G

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৯ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 1st Paper Srijonshil Question Answer pdf download

পৌরনীতি ও সুশাসন
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৯

HSC Civics and Good Governance 1st Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer

১. বিলকিস আলাদ একজন স্থায়ী ও দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি নিরপেক্ষভাবে তাঁর ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। তিনি যথাসময়ে সব দাপ্তরিক কাজ সম্পন্ন করেন। তার সততা ও আচরণে জনগণ মুগ্ধ।
ক. গণতন্ত্র কী?
খ. পদসোপান বলতে কী বোঝায়?
গ. বিলকিস আজাদের আচরণে আমলাতন্ত্রের কী কী বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. বিলকিস আজাদের ভূমিকা জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে বিশ্লেষণ কর।

◈ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. যে শাসনব্যবস্থায় সার্বভৌম ক্ষমতা জনগণের হাতে ন্যস্ত থাকে এবং জনগণের মাধ্যমে নির্বাচিত প্রতিনিধিরা শাসনকাজ পরিচালনা করে তাকে গণতন্ত্র বলে।

খ. পদসোপান নীতি বলতে পদের গুরুত্ব ও মর্যাদা অনুসারে পর্যায়ক্রমিক শ্রেণিবিন্যাস বোঝায়।
পদসোপান নীতি অনুযায়ী পদসমূহকে এমনভাবে বিন্যস্ত করা হয় যাতে প্রত্যেক নিম্নতর পদ কোনো উচ্চতর পদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয়। পদসোপানের ফলে প্রত্যেক কর্মচারী তার কাজের জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের কাছে দায়ী থাকেন। উদাহরণস্বরূপ বাংলাদেশ সচিবালয়ের প্রশাসনিক পদসোপান-
সহকারী সচিব ► সিনিয়র সহকারী সচিব ► উপসচিব ► যুগ্মসচিব ► অতিরিক্ত সচিব ► সচিব ► সিনিয়র সচিব।

গ. বিলকিস আজাদের আচরণে আমলাতন্ত্রের যে বৈশিষ্ট্যগুলো ফুটে উঠেছে সেগুলো হলো- স্থায়িত্ব, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, দায়িত্ব নিয়মানুবর্তিতা।
আমলাতন্ত্র একটি স্থায়ী সংগঠন। আমলারা একটি দীর্ঘমেয়াদি কর্মে বহাল থাকেন। তারা পেশাগত দায়িত্ব পালনে খুব দক্ষ হয়ে থাকেন। আমলাদের দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়। নিরপেক্ষতা আমলাতন্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। আমলারা নিরপেক্ষভাবে তাদের প্রশাসনিক দায়িত্ব পালন করেন। এতে তাদের প্রতি জনগণের আস্থা অটুট থাকে। আমলাতন্ত্রে সব কালের জন্য নিম্নস্তরের কর্মকর্তারা ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের কাছে দায়ী থাকেন। তাই তারা অর্পিত দায়িত্ব সঠিকভাবে পালন করেন। আমলাতন্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য হলো নিয়মানুবর্তিতা।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বিলকিস আজাদ একজন স্থায়ী ও দক্ষ প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি নিরপেক্ষভাবে তার ওপর অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন। যথাসময়ে নিজের কাজ সম্পন্ন করেন। বিলকিস আজাদের এসব বৈশিষ্ট্য আমলাতন্ত্রকেই প্রতিফলিত করে। তাই বলা যায়, তার কাজ ও আচরণে আমলাতন্ত্রের স্থায়িত্ব, দক্ষতা, নিরপেক্ষতা, দায়িত্বশীলতা ও নিয়মানুবর্তিতার বৈশিষ্ট্য ফুটে উঠেছে।

ঘ. বিলকিস আজাদের ভূমিকা জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবেু উক্তিটি যথার্থ। 
উদ্দীপকের বিলকিস আজাদ একজন দক্ষ, নিরপেক্ষ ও দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তার আচরণে জনগণ মুগ্ধ। সুতরাং তার দক্ষতা ও দায়িত্বশীলতার সাথে কর্তব্য পালন করা জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে বলে আশা করা যায়।
বর্তমান যুগে রাষ্ট্রের যাবতীয় কার্যাবলির ক্ষেত্রে আমলাতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। যেমন- রাষ্ট্রের নিয়মিত কার্যক্রম পরিচালনা ও নিত্য নতুন সমস্যাবলির সমাধানের জন্য সরকারকে নানা ধরনের নীতি নির্ধারণ করতে হয়। আমলারা সরকারের এসব নীতি নির্ধারণে প্র বা পরোক্ষভাবে ভূমিকা রাখেন এবং তা বাস্তবায়ন করেন। আমলাদের এসব কাজ জাতীয় উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। আধুনিক রাষ্ট্র কল্যাণমূলক। কল্যাণমূলক রাষ্ট্র জনগণের মালের জন্য স্বাস্থ্য, শিক্ষা, সামাজিক নিরাপত্তা, আবাসন ইত্যাদি সংক্রান্ত বহু দায়িত্ব পালন করে থাকে। আমলারা তাদের দক্ষতা, অভিজ্ঞতা ও প্রজ্ঞার সাথে এ বিপুল কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকেন। প্রশাসনের সর্বক্ষেত্রে তারা গুরুত্বপূর্ণ অবদান রেখে সামাজিক পরিবর্তন সাধনসহ নানাবিধ ইতিবাচক ভূমিকা রাখেন। রাষ্ট্রের নিরাপত্তা বিধান, অর্থনৈতিক উন্নয়নসহ জাতীয় অগ্রগতি ও রাজনৈতিক স্থিতিশীলতার অনুঘটক হিসেবে আমলাতন্ত্র নিজেদের বিকল্পহীন সংগঠনে পরিণত করেছে।
উপরের আলোচনা থেকে বোঝা যায়, আমলাদের কার্যক্রমের ওপর দেশের উন্নয়ন ও অগ্রগতি অনেকটাই নির্ভর করে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বিলকিস আলাদের ভূমিকা জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত করবে।

২. তাহমিনা সামাদ সরকারি প্রতিষ্ঠানে উপসচিব পদে দায়িত্বরত। তিনি সরকারি নীতি বাস্তবায়নে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক প্রশাসকদের সহায়তা করেন। সরকার তাহমিনা সামাদের মত দক্ষ জনবল এর মাধ্যমে রাষ্ট্রীয় কর্মকা- সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করে থাকেন।
ক. আমলাতন্ত্র কী?
খ. সালফিতার দৌরাত্ম্য বলতে কী বোঝায়?
গ. তাহমিনা সামাদের প্রতিষ্ঠানের বৈশিষ্ট্য বর্ণনা কর।
ঘ. সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উক্ত কর্মপদ্ধতির ভূমিকা বিশ্লেষণ কর।

◈ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আমলাতন্ত্র হলো একদল অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ, স্থায়ী ও পেশাজীবী কর্মচারীদের মাধ্যমে পরিচালিত বেসামরিক প্রশাসনব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সরকারের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যসমূহ বাস্তবায়িত হয়।

খ. লালফিতার দৌরাত্ম্য বলতে পূর্ববর্তী নিয়মকে অন্ধভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ করাকে বোঝায়। 
Red Tapism বা 'পালফিতা' প্রত্যয়টি সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে প্রচলিত ছিল। সে সময় সরকারি ফাইলপত্র লাল রঙের ফিতায় বেঁধে রাখা হতো। তখন থেকেই আমলাতন্ত্রের আনুষ্ঠানিকতা, দীর্ঘসূত্রিতা, নিয়ম-কানুনের কড়াকড়ি ও বাড়াবাড়ি বোঝাতে লালফিতার দৌরাত্ম্য শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। লালফিতার দৌরস্থ্যের ফলে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বিভিন্ন বিষয় ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে। আমলারা বড় বেশি আনুষ্ঠানিক। এ কারণে তারা সমস্যার মানবিক দিক ও বাস্তব ফলাফলকে উপেক্ষা করে যে কোন কাজকে প্রশাসনিক পুরোনো নিয়মনীতি ও বিধি বিধানের বাধনে বাঁধতে চান। এ বিষয়টিই লালফিতার দৌরাত্ম্য বা জবফ ঞধঢ়রংস নামে পরিচিত।

