HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৪

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৪

HSC Agriculture 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. কৃষিশিক্ষা ক্লাসে উছায়রা ম্যাডাম বৃষ্টিপাত, কুয়াশা, তাপমাত্রা, তুষারপাত ইত্যাদি নিয়ে আলোচনা করছিলেন। এক পর্যায়ে ম্যাডাম বললেন, এ সমস্ত বিষয় উদ্ভিদ ও প্রাণীর উপর ব্যাপক ভূমিকা রাখে।
ক. কৃষিঋতু কী?
খ. ভুট্টা দিবাদৈর্ঘ্য নিরপেক্ষ ফসল কেন?
গ. উছায়রা ম্যাডামের আলোচনা দ্বারা কী নির্দেশ করে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোচ্য বিষয়গুলো কৃষির উপর কেমন ভূমিকা রাখে- বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আবহাওয়া ও জলবায়ুর প্রভাব এবং ফসল জন্মানোর সময়ের কথা বিবেচনা করে প্রতি বছরের জন্যে শস্য উৎপাদনের সময়কে বিভিন্ন মৌসুমে ভাগ করাই হলো কৃষিঋতু।

খ. যেসব উদ্ভিদের ফুল ধারণের উপর দিন-রাতের দৈর্ঘ্যের কোনো প্রভাব নেই সেগুলোই দিবস নিরপেক্ষ উদ্ভিদ। ভুট্টা বছরের যেকোনো সময় ফুল ধারণ করতে পারে। দিনের আলোক সময় এদের ফুল ধারণে কোনো ধরনের বাধার সৃষ্টি করতে পারে না। প্রয়োজনীয় দৈহিক বৃদ্ধি হলেই ভুট্টা ফুল দেয়। সারা বছরই এর চাষ করা যায়। এসব কারণেই ভুট্টা দিবাদৈর্ঘ্য নিরপেক্ষ উদ্ভিদ।

গ. উছায়রা ম্যাডামের আলোচনা দ্বারা 'কৃষি জলবায়ু' নির্দেশ করে। নিচে কৃষি জলবায়ু সম্পর্কে ব্যাখ্যা করা হলো-
জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য নির্ভর করে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের অক্ষাংশ, সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে উচ্চতা, সমুদ্র থেকে দূরত্ব, বায়ুপ্রবাহ, বৃষ্টিপাত, সমুদ্রস্রোত, পাহাড় ও গাছপালার ওপর। জলবায়ুর উপাদানসমূহ কৃষি উৎপাদনের ওপর প্রভাব বিস্তার করে বিধায় একে কৃষি জলবায়ু বলে। তাই গাছপালা ও কৃষি উৎপাদন দেখেও কোনো স্থানের কৃষি জলবায়ু সম্পর্কে ধারণা পাওয়া যায়। দেশের জলবায়ু সম্পর্কে জানতে হলে সে দেশের আবহাওয়া সম্পর্কে জানতে হয়। আবহাওয়া বলতে কোনো স্থানের তাপমাত্রা, আর্দ্রতা, বায়ুপ্রবাহ, সূর্যালোক, বায়ুর চাপ, কুয়াশা প্রভৃতির দৈনিক সামগ্রিক অবস্থাকে বোঝায়। কোনো এলাকার কৃষি ব্যবস্থা সে এলাকার আবহাওয়া ও জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে। কোনো নির্দিষ্ট স্থানের বিগত ২০-২৫ বছরের গড় আবহাওয়াকে জলবায়ু বলে। যেকোনো স্থানের কৃষি উৎপাদন সেই স্থানের জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে। কৃষির প্রতিটি ক্ষেত্রে উৎপাদনের সঙ্গে জলবায়ুর প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। যেমন- মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে প্রয়োজনীয় সময়ে পরিমাণমতো বৃষ্টি হলে জমিতে অধিক ফসল উৎপন্ন হয়।

ঘ. উদ্দীপকের আলোচ্য বিষয়গুলো হলো বৃষ্টিপাত, কুয়াশা, তাপমাত্রা, তুষারপাত। উক্ত বিষয়গুলো কৃষির উপর যে ভূমিকা রাখে তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
বৃষ্টিপাত: ফসলের বীজ গজানো থেকে শুরু করে ফসল সংগ্রহ পর্যন্ত বৃষ্টিপাত প্রভাব বিস্তার করে। জমি ভালোভাবে চাষের জন্য মাটির জো থাকা প্রয়োজন, বৃষ্টিপাত মাটিকে সেই অবস্থায় এনে দেয়। ফসল উৎপাদনের সময় পরিমিত বৃষ্টিপাত হলে সব ধরনের ফসল ভালো হয়।
কুয়াশা: যখন জলীয়বাষ্প বেশি মাত্রায় ঘনীভূত হয়ে ক্ষুদ্র ক্ষুদ্র পানি কণার আকারে পৃথিবীপৃষ্ঠের উপর ভাসতে থাকে তখন একে কুয়াশা বলে। কুয়াশার সময় আর্দ্রতা প্রায় ১০০% হয়। তবে এর বেশি আর্দ্রতা যোগ হলে বৃষ্টিপাত হয়। কুয়াশার সাথে তাপমাত্রা বৃদ্ধি পেলে অনেক ফসলের রোগ ও পোকামাকড়ের আক্রমণ বেড়ে যায় (আলু, শিম, সরিষা প্রভৃতি)।
তাপমাত্রা: ফসল ফলনের উপর তাপমাত্রার প্রভাব খুব বেশি। ফসলের জীবন চক্রের উপর তাপমাত্রার প্রভাবের কারণে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ফসল ভালো হয়। বিভিন্ন ফসলের ফুল ও ফল ধারণের সময় উপযোগী তাপমাত্রার প্রয়োজন। কমবেশি তাপমাত্রায় ফুল ও ফল ধারণ ব্যাহত হয়। দক্ষিণ পশ্চিম মৌসুমি বায়ুর প্রভাবে বাংলাদেশে গ্রীষ্মকালে তাপমাত্রা গড়ে ৩০-৩৫° সে. থাকে, যা ফসল ফলানোর জন্য অত্যন্ত উপযোগী, শীতকালে ফসলের জন্য উপযোগী গড় তাপমাত্রা হচ্ছে ২৫°-৩০° সে.।
তুষারপাত: শীতপ্রধান দেশে প্রবল শীতের দরুন শিশিরবিন্দু জমাট বেঁধে কঠিন হয়। এ জমাট বাঁধা শিশির বিন্দুকে তুষার বলে। তুষারপাত শস্যের জন্য খুবই ক্ষতিকর। এদেশের কোনো শস্যই তুষারপাত সহ্য করতে পারে না। শীতপ্রধান দেশে তুষারপাত সহ্য করতে পারে এমন সব শস্যের জাত প্রজনন দ্বারা বের করা হয়েছে। এসবের মধ্যে গম, যব, আলফা প্রভৃতি শস্যের বিভিন্ন জাত প্রধান।

