HSC সমাজকর্ম ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৯ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Social Work 2nd Paper Srijonshil question and answer. HSC SocialWork 2nd Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download.

সমাজকর্ম
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-৯

HSC Social Work 2nd Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. রাফি একটি মেডিকেল কলেজের ছাত্র। চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করার পর তাকে বাধ্যতামূলকভাবে এক বছরের ইন্টার্নশীপ করতে হবে যেন সে তার অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞান রোগীদের নিরাময়ে ব্যবহার করতে পারে। সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের ও বাস্তবজ্ঞান অর্জনের জন্য ইন্টার্নশীপের অনুরূপ দায়িত্ব পালন বাধ্যতামূলক। 
ক. কেস ম্যানেজার কে?
খ. গ্রুপ ম্যানেজমেন্টে 'দল গঠন' বলতে কী বোঝায়?
গ. চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইন্টার্নশিপের অনুরূপ সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের দায়িত্বটি চিহ্নিতকরণপূর্বক ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সমাজকর্ম শিক্ষার উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত দায়িত্বটির গুরুত্ব বিশ্লেষণ কর।

১ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যিনি কেস ম্যানেজমেন্টের কার্যক্রম পরিচালনা করেন তিনি হলেন কেস ম্যানেজার।

খ. গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট বলতে একটি নির্দিষ্ট দলের সদস্যদের দক্ষতা ও কার্যকারিতার সঙ্গে যৌথভাবে কাজ করাকে বোঝায়।
দল গঠনের মাধ্যমে দলের সদস্যদের মধ্যকার সম্পর্ক সুসংহত করার মাধ্যমে দলীয় সংহতি সহযোগিতা, আনুগত্য এবং দলীয় উৎপাদনশলীতা বৃদ্ধির জন্য দল গঠন করা হয়। এক্ষেত্রে পাঁচটি পর্যায়ের মাধ্যমে দল পরিপূর্ণতা লাভ করে। যদি এক পর্যায়ের নির্দিষ্ট কাজ সম্পাদিত না হয় তবে পরবর্তী পর্যায়ে উপনীত হলে দলীয় কার্যকারিতা ও দক্ষতা ব্যাহত হয়।

গ. চিকিৎসা বিজ্ঞানের শিক্ষার্থীদের মতো সমাজকর্মের ছাত্রীদের মাঠকর্ম বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়।
মানুষের মনো-সামাজিক সমস্যার প্রকৃতি উদ্ঘাটন ও সমাধানের রূপকল্পে সমাজকর্ম আজ বিশ্বব্যাপী পরিচিত। সমাজকর্মের এই অবস্থানের অন্যতম কারণ হলো এর তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ।
সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান। এজন্য সমাজকর্মের ব্যবহারিক বিষয়কে ফুটিয়ে তোলার জন্য মূলত মাঠকর্ম পরিচালনা করা হয়। উদ্দীপকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের ক্ষেত্রে সমাজকর্মের এই দিকটির প্রতিফলন ঘটেছে। উদ্দীপকের রাফি চিকিৎসাবিজ্ঞানের ছাত্র। চূড়ান্ত পরীক্ষায় পাস করার পর তাকে এক বছরের জন্য বাধ্যতামূলক ইন্টার্নশীপ করতে হবে। এর মাধ্যমে সে তার অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞান রোগীর নিরাময়ে ব্যবহার করতে পারে। সমাজকর্মের মাঠকর্ম বিষয়টিও তাত্ত্বিক জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগ। অর্থাৎ মাঠকর্ম হলো সমাজকর্মের এমন একটি দিক যেখানে সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞান মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করা হয়। একজন শিক্ষানবিশ সমাজকর্মী অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞান, পদ্ধতি ও কৌশলকে মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগের মাধ্যমে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টির সমস্যা সমাধানে সচেষ্ট হয়। এর ফলে সে একজন দক্ষ সমাজকর্মী হিসেবে গড়ে উঠতে পারে। সুতরাং দেখা যায়, চিকিৎসা বিজ্ঞানের ইন্টার্নশিপের মতো সমাজকর্মে শিক্ষার্থীদের দায়িত্বটি হলো মাঠকর্ম অনুশীলন করা।

ঘ. সমাজকর্ম শিক্ষায় উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত দায়িত্বটি অত্যন্ত গুরুত্ববহ। আধুনিক সমাজকর্ম একটি ফলিত সামাজিক বিজ্ঞান। এর মূল লক্ষ্য হলো সমাজকর্ম সম্পর্কে অর্জিত জ্ঞানকে বাস্তব ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা।
এর মাধ্যমে সমাজে বিদ্যমান বিভিন্ন সমস্যার স্থায়ী সমাধান ও মানুষের সামগ্রিক কল্যাণ সাধন করা সম্ভব হয়। আর এ লক্ষ্য অর্জন করার জন্য একজন সমাজকর্মীকে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি মাঠকর্মের অর্থাৎ ব্যবহারিক জ্ঞানও অর্জন করতে হয়। কেননা ব্যবহারিক জ্ঞানের মাধ্যমেই একজন সমাজকর্মী পেশাদার সেবাদানকারী হিসেবে পরিচিত লাভ করে। এজন্য সমাজকর্ম শিক্ষার ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি ব্যবহারিক জ্ঞানেরও গুরুত্ব অপরিসীম। কোনো বিষয়ের তাত্ত্বিক জ্ঞান যতই সমৃদ্ধ হোক না কেন তা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা ছাড়া এর যথার্থ কার্যকারিতা ও উপযোগিতা লাভ করা যায় না। সেজন্যই তাত্ত্বিক জ্ঞান ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সংমিশ্রণ সমাজকর্মে ঘটানো হয়। যা একজন পেশাদার সমাজকর্মীর থাকতে হয়। এই ব্যবহারিক প্রশিক্ষণই সমাজকর্মীকে বাস্তবক্ষেত্রে কর্ম উপযোগী করে তোলে। জাতি, ধর্ম, বর্ণ নির্বিশেষে ব্যক্তি, দল ও সমষ্টি সমস্যা সমাধান করে একটি সুখী-সুন্দর সমাজ প্রতিষ্ঠা করাই আধুনিক সমাজকর্মের মূল লক্ষ্য। যা যুগোপযোগী ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ গ্রহণ করার কারণে সম্ভব হয়। এই ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ দ্বারা একদিকে যেমন ব্যক্তি, দল ও সমষ্টি সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করা সম্ভব অন্যদিকে এই জ্ঞান সমাজকর্ম পেশার তাত্ত্বিক দিককে আরো বেশি সমৃদ্ধ করে।
মূলত সমাজকর্ম যেহেতু সাহায্যকারী একটি প্রক্রিয়া তাই এখানে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। তাত্ত্বিক জ্ঞান দ্বারা স্বীকৃত কোনো সমস্যা সমাধান করা গেলেও মাঝে মধ্যে এমন কোনো নতুন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয় যেখানে ব্যবহারিক জ্ঞান বেশি কাজে আসে। সুতরাং আমরা বলতে পারি আধুনিক সমাজকর্ম পেশায় ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

২. করিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্মের সম্মান শ্রেণির ছাত্র। তাত্ত্বিক কোর্স শেষে সে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। সমাজকর্ম অনুশীলনের জন্য তাকে পাঠানো হয় মাদকাসক্ত নিরাময় কেন্দ্রে। সে তার অধীন মাদকাসক্ত রোগীদের যথাযথ মূল্য ও মর্যাদা দেয়। সে তার প্রতিষ্ঠানের সম্পদের ব্যবহার নিশ্চিত করে রোগীদের সেবা করে। 
ক. মাঠকর্ম কী?
খ. কেস ম্যানেজমেন্ট বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত নীতি ব্যতীত একজন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে করিম আর কী কী নীতি অনুসরণ করবে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সমাজকর্মের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে করিমের ভবিষ্যৎ পেশাগত জীবনে মাঠকর্মের তাৎপর্য ব্যাখ্যা কর।

২ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাঠকর্ম হলো সমাজকর্মের বাস্তব জ্ঞান, নীতি ও দক্ষতা অর্জনে গৃহীত ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ কৌশল।

খ. কেস ম্যানেজমেন্ট বলতে সামাজিক এজেন্সি থেকে লম্বা সময়ের জন্য সাহায্য গ্রহণকারীর সেবা পরিকল্পনা ও মনিটরিং প্রক্রিয়াকে বোঝায়।
এই সেবা কার্যক্রম সাহায্যার্থীর মানসিক স্বাস্থ্য বা আইনগত বিষয়সহ যে কোনো ক্ষেত্রে পরিচালিত হতে পারে। মূলত এটি এমন এক পদ্ধতি যেখানে একজন পেশাদার সমাজকর্মী সাহায্যার্থী ও তার পরিবারের চাহিদার প্রেক্ষিতে সমস্যা চিহ্নিতকরণ ও সমাধানে পদক্ষেপ গ্রহণ করেন।

