HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 1st Paper Srijonshil Question Answer pdf download

পৌরনীতি ও সুশাসন
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৮

HSC Civics and Good Governance 1st Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer

১. জনাব ফরহাদ চৌধুরী পৌরসভা নির্বাচনে একজন প্রার্থী। নির্বাচনের আচরণ বিধি মেনে তিনি নির্বাচনি প্রচার প্রচারণার কাজ শুরু করেন। তিনি ভোটারদের বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোট প্রার্থনা করছেন। বিভিন্ন জায়গায় পথসভা, মিটিং, মিছিল এর আয়োজন, লিফলেট, ব্যানার, পোস্টার বিতরণ করছেন। তিনি জনগণকে তার প্রতি বিশ্বাস রাখারও আহবান জানান।
ক. জনমত কী?
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে জনাব চৌধুরীর কাজে কোন বিষয়টির প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকের বিষয়টির সাথে গণতন্ত্রের সম্পর্ক বিশ্লেষণ কর। 

◈ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সংখ্যাগরিষ্ঠের যুক্তিসিদ্ধ ও সুচিন্তিত মতামতই জনমত, যা সরকার ও জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে।

খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কোনো দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের মনোভাব, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টিকে বোঝায়।
আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েল অ্যালমন্ড তার 'The Civic Culture' গ্রন্থে রাজনৈতিক সংস্কৃতি শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। তার মতে, 'রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্যদের রাজনীতি সম্পর্কে মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গির রূপ ও প্রতিকৃতি। অর্থাৎ কোনো দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সে দেশের জনগণ কীভাবে গ্রহণ করছে সেটার ধরনই হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে একটি সমাজের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে।

গ. উদ্দীপকে জনাব ফরহাদ চৌধুরীর কাজে জনমত গঠনের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।
কোনো সময়ের ব্যাপক আলোচিত বিষয়টির পক্ষে বা বিপক্ষে গোটা জনগণ বা তার বৃহত্তর অংশ যে মত পোষণ করে তাই হলো জনমত।
জনমত আধুনিক গণতন্ত্রের অন্যতম চালিকা শক্তি। এটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রাণস্বরূপ। দেশের সামাজিক, রাজনৈতিক এবং অর্থনৈতিক প্রভৃতি জাতীয় সমস্যা সমাধান বা বিভিন্ন কর্মপরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে জনমত গঠন করা হয়। এ ক্ষেত্রে আমাদের দেশের রাজনৈতিক দলগুলো গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তাদের জনমত গঠনের প্রধান উদ্দেশ্য হলো জনগণের সমর্থন নিয়ে ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হওয়া। স্থানীয় বা জাতীয় পর্যায়ের নির্বাচনে বিভিন্ন সংগঠন বা রাজনৈতিক দলের প্রতিনিধিরা নিজেদের পক্ষে জনমত গঠনে সক্রিয় থাকে। যে দল বা প্রতিষ্ঠান নিজেদের পক্ষে বেশি জনমত গড়ে তুলতে পারে তাদেরই নির্বাচনে জয়ী হবার সম্ভাবনা বেশি থাকে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, জনাব ফরহাদ চৌধুরী পৌরসভা নির্বাচনে একজন প্রার্থী। তিনি নির্বাচনি বিধি মেনে প্রচারণা চালাচ্ছেন। বাড়ি বাড়ি গিয়ে ভোটারদের ভোট প্রার্থনা করছেন। বিভিন্ন জায়গায় পথসভা, মিটিং মিছিল, পোস্টার-ব্যানারের মাধ্যমে প্রচারণা চালিয়ে নিজের পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করছেন। সেই সাথে তিনি তার নির্বাচনি প্রতিশ্রুতির ওপর জনগণকে আস্থা ও বিশ্বাস রাখতে বলছেন। তার এ কাজের মূল উদ্দেশ্য হলো নিজের প্রতি জনগণের আস্থা তৈরির মাধ্যমে পৌর নির্বাচনে জয়ী হওয়া। উদ্দীপকের পৌরসভা নির্বাচনের মতো আমাদের দেশেও নির্বাচন আসন্ন হলে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল বা সংগঠনের নেতৃবৃন্দের মধ্যে এরকম কর্মকা- লক্ষ্য করা যায়। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রতিনিধিরা সভা-সমাবেশ এবং মিছিল-মিটিং করাসহ বিভিন্ন প্রচার মাধ্যম ব্যবহার করে নিজেদের পক্ষে জনমত গঠনের চেষ্টা করেন। আলোচনা শেষে বলা যায়, ফরহাদ চৌধুরীর কাজের মাধ্যমে জনমত গঠনের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকের বিষয়টির সাথে অর্থাৎ জনমতের সাথে গণতন্ত্রের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমত নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাফল্য জনমতের ওপর নির্ভরশীল। জনমতই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। সরকার জনমতের চাপে জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। আবার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারের স্থায়িত্ব ও গতিশীলতা নির্ভর করে জনমতের ওপর। গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় জনমতের ভিত্তিতে সরকার জনস্বার্থে আইন প্রণয়ন করে। জনমত দুর্নীতি রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। দুর্নীতিপ্রবণ সরকার জনমতের রোষানলে পতিত হয়। এ ভয়ে গণতান্ত্রিক সরকার দুর্নীতিমুক্ত সরকারব্যবস্থা গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গণতন্ত্রের সফলতার অপরিহার্য শর্ত। গণতন্ত্রকে কার্যকর ও শক্তিশালী করণে জনমতের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশ সাধন করতে হলে জনমতের বিকাশ সাধন পূর্বশর্ত। জনমতের বিকাশ ছাড়া গণতন্ত্র কল্পনা করা যায় না। এককথায় গণতন্ত্র জনমত নামক শাসনযন্ত্রের মাধ্যমে বেঁচে থাকে। জনগণের মতামতের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হয়ে থাকে। নির্বাচনের প্রাক্কালে জনমত যে রাজনৈতিক দলের পক্ষে থাকে সে দল নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে দেশ পরিচালনা করতে পারে না। গণতান্ত্রিক সরকারের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বা কার্যাবলিতে জনমতের প্রভাব অপরিহার্য।
ওপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, গণতন্ত্র ও জনমত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সফলতায় জন্মত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আবার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ছাড়া জনমতের প্রতিফলন দেখা যায় না।

২. জনাব 'ক' একটি সংগঠনের সদস্য। যার কর্মকা- সারা দেশে বিসত্মৃত। উক্ত সংগঠন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, জাতীয় সমস্যা প্রভৃতি বিভিন্ন মাধ্যমে তুলে ধরার পাশাপাশি সমাধানের জন্য কর্মসূচি প্রণয়ন করে। অন্যদিকে, 'ক' এর বন্ধু অন্য একটি সংগঠনের সদস্য সংগঠনটি মুনাফা লাভের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহারে সচেষ্ট থাকে।
ক. জনমত কী?
খ. জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা লিখ। 
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক'-এর সংগঠনটি প্রধানত কোন কোন মাধ্যমকে ব্যবহার করে কর্মসূচি প্রণয়ন করে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠন দুটির মধ্যে কার কার্যক্রম জনমত গঠনে ভূমিকা পালন করে? বিশ্লেষণ করো। 

◈ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সংখ্যাগরিষ্ঠের যুক্তিসিদ্ধ ও সুচিন্তিত মতামতই জনমত, যা সরকার ও জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে।