২. সাইফুল ইসলাম একজন অভিজ্ঞ শিক্ষক। তিনি কৃষিশিক্ষা ক্লাসে শিক্ষাদানকালে ছাত্রছাত্রীদের বাংলাদেশের একপ্রকার বিশেষ বায়ু সম্পর্কে বললেন, যার প্রভাবে এ দেশে গ্রীষ্মের সময় উচ্চ তাপমাত্রা ও ভারী বৃষ্টিপাত হয়। এ বায়ুর উপর নির্ভর করে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন ফসল জন্মে।
ক. জলবায়ু কী?
খ. জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তন হচ্ছে কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বায়ুর কৃষিক্ষেত্রে গুরুত্ব বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শেষোক্ত উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো নির্দিষ্ট স্থানের বিগত কয়েক বছরের গড় আবহাওয়াকে জলবায়ু বলে।

খ. জলবায়ু দ্রুত পরিবর্তনের প্রধান কারণ হচ্ছে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধি। নগরায়ন, যান্ত্রিক সভ্যতা, কলকারখানার প্রসার, জ্বালানি তেল ও কয়লার যথেষ্ট ব্যবহার, বৃক্ষ নিধন ইত্যাদির কারণে বায়ুমন্ডলে গ্রিন হাউজ গ্যাসের পরিমাণ বাড়ছে। ফলে বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা বৃদ্ধির সাথে সাথে দ্রুত জলবায়ুরও পরিবর্তন হচ্ছে।

গ. উদ্দীপকে মৌসুমি জলবায়ুর কথা বলা হয়েছে। কৃষিক্ষেত্রে মৌসুমি জলবায়ুর গুরুত্ব নিচে বর্ণনা করা হলো-
আমাদের দেশের কৃষক ফসল চাষাবাদ শুরু করে মৌসুমি জলবায়ু শুরু হলে। আউশ ধানের বীজ ও পাটের বীজের অঙ্কুরোদগম শুরু হয় মার্চ-এপ্রিলে। কলমের শাখা বা কুঁড়ি জোড়া লাগা মৌসুমি জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে। মাছের ডিম ছেড়ে প্রজনন করাও মৌসুমি জলবায়ুর ওপর নির্ভরশীল। শীতকালীন শাকসবজি চাষ করার জন্য মৌসুমি শৈত্য বায়ুর প্রয়োজন হয়। এই মৌসুমি শৈত্য বায়ু ছাড়া ফুলকপি, বাঁধাকপি ইত্যাদি ভালো হয় না।
স্বল্পদিবসী এবং দীর্ঘদিবসী উদ্ভিদ উপযুক্ত জলবায়ু ছাড়া ফুল দেয় না, ফলে ফলন ভালো হয় না। বোরো মৌসুমি গাছ সঠিক তাপমাত্রা পাওয়ার জন্য সঠিক সময়ে রোপণ করতে হয়। পাহাড়ি অঞ্চলে চা, রাবার ও জুম চাষে বৃষ্টিপাত দরকার। আমাদের দেশে গ্রীষ্মকালে বেশি বৃষ্টিপাত হয়। তাই চা, রাবার ও জুম ইত্যাদির ফলনও জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে।

ঘ. উদ্দীপকে মৌসুমি জলবায়ুর কথা বলা হয়েছে। মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন ফসল জন্মে। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
ফসলের দুই ধরনের মৌসুম রয়েছে। রবি মৌসুম এবং খরিফ মৌসুম। মৌসুমি জলবায়ুর প্রভাবে রবি মৌসুমের তাপমাত্রা কম থাকে বৃষ্টিপাত কম হয়, বায়ুর আদ্রতা কম থাকে, ঝড়ের আশঙ্কা কম থাকে, বন্যার আশঙ্কা কম থাকে এবং রোগ ও পোকার আক্রমণ কম হয়। এজন্য রবি মৌসুমের আলু, ফুলকপি, বাঁধাকপি, মুলা, গাজর, লাউ, শিম, ওলকপি, ব্রোকলি, শালগম ইত্যাদি ফসল জন্মে।
আবার খরিফ মৌসুমে দিন বড় থাকে এবং তাপমাত্রা বেশি থাকে। খরিফ মৌসুম দুই ধরনের খরিফ-১ এবং খরিফ-২। খরিফ-১ মৌসুমে মাঝারি বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় তাপ খুব বেশি এবং বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ মাঝারি থাকে। কালবৈশাখী ও শিলাবৃষ্টির আশঙ্কা বেশি থাকে। দিনের দৈর্ঘ্য রাতের দৈর্ঘ্যের সমান বা বেশি। এ মৌসুমে পাট, তিল, ডাটা, মুখীকচু, ঢেঁড়স, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, করলা, পটোল, মিষ্টি কুমড়া ইত্যাদি জন্মে।
খরিফ-২ মৌসুমে সাধারণত বৃষ্টিপাত খুব বেশি হয়। তাপ ও বাতাসে জলীয় বাষ্পের পরিমাণ বেশি থাকে। দিনের দৈর্ঘ্য রাতের দৈর্ঘ্যের সমান বা বেশি। এ মৌসুমের প্রধান ফসল হলো আমন ধান, কচু, চাল কুমড়া, চিচিঙ্গা, ঝিঙ্গা, ধুন্দল, তাল, আমলকী, আনারস, আমড়া, পেয়ারা, নাবী জাতের আম, কাঁঠাল প্রভৃতি।
সর্বোপরি মৌসুমি বায়ুর উপর নির্ভর করে বিভিন্ন মৌসুমে বিভিন্ন ফসল জন্মে।

৩. ইমন টেলিভিশনে ন্যাশনাল জিওগ্রাফি চ্যানেলে জলবায়ু পরিবর্তনের ওপর একটি প্রতিবেদন দেখছিল। সে তার মাকে জিজ্ঞেস করল যে, বাংলাদেশে জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে কী হয়? তখন তার মা বললেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে বাংলাদেশে প্রাকৃতিক বিপর্যয় দেখা যায়, এমনকি কৃষিক্ষেত্রেও এর ব্যাপক প্রভাব পড়ে।
ক. আর্দ্রতা কী?
খ. তুষারপাত বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত পরিবর্তনের ফলে গবাদিপশু ও পাখি কীভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয় তা বর্ণনা কর।
ঘ. ইমনের মা যে ধরনের পরিবর্তনের কথা বললেন, কৃষিক্ষেত্রে তার প্রভাব বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বায়ুতে জলীয়বাষ্পের উপস্থিতিকে আর্দ্রতা বলা হয়।