গ. উদ্দীপকের তাহমিনা সামাদের প্রতিষ্ঠানটি হচ্ছে আমলাতন্ত্র। 
আরবি শব্দ 'আমলা' অর্থ আদেশ পালনকারী ও বাস্তবায়নকারী। যে সব সরকারি কর্মকর্তা-কর্মচারী সরকারের আদেশ পালন ও বাস্তবায়ন করে তাদেরকে আমলা বলা হয়। সামগ্রিকভাবে আমলাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে বলা হয় আমলাতন্ত্র। ব্রিটিশ রাষ্ট্রবিজ্ঞানী অধ্যাপক হারম্যান ফাইনার আমলাতন্ত্রের সংজ্ঞায় বলেন, 'আমলাতন্ত্র বা সিভিল সার্ভিস হলো সেসব পেশাদার কর্মকর্তার সমষ্টি যারা স্থায়ীভাবে কর্মে নিয়োজিত, বেতনভোগী ও দক্ষ।
উদ্দীপকের তাহমিনা সামাদ সরকারি প্রতিষ্ঠানে উপসচিব পদে দায়িত্বরত। তিনি সরকারি নীতি বাস্তবায়নে এবং সিদ্ধান্ত গ্রহণে রাজনৈতিক প্রশাসকদের সহায়তা করেন। যা আমলাতন্ত্রের গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এছাড়াও আমলাতন্ত্রের বেশ কিছু বৈশিষ্ট্য রয়েছে। যেমন স্থায়িত্ব আমলাতন্ত্রের প্রধান বৈশিষ্ট্য। সরকার পরিবর্তিত হলেও আমলাতন্ত্রের কোনো পরিবর্তন হয় না। একটি নির্দিষ্ট বয়স পর্যন্ত কিংবা অবসর গ্রহণের পূর্ব পর্যন্ত তারা চাকরিতে বহাল থাকেন। কেবল দৈহিক ও মানসিক অসামর্থ্যের কারণে তারা চাকরিচ্যুত হতে পারেন। আমলাতন্ত্রে নিয়োজিত কর্মচারীরা নির্দিষ্ট বিষয়ে বিশেষ দক্ষতাসম্পন্ন হয়ে থাকেন। তাদের সামগ্রিক দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য সরকারিভাবে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রয়েছে।
পদসোপান নীতি আমলাতন্ত্রের আরেকটি গুরুত্বপূর্ণ বৈশিষ্ট্য। এ নীতি অনুসারে বিভিন্ন পদের শ্রেণিবিন্যাস, কর্মকর্তা কর্মচারীদের কাজের পরিধি ও জবাবদিহিতা নির্ধারণ করা হয়। প্রত্যেক নিম্নতর পদই কোনো উচ্চতর পদের মাধ্যমে নিয়ন্ত্রিত হয় এবং ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তার আদেশ-নির্দেশ নিম্নতর কর্মকর্তা-কর্মচারীরা অক্ষরে অক্ষরে পালন করেন। কোনো প্রকার রাজনীতির সাথে সম্পৃক্ত না থেকে ব্যক্তিগত ঘৃণা ও আবেগ পরিহার করে সম্পূর্ণ নিরপেক্ষ ও নিয়মতান্ত্রিকভাবে আমলারা রাষ্ট্রীয় দায়িত্ব পালন করেন। আমলারা বেতনভোগী সরকারি কর্মচারি রাষ্ট্রীয় কোষাগার থেকে তাদেরকে নির্ধারিত বেতন-ভাতা ও প্রয়োজনীয় সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়। পরিশেষে বলা যায়, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমলাদের উল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো গুরুতেবর দাবি রাখে। সৎ, দক্ষ ও কর্মঠ আমলারা রাষ্ট্রের প্রাণস্বরূপ।

ঘ. রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠায় উদ্দীপকে উল্লিখিত কর্মপদ্ধতি অর্থাৎ আমলাতন্ত্রের ভূমিকা খুবই তাৎপর্যপূর্ণ। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমলাতন্ত্র এক বিরাট ভূমিকা পালন করে। রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে আমলারাই রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ করেন। একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন তাদের ওপরেই নির্ভর করে। যার কারণে আমলাদেরকে হতে হয় সৎ, দক্ষ, কর্মঠ ও জনসেবামূলক মনোভাবের। গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় সব কার্যক্রম গৃহীত হয়। জনকল্যাণের জন্য। আর আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে সরকারের বিভিন্ন গৃহীত কার্যক্রমের সুফল জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া হয়। জনগণ যখন এই সুফল ভোগ করবে, তখন তা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক হবে। সুশাসন প্রতিষ্ঠার জন্য প্রয়োজন প্রশাসনিক দুর্নীতি হ্রাস করা। আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতা নিশ্চিত হলে প্রশাসনিক দুর্নীতি হ্রাস পায়। প্রশাসনের সর্বস্তরে দুর্নীতি দূর করলে সুশাসন প্রতিষ্ঠা সম্ভব হয়। তাই এর জন্য প্রয়োজন একটি শক্তিশালী প্রশাসন ব্যবস্থা।
একটি শক্তিশালী ও গতিশীল প্রশাসন গড়ে তুলতে আমলাতন্ত্রের কোনো বিকল্প নেই। যা সুশাসনের জন্য অত্যাবশ্যক। সুশাসন প্রতিষ্ঠায় প্রশাসনে আমলাদের দায়িত্বশীলতা অপর একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। দায়িত্বশীল ব্যক্তি যখন নিজের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন, তখন তা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সাহায্য করবে। আবার প্রশাসনিক স্বচ্ছতার ফলে জনগণ সরকারের কর্মকা- সম্পর্কে সুস্পষ্ট ধারণা লাভ করতে পারে। ফলে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হয়।
ওপরের আলোচনা শেষে বলা যায়, সুশাসন প্রতিষ্ঠায় আমলাতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কারণ রাষ্ট্রের সর্বোচ্চ প্রশাসনিক কর্মকর্তা হিসেবে আমলারাই রাষ্ট্রের নীতি নির্ধারণ করেন। একটি রাষ্ট্রের উন্নয়ন ও অনুন্নয়ন তাদের ওপরেই নির্ভর করে।

৩. জনাব আঃ রাজ্জাক একটি উপজেলার নির্বাহী অফিসার। তিনি তাঁর ওপর অর্পিত সরকারি সিদ্ধান্তসমূহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পরিচালনা করেন। সাধারণ জনগণ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তাঁর সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারেন। কিন্তু পূর্বের নির্বাহী অফিসার এমন আচরণ করতেন না। তিনি এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। জনগণের সাথে তার সরাসরি সম্পর্ক ছিল না।
ক. মূল্যবোধের সংজ্ঞা দাও।
খ. তুমি কেন আইন মেনে চলবে?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব আঃ রাজ্জাকের কার্যাবলি আমলাতন্ত্রের কোন কাজকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনাব আঃ রাজ্জাকের পূর্ববর্তী নির্বাহী অফিসারের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন মতামত দাও।

◈ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. যেসব চিন্তা-ভাবনা, লক্ষ্য, উদ্দেশ্য, আদর্শ মানুষের সামগ্রিক কর্মকা- ও আচার-ব্যবহারকে নিয়ন্ত্রণ করে তাকে মূল্যবোধ বলে।

