G

HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৩

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৩

HSC Agriculture 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. চায়নিজ রেস্তোরাঁয় স্যুপ খাওয়ার সময় জারিন তার কৃষিবিদ মামাকে বলল, এর মধ্যে ব্যাঙের ছাতা, এটা খাওয়া যাবে না। মামা বললেন, এটা ব্যাঙের ছাতা নয়। এটা বহু পুষ্টিগুণসম্পন্ন একটি সবজি যা জমি ছাড়াও চাষ করা যায় এবং এ ধরনের সবজির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক. রিবন রেটিং কী?
খ. বীজ ফসলের জমি নিরাপদ দূরত্বে রাখা হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সবজির উৎপাদন কৌশল সহজ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের সবজিটির চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পাটগাছ কাটার পর কাঁচা থাকা অবস্থায় গাছ থেকে ফিতার মতো ছালকে পৃথক করে পরে পচানোর ব্যবস্থাই হলো রিবন রেটিং।

খ. একই ফসলের বিভিন্ন জাতের মধ্যে পরাগায়ন হয়ে জাতের বিশুদ্ধতা যাতে নষ্ট না হয় সেজন্য বীজ ফসলের জমির নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখতে হয়। বীজ ফসলের জমি থেকে একই ফসলের বীজ বপনের সময় পরিবর্তন করেও নিরাপদ দূরত্ব বজায় রাখা যায়। যেমন- পিঁয়াজের বীজের জমি ভিত্তি বীজ হলে ৭৫ মিটার এবং প্রত্যায়িত বীজ হলে ৭০ মিটার দূরত্ব বজায় রাখতে হবে।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত সবজিটি হলো মাশরুম। মাশরুম খোলা জায়গায় চাষ করা যায় না। তাই এর জন্য আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। মাশরুমের চাষ পদ্ধতি সহজ হওয়ার কারণে যেকেউ ঘরে বসে মাশরুম চাষ করতে পারে। চাষের উপকরণ সহজলভ্য। ঘরের মধ্যে অল্প পরিশ্রমে, অল্প পুঁজিতে সহজেই ভূমিহীন কৃষক মাশরুম চাষের সঙ্গে সম্পৃক্ত হতে পারেন। মাশরুম চাষে ঝুঁকি কম, কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগবালাই দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে। মাশরুম চাষের জন্য শ্রমিক খরচ লাগে না কারণ অন্যান্য কাজের পাশাপাশি পরিবারের সব সদস্যকে এ কাজে সম্পৃক্ত করা যায়। নারীরা ঘরে বসেই এর চাষ করতে পারেন, মাঠে যেতে হয় না। গ্রীষ্মকালে যেকোনো চালা ঘরের নিচে এবং বারান্দায় চাষ করা যায়। বর্ষাকালে পানি প্রবেশ করে না অথচ বাতাস চলাচলের সুবিধা আছে এমন ঘরে এর চাষ করতে হয়। শীতকালে ভেজা স্যাঁতসেতে অন্ধকার ঘরে এর চাষ হয়ে থাকে। মাশরুম মাত্র ১০-১৫ দিনেই খাবার উপযোগী হয়।
সুতরাং উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, মাশরুম উৎপাদন কৌশল সহজ।

ঘ. উদ্দীপকের সবজিটি হলো মাশরুম। নিচে মাশরুমের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাওয়ার কারণ বিশ্লেষণ করা হলো-
i. মাশরুমে অনেক ধরনের ঔষধিগুণ ও পুষ্টিমান রয়েছে। অন্য যেকোনো সবজির মতো এটিকে খুব সহজেই সবজি হিসেবে খাওয়া যায়।
ii. মাশরুম প্রোটিন সমৃদ্ধ সবজি। তাই একে সবজি মাংসও বলা হয়ে থাকে। প্রতি ১০০ গ্রামে ২০-৩০ গ্রাম প্রোটিন পাওয়া যায়। কম খরচে ও কম শ্রমে মাশরুম চাষের দ্বারা বিপুল পরিমাণে আমিষ উৎপাদন সম্ভব।
iii. মাশরুমের পরিমিত পরিমাণ কার্বোহাইড্রেট ও যথেষ্ট আঁশ থাকে। এতে শর্করার পরিমাণ কম বিধায় বহুমূত্র রোগীদের জন্য মাশরুম আদর্শ খাবার।
iv. মাশরুম খুব নিম্নশক্তি সম্পন্ন খাবার। এতে কোলেস্টেরল নেই, চর্বির পরিমাণ অত্যন্ত কম; কম চর্বি, কোলেস্টেরলমুক্ত এবং লিনোলেয়িক এসিড সমৃদ্ধ হওয়ায় মাশরুম হৃদরোগীদের জন্য খুব উপকারী।
v. হৃদরোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ক্যান্সার, টিউমার, মেদভুঁড়ি, জন্ডিস, রক্তস্বল্পতা, যৌন অক্ষমতা, ডেঙ্গুজ্বর, ডায়াবেটিস ইত্যাদি দুরারোগ্য ব্যাধির প্রতিরোধ ও নিরাময়ে মাশরুমের অবদান রয়েছে। এসব কারণে মাশরুমের চাহিদা দিন দিন বৃদ্ধি পাচ্ছে।

২. নেহালপুর গ্রামের হাসেম মিয়া তার দেশি গাভীকে ডাকে আসার পর স্থানীয় পশু প্রজনন কর্মীকে ডেকে এনে প্রজনন করালেন। কিছু দিনপর ঐ গাভী থেকে একটি বকনা বাছুর হলো। বাছুরটি দেখতে বেশ সুন্দর ও বড়সড় ধরনের। পরবর্তীতে ঐ বাছুরটি যখন বড় হয়ে ডাকে আসল তখন একইভাবে প্রজননের মাধ্যমে হাসেম মিয়া তার থেকে আরও একটি বাছুর পেলেন এবং গাভীর দুধ উৎপাদনও বেড়ে গেল। গ্রামবাসীর হাসেম মিয়ার গাভী দেখে তারাও ঐ ধরনের গাভী পালনে আগ্রহী হলো।
ক. মৌচাষ কী?
খ. রাইজোবিয়াম কেন অণুজীব সার- ব্যাখ্যা কর।
গ. হাসেম মিয়া কীভাবে একটি উন্নত জাতের বাছুর পেলেন ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের হাসেম মিয়ার কর্মকান্ডটি মূল্যায়ন কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক.মৌমাছিকে তাদের প্রাকৃতিক পরিবেশ থেকে এনে মৌচাকের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টি করে আধুনিক ও বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে পালন করাকে মৌচাষ বলে।

