G

আমার পথ -কাজী নজরুল ইসলাম

[লেখক-পরিচিতিঃ কাজী নজরুল ইসলাম বাংলাদেশের জাতীয় কবি। তিনি ভারতের পশ্চিমবঙ্গের বর্ধমান জেলার আসানসোল মহকুমার চুরুলিয়া গ্রামে ১৮৯৯ খ্রিষ্টাব্দের ২৪শে মে (১১ই জ্যৈষ্ঠ ১৩০৬) জন্মগ্রহণ করেন। তার বাবার নাম কাজী ফকির আহমেদ, মায়ের নাম জাহেদা খাতুন। সত্য প্রকাশের দুরন্ত সাহস নিয়ে নজরুল আমৃত্যু সকল অন্যায় ও শোষণের বিরুদ্ধে ছিলেন সোচ্চার, প্রতিবাদী। এজন্য বাংলা সাহিত্যের ‘বিদ্রোহী কবি' হিসেবে তিনি সমধিক পরিচিত। আবার একই সঙ্গে কোমল দরদি মন নিয়ে ব্যথিত বঞ্চিত মানুষের পাশে থেকেছেন তিনি।

এক হাতে বাশি আরেক হাতে রণতূর্য নিয়ে আবির্ভূত হয়েছিলেন। নজরুল; আর এসেই প্রচলিত শিল্পধারাসমূহকে পাল্টে দিয়ে নতুন বিষয় ও নতুন শব্দে বাংলা সাহিত্য ও সংগীতকে করেছেন সমৃদ্ধতর। দরিদ্র পরিবারে জন্ম নেওয়া নজরুলের কর্মজীবনও ছিল অত্যন্ত বৈচিত্র্যময়। মসজিদের ইমামতি, লেটোর দলে যোগদান, ১৯১৭ খ্রিষ্টাব্দে সেনাবাহিনীর বাঙালি পল্টনে যোগদান, সাম্যবাদী ধারার রাজনীতি, পত্রিকা সম্পাদনা কিংবা চলচ্চিত্রের সঙ্গে যুক্ত হওয়াসহ বহু বিচিত্র অভিজ্ঞতায় তাঁর জীবন ছিল পূর্ণ। মাত্র তেতাল্লিশ বছর বয়সে দুরারোগ্য ব্যাধিতে আক্রান্ত হওয়ায় এই ঋদ্ধ ও সম্ভাবনাময় জীবন আমৃত্যু নির্বাক হয়ে যায়। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের উদ্যোগে নজরুলকে বাংলাদেশের নাগরিকত্ব এবং জাতীয় কবির মর্যাদা দিয়ে সসম্মানে এদেশে বরণ করে নেওয়া হয়।

এর কিছুকাল পরে কবির মৃত্যু হলে তাঁকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মসজিদের পাশে পূর্ণ রাষ্ট্রীয় মর্যাদায় সমাধিস্থ করা হয়। কবি হলেও সাহিত্যের অন্যান্য শাখায়ও তিনি বিচরণ করেছেন। তাঁর রচিত উপন্যাসের মধ্যে বাঁধনহারা’, ‘মৃত্যু-ক্ষুধা’, ‘কুহেলিকা' এবং গল্পগ্রন্থের মধ্যে ব্যথার দান’, ‘রিক্তের বেদন’, ‘শিউলিমালা’ বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য। যুগ-বাণী, ‘দুর্দিনের যাত্রী’, ‘রুদ্র-মঙ্গল’, ‘রাজবন্দির জবানবন্দি’ তার উল্লেখযোগ্য প্রবন্ধগ্রন্থ। কাজী নজরুল ইসলাম ১৯৭৬ খ্রিষ্টাব্দের ২৯ শে আগস্ট (১২ই ভাদ্র ১৩৮৩) ঢাকায় মৃত্যুবরণ করেন।]