খ. সমাজ ও ব্যক্তিজীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করে গড়ে তোলার জন্য আমি আইন মেনে চলব। আইন হলো ন্যায়ের প্রতীক, যা আমরা সমর্থন করি। সামাজিক জীব হিসেবে মানুষকে সমাজের রীতিনীতি ও নিয়মের প্রতি অনুগত থাকতে হয়। এই আনুগত্যই সুশৃঙ্খল জীবন নিশ্চিত করে ব্যক্তি ও সমাজজীবনকে সুন্দর ও সুশৃঙ্খল করতে সবার উচিত আইন মান্য করা। আইন মানুষের ধর্মীয়, সামাজিক, সাংস্কৃতিক সকল অধিকার রক্ষা করে। আইনের শাসিত্মর ভয়ে সমাজে অনাচার-অবিচার হ্রাস পায়। ফলে সমাজ ও ব্যক্তি জীবনে শামিত্ম প্রতিষ্ঠিত হয়। এ কারণে আমি আইন মেনে চলব।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জনাব আঃ রাজ্জাকের কার্যাবলি আমলাতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ প্রশাসন পরিচালনা এবং জনসেবামূলক কালকে নির্দেশ করে। 
রাষ্ট্র ও সরকার ব্যবস্থার উন্নতমান অর্জন করা আমলাতন্ত্রের আবশ্যক কাজ। এজন্য একে বহুবিধ কাজ সম্পন্ন করতে হয়। এর মধ্যে অভ্যন্তরীণ প্রশাসন এবং জনগণের সেবা করা অন্যতম। সরকারি নীতি ও কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করাই হলো আমলাতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক কাজ। আর সাধারণ জনগণের বিভিন্ন দাবি পূরণ হলো জনসেবামূলক কাজ। উদ্দীপকে আঃ রাজ্জাকের কার্যাবলির মধ্যে এ কাজগুলো প্রতিফলিত হয়েছে।
জনাব আঃ রাজ্জাক তার ওপর অর্পিত সরকারি সিদ্ধান্তসমূহ উপজেলার বিভিন্ন দপ্তরের কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে পরিচালনা করেন। এছাড়া সাধারণ জনগণ বিভিন্ন সমস্যা নিয়ে তার সাথে সরাসরি সাক্ষাৎ করতে পারেন। আমলাতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক ও জনসেবামূলক কাজগুলোও এভাবেই হয়ে থাকে। সরকারি কর্মচারিগণ আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের সাহায্যে দেশের দৈনন্দিন শাসনকার্য পরিচালনা করেন। আইনসভার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবে রূপায়িত করার দায়িত্ব তাদের ওপরই নাস্ত। সমগ্র দেশে আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা এবং বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবে কার্যকর করা সরকারি কর্মচারীদেরই কাজ। এ লক্ষ্যে তারা বিভিন্ন বিভাগ এবং বিভাগীয় কর্মচারীদের সম্পাদিত কার্যাবলির মধ্যে সমন্বয় সাধন করেন। এছাড়া মাঠ প্রশাসনের আমলারা জনগণের সাথে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকেন। ফলে জনগণ তাদের বিভিন্ন পাবি, অভাব-অভিযোগ আমলাদের কাছে তুলে ধরতে পারেন। সুতরাং বলা যায়, আঃ রাজ্জাকের কাজে আমলাতন্ত্রের অভ্যন্তরীণ প্রশাসনিক এবং জনসেবামূলক কাজেরই প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. 'সুশাসন প্রতিষ্ঠায় জনাব আঃ রাজ্জাকের পূর্ববর্তী নির্বাহী অফিসারের কার্যক্রমের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন'- মন্তব্যটি যথার্থ। 
আমলাতন্ত্রের জবাবদিহিতা বলতে আমলাদের দায়িত্ব ও কার্যাবলি সম্পাদনের বাধ্যবাধকতাকে বোঝায়। অর্থাৎ আমলারা তাদের ওপর অর্পিত দায়িত্ব যথাযথভাবে পালন করবেন, দায়িত্বহীনতার জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট কৈফিয়ত দিতে বাধ্য থাকবেন। একজন আমলা হিসেবে আঃ রাজ্জাকের পূর্ববর্তী নির্বাহী অফিসারের মধ্যে এ বিষয়টি অনুপস্থিত। একজন আমলা হিসেবে আঃ রাজ্জাকের পূর্ববর্তী নির্বাহী অফিসার সরকারি নীতি বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে এককভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করতেন। এছাড়া জনগণের সাথে তার সরাসরি সম্পর্কও ছিল না। অর্থাৎ তিনি দায়িত্বহীনতার পরিচয় দিয়েছেন। এ অবস্থা সুশাসন প্রতিষ্ঠার অন্তরায়। কারণ আমলারা সরকারি নীতি প্রণয়ন ও বাস্তবায়ন করে থাকেন। এ ক্ষেত্রে তারা যদি দায়িত্বশীলতার সাথে কাজ না করেন তাহলে সরকারি নীতি দ্রুত বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে না। তাই আমলাদের কাজে জবাবদিহিতা থাকলে প্রশাসনিক সকল কাজে গতিশীলতা আসবে। এছাড়া আমলাতান্ত্রিক জবাবদিহিতা নিশ্চিত করার জন্য অন্যান্য যে সকল কৌশল রয়েছে সেগুলো প্রয়োগ করতে হবে। প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে ই-গভর্নেন্সে রূপান্তর করতে পারলে আমলাদের জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সহজ হবে এবং নাগরিক সুবিধা বৃদ্ধি পাবে, যা রাষ্ট্রকে সুশাসনের পথে পরিচালিত করবে। আমলারা যাতে স্বচ্ছতা ও নিয়মনিষ্ঠার সাথে অর্পিত দায়িত্ব পালন করেন এবং দলীয় প্রভাব ও হস্তক্ষেপের ঊর্ধ্বে থেকে নাগরিকদের সেবা প্রদান করেন তা নিশ্চিত করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, আমলাদের সকল কার্যক্রমে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা সম্ভব হলে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে। তাই সুশাসন প্রতিষ্ঠায় অবশ্যই জনাব আঃ রাজ্জাকের পূর্ববর্তী নির্বাহী অফিসারের কার্যক্রমে জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

৪. বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রে সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে 'ক' সংগঠন কাজ করে। এ সংস্থার সদস্যবৃন্দ জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নয়, সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত। অন্যদিকে, স্থানীয় পর্যায়ে 'স্ব' সংগঠনের প্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন এবং তারা তাদের কাজের জন্য জনগণের নিকট দায়ী থাকেন।
ক. গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থার অপরিহার্য উপাদান কী?
খ. প্রশাসনে কেন লালফিতার দৌরাত্ম্য দেখা যায়? ব্যাখ্যা করো। 
গ. উদ্দীপকের 'খ' সংগঠনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সংগঠনটির কার্যক্রম ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' সংগঠনটির নাম কী? রাষ্ট্রীয় উন্নয়নে এর গতিশীলতা জরুরি মূল্যায়ন করো। 

◈ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থার অপরিহার্য উপাদান হলো আইনের শাসন।

খ. সরকারি কার্যাবলিতে নিয়মতান্ত্রিক ধারাবাহিকতার অজুহাতে দীর্ঘদিন ফাইলবন্দি অবস্থায় ফেলে রাখার কারণে প্রশাসনে লালফিতার দৌরাত্ম্য দেখা যায়।
'লালফিতা' বলতে পূর্ববর্তী নিয়মকে অন্ধভাবে অনুসরণ ও অনুকরণকে বোঝায়। আমলাতন্ত্রে 'লালফিতার দৌরাত্ম্য' খুব বেশি। আমলারা সবকিছুই প্রশাসনিক নিয়ম-নীতি ও বিধি-বিধানের আলোকে করতে চান। সমস্যা সমাধানে বিধি মোতাবেক যথাযোগ্য নিয়মে অগ্রসর হতে গিয়ে সময় নষ্ট হয় এবং সমস্যা আরও জটিল হয়ে পড়ে। জনগণের চাওয়া-পাওয়া, আবেদন-নিবেদন আমলাদের দপ্তরের ফাইলগুলোর লালফিতার বাঁধনে আটকে পড়ে। আর এ সকল কারণেই প্রশাসনে লালফিতার দৌরাত্ম্য দেখা যায়।

