বিজয় দিবস | রচনা - Exam Cares

Breaking

Home Top Ad

Responsive Ads Here

Post Top Ad

Responsive Ads Here

বিজয় দিবস | রচনা

বিজয় দিবস

সূচনা:
কাল যেখানে পরাজয়ের কালো সন্ধ্যা হয়,
আজ সেখানে নতুন করে রৌদ্র লেখে জয়।
বাঙালির জাতীয় জীবনে ১৬ই ডিসেম্বর এক মহিমান্বিত দিন। এ দিনটি আমাদের বিজয় দিবস। দীর্ঘ নয় মাস সংগ্রাম শেষে এই দিনেই আমরা চূড়ান্তভাবে স্বাধীনতা লাভে সক্ষম হই।

বিজয় দিবস | রচনা

পটভূমি: ১৯৪৭ সালে ব্রিটিশদের দীর্ঘ ২০০ বছরের শাসনের অবসান ঘটলে ভারত ও পাকিস্তান নামে দুটি রাষ্ট্র গঠিত হয়। পাকিস্তান আবার দুটি অংশে বিভক্ত ছিল। পূর্ব পাকিস্তান ও পশ্চিম পাকিস্তান। বাংলাদেশ অর্থাৎ তৎকালীন পূর্ব পাকিস্তানের জনগণ নতুন করে পরাধীন হয় পশ্চিম পাকিস্তানি শাসকগোষ্ঠীর হাতে। তাদের অত্যাচারে আমাদের মৌলিক অধিকারসমূহ ভূলুণ্ঠিত হয়। আমাদের শিক্ষা, সংস্কৃতি, ঐতিহ্যের ওপরও তারা আঘাত হানে।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

এমনকি আমাদের মুখের ভাষা পর্যন্ত কেড়ে নিতে চায়। বাংলার সংগ্রামী জনতা তাদের সমস্ত অত্যাচারের বিরুদ্ধে তীব্র আন্দোলন গড়ে তোলে। ১৯৭০ সালের নির্বাচনে বাঙালির প্রাণপ্রিয় নেতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নেতৃত্বাধীন আওয়ামী লীগ নির্বাচনে জয় লাভ করে। কিন্তু পাকিস্তান সরকার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা ছাড়তে চায় না। ১৯৭১ সালের ৭ই মার্চ এক ঐতিহাসিক ভাষণে বঙ্গবন্ধু সমগ্র দেশবাসীকে সশস্ত্র সংগ্রামের প্রস্তুতি নেওয়ার আহবান জানান। তাঁর আহবানে সাড়া দিয়ে সমগ্র বাঙালি জাতি স্বাধীনতা সংগ্রামের প্রস্তুতি গ্রহণ করে।

স্বাধীনতা সংগ্রাম: বঙ্গবন্ধুর ৭ই মার্চের ঘোষণার পর আপস আলোচনার নামে কালক্ষেপণ করে ইয়াহিয়া খান পশ্চিম পাকিস্তান থেকে সৈন্য ও রসদ এনে শক্তি বৃদ্ধি করে। এরপর ২৫ মার্চ পাকিস্তান সেনাবাহিনী ঝাঁপিয়ে পড়ে নিরস্ত্র বাঙালির ওপর। ঐ রাতেই গ্রেফতার করা হয় বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানকে। গ্রেফতারের আগে তিনি স্বাধীনতা ঘোষণা করেন।

তার ঘোষণায় সমগ্র বাঙালি জাতি ঝাঁপিয়ে পড়ে সশস্ত্র লড়াইয়ে। এ দেশের অগণিত ছাত্র-জনতা, পুলিশ, ইপিআর, আনসার ও সামরিক, বেসামরিক লোকদের সমন্বয়ে গঠিত হয় মুক্তিবাহিনী। তারা গেরিলা ও মুখোমুখি যুদ্ধ করে শত্রুসেনাকে পর্যুদস্ত করে তোলে। ১৯৭১ সালের ১০ এপ্রিল গঠিত মুজিবনগর সরকারের নেতৃত্বে চলতে থাকে স্বাধীনতাযুদ্ধ।

কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা লাভ: দীর্ঘ নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষের পর লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অবশেষে বাঙালি জাতি লাভ করে কাঙ্ক্ষিত স্বাধীনতা। পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী মুক্তিবাহিনী ও মিত্রবাহিনীর কাছে সম্পূর্ণরূপে পর্যুদস্ত হয়। ১৯৭১ সালের ১৬ই ডিসেম্বর আসে বাঙালি জাতির জীবনের সেই মাহেন্দ্রক্ষণ। সেদিন বিকেল ৫টা ১ মিনিট ঢাকার রেসকোর্স ময়দানে পাকিস্তান হানাদার বাহিনী নিঃশর্তভাবে আত্মসমর্পণ করে। ঐতিহাসিক এই দিনটিকে স্মরণীয় করে রাখতে পালিত হয় মহান বিজয় দিবস।

বিজয় দিবস উদযাপন: প্রতিবছর ১৬ ডিসেম্বর চরম উৎসাহ উদ্দীপনার মধ্য দিয়ে সারা দেশে পালিত হয় মহান বিজয় দিবস। এদিন সারা দেশে সরকারি ভবনসমূহ আলোকসজ্জায় সজ্জিত করা হয়। সারা দেশে সরকারি ছুটি ঘোষণা করা হয়। সকালে জাতীয় স্মৃতিসৌধে ফুল দিয়ে মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানানো হয়। পত্রপত্রিকাগুলো বিশেষ ক্রোড়পত্র প্রকাশ করে। টিভি ও রেডিও চ্যানেলগুলো প্রচার করে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা। এভাবে সমগ্র বাঙালি জাতির কাছে বিজয় দিবস হয়ে ওঠে উৎসবের দিন।

বিজয় দিবসের চেতনা: বিজয় দিবস আমাদের দেশপ্রেমকে শাণিত করে। আমরা অন্যায়ের বিরুদ্ধে মাথা উঁচু করে লড়াই করার প্রেরণা পাই। দেশের সার্বভৌমত্ব রক্ষায় নিজেদের কর্তব্য সম্পর্কে সচেতন হই। মহান মুক্তিযুদ্ধে শহিদদের প্রতি শ্রদ্ধা ও ভালোবাসা জানাতে শিখি এই দিনে।

উপসংহার: লাখো মানুষের রক্তের বিনিময়ে অর্জিত হয়েছে মহান স্বাধীনতা। ১৬ই ডিসেম্বর আমাদের সেই গৌরবের কথাই স্মরণ করিয়ে দেয়।

দীর্ঘ নয় মাসের মুক্তিসংগ্রামের মধ্য দিয়ে বাংলাদেশের স্বাধীনতা এসেছে। আজ আমরা স্বাধীন সার্বভৌম দেশের নাগরিক। লক্ষ লক্ষ প্রাণের বিনিময়ে অর্জিত এই স্বাধীনতার আনন্দ আমাদেরকে দেশপ্রেমী করে। মহান বিজয় দিবসে বাঙালি উক্ত মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় সমুজ্জ্বল হয়।

No comments:

Post a Comment

Post Bottom Ad

Responsive Ads Here