খ. জনমত গঠনে সংবাদপত্রের ভূমিকা ব্যাপক। সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। সংবাদপত্র পাঠের মাধ্যমে জনগণ দেশ-বিদেশের যাবতীয় সংবাদ জানতে পারে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনগণ তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। সরকার ও বিরোধী দলের অভিমত সংবাদপত্র পাঠের মাধ্যমে জনগণ জানতে পারে। এছাড়াও সংবাদপত্রের গঠনমূলক আলোচনা, সমালোচনা, সম্পাদকীয় এবং ব্যঙ্গচিত্র জনমত গঠনে শক্তিশালী বাহন হিসেবে কাজ করে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক'-এর সংগঠনটি মূলত রাজনৈতিক দল। রাজনৈতিক দল সংবাদপত্র, প্রচার পুস্তিকা, প্রচারপত্র, সভা-সমিতি প্রভৃতি মাধ্যমকে ব্যবহার করে নিজ নিজ দলীয় কর্মসূচি প্রণয়ন করে। উদ্দীপকের 'ক'-এর সংগঠনের কর্মকা- সারা দেশে বিসত্মৃত। উক্ত সংগঠন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, জাতীয় সমস্যা বিভিন্ন মাধ্যমে তুলে ধরার পাশাপাশি সমাধানের জন্য কর্মসূচি প্রণয়ন করে। 'ক'-এর সংগঠনের এসব কার্যক্রম রাজনৈতিক দলের কার্যক্রমের অনুরূপ।
রাজনৈতিক দল সংবাদপত্র, প্রচার পুস্তিকা, প্রচারপত্র, সভা-সমিতি প্রভৃতির মাধ্যমে নিজ নিজ দলীয় নীতি ও কর্মসূচি প্রচার করে জনসমর্থন লাভের চেষ্টা করে। এক্ষেত্রে সরকারি দল এসব মাধ্যমে নিজের সফলতাকে প্রকাশ ও প্রচার করে জনমত গঠনের চেষ্টা করে। অন্যদিকে, বিরোধী দলগুলো সরকারের বিভিন্ন ত্রুটি-বিচ্যুতি এসব মাধ্যমে জনগণের সামনে তুলে ধরার প্রচেষ্টা চালায়। উল্লিখিত মাধ্যমে প্রচারিত রাজনৈতিক দলের কর্মসূচি জনগণকে রাজনৈতিক দিক থেকে সচেতন করে তোলে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠন দুটির মধ্যে 'ক'-এর সংগঠন অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম জনমত গঠনে ভূমিকা পালন করে। উদ্দীপকের 'ক'-এর সংগঠনের কর্মকা- সারা দেশে বিসত্মৃত। উত্ত সংগঠন ভোটাধিকার প্রতিষ্ঠা, মানবাধিকার প্রতিষ্ঠা, জাতীয় সমস্যা বিভিন্ন মাধ্যমে তুলে ধরার পাশাপাশি সমাধানের জন্য কর্মসূচি প্রণয়ন করে, যা রাজনৈতিক দলের অনুরূপ। অন্যদিকে, 'ক'-এর বন্ধু যে সংগঠনের সদস্য, সে সংগঠনটি মুনাফা লাভের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমকে ব্যবহারে সচেষ্ট থাকে, যা চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এ দুটি সংগঠনের মধ্যে 'ক'-এর সংগঠনটির অর্থাৎ রাজনৈতিক দলের কার্যক্রম জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে।
উদ্দীপকের 'ক' সংগঠনটি একটি রাজনৈতিক দল। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলই জনমত গঠন ও প্রচারের শ্রেষ্ঠতম বাহন হিসেবে স্বীকৃত। বস্তুত রাজনৈতিক দল। জনমত গঠনের শিক্ষাক্ষেত্রস্বরূপ। রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় বহুবিধ সমস্যা ও সমাধানের পন্থা জনসম্মুখে তুলে ধরে এবং এ সকল ব্যাপারে জনমত গড়ে তোলে। রাষ্ট্রীয় সমস্যা সম্পর্কে বিভিন্ন দলের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে জনগণ নিজ নিজ মত গঠন করে এবং নির্বাচনের সময় তা ব্যক্ত করে। এভাবে রাজনৈতিক দলগুলো জনগণকে রাজনৈতিক শিক্ষা প্রদান করে জনমত গঠনে সহায়তা করে। তাছাড়াও রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সভা-সমিতি এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে বক্তৃতা-বিবৃতি প্রদান করে এবং দলীয় পুস্তক পত্রিকার মাধ্যমে প্রচারকার্য পরিচালনা করে জনমত গঠন করে। শুধু তাই নয়, রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় সমস্যা সমাধানে কর্মসূচি বেতার, টেলিভিশন ও চলচ্চিত্রের মাধ্যমে প্রচার করে শক্তিশালী জনমত গঠন করতে পারে। রাজনৈতিক দল পোস্টার ও দেয়াল লিখন এবং জনসংযোগ ও মতবিনিময় সভার মাধ্যমেও জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখতে পারে।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে, উদ্দীপকের 'ক'-এর রাজনৈতিক সংগঠনটির কার্যক্রম জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা পালন করে। অপরদিকে, 'ঝ' এর বন্ধুর সংগঠনটি শুধুমাত্র মুনাফা লাভের জন্য বিভিন্ন মাধ্যমকে বিজ্ঞাপন হিসেবে ব্যবহারে সচেষ্ট থাকে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠন দুটির মধ্যে 'ক'-এর সংগঠনের কার্যক্রম জনমত গঠনে ভূমিকা পালন করে।

৩. স্ত্রী, দুই পুত্র ও মা-বাবা নিয়ে সুকান্ত রায়ের পরিবার। তিনি পরিবারের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে যাবতীয় কাজ করে থাকেন। তাদের সাথে দেশ-বিদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে প্রায়ই আলোচনা করেন। রাজনৈতিক শিক্ষাবিসত্মারে তার কর্মকা- গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
ক. রাজনৈতিক দল কী?
খ. নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় গঠিত সংগঠন সম্পর্কে লেখ।
গ. সুকান্ত রায়ের কর্মকান্ড তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন বিষয়ের মিল খুঁজে পাও? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সুতান্ত রায়ের সর্বশেষ কর্মকা- গণতন্ত্র প্রতিষ্ঠায় কতটুকু কার্যকরী? বিশ্লেষণ করো।

◈ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. রাজনৈতিক দল হচ্ছে কোনো নীতির সমর্থনে সংগঠিত সংঘ বিশেষ, যারা সাংবিধানিক পন্থায় সরকার গঠন ও পরিচালনায় আগ্রহী।

খ. নিজেদের স্বার্থ রক্ষায় গঠিত সংগঠন হলো চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী। চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী সমাজের নির্দিষ্ট শ্রেণির দাবি উত্থাপন এবং তা আদায় করার চেষ্টা করে। এরা সমাজ ও রাষ্ট্রের সঠিক স্বার্থের কথা আমলে না নিয়ে কেবল নির্দিষ্ট শ্রেণির দাবি তুলে সরকারি সিদ্ধান্তকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করে। চাপ সৃষ্টির মাধ্যমে দাবি আদায়ের চেষ্টা করে বলে এই গোষ্ঠীকে চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠী বলা হয়। শিক্ষক সমিতি, বণিক সংঘ, শ্রমিক ইউনিয়ন, ব্যাংক, কর্মচারী ফেডারেশন প্রভৃতি চাপসৃষ্টিকারী গোষ্ঠীর উদাহরণ।