গ. উদ্দীপকের 'খ' সংগঠনের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ সংগঠন হলো আইনসভা। রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কার্যক্রম এ সংগঠনটির মাধ্যমে সম্পাদিত হয়।
রাষ্ট্র ক্ষমতায় অধিষ্ঠিত সরকারের যে বিভাগ আইন প্রণয়ন, পরিবর্তন ও সংশোধন করে তাকে আইন বিভাগ বা আইনসভা বলে। আইনসভার সদস্যগণ জনগণ কর্তৃক নির্বাচিত হন এবং তারা তাদের কাজের জন্য জনগণের নিকট দায়ী থাকেন। উদ্দীপকের 'খ' সংগঠনটির কর্মকান্ডও এর প্রতিফলন ঘটেছে।
উদ্দীপকের 'খ' সংগঠনের প্রতিনিধিরা জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন এবং তারা তাদের কাজের জন্য জনগণের নিকট দায়ী থাকেন। একইভাবে আইনসভার সদস্যরাও জনগণের ভোটে নির্বাচিত হন এবং তারা তাদের কাজের জন্য জনগণের নিকট দায়ী থাকেন। আইনসভার প্রধান কাজ হচ্ছে আইন প্রণয়ন করা। আইনসভা শাসন পরিচালনার পাশাপাশি নীতি নির্ধারণেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। এটি সংবিধান রচনা ও প্রয়োজনবোধে সংশোধন করে থাকে। গণতান্ত্রিক রাষ্ট্রে আইনসভা জাতীয় অর্থ তহবিলের অভিভাবক ও রক্ষক। এর সম্মতি ব্যাতীত কোনো কর ধার্য বা ব্যয় বরাদ্ধ করা যায় না। সংসদীয় সরকার ব্যবস্থায় আইনসভা বিভিন্ন কমিটির মাধ্যমে শাসনসংক্রান্ত কাজ করে থাকে। যেমন: অসদাচরণের অভিযোগে এটি যে কোনো সাংসদের সদস্যপদ বাতিল করতে পারে। সংসদীয় সরকার পদ্ধতিতে শাসন বিভাগ বা মন্ত্রিসভা তাদের কাজের জন্য যৌথভাবে আইনসভার নিকট দায়ী থাকে। আইনসতা সাধারণ প্রশ্ন জিজ্ঞাসা, বিতর্ক ও আলোচনা, নিদা প্রস্তাব আনয়ন, মুলতবি প্রস্তাব উত্থাপন এবং অনাস্থা প্রস্তাব পাস করে শাসনবিভাগকে নিয়ন্ত্রণ করে থাকে। এ ছাড়াও নির্বাচনসংক্রান্ত ও জনমত গঠনসহ বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ক্ষেত্রে এটি ভূমিকা পালন করে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' সংগঠনটির নাম হলো আমলাতন্ত্র। রাষ্ট্রের উন্নয়নের ক্ষেত্রে এর গতিশীলতা অপরিহার্য।
উদ্দীপকের 'ক' সংগঠনের মধ্যে আমলাতন্ত্রের চিত্র ফুটে উঠেছে। কেননা আমলাতন্ত্র হলো অভিজ্ঞ, নিরপেক্ষ, স্থায়ী ও পেশাজীবী কর্মকর্তাবৃন্দের দ্বারা পরিচালিত প্রশাসনিক ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে সরকারি নীতি ও সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়িত হয়। আমলাতন্ত্রের সদস্যরা জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নন বরং সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত। আধুনিক রাষ্ট্রে আমলাতন্ত্রের ভূমিকা অতীব গুরুত্বপূর্ণ। অধ্যাপক ফাইনারের মতে, আমলাতন্ত্রের কার্যাবলি কেবল সরকারের উন্নতি সাধনই নয়, প্রকৃতপক্ষে আমলাদের ছাড়া সরকার পরিচালনাই অসম্ভব।
উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়েছে, বিশ্বের প্রতিটি রাষ্ট্রের সরকারের সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে 'ক' সংগঠন কাজ করে। এ সংস্থার সদস্যবৃন্দ জনগণ দ্বারা নির্বাচিত নয়, সরকার কর্তৃক নিয়োগপ্রাপ্ত। এখানে মূলত আমলাতন্ত্রের কথা বলা হয়েছে। আমলাগণই রাষ্ট্রে সরকারের সিদ্ধান্তগুলো বাস্তবায়ন করে থাকে। তবে রাষ্ট্রের উন্নয়নে আমলাতন্ত্রের গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। আমলাগণ তাদের সব কাজকর্মই বাস্তবায়ন করতে চান প্রশাসনিক নিয়ম নীতি ও বিধি-বিধানের আলোকে। বিভিন্ন সমস্যা সমাধানে বিধি মোতাবেক যথাযোগ্য নিয়মে অগ্রসর হতে গিয়ে সময় নষ্ট হয় এবং সমস্যা আরো জটিল হয়ে পড়ে। ফলে জনগণের হয়রানি বেড়ে যায়। এমনকি জাতীয় ও আন্তর্জাতিক প্রয়োজনের মুহূর্তেও দ্রুত সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা যায় না। আমলাতন্ত্রের এই দীর্ঘসূত্রিতার কারণে রাষ্ট্রের উন্নয়ন বাধাগ্রস্ত হয়। তাই রাষ্ট্রের উন্নয়নে আমলাতন্ত্রের জটিলতা কমিয়ে এনে এর গতিশীলতা বৃদ্ধি করতে হবে। অন্যথায় রাষ্ট্রের যথাযথ উন্নয়ন স্থবির হয়ে পড়বে।
পরিশেষে বলা যায়, সরকারের সব সিদ্ধান্ত আমলারাই বাস্তবায়ন করেন। আমলাতন্ত্রের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে রাষ্ট্রের অনেক গুরুত্বপূর্ণ কাজ যথাসময়ে বাস্তবায়ন করা সম্ভব হয় না, যা রাষ্ট্রের উন্নয়নকে ব্যাহত করে। তাই রাষ্ট্রের উন্নয়নে আমলাতন্ত্রের গতিশীলতা বৃদ্ধি করা অত্যন্ত জরুরি।

৫. জনাব সুমন সম্প্রতি পদোন্নতি পেয়ে উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে যোগদান করেছেন। তিনি তার অফিসে সিটিজেন চার্টার টানিয়েছেন ও ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করেছেন। তিনি নিজে কোনো ফাইল আটকে রাখেন না।
ক. আমলাতন্ত্রের জনক কে?
খ. স্থানীয় সরকার বলতে কী বোঝ?
গ. জনাব সুমনের কার্যক্রমে আমলাতন্ত্রের কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সুমনের আচরণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে মূল্যায়ন কর। 

◈ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আমলাতন্ত্রের জনক হলেন জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার।

খ. স্থানীয় সরকার হচ্ছে সমগ্র রাষ্ট্রকে বিভিন্ন অঞ্চলে বিভক্ত করে। ক্ষুদ্রতর পরিসরে প্রতিষ্ঠিত সরকারব্যবস্থা।
স্থানীয় সরকারব্যবস্থা চালুর ফলে ক্ষমতার বিভাজন ঘটে। এতে করে স্থানীয় পর্যায়ে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিতকরণ সহজ হয় এবং দুর্নীতির মাত্রা কমে যায়। যার ফলে সর্বাধিক জনকল্যাণ ও সেবা জনগণের দোরগোড়ায় পৌঁছানো যায়। জনগণ অতি সহজেই উন্নত সেবা পেয়ে থাকে। বাংলাদেশে বর্তমানে তিন স্তর বিশিষ্ট স্থানীয় সরকার কাঠামো লক্ষ করা যায়। যথা- ইউনিয়ন, থানা/উপজেলা ও জেলা পরিষদ।

গ. জনাব সুমনের কার্যক্রমে জনসেবায় আমলাতন্ত্রের ভূমিকার দিকটি ফুটে উঠেছে। 
প্রত্যেক রাষ্ট্র ব্যবস্থায়ই সরকারের স্থায়ী, বেতনভুক্ত কর্মকর্তা কর্মচারীদের দ্বারা প্রশাসনিক কর্মকা- পরিচালিত হয়। যারা আমলা নামে পরিচিত। আমলাগণ একদিকে যেমন সরকারের গৃহীত নীতি ও সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে অগ্রণী ভূমিকা পালন করেন, অন্যদিকে আইন প্রণয়ন, সিদ্ধান্ত গ্রহণ, চুক্তি সম্পাদন ইত্যাদি ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত সরবরাহ করে সরকারকে সহায়তা করেন।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, জনাব সুমন উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা হিসেবে পদোন্নতি পেয়ে অফিসে সিটিজেন চার্টার টানিয়েছেন ও ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করেছেন। তিনি তার অফিসে কোনো ফাইল আটকে রাখেন না। এ ঘটনার দ্বারা সুস্পষ্টভাবেই আমলাদের সাথে জনগণের সেতুবন্ধনের প্রমাণ পাওয়া যায়। কেননা, বাংলাদেশ সংবিধানের ২১ ২. অনুচ্ছেদে উল্লেখ রয়েছে 'সকল সময়ে জনগণের সেবা করিবার চেষ্টা করা প্রজাতন্ত্রের কর্মে নিযুক্ত প্রত্যেক ব্যক্তির কর্তব্য'। সুতরাং এ থেকেই বোঝা যায়, আমলাতন্ত্র জনগণের প্রভু নয় বরং জনসেবক। সকল সময়ে জনগণের সেবা করা তাদের কর্তব্য। উল্লিখিত ঘটনায় জনাব সুমনও একই ধরনের কাজ করেছেন।