গ. একজন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে করিম সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানে যথাযথ মূল্য ও মর্যাদা এবং সম্পদের সদ্ব্যবহার নীতি অনুসরণ করেন।
তবে এছাড়া তিনি আরো বেশ কয়েকটি নীতি অনুসরণ করতে পারেন। একজন শিক্ষানবিশ সমাজকর্মী সংশ্লিষ্ট বিষয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞান অর্জন করে। এই জ্ঞানের পাশাপাশি প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জনের জন্য তাকে মাঠকর্ম অনুশীলন করতে হয়। আর মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মাঠকর্ম সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করা।
করিম রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজকর্ম বিষয়ের সম্মান শ্রেণির ছাত্র। শিক্ষানবিশ সমাজকর্মী হিসেবে সে একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে কাজ করছে। এক্ষেত্রে তাত্ত্বিক জ্ঞানের পরিপূর্ণ প্রয়োগ ঘটানোর জন্য তাকে মাঠকর্মের সকল নীতি অনুসরণের চেষ্টা করতে হবে। ইতোমধ্যেই সে সাহায্যার্থীর মূল্য ও মর্যাদা প্রদান এবং সম্পদের সদ্ব্যবহারের নীতির প্রতিফলন ঘটিয়েছে। এছাড়াও তাকে অংশগ্রহণ ও যোগাযোগের নীতি মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ও যোগাযোগের মাধ্যমে সে সাহায্যার্থীর সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে় তুলতে পারে। পাশাপাশি তাকে লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। এছাড়া সাহায্যার্থীর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য তাকে গোপনীয়তার নীতি অনুসরণ করতে হবে। আবার প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের ব্যাপারেও করিমকে খেয়াল রাখতে হবে। যেহেতু দুজন তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে কাজ করতে হবে এবং সবসময় ভালো কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। মূলত এ নীতিগুলো অনুসরণ করলেই সে সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানে সফল হতে পারবে। তাই বলা যায়, একজন প্রশিক্ষণার্থী হিসেবে করিম উদ্দীপকে উল্লিখিত নীতিগুলো ছাড়াও আরো কিছু নীতি অনুসরণ করবে।

ঘ. সমাজকর্মের একজন শিক্ষার্থী হিসেবে করিমের ভবিষ্যৎ পেশাগত জীবনে মাঠকর্মের তাৎপর্য অপরিসীম।
সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবমুখী করে তুলতে মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই। শুধুমাত্র তাত্ত্বিক আলোচনার মাধ্যমে সমাজকর্মের নীতি, আদর্শ ও পদ্ধতিকে বিমূর্ত রূপ দেওয়া সম্ভব হয় না। কেননা, স্থান, কাল, পাত্র ভেদে সমাজকর্মের নীতি ও পদ্ধতির পরিবর্তন হয়। তাই তাত্ত্বিক জ্ঞানকে ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করলে তার কার্যকারিতা, উপযোগিতা ও গ্রহণযোগ্যতা বস্তুনিষ্ঠ হয়ে ওঠে। এর ফলে একজন শিক্ষানবীশ সমাজকর্মী ভবিষ্যত কর্মপন্থা নির্ধারণ এবং দক্ষতা অর্জনে সমর্থ হন।
মাঠকর্ম শিক্ষায় সমাজকর্মের তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানের সমন্বয় করা হয়। কোনো বিষয়ের তাত্ত্বিক জ্ঞান যতই সমৃদ্ধ হোক না কেন তা ব্যবহারিক ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা ছাড়া তার কার্যকারিতা ও উপযোগিতা পাওয়া যায় না। সমাজকর্মীরা শিক্ষানবিশ অবস্থায় অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞান কোনো প্রতিষ্ঠানে মাঠকর্মের মাধ্যমে প্রয়োগ করার সুযোগ পায়। এভাবে নবীন সমাজকর্মীরা সমাজকর্মের নীতি চর্চার একটি বাস্তব পরিবেশ পায়। এর ফলে পরবর্তীতে তারা পেশাগত জীবনে দায়িত্ব পালনের ক্ষেত্রে কোনো রকম অসুবিধার সম্মুখীন হয় না। এছাড়া সমাজকর্মী হিসেবে নিজের ও প্রতিষ্ঠানের সবল ও দুর্বল দিকসমূহ উপলব্ধি করার শিক্ষা মাঠকর্মের মাধ্যমে পাওয়া যায়। এর মাধ্যমে শিক্ষার্থী নিজের এবং সমাজকর্ম পেশার নীতি ও পদ্ধতির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সচেতন হয়। ফলস্বরূপ অর্জিত জ্ঞান ও দক্ষতা বাস্তবে অনুশীলনের মাধ্যমে শিক্ষার্থীর আত্মবিশ্বাস সুদৃঢ় হয় এবং সে আত্মসচেতন হয়ে ওঠে। উদ্দীপকের সমাজকর্মের শিক্ষার্থী করিমের পেশাগত জীবনেও এই বিষয়গুলো সহায়ক ভূমিকা রাখবে।
সার্বিক আলোচনা থেকে তাই বলা যায়, শিক্ষানবীশ সমাজকর্মী হিসেবে মাঠকর্ম চলার সময় করিম বেশ কিছু অভিজ্ঞতার মুখোমুখি হবে যা তার ভবিষ্যত পেশাজীবনে তাৎপর্যপূর্ণ ভূমিকা রাখতে সক্ষম হবে।

৩. অস্ট্রেলিয়ায় সমাজকর্ম পেশা হিসাবে স্বীকৃতি পেয়েছে। সে কারণে বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ৪ বছর স্নাতক ও ২ বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স চালু আছে। এই কোর্সগুলো অধ্যয়ন শেষে অবশ্যই শিক্ষার্থীদের বাস্তবক্ষেত্রে অভিজ্ঞতা অর্জনের জন্যে কমপক্ষে ২টি কর্মক্ষেত্রে ৯৮০ ঘণ্টা কাজ করতে হবে। কর্মক্ষেত্র হিসাবে ব্যক্তি, পরিবার, সমষ্টি, আদিবাসী, নারী-পুরুষ, প্রবীণ হতে পারে। তাদের সমস্যা চিহ্নিত, সমস্যা সমাধানের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন, বাস্তবায়ন, তদারকি, পর্যালোচনা, মূল্যায়ন ও সমাপ্তি করে প্রতিবেদন প্রদান করতে হয়। তার উপর ভিত্তি করেই তাকে সমাজকর্মী হিসেবে স্বীকৃতি দেওয়া হয়।
ক. কেস কী?
খ. সমাজকর্মে ব্যক্তির সমস্যা সমাধানে গোপনীয়তার নীতি কেন অপরিহার্য?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিক্ষার্থীর কর্মক্ষেত্রের কাজের সাথে বাংলাদেশের কোন শিক্ষার সাদৃশ্য রয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানে অস্ট্রেলিয়ার একজন শিক্ষার্থী কি কেস ম্যানেজমেন্টের সব ধাপ অনুসরণ করেছে? উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

৩ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ব্যক্তি সমাজকর্মে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে বলা হয়।

খ. সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তির সমস্যা সমাধান করার জন্য তার বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জন জরুরি। এক্ষেত্রে গোপনীয়তার নীতি অপরিহার্য ভূমিকা রাখে।
সমাজকর্মী যাদের সমস্যা সমাধানে কাজ করবেন তাদের যাবতীয় তথ্য গোপন রাখতে হয়। এজন্য সাহায্যার্থীকে নিশ্চয়তাও দিতে হয়। নয়তো সে তার সব সমস্যা সমাজকর্মীকে বিনা দ্বিধায় খুলে বলবে না। আর বিস্তারিত তথ্য ছাড়া সাহায্যার্থীকে সহায়তা করা সম্ভব হয় না। এজন্য গোপনীয়তার নীতি কঠোরভাবে অনুসরণ করতে হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত শিক্ষার্থীর কাজের সাথে বাংলাদেশের মাঠকর্ম শিক্ষার সাদৃশ্য রয়েছে যা সমাজকর্মের প্রায়োগিক দিক। 
সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান। এর ধারণাকে বাস্তবে কার্যকর করার জন্য মাঠকর্ম অনুশীলন করা হয়। সমাজকর্মের প্রত্যেক শিক্ষার্থীকেই এজন্য মাঠকর্ম চর্চার মাধ্যমে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জন করতে হয়। এর মাধ্যমেই সে নিজেকে দক্ষ সমাজকর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে পারে। উদ্দীপকে এ বিষয়টিই উল্লেখ করা হয়েছে।
উদ্দীপকের তথ্যানুসারে অস্ট্রেলিয়ার বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে সমাজকর্মের একজন শিক্ষার্থীকে প্রথমে ৪ বছরের স্নাতক ও ২ বছরের স্নাতকোত্তর কোর্স সম্পন্ন করতে হয়। এরপর তাকে বাস্তব অভিজ্ঞতা অর্জনে কমপক্ষে দুটি আলাদা সমস্যা নিয়ে ৯৮০ ঘণ্টা কাজ করতে হয়। সেখানে তাকে সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটাতে হয়। বাংলাদেশেও সমাজকর্ম শিক্ষায় এ পদ্ধতি প্রচলিত রয়েছে। এখানেও শিক্ষার্থীদের প্রথমে সমাজকর্ম বিষয়ে স্নাতক ও স্নাতকোত্তর পাস করতে হয়। এরপর তাদের বাধ্যতামূলকভাবে বিভিন্ন সরকারি ও বেসরকারি সংস্থায় কমপক্ষে ৬০ কর্মদিবস হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ নিতে হয়। আর এভাবে মাঠকর্ম অনুশীলনের মাধ্যমে তারা অস্ট্রেলিয়ার সমাজকর্মের শিক্ষার্থীদের মতোই নিজেদেরকে পেশাদার সমাজকর্মী হিসেবে গড়ে তুলতে সক্ষম হয়। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লেখিত শিক্ষার্থীর কর্মক্ষেত্রের সাথে বাংলাদেশের সমাজকর্ম শিক্ষার মিল রয়েছে।

