HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১০ pdf download - Exam Cares

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১০ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Civics and Good Governance 1st Paper Srijonshil Question Answer pdf download

পৌরনীতি ও সুশাসন
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১০

HSC Civics and Good Governance 1st Paper pdf download
Srijonshil
Question and Answer

১. বিশ্বের ইতিহাসে ফিলিস্তিনিরা নিজ ভূমি রক্ষা ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্য দীর্ঘদিন যাবৎ সংগ্রাম করে আসছে। ঐতিহাসিক পটভূমি, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ভৌগোলিক কারণে তারা সংগ্রামরত। ইসরাইলীদের বর্বরোচিত হামলা ও দখল কার্যক্রম সত্ত্বেও ফিলিস্তিনিরা আত্মবিসর্জন দিয়েও দেশ মাতৃভূমিকে হারাতে চায় না।
ক. স্বচ্ছতা কী?
খ. অধিকার ও কর্তব্যের মধ্যে দুটি সম্পর্ক ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে কোন ধারণা ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধতার ক্ষেত্রে জাতীয়তার কোন উপাদানটির ভূমিকা মুখ্য? তোমার মতামত দাও।

◈ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. কোনো কাজ অনিয়ম পরিহার করে সুষ্ঠুভাবে সম্পাদন করা এবং তা যাচাইয়ের সুযোগ থাকাকে স্বচ্ছতা বলে।

খ. অধিকার ও কর্তব্যের ধারণা পরস্পর সম্পর্কযুক্ত। অধিকারের কথা উচ্চারণের সাথে সাথে কর্তব্যের বিষয়টিও স্বাভাবিকভাবে এসে যায়। অধিকার ও কর্তব্যের অনেকগুলো সম্পর্কের মধ্যে দু'টি হলো ১. এরা একে অপরের পরিপূরক ২. উভয়েই সমাজজীবনের দায়বদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত। নাগরিকের অধিকার উপভোগের জন্য রাষ্ট্র সব ধরনের নিশ্চয়তা বিধান করে। তেমনি রাষ্ট্রও নাগরিকের কাছ থেকে কিছু কর্তব্যপালন আশা করে। অর্থাৎ, নাগরিকের যা অধিকার রাষ্ট্রের তা কর্তব্য রাষ্ট্রের যা অধিকার নাগরিকের কাছে তা কর্তব্য। আবার অধিকার ও কর্তব্য উভয়ে সমাজজীবনের দায়বদ্ধতার সঙ্গে যুক্ত অধিকার পূরণ হলে তা সমাজজীবনকে সহজ করে। আর কর্তব্য পালন সমাজজীবনকে করে উন্নত।

গ. উদ্দীপকে ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে বিদ্যমান জাতীয়তার ধারণা ফুটে উঠেছে। 
জাতীয়তা হলো অভিন্ন ভাষা, চিন্তা, প্রথা ও ঐতিহ্যের বন্ধনে আবদ্ধ এক জনসমষ্টি, যা অনুরূপ বন্ধনে আবদ্ধ অন্যান্য জনসমষ্টি থেকে নিজেদের পৃথক মনে করে। এটি একটি ভাবগত বা বিমূর্ত ধারণা। জাতীয়তার বোধ একটি জনসমষ্টির মধ্যে গভীর একাত্মতাবোধ জাগ্রত করে। জাতীয়তার আদর্শ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে নির্যাতিত ও শোষিত মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। সহায়তা করেছে জাতিরাষ্ট্র গঠনে। জাতীয়তার অন্যতম অনুঘটক হিসেবে দেশপ্রেম মানুষকে ব্যক্তিস্বার্থের ঊর্ধ্বে উঠে জাতির কল্যাণে নিবেদিত হতে প্রণোদনা যুগিয়েছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ফিলিস্তিনিরা নিজ ভূমি রক্ষা ও স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার জন্য দীর্ঘদিন ধরে সংগ্রাম করে আসছে। অভিন্ন ঐতিহাসিক পটভূমি, ভাষা, সংস্কৃতি এবং ভৌগোলিক বন্ধনের কারণে তারা একাত্মবোধে উজ্জীবিত হয়ে সংগ্রামরত। ইসরাইলীদের বর্বরোচিত হামলা ও দখল কার্যক্রমের মধ্যে তারা আত্মবিসর্জন দিয়ে হলেও মাতৃভূমিকে ধরে রাখতে চায়। তাই বলা যায়, ফিলিস্তিনি জনগণের মধ্যে জাতীয়তার ধারণাই ফুটে উঠেছে।

ঘ. আমার মতে উদ্দীপকের ফিলিস্তিনিদের ঐক্যের ক্ষেত্রে জাতীয়তার ভৌগোলিক ঐক্য উপাদানটির ভূমিকা মুখ্য। তবে ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসগত ঐক্যও রয়েছে। 
জাতীয়তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ভৌগোলিক ঐক্য। জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হতে হলে এবং জাতি গঠন করতে হলে একটি জনসমষ্টিকে কোনো নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বাস করতে হয়। এছাড়া ভাষা ও সাংস্কৃতিক ঐক্য এবং ঐতিহাসিক ঐক্যও জাতীয়তার ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে বিবেচিত।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ফিলিস্তিনিরা নিজ আবাসভূমি রক্ষা করে স্বাধীনভাবে বাঁচার জন্য লড়াই করছে। তারা অভিন্ন ইতিহাস-ঐতিহ্যের শেকড়, ভাষা-সংস্কৃতি এবং ভৌগোলিক বন্ধনের টানে সংগ্রামরত। তারা ইসরাইলীদের বর্বর হামলা এবং নির্যাতনের মুখে আত্মবিসর্জন দিতে প্রস্তুত, কিন্তু আবাসভূমিকে হারাতে রাজি নয়। অর্থাৎ, এখানে ভৌগোলিক ঐক্যই দৃশ্যত মুখ্য হয়ে উঠেছে। অভিন্ন ভূখ-গত ঐক্য ফিলিস্তিনিদের মধ্যে জাতীয় সংহতি সৃষ্টি করেছে। পুরুষানুক্রমে একই ভূখন্ডে অবস্থান তাদের মধ্যে অভিন্ন জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি করেছে। বহুদিন পাশাপাশি অবস্থানের কারণে তারা ইতিহাস, ভাষা ও সংস্কৃতিগত ক্ষেত্রেও ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ হয়েছে।
উপরের আলোচনা থেকে প্রতীয়মান হয়, ফিলিস্তিনিদের ঐক্যবদ্ধতার ক্ষেত্রে ভৌগোলিক ঐক্যই মুখ্য ভূমিকা রেখেছে। তবে তাদের মধ্যে একাত্ববোধ সৃষ্টিতে ভাষা, সংস্কৃতি ও ইতিহাসগত ঐক্যও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছে।

২. ২৬ মার্চ, ২০১৪ ছিল বাংলাদেশের ৪৪তম স্বাধীনতা দিবস। আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ এদিন বেলা ১১ টায় ঢাকার জাতীয় প্যারেড ময়দানে সমবেত হয়ে জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেছেন। চট্টগ্রামের খেলাঘরের শিশুদের সঙ্গে জাতীয় সংগীত গাইলেন বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী কলেজ পড়ুয়া রাজু। রাজু জন্ম থেকেই কথা বলতে পারে না। কিন্তু এই অনুষ্ঠানে তাকে ঠেকিয়ে রাখা যায়নি। চৈত্রের কাঠফাটা রোদে সবার সঙ্গে রাজুও গাইল "আমার সোনার বাংলা আমি তোমায় ভালোবাসি...."। 'রাজুর গাওয়াটা সে ছাড়া আর কেউ শুনলো না, তাতেই সে মহাখুশি'। রাজু আমাদের নতুন প্রজন্মের মুক্তিযোদ্ধা তাদের হাতেই বাংলাদেশের ভবিষ্যৎ।
ক. বিচার বিভাগের স্বাধীনতা কাকে বলে?
খ. পৌরনীতি ও সুশাসন একই সূত্রে গাঁথা ব্যাখ্যা করো। 
গ. বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী রাজুর জাতীয় সংগীতে অংশগ্রহণ নতুন প্রজন্মকে উদ্বুদ্ধ করবে- ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে সমবেতভাবে জাতীয় সংগীত পরিবেশন জাতীয়তারই বহিঃপ্রকাশ- বিশ্লেষণ করো।