খ. নাইট্রোজেন সংবন্ধনকারী রাইজোবিয়াম সার ইউরিয়ার বিকল্প হিসেবে ব্যবহৃত হয়। এই সার উৎপাদনে রাইজোবিয়াম নামক ক্ষুদ্র অণুজীব বা ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয়। এই ব্যাকটেরিয়া শিমজাতীয় উদ্ভিদের শিকড়ে নডিউল সৃষ্টি করে। নডিউলের ভিতরে ব্যাকটেরিয়া বায়ুমন্ডল থেকে নাইট্রোজেন সংযোজন করে নিজের প্রয়োজন মেটায় এবং সহঅবস্থানকারী উদ্ভিদকেও সরবরাহ করে। রাইজোবিয়াম ব্যাকটেরিয়া এক প্রকার অণুজীব বলেই এর দ্বারা তৈরিকৃত সারকে অণুজীব সার বলা হয়।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত হাসেম মিয়া তার ডাকে আসা দেশি গাভীটিকে স্থানীয় পশু প্রজনন কেন্দ্রে নিয়ে গেছেন। সেখানে উন্নত ব্যবস্থাপনা সংরক্ষিত উন্নত জাতের ষাঁড়ের সিমেন ছিল। সেই সিমেন দ্বারা পশু প্রজনন কর্মকর্তার সহায়তায় কৃত্রিম প্রজনন করানো হয়েছে। উক্ত কৃত্রিম প্রজনন সফল হয়েছে। কিছুদিন পর গাভীটির একটি বকনা বাছুর হয়েছে। বাছুরটি অন্যসব বাছুরের থেকে দেখতে সুন্দর ও আকারে বড় হয়েছে। পরবর্তীতে এ বাছুরটি বড় হয়ে যখন ডাকে আসল তখন একইভাবে পশু প্রজনন কেন্দ্রের কর্মকর্তার সহায়তায় কৃত্রিম প্রজনন করিয়েছেন। তার এই কৃত্রিম প্রজনন সফল হয়েছে। এবারও হাসেম মিয়ার বকনা গাভী থেকে উন্নত বাছুর পেয়েছেন। এভাবে কৃত্রিম প্রজনন করানোর মাধ্যমে তিনি উন্নত জাতের বাছুর পেয়েছেন।

ঘ. উদ্দীপকের হাসেম মিয়ার কর্মকান্ডটি হলো কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি। নিচে কর্মকান্ডটির মূল্যায়ন করা হলো বাংলাদেশে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ফলে দিন দিন কৃষি জমির পরিমাণ কমে যাচ্ছে। কৃষকের জমির পরিমাণ প্রতি বছর ১% হারে কমে আসছে। ফলে কৃষির সঙ্গে সম্পর্কিত অন্যান্য বিভাগে নতুন নতুন প্রযুক্তির মাধ্যমে মানুষ কার্য নির্বাহ করছে। এসব প্রযুক্তির মধ্যে দুগ্ধবতী গাভী পালন অন্যতম। তাছাড়া বাংলাদেশে প্রাণিজ প্রোটিনের ব্যাপক ঘাটতির কারণে "এদেশের শতকরা ৮০ ভাগের বেশি মানুষ অপুষ্টিতে ভুগছে। আমাদের দেশে গবাদিপশু সংখ্যার দিক থেকে অনেক বেশি। হলেও উন্নত জাতের গরুর সংখ্যা কম। ৮০ ভাগের বেশি গরু দেশীয়, যার উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। আমাদের দেশে যেসব গবাদিপশু আছে সেগুলো থেকে দুগ্ধ, চামড়া ও মাংসের ঘাটতি রয়েছে। প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ দুধের ঘাটতি বিদেশ থেকে পূরণ করা হয়। তাই দেশে ব্যাপকভাবে বাণিজ্যিক ডেইরি খামার প্রয়োজন।
উক্ত কারণে হাসেম মিয়া তার দেশি জাতের গাভীর সাথে। উন্নত জাতের ষাঁড়ের প্রজনন করিয়ে উন্নত সংকর জাতের গরু পেয়েছেন। তিনি কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে দেশি গরুর জাত উন্নয়ন করেছেন। তিনি কৃত্রিম প্রজননের মাধ্যমে অল্প সময়ের মধ্যে দেশি অনুন্নত গবাদিপশুর জাতের উন্নয়ন করেছেন। তার উক্ত কার্যক্রমে একদিকে দেশের দুধ ও মাংসের ঘাটতি পূরণ হবে অন্যদিকে তিনি স্বাবলম্বী হবেন। তাই আমাদের মতো অর্থনৈতিক দিক থেকে পশ্চাৎপদ কৃষিনির্ভর দেশে একটি ত্বরিৎ আর্থসামাজিক উন্নয়নে হাসেম মিয়ার কার্যক্রমের ভূমিকা অত্যন্ত সুদূরপ্রসারী ও লাগসই।

৩. মি. রহমত তার জমিতে প্রচুর পরিমাণে ইউরিয়া সার, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে ব্রি-ধান ২৮ জাতের ধান উৎপাদন করেন। এতে তার সংলগ্ন জমির তুলনায় ফলন বেশি হয়। কিন্তু পাশের গ্রামের সুমন তার জমিতে অ্যাজোলা চাষ করে মাটিতে মিশিয়ে ব্রি ধান-২৮ জাতের ধানের চাষ করেন। তার জমির দশ মিটারের মধ্যে অন্য কোনো জাতের ধান চাষ করেন। সে রোগিংসহ সকল পরিচর্যা করেন। এতে তার উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে গেল।
ক. রাইজোবিয়াম কী?
খ. ব্রীজশোধন করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. সুমনের জমিতে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষকের উৎপাদন কৌশল বেশি গ্রহণযোগ্য- যুক্তি দিয়ে বিচার কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. রাইজোবিয়াম হলো এক প্রকারের ব্যাকটেরিয়া যা শিম জাতীয় উদ্ভিদের মূলে নডিউল সৃষ্টি করে।

খ. বীজশোধন করার কারণ হলো-
i. বীজকে রোগজীবাণু মুক্ত রাখা।
ii. বীজবাহিত রোগ থেকে চারা সুস্থ রাখা।
iii. পোকামাকড় থেকে বীজ রক্ষা করা।
iv. সর্বোপরি ফসলের গুণগত মান ও ফলন বৃদ্ধি করা।

গ. সুমনের জমিতে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হলো-
সুমন তার জমিতে অ্যাজোলা চাষ করেছিলেন। অ্যাজোলা উন্নতমানের জৈব সার। অ্যাজোলা মাটিতে অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করে মাটির উর্বরতা বাড়ায় ফলে ফসলের উৎপাদন খরচ কমে যায়। অ্যাজোলা পরপর ২/৩ বার উৎপাদন করে জমিতে মেশাতে পারলে ইউরিয়া ছাড়াই ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলে সারের খরচ কমে যায়।
সুমন তার ধানের জমিতে রোগিংসহ সকল পরিচর্যা করেন। রোগিং করার ফলে ফসলের জমি থেকে আগাছা দূর হয়।। ফলে ফসলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সঠিকভাবে পায়। এছাড়া বিভিন্ন রোগবালাই থেকে ফসল রক্ষা পায় এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হয়। তাই কীটনাশক প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না। এসব কারণেই সুমনের জমিতে উৎপাদন খরচ কমে গিয়েছিল।