ঘ. সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানে অস্ট্রেলিয়ার একজন শিক্ষার্থী কেস ম্যানেজমেন্টের সবগুলো ধাপই অনুসরণ করে।
মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রে বিভিন্ন এজেন্সিতে সাহায্যার্থীর সমস্যা অনুধ্যানের (Case Study) সময় মাঠকর্মী বিভিন্ন প্রক্রিয়া বা ধাপ অনুসরণ করে, যা কেস ম্যানেজমেন্ট নামে পরিচিত। এর ফলে সমস্যার কারণ সম্পর্কে জানা যায় এবং সুষ্ঠুভাবে সমস্যা মোকাবিলা সম্ভব হয়। উদ্দীপকে উল্লেখ করা অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থীরাও এ প্রক্রিয়ার প্রয়োগ ঘটায়।
কেস ম্যানেজমেন্টের ধাপগুলো হলো- সমস্যা অনুধ্যান, সমাধান প্রক্রিয়া সম্পর্কে পরিকল্পনা বাস্তবায়ন, তদারকি, পর্যালোচনা এবং কেস সমাপ্তি। উদ্দীপকে দেখা যায়, মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রে অস্ট্রেলিয়ার একজন শিক্ষার্থীকে প্রথমেই সাহায্যার্থীদের সমস্যা সম্পর্কে ভালোভাবে জানতে হয়। এরপর তাকে সমস্যাটির প্রকৃতি অনুসারে তা সমাধানের পূর্ণাঙ্গ পরিকল্পনা করতে হয়। এক্ষেত্রে কীভাবে সমস্যা সমাধান করতে হবে, কোন বিষয়টিকে প্রাধান্য দিতে হবে ইত্যাদি বিবেচনায় আনা জরুরি। পরিকল্পনার বাস্তবায়ন শেষে তাকে পুরো বিষয়টি মূল্যায়ন ও পর্যালোচনা করে দেখতে হয়। সমস্যার সঠিক সমাধান হলেই একজন শিক্ষানবীশ সমাজকর্মী কেসের সমাপ্তি টানতে পারে।
উদ্দীপকের অস্ট্রেলিয়ার শিক্ষার্থীও সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানে এই ধাপগুলো অতিক্রম করেছে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপক অনুসারে অস্ট্রেলিয়ায় একজন শিক্ষার্থী মাঠকর্ম অনুশীলনের সময় কেস ম্যানেজমেন্টের সবগুলো ধাপই অনুসরণ করে।

৪. সাবিবর একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ের উপর সম্মান কোর্সে অধ্যয়ন করছে। তাকে তার শ্রেণি শিক্ষক পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য কোনো একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করেন এবং কিছু পরামর্শ দেন যা তাকে তার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য অবশ্যই পালন করতে হবে। পরামর্শগুলো হলো-
◉ সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাদরে গ্রহণ করবে,
◉ ক্লায়েন্টদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে,
◉ ক্লায়েন্টদের সাথে সু-সম্পর্ক স্থাপন করবে,
◉ ক্লায়েন্টদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করবে না
◉ এবং ক্লায়েন্টদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশ করবে না
ক. কখন থেকে কেস ম্যানেজমেন্টের ব্যবহার শুরু হয়?
খ. মাঠকর্ম বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে সাবিবরকে যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সমাজকর্মের ভাষায় তাকে কী বলে? পরামর্শগুলো কী কী? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. একজন সমাজকর্মীকে তার দক্ষতা অর্জনের জন্য উক্ত পরামর্শ ছাড়া আর কী কী নিয়ম মেনে চলতে হয় বলে তুমি মনে কর?

৪ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমাজকর্মে ১৯৭০ সাল থেকে কেস ম্যানেজমেন্টের ব্যবহার শুরু হয়।

খ. মাঠকর্ম বলতে সমাজকর্মের বাস্তব জ্ঞান, নীতি ও দক্ষতা অর্জনে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ কৌশলকে বোঝায়।
সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান এবং এর ধারণাকে বাস্তবে ফুটিয়ে তোলার জন্যই মূলত মাঠকর্ম পরিচালনা করা হয়ে থাকে এটি সমাজকর্মের এমন একটি দিক যেখানে একজন সমাজকর্মী তার তাত্ত্বিক জ্ঞানকে সফলভাবে প্রয়োগে সমর্থ হয়।

গ. উদ্দীপকে সাবিবরকে যে পরামর্শ দেয়া হয়েছে সমাজকর্মের ভাষায় তাকে মাঠকর্মের নীতিমালা বলা হয়। 
নীতি হলো সেসব মূল্যবোধ বা আদর্শ যা কোনো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। মাঠকর্ম অনুশীলনের জন্য মাঠকর্মীকেও কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয় যার মাধ্যমে তিনি অর্জিত জ্ঞানের সফল প্রয়োগ ঘটাতে পারেন। উদ্দীপকে এ ধরনেরই কিছু নিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে।
সাবিবর সমাজকর্মের ছাত্র। চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময় তাকে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটানো। এক্ষেত্রে শিক্ষক তাকে কিছু পরামর্শ দেন। তার প্রথম পরামর্শটি মাঠকর্মের অংশগ্রহণ নীতির প্রতিফলন। অর্থাৎ সাহায্যার্থী ব্যক্তিকে সাবিবর সাদরে গ্রহণ করবে। দ্বিতীয় পরামর্শ অনুসারে সাবিবরকে ক্লায়েন্টের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে, যা মাঠকর্মের সাহায্যার্থীর মূল্য ও মর্যাদা বিষয়ক নীতির সাথে সম্পর্কিত। তৃতীয় পরামর্শটি যোগাযোগের নীতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এক্ষেত্রে সাবিবরকে ক্লায়েন্টদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে় তোলার মাধ্যমে সফল যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। শেষ দুটি পরামর্শ যথাক্রমে আত্মসচেতনতার নীতি ও গোপনীয়তার নীতিকে প্রকাশ করে। অর্থাৎ সাহায্যার্থীর সাথে সাবিবর ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করবে না এবং সাহায্যার্থীর যাবতীয় তথ্য গোপন রাখবে। এভাবে সে মাঠকর্ম অনুশীলনের সময় এ নিয়মগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করবে।

ঘ. একজন সমাজকর্মীকে দক্ষতা অর্জনের জন্য উদ্দীপকের পরামর্শ ছাড়াও আরও কিছু নিয়ম মানতে হয়। এর মধ্যে আছে- লক্ষ্য নির্ধারণ নীতি, নমনীয় কর্মকাঠামো, সম্পদের সদ্ব্যবহার নীতি, পেশাগত সম্পর্ক নীতি, মূল্যায়ন নীতি প্রভৃতি। প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জনের জন্য এই সব নীতির সমন্বয় ঘটানো জরুরি।
মাঠকর্ম অনুশীলনের মাধ্যমে একজন সমাজকর্মী, তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করেন। এক্ষেত্রে তাকে যে সব নীতি অনুসরণ করতে হয় তার মধ্যে কয়েকটি নীতি যেমন, অংশগ্রহণ নীতি, সাহায্যার্থীর মূল্য ও মর্যাদা নীতি, যোগাযোগ নীতি, আত্মসচেতনতা নীতি ও গোপনীয়তা নীতির কথা উদ্দীপকে উল্লেখিত হয়েছে। এগুলো ছাড়াও অন্য কিছু নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে একজন সমাজকর্মী সফলভাবে নিজের দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে পারেন। একজন মাঠকর্মীকে শুরুতেই কাজ শেষ করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিতে হবে। কারণ লক্ষ্য অনুযায়ীই তাকে পরিকল্পনা করতে হবে। এক্ষেত্রে সম্পদের সদ্ব্যবহারের নীতি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ সম্পদের সীমাবদ্ধতা পরিমাপ করে সাহায্যার্থীকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করতে হবে। তবে মাঠকর্মী তার সাহায্যার্থীর জন্য এমন কর্ম-পরিকল্পনা করবেন তা যেন যে কোনো পরিস্থিতিতে পরিবর্তন করা যায়। এর পাশাপাশি একজন মাঠকর্মীকে অবশ্যই পেশাগত সম্পর্ক নীতি মেনে চলতে হবে। তার চেষ্টা থাকবে খুব দ্রুত সাহায্যার্থীর সাথে পেশাগত সম্পর্ক তৈরি করার। এগুলোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং তত্ত্বাবধায়কের উপদেশ মেনে চলতে হবে। সর্বোপরি সমাজকর্মীকে প্রতিটি পর্যায়ে নিজের কাজের মূল্যায়ন করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লেখিত পরামর্শগুলোর পাশাপাশি উপরে বর্ণিত নীতিগুলো মেনে চললে একজন সমাজকর্মী নিজের দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে পারবেন।