◈ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আইন বিভাগ ও শাসন বিভাগের হস্তক্ষেপ থেকে মুক্ত হয়ে সম্পূর্ণ স্বাধীন ও নিরপেক্ষভাবে বিচারকার্য পরিচালনাকে বিচার বিভাগের স্বাধীনতা বলে।

খ. পৌরনীতি নাগরিকতা বিষয়ক বিজ্ঞান। আর সুশাসন নাগরিকের উত্তম জীবন নিশ্চিতকরণের একটি উপায়।
নাগরিক হিসেবে মানুষের জীবনের সাথে জড়িত সকল বিষয় নিয়ে পৌরনীতি আলোচনা করে। এর উদ্দেশ্য হলো নাগরিককে সুনাগরিক হিসেবে গড়ে তোলা। আর সুশাসন নাগরিকের কল্যাণমুখী জীবন নিশ্চিত করে উন্নত নাগরিক জীবন গড়ে তোলার প্রচেষ্টা চালায়। অর্থাৎ উভয়ের উদ্দেশ্য নাগরিক জীবনকে উন্নত ও সুসংহত করা। তাই পৌরনীতি ও সুশাসন একই সূত্রে গাঁথা।

গ. বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী রাজুর জাতীয় সংগীতে অংশগ্রহণ নতুন প্রজন্মকে দেশপ্রেম ও জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করবে। 
দেশের প্রতি মানুষের অকৃত্রিম ভালোবাসা, অপরিমেয় টান, ভালোবাসার অনুভূতি হচ্ছে দেশপ্রেম। এটি নিজ জন্মভূমির প্রতি মানুষের আবেগপূর্ণ আনুগত্যের প্রকাশ। অন্যদিকে, জাতীয়তাবোধ হলো এক ধরনের মানসিক অনুভূতি, যা ঐক্যবোধের ভিত্তিতে নিজেদেরকে অন্য জনসমাজ থেকে আলাদা ভাষার অনুপ্রেরণা দেয়। উদ্দীপকে বর্ণিত রাজুর কর্মকান্ড এ দুটি দিকেরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
রাজু বাক ও শারীরিক প্রতিবন্ধী হওয়া সত্ত্বেও জাতীয় সংগীত পরিবেশনে অংশগ্রহণ করে। দেশের প্রতি মমত্ববোধের কারণেই সে আপনমনে সবার সাথে সংগীত পরিবেশনে অংশগ্রহণ করে। রাজুর এ অনুভূতি, আবেগ এবং ঐক্যবোধের চেতনা বর্তমান প্রজন্মকে স্বদেশের প্রতি দায়িত্ব ও কর্তব্য পালনে অনুপ্রাণিত করবে। তারা ঐক্যবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে দেশের উন্নয়নে একযোগে কাজ করার অনুপ্রেরণা পাবে। দেশের সংকটকালীন পরিস্থিতিতে সবাই ঐক্যবদ্ধ হয়ে সমস্যা সমাধানের প্রচেষ্টা চালাবে। তারা নিজ দেশের শিক্ষা, সংস্কৃতির লালন করবে এবং এর উত্তরোত্তর উন্নতির জন্য উদ্যোগ গ্রহণ করবে। দেশের গৌরবময় ইতিহাস ঐতিহ্যকে সংরক্ষণ করার চেষ্টা করবে। সর্বোপরি তারা দেশের প্রয়োজনে নিজেদের বিলিয়ে দেওয়ার মানসিক শক্তি লাভ করবে। সুতরাং বলা যায়, রাজুর অনুভূতি তরুণ প্রজন্মকে দেশপ্রেমের চেতনায় উদ্বুদ্ধ করে উন্নত ও আদর্শ জাতি গঠনে প্রেরণা দেবে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত মানুষেরা ঐক্যবোধের চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে সমবেতভাবে সংগীত পরিবেশন করায় তাদের মধ্যে জাতীয়তার বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। জাতীয়তা হচ্ছে এমন এক ধরনের অনুভূতি যা কোনো নির্দিষ্ট জনসমষ্টিকে জন্মসূত্রে ঐক্যবদ্ধ করেছে। অর্থাৎ যারা একই বংশ, ভৌগোলিক অবস্থান, ভাষা, সাহিত্য, ঐতিহ্য, আদর্শ, আচার-রীতিনীতি দ্বারা ঐক্যবদ্ধ হয়েছে, তাদের ঐক্যবোধের চেতনাকে জাতীয়তা বলা হয়। উদ্দীপকে বর্ণিত সমবেত মানুষের মধ্যে এই চেতনারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, আড়াই লাখেরও বেশি মানুষ সমবেত হয়ে ঢাকার জাতীয় প্যারেড ময়দানে ২০১৪ সালের ২৬ মার্চ জাতীয় সংগীত পরিবেশন করেছে। এসব মানুষের ভাষা, ইতিহাস, ঐতিহ্য, সংস্কৃতি সব এক। তারা সবাই একই ভৌগোলিক সীমানার মধ্যে বসবাস করে। তাদের মধ্যে ভাবগত ঐক্য রয়েছে। অর্থাৎ তারা সবাই বাংলাদেশি এবং সবাই সমবেতভাবে বাংলাদেশের জাতীয় সংগীত পরিবেশন করছে। প্রকৃতপক্ষে জাতীয়তার বিশেষ কিছু উপাদান রয়েছে, যা একটি জাতিকে ঐক্যবদ্ধ করে। এগুলোর মধ্যে রয়েছে বংশগত ঐক্য, ভৌগোলিক ঐক্য, ধর্মীয় ঐক্য, ভাষা-সাহিত্য-সংস্কৃতির ঐকা, অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক ঐক্য, ভাবগত ঐক্য প্রভৃতি। উদ্দীপকে বর্ণিত মানুষের মধ্যে এসব উপাদানের অধিকাংশ ক্ষেত্রেই ঐক্যবোধ পরিলক্ষিত হয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত সম্মিলিতভাবে সংগীত পরিবেশন জাতীয়তারই বহিঃপ্রকাশ।

৩. ভারতবর্ষে এমন এক জনগোষ্ঠী ছিল, যারা বাংলা ভাষার মাধ্যমে মনের ভাব প্রকাশ করত। তাদের মধ্যে আচার-আচরণ ও রাজনৈতিক চেতনায় সাদৃশ্য ছিল। তাই তারা নিজেদেরকে অন্য জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা মনে করে। পরবর্তীতে এক রক্তাক্ত বিপ্লবের মাধ্যমে তারা স্বাধীনতা লাভ করে।
ক. আধুনিক রাজনীতির প্রধান শক্তি কী?
খ. দেশপ্রেম বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে জাতীয়তার কোন উপাদানটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'একটি জনগোষ্ঠী নিজেদেরকে অন্য একটি জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা ভাবে'। -উক্তিটি কীসের পরিচয় বহন করে? বিশ্লেষণ করো।

◈ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. আধুনিক রাজনীতির প্রধান শক্তি হলো রাজনৈতিক দল।

খ. দেশের প্রতি মমত্ববোধ, অকৃত্রিম ভালোবাসা, আবেগ ও অনুভূতিকেই দেশপ্রেম বলা হয়। দেশের মানুষ, ভাষা ও সংস্কৃতির প্রতি ভালোবাসা এবং মাটি, সম্পদ, পরিবেশ ও প্রতিবেশের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা এসব কিছুই দেশপ্রেমের অংশ। দেশ ঠিক মায়ের মতোই। জন্মভূমির থেকে বড় কিছু নাই। নিজের দেশের জন্য একজন নাগরিক তাই প্রাণ দিতেও কুণ্ঠাবোধ করে না। নিজের দেশের প্রতি ভালোবাসার এই আবেগ ও অনুভূতিকেই বলে দেশাত্মবোধ, স্বদেশপ্রেম বা দেশপ্রেম। দেশের মাটি ও মানুষকে আপন করে ভাষার অনুভূতিই হলো দেশপ্রেম।