ঘ. বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষক সুমনের উৎপাদন কৌশল বেশি গ্রহণযোগ্য। নিচে এর সপক্ষে যুক্তি দেওয়া হলো উন্নত মানের বীজ পেতে হলে যথাযথ নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করে বীজ উৎপাদন করতে হয়। মানসম্মত বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদনে সাধারণ চাষাবাদ ব্যবস্থাপনার চেয়ে অনেক বেশি সতর্কতা, কৌশল অবলম্বন, পরিচর্যা ইত্যাদি করতে হয়। বীজ উৎপাদন কৌশলের মধ্যে বিশেষত স্বতন্ত্রীকরণ দূরত্ব বজায় রাখা ও রোগিং-এ দুটি কাজ অবশ্যই সতর্কতার সাথে সময়মতো করতে হয়। এ দুটি ব্যবস্থা ঠিকমতো পালন করলে বীজের মৌলিক বিশুদ্ধতা বজায় রাখা অনেকটা সম্ভব। মানসম্মত বীজ উৎপাদনে সাধারণত কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। যথা- উপযুক্ত স্থান নির্বাচন, বীজ ফসলের পৃথকীকরণ দূরত্ব, জমি তৈরিকরণ, বীজ শোধন, বীজ বপন সময়, সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান, আগাছা দমন, রোগিং, বীজ সংগ্রহ ইত্যাদি। উদ্দীপকে কৃষক সুমন তার জমিতে অ্যাজোলা চাষ করে মাটিতে মিশিয়েছিলেন ফলে তার জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তার জমির ১০ মিটারের মধ্যে অন্য জাতের ধান চাষ হয়নি ফলে তার ধান বীজে অন্যজাতের মিশ্রণ ঘটবে না। কৃষক সুমন তার ধান বীজ উৎপাদনের সময় রোগিংসহ সব পরিচর্যা করেন, যা মানসম্মত বীজ উৎপাদনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কৃষক সুমন রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার না করে অ্যাজোলা সার, রোগিং, পৃথকীকরণ দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি কৌশল মেনে চলেছেন ফলে তার উৎপাদিত বীজের মান ও গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতএব বীজ উৎপাদনে সুমনের উৎপাদন কৌশল বেশি গ্রহণযোগ্য।

৪. মি. আলম একজন এইচএসসি পাস ভূমিহীন বেকার যুবক। পুষ্টি চাহিদা পূরণ এবং অর্থনৈতিক লাভের জন্য তিনি মাশরুম চাষের উপর প্রশিক্ষণ নেন। প্রশিক্ষণে মাশরুম উৎপাদন কৌশল শেখার পাশাপাশি ভালোমানের স্পন সংগ্রহ এবং উৎপাদনকালীন চাষ ঘরের পরিচর্যার গুরুত্ব সম্পর্কে তিনি অবহিত হন। পরবর্তীতে তিনি তার বাড়িতে মাশরুম চাষের উদ্দেশ্যে একটি ঘর তৈরি করেন এবং মাশরুম চাষ করে সচ্ছলতা ফিরিয়ে আনেন।
ক. কৃত্রিম প্রজনন কী?
খ. 'মধু সর্বরোগের মহৌষধ' - ব্যাখ্যা কর।
গ. মি. আলম মাশরুম চাষের জন্য যেসব পরিচর্যা করেছে- তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বর্তমান প্রেক্ষাপটে মি. আলমের সিদ্ধান্ত কতটুকু সঠিক? উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃত্রিম উপায়ে ষাঁড় থেকে বীর্য বা সিমেন বা শুক্রাণু সংগ্রহ করে নির্দিষ্ট মাত্রায় সেই বীর্য গরম হওয়া গাভীর জরায়ুতে প্রবেশ করিয়ে গর্ভবতী করার পদ্ধতিকে কৃত্রিম প্রজনন বলে।

খ. মধুতে উপস্থিত রিবোফ্লাভিন ও নিকোটিনিক এসিড দেহের সুস্থতা ও সজীবতা রক্ষা করে রোগের প্রতিষেধক হিসেবে কাজ করে। মধুর খাদ্যপ্রাণ মানুষের বেরিবেরি, পেলেগ্রা প্রভৃতি মারাত্মক রোগ প্রতিরোধ করতে সক্ষম। শ্বাসকষ্ট, রক্ত পরিশোধক, ঠান্ডা সর্দি-কাশি প্রতিরোধ, জ্বর নিরাময়ে, ক্ষত, চক্ষু রোগ, জিহবার ঘা, গলার ঘা এবং আগুনে পোড়া ঘা দূর করার জন্য মধু ব্যবহৃত হয়। বুক ও পেটের ব্যথা উপশমে মধু উপকারী। প্রায় সব ধরনের রোগ প্রতিরোধে সক্ষম বলে মধুকে সর্বরোগের মহৌষধ অভিহিত করা হয়।

গ. মি. আলম মাশরুম চাষের জন্য যেসব পরিচর্যা করেছে তা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
i. মাশরুম বেডে বীজ বপনের পর থেকে গজানোর আগ পর্যন্ত তাপমাত্রা ৩৫-৪৫ক্ক সেলসিয়াসের মধ্যে রাখা দরকার এবং মাশরুম গজাতে শুরু করলে তাপমাত্রা ৩০-৩৫° সে.-এর মধ্যে রাখতে হবে।
ii. পলিথিন দ্বারা ভালোভাবে ঢেকে তাপ বাড়ানো এবং খুলে দিয়ে তাপ কমানো যায়। কাজেই অবস্থার পরিপ্রেক্ষিতে তাপ নিয়ন্ত্রণ করতে হবে।

iii. মাশরুম বেডকে পোকামাকড় ও জীবজন্তুর উপদ্রব থেকে রক্ষা করতে হবে। মাশরুমে মাছির প্রকোপ দেখা দিতে পারে। এজন্য ম্যালাথিয়ন (০.১%) স্প্রে করা যেতে পারে। এ ছাড়া ফরমালডিহাইড (৪%) তুলা ভিজিয়ে সানস্ট্রেটে ঘষে দিলে সবুজ বাদামি বা নীল মোল্ড দূর হবে।
iv. মাশরুম বেড সবসময় ভেজা থাকা দরকার। বেডের উপরিভাগ শুকিয়ে গেলে মাঝে মধ্যে হালকাভাবে পানি ছিটিয়ে আর্দ্রতা নিয়ন্ত্রণ করতে হয়।

