G

বিশ্ব যোগাযোগে ইন্টারনেটের ভূমিকা | রচনা

বিশ্ব যোগাযোগে ইন্টারনেটের ভূমিকা

[কু. বো. ১১, ব. বো. ১০]

ভূমিকা: বিজ্ঞানের বিস্ময়কর আবিষ্কার মানুষের জীবনে এনে দিয়েছে অভাবনীয় উন্নতি, প্রগতি এবং সুখ-স্বাচ্ছন্দ্য। বিজ্ঞানের যেসব আবিষ্কার মানুষকে সভ্যতার স্বর্ণশিখরে আরোহণ করতে সহায়তা করেছে তার অন্যতম হলো ইন্টারনেট। বর্তমান বিশ্বে বহুল আলোচিত গতিময়তার এক মাইলফলক এই ইন্টারনেট।

বর্তমান বিশ্বের তথ্যপ্রযুক্তির কর্মকাণ্ডকে এটি এমন এক সুতোয় গেঁথেছে যে, সে সুতো ছিঁড়ে গেলে হয়তো সমগ্র বিশ্বব্যবস্থাই অচল হয়ে পড়বে।

বিশ্ব যোগাযোগে ইন্টারনেটের ভূমিকা | রচনা

ইন্টারনেট কী: ইন্টারনেট হলো ইন্টারন্যাশনাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ক সার্ভিস। অসংখ্য নেটওয়ার্কের সমন্বয়ে গঠিত বিশ্বব্যাপী সুবিশাল কম্পিউটার নেটওয়ার্ককে ইন্টারনেট বলা হয়। অর্থাৎ ইন্টারনেট হলো কম্পিউটারের আন্তর্জাতিক নেটওয়ার্ক, যাকে ইংরেজিতে বলা যায়- World Wide Electronic Network. ইন্টারনেটের মাধ্যমে ব্যক্তিগত ও প্রাতিষ্ঠানিক সব ধরনের কম্পিউটার অতি দ্রুততার সাথে যোগাযোগ করতে পারে এবং তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।

ইন্টারনেট উদ্ভাবনের ইতিহাস: ইন্টারনেট উদ্ভাবনের প্রাথমিক কারণ ছিল সামরিক। বিশ্বের দুই পরাশক্তি সোভিয়েত ইউনিয়ন ও মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের মধ্যে চরম স্নায়ুযুদ্ধের কারণে দুই পরাশক্তির সমরবিশারদরাই পারমাণবিক বোমার ভয়ে অস্থির হয়ে উঠেছিলেন। তাদের সন্দেহ ছিল ধ্বংসাত্মক পারমাণবিক বোমা বিস্ফোরিত হলে পুরো যোগাযোগ ব্যবস্থা ভেঙে পড়তে পারে।

এজন্য যোগাযোগ মাধ্যমকে ধ্বংসের কবল থেকে রক্ষা করার চিন্তায় টেলিফোনের বিকল্প ব্যবস্থা হিসেবে ইন্টারনেট উদ্ভাবন করা হয়। মার্কিন সামরিক সংস্থা ১৯৬৯ সালে প্রথম ইন্টারনেটের ব্যবহার শুরু করে। তখন এটি পরিচিত ছিল ‘MILNET নামে।

এ প্রযুক্তিকে আরও জনকল্যাণমুখী করে তোলার জন্য পরীক্ষামূলকভাবে মার্কিন বিশ্ববিদ্যালয়গুলোকে দেওয়া হলে তারা শিক্ষা, গবেষণা এবং তথ্য আদান-প্রদানের ক্ষেত্রে অভূতপূর্ব সাফল্য অর্জন করে।

তখন শিক্ষাজগতে এর নামকরণ হয় ‘অ্যাপারনেট'। পরবর্তীকালে এটি আন্তর্জাতিক যোগাযোগের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়, যা বর্তমানে ইন্টারনেট নামে পরিচিতি লাভ করেছে।

ইন্টারনেটের প্রকারভেদ: ব্যবহারকারীরা দুভাবে ইন্টারনেটের গ্রাহক হতে পারে। প্রথমটি হলো অনলাইন ইন্টারনেট। টেলিফোন লাইনের মাধ্যমে সরাসরি কম্পিউটারে ইন্টারনেটের অন্য যেকোনো সার্ভিস প্রোভাইডারের সঙ্গে যুক্ত করার পদ্ধতিকে অনলাইন ইন্টারনেট বলা হয়। তাতে ব্যবহারকারীরা যেকোনো সময় অন্য যেকোনো প্রোভাইডারের সাথে সম্পৃক্ত হতে পারে।

এছাড়াও IPACCES পদ্ধতিতে সরাসরি অনলাইন ইন্টারনেটের সঙ্গে সংযুক্ত হওয়া যায়। দ্বিতীয় হলো অফলাইন ইন্টারনেট নামে পরিচিত। এ প্রক্রিয়ায় গ্রাহকরা নিকটবর্তী কোনো সার্ভারকে মাধ্যম হিসেবে গ্রহণ করে বলেই এটাকে অফলাইন ইন্টারনেট বলা হয়ে থাকে। এ পদ্ধতিতে গ্রাহকরা কম খরচে যোগাযোগ ও তথ্য আদান-প্রদান করতে পারে।

ইন্টারনেট ব্যবহারের পদ্ধতি: ইন্টারনেটের ব্যবহার পদ্ধতি বিভিন্ন রকম। যেমন-
ক. ওয়েব: ওয়েব হচ্ছে ইন্টারনেটের মাধ্যমে সংযুক্ত কম্পিউটারগুলোতে যে তথ্য রাখা হয়েছে সেগুলো ব্যবহারের পদ্ধতি।