গ. উদ্দীপকে জাতীয়তার সাংস্কৃতিক ঐক্য উপাদানটি মুখ্য ভূমিকা পালন করে।
ভাষা হলো মানুষের মনের ভাব প্রকাশের প্রধান বাহন। কোনো জনসমষ্টির সকল মানুষের ভাষা যদি একই হয় এবং তাদের সাহিত্যও যদি এক হয় তাহলে স্বভাবতই তারা নিজেদের মধ্যে দৃঢ় ঐক্য অনুভব করে এবং তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি হয়। এছাড়া একই জনসমষ্টির মধ্যে একই ধরনের আচরণ ও রীতি-নীতি গড়ে উঠলে তারা নিজেদেরকে অন্য জনসমষ্টি থেকে স্বতন্ত্র মনে করে। আচরণ ও রীতি-নীতি গড়ে উঠলে তারা। নিজেদেরকে অন্য জনসমষ্টি থেকে স্বতন্ত্র মনে করে। আচরণ ও রীতি নীতিগত এ ঐক্য জনসমষ্টিকে ঐক্যের বন্ধনে আবদ্ধ করে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে। উদ্দীপকে এ বিষয়েরই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে। উদ্দীপকে উল্লিখিত জনগোষ্ঠী একই ভাষায় মনের ভাব প্রকাশ করত। তাদের মধ্যে আচার-আচরণ ও রাজনৈতিক চেতনারও সাদৃশ্য ছিল। ফলে তারা নিজেদেরকে অন্য জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা মনে করে এবং রক্তাক্ত সংগ্রামের মাধ্যমে স্বাধীনতা লাভ করে। এখানে মূলত জাতীয়তার আচরণ ও রীতি-নীতিগত ঐক্য উপাদানটির প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. একটি জনগোষ্ঠী নিজেদেরকে অন্য একটি জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা ভাবে- উদ্দীপকের এ উক্তিটি জাতীয়তার পরিচয় বহন করে। 
জাতীয়তা হচ্ছে এক ধরনের মানসিক ধারণা, চেতনা, মনন ও চিন্তার এক অবস্থা যা কোনো জনগোষ্ঠীকে ঐক্যবদ্ধ করে। অন্যভাবে বলা যায়, জাতীয়তা একটি মানসিক ধারণা বা মানসিক ঐক্যানুভূতি। যখন কোনো জনসমষ্টি একই ভৌগোলিক সীমানায় বসবাস করে তখন তাদের মধ্যে বিভিন্ন ধরনের যেমন; ভাষা, কৃষ্টি, সভ্যতা, আচার, ব্যবহার প্রভৃতির মিল থাকার কারণে নিজেদের মধ্যে একটা ঐক্যবোধ গড়ে় ওঠে এবং স্বাভাবিকভাবেই তারা নিজেদেরকে এক করে ভাবে। উদ্দীপকে বলা হয়েছে, ভারতবর্ষের একটি জনগোষ্ঠীর মধ্যে আচার আচরণগত ও রাজনৈতিক চেতনায় সাদৃশ্য রয়েছে। তাই তারা নিজেদেরকে অন্য জাতি গোষ্ঠী থেকে আলাদা মনে করে। যখন কোনো জনসমষ্টি নিজেদেরকে ঐক্যের বন্ধনে এক করে বেঁধে একাত্মতা প্রকাশ করে এবং নিজেদেরকে অন্যদের থেকে আলাদা ভাবে, তখনই বুঝতে হবে ঐ জনসমষ্টির মধ্যে জাতীয়তাবোধের জন্ম হয়েছে। লর্ড ব্রাইস বলেছেন, ‘‘জাতীয়তা হলো ভাষা, সাহিত্য, ধ্যান-ধারণা, প্রথা এবং ঐতিহ্যের বন্ধনে ঐক্যবদ্ধ এক জনসমষ্টি, যা অনুরূপভাবে ঐক্যবদ্ধ অন্যান্য জনসমষ্টি থেকে নিজেদের পৃথক মনে করে।" উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে প্রতীয়মান হয়, একটি জনগোষ্ঠী যখন নিজেদেরকে অন্য একটি জনগোষ্ঠী থেকে আলাদা ভাবে তখন তাদের মধ্যে জাতীয়তা গড়ে ওঠে। আর এ প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকের উক্তিটির মধ্যে জাতীয়তারই বহিঃপ্রকাশ ঘটেছে।

৪. ১৯৫২ সালে শহীদ সালাম, বরকত, জববার, রফিকসহ অনেকে ভাষার জন্য আত্মত্যাগ করেছেন। এই চেতনাতেই দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এ অঞ্চলের মানুষ স্বাধীনতার আন্দোলনে ঝাঁপিয়ে পড়ে ও ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ নামক স্বাধীন রাষ্ট্রের জন্ম হয়।
ক. 'সামাজিক চুক্তি' গ্রন্থটির লেখক কে?
খ. জনমত বলতে কী বোঝ?
গ. জাতি ও জাতীয়তার মধ্যে পার্থক্য লিখ।
ঘ. জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি জাতিরাষ্ট্র গঠন করেছিল বিশ্লেষণ করো।

◈ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. ‘সামাজিক চুক্তি' গ্রন্থটির লেখক জ্যাঁ জ্যাক রুশো।

খ. সাধারণ অর্থে 'জনমত' হলো জনগণের বেশির ভাগ অংশের মতামত। এ অর্থে কোনো বিষয়ে সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতের সমষ্টিকে জনমত বলে। তবে পৌরনীতি ও সুশাসনে জনমতের অর্থ সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণের মতামতকে বোঝায় না, এর অর্থ একটু ভিন্নতর। এখানে সমাজের প্রভাবশালী, যৌক্তিক, স্পষ্ট, কল্যাণকামী মতামতকে জনমত বলা হয়। লর্ড ব্লাইস বলেছেন, "জনমত হলো সম্প্রদায়ের স্বার্থসংশ্লিষ্ট বিষয়ে জনগণের অভিমতের সমষ্টি।" জে. এস. মিল বলেছেন, ‘‘কোনো নির্দিষ্ট জাতীয় সমস্যার ওপর জনগণের সংগঠিত অভিমতের নাম জনমত।

গ. জাতি ও জাতীয়তা এক বিষয় নয়। উভয়ের মধ্যে বহুবিধ পার্থক্য বিদ্যমান। যথা-
প্রথমত: জাতি গঠনের জন্য প্রয়োজন হয় জাতীয়তাবোধ ও স্বাধীনতা। অপরদিকে, জাতীয়তা গঠনের জন্য কতগুলো সাধারণ বিষয়বস্তুর মিল থাকতে হয়। যেমন- ধর্ম, বংশ, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি ইত্যাদি। 
দ্বিতীয়ত: জাতি একটি বাস্তব ও সক্রিয় রাজনৈতিক চেতনা। অন্যদিকে, জাতীয়তা একটি মানসিক ধারণা ও আধ্যাত্মিক চেতনা।
তৃতীয়ত: জাতি অধিকমাত্রায় সুসংহত এবং স্বাধীন ও সার্বভৌম। কিন্তু, জাতীয়তা খুব বেশি সুসংহত নয়। 
চতুর্থত: জাতি গঠনের জন্য রাজনৈতিক সংগঠন অপরিহার্য। অপরদিকে, জাতীয়তা গঠনে কোনো রাজনৈতিক সংগঠনের প্রয়োজন হয় না। 
পঞ্চমত: জাতি হচ্ছে জাতীয়তার পরিণতি বা চূড়ান্ত পর্যায়। অন্যদিকে, জাতীয়তা অধিকাংশ ক্ষেত্রে জাতি গঠনের প্রাথমিক অবস্থা বা পর্যায়। এ থেকেই বোঝা যায়, জাতি ও জাতীয়তার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।