ঘ. বর্তমান প্রেক্ষাপটে মি. আলমের সিদ্ধান্ত নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
i. বাংলাদেশের আবহাওয়া উপযোগী মাশরুম চাষ সম্প্রসারণের মাধ্যমে এক একর জমির উৎপাদনকে বাড়িয়ে প্রায় ১০ গুণ আমিষ উৎপাদন সম্ভব। এক হিসাবে দেখা গেছে, দানা শস্য বছরে প্রতি হেক্টর ৩-৬ টন উৎপাদন হয়, সেখানে মাশরুম বছরে প্রতি হেক্টরে ২০০ টন উৎপাদন করা সম্ভব।
ii. মাশুরুমের উৎপাদন খরচ প্রতি কেজিতে ৪০ টাকা এবং বিক্রয় মূল্য প্রতি ২০০ টাকা। লাভ হয় প্রতি কেজিতে ১৬০ টাকা। উদ্যান ও মাঠ ফসলে উৎপাদন খরচ বেশি বিক্রির দাম কম। মাশরুমের উৎপাদনের খরচ কম লাভ বেশি।
iii. বিদেশে মাশরুমের ব্যাপক চাহিদা রয়েছে। আমাদের দেশে উৎপাদিত মাশরুম বিদেশে রফতানি করে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন সম্ভব।
iv. মাশরুম চাষ শুরুর মাত্র ১০-১৫ দিনে মাশরুম খাবার উপযোগী হয়। তাই পুঁজি তাড়াতাড়ি ফেরত আসে।
v. মাশরুম চাষে আবাদি জমি প্রয়োজন হয় না। চাষের উপকরণ সহজলভ্য। বেকার যুবক-যুবতী এবং মহিলারা ঘরে বসেই মাশরুমের চাষ করতে পারেন। তাই মহিলা ও বেকার যুবক-যুবতীদের কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
vi. এটা চাষে আবাদি জমির প্রয়োজন হয় না। ঘরে বসেই মাশরুমের চাষ করা যায়। ফলে ভূমিহীন কৃষক মাশরুম চাষের সঙ্গে অনায়াসে সম্পৃক্ত হতে পারেন।
vii. মাশরুম চাষে ঝুঁকি কম। কারণ প্রাকৃতিক দুর্যোগ, রোগবালাই দ্বারা ক্ষতির সম্ভাবনা নেই বললেই চলে।
viii. এটা চাষে শ্রমিক কম লাগে এবং উৎপাদন খরচও কম। উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায় যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে মি. আলমের সিদ্ধান্তটি সঠিক।

৫. জমির আলী একজন আদর্শ কৃষক। এ বছর গম চাষ করতে গিয়ে জমিতে লক্ষ করলেন যে, গমের মতো দেখতে অন্য জাতের ফসল জমিতে আছে। জমিতে ফসল থাকা অবস্থায় তিনি এর যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন।
ক. হাম পুলিং কী?
খ. বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদন করা হয় কেন?
গ. জমির আলীর পর্যবেক্ষণকৃত বিষয়টি কীভাবে করা যায়? বর্ণনা কর।
ঘ. জমির আলীর জমিতে উপযুক্ত বিষয়টির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাটির উপরে আলুগাছের সম্পূর্ণ অংশকে উপরে ফেলাকে হাম পুলিং বলে।

খ. ফসলের ফলন বৃদ্ধির জন্য বীজের জাত বিশুদ্ধতার গুরুত্ব অপরিসীম। কারণ ভালো বীজ থেকে ভালো ফলন পাওয়া যায়। বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদনের মাধ্যমে প্রজাতি ও জাতের বংশধারা রক্ষা করা যায়। তাছাড়া ভালো বীজ বেশি দামে বিক্রি করে আর্থিকভাবে লাভবান হওয়া যায়। এজন্য বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদন করা হয়।

গ. উদ্দীপকে জমির আলী গমের ক্ষেতে অন্য জাতের ফসল দেখে তা রোগিং করে গম উৎপাদন করেছিলেন। নিচে তা বর্ণনা করা হলো-
বীজ ফসলের জমি থেকে নির্বাচিত ফসলের জাত ছাড়া অন্যজাতের ফসলের গাছ অর্থাৎ একই ফসলের অন্য জাতের গাছ জমি থেকে সরিয়ে ফেলাকে রোগিং বলে।
রোগিং প্রক্রিয়া ৩টি পর্যায়ে করা যায়। যথা-
i. শারীরিক বৃদ্ধি পর্যায়ে: বীজের কৌলিক বিশুদ্ধতা রক্ষার জন্য শারীরিক বৃদ্ধি পর্যায়ে প্রথম রোগিং করা দরকার। কারণ অন্য জাতের সাথে পরপরাগায়ন করে নির্বাচিত জাতের বংশগতি বিশুদ্ধতা নষ্ট হতে পারে। এ সময় নির্বাচিত জাতের গাছের সাথে উচ্চতায়, পাতার আকার ও গঠনে এবং অন্য কোনো বৈশিষ্ট্য পার্থক্য দেখা গেলেই তা মাঠ থেকে তুলে ফেলতে হবে। রোগাক্রান্ত, পোকাক্রান্ত গাছ তুলে ধ্বংস করতে হবে।
ii. ফুলোৎপাদন পর্যায়: প্রথম রোগিং-এর সময় কোনো অনাকাঙি্ক্ষত গাছ চিনতে না পারলে ফুল আসার সময় দ্বিতীয় পর্যায়ে সেগুলোকে খুব সাবধানে তুলে ফেলতে হবে। ফুল আসে নাই এমন সরিষা গাছ তুলে ফেলতে হবে। এ সময় অনাকাঙি্ক্ষত গাছের পরাগরেণু বাতাসে ছড়িয়ে গিয়ে নির্বাচিত জাতের বিশুদ্ধতা নষ্ট করতে পারে। ফুলের পাপড়ি, রং, আকার ইত্যাদি দেখেও গাছ তুলে ফেলতে হবে।
iii. পরিপক্ব পর্যায়ে: তৃতীয় ও সর্বশেষ পর্যায়ে ফসল পরিপক্ব হওয়ার কিছু আগে রোগিং করা দরকার। এ সময় নির্বাচিত জাতের গাছের সাথে মিল নেই এমন সব গাছ তুলে ফেলতে হবে। ফসলের ছড়ার মধ্যে কোনো পার্থক্য দেখা গেলে তাও তুলে ফেলতে হবে।

ঘ. উদ্দীপকে জমির আলী জমিতে অন্য জাতের ফসল পর্যবেক্ষণ করে এর যথাযথ ব্যবস্থা নিয়েছিলেন অর্থাৎ রোগিং করেছিলেন। নিচে রোগিং-এর গুরুত্ব বিশ্লেষণ করা হলো-
i. একই ফসলের অন্য জাত জমি থেকে অপসারণ করা হয় বলে বীজের জাত বিশুদ্ধতা রক্ষা পায়।
ii. উন্নত গুণসম্পন্ন বীজ উৎপাদনের জন্য বীজ ফসলের জমিতে রোগিং করা আবশ্যক।
iii. জমি থেকে অনাকাঙি্ক্ষত গাছ তুলে ফেললে নির্বাচিত গাছের জন্য পুষ্টি উপাদান গ্রহণ এবং আলো-বাতাসের ব্যবস্থা ভালো হয়।
iv. রোগিং-এর মাধ্যমে জমি থেকে পোকা ও রোগাক্রান্ত এবং অস্বাভাবিক উদ্ভিদ অপসারণ করা হয় ফলে সুস্থ, সবল ও রোগমুক্ত বীজ পাওয়া যায়।
v.প্রজাতির বংশ রক্ষা করা যায়।
vi. ভেজালমুক্ত বীজ ও খাদ্য পাওয়া যায় এবং বাজারে বীজের ও খাদ্যের দাম বেশি পাওয়া যায়। উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায়, বীজ উৎপাদনে রোগিং এর গুরুত্ব অপরিসীম। ভালো বীজ উৎপাদন করে বেশি ফসল পেতে কৃষকদের বীজ উৎপাদনে অবশ্যই রোগিং করতে হবে।