ঘ. সুমনের আচরণ বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে প্রশংসার দাবিদার। বাংলাদেশ তৃতীয় বিশ্বের একটি উন্নয়নশীল রাষ্ট্র। অন্যান্য রাষ্ট্রের ন্যায় বাংলাদেশের অন্যতম প্রশাসনিক অংশ হলো আমলাতন্ত্র। আমলাতন্ত্রের মাধ্যমে সরকারের নীতিনির্ধারণ থেকে শুরু করে তা বাস্তবায়ন পর্যন্ত সব ক্ষেত্রে কাজ হয়ে থাকে। আমলাতন্ত্র ছাড়া আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থা পরিচালনা করা সম্ভব নয়। বাংলাদেশে বর্তমানে প্রশাসনের প্রধান সমস্যা হলো দুর্নীতি। দুর্নীতি প্রশাসনের অর্জন ম্লান করে দেয়। এবং রাষ্ট্রের অগ্রযাত্রা ব্যাহত করে। উদ্দীপকে জনাব সুমন একজন সরকারি আমলা হয়ে তিনি জনকল্যাণ সাধনে উক্ত কার্যক্রম গ্রহণ করেন। এতে তার কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হয়, যা সুশাসন অর্জনের ক্ষেত্রে সহায়ক।
বাংলাদেশের আমলাশ্রেণী যদি সুমনের মতো জনকল্যাপ ও সেবার জন্য বিভিন্ন কার্যক্রম গ্রহণ করে তা হলে প্রশাসনের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত হবে এবং দুর্নীতিমুক্ত হবে। ফলে রাষ্ট্রে সুশাসন প্রতিষ্ঠিত হবে যা রাষ্ট্রের উন্নয়নের পথ প্রসার করবে। মূলত সুশাসনের উদ্দেশ্য হলো দুর্নীতিমুক্ত প্রশাসন গড়ে তোলা এবং সরকারের নীতি ও উদ্দেশ্যে সঠিকভাবে বাস্তবায়ন করা।
উদ্দীপকের জনাব সুমনের কার্যক্রমের ন্যায় বাংলাদেশের প্রশাসন ব্যবস্থায় বর্তমানে সিটিজেন চার্টার ও ওয়ানস্টপ সার্ভিস চালু করা হয়েছে। এতে জনগণের সরকারি তথ্য ও সেবা পাওয়ার পথ সুগম হয়েছে। কাজেই এ ধারা অব্যাহত রাখতে হবে এবং আমলা শ্রেণিকে তাদের কাজের স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করতে হবে। তাহলেই সুশাসন অর্জিত হবে। পরিশেষে বলা যায় যে, সুমনের কার্যক্রম বাংলাদেশের বর্তমান প্রেক্ষিতে গ্রহণ করা হলে সুশাসন নিশ্চিত হবে।

৬. মিনা ও রিনা দুই বান্ধবী বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করে। মিনার বাবা জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন প্রতিনিধি, আর রিনার বাবা সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। মিনা ও রিনা তাদের বাবার কর্মকা- নিয়ে আলোচনা করছিল। মিনা বলল তার বাবা সরকারি আইন প্রণয়নে অংশগ্রহণ করেন। রিনা বলল তার বাবা সরকারি নীতি ও আইন প্রণয়নে সহযোগিতা এবং বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন। তারা দুজনে একমত হয় যে, সরকারের মেয়াদ শেষ হলে মিনার বাবার দায়িত্ব শেষ হয়ে যায়, কিন্তু রিনার বাবার দায়িত্ব শেষ হয় না।
ক. 'Kratin' শব্দের অর্থ কী?
খ. পদসোপান বলতে কী বোঝ?
গ. রিনার বাবা কোন ধরনের কার্যাবলির সাথে সম্পৃক্ত? তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. মিনার বাবা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে রিনার বাবার সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল, তুমি কি একমত উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। 

◈ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. গ্রিক Kratin শব্দের অর্থ 'শাসন'।

খ. পদসোপান নীতি বলতে পদের গুরুত্ব ও মর্যাদা অনুসারে পর্যায়ক্রমিক শ্রেণিবিন্যাসকে বোঝায়। পদসোপান নীতি অনুযায়ী পদসমূহকে এমনভাবে শ্রেণিবিন্যাস করা হয় যাতে প্রত্যেক নিম্নতর পদ কোনো উচ্চতর পদ দ্বারা নিয়ন্ত্রিত হয়। পদসোপানের ফলে প্রত্যেক কর্মচারীই তার কার্যাবলির জন্য ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট দায়ী থাকেন। উদাহরণসরূপ বাংলাদেশ সচিবালয়ের প্রশাসনিক পদসোপান উল্লেখ করা যেতে পারে। যেমন- সহকারী সচিব ► সিনিয়র সহকারী সচিব ► উপসচিব ► যুগ্মসচিব ► অতিরিক্ত সচিব ► সচিব ► সিনিয়র সচিব।

গ. উদ্দীপকের রিনার বাবা একজন আমলা। তিনি আমলাতান্ত্রিক কার্যাবলির সাথে সম্পৃক্ত।
আমলাদের প্রশাসনিক ব্যবস্থাকে বলা হয় আমলাতন্ত্র। আমলাতন্ত্র হলো সে সব পেশাদার কর্মকর্তার সমষ্টি যারা স্থায়ীভাবে কর্মে নিয়োজিত। বেতন ভোগী এবং দক্ষ। আধুনিক রাষ্ট্রের একটি অপরিহার্য প্রতিষ্ঠান হিসেবে আমলাতন্ত্র বহুবিধ কার্যাবলি সম্পাদন করে। আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইন এবং বিচার বিভাগ কর্তৃক প্রদত্ত রায় বাস্তবায়ন আমলাতন্ত্রের মৌলিক কাজ। আমলারা আইন প্রণয়নের কাজেও অংশ নিয়ে থাকে। তাদের দ্বারা প্রস্তুতকৃত আইনের খসড়া বিল আকারে রাজনৈতিক নেতারা সংসদে উত্থাপন করেন। আমলারা সরকারকে নীতি প্রণয়নে পদ্ধতিগত পরামর্শ দিয়ে থাকেন। বিচার সংক্রান্ত কাজে অংশগ্রহণ আমলাতন্ত্রের অন্যতম কাজ। অনেক রাষ্ট্রের বিচার বিভাগীয় কাজ সাধারণ আদালতে হয় না। আমলাতন্ত্র বিশেষ ট্রাইবুনালের মাধ্যমে এসব বিচার করে থাকে এবং দ্রুত জনগণের সমস্যার প্রতিকার হয়ে থাকে। অর্থনৈতিক চুক্তি, সন্ধি প্রভৃতি বিষয় নিষ্পত্তিতে প্রধান ভূমিকা পালন করে আমলাতন্ত্র। এছাড়াও আমলারা শাসনকার্যের ধারাবাহিকতা রক্ষা, অভ্যন্তরীণ প্রশাসন পরিচালনা প্রভৃতি কাজ করে থাকেন।
উদ্দীপকে দেখা যায়, রিনার বাবা সরকারি নীতি ও আইন প্রণয়নে সহযোগিতা করেন এবং বিচার বিভাগীয় সিদ্ধান্তসমূহ বাস্তবায়নে ভূমিকা রাখেন। সরকারের মেয়াদ শেষ হলেও রিনার বাবার দায়িত্ব শেষ হয়। না। অর্থাৎ, তিনি একজন স্থায়ী উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা। রিনার বাবার কার্যক্রমের সাথে আমলাতন্ত্রের কার্যাবলির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই বলা যায়, রিনার বাবা আমলাতান্ত্রিক কার্যাবলির সাথে সম্পৃক্ত।

ঘ. মিনার বাবা আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে রিনার বাবার সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল- আমি এ বক্তব্যের সাথে একমত।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, মিনার বাবা জনগণের ভোটে নির্বাচিত একজন প্রতিনিধি। তিনি সরকারি আইন প্রণয়নে অংশগ্রহণ করেন। এর দ্বারা বোঝা যাচ্ছে মিনার বাবা আইনসভার একজন সদস্য। অন্যদিকে, রিনার বাবা সরকারের একজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা বা আমলা। প্রশ্নে বলা হয়েছে আইন প্রণয়নের ক্ষেত্রে আইনসভার সদস্যরা আমলাদের সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল। এ বক্তব্যটি যুক্তিসঙ্গত।
আইন বিভাগের প্রধান কাজ হলো আইন প্রণয়ন করা। বর্তমানে রাষ্ট্রের কার্যাবলি অনেক গুণ বৃদ্ধি পাওয়ায় আইনসভাকে বিভিন্ন বিষয়ে আইন প্রণয়ন করতে হয়। কিন্তু আইন প্রণয়নের জন্য যে দূরদর্শিতা, দক্ষতা ও কলাকৌশলগত জ্ঞানের প্রয়োজন, অধিকাংশ ক্ষেত্রেই আইনসভার সদস্য কিংবা রাজনৈতিক প্রশাসকদের তা থাকে না। কিন্তু এসব বিষয়ে আমলারা অভিজ্ঞতাসম্পন্ন হয়ে থাকেন। তাই স্বাভাবিকভাবেই আমলাদের ওপর নির্ভর করা ছাড়া তাদের গত্যন্তর থাকে না। এজন্যই অধিকাংশ ক্ষেত্রে আইন বিভাগ আইনের মুলনীতিগুলোকে নির্ধারণ করে সেগুলোকে পরিপূর্ণতা পানের দায়িত্ব শাসন বিভাগের হাতে অর্পণ করে। আইন প্রণয়নের ব্যাপারে আমলারা প্রয়োজনীয় নির্দেশ, নিয়ম-কানুন তৈরি করে অসম্পূর্ণ আইনকে পরিপূর্ণতা দানের জন্য সচেষ্ট হন। এভাবে আমলারা আইন প্রণয়নে অংশগ্রহণ করেন। এ ধরনের আইনকে 'অর্পিত ক্ষমতাপ্রসূত আইন' বা 'প্রশাসনিক দপ্তর প্রণীত আইন' বলে অভিহিত করা হয়। উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে তাই বলা যায়, আইনসভার সদস্যরা আইন প্রণয়নের জন্য আমলাদের সহযোগিতার ওপর নির্ভরশীল কথাটি যুক্তিযুক্ত।