খ. যদি ভূপৃষ্ঠ ও ভূপৃষ্ঠে থাকা বস্তুসমূহের তাপমাত্রা ০ ডিগ্রি সেন্ট্রিগ্রেডের নিচে হয়, তাহলে বাতাসে থাকা জলীয়বাষ্প আর বৃষ্টি হয়ে নামতে পারে না। তখন বাতাসের জলকণা জমে বরফ হয়ে যায় ও গুঁড়ি গুঁড়ি বরফ কুঁচি হয়ে ভূপৃষ্ঠে পড়তে থাকে। একে তখন তুষারপাত বলে। তুষারপাতে খোলা মাঠের ফসল নষ্ট হয়। আবার, কোনো কোনো ফসলের কুঁড়ি তুষারপাত না হলে বের হয় না। যেমন- আপেল।

গ. গবাদিপশুর ওপর জলবায়ুর প্রভাব:
i. গবাদিপশুর দেহের স্বাভাবিক তাপমাত্রার বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রা অত্যধিক কম বা বেশি হলে পশুর দৈহিক বৃদ্ধি, খাদ্য গ্রহণ, প্রজনন, দুধ উৎপাদন ব্যাহত হয়।
ii. গ্রীষ্মকালে ও বর্ষাকালে তাপমাত্রা বেড়ে গেলে দেহে পানিশূন্যতা দেখা দেয়, দুধ উৎপাদন কমে যায়, পশু ভারবাহী কাজ করতে পারে না। গবাদিপশু বিভিন্ন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়।
iii. বর্ষাকালে আর্দ্রতা বাড়লে বহিঃপরজীবী দ্বারা গবাদিপশু আক্রান্ত হয়।
iv. বায়ুমন্ডলের তাপমাত্রার কাছাকাছি গবাদিপশুর দৈহিক তাপমাত্রা থাকলে গবাদিপশুর দৈহিক বৃদ্ধি, প্রজনন ও দুধ উৎপাদন স্বাভাবিক থাকে।
পাখির ওপর জলবায়ুর প্রভাব:
i. তাপমাত্রা বেড়ে গেলে ডিম উৎপাদনের পরিমাণ কমে যায়। এবং ডিম ছোট হয়। খামারের ভেতর বিভিন্ন গ্যাস সৃষ্টি হয়।
ii. তাপমাত্রা বেশি কমে গেলে গৃহপালিত পাখির রোগবালাইসহ বিভিন্ন সমস্যা হয়।
iii. বৃষ্টিপাত বেশি হলে তাপমাত্রা কমে গিয়ে ডিম উৎপাদন কমে যায়।
iv. আর্দ্রতা বেশি হলে মুরগির জন্য কিছুটা ক্ষতি হয়। এ সময় খামারে বিভিন্ন রকম গ্যাস হয়ে বিষাক্ততা সৃষ্টি হতে পারে।

ঘ. জলবায়ুর পরিবর্তনের ফলে কৃষিক্ষেত্রে যে প্রভাব পড়ে তা আলোচনা করা হলো-
বিভিন্ন ধরনের ফসলের জন্য জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদান যেমন বৃষ্টিপাত, তাপমাত্রা, আর্দ্রতার প্রভাব রয়েছে। গ্রীষ্মকালীন ফসল ধান, পাট, লিচু পেঁপে, আনারস ইত্যাদির জন্য ৩০-৩৫° সে. তাপমাত্রা প্রয়োজন। আবার শীতকালীন ফসলের জন্য গড় তাপমাত্রা হচ্ছে ২৫-৩০° সে.। জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে এই তাপমাত্রার তারতম্য হলে এ সকল ফসল উৎপাদন ব্যাহত হয়। ফুল ধরার জন্য উপযুক্ত তাপমাত্রা প্রয়োজন। আমের পুষ্প মঞ্জরি গঠনের সময় তাপমাত্রা কম থাকলে পুরুষ ফুল বেশি হয়। আবার তাপমাত্রা বেশি হলে উভলিঙ্গী ফুল বেশি হয়। শাকসবজির ক্ষেত্রে তাপমাত্রা ১০ক্ক সে. নিচে হলে গাছ ঠান্ডাজনিত ক্ষতে আক্রান্ত হয়, এর ফলে ফলন কম হয়। আবার বেশি বৃষ্টিপাত হলে বপনকৃত বীজ পচে যায়। জলবায়ু পরিবর্তনের মাধ্যমে ফসল পাকার সময় বেশি বৃষ্টিপাত হলে ফলন কম হয়। তুষারপাত হলে সরিষার জাবপোকা ও আলুর ব্লাইট রোগ বৃদ্ধি পায়। সকল মাঠ ফসলই অতিরিক্ত কুয়াশা, শিলাবৃষ্টি ও তুষারপাত সহ্য করতে পারে না। অতএব বলা যায় যে, জলবায়ু পরিবর্তন কৃষিক্ষেত্রে অনেক বিরূপ প্রভাব বিস্তার করে।

৪. টাঙ্গাইল জেলা গত বছর শাকসবজি উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জন করেনি। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের অনুসন্ধানে দেখা যায়, শীতকালে তাপমাত্রার প্রভাবে শাকসবজি উৎপাদন ব্যাহত হয়েছে। এজন্য কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বেশ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করায় এ বছর ফলন ভালো হয়েছে।
ক. দিবা দৈর্ঘ্য কী?
খ. ফসল উৎপাদনে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের প্রভাব ব্যাখ্যা কর।
গ. টাঙ্গাইলে গত বছর শীতকালে শাকসবজির ফলন হ্রাসের কারণ বিশ্লেষণ কর।
ঘ. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গৃহীত পদক্ষেপ কীভাবে মূল্যায়ন কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পৃথিবী তার নিজ অক্ষে ঘুরতে যে ২৪ ঘণ্টা সময় নেয় এর মধ্যে যে অংশে যতটুকু আলো পায় সেই সময়কে বলে দিবস দৈর্ঘ্য।

খ. ফসল উৎপাদনে মৌসুমি বৃষ্টিপাতের দুই ধরনের প্রভাব রয়েছে। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো-
উপকারী প্রভাব: শাকসবজি ও ফলের মধ্যে সাধারণত ৬০ ৭০ ভাগ পানি থাকে। বৃষ্টির পানি গাছের এই পানির প্রধান উৎস। তাই বৃষ্টিপাত না হলে ফলন ভালো হবে না।
ক্ষতিকর প্রভাব: ফসল তোলার পূর্বে বৃষ্টি হলে সংরক্ষণের গুণ মারাত্মকভাবে কমে যায়। বৃষ্টিপাতের ফলে ফুল ও ফল ঝড়ে পরে। তাছাড়া বৃষ্টিপাতের কারণে পরাগায়নে ব্যাপক সমস্যা হয়।