৬. শহীদ আলী একজন দরিদ্র কৃষক। তার জমিতে ফসলের উৎপাদন ভালো হয় না। অন্যদিকে তার পাশের জমির মালিক জমির মিয়ার জমিতে ফসলের উৎপাদন ভালো হয়। শহীদ আলী জমির মিয়ার কাছে তার ভালো ফসল উৎপাদনের কারণ জানতে চাইলে জমির মিয়া তকে অণুজীব সার ব্যবহার করতে বলেন। তিনি আরও বলেন এটি হলো 'এক প্রযুক্তির দুই লাভ, মাটির শক্তি ছত্রাক সাফ।'
ক. বায়োফানজিসাইড কী?
খ. ট্রাইকোডার্মাকে ডক্টরস ফাংগাস বলা হয় কেন?
গ. শহীদ আলীর জমিতে ফসল ভালো না হওয়ার কারণ বর্ণনা কর।
ঘ. জমির মিয়ার শেষের উক্তিটি শহীদ আলীর কতটা উপকারে আসবে বলে তুমি মনে কর তা বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বায়োফানজিসাইড প্রকৃতি থেকে আহরিত এক ধরনের উপকারী ছত্রাক, যা কৃষিজ উচ্ছিষ্টের উপর সহজে জন্মানো যায়।

খ. ট্রাইকোডার্মা কঠিন বস্তু, যেমন- কাঠের গুঁড়া, গাছের শক্ত অংশ ইত্যাদির বিয়োজনে অন্যান্য অণুজীব বা ছত্রাকের চেয়ে বেশি পারদর্শী। এছাড়াও ট্রাইকোডার্মা মাটিতে অবস্থানকারী রোগজীবাণু খেয়ে পরিবেশকে সুস্থ রাখে। এসব কারণেই ট্রাইকোডার্মাকে ডক্টরস ফাংগাস বলা হয়।

গ. শহীদ আলীর জমিতে ফসল ভালো না হওয়ার কারণ নিচে বর্ণনা করা হলো-
শহীদ আলী তার জমিতে অণুজীব সার ব্যবহার করেনি। অন্যদিকে তিনি দরিদ্র তাই পর্যাপ্ত রাসায়নিক সারও দিতে পারেনি। অণুজীব সারের মধ্যে অণুজীব জীবন্ত থাকে। সারের মাধ্যমে জীবন্ত অণুজীব জমিতে দিলে বংশ বৃদ্ধি করে এবং বাতাস থেকে নাইট্রোজেন আহরণ করে গাছে ও মাটিতে সংযোজক করে মাটির উর্বরতা বাড়ায়। অণুজীব সার পরিমাণে কম লাগে, দাম কম এবং প্রতি ফসলে প্রয়োগ করতে হয় না। অনুজীব সার ফলন বাড়ায় মসুরে ১৫-৪০% ছোলাতে ২০-৪৫% মুগে ১৮-৩৫%, সয়াবিনে ২০-২৫% ইত্যাদি। উদ্দীপকে শহীদ আলী অণুজীব সার ব্যবহার না করে রাসায়নিক সার ব্যবহার করেছেন ফলে মাটির উর্বরতা কমে গেছে, ফসল উৎপাদন কমে গেছে। অন্যদিকে ফসলের রোগ পোকার আক্রমণেও ফসল ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছিল। এজন্যই শহীদ আলীর জমিতে ফসল উৎপাদন ভালো হয়নি।

ঘ. জমির মিয়ার শেষের উক্তিটি হলো 'এক প্রযুক্তির দুই লাভ, মাটির শক্তি ছত্রাক সাফ।' উক্তিটি শহীদ আলীর উপকারে আসবে বলে আমি মনে করি। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
শহীদ আলী একজন দরিদ্র কৃষক এবং তার জমিতে ফসল ভালো হয় না এজন্য জমির মিয়া তাকে অণুজীব সার ব্যবহারের পরামর্শ দিলেন। কারণ অণুজীব সার মাটির উর্বরতা বাড়ায়, ফসলের ফলন বাড়ায়। অন্যদিকে রাসায়নিক সার মাটির উর্বরতা কমায়, দাম বেশি, পরিমাণেও বেশি লাগে, যা শহীদ আলীর জন্য উপযোগী নয়। অণুজীব সার ব্যবহার শহীদ মিয়ার জন্য উপযোগী, কারণ অণুজীব সার পরিমাণে কম লাগে, অপচয় হয় না, দাম কম এবং প্রতি ফসলে প্রয়োগ করতে হয় না। সার্বিকভাবে ফসলের উৎপাদন খরচ কমায়। এছাড়াও অণুজীব সার মাটিবাহিত রোগ দমনে কার্যকর। মাটিতে বসবাসকারী ফসলের বিভিন্ন প্রকার ক্ষতিকর জীবাণু যেমন- ছত্রাক, ব্যাকটেরিয়া ইত্যাদি ধ্বংস করে। ফলে আলাদা করে পেস্টিসাইড ব্যবহার হয় না। এজন্যই অণুজীব সার সম্পর্কে বলা হয়- 'এক প্রযুক্তির দুই লাভ, মাটির শক্তি ছত্রাক সাফ।'

HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৩ pdf download

৭. কামরান সাহেব এ বছর তার ৪০ শতক জমিতে পাট চাষ করেছেন। সঠিক পদ্ধতি অবলম্বন করে তিনি পাটের রিবন রেটিং করলেন। কিন্তু এ বছর খরা থাকার পরও তিনি পাটের ভালো ফলন পেলেন।
ক. রিবন রেটিং কী?
খ. রিবন রেটিং পদ্ধতি কেন উদ্ভাবন করা হয়েছে?
গ. কামরান সাহেবের কর্মকান্ড বর্ণনা কর।
ঘ. খরা থাকার পরও কেন কামরান সাহেব ভালো ফলন পেলেন বলে তুমি মনে কর?

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পাটগাছ কাটার পর কাঁচা অবস্থায় গাছ থেকে ছাল ফিতার মতো পৃথক করে পরে ছাল পচানোর ব্যবস্থা করাকে রিবন রেটিং বলে।

খ. পাট ভালোভাবে পচাতে হলে পর্যাপ্ত মিষ্টি পানির প্রয়োজন।
তাছাড়া মৃদু স্রোতযুক্ত স্থান হলে আঁশের রং ও মান দুটিই ভালো হয়। বাংলাদেশের অভ্যন্তরে পানির প্রবাহ ও উৎস কমে গেছে। তাই পাটের আঁশের মান ঠিক রাখাসহ কতকগুলো বিষয় বিবেচনা করে রিবন রেটিং পদ্ধতি উদ্ভাবিত হয়েছে।

