G

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৫

HSC যুক্তিবিদ্যা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Logic 1st Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চ মাধ্যমিক

যুক্তিবিদ্যা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৫ম অধ্যায়

HSC Logic 1st Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. দৃষ্টান্ত-১
রবীন্দ্রনাথ হন মানবতাবাদী
নজরুল হন মানবতাবাদী
ঈশ্বরচন্দ্র হন মানবতাবাদী
অতএব, সকল কবি হন মানবতাবাদী
দৃষ্টান্ত-২
সকল স্বশিক্ষিত হন পরোপকারী
পলেন বাবু হন স্বশিক্ষিত
অতএব, পলেন বাবু হন পরোপকারী
ক. অনুমান কী?
খ. সহানুমান বলতে কী বোঝ?
গ. দৃষ্টান্ত-১ কী ধরনের অনুমান ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২ এর তুলনামূলক সম্পর্ক ব্যাখ্যা করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অনুমান হলো কোনো জ্ঞাত বা জানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কোনো অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করার মানসিক প্রক্রিয়া।

খ. যে মাধ্যম অবরোহ অনুমানে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তটি অনিবার্যভাবে অনুমিত হয় তাকে সহানুমান বলে। যেমন:
সকল দার্শনিক হন জ্ঞানী
নজরুল ইসলাম হন একজন দার্শনিক
অতএব, নজরুল ইসলাম হন জ্ঞানী।
উপরের যুক্তিটিতে পরস্পর সম্পর্কযুক্ত দুটি আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে অনুমিত হয়েছে। তাই দৃষ্টান্তটি একটি সহানুমান।

গ. দৃষ্টান্ত-১ আরোহ অনুমানকে নির্দেশ করে।
অনুমানকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যার
আরোহ অনুমান। যে অনুমানে বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হয় তাকে আরোহ অনুমান বলে। আরোহ অনুমানে বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করা হয় বলে, এতে আরোহমূলক লম্ফ বিদ্যমান থাকে। উদ্দীপকের দৃষ্টান্ত-১-এর যুক্তিটি হচ্ছে-
রবীন্দ্রনাথ হন মানবতাবাদী
নজরুল হন মানবতাবাদী
ঈশ্বরচন্দ্র হন মানবতাবাদী
অতএব, সকল কবি হন মানবতাবাদী
এই যুক্তিটির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, এখানে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির মানবতাবাদী হওয়ার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হয়েছে। অর্থাৎ, এখানে বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করা হয়েছে। তাই দৃষ্টান্ত-১ এর উদাহরণটি আরোহ অনুমানের একটি যুক্তি।

ঘ. দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২ যথাক্রমে আরোহ অনুমান ও অবরোহ অনুমানকে প্রকাশ করে।
যে অনুমান প্রক্রিয়ায় কয়েকটি বিশেষ দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়, তাকে আরোহ অনুমান বলে। অন্যদিকে, যে অনুমান প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় এবং সিদ্ধান্তটি কখনোই আশ্রয়বাক্যের চেয়ে ব্যাপক হতে পারে না, তাকে অবরোহ অনুমান বলে। উদ্দীপকের দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২ এ যথাক্রমে আরোহ অনুমান ও অবরোহ অনুমান প্রকাশ পেয়েছে। আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত সবসময় সার্বিক হয়। কিন্তু অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত বিশেষ হয়।
অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত কোনো সময়ই আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হয় না। কিন্তু আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত সবসময়ই বেশি ব্যাপক হয়। দৃষ্টান্ত-১ এ আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্যগুলোর তুলনায় বেশি ব্যাপক। কিন্তু, দৃষ্টান্ত-২ এ অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তটি একটি বিশেষ যুক্তিবাক্য। যা তার আশ্রয়বাক্যগুলোর তুলনায় কম ব্যাপক। দৃষ্টান্ত-১ এ আমরা বিশেষ থেকে সার্বিকে উপনীত হয়েছি। কিন্তু দৃষ্টান্ত-২ এ আমরা সার্বিক থেকে বিশেষে উপনীত হয়েছি। এছাড়াও অবরোহ অনুমানে আকারগত সত্যতা পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু আরোহ অনুমানে আকারগত ও বস্তুগত উভয় সত্যতা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। আবার, অবরোহ ও আরোহ উভয় প্রকার অনুমান একই আদর্শ নিয়ে পরিচালিত হয়। উভয় প্রকার অনুমানের একটি আদর্শ এবং সেটি হলো সত্যের আদর্শ।
সুতরাং, অবরোহ অনুমান ও আরোহ অনুমান উভয়েই অনুমানের দুটি দিক এবং উভয়ের বেশকিছু সম্পর্কের দিক থাকলেও তাদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।