গ. টাঙ্গাইলে গত বছর তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা ও আলোর ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে ফলন হ্রাস পেয়েছে। নিচে সবজি উৎপাদনের ওপর তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত, আর্দ্রতা ও আলোর ক্ষতিকর প্রভাব বিশ্লেষণ করা হলো-
তাপমাত্রার প্রভাব: বীজের অঙ্কুরোদগম উপযোগী তাপমাত্রায় ভালো হয়। সর্বোচ্চ এবং সর্বনিম্ন তাপমাত্রায় অঙ্কুরোদগম হয় না। তাছাড়া উপযোগী তাপমাত্রার বাইরে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি হয় না। এতে ফলন কম হয়।
বৃষ্টিপাতের প্রভাব: বৃষ্টিপাতের কারণে ফুল ও ফল ঝরে পড়ে, পরাগায়ন হয় না, মাটির নিচের ফসলের সংরক্ষণ মান কমে যায় এবং জলাবদ্ধ হলে গাছের শিকড় অঞ্চলে অক্সিজেন।ঘাটতি হতে পারে, এতে ফলন কম হয়। কখনো কখনো গাছ মারাও যেতে পারে।
আর্দ্রতার প্রভাব: আর্দ্রতা কম থাকলে প্রস্বেদন বৃদ্ধি পায়। এতে পানির অভাবে দৈহিক বৃদ্ধি হয় না ফলে ফলন কমে। আবার আর্দ্রতা বাড়লে প্রস্বেদন কম হয় এতে দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয়।
আলোর প্রভাব: গাছের দেহে খাদ্য ও ফুল তৈরির জন্য আলোর প্রয়োজন। প্রয়োজনের চেয়ে আলো কম-বেশি হলে ফলনও কম-বেশি হয়।
উপরোক্ত আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি, গত বছর টাঙ্গাইলে শাকসবজি উৎপাদনের জন্য কৃষি জলবায়ুর উপাদানগুলো পর্যাপ্ত পরিমাণে ছিল না। তাই ফলন পূর্বের তুলনায় হ্রাস পায়।

ঘ. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর মালচিং, সেচ, পানি স্প্রে ও সঠিক সময়ে রোপণের পদক্ষেপ নেওয়ায় উৎপাদন ভালো হয়। তাই কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গৃহীত পদক্ষেপ যথার্থ ছিল। নিচে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের গৃহীত পদক্ষেপ মূল্যায়ন করা হলো-
কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর বীজ অঙ্কুরোদগমন করার পর বপন করার পরামর্শ দেন। তাছাড়া মালচিং করে অধিক তাপমাত্রার ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ফসলকে রক্ষা করেন। এতে ফলন বৃদ্ধির পাশাপাশি ফসলের গুণগত মান ঠিক থাকে। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর খরার সময় সেচ এবং প্রবল। বৃষ্টিপাতের সময় পানি নিষ্কাশনের পদক্ষেপ নেন। এতে সঠিকভাবে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি হয়, ফলে ফলন ভালো হয়। কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর আর্দ্রতার মাত্রা সঠিক রাখার জন্য পানি স্প্রে পদক্ষেপ নেন। এতে গাছের প্রস্বেদনের ভারসাম্য রক্ষা পায়। ফলে গাছের দৈহিক বৃদ্ধি ব্যাহত হয় না। এতে ফলন ভালো হয়। তাছাড়া সঠিক সময়ে গাছ রোপণ করলে। সঠিক আলো পাওয়া যায়। এতে ফলন ভালো হয়। সুতরাং বলা যায়, কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তর পদক্ষেপ গ্রহণ করে ফলন হ্রাস প্রতিরোধ করতে সক্ষম হন।

৫. সারা দেশে জলবায়ুর কারণে ডালজাতীয় শস্যের আবাদ ও উৎপাদন কমে গেছে। কারণ হিসেবে ডালচাষি মতিন বলেন- ডাল। চাষ করলে শুধু গাছ বড় হয় দানা হয় না, কখনো দানা পুষ্ট হয় না ও পোকা রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। এজন্য ডালের জমিতে এখন আলু উৎপাদন করছে। আলু চাষ করে মতিন সফল হয়েছেন?
ক. কৃষি জলবায়ু কী?
খ. ফসল উৎপাদনে মৌসুমি জলবায়ু কেমন প্রভাব ফেলে ব্যাখ্যা কর।
গ. ডাল চাষের ব্যাপারে মতিনের বক্তব্য বিশ্লেষণ কর।
ঘ. ডালের পরিবর্তে আলু চাষ করার কারণ বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো স্থানের কৃষির সঙ্গে জড়িত দীর্ঘ সময়ের গড় আবহাওয়াকে কৃষি জলবায়ু বলে।

খ. ফসল উৎপাদনে মৌসুমি জলবায়ুর প্রত্যক্ষ প্রভাব রয়েছে। ধান, পাট, আখ, চা ইত্যাদি ফসল উৎপাদনের জন্য অধিক তাপমাত্রা, বৃষ্টিপাত ও আর্দ্রতার প্রয়োজন। আবার ডাল, তেলবীজ, আলু, পিঁয়াজ, রসুন প্রভৃতি উৎপাদনের জন্য সামান্য তাপমাত্রা ও বৃষ্টিপাতের প্রয়োজন। তাই শীতকালে শাকসবজি, তেল বীজ, আলু, পিঁয়াজ, রসুন ভালো জন্মে। এছাড়াও ফসলের ফলন ও গুণগত মান মৌসুমি জলবায়ুর উপর নির্ভরশীল।

গ. নিচে ডাল চাষের ব্যাপারে মতিনের বক্তব্য বিশ্লেষণ করা হলো-
ফসল উৎপাদনের ওপর তাপমাত্রার প্রভাবের কারণে বিভিন্ন স্থানে বিভিন্ন ফসল ভালো হয়। প্রতিটি ফসলই ভালো ফলনের জন্য নির্দিষ্ট তাপমাত্রা প্রয়োজন। উপযোগী তাপমাত্রা কম-বেশি হলে ফলন ভালো হয় না। তাপমাত্রা বাড়লে ডালজাতীয় ফসলের দৈহিক বৃদ্ধি বেশি হয়, কিন্তু পরাগায়ন কম হয়।
কখনো পরাগায়ন হয়, কিন্তু দানা অপুষ্ট হয়। তাছাড়া তাপমাত্রা বাড়লে আগাছা, রোগ ও পোকামাকড় বাড়ে। এতে ডালজাতীয় ফসল বেশি আক্রান্ত হওয়ায় ফলন কমে যায়। তাপমাত্রার পরেই বৃষ্টিপাত দ্বারা ডালজাতীয় ফসল প্রভাবিত হয়। বেশি বৃষ্টিপাত হলে জলাবদ্ধ হয়ে ডালজাতীয় ফসল মারা যায়। ডালজাতীয় ফসলে ফুল আসার সময় কুয়াশা পড়লে এটি জাবপোকা ও বিভিন্ন রোগ দ্বারা আক্রান্ত হয়। বেশি আর্দ্রতাও ডাল জাতীয় ফসলের জন্য ক্ষতিকর।