গ. সুকান্ত রায়ের কর্মকান্ড আমার পাঠ্যবইয়ের জনমতের মিল খুঁজে পাই। জনমত বলতে বলিষ্ঠ, যুক্তিভিত্তিক প্রভাবশালী মতকে বোঝায়, যা সকলের কল্যাণের নিয়ামক হিসেবে সমাজ ও সরকারকে প্রভাবিত করে। এটি বাস্তবায়নের ফলে গোটা সমাজ ও রাষ্ট্র উপকৃত হয়। তাছাড়া আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা জনমতের ওপর নির্ভরশীল হওয়ায় এর গঠনের প্রতি বিশেষ দৃষ্টি দেওয়া হয়। জনমতের কতকগুলো সুনির্দিষ্ট বৈশিষ্ট্য বিদ্যমান। যেমন- সংখ্যাগরিষ্ঠের মত, জনকল্যাণকর এবং সৎ উদ্দেশ্যে প্রণোদিত মতামত, যুক্তিভিত্তিক ও সুচিন্তিত, জাতীয় প্রশ্নে একমত, সুনির্দিষ্ট বিষয় সম্পর্কিত, রাজনৈতিক শিক্ষা বিসত্মারে মতামত প্রভৃতি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, সুকান্ত রায় পরিবারের সদস্যদের মতামতের ভিত্তিতে যাবতীয় কাজ করেন। যা পাঠ্যবইয়ের জনমতের বৈশিষ্ট্য সংখ্যাগরিষ্ঠের মত, যুক্তিভিত্তিক ও রাজনৈতিক শিক্ষাবিসত্মারে মতামত প্রভৃতি বিষয়ের সাথে সামন্তস্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায়, সুকান্ত রায়ের কর্মকান্ড জনমতেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সুকান্ত রায়ের সর্বশেষ কর্মকা-টি হলো পরিবারের সদস্যদের সাথে দেশ-বিদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা। তার এ কর্মকা-টি জনমত গঠনে বিশেষ ভূমিকা রাখে। আধুনিক গণতন্ত্র হলো প্রতিনিধিত্বমূলক শাসনব্যবস্থা। প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের প্রাণ হলো জনমত সুষ্ঠু ও সচেতন জনমতের ওপর প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রের সাফল্য নির্ভর করে।
প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে জনমত সংগঠনের অন্যতম একটি মাধ্যম হলো পরিবার। পরিবারে পিতামাতা, বয়োজ্যেষ্ঠদের মতামত ও ধ্যান-ধারণা শিশু-কিশোরদের মনকে প্রভাবিত করে। এ প্রভাব ভবিষ্যৎ রাজনৈতিক মতামত গঠনের ক্ষেত্রে কার্যকরী। তাছাড়া পরিবারের সদস্যদের মধ্যে দেশ-বিদেশের বিভিন্ন বিষয় নিয়ে আলোচনার ফলেও জনমত গড়ে ওঠে উদ্দীপকে উল্লিখিত সুকান্ত রায়ের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, তিনি পরিবারের সদস্যদের সাথে সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা করেন। এর মাধ্যমে পরিবারের সদস্যদের রাজনৈতিক সংস্কৃতি চর্চার পাশাপাশি পারস্পরিক শ্রদ্ধা ও সৌহার্দ্যবোধ সৃষ্টি হয়। পরিশেষে বলা যায় জনমত আধুনিক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার প্রাণ। একে উপেক্ষা করে গণতন্ত্রকে সুপ্রতিষ্ঠিত করা সম্ভব নয়। 

৪. 'ক' রাষ্ট্রের সরকার নানা দমন-পীড়ন নীতির সাথে জড়িত। ঐ রাষ্ট্রের অপর একটি রাজনৈতিক দল সরকারের অপকর্মের বিষয়গুলো বিভিন্নভাবে জনসম্মুখে তুলে ধরতে এবং এর বিপক্ষে জনসমর্থন সংগঠনে সচেষ্ট হয়। এতে করে দেশটির পরবর্তী নির্বাচনে সরকার দলের প্রার্থীদের ব্যাপক ভরাডুবি হয় এবং বিরোধী দল নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে। নবগঠিত সরকার আইনসভায় জনগণের মতামতের ভিত্তিতেই বিভিন্ন সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে থাকে।
ক. জনমত গঠনের একটি আধুনিক মাধ্যমের নাম লেখ।
খ. জনমত গঠনের প্রথম ও প্রাথমিক মাধ্যম কোনটি? ব্যাখ্যা করো।
গ. 'ক' রাষ্ট্রের সরকার কোন ধরনের ভূমিকা পালন করলে নির্বাচনে ভরাডুবি হতো না? বিশ্লেষণ করো।
ঘ. উদ্দীপকে নির্বাচনে বিরোধী দলের জয়লাভে কীসের প্রতিফলন ঘটেছে? বর্ণনা করো।

◈ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. জনমত গঠনের একটি আধুনিক মাধ্যমের নাম হচ্ছে ফেসবুক।

খ. জনমত গঠনের প্রথম ও প্রাথমিক মাধ্যম হচ্ছে পরিবার। পরিবারের সদস্যদের আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে সদস্যরা দেশ ও বিদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিষয় সম্পর্কে জানতে পারে। এমনকি শিশুরা পিতামাতার রাজনৈতিক আনুগত্যকে অনুসরণ করে। বিভিন্ন ধরনের আলোচনা ও পর্যালোচনার মাধ্যমেই পরিবারের সদস্যদের বিভিন্ন মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। অ্যালান বলের মতে, "সাধারণত পরবর্তী জীবনে ছেলে-মেয়েদের রাজনৈতিক চিন্তাভাবনা মাতা-পিতার রাজনৈতিক মতামত দ্বারা প্রভাবিত হয়। এজন্যই জনমত গঠনের প্রথম ও প্রাথমিক মাধ্যম হিসেবে পরিবারকে অভিহিত করা হয়"।

গ. ‘ক’ রাষ্ট্রের সরকার জনমতকে গুরুত্ব দিয়ে গণতান্ত্রিক ভূমিকা পালন করলে নির্বাচনে ভরাডুবি হতো না। গণতন্ত্র বলতে এমন এক সরকারব্যবস্থাকে বোঝায় যেখানে জাতি-ধর্ম বর্ণ নির্বিশেষে সকলে যোগ্যতা অনুযায়ী রাষ্ট্রীয় কাজে অংশগ্রহণ, মতামত প্রদান, সরকার গঠন ও তা পরিচালনা করতে পারে। আর এ গণতান্ত্রিক মনোভাবাপন্ন সরকার সকল নাগরিকের স্বার্থরক্ষা করে, জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকে এবং নাগরিকের অধিকার ও আইনের শাসনের স্বীকৃতি দেয়।
উদ্দীপকের 'ক' রাষ্ট্রের সরকার নানা দমন-পীড়নের সাথে জড়িয়ে পড়ে। ফলে ঐ রাষ্ট্রের অপর একটি রাজনৈতিক দল সরকারের এরূপ অপকর্মের বিষয়গুলো জনসম্মুখে তুলে ধরে এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে তোলে। ফলশ্রুতিতে দেশটির পরবর্তী নির্বাচনে সরকার দলের প্রার্থীদের ব্যাপক ভরাডুবি হয়। এ প্রেক্ষাপটে বলা যায় 'ক' রাষ্ট্রের সরকার যদি দমন পীড়ন নীতি গ্রহণ না করে জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থেকে গণতান্ত্রিক ভূমিকা পালন করত, তাহলে নির্বাচনে তাদের ভরাডুবি হতো না।

ঘ. উদ্দীপকে নির্বাচনে বিরোধী দলের জয়লাভে জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে। গোটা জনগণ বা তার বৃহত্তর অংশ গুরুত্বপূর্ণ ইস্যুতে যে ধারণা পোষণ করে তাই হচ্ছে জনমত। জনমত হবে কল্যাণধর্মী, বলিষ্ঠ, যুক্তিভিত্তিক ও সুস্পষ্ট। আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের গুরুত্ব অপরিসীম। জনমত সরকারের দমন নীতি প্রতিরোধ করে।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, 'ক' রাষ্ট্রের সরকার নানা দমন-পীড়ন নীতি গ্রহণ করলে ঐ রাষ্ট্রের অপর একটি রাজনৈতিক দল সরকারের অপকর্মের বিষয়গুলো বিভিন্নভাবে জনসমক্ষে তুলে ধরে। দলটি এই ইস্যুতে জনমত গঠন করে। ফলে দেশটির পরবর্তী নির্বাচনে সরকার দলের প্রার্থীদের ব্যাপক ভরাডুবি হয় এবং বিরোধী দল নির্বাচিত হয়ে সরকার গঠন করে, যা জনমতের প্রভাবের উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত গণতান্ত্রিক ব্যবস্থায় শাসকবর্গকে জনমতের প্রতি সদাসতর্ক দৃষ্টি রাখতে হয়। জনমতের সাথে সংগতি রেখেই এ ব্যবস্থায় সরকারি নীতি নির্ধারণ ও শাসনকার্য পরিচালনা করতে হয়। জনমতকে উপক্ষো করে জনগণের আস্থা হারালে পরবর্তী নির্বাচনে পরাজয় এড়ানো অসম্ভব হয়ে পড়ে, উদ্দীপকে যার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত বিদ্যমান। সুতরাং উল্লিখিত আলোচনার ভিত্তিতে বলা যায়, উদ্দীপকের নির্বাচনে বিরোধী দলের জয়লাভে জনমতের প্রতিফলন ঘটেছে।