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৯ pdf download

৭. মি. আরমান ও মি. শফিক দুই বন্ধু। মি. আরমান সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতিমালা বাস্তবায়নে যথাযথভাবে কাজ করেন এবং সরকারি সেবা জনগণের নিকট পৌঁছে দেন। মি. শফিক স্থানীয় পর্যায়ে গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে থাকেন। বিপদে-আপদে মানুষের সাহায্য করেন।
ক. আমলাতন্ত্রের অপর নাম কী?
খ. আমলাদের কাজের দীর্ঘসূত্রিতাকে কী বলে? ব্যাখ্যা দাও।
গ. মি. আরমান সাহেবের ভূমিকা কী প্রতিষ্ঠায় সহায়ক? বর্ণনা দাও। 
ঘ. মি. শফিক সাহেবের ভূমিকা কোন মূল্যবোধের সহায়ক এবং কীভাবে? মূল্যায়ন কর।

◈ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আমলাতন্ত্রের অপর নাম হলো দপ্তর সরকার Desk Govemment।

খ. আমলাদের কাজের দীর্ঘসূত্রিতাকে লালফিতার দৌরাত্ম্য বলে। আমলাতন্ত্রের একটি বড় জুটি হলো লালফিতার দৌরাত্ম্য। কোনো সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পূর্বের নজিরকে অন্ধভাবে অনুসরণ করে অতি আনুষ্ঠানিকতা পালনকে লালফিতার দৌরাত্ম্য বলা হয়। আমলাতন্ত্রে সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে পদসোপান ভিত্তিতে কাগজপত্রের অনুমোদন প্রক্রিয়া পরিচালিত হয়, যা দীর্ঘ সময়সাপেক্ষ। এতে নাগরিকের মানবিক দিক উপেক্ষিত হয় এবং হয়রানি বেড়ে যায়।

গ. মি. আরমান সাহেবের ভূমিকা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক। 
সুশাসন প্রতিষ্ঠার ক্ষেত্রে সরকার গৃহীত নীতিমালা বাস্তবায়ন এবং নাগরিক সেবার পরিমাণ ও মান বৃদ্ধি করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে সরকারের আমলা শ্রেণিকে আন্তরিকতার সাথে কাজ করতে হয়, যাতে জনকল্যাণমূলক পরিকল্পনা বাস্তবায়ন এবং এর যথাযথ সেবা জনগণের কাছে সহজে পৌঁছায়।
উদ্দীপকের মি. আরমান সাহেবের ক্ষেত্রে দেখা যায়, তিনি সরকার কর্তৃক গৃহীত নীতিমালা বাস্তবায়নে যথাযথভাবে কাজ করেন এবং সরকারি সেবা জনগণের নিকট পৌঁছে দেন। অর্থাৎ আরমান সাহেব একজন আমলা বা সরকারি কর্মকর্তা হিসেবে কাজ করছেন। তার এরূপ ভূমিকা সুশাসন প্রতিষ্ঠায় সহায়ক।

ঘ. মি. শফিক সাহেবের ভূমিকা নৈতিক মূল্যবোধের সহায়ক। 
নৈতিক মূল্যবোধ হচ্ছে সেসব মনোভাব এবং আচরণ যা মানুষ সবসময় ভালো, কল্যাণকর ও অপরিহার্য বিবেচনা করে। এতে মানুষ মানসিকভাবে তৃপ্তিবোধ করে। সত্যকে সত্য বলা, মিথ্যাকে মিথ্যা বলা, অন্যায়কে অন্যায় বলা, অন্যায় কাজ থেকে নিজে বিরত থাকা এবং অন্যকে বিরত রাখা নৈতিক মূল্যবোধের পরিচায়ক। দুগ্ধ ও বিপদগ্রস্ত মানুষকে সহায়তা করা, ঋণগ্রস্ত মানুষকে ঋণ থেকে মুক্ত করা প্রভৃতি নৈতিক মূল্যবোধের পর্যায়ভুক্ত।
উদ্দীপকের মি. শফিক সাহেব স্থানীয় পর্যায়ে গরিব-দুঃখী মানুষের পাশে থাকেন এবং বিপদে-আপদে মানুষকে সাহায্য করেন। মি. শফিক সাহেবের এরূপ ভূমিকা নৈতিক মূল্যবোধের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। নৈতিক মূল্যবোধ মানুষের বিবেক বুদ্ধি থেকে উৎসারিত। আইনগত মূল্যবোধের সাথে এর কোনো বিরোধ নেই। কিন্তু যেখানে আইনগত মূল্যবোধের কোনো নির্দিষ্ট সীমারেখা থাকে না, সেখানে নৈতিক মূল্যবোধই মানুষকে পরিচালিত করে। যেমনটি উদ্দীপকের শকি সাহেবের ক্ষেত্রে দেখা যায়।

৮. মি. সাহাবউদ্দিন একজন সরকারি দায়িত্বশীল প্রশাসনিক কর্মকর্তা। তিনি তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। যেটা মূলত পদসোপান ভিত্তিক। তিনি তার ছেলেকে বুঝিয়ে বলেন, এ ব্যবস্থায় নিম্নস্তরের কর্মচারীগণ উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আদেশ-নিষেধ মেনে চলতে বাধ্য থাকেন।
ক. ম্যাক্স ওয়েবার কে ছিলেন? 
খ. লালফিতার দৌরাত্ম্য ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে মি. সাহাবউদ্দিন এর ঘটনায় পৌরনীতি ও সুশাসনের কোন ধারণার প্রতিফলন ঘটছে ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় উদ্দীপকের উক্ত ধারণাটির কার্যাবলি বিশ্লেষণ করো।

◈ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. ম্যাক্স ওয়েবার ছিলেন একজন জার্মান সমাজবিজ্ঞানী।

খ. লালফিতার দৌরাত্ম্য বলতে পূর্ববর্তী নিয়মকে অন্ধভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ করাকে বোঝায়। 
Red Tapism বা 'লালফিতা' প্রত্যয়টি সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে প্রচলিত ছিল। সে সময় সরকারি ফাইলপত্র লাল রঙের ফিতায় বেঁধে রাখা হতো। তখন থেকেই আমলাতন্ত্রের আনুষ্ঠানিকতা, দীর্ঘসূত্রিতা, নিয়ম-কানুনের কড়াকড়ি ও বাড়াবাড়ি বোঝাতে লালফিতার দৌরাত্ম্য শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। লালফিতার দৌরত্ম্যের ফলে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বিভিন্ন বিষয় ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে।