৫. সামিন হাসান সমাজকর্মের সম্মান শ্রেণির ছাত্র। তাত্ত্বিক কোর্স শেষে সে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণে অংশগ্রহণ করে। সমাজকর্মের অনুশীলনের জন্য তাকে পাঠানো হয় মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে। সেখানে সে তার অধীন মাদকাসক্ত রোগীদের যথাযথ মূল্য ও মর্যাদা দেয়। ফলে রোগীরা তার সেবার প্রতি বেশি অশ্লীল হয়ে ওঠে। সে তার প্রতিষ্ঠানের সম্পদের সর্বোত্তম ব্যবহার নিশ্চিত করে।
ক. বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষা কত সালে যাত্রা শুরু করে?
খ. মাঠকর্ম (Field work) বলতে কী বোঝায়?
গ. সামিন হাসানের কার্যক্রমে মাঠকর্মের কোন নীতিমালার প্রতিফলন দেখা যায়? নিরূপণ করো।
ঘ. সঠিকভাবে মাঠকর্ম সম্পাদনের জন্য সামিন হাসানকে আরও কিছু নীতি অনুসরণ করতে হবে- উক্তিটি বিশ্লেষণ করো।

৫ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশে সমাজকর্ম শিক্ষা ১৯৫৩ সালে শুরু হয়।

খ. মাঠকর্ম বলতে সমাজকর্মের বাস্তব জ্ঞান, নীতি ও দক্ষতা অর্জনে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ কৌশলকে বোঝায়।
সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান এবং এর ধারণাকে বাস্তবে ফুটিয়ে তোলার জন্যই মূলত মাঠকর্ম পরিচালনা করা হয়ে থাকে। এটি সমাজকর্মের এমন একটি দিক যেখানে একজন সমাজকর্মী তার তাত্ত্বিক জ্ঞানকে সফলভাবে প্রয়োগে সমর্থ হয়।

গ. সামিন হাসানের কার্যক্রমে মাঠকর্মের অন্যতম দুটি প্রধান নীতি সাহায্যার্থীর মূল্য ও মর্যাদা এবং সম্পদের সদ্ব্যবহারের নীতির প্রতিফলন দেখা যায়।
মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রে কর্মীকে কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয়, যার মাধ্যমে তিনি কার্যক্রম সম্পাদন করে থাকেন। মূলত সুনির্ধারিত নীতি মেনে চললেই তিনি সফলতা পেতে পারেন। উদ্দীপকের সামিন হাসানের কার্যক্রম এক্ষেত্রে অনুকরণীয় দৃষ্টান্ত হতে পারে। উদ্দীপকের সামিন হাসান একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে মাঠকর্ম অনুশীলনের জন্য যায়। সেখানে গিয়ে সে প্রথমেই যে নীতিটির ওপর গুরুত্বারোপ করে তা হলো সাহায্যার্থীকে মূল্য ও মর্যাদা প্রদানের নীতি। এ নীতির আওতায় সাহায্যার্থীকে তার প্রাপ্য সম্মান দিতে হয়; না হলে সে শিক্ষানবিশ সমাজকর্মীর কাছ থেকে কোনো সাহায্য নিতে চাইবে না। এ জন্য সামিন হাসান মাদকাসক্ত রোগীদের যথাযথ মূল্য ও মর্যাদা দেয়। ফলে রোগীরা তার প্রতি আস্থাশীল হয়ে ওঠে। আবার সামিন হাসান সম্পদের সদ্ব্যবহারের নীতিটিও অনুসরণ করেছে। এক্ষেত্রে সমাজকর্মীকে প্রতিষ্ঠানের সম্পদের সীমাবদ্ধতার বিষয়টিও বিবেচনায় নিতে হয়। সম্পদ যা আছে তার যেন সঠিক ব্যবহার হয় বা যার প্রয়োজন সে যেন পায় এ ব্যাপারে শিক্ষানবিশ সমাজকর্মীকে সতর্ক থাকতে হয়। সামিন হাসান এ বিষয়টিও সফলতার সাথে প্রয়োগ করেছে।

ঘ. সঠিকভাবে মাঠকর্ম অনুশীলনের জন্য সামিন হাসানকে মাঠকর্মের সকল নীতি অনুসরণেই যত্নবান হতে হবে।
একজন শিক্ষানবিশ সমাজকর্মী সমাজকর্ম বিষয়ে পড়াশোনার মাধ্যমে কেবল তাত্ত্বিক জ্ঞান লাভ করে। এই অনুশীলন করতে হয়। আর মাঠকর্ম অনুশীলনের ক্ষেত্রে সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হলো মাঠকর্ম সংশ্লিষ্ট নীতিমালা সঠিকভাবে অনুসরণ করা।
সামিন হাসান শিক্ষানবিশ সমাজকর্মী হিসেবে একটি মাদকাসক্তি নিরাময় কেন্দ্রে কাজ করছে। এক্ষেত্রে সে যদি তার তাত্ত্বিক জ্ঞানের পরিপূর্ণ প্রয়োগ ঘটাতে চায় তাহলে তাকে মাঠকর্মের সকল নীতি অনুসরণের চেষ্টা করতে হবে। ইতোমধ্যেই সে সাহায্যার্থীর মূল্য ও মর্যাদা প্রদান এবং সম্পদের সদ্ব্যবহারের নীতির প্রতিফলন ঘটিয়েছে। এছাড়াও তাকে অংশগ্রহণ ও যোগাযোগের নীতি মেনে চলতে হবে। এক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ও যোগাযোগের মাধ্যমে তাকে সাহায্যার্থীর সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তুলতে হবে। পাশাপাশি তাকে লক্ষ্য নির্ধারণের মাধ্যমে কাজ করতে হবে। সাহায্যার্থীর বিশ্বাসযোগ্যতা অর্জনের জন্য তাকে গোপনীয়তা নীতির অনুসরণ করতে হবে। আবার প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যের প্রতিও সামিন হাসানকে খেয়াল রাখতে হবে। দুজন তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশনা অনুযায়ী তাকে কাজ করতে হবে এবং সবসময় ভালো কাজের মূল্যায়ন করতে হবে। মূলত এ নীতিগুলো অনুসরণ করলেই সে সাহায্যার্থীর সমস্যা সমাধানে সফল হতে পারবে।
পরিশেষে বলা যায়, সামিন হাসানের সঠিকভাবে মাঠকর্ম সম্পাদনের জন্য আরও কিছু নীতি অনুসরণ করতে হবে মন্তব্যটি যথার্থ ও যৌক্তিক।

৬. বর্তমানে অস্ট্রেলিয়ায় সমাজকর্ম বিষয়ে যে সমস্ত কোর্স ও যে ধরনের শিক্ষা ব্যবস্থা চালু আছে তার প্রাথমিক উদ্দেশ্য হলো গ্র্যাজুয়েট তৈরি করা, যারা যে কোনো বিষয়ে ও পরিস্থিতিতে জটিল বা সমালোচনামূলক বিশ্লেষণ করতে পারে। এক্ষেত্রে অবশ্যই ৪ বছর মেয়াদি কোর্স শেষ করে একজন শিক্ষার্থীকে কমপক্ষে ২টি প্রতিষ্ঠানে ৯৮০ ঘণ্টা ব্যয় করে ব্যক্তির সমস্যা চিহ্নিতকরণ, তথ্য অনুসন্ধান, সেবা নির্ণয়, সেবা পরিকল্পনা ও বাস্তবায়ন, অনুসরণ, পরিসমাপ্তিকরণ, ফলাফল মূল্যায়ন ও প্রতিবেদন তৈরি প্রভৃতি কাজ হাতে কলমে শিখতে হবে। তা না হলে তারা ডিগ্রি ও পেশাগত যোগ্যতা অর্জনের স্বীকৃতি পায় না। 
ক. গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট কী?
খ. তদারকি এবং পর্যালোচনা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে অস্ট্রেলিয়ার ৯৮০ ঘণ্টা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সাথে সমাজকর্মের কোন শিক্ষার সাদৃশ্য আছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়গুলো হাতে কলমে শিক্ষা গ্রহণকে কি কেস ম্যানেজমেন্ট বলা যায়? মতামত দাও।

