।

ঘ. মারওয়ানের শরীরের যে অংশের কোনো সমস্যা নেই বলে চিকিৎসক জানিয়েছেন তা হচ্ছে পাকস্থলী।
পাকস্থলী উদর গহবরে মধ্যচ্ছদার নিচে, অগ্ন্যাশয়ের সামনে এবং যকৃতের বামে ও নিচে অবস্থিত। এর দৈর্ঘ্য ২৫ সে. মি. এবং প্রস্থ ১৫ সে. মি. হয়। পাকস্থলীর তিনটি অংশ- ১. উপরের অংশ- ফান্ডাস, ২. মধ্য অংশু বডি, ৩. নিম্ন অংশ- পাইলোরাস। এটি ক্ষুদ্রান্ত্রের গ্রন্থির সাথে যুক্ত থাকে। পাকস্থলীর উপরে ও নিচের অংশে দুটি পেশিবলয় থাকে।
পাকস্থলী থেকে পাচকরস এবং হাইড্রোক্লোরিক এসিড নিঃসৃত হয়। এ পাচকরসে বিভিন্ন খাদ্য পরিপাককারী এনজাইম, যেমন- পেপসিনোজেন, রেনিন ও লাইপেজ থাকে। এ এসিড জীবাণু ধ্বংস করে ও এনজাইম খাদ্যকে তরলীকৃত করে আংশিক পরিপাক ঘটায়। তবে পানি, গ্লুকোজ, অ্যালকোহল ও নানা প্রকার ওষুধ প্রত্যক্ষভাবে রক্তে শোষিত হয়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post