ঘ. জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি জাতিরাষ্ট্র গঠন করেছিল- উক্তিটি যথার্থ। 
বাঙালি জাতীয়তাবাদের উন্মেষ ঘটেছিল ভাষা আন্দোলনকে কেন্দ্র করে। এ আন্দোলনের ফলে নিজস্ব জাতিসত্তা সৃষ্টিতে ভাষা ও সংস্কৃতির সম্পর্ক ও গুরুত্ব পূর্ব বাংলার মানুষের কাছে অধিকতর স্পষ্ট হয়ে ওঠে। বাঙালি নিজেদের আত্মপরিচয়ে রাজনীতি, অর্থনীতি, শিক্ষা, সংস্কৃতি গড়ে তোলার গুরুত্ব উপলব্ধি করতে থাকে। ভাষাকেন্দ্রিক এই ঐক্যই বাঙালি জাতীয়তাবাদের ভিত্তি রচনা করে, যা পরবর্তীতে স্বাধীন বাংলাদেশ প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।
বাঙালি জাতীয়তাবাদের ওপর ভিত্তি করেই পরবর্তীতে আন্দোলন পরিচালিত হয়। ১৯৫৪ সালের নির্বাচনে যুক্তফ্রন্টের জয়লাভ, ১৯৬২ সালের শিক্ষা আন্দোলন, ১৯৬৬ সালের ৬ দফা, সংগ্রামী ছাত্র সমাজের ১১ দফা, ১৯৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান, ১৯৭০ সালের নির্বাচনে আওয়ামী লীগের বিশাল বিজয়, ১৯৭১ সালের অসহযোগ আন্দোলন, ৭ মার্চের ভাষণ, বঙ্গবন্ধু কর্তৃক স্বাধীনতা ঘোষণা এবং সর্বশেষ সুদীর্ঘ ৯ মাসের রক্তক্ষয়ী যুদ্ধের মাধ্যমে স্বাধীনতা অর্জন, এসব কিছুর পেছনে মূল শক্তি হিসেবে কাজ করেছে বাঙালি জাতীয়তাবাদ। বাঙালি জাতীয়তাবাদে উজ্জীবিত বাংলার জনগণ প্রতিটি আন্দোলনকে সক্রিয় অংশগ্রহণের মাধ্যমে সফল করেছে। গঠন করেছে একটি নতুন জাতিরাষ্ট্র 'বাংলাদেশ'। সুতরাং বলা যায়, ইতিহাস থেকে প্রমাণিত যে, জাতীয়তাবাদী আন্দোলনের মাধ্যমে বাংলাদেশ একটি জাতি রাষ্ট্র গঠন করেছিল।

৫. অধ্যাপক স্পেংগলার-এর মতে ‘জাতীয়তার উপাদান বংশগত বা ভাষাগত ঐক্য নয় বরং তা ভাবগত ঐক্য’।
ক. জাতীয় রাষ্ট্র কী? 
খ. জাতি ও জাতীয়তার মধ্যে পার্থক্য নির্ণয় করো।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত জাতীয়তার উপাদান ব্যতীত অন্য উপাদানগুলো আলোচনা করো।
ঘ. তুমি কি অধ্যাপক স্পেংগলার এর সাথে একমত? মতের সপক্ষে যুক্তি দাও।

◈ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. সুনির্দিষ্ট ভূখন্ডে জাতীয়তার ভিত্তিতে গঠিত স্বাধীন ও সার্বভৌম রাষ্ট্রকে জাতীয় রাষ্ট্র বলে।

খ. জাতি ও জাতীয়তার মধ্যে সুস্পষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান। জাতি বলতে বোঝায় এমন এক রাজনৈতিক চেতনাসম্পন্ন জনসমাজ যারা একটি স্বাধীন রাষ্ট্রের অধিবাসী। অন্যদিকে, কোনো জনসমাজের মধ্যে যখন রাজনৈতিক চেতনার সঞ্চার হয় তখন তকে জাতীয়তা বলে। অর্থাৎ জাতি গঠনের ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের সংগঠন থাকা অপরিহার্য, কিন্তু জাতীয়তার ক্ষেত্রে রাষ্ট্রের প্রয়োজন নেই। জাতি গঠনের পূর্বশর্ত হলো জাতীয়তাবোধ ও স্বাধীনতা। কিন্তু জাতীয়তা গঠনে স্বাধীনতার প্রয়োজন নেই, বরং মানসিক ঐক্যানুভূতি, অভিন্ন ভাষা-সংস্কৃতি ও ইতিহাস ঐতিহ্য থাকা প্রয়োজন।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখ করা হয়েছে, অধ্যাপক স্পেংগলার- এর মতে, জাতীয়তার উপাদান বংশগত বা ভাষাগত ঐক্য নয়; বরং তা ভাবগত ঐক্য। অর্থাৎ, এখানে জাতীয়তার উপাদান হিসেবে বংশগত ও ভাষাগত ঐক্যকে বাদ দিয়ে কেবল ভাবগত ঐক্যের প্রতি নির্দেশ করা হয়েছে। কিন্তু রাষ্ট্রবিজ্ঞানীরা ভাবগত ঐক্যের বাইরেও জাতীয়তার আরও কিছু গুরুত্বপূর্ণ উপাদানের কথা উল্লেখ করেছেন। যেমন-
ভৌগোলিক ঐক্য জাতীয়তার অন্যতম উপাদান। জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হতে এবং জাতি গঠন করতে হলে একটি জনসমষ্টিকে কোনো একটি নির্দিষ্ট ভূখন্ডে বসবাস করতে হয়। ইতিহাস ও ঐতিহ্যগত ঐক্য জাতীয়তার অন্যতম উপাদান। একই প্রথা, রীতিনীতি, ইতিহাস ও ঐতিহ্য জনগণকে ঘনিষ্ঠ ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ করে এবং তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের সৃষ্টি করে। ধর্মীয় ঐক্য জাতীয়তার আরেকটি উপাদান। ১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে 'ভারত' ও 'পাকিস্তান' নামক দুটি আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পেছনে ধর্মীয় ঐক্য প্রাধান্য পেয়েছিল। অর্থনৈতিক বন্ধনও জাতীয়তার আরেকটি উপাদান। অর্থনৈতিক সমস্বার্থের মাধ্যমে কোনো নির্দিষ্ট এলাকায় বসবাসকারী মানুষের মধ্যে ঐক্যের পরিবেশ গড়ে ওঠে। ঐতিহ্যগত ঐক্যও জাতীয়তার আরেকটি উপাদান। দীর্ঘদিন একটি ভূখন্ডে বসবাস করলে জনসমাজের মধ্যে ইতিহাস, কৃষ্টি ও সংস্কৃতির ক্ষেত্রে সমন্বয় সাধনের ফলে ঐতিহ্যগত ঐক্য গড়ে ওঠে। এছাড়া রাজনৈতিক ঐক্য, সমস্বার্থ ইত্যাদিও জাতীয়তা গঠনে সহায়ক ভূমিকা পালন করে। 
পরিশেষে বলা যায়, জাতীয়তার উপাদান হিসেবে উদ্দীপকে বর্ণিত ভাবগত ঐক্যের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। তবে কোনো জনসমষ্টিকে ঐক্যবদ্ধ ও জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করতে অন্য উপাদানগুলোও তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে বর্ণিত অধ্যাপক স্পেংগলারের বক্তব্যের সাথে আমি একমত। 
যা কিছু কোনো জনসমাজকে ঐক্যবদ্ধ ও জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ করে সেগুলোকে জাতীয়তার উপাদান বলে। জাতীয়তার অনেক উপাদান রয়েছে। তবে কোনো জনসমষ্টির মধ্যে জাতীয়তার ভাব সৃষ্টি ও জাতি গঠনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক উপাদান হলো ভাবগত ঐক্য।
জাতীয়তা একটি মানসিক ধারণা। ভাষাগত বা বংশগত দিক থেকে ঐক্য বা মিল না থাকলেও কেবল ভাবগত ঐক্যের ভিত্তিতে কোনো জনসমষ্টির মধ্যে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি হতে পারে। তাই অধ্যাপক স্পেংগলার এর ওপর অত্যধিক গুরুত্বারোপ করেছেন। কোনো জনসমষ্টির মধ্যে এ ধরনের ঐক্য সৃষ্টি হলেই তারা জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ জনসমাজে পরিণত হয়। জাতীয়তার মৌলিক উপাদান ভাবগত ঐক্য হলেও জাতীয়তাবোধ সৃষ্টির পেছনে উদ্দীপকে উল্লিখিত অন্য দুটি উপাদানের ভূমিকাও কম নয়। জার্মান দার্শনিক অধ্যাপক স্পেংগলার-এর মতে, জাতীয়তার উপাদান বংশগত বা ভাষাগত ঐক্য নয়, বরং তা ভাবগত ঐক্য। তবে বংশগত ও ভাষাগত ঐকা মূলত ভাৰগত ঐক্য সৃষ্টিতে সহায়তা করে। এর ফলে জনসমষ্টির মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়।
ওপরের আলোচনা সাপেক্ষে বলা যায়, বংশগত ও ভাষাগত ঐক জাতীয়তার দুটি উপাদান হলেও জাতীয়তাবোধ সৃষ্টির পেছনে মূল উপাদান হিসেবে কাজ করে ভাবগত ঐক্য। বংশগত ও ভাষাগত ঐক্য মূলত ভাবগত ঐক্য সৃষ্টির মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে সাহায্য করে। তাই উদ্দীপকে বর্ণিত অধ্যাপক স্পেংগলারের বক্তব্যের সাথে আমি একমত পোষণ করছি।