৬ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সমাজকর্মের পরিভাষায় দলকে সুষ্ঠুভাবে লক্ষ্য অনুযায়ী পরিচালনা করাই হলো গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট।

খ. তদারকি বা পরিবীক্ষণ এবং পর্যালোচনা হলো একটি চলমান প্রক্রিয়া, যা সমস্যা সমাধানের পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন থেকে সমাপ্তি পর্যন্ত চলতে থাকে।
মূলত নিয়মিত পরিবীক্ষণ ও পর্যালোচনার মাধ্যমে সমস্যা মোকাবিলায় গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবায়নের প্রতিবন্ধকতা করা হয়: এর ফলে সেগুলো দূর করার পদক্ষেপও গ্রহণ করা যায়। সাহায্যার্থীর প্রয়োজন ও চাহিদার পর্যালোচনায় যেসব বিষয়গুলো বিবেচনা করা হয় তা হলো- সমস্যার পরিবর্তন, কী ধরনের সাফল্য অর্জিত হয়েছে, সেবা পরিকল্পনা পরিবর্তনের প্রয়োজনীয়তা, কেস শেষ করা যায় কিনা প্রভৃতি।

গ. উদ্দীপকে অস্ট্রেলিয়ার ৯৮০ ঘণ্টা বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে কাজ করার সাথে সমাজকর্মের মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের সাদৃশ্য আছে।
মাঠকর্ম হলো বাস্তব সমস্যা মোকাবেলায় সমাজকর্মের জ্ঞান, অনুশীলন ও দক্ষতা অর্জনের ব্যবহারিক শিক্ষণ প্রক্রিয়া। বিশ্বের সব দেশেই মাঠকর্ম সমাজকর্ম শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ। একইভাবে বাংলাদেশেও সমাজকর্ম শিক্ষায় স্নাতক এবং স্নাতকোত্তর পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের বাধ্যতামূলকভাবে বিভিন্ন সরকারি-বেসরকারি সংস্থায় কমপক্ষে ৬০ কর্মদিবস হাতে কলমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করতে হয়। এর ফলে শিক্ষার্থীরা শ্রেণিকক্ষে অর্জিত শিক্ষা বাস্তবে প্রয়োগের সুযোগ পায়।
উদ্দীপকেও এই বিষয়টিই ইঙ্গিত করা হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ায় সমাজকর্ম বিষয়ে পরিচালিত শিক্ষা ব্যবস্থা ও কোর্সসমূহ দক্ষতাসম্পন্ন সমাজকর্মী তৈরির লক্ষ্যে কাজ করে। এক্ষেত্রে চার বছরের তাত্ত্বিক জ্ঞানার্জনের পর কমপক্ষে ২টি প্রতিষ্ঠানে ৯৮০ ঘন্টা কাজ করা বাধ্যতামূলক। অস্ট্রেলিয়ার সমাজকর্ম শিক্ষার এই দিকটি মাঠকর্ম প্রশিক্ষণকে ইঙ্গিত করে।
তাই বলা যায়, অস্ট্রেলিয়ায় ৯৮০ ঘণ্টার ব্যবহারিক কাজ সমাজকর্মের মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের সাথেই সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. হ্যাঁ, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়গুলো হাতে কলমে শেখাকে কেস ম্যানেজমেন্ট বলা যায়।
কেস ম্যানেজমেন্ট হলো নির্দিষ্ট সংখ্যক সাহায্যার্থীর সাথে কাজ পরিচালনার প্রক্রিয়া, যা গবেষণা, সমস্যা চিহ্নিতকরণসহ বিভিন্ন সেবা প্রদানের মাধ্যমে সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে প্রাথমিকভাবে সাহায্যার্থীদের কেস হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। প্রাথমিকভাবে ব্যক্তির সমস্যা খুঁজে বের করার মাধ্যমে কেস ম্যানেজমেন্ট কার্যক্রম শুরু হয়। পরবর্তীতে ধাপে ধাপে সাহায্যার্থীকে বিভিন্নভাবে সহায়তা করা হয়, যা উদ্দীপকের ক্ষেত্রেও লক্ষণীয়। উদ্দীপকে মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের ক্ষেত্রে কেস ম্যানেজমেন্টের উপর্যুক্ত ধাপগুলো হাতে কলমে প্রশিক্ষণের কথা বলা হয়েছে। ব্যক্তির সমস্যা চিহ্নিতকরণ, তথ্য অনুসন্ধান, সেবা নির্ণয়, পরিকল্পনা ও বাস্তায়ন প্রভৃতি বিষয়ের তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ ঘটানোর প্রশিক্ষণ সমাজকর্মীর জন্য জরুরি।
সমাজকর্মী সাহায্যার্থীর পারিপার্শ্বিক পরিবেশ, সমস্যা সংশ্লিষ্ট বিষয় নিয়ে মনো-সামাজিক অনুধ্যানের মাধ্যমে তথ্য অনুসন্ধান করে। এটি সাহায্যার্থীর জন্য কার্যকর সেবা নির্ণয়ে সহায়তা করে। এর ভিত্তিতে কেস ম্যানেজার সেবা পরিকল্পনা গ্রহণ করে এবং তা বাস্তবায়নে হস্তক্ষেপ কৌশলের প্রয়োগ ঘটায়। এই ধাপ অতিক্রম করে কেস ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়ায় সাহায্যার্থীর অবস্থার উন্নতি বা অবনতি পরিমাপে অনুসরণ প্রক্রিয়া ব্যবহৃত হয়। সাহায্য প্রদানের এই প্রক্রিয়া শেষ হয় পরিসমাপ্তিকরণ ও ফলাফল মূল্যায়নের মাধ্যমে কার্যক্রম শেষ হবার পর মাঠকর্মীকে সুনির্দিষ্ট প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়। উদ্দীপকেও এই বিষয়গুলো তুলে ধরা হয়েছে যা কেন ম্যানেজমেন্টের অন্তর্ভুক্ত।
উপর্যুক্ত আলোচনায় তাই প্রতীয়মান হয়, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিষয়গুলো ব্যবহারিক প্রশিক্ষণকে কেস ম্যানেজমেন্ট বলা যায়।

HSC সমাজকর্ম ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ৯ pdf download

৭. ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের এমএসএস শেষ বর্ষের শিক্ষার্থী শারমিনকে মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের জন্য আগারগাঁও-এ অবস্থিত প্রবীণ নিবাসে পাঠানো হয়। সেখানে সে নিজে সচেতন থেকে প্রবীণদের যথাযথ মর্যাদা ও তাদের পছন্দ-অপছন্দের স্বীকৃতি দিয়ে সেবা দেয়। সে সর্বান্তকরণে প্রবীণ ব্যক্তিদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টিতে সচেষ্ট থাকে।
ক. মাঠকর্ম প্রশিক্ষণে কতজন তত্ত্বাবধায়ক থাকেন?
খ. গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট-এর ধারণা দাও।
গ. শারমিন প্রবীণ নিবাসে আর যেসব নীতিমালা প্রয়োগ করতে পারে সেগুলো ব্যাখ্যা করো।
ঘ. মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা নিরূপণ করো।

৭ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাঠকর্ম প্রশিক্ষণে দুইজন তত্ত্বাবধায়ক থাকেন।

খ. দলকে সুষ্ঠুভাবে তার লক্ষ্যে পরিচালনা করাই হলো গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট।
দলের মধ্যে অনেক লোকের সমাবেশ ঘটে। তাদের নির্দিষ্ট লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য থাকলেও অনেক ক্ষেত্রে সদস্যদের মধ্যে অনেক ধরনের মতপার্থক্য দেখা দেয়। ফলে দলীয় লক্ষ্য অর্জন অনেক সময় ব্যাহত হয়। তখন সমাজকর্মী তার জ্ঞান, দক্ষতা ও কৌশল প্রয়োগ করে সমস্যাগ্রস্ত দলটিকে একটি ব্যবস্থাপনার আওতায় নিয়ে আসেন। আর এসবের সামগ্রিক রূপ হলো গ্রুপ ম্যানেজমেন্ট বা দলীয় সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা।