২. উদাহরণ-১:
শিক্ষক মেধাবী এক ছাত্রের কিছুদিন ক্লাসে অনুপস্থিতি লক্ষ করে মনে মনে ধারণা করলেন; ছাত্রটি অসুস্থ।
উদাহরণ-২:
সকল মানুষ হয় মরণশীল
সকল চাকুরীজীবী হয় মানুষ
অতএব, সকল চাকুরীজীবী হয় মরণশীল।
উদাহরণ-৩
দোয়েল হয় মরণশীল
কোকিল হয় মরণশীল
ময়না হয় মরণশীল
অতএব, সকল পাখি হয় মরণশীল।
ক. যুক্তিবিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয় কোনটি?
খ. কোন অনুমানের সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য অপেক্ষা বেশি ব্যাপক? ব্যাখ্যা করো।
গ. ভাবনা-১ তোমার পাঠ্যবইয়ের কোন বিষয়কে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ভাবনা-১ ও ২ এ প্রতিফলিত অনুমানের মধ্যে সম্পর্ক বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবিদ্যার প্রধান আলোচ্য বিষয় হচ্ছে যুক্তি।

খ. আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য অপেক্ষা বেশি ব্যাপক হয়।
আরোহ অনুমানের প্রকৃতি পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, এখানে বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার মাধ্যমে সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়। অর্থাৎ, এখানে কিছু থেকে সমগ্রে বা বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করা হয়। যেহেতু আরোহ অনুমানে কিছু থেকে সমগ্রে বা বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করা হয়, তাই আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য অপেক্ষা বেশি ব্যাপক হয়।

গ. উদ্দীপকের ভাবনা-১ পাঠ্যবইয়ের অনুমানকে নির্দেশ করে।
যুক্তিবিদ্যায় আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অনুমান। যুক্তিবিদ্যার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রাচীনকাল থেকেই অনুমানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়ে আসছে। অনুমান হলো জ্ঞাত থেকে অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। অর্থাৎ, কোনো জ্ঞাত বা জানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে যখন কোনো অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তখন তাকে অনুমান বলে।
ভাবনা-১ এ শিক্ষক একজন মেধাবী ছাত্রের ক্লাসে অনুপস্থিতি লক্ষ করে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করেছেন যে, ছাত্রটি অসুস্থ। এখানে ছাত্রটির ক্লাসে অনুপস্থিতি, জানা বিষয় এবং ছাত্রটির অসুস্থতা সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ অজানা বিষয়। এভাবে জানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কোনো অজানা বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করার মানসিক প্রক্রিয়া হলো অনুমান। অনুমানে জ্ঞাত বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে অজ্ঞাত বিষয়ে গমন করা হলেও জ্ঞাত ও অজ্ঞাত বিষয়ের মধ্যে একটি অনিবার্য সম্পর্ক থাকে।

ঘ. ভাবনা-১ ও ভাবনা-২-এর মাধ্যমে যথাক্রমে অনুমান ও অবরোহ অনুমানের ধারণা প্রতিফলিত হয়েছে।
অনুমান যুক্তিবিদ্যায় একটি গুরুত্বপূর্ণ স্থান দখল করে আছে। যখন কোনো জানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কোনো অজানা বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তখন তাকে অনুমান বলে। এটি একটি মানসিক প্রক্রিয়া। তবে অনুমানের ক্ষেত্রে জ্ঞাত ও অজ্ঞাত বিষয়ের মধ্যে একটি অনিবার্য সম্পর্ক থাকে।
অনুমানকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়। যার মধ্যে একটি হলো অবরোহ অনুমান। অবরোহ অনুমানে এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্যের ভিত্তিতে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় কিন্তু সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্যের সমব্যাপক বা কম ব্যাপক হয়। অবরোহ অনুমান একটি আকারগত প্রক্রিয়া। তাই অবরোহ অনুমানের লক্ষ্য আকারগত সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা।
সুতরাং দেখা যাচ্ছে যে, ভাবনা-১ ও ভাবনা-২ উভয়ই অনুমান। উভয় ক্ষেত্রেই জ্ঞাত থেকে অজ্ঞাতে গমন করা হয়। তবে তাদে মধ্যে প্রকৃতিগত পার্থক্য বিদ্যমান।