গ. উদ্দীপকে মি. সাহাবউদ্দিন এর ঘটনায় পৌরনীতি ও সুশাসনের আমলাতন্ত্র ধারণার প্রতিফলন ঘটেছে। 
সরকারি সংগঠনের কর্মকর্তাগণ প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষার মাধ্যমে স্থায়ীভাবে নিয়োগপ্রাপ্ত হয়ে সরকারি সংগঠনের সহযোগী হিসেবে জনসেবায় নিয়োজিত থাকেন এবং এ সংগঠন পদসোপানভিত্তিক হওয়ায় নিম্নস্তরের কর্মচারীগণকে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাদের আদেশ-নির্দেশ মেনে চলতে হয়। আর এটাই হলো আমলাতন্ত্র।
মি. সাহাবউদ্দিন এর ক্ষেত্রে লক্ষ করা যায়, তিনি তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়ে নিয়োগপ্রাপ্ত হন। এছাড়া তার সংগঠনটিও পদসোপান ভিত্তিক, যা আমলাতন্ত্রের ধারণার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে মি. সাহাবউদ্দিন এর ঘটনায় পৌরনীতি ও সুশাসনের আমলাতন্ত্র ধারণাটি প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে আমলাতন্ত্রকে নির্দেশ করা হয়েছে। আমলাতন্ত্রের অনেক কার্যাবলি রয়েছে। আধুনিক গণতান্ত্রিক শাসনব্যবস্থায় আমলাতন্ত্রের কার্যাবলি নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
আমলাগণ আইনসভা কর্তৃক প্রণীত আইনের সাহায্যে দেশের দৈনন্দিন শাসনকার্য পরিচালনা করেন। আইনসভার লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে বাস্তবে রূপায়িত করার দায়িত্ব এই আমলাদেরই। তারা সমগ্র দেশে আইনের শাসন কার্যকর করেন। বর্তমানে আমলারা বিচার সংক্রান্ত কিছু কাজও করে থাকেন। অনেক রাষ্ট্রেই এখন কিছু বিবাদের মীমাংসা আদালতের পরিবর্তে প্রশাসনিক সংস্থাসমূহের মাধ্যমে করা হয়।
সরকারি নীতি ও কার্যাবলি সম্পর্কিত যাবতীয় সংবাদ ও সঠিক তথ্যের উৎস হলো আমলাতন্ত্র। জনসাধারণ, বিভিন্ন গোষ্ঠী ও রাজনৈতিক দল, এমনকি সরকারের বিভিন্ন বিভাগ সরকারি সিদ্ধান্ত এবং গুরুত্বপূর্ণ ঘটনাবলি সম্পর্কে তথ্য ও বিবরণের জন্য আমলাতন্ত্রের ওপর নির্ভরশীল। অভ্যন্তরীণ প্রশাসন পরিচালনা আমলাতন্ত্রের আর একটি বড় কাজ। সরকারি নীতি ও কর্মসূচিকে বাস্তবায়িত করার গুরু দায়িত্ব আমলাতন্ত্রের ওপর ন্যস্ত। নীতি প্রণয়নের ক্ষেত্রেও আমলাতন্ত্র গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমলাদের এই ভূমিকা সরকারের কাজের পরিধি, আমলাদের নৈপুণ্য ও স্থায়িত্বের ওপর নির্ভরশীল। কোনো কোনো ক্ষেত্রে মন্ত্রীদের প্রশাসনিক অদক্ষতা অজ্ঞতার কারণে নীতি নির্ধারণের ক্ষেত্রে আমলারা কার্যকরী ভূমিকা গ্রহণ করেন। উপরের আলোচনার প্রেক্ষাপটে প্রতীয়মান হয়, আধুনিককালে রাষ্ট্রীয় কার্যাবলি ক্রমশ বৃদ্ধির সাথে সাথে আমলাতন্ত্রের ভূমিকাও অধিকতর গুরুত্ব বহন করছে।

৯. চান্দনা গ্রামের অধিকাংশ জনগণ দরিদ্র। গত বছরের ঝড়ে এলাকার মসজিদটি ক্ষতিগ্রস্ত হয়। স্কুলশিক্ষক কামাল সাহেব মসজিদটি পুনর্নির্মাণের লক্ষ্যে সরকারি অনুদান পাওয়ার জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয়ে যোগাযোগ করেন এবং তারা আশ্বাস দেন অনুদান পেয়ে যাবে। কিন্তু কয়েক মাস পর খোঁজ নিতে এসে দেখতে পান ফাইলটি বিভিন্ন টেবিলে ঘুরাঘুরি করে সিদ্ধান্তহীনতায় পড়ে আছে। তিনি অফিসারদের সাথে যোগাযোগ করলে তারা তার সাথে ভাল আচরণ করেনি।
ক. আমলাতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ কী এবং এর উৎপত্তিগত অর্থ কী?
খ. আমলাতন্ত্র বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে মসজিদ পুননির্মাণের অনুদান বিলম্ব বা সিদ্ধান্তহীনতার পিছনে কোন কারণ নিহিত রয়েছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ. উপরোক্ত সমস্যা সমাধানে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া আবশ্যক? বইয়ের আলোকে বিশ্লেষণ কর। 

◈ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আমলাতন্ত্রের ইংরেজি প্রতিশব্দ হলো- 'Bureaucracy' এবং উৎপত্তিগত অর্থ হলো- 'Desk Government" বা দপ্তর সরকার।

খ. আধুনিক রাজনৈতিক ব্যবস্থায় আমলাতন্ত্র বলতে মূলত সরকারি প্রতিষ্ঠানের স্থায়ী, বেতনভুক্ত কর্মীবাহিনীকে বোঝায়। 
আমলা হলো কোনো সংগঠন পরিচালনার জন্য স্থায়ী, বেতনভুক্ত, দক্ষ কর্মকর্তা-কর্মচারী। আর আমলাদের সংগঠনই হলো আমলাতন্ত্র। আমলাগণ সুশৃঙ্খলভাবে রাজনীতি নিরপেক্ষ থেকে তাদের দায়িত্ব পালন করেন।

গ. উদ্দীপকে মসজিদ পুননির্মাণের অনুদান বিলম্ব বা সিদ্ধান্তহীনতার পিছনে যে কারণ নিহিত রয়েছে তা হলো আমলাতন্ত্রের জটিলতা অর্থাৎ, লালফিতার দৌরাত্ম্য।
আমলাতান্ত্রিক সংগঠনের একটি মারাত্মক জুটি হলো লালফিতার দৌরাত্ম্য। এর অর্থ কাজে দীর্ঘসূত্রিতা। সাধারণত আমলারা আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির বাইরে কোনো কাজ করতে চান না। আমলারা সবকিছুই প্রশাসনিক নিয়ম-নীতি ও বিধি-বিধানের আলোকে করতে চান। এর ফলে সমস্যার মানবিক দিকটি উপেক্ষিত হয়। সমস্যা সমাধানে বিধি মোতাবেক অগ্রসর হতে গিয়ে সময় নষ্ট হয় এবং সমস্যা আরও জটিল হয়ে পড়ে। জনগণের চাওয়া-পাওয়া ও আবেদন আমলাতন্ত্রের দাল। ফিতার বাঁধনে আটকা পড়ে থাকে। এতে সেবা গ্রহীতার হয়রানি বেড়ে যায়। উদ্দীপকেও এ বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। 
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, চান্দনা গ্রামের মসজিদ পুননির্মাণের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত অনুদান প্রদান সংক্রান্ত ফাইলটি বিভিন্ন টেবিলে ঘোরাঘুরি করে সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় পড়ে আছে। উদ্দীপকের এ ঘটনা আমলাতন্ত্রের জটিলতা তথা লালফিতার দৌরাত্ম্যকে নির্দেশ করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে মসজিদ পুননির্মাণের অনুদান বিলম্বের কারণ হলো প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাজের দীর্ঘসূত্রিতা যা এক কথায় 'লালফিতার দৌরাত্ম্য' হিসেবে পরিচিত।

ঘ. উদ্দীপকে মসজিদ পুননির্মাণের অনুদান বিলম্বের কারণ হলো আমলাতন্ত্রের জটিলতা তথ্য লালফিতার দৌরাত্ম্য। এ সমস্যা সমাধানে নানাবিধ পদক্ষেপ নেয়া যেতে পারে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, চান্দনা গ্রামের মসজিদ পুননির্মাণের জন্য ধর্ম মন্ত্রণালয় কর্তৃক প্রণীত অনুদান প্রদান সংক্রান্ত ফাইলটি বিভিন্ন টেবিলে ঘোরাঘুরি করে সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় পড়ে আছে। আমলাতন্ত্রের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্যার সমাধান করতে হলে জনগণ ও প্রশাসন উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে। উদ্দীপকের চান্দনা গ্রাম যে দেশের অন্তর্ভুক্ত সে দেশের জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তুলতে হবে। জনগণ রাজনৈতিকভাবে সচেতন হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা সম্ভব। আমলা নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে দলীয় নিয়োগের বদলে দক্ষ, সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের নিয়োগ করতে হবে। আমলারা জনগণের শাসক নয়, বরং তারা জনগণের সেবক এ ধরনের মানসিকতা যাতে তাদের মধ্যে তৈরি হয় সে বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমলাদের জনসেবামূলক মনোভাব গঠনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। জবাবদিহিতা প্রশাসনকে সচল রাখে। প্রশাসনিক কাজকর্মে আমলাদের জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আমলারা যাতে স্বেচ্ছাচারী হতে না পারে সেজন্য রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। আমলাদের যথোপযুক্ত বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রদান করতে হবে। এর মাধ্যমে তাদের দুর্নীতি করার প্রবণতা কমে আসবে। আমলাতন্ত্রের জটিলতা অর্থাৎ, 'লাল ফিতার দৌরাত্ম্যে'র সমস্যা সমাধানে উদ্দীপকে বর্ণিত দেশে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ঘটাতে হবে। আর আইনের প্রয়োগ ঘটালে জটিলতা সৃষ্টিকারীরা যখন শাসিত্মর আওতায় আসবে তখন অন্যেরা ভয়ে তা করতে সাহস পাবে না। ফলে অনেকাংশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা লাঘব করা যাবে। পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত সমস্যা সমাধানে আলোচ্য পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতন হওয়া জরুরি।