গল্পঃ
আমার পথ

আমার কর্ণধার আমি। আমার পথ দেখাবে আমার সত্য। আমার যাত্রা-শুরুর আগে আমি সালাম জানাচ্ছি- নমস্কার করছি আমার সত্যকে। যে-পথ আমার সত্যের বিরোধী, সে পথ আর কোনো পথই আমার বিপথ নয়। রাজভয়- লোকভয় কোনো ভয়ই আমায় বিপথে নিয়ে যাবে না।

আমি যদি সত্যি করে আমার সত্যকে চিনে থাকি, আমার অন্তরে মিথ্যার ভয় না থাকে, তাহলে বাইরের কোনো ভয়ই আমার কিছু করতে পারবে না। যার ভিতরে ভয়, সেই বাইরে ভয় পায়। অতএব যে মিথ্যাকে চেনে, সে মিছামিছি তাকে ভয়ও করে না।

যার মনে মিথ্যা, সে-ই মিথ্যাকে ভয় করে। নিজকে চিনলে মানুষের মনে আপনা-আপনি এত বড় একটা জোর আসে যে, সে আপন সত্য ছাড়া আর কাউকে কুর্নিশ করে না। অর্থাৎ কেউ তাকে ভয় দেখিয়ে পদানত রাখতে পারে না।

এই যে, নিজকে চেনা, আপনার সত্যকে আপনার গুরু, পথপ্রদর্শক কাণ্ডারি বলে জানা, এটা দম্ভ নয়, অহংকার নয়। এটা আত্মকে চেনার সহজ স্বীকারোক্তি। আর যদি এটাকে কেউ ভুল করে অহংকার বলে মনে করেন, তবু। এটা মন্দের ভালো অর্থাৎ মিথ্যা বিনয়ের চেয়ে অনেক বেশি ভালো।

অনেক সময় খুব বেশি বিনয় দেখাতে গিয়ে নিজের সত্যকে অস্বীকার করে ফেলা হয়। এতে মানুষকে ক্রমেই ছোট করে ফেলে, মাথা নিচু করে আনে। ও রকম বিনয়ের চেয়ে অহংকারের পৌরুষ অনেক-অনেক ভালো। অতএব এই অভিশাপ-রথের সারথির স্পষ্ট কথা বলাটাকে কেউ যেন অহংকার বা স্পর্ধা বলে ভুল না করেন।

আমার পথ - কাজী নজরুল ইসলাম
লেখকঃ কাজী নজরুল ইসলাম

স্পষ্ট কথা বলায় একটা অবিনয় নিশ্চয় থাকে; কিন্তু তাতে কষ্ট পাওয়াটা দুর্বলতা। নিজকে চিনলে, নিজের সত্যকেই নিজের কর্ণধার মনে জানলে নিজের শক্তির ওপর অটুট বিশ্বাস আসে। এই স্বাবলম্বন, এই নিজের ওপর অটুট বিশ্বাস করতেই শেখাচ্ছিলেন মহাত্মা গান্ধীজি। কিন্তু আমরা তার কথা বুঝলাম না, “আমি আছি” এই কথা বলে সবাই বলতে লাগলাম “গান্ধীজি আছেন”।

এই পরাবলম্বনই আমাদের নিষ্ক্রিয় করে ফেলে। একেই বলে সবচেয়ে বড় দাসত্ব। অন্তরে যাদের এত গোলামির ভাব, তারা বাইরের গোলামি থেকে রেহাই পাবে কী করে? আত্মাকে চিনলেই আত্মনির্ভরতা আসে। এই আত্মনির্ভরতা যেদিন সত্যি সত্যিই আমাদের আসবে, সেই দিনই আমরা স্বাধীন হব, তার আগে কিছুতেই নয়।

নিজে নিষ্ক্রিয় থেকে অন্য একজন মহাপুরুষকে প্রাণপণে ভক্তি করলেই যদি দেশ উদ্ধার হয়ে যেত, তাহলে এই দেশ এতদিন পরাধীন থাকত না। আত্মকে চেনা নিজের সত্যকে বড় মনে করার দম্ভ আর যাই হোক ভণ্ডামি নয়। এ-দম্ভ শির উঁচু করে, পুরুষ করে, মনে একটা ডোন্ট কেয়ার’-ভাব আনে। আর যাদের এই তথাকথিত দম্ভ আছে, শুধু তারাই অসাধ্য সাধন করতে পারবে।