গ. উদ্দীপকের শারমিন তত্ত্বাবধায়কের উপদেশ ও নির্দেশ অনুকরণ নীতি, আত্মসচেতনতার নীতি, অংশগ্রহণ নীতি, সাহায্যার্থীর মূল্য ও মর্যাদা, লক্ষ্য নির্ধারণ নীতিমালা গ্রহণ করেছে। এছাড়া সে আরো নীতিমালা প্রয়োগ করতে পারে।
মাঠকর্মী প্রথমেই তার কার্য সম্পাদনের জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করে নেবেন। মাঠকর্মীর ব্যক্তিগত পছন্দ-অপছন্দ, ভালো লাগা, দুঃখ-কষ্ট ইত্যাদি ক্লায়েন্টের সাথে মেলানো যায় না। সচেতন হয়ে কাজ করতে হয়। সাহায্যার্থীকে মূল্য ও মর্যাদা দিতে হয়। তত্ত্বাবধায়কের উপদেশ ও নির্দেশমতো কার্য সম্পাদন করতে হয়। এছাড়া যোগাযোগ নীতি, গোপনীয়তা নীতি, সম্পদের সদ্ব্যবহার নীতি, পেশাগত সম্পর্ক নীতি, মূল্যায়ন নীতি গ্রহণ করলে একজন সমাজকর্মী সাবলীল ও কার্যকরী রূপে কাজ সম্পাদন করতে পারে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্রী শারমিন মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের জন্য তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশে কিছু নীতিমালা গ্রহণ করে প্রবীণদের বসবাসের উপযোগী পরিবেশ সৃষ্টির লক্ষ্যে কাজ করছে। এছাড়াও শারমিন আরো কিছু নীতিমালা প্রয়োগ করতে পারে। সে যোগাযোগ নীতির মাধ্যমে নিজের ও প্রবীণদের মধ্যে সুষম যোগাযোগ স্থাপন করতে পারে। পেশাগত সম্পর্ক নীতির মাধ্যমে পেশাগত সম্পর্ক তৈরি করা আবশ্যক। সম্পদের সদ্ব্যবহার নীতি গ্রহণ করলে প্রবীণ নিবাসের সম্পত্তির সদ্ব্যবহার ও সমবণ্টন করতে পারবে। প্রবীণদের বিভিন্ন তথ্য, অনুভূতি, কথা গোপনীয়তা নীতির প্রয়োগে গোপন রাখা যায়। শারমিন প্রবীণদের উন্নয়নে যে কাজ করছে তা আসলে কতটা সফল বা ব্যর্থ বা পরবর্তীতে আরো কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে হবে তার জন্য মূল্যায়ন নীতি গ্রহণ করতে পারে। এভাবে প্রবীণ নিবাসের সার্বিক উন্নয়ন সাধিত হতে পারে।

ঘ. সমাজকর্মে অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবক্ষেত্রে প্রয়োগের জন্য মাঠকর্ম শিক্ষা বা প্রশিক্ষণের প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।
আধুনিক সমাজকর্ম একটি ফলিত সামাজিক বিজ্ঞান। বাস্তব ক্ষেত্রে তাত্ত্বিক জ্ঞানকে প্রয়োগের জন্য মাঠকর্মের প্রশিক্ষণ আবশ্যক। মাঠকর্ম শিক্ষায় সমাজকর্মের নীতি, পদ্ধতি ও কৌশলের ব্যবহারিক দিক উপস্থাপন করা হয়। মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সবল ও দুর্বল দিকসমূহ অনুধাবন তথা আত্মসমালোচনা, আত্মবিশ্লেষণসহ সার্বিক বিষয়ের পর্যালোচনার মাধ্যমে নিজের এবং সমাজকর্ম পেশার নীতি ও পদ্ধতির বিভিন্ন দিক সম্পর্কে শিক্ষার্থী সচেতন হয়।
সমাজকর্মী শিক্ষানবিশ অবস্থায় সমাজকর্মের নীতি সম্পর্কে যে তাত্ত্বিক জ্ঞান লাভ করে, তা কোনো প্রতিষ্ঠানে মাঠকর্মের মাধ্যমে প্রয়োগ করার সুযোগ পায়। এতে তার পেশাদারিত্বের দায়িত্ব ও কর্তব্য সম্পর্কে ব্যবহারিক জ্ঞান অর্জিত হয়। উদ্দীপকের শারমিনের প্রবীণ নিবাসে সরাসরি কাজের মাধ্যমে প্রশিক্ষণ গ্রহণ তার পেশাগত জীবনে ব্যাপক ভূমিকা পালন করবে। সমাজে সৃষ্ট বিভিন্ন সামাজিক সমস্যাকে দূর করতে সমাজকর্মের ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ পেশাগত দিককে আরও উৎকর্ষতা দিয়েছে। এছাড়া ব্যবহারিক শিক্ষা বা মাঠকর্ম প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নতুন অনেক চিন্তা-চেতনা, পদ্ধতি ও কৌশল অবলম্বন করা যায়।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, সমাজকর্ম পেশায় মাঠকর্ম বা ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের বিকল্প নেই।

৮. সাবিনাকে একটি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শেষ বর্ষে একটি সেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে ৬০ কর্ম দিবসের জন্য সংযুক্ত করা হয়। তাকে দায়িত্ব দেয়া হয় অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগের অনুশীলন করার জন্য। পরবর্তীতে তাকে একটি রিপোর্ট উপস্থাপন করতে হয়।
ক. সাক্ষাৎকার কী?
খ. কেস ম্যানেজমেন্ট বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে কোন বিষয়ের ইঙ্গিত আছে?
ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টির নীতিমালা সম্পর্কে আলোচনা করো।

৮ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সাক্ষাৎকার হলো তথ্য সংগ্রহের একটি পদ্ধতি।

খ. কেস ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়া বলতে কেস ম্যানেজার কর্তৃক সেবা প্রদানের লক্ষ্যে পর্যায়ক্রমে গৃহীত ধারাবাহিক কার্যক্রমকে বোঝায়।
কেস ম্যানেজমেন্টের কতকগুলো প্রক্রিয়া রয়েছে এবং পর্যায়ক্রমে এসব প্রক্রিয়া সম্পন্ন করতে হয়। কেস ম্যানেজমেন্ট প্রক্রিয়ার মধ্যে রয়েছে তথ্য অনুসন্ধান, সেবা নির্ণয়, সমস্যা বা ঝুঁকিসমূহ শ্রেণিবদ্ধকরণ, সেবা পরিকল্পনা, বাস্তবায়ন, অনুসরণ, সমাপ্তিকরণ, সমাপ্তি পরবর্তী যোগাযোগ এবং ফলাফল মূল্যায়ন।

গ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি হচ্ছে সমাজকর্মের মাঠকর্ম। এর বিভিন্ন কার্যক্রম উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়।
সমাজকর্ম শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো মাঠকর্ম। আমাদের দেশে সমাজকর্ম শিক্ষার উচ্চ পর্যায়ে অর্থাৎ স্নাতক (সম্মান), এমএসএস প্রিলিমিনারি ও এমএসএস শেষ পর্বে শ্রেণিকক্ষের তাত্ত্বিক জ্ঞানের পাশাপাশি মাঠ পর্যায়ে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা রাখা হয়েছে, যা মাঠকর্ম নামে পরিচিত। মূলত শিক্ষার্থী শ্রেণিকক্ষে অর্জিত সমাজকর্মের জ্ঞান, দক্ষতা ও কৌশলের প্রয়োগ করে কোনো সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তি, দল বা সমষ্টির সমস্যা সমাধান প্রক্রিয়ায় অংশ নেয় এবং এটিই মাঠকর্ম।
উদ্দীপকে সাবিনা একটি বিষয়ে স্নাতক (সম্মান) শ্রেণির শেষ বর্ষে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে ৬০ কর্ম দিবসের জন্য সংযুক্ত হয়। তাকে দায়িত্ব দেওয়া হয় অর্জিত তাত্ত্বিক জ্ঞান বাস্তবে প্রয়োগের অনুশীলন করার জন্য। সেই সাথে তাকে একটি রিপোর্ট উত্থাপন করতে হয়। এ থেকে বোঝা যায় সে সমাজকর্মের মাঠকর্মের কার্যক্রমে অংশ নেয়। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি হচ্ছে মাঠকর্ম।