৬. সুদানের একটি অংশ ছিল দক্ষিণ সুদান। দক্ষিণ সুদানের জনগণ অধিকাংশই খ্রিস্টান। আর উত্তর সুদানসহ সমগ্র সুদানে মুসলিমরা সংখ্যাগরিষ্ঠ। দক্ষিণ সুদানের জনগণ আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি করে। অনেক সংঘাত ও দ্বন্দ্ব শেষে জাতিসংঘের উদ্যোগে গণভোট অনুষ্ঠিত হয়। জনগণ আলাদা রাষ্ট্র গঠনের পক্ষে মত দিলে সুদান সরকার তা মেনে নেয়। দক্ষিণ সুদান আলাদা রাষ্ট্র হিসেবে আত্মপ্রকাশ করে এবং জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে।
ক. জাতীয়তার প্রধান উপাদান কোনটি?
খ. জাতীয়তা কখন জাতিতে পরিণত হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা লাভে কোন উপাদানটি কাজ।? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দক্ষিণ সুদানের রাষ্ট্র গঠনে যে উপাদানটি কাজ করেছে তার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।

◈ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. জাতীয়তার প্রধান উপাদান হলো মানসিক বা ভাবগত ঐক্য।

খ. জাতীয়তা তখনই জাতিতে পরিণত হয়, যখন একটি জনসমাজ রাজনৈতিকভাবে সংগঠিত হয়ে স্বাধীনতা লাভ করে।
জাতীয়তা হচ্ছে মনন ও চিন্তার এমন এক অবস্থা যা কোনো জনসমষ্টিকে অন্য জনসমষ্টি থেকে আলাদা করে এবং নিজেদের মধ্যে ঐক্য তৈরি করে। জাতীয়তা থেকে জাতিতে পরিণত হওয়া মানে পরাধীনতার শৃঙ্খল ভেঙে স্বাধীনতা লাভ করা। এভাবেই জাতীয়তা থেকে জাতির সৃষ্টি হয়।

গ. দক্ষিণ সুদানের স্বাধীনতা লাভে ধর্মীয় ঐক্য উপাদানটি কাজ করেছে। ধর্মীয় ঐক্য জাতীয়তার একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হিসেবে কাজ করে। প্রাচীন ও মধ্যযুগে ধর্মীয় ঐক্য জাতি গঠনের অন্যতম উপাদান বলে বিবেচিত হতো। জাতীয় ভাবধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে ও তা জোরদার করতে ধর্মীয় ঐক্য সাহায্য করে। আবার একই ধর্মাবলম্বী ব্যক্তিবর্গের মধ্যে সহজেই ঐক্য গড়ে ওঠে।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, দক্ষিণ সুদানের অধিকাংশ জনগণই খ্রিষ্টান। তারা সুদান সরকারের নিকট আলাদা রাষ্ট্র গঠনের দাবি করে। অনেক দ্বন্দ্ব ও সংঘাত শেষে জাতিসংঘের উদ্যোগে যে গণভোট অনুষ্ঠিত হয় তাতে দক্ষিণ সুদানের আলাদা রাষ্ট্র গঠনের ব্যাপারে জনগণ মত দেয়।
জনগণের এই মতামতের ভিত্তিতে দক্ষিণ সুদান স্বাধীন রাষ্ট্রে পরিণত হয় এবং জাতিসংঘের সদস্যপদ লাভ করে। এখানে দেখা যাচ্ছে, কেবল ধর্মের ভিত্তিতেই দক্ষিণ সুদানের জনগণ নিজেদের একত্রিত করেছে এবং নিজেদের স্বাধীন রাষ্ট্রের দাবি জাতিসংঘের মাধ্যমে আদায় করেছে। তাই বলা যায়, দক্ষিণ সুদানের রাষ্ট্র গঠনে ধর্মীয় ঐক্য উপাদানটি ভূমিকা রেখেছে।

ঘ. দক্ষিণ সুদানের রাষ্ট্র গঠনে ধর্মীয় ঐক্য কাজ করেছে, যার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।
একই ধর্মাবলম্বীদের সাংস্কৃতিক ঐক্য থাকায় তাদের মধ্যে সহজেই একতা সৃষ্টি হয়। একই ধরনের আচার-অনুষ্ঠান পালনের মাধ্যমে জনগণের মধ্যে নৈকট্য বৃদ্ধি পায়। ফলে জাতীয়তা গঠন সহজ হয়। জাতীয়তার বিভিন্ন উপাদান রয়েছে। বংশগত ঐক্য, ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্য, ধর্মীয় ঐক্য, ভাবগত ঐক্য, ভৌগোলিক ঐক্য প্রভৃতি.। ধর্মীয় ঐক্য জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
১৯৪৭ সালে ভারতবর্ষ বিভক্ত হয়ে পাকিস্তান ও ভারত নামক দুটি রাষ্ট্র তৈরির ক্ষেত্রে ধর্মীয় অনুভূতি প্রধান ভূমিকা পালন করেছিল। ইহুদিরা ধর্মের প্রভাবে জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ হয়ে ইসরায়েল জাতীয় রাষ্ট্র গঠন করে। বর্তমানে ধর্মের ক্ষেত্রে উদারনীতি গৃহীত হওয়ায় এবং ধর্ম নিরপেক্ষতার ভাব জাগ্রত হওয়ায় ধর্মের ঐক্য আর জাতীয়তার অপরিহার্য উপাদান হিসেবে গণ্য হয় না। যেমন- পাকিস্তান ও বাংলাদেশের অধিকাংশ জনসমষ্টি ইসলাম ধর্মাবলম্বী হওয়া সত্ত্বেও তারা দুটি স্বতন্ত্র জাতি। আবার চীন, ভারত প্রভৃতি রাষ্ট্রের জনগণ বহু ধর্মে বিশ্বাসী হলেও তারা এক একটি জাতি। আবার আরব রাষ্ট্রসমূহে ধর্মীয় ঐক্য থাকলেও তারা ভিন্ন ভিন্ন রাষ্ট্রে বসবাস করছে।
উল্লিখিত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, জাতীয় ভাবধারা অক্ষুণ্ণ রাখতে ধর্মীয় ঐক্যের ভূমিকা এক সময় তাৎপর্যপূর্ণ হিসেবে বিবেচিত হলেও বর্তমানে ক্রমশ উপাদানটির গুরুত্ব কমে আসছে।

HSC পৌরনীতি ও সুশাসন ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১০ pdf download

৭. নাফিজ ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র। মানুষের নিপীড়ন তাকে দুঃখ দেয়। যখন শত্রুরা ১২০০ মাইল দূর হতে এসে অসহায় মানুষকে আক্রমণ করে, তখন সে শপথ করে "আমি দেশকে মুক্ত করবো।" তাই মাতৃভাষাকে বাঁচাতে, অর্থনৈতিক শোষণ দূর করতে সে যুদ্ধক্ষেত্রে গেল। দেশ স্বাধীন হলো কিন্তু নাফিজ তার মায়ের কাছে ফিরে এলো না।
ক. দেশপ্রেম কী?
খ. বংশগত ঐক্য বলতে কী বোঝায়? 
গ. উদ্দীপকে জাতীয়তার কোন কোন উপাদান কার্যকর ছিল? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপতে বর্ণিত নাফিজের আত্মত্যাগের কারণটির সাথে জাতীয়তার সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

◈ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. মাতৃভূমির প্রতি মমত্ববোধ, আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম।

খ. জাতি গঠনের অন্যতম একটি উপাদান হলো বংশগত ঐক্য। যখন কোনো জনসমাজের অন্তর্গত প্রায় সকল লোকই নিজেদেরকে এক বংশোদ্ভূত বলে মনে করে তখন তাদের মধ্যে যে একাত্ববোধের সৃষ্টি হয় তাকে বংশগত ঐক্য বলা হয়। বর্তমান সময়ে বংশগত ঐক্যকে জাতি গঠনের ক্ষেত্রে খুব গুরুত্বপূর্ণ উপাদান বলে মনে করা হয় না।