ঘ. মতিন ডালের দানা অপুষ্ট ও পোকা দ্বারা আক্রান্ত হওয়ায় ডালের জমিতে আলুর চাষ করে। নিচে ডালের জমিতে আলু চাষ করার কারণ ব্যাখ্যা করা হলো-
দিনের তাপমাত্রা বেশি হলে আলুগাছ সালোকসংশ্লেষণ প্রক্রিয়ায় বেশি খাদ্য তৈরি করে। রাতে এই খাদ্য কন্দে জমা হয়। এতে কন্দ বৃদ্ধি পায়, ফলে ফলন বাড়ে। আবার বেশি তাপমাত্রা ফসলের পরাগায়ন ব্যাহত করে ফলন কমায়। কিন্তু আলুর ফলনের জন্য পরাগায়নের দরকার হয় না। তাই বেশি তাপমাত্রা আলুর ফলন কমাতে পারে না। কম তাপমাত্রায় আলু বিভিন্ন আগাছা, রোগ ও পোকামাকড় দ্বারা আক্রান্ত হলেও বেশি তাপমাত্রায় তেমন আক্রান্ত হয় না। অধিক বৃষ্টিপাত হলেও আলুর জমি থেকে পানি খুব সহজেই নিষ্কাশন করে সফলভাবে আলু উৎপাদন করা যায়। অধিক বৃষ্টিপাত ডাল ফসলের পরাগায়ন ব্যাহত করে ফলন কমায়, কিন্তু আলুর ফলনের জন্য পরাগায়নের প্রয়োজন হয় না। তাছাড়া আলুর ফলন আলুগাছের ফুলের ওপর নির্ভর করে না। ফলে অধিক কুয়াশায় জাবপোকা ও বিভিন্ন রোগ দ্বারা ফলনের ক্ষতি হয় না। তাই মতিন ডালের পরিবর্তে আলু চাষ করেন।

৬. কলেজের কৃষি শিক্ষক খুব গুরুত্ব দিয়ে একাদশ শ্রেণিতে 'ফসলের দিবা দৈর্ঘ্য' পড়াচ্ছেন। উক্ত ক্লাসের ছাত্র কৃষকের ছেলে রহিম শিক্ষককে প্রশ্ন করলেন, 'ফসল উৎপাদনে আলোর গুরুত্ব কেমন?' কৃষি শিক্ষক বিভিন্ন ফসলের ফুল ফোটার উপর দিনের দৈর্ঘ্যের শ্রেণি ব্যাখ্যা দিলেন।
ক. মৌসুমি জলবায়ু কী?
খ. বাংলাদেশে মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য ব্যাখ্যা কর।
গ. কৃষি শিক্ষক ফসলের দিবা দৈর্ঘ্যের বিষয়টি কীভাবে ব্যাখ্যা দিলেন বিশ্লেষণ কর।
ঘ. ছাত্র রহিমের উদ্দীপকের প্রশ্ন করার যৌক্তিকতা বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিভিন্ন সময়ে বা বিভিন্ন ঋতুতে বিভিন্ন রকম বায়ুপ্রবাহের দ্বারা সৃষ্ট জলবায়ুকে মৌসুমি জলবায়ু বলে।

খ. বাংলাদেশে মৌসুমি জলবায়ুর বৈশিষ্ট্য নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
গ্রীষ্মকালে দক্ষিণ-পশ্চিম দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু বঙ্গোপসাগরের জলীয় বাষ্প বহন করে, যা ঘনীভূত হয়ে বৃষ্টিপাত হয়। শীতকালে উত্তর-পূর্ব দিক থেকে বায়ু প্রবাহিত হয়। এই বায়ু উত্তরের হিমালয় পর্বত থেকে শীতল হয়ে প্রবাহিত হয়। তাই দেশে শীত পড়ে।

গ. কৃষি শিক্ষক ফসলের দিবা দৈর্ঘ্যের শ্রেণি ব্যাখ্যা দিলেন। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
১. স্বল্প দিবস ফসল: যেসব ফসলের পুষ্পায়নের জন্য স্বল্পকালীন সময়ব্যাপী দিবালোক প্রয়োজন হয়, সেসব ফসলকে স্বল্প দিবস ফসল বলে। যেমন- আমন ধান, পাট, সরিষা, তামাক, সয়াবিন, ডালিয়া, শণ, অড়হড়, চন্দ্রমল্লিকা ইত্যাদি। সাধারণ এসব ফসলের ফুল উৎপাদনের জন্য ১২ ঘণ্টার কম (৮-১২ ঘণ্টা) দিবালোকের প্রয়োজন। স্বল্প দিবস ফসলের ক্ষেত্রে দিন অপেক্ষা রাত বেশি গুরুত্বপূর্ণ।
২. দীর্ঘ দিবস ফসল: যেসব ফসলের পুষ্পায়নের জন্য দীর্ঘ দিবালোকের প্রয়োজন হয়, সেসব ফসলকে দীর্ঘ দিবস ফসল বলে। যেমন- গম, বার্লি, বাঁধাকপি, মুলা, পালং, লেটুস, আলু, বিট ইত্যাদি দীর্ঘ দিবস ফসল। সাধারণত এসব ফসলের ফুল উৎপাদনের জন্য দৈনিক ১২ ঘণ্টার বেশি দিবা দৈর্ঘ্যের প্রয়োজন।
৩. দিবস নিরপেক্ষ ফসল: যেসব ফসলের পুষ্পায়নের জন্য দিবা দৈর্ঘ্যের কোনো প্রভাব পড়ে না সেসব ফসলকে দিবস নিরপেক্ষ ফসল বলে। যেমন- ভুট্টা, শসা, সূর্যমুখী, দোপাটি, পেঁপে, টমেটো, আলু, তুলা, মিষ্টিকুমড়া ইত্যাদি দিবস নিরপেক্ষ ফসল।