৩. ১নং দৃষ্টান্ত
নীল ফুল হয় সুন্দর
লাল ফুল হয় সুন্দর
অতএব সকল ফুল হয় সুন্দর।
২নং দৃষ্টান্ত
সকল পাখি হয় দ্বিপদ
বক হয় একটি পাখি
অতএব, বক হয় দ্বিপদ।
ক. অনুমান কী?
খ. 'অনুমান এক ধরনের মানসিক প্রক্রিয়া কেন?
গ. দৃষ্টান্ত-১ কোন ধরনের অনুমান নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে ১নং দৃষ্টান্তের সাথে ২নং দৃষ্টান্তের পার্থক্য কোথায়? বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো জানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কোনো অজানা বিষয় সম্বন্ধে জ্ঞান লাভের মানসিক প্রক্রিয়াকে অনুমান বলে।

খ. কোনো জানা তথ্যের ওপর ভিত্তি করে কোনো অজানা বিষয় সম্পর্কে ধারণা করার একটি মানসিক প্রক্রিয়াকে অনুমান করে।
অনুমান একটি মানসিক প্রক্রিয়া। কেননা, জানা বিষয় থেকে অজানা বিষয়ের ধারণা লাভ বা মানসিক প্রক্রিয়া হলো অনুমান। অনুমানের মাধ্যমে এক ধরনের ধারণা উৎপন্ন হয়। এটি ভাষায় প্রকাশিত রূপ নয়। তাই অনুমান একটি মানসিক প্রক্রিয়া। যখন এটি ভাষায় প্রকাশিত হয় তখন সেটি হয় যুক্তি।

গ. উদ্দীপকের দৃষ্টান্ত-১ এ আরোহ অনুমানের প্রতিফলন ঘটেছে।
বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের বা ঘটনার পর্যাবেক্ষণের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি সার্বিক সংশ্লেষক যুক্তিবাক্য স্থাপনের প্রক্রিয়াকে আরোহ অনুমান বলে। আরোহ অনুমানে সিদ্ধান্তটি সবসময় আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হয়। যেমন- রিনা হয় মরণশীল, বিনা হয়। মরণশীল, শান্তা হয় মরণশীল, অতএব সকল মানুষ হয় মরণশীল। উপরের যুক্তিটিতে রিনা, বিনা ও শান্তা প্রমুখ মানুষের মৃত্যুর বাস্তব দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সার্বিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যে, সকল মানুষ হয় মরণশীল।' এটি আরোহ অনুমানের দৃষ্টান্ত। এর সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্যের তুলনায় বেশি ব্যাপক।
দৃষ্টান্ত-১ এ নীল ফুল হয় সুন্দর, লাল ফুল হয় সুন্দর, অতএব সকল ফুল হয় সুন্দর। এই যুক্তিবাক্য পর্যবেক্ষণ করলে দেখা যায় যে নীল ও লাল ফুল সুন্দর হওয়ায় সার্বিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে 'সকল ফুল হয় সুন্দর'। যা আশ্রয়বাক্যের তুলনায় বেশি ব্যাপক। তাই এটি একটি আরোহ অনুমান।

ঘ. উদ্দীপকে দৃষ্টান্ত-১ হলো আরোহ অনুমান এবং দৃষ্টান্ত-২ হলো অবরোহ অনুমান।
যে অনুমান প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় এবং সিদ্ধান্তটি কখনোই আশ্রয়বাক্যের চেয়ে ব্যাপক হতে পারে না, তাকে অবরোহ অনুমান বলে। অন্যদিকে, যে অনুমান প্রক্রিয়ায় কয়েকটি বিশেষ দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়, তাকে আরোহ অনুমান বলে। উদ্দীপকের প্রথম ও দ্বিতীয় দৃষ্টান্তে যথাক্রমে আরোহ অনুমান ও অবরোহ অনুমান প্রকাশ পেয়েছে। আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত সবসময় সার্বিক হয়। কিন্তু অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত বিশেষ বা সার্বিক হয়।
১নং দৃষ্টান্তে নীল ও লাল ফুল সুন্দর হওয়ায় সিদ্ধান্ত হয় 'সকল ফুল হয় সুন্দর'। এখানে সিদ্ধান্ত বেশি ব্যাপক অর্থাৎ, এটা আরোহ অনুমান। যার ফলে সিদ্ধান্ত বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করেছে। অপরদিকে ২- নং দৃষ্টান্তে বলা হয়েছে সকল পাখি হয় দ্বিপদ, বক হয় পাখি, অতএব বক হয় দ্বিপদ। এখানে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক না অর্থাৎ, এটা অবরোহ অনুমান। যার কারণে সিদ্ধান্ত সার্বিক থেকে বিশেষে গমন করেছে। এছাড়াও অবরোহ অনুমানে আকারগত সত্যতা পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু আরোহ অনুমানে আকারগত ও বস্তুগত উভয় সত্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
সুতরাং, অবরোহ অনুমান ও আরোহ অনুমান উভয়েই অনুমানের দুটি দিক হলেও তাদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।