গ. উদ্দীপকে জাতীয়তার তিনটি উপাদান তথা- ১. ভৌগোলিক ঐক্য এবং 
২. ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐকা ৩. অর্থনৈতিক ঐক্য কার্যকর ছিল। এ উপাদানগুলো সম্পর্কে নিম্নে আলোচনা করা হলো।
১. ভৌগোলিক ঐক্য: ভৌগোলিক ঐক্য জাতীয়তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। জাতি গঠন করতে হলে একটি জনসমষ্টিকে কোনো নির্দিষ্ট ও সংলগ্ন ভূখন্ডে বসবাস করতে হয়। জাতীয়তার অন্যান্য বৈশিষ্ট্যের অধিকারী হওয়া সত্ত্বেও কেবল ভৌগোলিক ঐক্যের অভাবে একটি ভবঘুরে জনসমষ্টি জাতি বলে পরিগণিত হতে পারে না।
২. ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্য: যখন কোনো জনসমাজের অন্তর্গত প্রায় সকল লোক একই ভাষায় কথা বলে এবং একই সাহিত্য তাঁদেরকে সমভাবে আকৃষ্ট ও অনুপ্রাণিত করে তখন তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধ গড়ে ওঠে।
৩. অর্থনৈতিক ঐক্য: অর্থনৈতিক ঐক্যও জনগণকে জাতীয়তাবোধে অনুপ্রাণিত করে। অর্থনৈতিক দিক হতে যখন জনগণের মধ্যে সমতা বিরাজ করে তখন তারা একত্রে বসবাস করার মন্ত্রে উদ্বুদ্ধ হয়। সকল জনগণের অর্থনৈতিক স্বার্থ যখন এক ও অভিন্ন হয় তখন তাদের মধ্যে জাতীয়তার বন্ধন সুদৃঢ় হয়ে ওঠে। 
উদ্দীপকে আমরা দেখতে পাই শত্রুরা ১২০০ মাইল দূর থেকে এসে নাফিজের দেশকে আক্রমণ করে। সে তার মাতৃভূমিকে বাঁচাতে, অর্থনৈতিক শোষণ দূর করতে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করে। জাতীয়তাবাদের তিনটি উপাদান তথা ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্য, ভৌগোলিক ঐক্য এবং অর্থনৈতিক ঐক্যই নাফিজকে যুদ্ধে অংশগ্রহণে অনুপ্রাণিত করে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত নাফিজের আত্মত্যাগের কারণ হলো দেশপ্রেম। আর দেশপ্রেমের সাথে জাতীয়তার সম্পর্ক অত্যন্ত গভীর। 
জন্মভূমির মাটি, আলো-বাতাস, অঞ্চলের প্রতি মানুষের মমত্ব অপরিসীম। দেশপ্রেমের এই ধারণা বা অনুভূতি থেকেই জন্ম নেয় জাতীয়তাবোধ। জাতীয়তার ধারণাকে এজন্যই এক প্রকার মানসিক ধারণা বলা হয়। ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ধর্ম, বংশ, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং ভৌগোলিক সান্নিধ্যতার সূত্রে আবদ্ধ জনসমষ্টি যখন নিজেদেরকে অন্য জনসমষ্টি হতে আলাদা মনে করে তখন সেই চেতনাকেই জাতীয়তা বলে। জাতীয়তার ভিত্তিতেই জাতি রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। সাধারণত একটি জাতি রাষ্ট্রের নিজস্ব পতাকা, জাতীয় সংগীত এবং অভিন্ন জাতীয় লক্ষ্য থাকে। 
দেশপ্রেম মানুষের অন্তরে সদা বহমান। তবে বিশেষ বিশেষ সময়ে বা পরিস্থিতিতে তা আবেগে উদ্বেলিত হয়ে ওঠে। যুগে যুগে জাতীয়তাবাদী নেতাদের অনেকেই তাদের সুযোগ্য নেতৃত্ব দিয়ে জাতিরাষ্ট্র গঠন করেছেন। আবার কেউ কেউ নিজ রাষ্ট্রকে গতিশীল নেতৃত্ব প্রদান করে বিশ্ব দরবারে সুমহান মর্যাদার আসনে প্রতিষ্ঠিত করেছেন। জাতীয়তার চেতনা ও দেশপ্রেমের জন্যই মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের জর্জ ওয়াশিংটন, আব্রাহাম লিংকন, রাশিয়ার লেনিন, চীনের মাও সেতুং, ভিয়েতনামের হো চি মিন, তুরস্কের মোস্তফা কামাল পাশা, কিউবার ফিদেল কাস্ত্রো প্রমুখ রচনা করেছেন দেশপ্রেমের অমরগাঁথা। পরিশেষে বলা যায়, জাতীয়তা ও দেশপ্রেমের সম্পর্ক অত্যন্ত নিবিড়। দেশপ্রেমের মূলেই রয়েছে জাতীয়তার চেতনা। এর উৎকৃষ্ট উদাহরণ হলো উদ্দীপকের নাফিজ।

৮. জাতীয়তা + রাজনৈতিক সংগঠন = জাতি
জাতি + রাজনৈতিক সংগঠন = ?
ক. দেশপ্রেম কী?
খ. মনস্তাত্ত্বিক ঐক্য বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে প্রশ্নচিহ্নিত '?' স্থানে কী বসবে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. প্রশ্নচিহ্নিত বিষয়টির সাথে জাতির সম্পর্ক নিরূপণ করো।

◈ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. মাতৃভূমির প্রতি মমত্ববোধ, আবেগ, অনুভূতি ও ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম।

খ. জাতীয়তাবোধ গঠনের সর্বাপেক্ষা গুরুত্বপূর্ণ ও মৌলিক উপাদান হলো মনস্তাত্ত্বিক ঐক্য।
রাষ্ট্রবিজ্ঞানে মনস্তাত্ত্বিক ঐক্য বলতে এমন এক ঐক্যকে বোঝায় যেখানে জাতিভুক্ত জনগণের ভাষ্য, কৃষ্টি, ধর্ম ইত্যাদি ভিন্ন হলেও শুধুমাত্র মানসিক চেতনার বলে জনগণ একতাবদ্ধ হয়। মনস্তাত্ত্বিক ঐক্য মানব মনে এমন এক বোধের জন্ম দেয়, যার ফলে জনগণ ভাবতে শেখে যে, ভাষা, ধর্ম, কৃষ্টি যার যাই থাকুক না কেন স্বীয় অধিকার আদায়ই বড় কথা। এর ওপর ভিত্তি করে জনগণ অধিকার সচেতন হয়। এ ঐক্য জাতীয়তাবোধ সৃষ্টিতে সহায়তা করে।

গ. উদ্দীপকে প্রশ্নচিহ্নিত স্থানে জাতীয়তা বসবে। 
পৌরনীতি ও সুশাসনের দৃষ্টিকোণ থেকে জাতীয়তা হচ্ছে এক ধরনের চেতনা ও মানসিক অনুভূতি। একই বংশ, ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং ভৌগোলিক এলাকার ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ জনসমষ্টি যখন নিজেদেরকে অন্য জনসমষ্টি হতে আলাদা মনে করে তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের একাত্মবোধ গড়ে ওঠে। এই একাত্মবোধের প্রকাশই হলো জাতীয়তা সহজ কথায় কোনো জনসমাজের মধ্যে যখন রাজনৈতিক চেতনার উদ্ভব হয় তখন তাকে জাতীয়তা বলে। জাতীয়তা সম্পূর্ণরূপে একটি মানসিক ধারণা। আর জাতি হলো বাস্তব ও সক্রিয় চেতনা। জাতি গঠনের প্রারম্ভিক ধাপ হলো জাতীয়তার চেতনা। জাতীয়তার চেতনাসম্পন্ন জনগোষ্ঠী রাজনৈতিক সংগঠনের আশ্রয়ে ঐক্যবন্ধ হলেই কেবল জাতি গঠিত হয়। অর্থাৎ, রাজনৈতিক সংগঠন ছাড়া কোনো জনগোষ্ঠী জাতিতে পরিণত হতে পারে না, জাতীয়তার ধারণাতেই তারা আবদ্ধ থাকে।
পরিশেষে বলা যায় যে, সংঘবন্ধ গোষ্ঠীর বা জাতির আশা-আকাঙ্ক্ষাকে যখন কোনো সংগঠন রাজনৈতিক রূপ দান করে তখন তা হয় জাতি। আর তাই উদ্দীপকে জাতির সাথে রাজনৈতিক সংগঠনের মিলনে জাতীয়তা রূপটি বসা যৌক্তিক।