ঘ. উদ্যান ফসল, মাঠ ফসল, গবাদিপশু ও হাঁস-মুরগি উৎপাদন জলবায়ুর বিভিন্ন উপাদানের ওপর নির্ভরশীল। এই উপাদান বিভিন্ন মৌসুমে পরিবর্তন হয়ে ফসলের ওপর প্রভাব ফেলে। তাই রহিমের প্রশ্ন যৌক্তিক ছিল।
রহিম কৃষি শিক্ষককে প্রশ্ন করে জানতে পারেন যে, মৌসুমি জলবায়ুর ওপর নির্ভর করে বীজ বপন, চারা রোপণ করতে হয়। বৃষ্টিপাত, বায়ুর তাপমাত্রা ও আর্দ্রতার ভিত্তিতে বপন সময় পরিবর্তন করতে হয়। অন্যথায় বীজ গজাবে না। রহিম আরও জানতে পারে, বৃষ্টিপাতের আগে সার প্রয়োগ করা যাবে না, এতে বৃষ্টির পানির সঙ্গে সার চলে যায়। বৃষ্টির পানি শুকিয়ে সার প্রয়োগ করতে হবে। কৃষি শিক্ষক বলেন, ফসল কাটার পর ফসল প্রক্রিয়াজাত করার জন্য রোদের প্রয়োজন। রোদ না থাকলে মাড়াই-ঝাড়াই করা যাবে না। তাই ফসল সংগ্রহ রোদের ওপর নির্ভর করে। ফলে রহিম ফসল সংগ্রহের সঠিক সময় জানতে পারে। কৃষি শিক্ষক আরও বলেন, ফল ও বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করতে হবে বর্ষার শুরুতে। অন্যথায় চারা মারা যাবে। এ সময় জলবায়ু বেশি আর্দ্র হয়, ফলে চারা দ্রুত মাটির সঙ্গে লেগে যায়। রহিম কৃষি শিক্ষককে প্রশ্ন করে এসব বিষয় জানতে পারে। তাই রহিমের প্রশ্ন করা যৌক্তিক ছিল।

HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৪ pdf download

৭. লিবিয়ার কিছু এলাকায় বছরের সর্বনিম্ন তাপমাত্রা ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস। এজন্য সাধারণ জমিতে টমেটো চাষ করা যায় না। তাই গ্রীণ হাউজের ভেতর তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে টমেটো চাষ করা হয়। এতে উৎপাদন খরচ অনেক বেশি হয়। তবে অন্য দেশ থেকে টমেটো আমদানি করলে খরচ কম হয়।
ক. ফটোপিরিয়ড কী?
খ. ফসল উৎপাদনে তাপমাত্রা হ্রাস বৃদ্ধির গুরুত্ব ব্যাখ্যা কর।
গ. গ্রিন হাউসের ভিতর টমেটো চাষের উপযোগী তাপমাত্রা আর্দ্রতা বিশ্লেষণ কর।
ঘ. লিবিয়ায় গ্রিন হাউসের ভিতর টমেটো চাষের উপযোগিতা বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উদ্ভিদের পুষ্পধারণের জন্য দিবালোকের নির্দিষ্ট সময়কালই হচ্ছে ফটোপিরিয়ড।

খ. ফসল উৎপাদনে তাপমাত্রা হ্রাস-বৃদ্ধির গুরুত্ব রয়েছে। উপযোগী তাপমাত্রার কম-বেশি হলে ফলন ভালো হয় না। তাপমাত্রা বাড়ালে ডাল জাতীয় ফসলের দৈহিক বৃদ্ধি বেশি হয়, দানা অপুষ্ট হয়, পরাগায়ন কম হয় ফলে ফলন কম হয়। মাঠ ফসলে তাপমাত্রা কম হলে ফলন কম হয়। আবার ধানের বেশকিছু জাতে শীষ বের হওয়ার সময় উচ্চ তাপমাত্রা থাকায় বন্ধ্যত্ব আসে।

গ. লিবিয়ায় তাপমাত্রা অনেক বেশি। এজন্য সাধারণ জমিতে টমেটো চাষ করা যায় না। টমেটো উৎপাদনের জন্য কম তাপমাত্রা প্রয়োজন। তাপমাত্রা গড়ে ১০° সে. থেকে ২৫° সে. এর মধ্যে সীমাবদ্ধ থাকলে টমেটো উৎপাদন করা যায়। টমেটো চাষের জন্য বাতাসের আর্দ্রতাও কম থাকতে হয়। টমেটো বীজের অঙ্কুরোদগম তাপমাত্রার উপর নির্ভরশীল। ২৫° সে. তাপমাত্রায় ৬-৭ দিনের মধ্যে টমেটো বীজের অঙ্কুরোদগম ঘটে। কিন্তু তাপমাত্রা ১২-১৩° সে.-এ পৌঁছালে বীজের অঙ্কুরোদগম হতে ১২ দিন সময় লাগে। টমেটোর অঙ্গজ বৃদ্ধিতেও তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে। টমেটোর ফুল ও ফল উৎপাদনেও তাপমাত্রার প্রভাব রয়েছে। লিবিয়ায় বাইরের তাপমাত্রা বেশি হওয়ায় গ্রিন হাউসের ভেতর কম তাপমাত্রা রেখে টমেটোর চাষ করা হয়।

ঘ. লিবিয়ায় তাপমাত্রা অনেক বেশি। তাই গ্রিন হাউসের ভেতর তাপমাত্রা ও আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করে টমেটো চাষ করা হয়। লিবিয়ায় গ্রিন হাউসের ভেতর টমেটো চাষের উপযোগিতা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
টমেটো উৎপাদনের জন্য কম তাপমাত্রার প্রয়োজন। বেশি তাপমাত্রায় টমেটোর অঙ্কুরোদগম ও অঙ্গজ বৃদ্ধি হয় না। তাই গ্রীন হাউজের মধ্যে নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রা রেখে টমেটো চাষ করা হয়। কিন্তু এতে অনেক খরচ হয়। এভাবে গ্রিন হাউসের মধ্যে টমেটো চাষ করার থেকে বিদেশ থেকে টমেটো আমদানি করা লাভজনক। পরিশেষে বলা যায়, লিবিয়ায় সাধারণ জমি টমেটো চাষের অনুপযোগী। কিন্তু নিয়ন্ত্রিত তাপমাত্রায় ও আর্দ্রতায় গ্রিন হাউসের মধ্যে তা সম্ভব।

৮. রহিমের জমিতে বোরো চারা রোপণের একমাস পারই থোড় এসে ফুল ধরায় তিনি চিন্তিত হয়ে পড়েছেন। তিনি কৃষি কর্মকর্তা জাহিদুল হাসানের শরণাপন্ন হলে বেশি বয়সের চারা বিলম্বে রোপণের কারণ চিহ্নিত করেন এবং বলেন, ধানের ফলন খুব কম হবে। প্রতিবেশী কৃষক ধানগাছের গোড়া ভেঙে দিতে বললেন অথবা অন্য ফসল চাষ করতে বললেন।
ক. আলোক দৈর্ঘ্যের উপর ধানের শ্রেণি লেখ।
খ. আলোক সংবেদনশীল উদ্ভিদগুলোর মধ্যে তুলনা ব্যাখ্যা কর।
গ. রহিমের জমির বোরো ধানে দ্রুত ফুল ধরার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. কৃষি কর্মকর্তার চিহ্নিত কারণ ও প্রতিবেশী কৃষকের পরামর্শের যৌক্তিকতা মূল্যায়ন কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. আলোক দৈর্ঘ্যের ভিত্তিতে তিন ধরনের ধান রয়েছে। যথা আলো নিরপেক্ষ ধান, খাটো দিবসী ধান এবং বড় দিবসী ধান।