যার ভিত্তি পচে গেছে, তাকে একদম উপড়ে ফেলে নতুন করে ভিত্তি না গাঁথলে তার ওপর ইমারত যতবার খাড়া করা যাবে, ততবারই তা পড়ে যাবে। দেশের যারা শত্রু, দেশের যা-কিছু মিথ্যা, ভণ্ডামি, মেকি তা সব দূর করতে প্রয়োজন হবে আগুনের সম্মার্জনা! আমার এমন গুরু কেউ নেই, যার খাতিরে সে আগুন-সত্যকে অস্বীকার করে কারুর মিথ্যা বা ভণ্ডামিকে প্রশ্রয় দেবে।

আমি সে-দাসত্ব হতে সম্পূর্ণ মুক্ত। আমি কোনো দিনই কারুর বাণীকে বেদবাক্য বলে মেনে নেব না, যদি তার সত্যতা প্রাণে তার সাড়া না দেয়। না বুঝে বোঝার ভণ্ডামি করে পাঁচ জনের শ্রদ্ধা আর প্রশংসা পাবার লোভ আমি কোনো দিনই করব না। ভুলের মধ্য দিয়ে গিয়েই তবে সত্যকে পাওয়া যায়। কোনো ভুল করছি বুঝতে পারলেই আমি প্রাণ খুলে তা স্বীকার করে নেব।

আমার পথ -কাজী নজরুল ইসলাম Amar path by Kazi Nazrul Islam
আমার পথ গল্পের ভিডিও লিংকঃ
কিন্তু না বুঝেও নয়, ভয়েও নয়। ভুল করছি বা করেছি বুঝেও শুধু জেদের খাতিরে বা গো বজায় রাখবার জন্যে ভুলটাকে ধরে থাকব না। তাহলে আমার আগুন সেই দিনই নিভে যাবে। একমাত্র মিথ্যার জলই এই শিখাকে নিভাতে পারবে। তাছাড়া কেউ নিভাতে পারবে না। মানুষ-ধর্মই সবচেয়ে বড় ধর্ম। হিন্দু-মুসলমানের মিলনের অন্তরায় বা ফাকি কোনখানে তা দেখিয়ে দিয়ে এর গলদ দূর করা আমার এ পথের অন্যতম উদ্দেশ্য।

মানুষে মানুষে যেখানে প্রাণের মিল, আদত সত্যের মিল, সেখানে ধর্মের বৈষম্য, কোনো হিংসার দুশমনির ভাব আনে না। যার নিজের ধর্মে বিশ্বাস আছে, যে নিজের ধর্মের সত্যকে চিনেছে, সে কখনো অন্য ধর্মকে ঘৃণা করতে পারে না। দেশের পক্ষে যা মঙ্গলকর বা সত্য, শুধু তাই লক্ষ্য করে এই আগুনের ঝান্ডা দুলিয়ে পথে বাহির হলাম।
[সংক্ষেপিত ও পরিমার্জিত]

শব্দার্থ ও টীকাঃ
কর্ণধার - নেতৃত্ব প্রদানের সামর্থ্য আছে এমন ব্যক্তি।
কুর্নিশ - অভিবাদন। সম্মান প্রদর্শন।
অভিশাপ-রথের সারথি - সমাজের নিয়ম পাল্টাতে গেলে বাধার সম্মুখীন হতে হয়, সমাজরক্ষকদের
আক্রমণের শিকার হতে হয়। এ কথা জেনেও নজরুল তাঁর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সকল অন্যায়ের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। নিজেই বসেছেন রথচালক তথা সারথির আসনে।
মেকি - মিথ্যা। কপট।
সম্মার্জনা - ঘষে-মেজে পরিষ্কার করা।
আগুনের ঝান্ডা - অগ্নিপতাকা। আগুনে সব শুদ্ধ করে নিয়ে সত্যের পথে ওড়ানো নিশান।