৪. উদ্দীপক-১
সব পাখি হয় পানির উপর নির্ভরশীল
পশু হয় পানির উপর নির্ভরশীল
সব মানুষ হয় পানির উপর নির্ভরশীল
অতএব, সব প্রাণী হয় পানির উপর নির্ভরশীল
উদ্দীপক-২
সকল শিক্ষক হয় শিক্ষিত
কোনো রাজনীতিবিদ নয় শিক্ষক
অতএব, কোনো রাজনীতিবিদ নয় শিক্ষিত।
উদ্দীপক-৩
সকল বানর হয় প্রাণী
কিছু প্রাণী হয় বানর
ক. অনুমান কী?
খ. অনুমান প্রকিয়ার কাঠামো দুটি উদাহরণসহ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপক-১ অবরোহ না আরোহ প্রক্রিয়া? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক ২ ও ৩ যথাক্রমে অনুমানের পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রক্রিয়া বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে অজানা বিষয়ে জ্ঞান লাভের মানসিক প্রক্রিয়াই হচ্ছে অনুমান।

খ. অনুমান প্রক্রিয়ার কাঠামো দুটি হলো অবরোহ ও আরোহ।
অবরোহ অনুমানে আশ্রয়বাক্য থেকে কম বা সমান ব্যাপক সিদ্ধান্ত অনুমিত হয়। যেমন-
সকল বিজ্ঞানী হন গবেষক।
নিউটন হন বিজ্ঞানী
অতএব, নিউটন হয় গবেষক।
অন্যদিকে অবরোহ অনুমানে আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক সিদ্ধান্ত অনুমিত হয়। যেমন-
সক্রেটিস হন জ্ঞানী
পেস্নটো হন জ্ঞানী
অতএব, সকল দার্শনিক হন জ্ঞানী।

গ. উদ্দীপক-১ আরোহ অনুমানকে নির্দেশ করে।
অনুমানকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো আরোহ অনুমান। যে অনুমানে বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হয় তাকে আরোহ অনুমান বলে। আরোহ অনুমানে বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করা হয় বলে এতে আরোহমূলক লম্ফ বিদ্যমান থাকে। উদ্দীপক ১-এর যুক্তিটি হচ্ছে-
সব পাখি হয় পানির উপর নির্ভরশীল
সব পশু হয় পানির উপর নির্ভরশীল
সব মানুষ হয় পানির উপর নির্ভরশীল
অতএব,সব প্রাণী হয় পানির উপর নির্ভরশীল
এই যুক্তিটির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, এখানে পাখি, পশু, মানুষ প্রভৃতি পানির উপর নির্ভরশীল হওয়ায় অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে যে 'সব প্রাণী হয় পানির উপর নির্ভরশীল। এখানে, সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হয়েছে। অর্থাৎ, বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করেছে। তাই উদ্দীপক-১ উদহারণটি আরোহ অনুমানের একটি যুক্তি।