গ. কামরান সাহেব এ বছর তার ৪০ শতক জমিতে পাট চাষ করেছিলেন। আঁশের জন্য পাট চাষ করা হয় বলে পাট উৎপাদনের অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ ধাপ হলো পাটের রিবন রেটিং। তিনি ১০০-১১০ দিন বয়সের পাট কেটে ফেলেছিলেন। সে সময় প্রায় ৫০% গাছে কুঁড়ি দেখা গিয়েছিল। এরপর তিনি কাটা পাটের পাতার অংশ ৭২ ঘণ্টার জন্য ঢেকে রেখে দিয়েছিলেন যেন পাতা ঝরে পরে। অতঃপর তিনি পাটের গোড়ার ৩-৪ ইঞ্চি পরিমাণ মুগুর দিয়ে থেঁতলে দিয়েছিলেন। তিনি পাটের ছাল ছাড়ানোর জন্যঁ আকৃতির রিবনার ব্যবহার করেছিলেন। এরপর তিনি পাটের ছাল পচানোর জন্য প্রতি বিঘা হিসেবে ৬ মিটার দৈর্ঘ্য, ২ মিটার প্রস্থ ও ১ মিটার গভীর ১টি করে গর্ত খনন করে পলিথিন দিয়ে গর্তের তল ও কিনারা মুড়িয়ে দিয়েছিলেন। এরপর গর্তে প্রয়োজনমতো পানি দিয়ে আঁটি বাঁধা ছালগুলোকে ১২-১৫ দিনের জন্য পচিয়েছিলেন। পচনক্রিয়া ত্বরান্বিত করতে তিনি প্রতি ১০০০ কেজি ছালের জন্য ১০০ গ্রাম ইউরিয়া সার পানিতে মিশিয়েছিলেন। এরপর পচনকৃত ছাল পরিষ্কার পানি দিয়ে ধুয়ে বাঁশের আড়ায় সেগুলোকে শুকিয়েছিলেন। এভাবেই কামরান সাহেব তার উৎপাদিত পাটের রিবন রেটিং করেছিলেন।

ঘ. খরা থাকার পরও কামরান সাহেব পাটের ভালো ফলন পাওয়ার কারণ আমার মতামত দ্বারা বিশ্লেষণ করা হলো-
সাধারণত দেখা যায় যে, পাট উৎপাদনকারী যেসব এলাকায় পচন পানির যথেষ্ট অভাব রয়েছে সেসব এলাকায় উৎপাদিত পাটের আঁশ অত্যন্ত নিম্নমানের হয়ে থাকে। এর ফলে উক্ত এলাকার চাষিরা পাট ভালো মূল্যে বিক্রি করতে পারেন না। এবং পাট চাষে আগ্রহ হারিয়ে ফেলেন। এ সমস্যা সমাধানে বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট দীর্ঘদিন গবেষণা করে জলাভাবসম্পন্ন এলাকার জন্য বিকল্প পাট পচন পদ্ধতি আবিষ্কার করেছে, যা রিবন রেটিং নামে পরিচিত। কিন্তু অনেক কৃষকই এ পদ্ধতি সম্পর্কে জানেন না। কামরান সাহেব এ পদ্ধতিটি জানতেন এবং খরা হওয়ার কারণে তিনি এ পদ্ধতি সঠিকভাবে ব্যবহার করে পাটের আঁশ সংগ্রহ করেছিলেন। পাট পচানোর রিবন রেটিং পদ্ধতি ব্যবহারের কারণেই খরা থাকার পরও তিনি ভালো ফলন পেয়েছেন বলে আমি মনে করি।

৮. মি. রিপন একজন দরিদ্র কৃষক। তার নিজস্ব কোনো জমি নেই। তিনি তার পরিবার নিয়ে অত্যন্ত কষ্টে জীবনযাপন করতেন। এমতাবস্থায় তার পাশে এসে দাঁড়াল গ্রামীণ যুব উন্নয়ন সংস্থা। এই সংস্থা থেকে তাকে জমি বর্গা দেওয়া হলো এবং রেশম চাষের পরামর্শ দিল। এ উদ্দেশ্য তিনি জমিতে তুঁতগাছ রোপণ করলেন।
ক. রেশম কী?
খ. রেশম গুটি অবস্থায় রোদে শুকানো উচিত নয় কেন?
গ. উক্ত গাছ রোপণে মি. রিপনের কর্মকান্ড বর্ণনা কর।
ঘ. মি. রিপনের দারিদ্র্য নিরসনে গ্রামীণ যুব উন্নয়ন সংস্থার পরামর্শটির যৌক্তিকতা মূল্যায়ন কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. রেশম পোকার মুখ নিঃসৃত নালাই হচ্ছে রেশম।

খ.রেশম গুটি অবস্থায় কখনো গাদা বা রোদে শুকিয়ে সংরক্ষণ, করা উচিত নয়। কারণ তাতে সুতা নরম হয়ে যাওয়ার সম্ভাবনা থাকে এবং গুণগত মান কমে যেতে পারে।

গ. মি.রিপন একজন দরিদ্র কৃষক। তার নিজস্ব কোনো জমি না থাকায় গ্রামীণ যুব উন্নয়ন সংস্থা থেকে তাকে জমি বর্গা দিলেন এবং রেশম চাষের পরামর্শ দিলেন। এ উদ্দেশ্যে তিনি জমিতে তুঁতগাছ রোপণ শুরু করলেন। প্রথমে তিনি জমি ৩-৪ বার চাষ দিয়ে মাটি গুঁড়া করে নিলেন। তারপর জমিতে প্রতিসারিতে দুই লাইন করে ৪৫-৬০ সে.মি. দূরত্বে ৪৫ সে.মি. × ৪৫ সে.মি. × ৪৫ সে.মি. আকারে গর্ত করেন এবং প্রতি গর্তে ৫ কেজি গোবর সার ও ১৫০ গ্রাম টিএসপি সার মিশিয়ে দিলেন। চারা লাগানোর ১০-১২ দিন পূর্বে তিনি এ কাজ করলেন। তিনি তুঁতগাছ সংগ্রহ করে কাটিং করে চারা। তৈরি করে প্রতি গর্তে রোপণ করেছিলেন। চারা রোপণের সময় প্রতিগর্তে ২৩০ গ্রাম ইউরিয়া ও ১০০ গ্রাম এমওপি সার মিশিয়ে দিয়েছিলেন। এছাড়া চারা রোপণের পর পানি দিয়ে ভিজিয়ে দিলেন। এতে চারা তাড়াতাড়ি মাটির সাথে লেগে যায়। এভাবে ডাল লাগানোর ৬-৭ মাসের মধ্যেই নতুন গাছগুলো প্রথম পাতা তোলার জন্য উপযুক্ত হয়। এতে পর্যাপ্ত পাতা ও ডালপালা বের হলে মাটি ও আগাছা পরিষ্কার করে দিলেন এবং বিভিন্ন সময়ে তুঁত পাতা ছাঁটাই করে তুঁতপাতা সংগ্রহ করলেন।