পাঠ-পরিচিতিঃ
প্রবন্ধটি কাজী নজরুল ইসলামের সুবিখ্যাত প্রবন্ধগ্রন্থ ‘রুদ্র-মঙ্গল’ থেকে সংকলিত হয়েছে। “আমার পথ” প্রবন্ধে নজরুল এমন এক ‘আমি'র আবাহন প্রত্যাশা করেছেন যার পথ সত্যের পথ; সত্য প্রকাশে তিনি নির্ভীক অসংকোচ। তার এই ‘আমি’-ভাবনা বিন্দুতে সিন্ধুর উচ্ছাস জাগায়। নজরুল প্রতিটি মানুষকে পূর্ণ এক ‘আমি’র সীমায় ব্যাপ্ত করতে চেয়েছেন; একইসঙ্গে, এক মানুষকে আরেক মানুষের সঙ্গে মিলিয়ে আমরা হয়ে উঠতে চেয়েছেন। স্বনির্ধারিত এই জীবন-সংকল্পকে তিনি তাঁর মতো আরও যারা সত্যপথের পথিক হতে আগ্রহী তাদের উদ্দেশে ছড়িয়ে দিতে চান। এই সত্যের উপলব্ধি কবির প্রাণপ্রাচুর্যের উৎসবিন্দু। তিনি তাই অনায়াসে বলতে পারেন, আমার কর্ণধার আমি। আমার পথ দেখাবে আমার সত্য।

রুদ্র-তেজে মিথ্যার ভয়কে জয় করে সত্যের আলোয় নিজেকে চিনে নিতে সাহায্য করে নজরুলের এই ‘আমি’ সত্তা। তাঁর পথনির্দেশক সত্য অবিনয়কে মেনে নিতে পারে কিন্তু অন্যায়কে সহ্য করে না। সমাজ ও সমকাল পর্যবেক্ষণের মধ্য দিয়ে প্রাবন্ধিক দেখেছেন যে, সুস্পষ্টভাবে নিজের বিশ্বাস আর সত্যকে প্রকাশ করতে না জানলে তৈরি হয় পরনির্ভরতা, আহত হয় আমাদের ব্যক্তিত্ব। নজরুলের কাছে এই ভগ্ন আত্মবিশ্বাসের গ্লানি গ্রহণযোগ্য নয়। এর পরিবর্তে তিনি প্রয়োজনে দাম্ভিক হতে চান; কেননা তার বিশ্বাস- সত্যের দম্ভ যাদের মধ্যে রয়েছে তাদের পক্ষেই কেবল অসাধ্য সাধন করা সম্ভব।

নজরুল এই প্রবন্ধে দেখিয়েছেন যে, তিনি ভুল করতে রাজি আছেন কিন্তু ভণ্ডামি করতে প্রস্তুত নন। ভুল জেনেও তাকে ঠিক বলে চালিয়ে দেবার কপটতা কিংবা জেদ তাঁর দৃষ্টিতে ভণ্ডামি | এই ভুল ব্যক্তির হতে পারে, সমাজের হতে পারে কিংবা হতে পারে কোনো প্রকার বিশ্বাসের। তবে তা যারই হোক আর যেমনই হোক এর থেকে বেরিয়ে আসাই নজরুলের একান্ত প্রত্যাশা। তিনি জানেন, এই বেরিয়ে আসা সম্ভব হলেই মানুষের সঙ্গে মানুষের প্রাণের সম্মিলন ঘটানো সম্ভব হবে। মনুষ্যত্ববোধে জাগ্রত হতে পারলেই ধর্মের সত্য উন্মোচিত হবে, এক ধর্মের সঙ্গে অপর ধর্মের বিরোধ মিটে যাবে। সম্ভব হবে গোটা মানব সমাজকে ঐক্যবদ্ধ করা; আর এই ঐক্যের মূল শক্তি হলো সম্প্রীতি। এই সম্প্রীতির বন্ধন শক্তিশালী হলে মানুষের মধ্যে সহনশীলতা বাড়ে। ভিন্ন ধর্ম-মত-পথের মানুষের প্রতি শ্রদ্ধাবোধ জাগে। আর এই সম্প্রীতির মধ্য দিয়ে উৎকৃষ্ট মানব সমাজ গড়ে তোলা সম্ভব।