১০. মি. 'ক' একজন অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক। তিনি দুই বছর আগে অবসরে গেলেও আজ পর্যন্ত পেনশন মঞ্জুর করাতে পারেন নি। তার ফাইলটি বিভিন্ন টেবিলে ঘোরাঘুরির পর সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় পড়ে আছে। অবস্থায় তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির সাথে সাক্ষাৎ করলে তিনি বলেন, "এটা আমার কাজ নয়। সুতরাং আপনি সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের সাথে যোগাযোগ করেন"।
ক. আধুনিক আমলাতন্ত্রের জনক কে? 
খ. লালফিতার দৌরাত্ম্য বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকের আলোকে মি. 'ক' এর পেনশন মঞ্জুরে বিলম্বের কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মি. 'ক' এর সমস্যা সমাধানে কী কী পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন? উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো। 

◈ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আধুনিক আমলাতন্ত্রের জনক হলেন জার্মান সমাজবিজ্ঞানী ম্যাক্স ওয়েবার।

খ. লালফিতার দৌরাত্ম্য বলতে পূর্ববর্তী নিয়মকে অন্ধভাবে অনুসরণ ও অনুকরণ করাকে বোঝায়। 
Red Tapism বা 'লালফিতা' প্রত্যয়টি সপ্তদশ শতাব্দীতে ইংল্যান্ডে প্রচলিত ছিল। সে সময় সরকারি ফাইলপত্র লাল রঙের ফিতায় বেঁধে রাখা হতো। তখন থেকেই আমলাতন্ত্রের আনুষ্ঠানিকতা দীর্ঘসূত্রিতা, নিয়মকানুনের কড়াকড়ি ও বাড়াবাড়ি বোঝাতে পালফিতার দৌরাত্ম্য শব্দটির ব্যবহার শুরু হয়। লালফিতার দৌরাত্ম্যর ফলে মাসের পর মাস, বছরের পর বছর বিভিন্ন বিষয় ফাইলবন্দি হয়ে পড়ে থাকে।

গ. উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, মি. 'ক' এর পেনশন আবেদনের ফাইল মঞ্জুর বিলম্বের কারণ হলো আমলাতন্ত্রের জটিলতা অর্থাৎ দান ফিতার দৌরাত্ম্য।
এর অর্থ কাজে দীর্ঘসূত্রিতা। সাধারণত আমলারা আনুষ্ঠানিক পদ্ধতির বাইরে কোনো কাজ করতে চান না। আমলারা সবকিছুই প্রশাসনিক নিয়ম-নীতি ও বিধি-বিধানের আলোকে করতে চান। এর ফলে সমস্যার মানবিক দিকটি উপেক্ষিত হয়। সমস্যা সমাধানে বিধি মোতাবেক অগ্রসর হতে গিয়ে সময় নষ্ট হয় এবং সমস্যা আরও জটিল হয়ে পড়ে। জনগণের চাওয়া-পাওয়া ও আবেদন আমলাতন্ত্রের দাল ফিতার বাঁধনে আটকা পড়ে থাকে। এতে সেবা গ্রহীতার হয়রানি বেড়ে যায়। উদ্দীপকেও এ বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। 
উদ্দীপকের অবসরপ্রাপ্ত শিক্ষক মি. 'ক' এর পেনশন আবেদনের ফাইল মঞ্জুর করার ক্ষেত্রে বিলম্বের কারণ প্রশাসনিক কর্মকর্তাদের কাজের দীর্ঘসূত্রিতা, যা এক কথায় 'লালফিতার দৌরাত্ম্য' হিসেবে পরিচিত। 
মি. 'ক' এর পেনশনের আবেদনের ফাইলটি দীর্ঘ দুই বছর যাবত বিভিন্ন টেবিলে ঘোরাঘুরির পর সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় পড়ে আছে। পরবর্তীতে তিনি স্থানীয় জনপ্রতিনিধির নিকট থেকেও এ বিষয়ে কোনো সহায়তা পাননি। অর্থাৎ আমলাতান্ত্রিক জটিলতার কারণে প্রশাসনিক কাজে যে দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হয় সেই সমস্যার জালে মি. 'ক' এর পেনশন আবেদনের ফাইল আটকে পড়ে। যার ফলে পেনশন মঞ্জুরে অহেতুক বিলম্ব হচ্ছে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের মি. 'ক' এর পেনশন মঞ্জুরে বিলম্বের কারণ আমলাতান্ত্রিক জটিলতা বা লালফিতার দৌরাত্ম্য।

ঘ. উদ্দীপকের মি. 'ক'-এর পেনশন আবেদনের ফাইল মঞ্জুর বিলম্বে যে সমস্যা দেখা যায় তা হলো আমলাতন্ত্রের জটিলতা অর্থাৎ 'লালফিতার দৌরাত্ম্য'। এ সমস্যা সমাধানে নানাবিধ পদক্ষেপ নেওয়া যেতে পারে। 
উদ্দীপকে দেখা যায়, মি. 'ক' দুই বছর আগে শিক্ষকতা থেকে অবসর নিলেও আজ পর্যন্ত পেনশন মঞ্জুর করাতে পারেনি। তার ফাইলটি বিভিন্ন টেবিলে ঘোরাঘুরির পর সিদ্ধান্তহীন অবস্থায় পড়ে আছে। আমলাতন্ত্রের দীর্ঘসূত্রিতার কারণে এ ধরনের সমস্যার সৃষ্টি হয়েছে। এ সমস্যার সমাধান করতে হলে জনগণ ও প্রশাসন উভয়কেই এগিয়ে আসতে হবে। উদ্দীপকের মি. 'ক'-এর দেশের জনগণকে রাজনৈতিকভাবে সচেতন করে তুলতে হবে। জনগণ রাজনৈতিকভাবে সচেতন হলে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা দূর করা সম্ভব। আমলা নিয়োগের ক্ষেত্রে সরকারকে দলীয় নিয়োগের বদলে দক্ষ, সৎ ও নিবেদিতপ্রাণ ব্যক্তিদের নিয়োগ করতে হবে। আমলারা জনগণের শাসক নয়, বরং তারা জনগণের সেবক এ ধরনের মানসিকতা যাতে তাদের মধ্যে তৈরি হয় সে বিষয়ে রাজনৈতিক নেতৃত্বকে অগ্রণী ভূমিকা পালন করতে হবে। আমলাদের জনসেবামূলক মনোভাব গঠনে প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে হবে। জবাবদিহিতা প্রশাসনকে সচল রাখে। প্রশাসনিক কাজকর্মে আমলাদের জবাবদিহিতার বিষয়টি নিশ্চিত করতে হবে। আমলারা যাতে স্বেচ্ছাচারি হতে না পারে সেজন্য রাজনৈতিক কর্তৃপক্ষ কর্তৃক আমলাতন্ত্রকে নিয়ন্ত্রণের ব্যবস্থা করতে হবে। এতে করে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা অনেকাংশে হ্রাস পাবে। আমলাদের যথোপযুক্ত বেতন, ভাতা ও অন্যান্য সুবিধাদি প্রদান করতে হবে। এর মাধ্যমে তাদের দুর্নীতি করার প্রবণতা কমে আসবে। আমলাতন্ত্রের জটিলতা অর্থাৎ 'সালফিতার দৌরাত্ম্যের সমস্যা সমাধানে মি. 'ক' এর দেশে আইনের সুষ্ঠু প্রয়োগ ঘটাতে হবে। আর আইনের। প্রয়োগ ঘটালে জটিলতা সৃষ্টিকারীরা যখন শামিত্মর আওতায় আসবে তখন অন্যেরা ভয়ে তা করতে সাহস পাবে না। ফলে অনেকাংশে আমলাতান্ত্রিক জটিলতা লাঘব করা যাবে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকের মি. 'ক' এর সমস্যা সমাধানে আলোচ্য পদক্ষেপ গ্রহণের পাশাপাশি নাগরিকদের সচেতন হওয়া জরুরি।

No comments:

Post a Comment