খ. চ্যাট: চ্যাটের সাহায্যে একই সময়ে একাধিক ব্যক্তির সাথে কথা বলা যায়।

গ. ই-মেইল: এ পদ্ধতি হচ্ছে সংবাদ আদান-প্রদানের এক সহজ ব্যবস্থা। এ পদ্ধতিতে অতিদ্রুত তথ্য আদান-প্রদান সম্ভব।

ঘ. নেট নিউজ: এ পদ্ধতিতে ইন্টারনেটে সংরক্ষিত সংবাদ যেকোনো সময় উন্মুক্ত করা যায়।

ঙ. ই-ক্যাশ: ইন্টারনেটের মাধ্যমে ইলেকট্রনিক ব্যাংকিং ব্যবস্থাকে ই-ক্যাশ পদ্ধতি বলে।

চ. আর্কি: আর্কি হচ্ছে নেটওয়ার্ক তথ্যসেবা প্রদানের উদ্দেশ্যে স্থাপিত একটি পদ্ধতি, যা তথ্যগুলোকে স্বয়ংক্রিয়ভাবে সূচি আকারে সমন্বয় করতে সক্ষম।

ইন্টরনেট ব্যবহারের সুফল: ইন্টারনেট ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা নানা রকম কাজ অতি দ্রুততার সাথে সম্পন্ন করতে পারি। তবে ইন্টারনেটে একেক রকম কাজ করার জন্য একেক রকম সফ্টওয়্যারের (Software) প্রয়োজন হয়। যেমন Net News protocol-এর মাধ্যমে আমরা অতি সহজে ও দ্রুততার সাথে বিশ্বের যেকোনো দেশের খবরাখবর জানতে পারি।

Telenet ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা অতি দ্রুত দেশ-বিদেশের যেকোনো স্থানে অবস্থানরত আপনজনের সাথে কথা বলতে পারি বা যেকোনো ধরনের তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি। File transfer protocol ব্যবহার করে আমরা এক কম্পিউটার থেকে অন্য কম্পিউটারের ফাইল আদান-প্রদান করতে পারি। Internet relay chat protocol ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা বিভিন্ন স্থানে বসে বিভিন্নজনের সাথে গল্পগুজব করতে পারি, আড্ডা দিতে পারি।

এক নজরে দেখে নিন বোর্ড পরীক্ষার জন্য চূড়ান্ত সাজেশন্সসহ ৬০+ রচনা

E-mail ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা তথ্য আদান-প্রদান করতে পারি। অর্থাৎ বর্তমান বিশ্বের দৈনন্দিন জীবনের প্রায় সব ধরনের কাজকর্ম থেকে শুরু করে ব্যবসায়-বাণিজ্য, ব্যাংক-বীমা, অফিস-আদালত, গবেষণা-প্রযুক্তি, শিক্ষা-দীক্ষাসহ সব কাজেই ইন্টারনেট ব্যবহৃত হচ্ছে। ইন্টারনেটের আশীর্বাদে আমরা ঘরে বসেই এখন বিশ্বের যেকোনো বড় বড় লাইব্রেরির বইপত্র পড়তে পারি, দুষ্প্রাপ্য তথ্যাদি জানতে পারি। এর সাহায্যে এক প্রতিষ্ঠানের সাথে আরেক প্রতিষ্ঠানের ব্যবসায়-বাণিজ্য সম্পর্কিত লেনদেন সম্পাদন করা যায়।

ঘরে বসেই আমরা যেকোনো দেশের চিকিৎসা বিশেষজ্ঞদের সহায়তা নিয়ে আমাদের সমস্যার সমাধান করতে পারি। অর্থাৎ, বর্তমান বিশ্বে আধুনিক জীবনযাত্রার এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ হয়ে উঠেছে ইন্টারনেট।

ইন্টারনেটের অপকারিতা: ইন্টারনেট প্রযুক্তি ব্যবহারের যেমন অসংখ্য সুবিধা বা ভালো দিক রয়েছে, তেমনই কিছু কিছু অসুবিধা বা খারাপ দিকও রয়েছে। যেমন এর মাধ্যমে কুরুচিপূর্ণ ছবি ও ভিডিও ছড়িয়ে দেওয়া, জুয়া খেলা, ব্লাকমেলিং করা, ভাইরাস ছড়িয়ে দেওয়া ইত্যাদি। এসবের মাধ্যমে মানুষের বিবিধ ক্ষতি সাধিত হচ্ছে। কিন্তু ইন্টারনেটের এই নেতিবাচক ব্যবহারের বিষয়টি নির্ভর করে ব্যবহারকারীর ওপর। তাই এর খারাপ দিকের চেয়ে ভালো দিকগুলোই অধিক গ্রহণযোগ্য ও বিশেষভাবে বিবেচ্য।

উপসংহার: উন্নত জীবন ও বিশ্বব্যবস্থার এক অবিচ্ছেদ্য অনুষঙ্গ ইন্টারনেট। বর্তমান বিশ্বের প্রায় কোটি কোটি মানুষ ইন্টারনেটের সুযোগ-সুবিধা ভোগ করছে। অদূর ভবিষ্যতে হয়তো অধিকাংশ মানুষের কাছে ইন্টারনেট সুবিধা পৌঁছে যাবে এবং মানুষের জীবন হয়ে উঠবে আরও উন্নত ও সুখী সমৃদ্ধ।

No comments:

Post a Comment