খ. আলোক সংবেদনশীল উদ্ভিদগুলোর মধ্যে বড় দিনের উদ্ভিদে দিনের দৈর্ঘ্য বড় হলে এবং রাত ছোট হলে ফুল ফোটে। কিন্তু ছোট দিনের উদ্ভিদে দিনের দৈর্ঘ্য ছোট এবং রাত বড় হলে ফুল ফোটে। অপরপক্ষে দিন নিরপেক্ষ উদ্ভিদের ফুল ফোটার ক্ষেত্রে দিনের দৈর্ঘ্যের কোনো প্রভাব নেই।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বোরো ধান হলো দীর্ঘদিবসী উদ্ভিদ। রহিমের জমির বোরো ধানে দ্রুত ফুল ধরার কারণ নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
বোরো ধান উৎপাদনের জন্য রাতের দৈর্ঘ্য ছোট এবং দিনের দৈর্ঘ্য বড় প্রয়োজন। বোরো ধানের ক্ষেত্রে ১২ ঘণ্টা অথবা তার অধিক দিবস দৈর্ঘ্যে ফুল ধারণ করে। রহিম বেশি বয়সের চারা রোপণ করেন এবং যে সময়ে বোরো ধানের চারা রোপণ করেন তখন দিনের দৈর্ঘ্য বেশি ছিল। চারা বড় হওয়ার কারণে এবং দিনের দৈর্ঘ্য বেশি হওয়ার কারণে বোরো ধানে দ্রুত ফুল ধরে।

ঘ. রহিম তার জমিতে বোরো ধান চাষ করেন। সে বেশি বয়সের চারা রোপণ করেন। বোরো ধান দীর্ঘদিবসী উদ্ভিদ এবং বেশি বয়সের চারা রোপণ করার কারণে বোরো ধানে দ্রুত ফুল আসে। এতে করে ধানের উৎপাদন কম হবে। তাই রহিমের প্রতিবেশি কৃষক তাকে গাছের গোড়া ভেঙে দিতে বলেন অথবা অন্য ফসল চাষ করতে বললেন। ধান গাছের গোড়া ভেঙে দিলে গাছ নষ্ট হয়ে যাবে। ফলে ঐ জায়গায় অন্য ফসল চাষ করা যাবে। যেহেতু ধানের ফলন ভালো হবে না সেহেতু অন্য ফসল চাষ করে রহিম লাভবান হতে পারেন। ফসল চাষ করার সময় অবশ্যই দিনের দৈর্ঘ্যের দিকে খেয়াল রাখা উচিত। কারণ দিনের দৈর্ঘ্য কম বা বেশি হলে অনেক উদ্ভিদই ফুল ধরে না। ফলে উদ্ভিদের পুষ্পায়ন হয় না। এতে করে কৃষক ফসল উৎপাদন করে লাভবান হয় না।
তাই পরিশেষে বলা যায়, রহিমের প্রতিবেশীর পরামর্শ অনুযায়ী বোরো ধানের গাছের গোড়া ভেঙে দিয়ে অন্য ফসল চাষ করা অবশ্যই যুক্তিযুক্ত।

৯. জলবায়ুর বিরূপ প্রভাবের কারণে সিলেটের মোহর আলী শস্য। উৎপাদন লক্ষ্যমাত্রা অর্জণ করতে পারেনি। তার এলাকায় অতিবৃষ্টির কারণে জলাবদ্ধতা সৃষ্টি হয়ে ফসল নষ্ট হতে বসেছে।
ক. অনাবৃষ্টি কাকে বলে?
খ. জলবায়ু বলতে কী বোঝায়?
গ. উক্ত অবস্থায় ফসল রক্ষায় জন্য মোহর আলীর করণীয় কী? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. 'উক্ত অবস্থা সৃষ্টির কারণে মোহর আলীর এলাকার মতো বাংলাদেশের বেশিরভাগ এলাকাই নানাভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হয়' বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যদি শুষ্ক মৌসুমে একটানা ১৫ দিন বা এর বেশি দিন বৃষ্টি না হয় তখন তাকে অনাবৃষ্টি বলা হয়।

খ. কোনো স্থানের দীর্ঘ সময়ের গড় আবহাওয়াকে জলবায়ু বলে। এটি আবহাওয়ার ২০-৩০ বছরের গড় অবস্থাকে বোঝায়। এটি বিভিন্ন মৌসুমে কৃষিকাজকে নিয়ন্ত্রণ করে। কোনো স্থানের জলবায়ু কীরূপ হবে, তা বিভিন্ন বিষয়ের ওপর নির্ভর করে। এগুলোর মধ্যে অন্যতম হলো- অক্ষাংশ, উচ্চতা, সমুদ্র হতে দূরত্ব, বায়ুপ্রবাহের দিক, বৃষ্টিপাত, সমুদ্রস্রোত, মাটির বিশেষত্ব ইত্যাদি।

গ. মোহর আলী পানি নিষ্কাশন করে তার এলাকার ফসল রক্ষা করতে পারে। নিচে জলাবদ্ধ এলাকার ফসল রক্ষায় করণীয় ব্যাখ্যা করা হলো-
বাংলাদেশে জুন থেকে অক্টোবর মাস পর্যন্ত বেশি বৃষ্টিপাত হয়। এ সময় কখনো কখনো একটানা কয়েকদিন অতিবৃষ্টি হয়। ফলে মাঠ-ঘাট ও ফসলি জমিতে পানি জমে যায়। এতে কিছু স্থান জলাবন্ধ হয়ে পড়ে। পাহাড়ি ঢলের কারণে জলাবদ্ধতায় হাওর অঞ্চলে বোরো ধান পাকার সময় তলিয়ে যায়। এ অবস্থায় জমি থেকে ধানের শীষ কেটে ফসল সংগ্রহ করা যায়। বাঁধ ভেঙে জমির ফসল নষ্ট হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিলে বাঁধ মেরামতের দ্রুত ব্যবস্থা নিয়ে ফসল রক্ষা করা যায়। নিষ্কাশনের নালা কেটে জলাবদ্ধ জমি থেকে পানি বের করে দেওয়ায় ব্যবস্থা করে ফসল রক্ষা করা যায়। আগাম জলাবদ্ধতায় মোহর আলীর এলাকায় আমন রোপণ ব্যাহত হলে বন্যামুক্ত এলাকায় চারা উৎপাদন করে তার এলাকার পানি নেমে গেলে রোপণের ব্যবস্থা করতে হবে। এভাবেই মোহর আলীর এলাকায় ফসল রক্ষা করা যাবে।