ঘ. মি. রিপনের দারিদ্র্য নিরসনে গ্রামীণ যুব উন্নয়ন সংস্থার রেশম চাষের পরামর্শটি অত্যন্ত ফলপ্রসূ হবে। যেসব কারণে সিদ্ধান্তটি ফলপ্রসূ হবে তা নিচে মূল্যায়ন করা হলো-
বাংলাদেশের রেশম বস্ত্র আজ আন্তর্জাতিক বাজারে যথেষ্ট খ্যাতি অর্জন করেছে। এ খ্যাতির মূলে রয়েছে বাংলাদেশি রেশমের উৎকর্ষ, ঔজ্জ্বল্য ও স্থায়িত্ব। এদেশের প্রায় ৫০ হাজার লোকের কর্মসংস্থান প্রত্যক্ষভাবে রেশম চাষের উপর নির্ভরশীল। কেননা যেকোনো ফসলের চেয়ে রেশম চাষে লাভবান হওয়ার সম্ভাবনা অনেক বেশি। এটি চাষে বারবার জমি চাষ, আগাছা দমন, সেচ ও রোগ ব্যবস্থাপনার প্রয়োজন হয় না। একবার রোপণের ফলে ২০-২৫ বছর পর্যন্ত পাতা সংগ্রহ করা যায়। বাড়ির আনাচে-কানাচে পতিত জমি, জমির আইল, রাস্তা ও বাঁধের পাশে তুঁতগাছ চাষ করা যায়। রেশম চাষে ঘরে বাইরে দুই জায়গাতেই কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়। বিশেষ কোনো যন্ত্রপাতি ছাড়াই গ্রামীণ পরিবেশে সাধারণ পদ্ধতিতে চাষ করা যায়। রেশমের গুটি থেকে অভ্যন্ত উন্নতমানের সুতা তৈরি হয়, যা দ্বারা রফতানিযোগ্য কাপড় তৈরি হয়। ফলে বৈদেশিক মুদ্রা আয় হয়। এছাড়া রেশম চাষে বিঘাপ্রতি বছরে ৩০-৩২ হাজার টাকা আয় করা সম্ভব। এর লার্ভা মাছ, হাঁস, মুরগির খাদ্য হিসেবে বিক্রি করা যায়। স্বল্প পুঁজি ও সহজ উপায়ে রেশম উৎপাদনের মাধ্যমে বেকার যুবক-যুবতী, নারী-পুরুষ, দুস্থ মহিলা, ভূমিহীন নারী পুরুষ সবাই ঘরে বসে উপার্জন করতে পারে। ফলে দেশের জনগণের কর্মসংস্থানের পাশাপাশি আত্মকর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। উক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, গ্রামীণ যুব উন্নয়ন সংখ্যার রেশম চাষের পরামর্শটি মি. রিপনের দারিদ্র্যতা নিরসনে উপযুক্ত ভূমিকা পালন করবে।

৯. মি. খোকন তার জমিতে প্রচুর পরিমাণে ইউরিয়া সার, সেচ ও কীটনাশক প্রয়োগের মাধ্যমে ব্রি-ধান ২৮ জাতের ধান উৎপাদন করেন। এতে তার সংলগ্ন জমির তুলনায় ফলন বেশি হয়। কিন্তু পাশের গ্রামের রোকন তার জমিতে অ্যাজোলা চাষ করে মাটিতে মিশিয়ে ব্রি ধান-২৮ জাতের ধানের চাষ করেন। তার জমির দশ মিটারের মধ্যে অন্য কোনো জাতের ধান চাষ করেন। তিনি রোগিংসহ সকল পরিচর্যা করেন। এতে তার উৎপাদন খরচ অনেকটা কমে গেল।
ক. রিবন রেটিং কী?
খ. বীজশোধন করা হয় কেন? ব্যাখ্যা কর।
গ. রোকনের জমিতে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা কর।
ঘ. বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কার উৎপাদন কৌশল বেশি গ্রহণযোগ্য- যুক্তি দিয়ে বিচার কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. পাটগাছ কাটার পর কাঁচা অবস্থায় গাছ থেকে ছাল ফিতার মতো পৃথক করে পরে ছাল পচানোর ব্যবস্থা করাকে রিবন রেটিং বলে।

খ. বীজশোধন করার কারণ হলো-
i. বীজকে রোগজীবাণু মুক্ত রাখা।
ii. বীজবাহিত রোগ থেকে চারা সুস্থ রাখা।
iii. পোকামাকড় থেকে বীজ রক্ষা করা।
iv. সর্বোপরি ফসলের গুণগত মান ও ফলন বৃদ্ধি করা।

গ. রোকনের জমিতে উৎপাদন খরচ কমে যাওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হলো-
রোকন তার জমিতে অ্যাজোলা চাষ করেছিলেন। অ্যাজোলা উন্নতমানের জৈব সার। অ্যাজোলা মাটিতে অণুজীবের সংখ্যা বৃদ্ধি করে মাটির উর্বরতা বাড়ায় ফলে ফসলের উৎপাদন খরচ কমে যায়। অ্যাজোলা পরপর ২/৩ বার উৎপাদন করে জমিতে মেশাতে পারলে ইউরিয়া ছাড়াই ভালো ফলন পাওয়া যায়। ফলে সারের খরচ কমে যায়।
রোকন তার ধানের জমিতে রোগিংসহ সকল পরিচর্যা করেন। রোগিং করার ফলে ফসলের জমি থেকে আগাছা দূর হয়। ফলে ফসলের প্রয়োজনীয় পুষ্টি উপাদান সঠিকভাবে পায়। এছাড়া বিভিন্ন রোগ বালাই থেকে ফসল রক্ষা পায় এবং কীটপতঙ্গের আক্রমণ কম হয়। তাই কীটনাশক প্রয়োগ করার প্রয়োজন পড়ে না। এসব কারণেই রোকনের জমিতে উৎপাদন খরচ কমে গিয়েছিল।

ঘ. বীজ উৎপাদনের ক্ষেত্রে কৃষক রোকনের উৎপাদন কৌশল বেশি। গ্রহণযোগ্য। নিচে এর সপক্ষে যুক্তি দেওয়া হলো-
উন্নত মানের বীজ পেতে হলে যথাযথ নিয়ম ও পদ্ধতি অনুসরণ করে বীজ উৎপাদন করতে হয়। মানসম্মত বিশুদ্ধ বীজ উৎপাদনে সাধারণ চাষাবাদ ব্যবস্থাপনার চেয়ে অনেক বেশি সতর্কতা, কৌশল অবলম্বন, পরিচর্যা ইত্যাদি করতে হয়। বীজ উৎপাদন কৌশলের মধ্যে বিশেষত স্বতন্ত্রীকরণ দূরত্ব বজায় রাখা ও রোগিং-এ দুটি কাজ অবশ্যই সতর্কতার সাথে সময়মতো করতে হয়। এ দুটি ব্যবস্থা ঠিকমতো পালন করলে বীজের মৌলিক বিশুদ্ধতা বজায় রাখা অনেকটা সম্ভব। মানসম্মত বীজ উৎপাদনে সাধারণত কিছু কৌশল অবলম্বন করতে হয়। যথা- উপযুক্ত স্থান নির্বাচন, বীজ ফসলের পৃথকীকরণ দূরত্ব, জমি তৈরিকরণ, বীজ শোধন, বীজ বপন সময়, সার প্রয়োগ, সেচ প্রদান, আগাছা দমন, রোগিং, বীজ সংগ্রহ ইত্যাদি। উদ্দীপকে কৃষক রোকন তার জমিতে অ্যাজোলা চাষ করে মাটিতে মিশিয়েছিলেন ফলে তার জমির উর্বরতা বৃদ্ধি পেয়েছিল। তার জমির ১০ মিটারের মধ্যে অন্য জাতের ধান চাষ হয়নি ফলে তার ধান বীজে অন্যজাতের মিশ্রণ ঘটবে না। অর্থাৎ তার ধান বীজে জাতের বিশুদ্ধতা বজায় থাকবে। কৃষক রোকন তার ধান বীজ উৎপাদনের সময় রোগিংসহ সব পরিচর্যা করেন যা মানসম্মত বীজ উৎপাদনে অনেক গুরুত্বপূর্ণ। কৃষক রোকন রাসায়নিক সার, কীটনাশক ইত্যাদি ব্যবহার না করে অ্যাজোলা সার, রোগিং, পৃথকীকরণ দূরত্ব বজায় রাখা ইত্যাদি কৌশল মেনে চলেছেন ফলে তার উৎপাদিত বীজের মান ও গুণ বৃদ্ধি পেয়েছে। অতএব, বীজ উৎপাদনে রোকনের উৎপাদন কৌশল বেশি গ্রহণযোগ্য।