ঘ. প্রশ্নচিহ্নিত বিষয়টি হলো জাতীয়তা। জাতীয়তার সাথে জাতির সম্পর্ক ওতপ্রোতভাবে জড়িত। জাতীয়তা হচ্ছে জাতি গঠনের প্রাথমিক পর্যায় বা অবস্থা। আর জাতি হচ্ছে জাতি গঠন প্রক্রিয়ার সর্বোচ্চ ও সর্বশেষ পর্যায়। তাই জাতি ও জাতীয়তার সম্পর্ক ঘনিষ্ঠ।
জাতীয়তা হচ্ছে এক ধরনের চেতনা ও মানসিক অনুভূতি। একই বংশ, ধর্ম, ভাষা, সাহিত্য, সংস্কৃতি, ইতিহাস, ঐতিহ্য এবং ভৌগোলিক এলাকার ঐক্যসূত্রে আবদ্ধ জনসমষ্টি যখন নিজেদেরকে অন্য জনসমষ্টি হতে আলাদা মনে করে তখন তাদের মধ্যে এক ধরনের একাত্মবোধ গড়ে ওঠে। এই একাত্মবোধের প্রকাশই হলো জাতীয়তা। আর জাতীয়তার চেতনা দ্বারা উদ্বুদ্ধ জনসমাজ স্বাধীন হলে তাকে জাতি বলে। জাতীয়তার চেতনা ছাড়া কোনো জাতি গঠিত হতে পারে না। ১৯৪৭ সালে ভারত পাকিস্তানের সৃষ্টি, ১৯৭১ সালে বাংলাদেশের সৃষ্টি, ১৯৭২ সালে দুই পোল্যান্ডের ভাগাভাগি, ১৯৯০ সালে দুই জার্মানির একত্রীকরণ, ২০১১ সালে দক্ষিণ সুদানের সৃষ্টি এসবই জাতীয়তার চেতনালব্ধ ফসল। পরবর্তীতে এসব দেশের জনগণ আলাদা জাতি হিসেবে পরিচিতি লাভ করেছে। এসব দেশের জনগণ যদি জাতীয়তার চেতনায় উদ্বুদ্ধ না হতো তবে তারা আজ আলাদা জাতি হিসেবে স্বীকৃতি পেত না। পরিশেষে বলা যায়, জাতীয়তা ও জাতি একই সূত্রে গাঁথা। কেননা জাতীয়তার চেতনা ছাড়া জাতি গঠিত হতে পারে না।

৯. 'ক' রাষ্ট্রটি পূর্ব ও পশ্চিম অঞ্চলে বিভক্ত। পূর্বাঞ্চলের জনগণ বাংলায় কথা বলত। তারা ঐ দেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগোষ্ঠী। তারা নিজেদেরকে অনেক দিক থেকে পশ্চিম অঞ্চল হতে আলাদা ভাবে। কেন্দ্রীয় সরকার সংখ্যাগরিষ্ঠ মানুষের ভাষাকে অগ্রাহ্য করে অন্য একটি ভাষা তাদের ওপর চাপিয়ে দেয়। ফলে ভাষার দাবি প্রতিষ্ঠা করতে তারা সংগ্রাম করে। পরবর্তীকালে পূর্বাঞ্চলের জনগোষ্ঠী 'ক' দেশ থেকে আলাদা হয়ে নতুন একটি দেশের জন্ম দেয়।
ক. Natio বা Natus শব্দের অর্থ কী? 
খ. জাতি রাষ্ট্র বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' রাষ্ট্রে কোন চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পূর্বাঞ্চলের মানুষ সংগ্রাম করেছিল? ব্যাখ্যা করে। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত উপাদানই জাতীয়তার একমাত্র উপাদান নয়। বিশ্লেষণ করো।

◈ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. ল্যাটিন শব্দ Natio বা Natus এর অর্থ হলো 'Born' অর্থাৎ 'জন্ম'।

খ. জাতীয়তার ভিত্তিতে সৃষ্ট রাষ্টই হচ্ছে জাতি রাষ্ট। সুনির্দিষ্ট ভূ-খন্ডে স্বশাসনের লক্ষ্যে জাতি রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটে। জাতীয়তাবোধে উদ্বুদ্ধ জনসমষ্টি যখন অন্যদের থেকে নিজেদের স্বতন্ত্র মনে করে এবং এজন্য স্বাধীন হতে চায় বা স্বাধীনতা অর্জন করে তখন সেই রাষ্ট্রকেই জাতি রাষ্ট্র বলে। বিপুল জনসংখ্যা ও বিশাল আয়তন হচ্ছে জাতি রাষ্ট্রের বৈশিষ্ট্য। সাধারণত জাতি রাষ্ট্রের নিজস্ব পতাকা, জাতীয় সঙ্গীত এবং অভিন্ন জাতীয় লক্ষ্য থাকে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত 'ক' রাষ্ট্রে জাতীয়তার চেতনায় উদ্বুদ্ধ হয়ে পূর্বাঞ্চলের মানুষ সংগ্রাম করেছিল। 
জাতীয়তা হলো ভাষা ও সাহিত্য, চিন্তা, প্রথা ও ঐতিহ্যের বন্ধনে আবদ্ধ এক জনসমষ্টি, যা অনুরূপ বন্ধনে আবদ্ধ অন্যান্য জনসমষ্টিকে নিজেদের থেকে পৃথক মনে করে। জাতীয়তার মহান আদর্শ বিশ্বের নির্যাতিত ও নিপীড়িত মানুষকে মুক্তি সংগ্রামে উদ্বুদ্ধ করেছে। জাতীয়তার অনুঘটক হিসেবে দেশপ্রেম মানুষকে ব্যক্তিগত সংকীর্ণতার ঊর্ধ্বে উঠে দেশ গঠনের আত্মপ্রত্যয়ে বলীয়ান করেছে।
উদ্দীপকে দেখা যাচ্ছে, 'ক' রাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের জনগণ পশ্চিমাঞ্চলের জনগণ থেকে বিভিন্ন দিক দিয়ে আলাদা এবং তারাই দেশটিতে সংখ্যাগরিষ্ঠ। কিন্তু পশ্চিমাঞ্চলে কেন্দ্রীয় সরকার থাকায় তারা পূর্বাঞ্চলের মানুষের ওপর নানাভাবে অত্যাচার করত। এক পর্যায়ে তারা যখন পূর্বাঞ্চলের জনগণের ভাষার ওপর হস্তক্ষেপ করে তখন বিক্ষুদ্ধ জনতা আন্দোলন করে। যার পরবর্তী ফল হচ্ছে পূর্বাঞ্চলের মানুষের একটি স্বাধীন রাষ্ট্র লাভ। সুতরাং বলা যায়, 'ক' রাষ্ট্রের পূর্বাঞ্চলের জনগণের সংগ্রামের ঘটনাটি জাতীয়তার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত উপস্থাপন করেছে।

ঘ. উদ্দীপকে জাতীয়তার ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্যের কথা বলা হয়েছে। এই উপাদান ছাড়াও জাতীয়তার আরোও উপাদান আছে। যেমন- 
জাতীয়তার অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হলো ভৌগোলিক ঐক্য। একই ভূখন্ডে বহুদিন ধরে যদি কোনো জনসমষ্টি বাস করতে থাকে, তবে তাদের মধ্যে গভীর ঐক্যবোধ গড়ে ওঠে। একই ভৌগোলিক সীমায় বসবাসের দরুন ভাবের আদান-প্রদানের মাধ্যমে জনসমষ্টির মধ্যে সৌহার্দ্যপূর্ণ পরিবেশ তৈরি হয়। ফলে পরস্পর একাত্মতার বন্ধনে আবদ্ধ হয়। বংশগত ঐক্যও জাতীয়তা গঠনে যথেষ্ট প্রভাব বিস্তার করে। বংশগত ঐক্য তথা রক্তের সম্পর্ক মানুষের মধ্যে এমন এক সুদৃঢ় ঐক্যভাব গড়ে তোলে যা জাতি গঠনে গুরুত্বপূর্ণ উপাদান হিসেবে কাজ করে। জাতীয়তার অপর একটি উল্লেখযোগ্য উপাদান হলো ধর্মীয় ঐক্য। জাতীয় ধারণার সৃষ্টি এবং এটি জোরদার করার ক্ষেত্রে ধর্মীয় ঐক্য একটি শক্তিশালী উপাদান হিসেবে কাজ করে। এটির ওপর ভিত্তি করে পৃথিবীর বিভিন্ন অংশে বহু জাতীয় রাষ্ট্রের উদ্ভব ঘটেছে। ইতিহাস ও ঐতিহ্য জাতীয়তার অন্যতম উপাদান। কোনো ভূখন্ডে বসবাসকারী জনগোষ্ঠী যদি মনে করে যে, তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অভিন্ন এবং তারা সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, গৌরব-গ্লানির সমান অংশীদার তখন সেই জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয়তা জাগ্রত হয়। যেমন- ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ভিন্নতার কারণে বাঙালি জনগোষ্ঠী পশ্চিম পাকিস্তানিদের থেকে নিজেদের পৃথক বলে মনে করে এবং এতে বাঙালি জাতীয়তাবাদের বিকাশ ঘটে। অর্থনৈতিক ঐক্যও জাতীয়তা গঠনে ভূমিকা রাখে। কোনো জনসমষ্টির মধ্যে একই ধরনের অর্থনৈতিক স্বার্থের বন্ধন জাতীয়তা সৃষ্টিতে সহায়তা করে। অভিন্ন অর্থনৈতিক স্বার্থের কারণে কোনো জনসমষ্টি সংঘবদ্ধ ও ঐক্যবদ্ধ হয়। অর্থনৈতিক অধিকার আদায়ে বাংলাদেশের জনগণ পাকিস্তানের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ হয়েছিল। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধের মাধ্যমে পাকিস্তানের অর্থনৈতিক শোষণের অবসান ঘটে স্বাধীন বাংলাদেশের অভ্যুদয় হয়। 
উপরে আলোচিত বিষয়গুলো ছাড়াও জাতীয়তা গঠনের আরো কিছু উপাদান রয়েছে। যেমন- ভাবগত ঐক্য, রাজনৈতিক ঐক্য প্রভৃতি।