বহুনির্বাচনি প্রশ্নঃ
১. কাজী নজরুল ইসলাম কোনটিকে নমস্কার জানিয়েছেন?
ক. তারুণ্যকে
খ. সত্যকে
গ. রাজভয়কে
ঘ.লোকভয়কে
উত্তর: ☑️ সত্যকে

২. ভুলের মধ্য দিয়ে কীভাবে সত্যকে পাওয়া যায়?
ক. বার বার ভুল করে
খ. ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে 
গ. ভুল চেপে রেখে।
ঘ. ভুল স্বীকার করে
উত্তর: ☑️ ভুল থেকে শিক্ষা নিয়ে

নিচের কবিতাংশটি পড়ে ৩ ও ৪ সংখ্যক প্রশ্নের উত্তর দাও।
সত্য যে কঠিন,
কঠিনেরে ভালোবাসিলাম
সে কখনো করে না বঞ্চনা।
উত্তর: 

৩. “আমার পথ” প্রবন্ধের যে যে বাক্য কবিতাংশের বক্তব্যটির প্রতিনিধিত্ব করে তা হলো-
i, আমার পথ দেখাবে সত্য 
ii. নমস্কার করছি সত্যকে 
iii. এই আগুনের ঝান্ডা দুলিয়ে বাহির হলাম

নিচের কোনটি ঠিক?
ক. i ও ii
খ. ii ও iii
গ. i ও iii
ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ☑️ i ও ii

৪. উক্ত প্রতিনিধিত্বের কারণ, সত্যই-
i. সুন্দরতম 
ii. মুক্তির পথ 
iii. আলোর দিশারী 

নিচের কোনটি ঠিক?
ক. i ও ii
খ. ii ও iii 
গ. i ও iii
ঘ. i, ii ও iii
উত্তর: ☑️ i, ii ও iii

এইচএসসি (HSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল এবং বহুনির্বাচনি প্রশ্ন ও উত্তরসহ: 

সৃজনশীল প্রশ্নঃ
আবদুল মালেক সারাটি জীবন শিক্ষকতা করেছেন, গড়েছেন আলোকিত মানুষ। অবসর গ্রহণের পর তিনি গড়ে তুলেছেন তারুণ্য নামে সেবা-সংগঠন। বিভিন্ন সমাজকল্যাণমূলক কাজের পাশাপাশি পথশিশুদের শিক্ষাদান, দুর্নীতিবিরোধী অভিযান, নৈতিকতা ও মূল্যবোধ বিষয়ক সেমিনারের আয়োজন করেন তিনি। অনেকে তাঁর কাজের প্রশংসা করেন আবার নিন্দা ও কটুক্তি করতেও ছাড়েন না কেউ কেউ। তিনি তরুণদের উদ্দেশে বলেন-
মনেরে আজ কহ যে
ভালো মন্দ যাহাই আসুক
সত্যেরে লও সহজে।

ক. কাজী নজরুল ইসলামের মতে কোনটি আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়?
উত্তর: পরনির্ভরতা আমাদের নিষ্ক্রিয় করে দেয়।

খ. কবি নিজেকে “অভিশাপ রথের সারথি” বলে অভিহিত করেছেন কেন?
উত্তর: সমাজের অনিয়মকে ভেঙে ফেলতে কবির যে অবস্থান, তার প্রেক্ষিতে তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন।

সমাজের প্রচলিত, পুরাতন নিয়মকে ভেঙে নতুনকে প্রতিষ্ঠা করা খুব সহজ নয়। এতে প্রতিনিয়ত সমাজরক্ষকদের আক্রমণের শিকার হতে হয়, নানা প্রতিকূলতার সম্মুখীন হতে হয়। এসব জেনেও কবি তাঁর বিশ্বাসকে প্রতিষ্ঠিত করতে চেয়েছেন। সকল অন্যায়, অবিচার আর অনিয়মের বিরুদ্ধে তিনি অভিশাপ হয়ে আবির্ভূত হয়েছেন। তাই তিনি নিজেকে ‘অভিশাপ রথের সারথি’ বলে অভিহিত করেছেন।