৫. চন্দন বর্মন একজন সাংবাদিক। তিনি সংবাদ সংগ্রহের জন্য বের হয়ে দেখলেন একটি বিশাল র¨vলি তার নিজের সামনে দিয়ে যাচ্ছে। তিনি দেখেন একটি ব্যানারে লেখা আছে "এসো সংঘাতকে 'না' বলি, বাসযোগ্য দেশ গড়ি।" চন্দন বর্মন সংবাদটি সুষ্ঠু জনমত গঠনের জন্য পত্রিকায় প্রকাশ করেন।
ক. জনমতের একটি মাধ্যমের নাম লেখ।
খ. জনমত গঠনের পরিবারের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে জনমত সংগঠনের যে মাধ্যমের ইঙ্গিত রয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের জনমতের মাধ্যমটি ছাড়া আর কী কী মাধ্যম জনমত গঠনে ভূমিকা পালন করে আলোচনা করো।

◈ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. জনমতের একটি মাধ্যমের নাম হল সাহিত্য ও বইপত্র।

খ. জনমত গঠনে পরিবারের ভূমিকা অপরিসীম। মানুষ পরিবারে জন্মগ্রহণ করে, পরিবারেই তার জন্ম এবং প্রসার ও বিকাশ ঘটে। তাই পরিবার হলো সামাজিকীকরণের প্রথম ধাপ। পরিবার থেকে মানুষ প্রথম শিক্ষা লাভ করে থাকে। মানুষ তার পরিবারের মধ্যেই দেশের সার্বিক পরিস্থিতি, বিভিন্ন ঘটনাপ্রবাহ ও সমস্যা নিয়ে আলাপ আলোচনা করে। পরিবারের মধ্যে দেশের বিভিন্ন রাজনৈতিক বিষয় নিয়ে আলোচনা হয়, যা জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

গ. উদ্দীপকে জনমত সংগঠনের যে মাধ্যমের ইঙ্গিত রয়েছে সেটি হলো সংবাদপত্র। সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণ। এটি জনমত গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সংবাদপত্র শুধু সংবাদ পরিবেশন করে তা নয়, এটি জাতীয় সমস্যাদির ওপর মতামত ব্যক্ত করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এদেশের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে শিক্ষাবিদ ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের অভিমত জনসমক্ষে তুলে ধরে জনগণকে রাষ্ট্রীয় সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। সংবাদপত্র পাঠের মাধ্যমে জনগণ দেশ-বিদেশের যাবতীয় সংবাদ জানতে পারে। সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনগণ তাদের বিভিন্ন দাবি-দাওয়া, অভাব-অভিযোগ সম্পর্কে সরকারের দৃষ্টি আকর্ষণ করে থাকে। সরকার ও বিরোধী দলের অভিমত সংবাদপত্র পাঠের মাধ্যমে জনগণ জানতে পারে। এছাড়াও সংবাদপত্রের গঠনমূলক আলোচনা, সমালোচনা, সম্পাদকীয় এবং ব্যঙ্গচিত্র জনমত গঠনের শক্তিশালী বাহন হিসেবে কাজ করে। উদ্দীপকে দেখা যায়, সাংবাদিক চন্দন বর্মন সংবাদ সংগ্রহের জন্য বের হয়ে দেখলেন একটি বিশাল র‍্যালি তার নিজের সামনে দিয়ে যাচ্ছে। তাদের সামনে একটি ব্যানারে লেখা "এসো সংঘাতকে 'না' বলি, বাসযোগ্য দেশ গড়ি।" তিনি সংবাদটি সুস্থ জনমত গঠনের জন্য পত্রিকায় প্রকাশ করেন। যা জনমত গঠনের অন্যতম বাহন সংবাদপত্রের প্রতি ইঙ্গিত করেছে।

ঘ. উদ্দীপকের জনমতের মাধ্যমটি ছাড়া অর্থাৎ সংবাদপত্র ছাড়া জনমত গঠনে আর যেসব মাধ্যম ভূমিকা পালন করে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-
জনমত গঠনের প্রাথমিক ও প্রধান মাধ্যম হলো পরিবার। পরিবারের সদস্যরা আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে দেশ ও বিদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিষয় আলোচনা করলে শিশুর মধ্যে রাজনৈতিক মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো জাতীয় বিষয়াবলি শিক্ষার্থীদের মনে এসব বিষয় স্থায়ী রেখাপাত করে এবং শক্তিশালী এক জনমত গড়ে তোলে। জনমত গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। বিভিনণ রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় বহুবিধ সমস্যা সম্পর্কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ভিত্তিতে জনমত গঠন করে। ধর্মীয় রীতিনীতি এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি জনমত গঠনের শক্তিশালী মাধ্যম। আইনসভা দেশের প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে আলোকপাত করে সুষ্ঠু জনমত গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া কোনো রাষ্ট্রীয় সমস্যা বেতার, টেলিভিশনের মাধ্যমে প্রচার করে সকল শ্রেণীর মানুষকে সহজেই বোঝানো যায়। ফলে জনগণও জনকল্যাণার্থে মত প্রকাশ করতে পারে। সাহিত্য ও গ্রন্থাবলিও জনমত গঠনে এক বড় মাধ্যম। সর্বোপরি সাম্প্রতিক সময়ে জনমত গঠনে জনসংযোগ ও মতবিনিময় সভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল জনমত গঠনের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংযোগ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের জনমতের মাধ্যমটি অর্থাৎ সংবাদপত্র জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও অন্যান্য মাধ্যমগুলোও জনমত গঠনের মাধ্যম হিসেবে অগ্রগণ্য।

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৮ pdf download

৬. "একটি গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের প্রতি সেদেশের সরকার বিশেষ গুরুত্ব দিয়ে থাকে। বিশেষ করে টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে। তাছাড়া আরও অনেক মাধ্যম আছে যা জনগণের মতামত সংগঠিত করতে জোরালো ভূমিকা রাখে।
ক. জনমত বলতে কী বোঝায়? 
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কী বোঝ?
গ. ‘‘জনমত গঠনে টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে" উক্তিটি ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. টিভি চ্যানেল ছাড়া আরও অনেক মাধ্যম আছে যা জনমত গঠনে সাহায্য করে সেগুলো বিশ্লেষণ করো।

ক. জনমত হলো কল্যাণধর্মী, বলিষ্ঠ যুক্তিভিত্তিক ও সুস্পষ্ট মতামত, যা প্রধানত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যবস্থার দর্পণ। এটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার নির্ধারক। সাধারণ অর্থে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে রাষ্ট্রের নাগরিকদের রাজনৈতিক জীবনধারা সম্পর্কে তাদের মনোভাব, বিশ্বাস ও মূলবোধকে বোঝানো হয়। রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে সমাজের সকল মনোভাব, বিশ্বাস, অনুভূতি এবং মূলবোধের সমন্বয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠিত হয়। জনমত গঠনে টিভি চ্যানেলগুলো বিশেষ ভূমিকা রাখে- উক্তিটি যথার্থ।