ঘ. প্রতিবছর দেশের ২৫ শতাংশ জমি বন্যার কারণে বিভিন্ন মাত্রায় পস্নাবিত হয়। ঘন ঘন বন্যার কারণে কৃষকদের উফশী জাতের পরিবর্তে স্থানীয় জাতের ফসল চাষ করতে হয়, এতে ফলন কমে। কক্সবাজার, চট্টগ্রাম, সুনামগঞ্জ, সিলেট, নেত্রকোনা, নীলফামারী ইত্যাদি জেলা ঢল বন্যার শিকার হয়। প্রায় প্রতিবছর এসব অঞ্চলের হাজার হাজার একর জমির পাকা বোরো ধান কর্তনের আগেই ঢল বন্যায় ক্ষতিগ্রস্ত হয়। দেশের উত্তর-পূর্বাঞ্চলের প্রায় চার হাজার বর্গকিলোমিটার ও দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলের এক হাজার চারশত বর্গকিলোমিটার এলাকা।এ ধরনের ঢল বন্যাপ্রবণ। ঘাসে বিষক্রিয়া সৃষ্টি হয়, ফলে গবাদিপশু অসুস্থ হয়ে পড়ে। কিছু কিছু এলাকায় ঘাসের অভাব হয় ফলে গো-খাদ্য পাওয়া যায় না। মাঠে পানি থাকার কারণে পাখিরাও খাবার সংগ্রহের স্থান না পেয়ে খাদ্যাভাবে মারা যায়। জলাবদ্ধতার জন্য নতুন নতুন রোগব্যাধির প্রাদুর্ভাব ঘটে। বিশেষ করে বিভিন্ন সংক্রামক রোগ ও কৃমির আক্রমণ বৃদ্ধি পায়। এতে পরিবেশ অস্বাস্থ্যকর হয়ে বিভিন্ন এলাকা ক্ষতিগ্রস্ত হয়।

১০. রিমনের বাড়ি বরগুনা জেলায়। তার এলাকার জমিগুলো লবণাক্ততার দ্বারা আক্রান্ত। পানির বাষ্পীভবন হ্রাসের মাধ্যমে সে তার এলাকায় লবণাক্ততা কমাতে চায়। এজন্য সে স্থানীয় মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন কেন্দ্রে গেলে সেখানকার বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা তাকে বলেন, এর উত্তম সমাধান হতে পারে লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসল চাষ।
ক. আবহাওয়া কাকে বলে?
খ. বৈশ্বিক উষ্ণতা কেন বৃদ্ধি পাচ্ছে?
গ. রিমন যে পদ্ধতিতে লবণাক্ততা হ্রাস করতে চায় তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার দেওয়া সমাধান রিমনের এলাকায় কতটুকু গ্রহণযোগ্য? মতামত দাও।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো নির্দিষ্ট স্থানের বায়ুমন্ডলে যে অবস্থা বিরাজ করে, ঐ অবস্থাকে সেই স্থানের উক্ত সময়ের আবহাওয়া বলে।

খ. তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীতে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।
বিভিন্ন যানবাহন ও কলকারখানা হতে নির্গত CO2, CO এবং SO2 পরিবেশের তাপমাত্রা বৃদ্ধি করে। গাছপালা নিধনের ফলে পরিবেশে ঙ, এর পরিমাণ কমে যাচ্ছে এবং CO, এর পরিমাণ বেড়ে যাচ্ছে। ফলে বৈশ্বিক উষ্ণতা বৃদ্ধি পাচ্ছে।

গ. রিমন মালচিং করে পানি সংরক্ষণ করে জমির লবণাক্ততা হ্রাস করতে চায়। নিচে রিমনের লবণাক্ততা হ্রাসের পদ্ধতি ব্যাখ্যা করা হলো-
মাটির পানিতে সোডিয়ামের মাত্রা বেড়ে গেলে মাটির লবণাক্ততা বেড়ে যায়। যদি মাটিতে বেশি পরিমাণে পানি থাকে, তাহলে পানিতে সোডিয়ামের ঘনত্ব কমবে, এতে মাটির লবণাক্ততা হ্রাস পাবে। বাষ্পীভবনের ফলে মাটি থেকে পানি চলে যায়, এতে মাটির দ্রবণে পানির পরিমাণ কমে, ফলে সোডিয়ামের পরিমাণ বৃদ্ধি পায়। যদি বাষ্পীভবন প্রতিরোধ করা যায় তবে মাটিতে পানি ধরে রাখা সম্ভব। মাটিতে পানি ধরে রাখার উত্তম উপায় মালচিং করা। পলিথিন, খঙ অথবা অন্য কোনো উপায়ে মাটিকে ঢেকে মাটির আর্দ্রতা রক্ষা করাকে মালচিং বলে। তাছাড়া মাটি চাষ করে ওপরের স্তর ভেঙে দিয়ে মাটির আর্দ্রতা রক্ষা করা যায়। এভাবে মাটির আর্দ্রতা রক্ষার মাধ্যমে মাটির দ্রবণের সোডিয়ামের, ঘনমাত্রা কমিয়ে মাটির লবণাক্ততা হ্রাস করা যায়।

ঘ. লবণাক্ত এলাকায় লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসল সফলভাবে চাষ করা সম্ভব। তাই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার দেওয়া সমাধান গ্রহণযোগ্য। নিচে লবণাক্ত এলাকায় লবণাক্ততা সহিষ্ণু ফসল চাষের গ্রহণযোগ্যতা আলোচনা করা হলো-
লবণাক্ত মাটি থেকে ফসলের জন্য পানি সংগ্রহ করতে অসুবিধা হয়। মাটিতে লবণাক্ততার মাত্রা বেশি হলে ফসল জন্মাতে পারে না। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে দেশের দক্ষিণাঞ্চলে উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ততার মাত্রা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য উপকূলীয় এলাকায় লবণাক্ত সহিষ্ণু ফসল বা ফসলের জাতের উদ্ভব ঘটাতে হবে।
উপকূলীয় লবণাক্ত এলাকায় ধান প্রধান ফসল। ধানের কিছু স্থানীয় ও উন্নত জাত রয়েছে, যারা বিভিন্ন মাত্রায় লবণাক্ততা সহ্য করতে পারে। স্থানীয় জাতের মধ্যে রয়েছে যাতা, রাজাশাইল, কাজলশাইল, গাবুরা ইত্যাদি। বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট ইতিমধ্যে বেশ কিছু লবণাক্ততা সহিষ্ণু জাতের ধান উদ্ভাবন করেছে। এসব ফসল লবণাক্ত এলাকায় সফলভাবে চাষ করা যায়। উদ্দীপকের আলোকে আমরা দেখতে পাই, রিমনের বাড়ি দক্ষিণাঞ্চলের বরগুনা জেলায় ভৌগোলিকভাবে রিমনের এলাকায় দিন দিন ফসলের জমিতে লবণাক্ততা বৃদ্ধি পাচ্ছে। তাই রিমনের এলাকায় এমন জাতের ফসল উৎপাদন করতে হবে, যা লবণাক্ততা সহিষ্ণু। তাই বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তার দেওয়া সমাধান গ্রহণযোগ্য।

Post a Comment (0)
Previous Post Next Post