১০. জহির উদ্দিন গরু পালন করেন। তার গরুগুলো রুগ্ণ এবং বেশি দুধ দেয় না। কিন্তু তার প্রতিবেশী করিম মোল্লার গরুগুলো বলিষ্ঠ, কর্মক্ষম ও বেশি দুধ দেয়। জহির উদ্দীন তার গরুগুলোর অবস্থার উন্নতির জন্য করিম মোল্লার কাছে পরামর্শ চাইলে করিম মোল্লা তাকে কৃত্রিম প্রজননের কথা বলেন।
ক. কৃত্রিম প্রজনন কী?
খ. গরুর সিমেন কীভাবে সংরক্ষণ করা যায়, ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রযুক্তির উদ্দেশ্য বর্ণনা কর।
ঘ. 'কৃত্রিম প্রজনন গরুর জাত উন্নয়নে একটি উত্তম পন্থা' উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পদ্ধতিতে গর্ভধারণের উদ্দেশ্যে কৃত্রিমভাবে সংগৃহীত ও প্রক্রিয়াজাতকৃত ষাঁড়ের বীর্য বা সিমেন কৃত্রিমভাবে গাভী বা বকনার জরায়ুতে প্রবেশ করানো হয়, তাকে কৃত্রিম প্রজনন বলে।

খ. ষাঁড় থেকে বীর্য সংগ্রহ করে প্রক্রিয়াকরণ করার পর ৩-৫° সে. তাপমাত্রায় রেফ্রিজারেটরে ২/৩ দিন পর্যন্ত সংরক্ষণ করা যায়। প্রজননের জন্যে এ সিমেন দূর-দূরান্তে নেওয়ার প্রয়োজন হয়। শুক্রাণু বাইরের গরম আবহাওয়া সহ্য করতে পারে না বলে সহজেই নষ্ট হয়ে যায়। তাই থার্মোফ্লাক্সে বরফ দিয়ে তার মধ্যে সিমেন রেখে পরিবহন করতে হয়। এ অবস্থায় ৩ দিন পর্যন্ত সিমেনের কার্যকারিতা থাকে।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত প্রযুক্তিটি হলো কৃত্রিম প্রজনন পদ্ধতি। উন্নতজাতের ষাঁড়ের বীর্য সংগ্রহ করে দেশি গাভীকে প্রজনন করানো হলে ষাঁড়ের উন্নত গুণাবলি তার বাচ্চার মধ্যে সঞ্চালিত হয়। এজন্য কৃত্রিম প্রজনন দরকার। নিচে কৃত্রিম প্রজননের উদ্দেশ্য বর্ণনা করা হলো-
i. কম সময়ে গৃহপালিত পশুর জাত উন্নত করা।
ii. কৃষিকাজের জন্যে বলিষ্ঠ ও কর্মক্ষম গরু সৃষ্টি করা।
iii. দুধ ও মাংসের (আমিষ খাদ্য) ঘাটতি পূরণ করা।
iv. গাভীর প্রজনন সংকট ও বিভিন্ন যৌনব্যাধি প্রতিরোধ করা।
v. পছন্দমতো সংকর জাতের বাচ্চা উৎপাদন করা।
vi. আমিষ খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি করা।
vii. অধিক কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা।

ঘ. কৃত্রিম প্রজনন গরুর জাত উন্নয়নের একটি উত্তম পন্থা-উক্তিটি নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
গরুর জাত উন্নয়নের একাধিক প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কারণ যেখানে দেশি গাভী দৈনিক ১-২ লিটার দুধ দেয়, তাকে উন্নত পরিবেশ এবং সুষম খাদ্য দিলেও এ উৎপাদন ৩ লিটারের বেশি আশা করা যায় না। কিন্তু দেশি গাভী উন্নত জাতের ষাঁড়ের সঙ্গে সংক্ররায়ণের মাধ্যমে যে বাচ্চা হবে সেটি থেকে ১০-১৫ লিটার দুধ পাওয়া সম্ভব হবে। বাংলাদেশের গবাদিপশু আকারে ছোট, মাংস উৎপাদন ক্ষমতা খুবই কম। একটি প্রাপ্ত বয়স্ক গরুর ওজন গড়ে ১০০ কেজি মাত্র। অথচ উন্নত জাতের ষাঁড়ের সঙ্গে সংকরায়ণের মাধ্যমে যে বাচ্চা হবে সেটি প্রাপ্ত বয়স্ক হলে ওজন হবে ৩০০-৪০০ কেজি। এতে গরুর আকার বড় হবে, মাংস বেশি হবে ও ভালো মানের চামড়াও পাওয়া যাবে। ফসলাদির উৎপাদন মূলত পশুসম্পদের ওপরই নির্ভরশীল। একজোড়া দেশি বলদ বছরে ৩-৪ একর জমি চাষ করতে পারে। অন্যদিকে সংকরায়িত একজোড়া বলদ দ্বারা বছরে ৭-৮ একর জমি চাষ করা সম্ভব। দেশি গবাদিপশুর জাত উন্নয়নের ফলে দুধ, মাংস ও শক্তি উৎপাদন বাড়বে। এতে গ্রামীণ বেকার মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা হবে এবং বেকারত্ব ও দারিদ্র্য বিমোচন হবে। গরু মোটাতাজাকরণে দেশি গরু চেয়ে সংকরায়িত গরুর মাধ্যমে প্রচুর অর্থ আয় করা যায়।
উক্ত আলোচনা পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশে জনসংখ্যা দ্রুত বৃদ্ধির ফলে দুধ ও মাংসের চাহিদা পূরণ, কৃষিকার্য পরিচালনায় গরুর জাত উন্নয়নের কোনো বিকল্প নেই। তাই কৃত্রিম প্রজননের পন্থা দেশের গো-খামার শিল্প বিকাশ এবং উন্নত জাত উৎপাদনের পথ সৃষ্টি করবে।

No comments:

Post a Comment