গ. আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের গুরুত্ব বা ভূমিকা অনস্বীকার্য। জনমত গঠন, প্রকাশ ও বিকাশের ক্ষেত্রে টেলিভিশনের ভূমিকা গঠন, প্রকাশ ও বিকাশের ক্ষেত্রে টেলিভিশনের ভূমিকা অপরিসীম। আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে জনমত গঠনে টেলিভিশনের গুরুত্ব ক্রমে বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন প্রকার গঠনমূলক আলোচনা, চিত্র প্রদর্শনী এবং চেতনা ও আদর্শমূলক ছায়াছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে টেলিভিশন জনমতকে প্রকাশিত ও সংগঠিত করার প্রয়াস পায়। দেশের নেতৃবৃন্দের সভা। সমাবেশের বক্তৃতার গুরুত্বপূর্ণ অংশ অল্প সময়ের মধ্যেই সমগ্র দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে টেলিভিশনের মাধ্যমে জনগণ এ বক্তৃতা হতে দেশের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবগত হয়ে বিভিন্ন বিষয় সম্পর্কে সচেতন হতে পারে এবং তাদের প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করতে পারে। বর্তমানে অনেক টিভি। চ্যানেল সৃষ্টি হওয়ায় জনগণ যখনকার সংবাদ তখনই জানতে পারছে। মূলত নাটক, সিনেমা, খবরাখবর, প্রামাণ্যচিত্র, যাত্রা, গান, সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানমালা, সরকার ও বিরোধী দলের বিভিন্ন কার্যক্রমের প্রচারণা বিভিন্ন টিভি চ্যানেলের মাধ্যমে প্রচারিত হওয়ায় তা জনমত গঠনে অগ্রণী ভূমিকা পালন করে। সুতরাং বলা যায়, জনমত গঠনের অন্যান্য মাধ্যমগুলোর মতো টিভি চ্যানেলগুলো জনমত গঠনে অনন্য ভূমিকা পালন করে।

ঘ. উদ্দীপকের জনমতের মাধ্যমটি ছাড়া অর্থাৎ টিভি চ্যানেলটি ছাড়া জনমত গঠনে আর যেসব মাধ্যম ভূমিকা পালন করে সেগুলো নিচে আলোচনা করা হলো-
জনমত গঠনের প্রাথমিক ও প্রধান মাধ্যম হলো পরিবার। পরিবারের সদস্যরা আলাপ আলোচনার মাধ্যমে দেশ ও বিদেশের সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক বিষয় আলোচনা করলে শিশুর মধ্যে রাজনৈতিক মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি গড়ে ওঠে। প্রতিবেশী ও বন্ধুবান্ধবদের দ্বারা। মানবশিশুর আচরণ ও ধ্যান-ধারণা দারুণভাবে প্রভাবিত হয়। যা জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আবার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে পড়ানো জাতীয় বিষয়াবলি শিক্ষার্থীদের মনে এসব বিষয় স্থায়ী রেখাপাত করে এবং শক্তিশালী এক জনমত গড়ে তোলে। জনমত গঠনের জন্য রাজনৈতিক দল একটি উল্লেখযোগ্য মাধ্যম। বিভিনণ রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রীয় বহুবিধ সমস্যা সম্পর্কে ব্যাখ্যা-বিশ্লেষণের ভিত্তিতে জনগণ নি নিজ মত গঠন করে এবং নির্বাচনের সময় তা ব্যক্ত করে। ধর্মীয় রীতিনীতি এবং বিভিন্ন ধর্মীয় অনুষ্ঠানাদি জনমত গঠনের শক্তিশালী মাধ্যম। আইনসভা দেশের প্রকৃত চিত্র সম্পর্কে আলোকপাত করে সুষ্ঠু জনমত গঠনে সাহায্য করে। এছাড়া সংবাদপত্র জনমত গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সংবাদপত্রের মাধ্যমে জনগণ দেশি-বিদেশি বিভিন্ন সংবাদ, তথ্য ও ঘটনাপ্রবাহ জানতে পারে। এ জন্য সংবাদপত্রকে বলা হয় সমাজের দর্পণস্বরূপ। ফলে জনগণও জনকল্যাণার্থে মত প্রকাশ করতে পারে। সাহিত্য ও গ্রন্থাবলিও জনমত গঠনে এক বড় মাধ্যম। সর্বোপরি সাম্প্রতিক সময়ে জনমত গঠনে জনসংযোগ ও মতবিনিময় সভা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। বিশেষ করে বিভিন্ন সংগঠন ও রাজনৈতিক দল জনমত গঠনের জন্য দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জনসংযোগ ও মতবিনিময় সভার আয়োজন করে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের জনমতের মাধ্যমটি অর্থাৎ টিভি চ্যানেল জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করলেও অন্যান্য মাধ্যমগুলোও জনমত গঠনের মাধ্যম হিসেবে অগ্রগণ্য।

৭. জামাল সাহেব একজন বুদ্ধিজীবী। তিনি সবসময় সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ের অসংগতি সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করেন। তিনি টকশো, সভা সেমিনারে তার বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেন যাতে জনগণ নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারে।
ক. জনমত কী?
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কী বুঝায়? 
গ. উদ্দীপকে কোন বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে গণতন্ত্রের সাথে উক্ত বিষয়টির সম্পর্ক মূল্যায়ন করো। 

◈ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. জনমত হলো কল্যাণধর্মী, বলিষ্ঠ যুক্তিভিত্তিক ও সুস্পষ্ট মতামত, যা প্রধানত সামাজিক, রাজনৈতিক, অর্থনৈতিক ও জাতীয় গুরুত্বপূর্ণ বিষয়ের সাথে সম্পর্কযুক্ত।

খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যবস্থার দর্পণ। এটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার নির্ধারক। সাধারণ অর্থে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে রাষ্ট্রের নাগরিকদের রাজনৈতিক জীবনধারা সম্পর্কে তাদের মনোভাব, বিশ্বাস ও মূলবোধকে বোঝানো হয়। রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে সমাজের সকল মনোভাব, বিশ্বাস, অনুভূতি এবং মূলবোধের সমন্বয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠিত হয়।

গ. উদ্দীপকে জনমত বিষয়টির ওপর গুরুত্বারোপ করা হয়েছে। জনমত আধুনিক গণতন্ত্রের অন্যতম চালিকা শক্তি। এটি গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার প্রাণস্বরূপ। সাধারণত জনগণের মতামতকে জনমত বলা হয়। রাষ্ট্রবিজ্ঞানে জনমত বলতে রাজনৈতিক কিংবা সামাজিক বিষয়ে এক বা একাধিক ব্যক্তির সুস্পষ্ট কল্যাণকামী মতামতকে বোঝানো হয়। উদ্দীপকে জামাল সাহেব একজন বুদ্ধিজীবী। তিনি সব সময় বিভিন্ন পত্র-পত্রিকা, ম্যাগাজিন এবং সামাজিক, রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক বিষয়ের বিভিন্ন অসংগতি সম্পর্কে লিখে জনগণকে সচেতন করেন। জামাল সাহেবের এ কর্মকা- জনমতকে নির্দেশ করছে। কারণ পত্র পত্রিকা, ম্যাগাজিন জনমতের অন্যতম বাহন হিসেবে বিবেচিত। এগুলোর মাধ্যমে জাতীয় সমস্যাদির ওপর মতামত ব্যস্ত করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করা হয়। দেশের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে শিক্ষাবিদ ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের অভিমত জনসমক্ষে তুলে ধরে জনগণকে রাষ্ট্রীয় সমস্য সম্পর্কে সচেতন করে তোলা হয়। এছাড়াও জামাল সাহেব বিভিন্ন টক শো, সভা সেমিনারে তার বক্তব্যের মাধ্যমে জনগণকে সংগঠিত করার চেষ্টা করেন। যাতে জনগণ নিজেদের মতামত প্রকাশ করতে পারে টক শো, সভা সেমিনার জনমতের মাধ্যম হিসেবে বিবেচিত। সভা সেমিনার, টকশো প্রভৃতির মাধ্যমে বিভিন্ন দলের বক্তারা দেশের গুরুত্বপূর্ণ সমস্যাদি সম্পর্কে জনগণকে অবহিত ও সচেতন করে তোলেন। এর পাশাপাশি সমস্যা সমাধানের পথও বিভিন্ন বক্তাদের বক্তৃতা হতে পাওয়া যায়। এছাড়া একদল অপর দলের দোষ-ত্রুটি বক্তৃতার মাধ্যমে তুলে ধরে সঠিক জনমত গঠনে বিশেষ সহায়তা করে। তাই বলা যায়, জামাল সাহেবের কর্মকা- জনমতকে নির্দেশ করছে।