ঘ. উদ্দীপকে ইঙ্গিতকৃত বিষয়টি হচ্ছে মাঠকর্ম। এর সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মনীতি রয়েছে।
মাঠকর্ম নীতিমালা বলতে সেসব মূল্যবোধ বা আদর্শকে বোঝায় যা কোনো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্যার্জনের ক্ষেত্রে দিক নির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। মাঠকর্ম অনুশীলনের এসব নীতি একজন সমাজকর্মীকে মেনে চলতে হয়। এ নীতিগুলো অনুসরণের মাধ্যমেই মাঠকর্মের সফলতা নির্ভর করে। এগুলো হলোত অংশগ্রহণ নীতি, যোগাযোগ নীতি, লক্ষ্য নির্ধারণ নীতি, গোপনীয়তার নীতি, সম্পর্কের সদ্ব্যবহার নীতি, নমনীয় কর্মকাঠামো নীতি, সকলকে সমান চোখে দেখার নীতি, আত্মসচেতন নীতি, প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য মেনে চলার নীতি, মূল্যায়ন নীতি, তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশ ও উপদেশ অনুকরণ প্রভৃতি।
এক্ষেত্রে অংশগ্রহণ ও যোগাযোগ নীতির মাধ্যমে মাঠকর্মের প্রথম কাজ সাহায্যার্থীর সাথে অংশগ্রহণ ও যোগাযোগ স্থাপন করার মাধ্যমে তার সমস্যা সম্পর্কে বিস্তারিত জানার চেষ্টা করা এবং গোপনীয়তার নীতি অনুসরণের মাধ্যমে সাহায্যার্থীর কাছ থেকে নির্বিঘ্নে তথ্য সংগ্রহ করা। এছাড়া একজন মাঠকর্মী এমন পরিকল্পনা গ্রহণ করবেন, যা যেকোনো পরিস্থিতিতে পরিবর্তন করা যায়। একজন সমাজকর্মী পরিবর্তন প্রতিনিধি হিসেবে কাজ করেন। তাই তার ব্যক্তিগত ভালো লাগা, মন্দ লাগা পরিহার করে এবং নিজের আবেগ, মূল্যবোধ যাতে সাহায্যার্থীকে প্রভাবিত না করে সেদিকে গুরুত্ব দিয়ে কাজ করতে হবে। প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে মাথায় রেখে মাঠকর্মী কাজ করবেন। সর্বোপরি একজন মাঠকর্মী তার কার্য সম্পাদনের প্রতিটি পর্যায়ে কর্মের মূল্যায়ন করবেন। সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়নের মাধ্যমে ভুল-ত্রুটিগুলো সংশোধন করে নিলে লক্ষ্য অর্জন সহজ হয়। তাছাড়া মাঠকর্মীরা সবসময় কর্ম প্রতিষ্ঠানের এবং নিজ প্রতিষ্ঠানের তত্ত্বাবধায়কের নির্দেশ ও উপদেশ মেনে চলবেন। এসব নীতিমালা অনুসরণের মাধ্যমেই মাঠকর্ম সম্পন্ন হয়।
উদ্দীপকে বলা হয়েছে সাবিনা একটি বিষয়ে স্নাতক করছে। সে বিষয়ে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণের জন্য তাকে একটি স্বেচ্ছাসেবী প্রতিষ্ঠানে ৬০ কর্ম দিবসের জন্য সংযুক্ত করা হয়। এবং পরবর্তীতে তাকে একটি রিপোর্টও উপস্থাপন করতে হয়। এ তথ্য থেকে বোঝা যায়, উদ্দীপকে সমাজকর্মের মাঠকর্মকে নির্দেশ করা হয়েছে যা সম্পন্ন করার জন্য উপরের নীতিমালা অনুশীলন করতে হয়। সুতরাং বলা যায়, সমাজকর্মের মাঠকর্ম সম্পাদনের জন্য মাঠকর্মের নীতিমালা অনুসরণ করতে হয়।

৯. তামিম একটি বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সমাজকর্ম বিষয়ের ওপর সম্মান কোর্সে অধ্যয়ন করছে। তাকে তার শ্রেণি শিক্ষক পেশাগত দক্ষতা বৃদ্ধির জন্য একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে প্রেরণ করেন এবং কিছু পরামর্শ দেন যা তাকে তার লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য অবশ্যই পালন করতে হবে। পরামর্শগুলো হলো-
◉ সমস্যাগ্রস্ত ব্যক্তিকে সাদরে গ্রহণ করবে,
◉ ক্লায়েন্টদের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করবে,
◉ ক্লায়েন্টদের সাথে ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করবে না এবং
◉ ক্লায়েন্টদের প্রয়োজনীয় তথ্য প্রকাশ করবে না।
ক. কখন থেকে কেস ম্যানেজমেন্টের ব্যবহার শুরু হয়?
খ. 'সমাজকর্ম শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো মাঠকর্ম'— বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে তামিমকে যে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সমাজকর্মের ভাষায় তাকে কী বলে? পরামর্শগুলো কী কী? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. একজন সমাজকর্মীকে তার দক্ষতা অর্জনের জন্য উক্ত পরামর্শ ছাড়া আর কী কী নিয়ম মেনে চলতে হয় বলে তুমি মনে কর?

৯ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ১৯৭০ সাল থেকে সমাজকর্মে কেস ম্যানেজমেন্টের ব্যবহার শুরু হয়।

খ. মাঠকর্ম বলতে সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞানের বাস্তব প্রয়োগকে বোঝায়।
সমাজকর্ম একটি ব্যবহারিক সামাজিক বিজ্ঞান। মূলত সমাজকর্মের ধারণাকে ফুটিয়ে তোলার জন্য Field Work বা মাঠকর্ম করা হয়ে থাকে। এটি সমাজকর্মের এমন একটি দিক যেখানে সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞান মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করা হয়। মাঠকর্মের মাধ্যমেই একজন সমাজকর্মী তার জ্ঞানকে সফলভাবে প্রয়োগে সমর্থ হয়। শুধু শ্রেণিকক্ষের শিক্ষা একজন মানুষকে পূর্ণাঙ্গ শিক্ষিত করতে পারে না। এ কারণে প্রয়োজন ব্যবহারিক শিক্ষা বা মাঠকর্মের শিক্ষা। তাই বলা হয়ে থাকে 'সমাজকর্ম শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো মাঠকর্ম'।

গ. উদ্দীপকে তামিমকে যে পরামর্শ দেয়া হয়েছে সমাজকর্মের ভাষায় তাকে মাঠকর্মের নীতিমালা বলা হয়।
নীতি হলো সেসব মূল্যবোধ বা আদর্শ যা কোনো প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য অর্জনের ক্ষেত্রে দিকনির্দেশনা হিসেবে কাজ করে। মাঠকর্ম অনুশীলনের জন্য মাঠকর্মীকেও কিছু নিয়ম-নীতি মেনে চলতে হয় যার মাধ্যমে তিনি অর্জিত জ্ঞানের সফল প্রয়োগ ঘটাতে পারেন। উদ্দীপকে এ ধরনেরই কিছু নিয়ম উল্লেখ করা হয়েছে।
তামিম সমাজকর্মের ছাত্র। চতুর্থ বর্ষে পড়ার সময় তাকে একটি সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে পাঠানো হয়। এর উদ্দেশ্য ছিল তাত্ত্বিক জ্ঞানের প্রয়োগ ঘটানো। এক্ষেত্রে শিক্ষক তাকে কিছু পরামর্শ দেন। তার প্রথম পরামর্শটি মাঠকর্মের অংশগ্রহণ নীতির প্রতিফলন। অর্থাৎ সাহায্যার্থী ব্যক্তিকে তামিম সাদরে গ্রহণ করবে। দ্বিতীয় পরামর্শ অনুসারে তামিমকে ক্লায়েন্টের প্রতি সম্মান প্রদর্শন করতে হবে, যা মাঠকর্মের সাহায্যার্থীর মূল্য ও মর্যাদা বিষয়ক নীতির সাথে সম্পর্কিত। তৃতীয় পরামর্শটি যোগাযোগের নীতির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। এক্ষেত্রে তামিমকে ক্লায়েন্টদের সাথে ভালো সম্পর্ক গড়ে তোলার মাধ্যমে সফল যোগাযোগ স্থাপন করতে হবে। শেষ দুটি পরামর্শ যথাক্রমে আত্মসচেতনতার নীতি ও গোপনীয়তার নীতিকে প্রকাশ করে। অর্থাৎ সাহায্যার্থীর সাথে তামিম ব্যক্তিগত সম্পর্ক স্থাপন করবে না এবং সাহায্যার্থীর যাবতীয় তথ্য গোপন রাখবে। এভাবে সে মাঠকর্ম অনুশীলনের সময় এ নিয়মগুলো প্রয়োগের মাধ্যমে সফলতা অর্জন করবে।