১০. একেবারেই শেষ মুহূর্তে ছবি তোলার জন্য তুলশী তলায় যেতে বলার পর অনুরুদ্ধ হয়ে পড়েন কৃষ্ণকান্ত বর্মন। তুলশী তলায় দাঁড়ানোর পর তিনি আর কান্না থামিয়ে রাখতে পারেননি। হাত জোড় করে আপন মনে বলতে থাকেন 'ঠাকুর রক্ষা করিস। এ্যামুন ভুল আর করবেন নং। দোহাই তোর, আমাকে বাপদাদার মাটিতে অধিষ্ঠান রাখিস'। বাংলাদেশে যুক্ত হওয়া সদ্যবিলুপ্ত ভারতীয় ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার দেবীরহাট গ্রামের বাসিন্দারা ভারতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে নাম নিবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণকান্তসহ আরও ৫৪ জন ভারতে যাওয়ার ব্যাপারে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। তারা বাংলাদেশে থেকে যাবেন বলে মনস্থির করেছেন।
ক. জাতির সংজ্ঞা দাও।
খ. ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্য কীভাবে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি করে? 
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কৃষ্ণকান্ত বর্মনের মধ্যে কোন অনুভূতি কাজ করেছে? পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. তুমি কি মনে কর, দাসিয়ারছড়ার উল্লিখিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয়তাবোধের বংশগত এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ঐক্য ভূমিকা রেখেছে? মতামত দাও। 

◈ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ◈
ক. জাতি হচ্ছে জাতীয়তাবোধে উদ্দীপ্ত এবং রাজনৈতিকভাবে সুসংগঠিত এমন এক জনসমষ্টি যারা হয় স্বাধীন অথবা স্বাধীনতাকামী।

খ. ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্য জাতীয়তাবোধ গঠনের অন্যতম একটি গুরুত্বপূর্ণ উপাদান। 
মানুষের মনের ভাব প্রকাশের প্রধান বাহন হচ্ছে ভাষা, সাহিত্য ও সংস্কৃতি। এগুলোর মাধ্যমে মানুষের ভাবের আদান প্রদান হয়। এ ভাবের আদান প্রদানই জাতীয় ঐক্য প্রতিষ্ঠার প্রকৃষ্ট উপায়। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, ১৯৫২ সালের ভাষা আন্দোলন বাঙালি জাতিসত্তার বিকাশে সহায়তা করেছিল। এ থেকেই পরিলক্ষিত হয় ভাষা, সাহিত্য ও সাংস্কৃতিক ঐক্য মানুষকে ঐক্যবদ্ধ করার মাধ্যমে জাতীয়তাবোধ সৃষ্টি করে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত কৃষ্ণকান্ত বর্মনের মধ্যে 'দেশপ্রেমের' অনুভূতি কাজ করেছে। 
মাতৃভূমির প্রতি মমত্ববোধ ও ভালোবাসাই হচ্ছে দেশপ্রেম। এটি নাগরিকের এক পবিত্র অনুভূতি। দেশের মাটি, সম্পদ, পরিবেশ, ভাষা, সংস্কৃতি, দেশের মানুষের প্রতি ভালোবাসা এবং তাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করা দেশপ্রেমেরই অংশ। উদ্দীপকে উল্লিখিত ঘটনাটি তারই ইঙ্গিত বহন করে। বাংলাদেশে যুক্ত হওয়া সদ্যবিলুপ্ত ভারতীয় ছিটমহল দাসিয়ারছড়ার দেবীরহাট গ্রামের বাসিন্দারা ভারতে যাওয়ার ইচ্ছে প্রকাশ করে নাম নিবন্ধন করেছিলেন। কিন্তু কৃষ্ণকান্তসহ আরও ৫৪ জন ভারতে যাওয়ার ব্যাপারে অনিচ্ছা প্রকাশ করেছেন। কেননা, এই মানুষগুলো দীর্ঘদিন যাবৎ এ ভূখন্ডে বসবাস করায় এখানকার মাটি, ভাষা, সংস্কৃতি এবং মানুষের প্রতি তাদের এমন গভীর ভালোবাসা জন্মেছে যে তারা এই জন্মভূমি ছেড়ে চলে যেতে চাননি। এমনকি নাম নিবন্ধনের জন্য ছবি তোলার সময়ও কৃষ্ণকামেত্মর চোখে পানি আসছিল আর বলছিলেন, ‘‘ঠাকুর রক্ষা করিস। দোহাই তোর, আমাকে বাপদাদার মাটিতে অধিষ্ঠান রাখিস।" এ দেশ ত্যাগের অনীহা পুরোপুরি দেশের প্রতি ভালোবাসা ও মমত্ববোধেরই উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত।

ঘ. হ্যাঁ, দাসিয়ারছড়ার উল্লিখিত জনগোষ্ঠীর মধ্যে জাতীয়তাবোধের বংশগত এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ঐক্য ভূমিকা রেখেছে বলে আমি মনে করি।
উদ্দীপকে দেখা যায়, দাসিয়ারছড়ার বাসিন্দারা যখন বাংলাদেশ থেকে ভারতে যেতে চাচ্ছিলেন ঠিক তখন কৃষ্ণকান্তসহ ৫৪ জন লোক দেশ ছাড়তে রাজি হননি এবং বাংলাদেশে থাকার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেন। এ সিদ্ধান্তের দ্বারা তাদের মধ্যে জাতীয়তাবোধের বংশগত এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ঐক্যের প্রমাণ পাওয়া যায়। তাছাড়া যখন কোনো জনসমষ্টি মনে করে তাদের দেহের শিরা ও ধমনীতে একই রক্তধারা প্রবাহিত এবং তারা একই পূর্বপুরুষের বংশধর, তাদের ইতিহাস ও ঐতিহ্য অভিন্ন, তারা সুখ-দুঃখ, হাসি-কান্না, গৌরব-গ্লানির সমান অংশীদার তখন সেই জনসমষ্টির মধ্যে জাতীয়তাবোধ জাগ্রত হয়। বাংলাদেশ তার একটি উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত। বাঙালি জাতির অত্যাচারিত হওয়ার অভিন্ন স্মৃতি, ৫২-র ভাষা আন্দোলন, ৬৯-এর গণঅভ্যুত্থান এবং ৭১-এর রক্তক্ষয়ী স্বাধীনতা যুদ্ধের ইতিহাস বাংলাদেশের জনগণকে বারবার ঐক্যবদ্ধ হতে অনুপ্রাণিত করেছে।
পরিশেষে বলতে পারি, দাসিয়ারছড়ার দেবীরহাট গ্রামের কৃষ্ণকান্তসহ আরও ৫৪ জন বাংলাদেশে থাকার ব্যাপারে যে সিদ্ধান্ত নিয়েছেন তার দ্বারা জাতীয়তাবোধের বংশগত এবং ইতিহাস ও ঐতিহ্যের ঐক্য রক্ষার উজ্জ্বল দৃষ্টান্ত ফুটে ওঠেছে।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here