ঘ. উদ্দীপকের বিষয়টির সাথে অর্থাৎ, জনমতের সাথে গণতন্ত্রের নিবিড় সম্পর্ক রয়েছে।
আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমত নাগরিকের অধিকার সুরক্ষা এবং সুশাসন প্রতিষ্ঠার মূলমন্ত্র। গণতান্ত্রিক ব্যবস্থার সাফল্য জনমতের ওপর নির্ভরশীল জনমতই গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের মূল চালিকাশক্তি। সরকার জনমতের চাপে জনস্বার্থ বিরোধী সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা থেকে বিরত থাকে। আবার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সরকারের স্থায়িত্ব ও গতিশীলতা নির্ভর করে জনমতের ওপর। গণতান্ত্রিক সরকারব্যবস্থায় জনমতের ভিত্তিতে সরকার জনস্বার্থে আইন প্রণয়ন করে। জনমত দুর্নীতি রোধে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। দুর্নীতিপ্রবণ সরকার জনমতের রোষানলে পতিত হয়। এ ভয়ে গণতান্ত্রিক সরকার দুর্নীতিমুক্ত সরকারব্যবস্থা গড়ে তুলতে সচেষ্ট থাকে। রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা গণতন্ত্রের সফলতার অপরিহার্য শর্ত। গণতন্ত্রকে কার্যকর ও শক্তিশালীকরণে জনমতের ভূমিকা অনস্বীকার্য।
গণতন্ত্রের সুষ্ঠু বিকাশ সাধন করতে হলে জন্মতের বিকাশ সাধন পূর্বশর্ত। জনমতের বিকাশ ছাড়া গণতন্ত্র কল্পনা করা যায় না। এককথায় গণতন্ত্র জনমত নামক শাসনযন্ত্রের মাধ্যমে বেঁচে থাকে। জনগণের মতামতের মাধ্যমেই সরকার পরিবর্তন হয়ে থাকে। নির্বাচনের প্রাক্কালে জনমত যে রাজনৈতিক দলের পক্ষে থাকে সে দল নির্বাচনে জয়লাভ করে সরকার গঠন করে। সরকার জনমতকে উপেক্ষা করে দেশ পরিচালনা করতে পারে না। গণতান্ত্রিক সরকারের যেকোনো গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত বা কার্যাবলিতে জনমতের প্রভাব অপরিহার্য।
ওপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, গণতন্ত্র ও জনমত ওতপ্রোতভাবে জড়িত। গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার সফলতায় জনমত অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আবার গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা ছাড়া জনমতের প্রতিফলন দেখা যায় না।

৮. বেগম রোকেয়া কলেজের অধ্যাপক আশরাফুল ইসলাম জনমত সম্পর্কে শ্রেণিকক্ষে পড়াতে গিয়ে বলেন যে, সাধারণ অর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতকে জনমত বলা হয়। কিন্তু পৌরনীতি ও সুশাসনে সকল মতামতই জনমত নয়। একজন ছাত্রী দাঁড়িয়ে বললো যে, তাহলে কোন মতকে জনমত বলা যাবে? অধ্যাপক সাহেব বললেন যে, সুষ্ঠু ও সচেতন জনমত গণতন্ত্রের প্রাণ।
ক. জনমত কী?
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কী বোঝ?
গ. জনমত গঠনে রাজনৈতিক দল এবং রেডিও টেলিভিশনের ভূমিকা কতটুকু? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. 'সুষ্ঠু ও সচেতন জনমত গণতন্ত্রের প্রাণ' উদ্দীপকে উল্লেখিত উক্তিটি মূল্যায়ন করো। 

◈ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সংখ্যাগরিষ্ঠের যুক্তিসিব ও সুচিন্তিত মতামতই জনমত, যা সরকার ও জনগণকে প্রভাবিত করতে পারে।

খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কোনো দেশের বিদ্যমান রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতি জনগণের মনোভাব, মূল্যবোধ, বিশ্বাস, অনুভূতি ও দৃষ্টিভঙ্গির সমষ্টিকে বোঝায়।
আমেরিকান রাষ্ট্রবিজ্ঞানী গ্যাব্রিয়েল অ্যালমন্ড তার 'ঞযব ঈরারপ ঈঁষঃঁৎব' গ্রন্থে রাজনৈতিক সংস্কৃতি শব্দটি প্রথম ব্যবহার করেন। তার মতে, 'রাজনৈতিক সংস্কৃতি হলো রাজনৈতিক ব্যবস্থার সদস্যদের রাজনীতি সম্পর্কে মনোভাব এবং দৃষ্টিভঙ্গির রূপ ও প্রতিকৃতি।' অর্থাৎ কোনো দেশের রাজনৈতিক ব্যবস্থাকে সে দেশের জনগণ কীভাবে গ্রহণ করছে সেটার ধরনই হলো রাজনৈতিক সংস্কৃতি। রাজনৈতিক সংস্কৃতির মাধ্যমে একটি সমাজের রাজনৈতিক ব্যবস্থার প্রতিচ্ছবি ফুটে ওঠে।

গ. আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমতের গুরুত্ব বা ভূমিকা অনস্বীকার্য। কীভাবে জনমত গঠন করা যায় তা জানা একান্ত আবশ্যক। বস্তুত জনমত গঠনে কতকগুলো বাহন বা মাধ্যম রয়েছে। জনমত গঠনে রাজনৈতিক দল এবং রেডিও ও টেলিভিশনের ভূমিকা আলোচনা করা হলো-
রাজনৈতিক দল. গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে রাজনৈতিক দলই জনমত গঠনে ও প্রচারের শ্রেষ্ঠতম বাহন বলে স্বীকৃত। বস্তুত রাজনৈতিক দলকে জনমত গঠনের শিক্ষাক্ষেত্র বলা যায়। রাজনৈতিক দল রাষ্ট্রের নানাবিধ সমস্যা জনগণের সম্মুখে তুলে ধরে। রাষ্ট্রীয় সমস্যা সম্পর্কে বিভিন্ন দলের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণের ভিত্তিতে জনগণ নিজ নিজ মত গঠন করে এবং নির্বাচনের সময় তা ব্যস্ত করে। এছাড়া রাজনৈতিক দল বিভিন্ন সভা সমিতি এবং সংবাদপত্রের মাধ্যমে বক্তৃতা-বিবৃতি প্রদান করে এবং দলীয় পুস্তক-পত্রিকার মাধ্যমে প্রচারকার্য পরিচালনা করে জনমত গঠন করে। 
রেডিও ও টেলিভিশন. জনমত গঠন, প্রকাশ ও বিকাশের ক্ষেত্রে রেডিও ও টেলিভিশনের ভূমিকা অপরিসীম। আধুনিক যান্ত্রিক সভ্যতার যুগে জনমত গঠনে এসকল বাহনের গুরুত্ব বেড়েই চলেছে। বিভিন্ন প্রকার গঠনমূলক আলোচনা, চিত্র প্রদর্শনী এবং চেতনা ও আদর্শমূলক ছায়াছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে রেডিও ও টেলিভিশন জনমতকে প্রকাশিত ও সংগঠিত করার প্রয়াস পায়। তদুপরি রেডিও ও টেলিভিমনের মাধ্যমে প্রচারিত বক্তৃতা অতি অল্প সময়ের মধ্যেই সমগ্র দেশব্যাপী ছড়িয়ে পড়ে। এ বক্তৃতা হতে জনগণ দেশের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে অবগত হতে পারে। বর্তমানে এফএম রেডিও, স্যাটেলাইট টিভি চ্যানেলের কল্যাণে মানুষ যখনকার সংবাদ তখনই জানতে পারে।