গ. উদ্দীপকে আবদুল মালেকের মাধ্যমে “আমার পথ” প্রবন্ধের যে বাণী উচ্চারিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
উত্তর: উদ্দীপকের আবদুল মালেকের মাধ্যমে ‘আমার পথ’ প্রবন্ধের সত্য পথের পথিক হওয়ার বাণী উচ্চারিত হয়েছে।

নিজের অন্তরের সত্যকে যারা উপলব্ধি করতে পারে তারাই প্রকৃত মানুষ। তারা সমাজ, দেশ ও জাতির মঙ্গল প্রত্যাশী। এ প্রত্যাশা থেকেই তারা সমাজের কুসংস্কার, মিথ্যা আর ভণ্ডামির মূলোৎপাটন করতে চান। সমাজে প্রতিষ্ঠা করতে চান সত্য ও মনুষ্যত্বকে।

‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক বলেছেন সত্য পথের কথা। সত্য প্রকাশে তিনি নির্ভীক, অসংকোচ। সত্যের তেজেই তিনি অন্যায়কে ধ্বংস করতে চান। তিনি জাগ্রত করতে চান মনুষ্যত্ববোধকে, মানুষের মূল্যবোধকে। উদ্দীপকের আবদুল মালেকও এ সত্য পথের বাণী উচ্চারণ করেছেন, হৃদয়-সত্যের আলোতে আলোকিত হয়ে সমাজকল্যাণে এগিয়ে এসেছেন।

ঘ. উদ্দীপকের কবিতাংশের বক্তব্য চেতনায় ধারণ করে আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব। প্রবন্ধের আলোকে মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।
উত্তর: উদ্দীপকের কবিতাংশের বক্তব্য চেতনায় ধারণ করে আলোকিত পৃথিবী গড়ে তোলা সম্ভব-মন্তব্যটি সঠিক।

সত্য তার আপন দীপ্তি ও শক্তিতে ভাস্বর। সত্যের পথই জীবনের প্রকৃত পথ। সত্যের সুন্দর ও নির্মম উভয় রূপই আছে। সত্যের নির্মমতার ভয়ে মিথ্যাকে গ্রহণ করলে সে-মিথ্যাই ধ্বংস ডেকে আনে। তাই সত্য যেমনই হোক তাকে গ্রহণ করতে হবে, হৃদয়ে ধারণ করতে হবে।

‘আমার পথ’ প্রবন্ধে প্রাবন্ধিক তাঁর অন্তরের সত্যকে উন্মোচিত করেছেন। তিনি জানেন এ সত্য যত নির্মমই হোক না কেন, এ সত্যই তাঁকে পথ দেখাবে। এ সত্যের আলোতেই তাঁর হৃদয় আলোকিত হয়ে উঠবে। তিনি এটা বিশ্বাস করেন যে, সত্যের দম্ভ যাদের মধ্যে রয়েছে তারাই কেবল অসাধ্য সাধন করতে পারেন। উদ্দীপকের কবিতাংশেও এই বিষয়েরই ইঙ্গিত পাওয়া যায়। সত্য যেমনই হোক তাকে স্বীকার করার, হৃদয়ে ধারণ করার শক্তি থাকতে হবে। যাদের হৃদয় সত্যের আলোয় উদ্ভাসিত তারাই আলোকিত পৃথিবী গড়ে তুলতে পারবেন।

যারা সত্য পথের সাধক তারা সমাজে সত্যকে প্রতিষ্ঠা করতে চান। সমাজে সত্য প্রতিষ্ঠিত হলে গোটা পৃথিবী আলোকিত হয়ে উঠবে। আর এ বিচারেই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটিকে যথার্থ বলা যায়।

1 comment:

  1. অসাধারণ লেখা। আমার প্রিয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম।

    ReplyDelete