ঘ. একজন সমাজকর্মীকে দক্ষতা অর্জনের জন্য উদ্দীপকের পরামর্শ ছাড়াও আরও কিছু নিয়ম মানতে হয়। এর মধ্যে আছে- লক্ষ্য নির্ধারণ নীতি, নমনীয় কর্মকাঠামো, সম্পদের সদ্ব্যবহার নীতি, পেশাগত সম্পর্ক নীতি, মূল্যায়ন নীতি প্রভৃতি। প্রায়োগিক দক্ষতা অর্জনের জন্য এই সব নীতির সমন্বয় ঘটানো জরুরি।
মাঠকর্ম অনুশীলনের মাধ্যমে একজন সমাজকর্মী তাত্ত্বিক জ্ঞানকে বাস্তবে প্রয়োগ করেন। এক্ষেত্রে তাকে যে সব নীতি অনুসরণ করতে হয় তার মধ্যে কয়েকটি নীতি উদ্দীপকে উল্লিখিত হয়েছে। এগুলো ছাড়াও আরো কিছু নিয়ম মেনে চলার মাধ্যমে একজন সমাজকর্মী সফলভাবে নিজের দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে পারেন।
একজন মাঠকর্মীকে শুরুতেই কাজ শেষ করার জন্য লক্ষ্য নির্ধারণ করে নিতে হবে। কারণ লক্ষ্য অনুযায়ী তাকে পরিকল্পনা করতে হবে। এক্ষেত্রে সম্পদের সদ্ব্যবহারের নীতি অবশ্যই মেনে চলতে হবে। অর্থাৎ সম্পদের সীমাবদ্ধতা পরিমাপ করে সাহায্যার্থীকে সম্ভাব্য সর্বোচ্চ সহায়তা প্রদান করতে হবে। তবে মাঠকর্মী তার সাহায্যার্থীর জন্য এমন কর্ম-পরিকল্পনা করবেন তা যেন যে কোনো পরিস্থিতিতে পরিবর্তন করা যায়। এর পাশাপাশি একজন মাঠকর্মীকে অবশ্যই পেশাগত সম্পর্ক নীতি মেনে চলতে হবে। তার চেষ্টা থাকবে খুব দ্রুত সাহায্যার্থীর সাথে পেশাগত সম্পর্ক তৈরি করার। এগুলোর পাশাপাশি প্রতিষ্ঠানের লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য এবং তত্তবাবধায়কের উপদেশ মেনে চলতে হবে। সর্বোপরি সমাজকর্মীকে প্রতিটি পর্যায়ে নিজের কাজের মূল্যায়ন করতে হবে।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত পরামর্শগুলোর পাশাপাশি এ নীতিগুলো মেনে চললে একজন সমাজকর্মী নিজের দক্ষতার বিকাশ ঘটাতে পারবেন।

১০. হারুন সাহেব একদিন দেখেন, কলেজের পাঁচজন ছাত্র-ছাত্রীর একটি দল তাদের মহল্লায় প্রতিবন্ধীদের তথ্য সংগ্রহ করছে। হারুন সাহেব ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে আলোচনা করে জানতে পারেন শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীরা তথ্য সংগ্রহ করছে। বিষয়টি হারুন সাহেব ভালোভাবে বোঝার জন্য তার বন্ধু সমাজকর্মের অধ্যাপক ওয়াজেদের সঙ্গে আলোচনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেন।
ক. মাঠকর্মের মেয়াদ কত কর্ম দিবস?
খ. সমাজকর্ম শিক্ষায় মাঠকর্মের উদ্দেশ্য বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কার্যক্রম সমাজকর্মের কোন বিষয়ের সাথে সম্পর্কিত? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য সংগ্রহের চূড়ান্ত উপস্থাপন কীভাবে করা যায়? তোমার পাঠ্যপুস্তকের জ্ঞানের আলোকে নির্দেশনা দাও।

১০ নম্বর সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. মাঠকর্মের মেয়াদ ৬০ কর্ম দিবস।

খ. মাঠকর্মের প্রধান উদ্দেশ্য হলো কাঙি্ক্ষত তথ্যাবলি সংগ্রহ ও সরবরাহ করা।
মাঠকর্মের আরও বিশেষ কিছু উদ্দেশ্য রয়েছে। এর মধ্যে সামাজিক উপাদান সম্পর্কিত তথ্যাবলি সংগ্রহ সামাজিক তথ্যাবলির কারণ উদ্ঘাটন, সামাজিক চলকের প্রকৃতি ব্যাখ্যাকরণ, বিস্তৃত তথ্যাবলি সরবরাহ করা, সংখ্যাবাচক বর্ণনা প্রদান, নমুনায়নের জন্য প্রতিনিধিত্বশীল অংশ নির্বাচন, এলাকাভিত্তিক জনগোষ্ঠীর বৈশিষ্ট্য প্রকাশ, চলকের কার্যকারণ সম্পর্ক আবিষ্কার, সংগৃহীত তথ্যের ব্যাখ্যা ও বিশ্লেষণ ইত্যাদি উল্লেখযোগ্য।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত কলেজের ছাত্র-ছাত্রীদের কার্যক্রম মাঠকর্মের সাথে সম্পর্কিত।
সমাজকর্ম শিক্ষার অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো ব্যবহারিক শিক্ষা, যা মাঠকর্ম হিসেবে পরিচিত। সমাজকর্মের বাস্তব জ্ঞান, নীতি ও দক্ষতা অর্জনে ব্যবহারিক প্রশিক্ষণ কৌশল হলো মাঠকর্ম। কোনো সামাজিক এজেন্সি বা সমাজসেবা প্রতিষ্ঠানের অধীনে শিক্ষাগত ও পেশাগত জ্ঞানের নিবিড় তত্ত্বাবধানের মাধ্যমে সমাজকর্মের তাত্ত্বিক জ্ঞান ও দক্ষতা নির্দিষ্ট কর্ম সম্পাদনে সরসারি অনুশীলন করা হলো মাঠকর্ম। মূলত সমাজকর্মের অর্জিত জ্ঞান প্রচলিত সমাজ ব্যবস্থা, সামাজিক কাঠামো, মূল্যবোধ, সংস্কৃতি, রীতিনীতি, আচার-আচরণ ও অনুষ্ঠানের প্রেক্ষিতে বাস্তব প্রয়োগের লক্ষ্যেই মাঠকর্ম অনুশীলন করা হয়। উদ্দীপকে এ বিষয়টিই উল্লেখ করা হয়েছে।
উদ্দীপকের হারুন সাহেব কলেজের পাঁচজন ছাত্র-ছাত্রীর একটি দলকে তাদের মহল্লায় প্রতিবন্ধীদের তথ্য সংগ্রহ করতে দেখেন। শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে ছাত্র-ছাত্রীরা এ তথ্য সংগ্রহ করছে। তাই তাদের এ কার্যক্রমকে মাঠকর্ম বলা যায়।

ঘ. ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য সংগ্রহের চূড়ান্ত উপস্থাপন প্রতিবেদন মাধ্যমে করা যায়।
মাঠকর্ম প্রতিবেদন হলো শিক্ষার্থীদের কর্মসম্পাদনের লিখিত দলিল। এটি সাধারণত একাডেমিক এবং এজেন্সি তত্ত্বাবধায়কের অধীনে সম্পন্ন হয়। এক্ষেত্রে বিভিন্ন সমাজসেবা এজেন্সিতে নিয়োজিত শিক্ষার্থীরা অর্পিত দায়িত্ব অনুযায়ী চূড়ান্ত প্রতিবেদন তৈরি করে। এ প্রতিবেদনে শিক্ষার্থীদের সম্পাদিত কাজগুলো উপস্থাপিত হয়। চূড়ান্ত প্রতিবেদনটি মূল্যায়ন রিপোর্ট হিসেবেও পরিচিত।
উদ্দীপকের হারুন সাহেব যে শিক্ষার্থীদের লক্ষ্য করেছেন তারা শিক্ষা কার্যক্রমের অংশ হিসেবে মহল্লার প্রতিবন্ধীদের কাছ থেকে তথ্য সংগ্রহ করছে। এ তথ্য তারা মাঠকর্ম প্রতিবেদনের মাধ্যমে চূড়ান্তভাবে উপস্থাপন করতে পারবে। তবে এ প্রতিবেদন তৈরি করার সময় কিছু বিষয় বিবেচনা করতে হয়। যেমন- প্রতিবেদন বাস্তবসম্মত সম্পূর্ণ হতে হবে; প্রতিবেদন যতটুকু সম্ভব সংক্ষেপে উপস্থাপন করতে হবে; এর ভাষা যাতে সুস্পষ্ট, প্রাঞ্জল ৷ বোধগম্য হয় সেদিক খেয়াল রাখতে হবে; প্রতিবেদনে উল্লিখিত তথ্য ও উপাত্তগুলো সত্যাশ্রয়ী হতে হবে; আর প্রতিবেদনটি যেন গবেষণালব্ধ বিষয়টির সাথে সামঞ্জস্যপূর্ণ হয় এর তা এমনভাবে লিখতে হবে যাতে পাঠক এটি পড়তে আগ্রহী হয়।
সার্বিক আলোচনা শেষে তাই বলা যায়, ছাত্র-ছাত্রীদের তথ্য সংগ্রহের চূড়ান্ত উপস্থাপন মাঠকর্ম প্রতিবেদনের মাধ্যমে করা যায়।
Post a Comment (0)
Previous Post Next Post