ঘ. 'সুষ্ঠু ও সচেতন জনমত গণতন্ত্রের প্রাণ' উক্তিটি যথার্থ।
গণতন্ত্র হলো জনগণের প্রতিনিধিদের দ্বারা পরিচালিত, জনগণের কল্যাণে নিয়োজিত শাসনব্যবস্থা। যে শাসনব্যবস্থায় সকলের সাধারণ জনগণের আশা-আকাঙ্ক্ষা প্রতিফলিত হয় তাই গণতন্ত্র। গণতন্ত্রে জনমতের ভিত্তিতেই প্রতিনিধি নির্বাচিত হয় এবং সরকার গঠন করা হয়। জনগণের ইচ্ছা প্রকাশিত হয় জনমতের মাধ্যমে। একারণে প্রতিনিধিত্বশীল গণতন্ত্রকে সফল করতে হলে প্রয়োজন একটি সতর্ক ও সজ্ঞান জনমতের, যা জনস্বার্থকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠে। সুষ্ঠু ও সচেতন জনমত শাসন কার্যক্রম নির্ধারণে ও শাসনরীতি প্রণয়নে ব্যাপক প্রভাব বিস্তার করে। সুষ্ঠু ও সচেতন জনমত আধুনিক গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রের ভিত্তি রচনা করে। সুষ্ঠু ও সচেতন ও জনমত ব্যতীত গণতন্ত্র সফল হয় না। জনমত সরকারের স্থায়িত্ব ও ক্ষমতার প্রকাশ বিভিন্নভাবে নিয়ন্ত্রণ করে এবং সরকারকে সঠিক পথে পরিচালিত করতে সহায়তা করে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমত গঠনই সে তার জনপ্রিয়তা ও নির্বাচিত প্রতিনিধি হওয়ার একমাত্র মাধ্যম। শুধুমাত্র জনমত গঠন করে জাতীয় ও রাজনৈতিক যেকোনো বিষয়ে গণতান্ত্রিক সরকারের অবস্থান পরিবর্তন করা সম্ভব। আর সুষ্ঠু ও সচেতন জনমত গঠনের জন্য প্রয়োজন শিক্ষা বিস্তার, রাজনৈতিক সচেতনতা, সংবাদপত্রের নিরপেক্ষতা, ব্যক্তিস্বাধীনতা, জনগণের ঐকমত্য, পরমতসহিঞ্চুতা ইত্যাদি।
পরিশেষে বলা যায় যে, বর্তমান বিশ্বে যেকোনো গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে জনমত একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ। সুষ্ঠু ও সচেতন জনমত ব্যতীত গণতন্ত্র সফল ও স্থায়ী হয় না। এর সমর্থন ও সহযোগিতা গণতন্ত্রকে শক্তিশালী করে। তাই সুষ্ঠু ও সচেতন জনমতকে গণতন্ত্রের প্রাণ বলা হয়ে থাকে।

৯. বাংলাদেশের বেশ কিছু দৈনিক পত্রিকা রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবী, পরিবেশবিদসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিভিন্ন ইস্যুতে দেয়া বক্তব্যের ওপর জরিপ চালায়। এসব বক্তব্যের পক্ষে বা বিপক্ষে মতামত চাওয়া হয়। এর ফলে সুষ্ঠু জনমত গড়ে ওঠে।
ক. প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র কাকে বলে?
খ. জনমতের বৈশিষ্ট্যসমূহ লেখ।
গ. উদ্দীপকে জনমত গঠনের কোন মাধ্যমটি প্রতিষ্ঠশিত হয়েছে। ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উদ্দীপকের মাধ্যমটি ছাড়া বাংলাদেশে জনমত গঠনের জন্য তুমি কোন কোন মাধ্যমকে গুরুত্বপূর্ণ বলে মনে কর? যুক্তি দিয়ে ব্যাখ্যা কর।

◈ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. যে শাসনব্যবস্থায় জনগণ রাষ্ট্রীয় কার্যাবলিতে সরাসরি বা প্রত্যক্ষভাবে অংশগ্রহণ করে থাকে, তাকে প্রত্যক্ষ গণতন্ত্র বলে।

খ. জনমত বলতে জাতীয় কোনো ইস্যুতে জনকল্যাণার্থে প্রভাবশালী জনসাধারণের মতকে বোঝায়। জনমতের বৈশিষ্ট্যগুলো হলো- জনকল্যাণকর, যুক্তিভিত্তিক, সুস্পষ্টতা, আস্থার দৃঢ়তা, মতৈক্য, তথ্যভিত্তিক, সুসংবদ্ধ ও সুদৃঢ়, স্থায়ী মতামত, প্রভাব বিসত্মারের ক্ষমতা, সৎ উদ্দেশ্য, জাতীয় সংকট নিরসন, নৈতিক বিষয় প্রভৃতি।

গ. উদ্দীপকে জনমত গঠনের সংবাদপত্র মাধ্যমটি প্রতিফলিত হয়েছে। সংবাদপত্র জনমত গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সংবাদপত্র শুধু যে সংবাদ পরিবেশন করে তা নয়। এটি জাতীয় সমস্যাদির ওপর মতামত ব্যক্ত করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে। এদেশের বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে শিক্ষাবিদ ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের অভিমত জনসমক্ষে তুলে ধরে জনগণকে রাষ্ট্রীয় সমস্যা সম্পর্কে সচেতন করে তোলে। উদ্দীপকে দক্ষ করা যায়, বাংলাদেশের বেশকিছু দৈনিক পত্রিকা রাজনৈতিক নেতা, বুদ্ধিজীবী, পরিবেশবিদসহ অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ ব্যক্তিদের বিভিন্ন ইস্যুতে দেয়া বক্তব্যের ওপর জরিপ চালায়। এসব বক্তব্যের পক্ষে বা বিপক্ষে মতামত চাওয়া হয়। এর ফলে সৃষ্ঠু জনমত গড়ে ওঠে, যা জনমত গঠনের গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম সংবাদপত্রকে প্রতিফলিত করে।

ঘ. উদ্দীপকের সংবাদপত্র মাধ্যমটি ছাড়া পরিবার, সভা-সমিতি, আইনসভা, শিক্ষা প্রতিষ্ঠান, পুস্তক-পুস্তিকা ও সাহিত্য, বেতার, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশনসহ আরো বেশকিছু মাধ্যমকে বাংলাদেশে জনমত গঠনের জন্য গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি।
পিতামাতা ও পরিবারের অন্যান্য বয়োজ্যেষ্ঠদের মতামত ও ধ্যান-ধারণা শিশু ও কিশোর মনকে প্রভাবিত করে। পরিবারের মূল্যবোধ ও দৃষ্টিভঙ্গি সদস্যদের বিশেষভাবে প্রভাবিত করে। এ প্রভাব ভবিষ্যতে রাজনৈতিক মতামত গঠনের ক্ষেত্রে কার্যকর হয়। জনগণকে রাজনৈতিক শিক্ষায় শিক্ষিত করে সুষ্ঠু জনমত গঠন করার জন্য সভা-সমিতির গুরুত্ব অপরিসীম। আইনসভাকে জনমত গঠনের একটি উত্তম মাধ্যম বলে মনে করা হয়। আইনসভায় যে মতামত প্রকাশিত হয় তা প্রকৃতপক্ষে জনগণেরই মতামত ও চিন্তা-ভাবনা। এ মতামত ও চিন্তা-ভাবনা জনমত গঠনে ভূমিকা রাখে। 
দেশে বিদ্যমান শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহ জনমত গঠনের ভিত্তিস্বরূপ। স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে ছাত্র-ছাত্রীরা বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান লাভ করে এবং সমস্যা সম্পর্কে চিন্তা-ভাবনা করতে শিখে। তাই সুষ্ঠু, সুসংহত্ত, নিরপেক্ষ জনমত গঠনের ক্ষেত্রে শিক্ষা প্রতিষ্ঠানসমূহের ভূমিকা খুবই গুরুত্বপূর্ণ। বিভিন্ন প্রকার পুস্তক-পুস্তিকা, সাহিত্য জনমত গঠনের উত্তম বাহন বলে আধুনিককালে বিশেষভাবে স্বীকৃত। জনমত গঠন, প্রকাশ ও বিকাশের ক্ষেত্রে বেতার, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন গুরুত্বপূর্ণ। ভূমিকা পালন করে। বিভিন্ন প্রকার গঠনমূলক আলোচনা, চিত্র প্রদর্শনী এবং চেতনা ও আদর্শমূলক ছায়াছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে বেতার, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন জনমতকে প্রকাশিত ও সংগঠিত করে। এছাড়া রাজনৈতিক দল, নির্বাচন, পোস্টার, জনসংযোগ ও মতবিনিময় সভা, ইন্টারনেটভিত্তিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম জনমত গঠনে ভূমিকা রাখে। উদ্দীপকে বর্ণিত সংবাদপত্র মাধ্যমটি ছাড়াও উল্লিখিত মাধ্যমগুলো বাংলাদেশে জনমত গঠনের জন্য গুরুতবপূর্ণ।

১০. রোহানদের গ্রামের পানি নিষ্কাশনের প্রধান খালটি প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের দখলে চলে যাচ্ছে। রোহান তার বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে প্রতিবাদ জানায়। কিন্তু তাতে কোন কাজ না হলে তারা মিটিং-সালিশি করে জনগণকে একত্রিত করতে থাকলে তা কয়েকটি প্রচার মাধ্যমে বেশ গুরুত্ব সহকারে প্রচার করে। বিষয়টি সরকারের নজরে আসলে তা প্রতিকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়।
ক. 'Voice of the people is the voice of God' উক্তিটি কার?
খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত জনমত গঠনের মাধ্যমসমূহের গুরুতব ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. 'সদা সতর্ক ও সুসংগঠিত মতামতকে কখনো উপেক্ষা করা যায় না'- উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

◈ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. Voice of the people is the voice of God উক্তিটি ফরাসি দার্শনিক রুশো-র।

খ. রাজনৈতিক সংস্কৃতি হচ্ছে রাজনৈতিক ব্যবস্থার দর্পণ। এটি রাজনৈতিক ব্যবস্থার নির্ধারক। সাধারণ অর্থে রাজনৈতিক সংস্কৃতি বলতে রাজনৈতিক জীবনধারা সম্পর্কে রাষ্ট্রের নাগরিকদের মনোভাব, বিশ্বাস ও মূলবোধকে বোঝানো হয়। রাজনৈতিক ব্যবস্থা ও রাজনৈতিক বিষয় সম্পর্কে জনগণের মনোভাব, বিশ্বাস অনুভূতি এবং মূলবোধের সমন্বয়ে রাজনৈতিক সংস্কৃতি গঠিত হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনমত গঠনের মাধ্যমসমূহ অর্থাৎ, বন্ধু-বান্ধব, এবং গণমাধ্যম জনমত গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। শিশু যখন শৈশব, কৈশোর পেরিয়ে যৌবনে পদার্পণ করে তখন আসেত্ম আসেত্ম তার বন্ধু-বান্ধবের সংখ্যা বাড়তে থাকে। তাদের সাথে পারস্পরিক আলাপ-আলোচনার মাধ্যমে বিভিন্ন বিষয়ে এক ধরনের মতামত ও দৃষ্টিভঙ্গি সৃষ্টি হয়, যার মাধ্যমে তাদের মনন গড়ে ওঠে। যেমনটি উদ্দীপকে বর্ণিত রোহানের ক্ষেত্রেও দেখা যায়। রোহান তার বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে গ্রামের প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের অবৈধভাবে খাল দখলের বিরুদ্ধে প্রতিবাদ জানায়। গণমাধ্যম জনমত গঠনের একটি গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম। সংবাদপত্র, বেতার, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন প্রভৃতিতে যেসব সংবাদ ও অনুষ্ঠান প্রচারিত হয় তা জাতীয় সমস্যাদির ওপর মতামত ব্যক্ত করে জনগণের দৃষ্টি আকর্ষণ করে।
সংবাদপত্র বিভিন্ন সমস্যা সম্পর্কে শিক্ষাবিদ ও জ্ঞানী ব্যক্তিদের অভিমত জনসমক্ষে তুলে ধরে এবং বেতার, চলচ্চিত্র ও টেলিভিশন বিভিন্ন প্রকার গঠনমূলক আলোচনা, চিত্র প্রদর্শনী এবং চেতনা ও আদর্শমূলক ছায়াছবি প্রদর্শনের মাধ্যমে জনমতকে প্রকাশিত ও সংগঠিত করার প্রয়াস পায়।
উদ্দীপকেও জনমত গঠনের এ মাধ্যমটির গুরুত্ব ফুটে উঠেছে।

ঘ. 'সদা সতর্ক ও সুসংগঠিত মতামতকে কখনো উপেক্ষা করা হয় না'- উক্তিটি যথার্থ।
জনমত রাষ্ট্র পরিচালনার অত্যন্ত শক্তিশালী উপাদান। জনমতকে উপেক্ষ করে শাসনকার্য পরিচালনা করা অত্যন্ত কঠিন বিষয়। জনমত যদি। জাতীয় সমস্যা, জনস্বার্থ বিষয়ক ও সৎ উদ্দেশ্য প্রণোদিত হয় তবে তা উপেক্ষা করার উপায় নেই। কেননা জনমতকে অবজ্ঞা করে কোনো সরকারই ক্ষমতায় টিকে থাকতে পারে না। বিশেষ করে গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় যথার্থতা নির্ভর করে সুগঠিত জনমতের ওপর। কেননা জনসম্মতির ভিত্তিতেই গণতান্ত্রিক সরকার ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত হয়। ক্ষমতা হারানোর ভয়ে সরকারি দল জনমতের প্রতি শ্রদ্ধাশীল থাকতে বাধ্য হয়। আধুনিক প্রতিনিধিত্বমূলক গণতন্ত্রে জনপ্রতিনিধি নির্বাচন ও সরকার গঠনের ক্ষেত্রে জনমত মুখ্য ভূমিকা পালন করে। তাই জনকল্যাণকামী ও সুসংগঠিত জনমত সর্বদা গ্রহণযোগ্য হয়। উদ্দীপকে এ বিষয়েরই ইঙ্গিত রয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রোহানদের গ্রামের পানি নিষ্কাশনের প্রধান খালটি প্রভাবশালী ব্যক্তিবর্গের দখলে চলে যাচ্ছে। রোহান তার বন্ধুদের সাথে আলোচনা করে এর প্রতিবাদ জানায়। ঘটনাটি কয়েকটি প্রচার মাধ্যম বেশ গুরুত্বসহকারে প্রচার করায় এর বিরুদ্ধে জনমত গড়ে় ওঠে। বিষয়টি সরকারের নজরে আসলে তা প্রতিকারের প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। অর্থাৎ রোহানদের এলাকার খাল দখলকে কেন্দ্র করে গড়ে ওঠা জনমত ছিল সুসংগঠিত প্রভাবশালী ও জনকল্যাণকামী। উল্লিখিত আলোচনার ভিত্তিতে প্রতীয়মান হয়, জনগণের সুচিন্তিত, সুস্পষ্ট, যুক্তিভিত্তিক, জনকল্যাণকামী, সদা সতর্ক ও সুসংগঠিত মতামতকে কখনো উপেক্ষা করা যায় না।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post