ঘ. উদ্দীপক-২ ও ৩ যথাক্রমে মাধ্যম অনুমান এবং অমাধ্যম অনুমান।
যে অবরোহ অনুমানে একাধিক আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্ত পরোক্ষ অনুমান। কেননা মাধ্যম অনুমানে আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নতুন তথ্য সম্বলিত একটি সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়। আবার যে অবরোহ অনুমানে একটি আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্ত অনুমিত হয় তাকে অমাধ্যম অনুমান বলে। অমাধ্যম অনুমান হলো প্রত্যক্ষ প্রক্রিয়া। কেননা এ অনুমানে আশ্রয়বাক্যে যে তথ্য থাকে সিদ্ধান্তে প্রত্যক্ষভাবে সেই তথ্যই স্বীকার করা হয়। শুধুমাত্র পদের স্থান পরিবর্তন হয়।
উদ্দীপক-২ মাধ্যম অনুমান এবং এটি একটি পরোক্ষ প্রক্রিয়া। এখানে দেখা যায়ত সকল শিক্ষক হয় শিক্ষিত; কোনো রাজনীতিবিদ নয় শিক্ষক; সুতরাং কোন রাজনীতিবিদ নয় শিক্ষিত। এখানে সিদ্ধান্তে নতুন তথ্য প্রদান করা হয়েছে।
অন্যদিকে উদ্দীপক-৩ এ দেখা যায় সকল বানর হয় প্রাণী। সুতরাং কিছু প্রাণী হয় বানর। এটি একটি অমাধ্যম অনুমান এবং প্রত্যক্ষ প্রক্রিয়া। কেননা, প্রত্যক্ষভাবে আশ্রয়বাক্যকেই সিদ্ধান্তে স্বীকার করে নেয়া হয়েছে।
পরিশেষে বলা যায়, মাধ্যম ও অমাধ্যম অনুমান পরোক্ষ ও প্রত্যক্ষ প্রক্রিয়া অনুযায়ী পৃথক হলেও তারা উভয়ই অবরোহ অনুমানের দুটি দিক।

৫. পলাশ ও সুজন দুই বন্ধু। পলাশ সুজনকে ঠাট্টা করে বললো, বন্ধু সেদিন ক্লাসে স্যার বলেছেন, সকল মানুষ হয় স্বার্থপর। তার মানে তুইও কিন্তু স্বার্থপর। এক পর্যায়ে সুজন পলাশকে হাসতে হাসতে বললো, আমি স্বার্থপর হলে, তুইও স্বার্থপর। ঠিকই বলেছিস এ দুনিয়ার সবাই স্বার্থপর।
ক. অনুমান কী?
খ. অমাধ্যম অনুমান কি প্রকৃত অনুমান? বুঝিয়ে লেখো।
গ. উদ্দীপকে পলাশের বক্তব্যে কোন বিষয়টির প্রতিফলন ঘটেছে? বিশ্লেষণ করো।
ঘ. তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে পলাশ ও সুজনের বক্তব্যের মধ্যকার পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে কোনো অজানা বিষয সম্বন্ধে জ্ঞান লাভের মানসিক প্রক্রিয়াকে অনুমান বলে।

খ. হ্যাঁ, অমাধ্যম অনুমান প্রকৃত অনুমান।
অমাধ্যম অনুমানের আশ্রয়বাক্যে যা অস্পষ্ট থাকে তা-ই সিদ্ধান্তে সুস্পষ্ট করে বলা হয়। এক্ষেত্রে আশ্রয়বাক্যের সুপ্ত বিষয় সিদ্ধান্তে পূর্ণরূপে ব্যক্ত হয়। অমাধ্যম অনুমানে আশ্রয়বাক্য থেকে সিদ্ধান্তে অনুমানের পদক্ষেপ সংক্ষিপ্ত হলেও এ ক্ষেত্রে আশ্রয়বাক্যের অপ্রকাশিত অন্তর্নিহিত অর্থ সঠিকভাবেই সিদ্ধান্তে প্রকাশিত হয়। পাশাপাশি এ অনুমানের মাধ্যমে যথার্থভাবেই আমরা জ্ঞাত সত্য থেকে অজ্ঞাত সত্যে উপনীত হতে পারি। তাই অমাধ্যম অনুমানকে প্রকৃত অনুমান বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে পলাশের বক্তব্যে অবরোহ অনুমান বিষয়টি প্রতিফলিত হয়েছে।
যে অনুমানে সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্য থেকে কোনোক্রমেই বেশি ব্যাপক হতে পারে না তাকে অবরোহ অনুমান বলে। অবরোহ অনুমানে আমরা অধিকতর ব্যাপক ধারণা থেকে কম ব্যাপক ধারণা বা বিশেষ ধারণার দিকে অগ্রসর হই।
উদ্দীপকে পলাশ সুজনকে বলে, সকল মানুষ হয় স্বার্থপর। তার মানে তুইও কিন্তু স্বার্থপর। এ অনুমানটিতে সকল মানুষের স্বার্থপরতার ধারণা থেকে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে সুজনও স্বার্থপর যা আশ্রয়বাক্য থেকে কম ব্যাপক। তাই, এটি একটি অবরোহ অনুমান।

ঘ. উদ্দীপকে পলাশের বক্তব্য হলো অবরোহ অনুমান এবং সুজনের বক্তব্য হলো আরোহ অনুমান।
যে অনুমান প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় এবং সিদ্ধান্তটি কখনোই আশ্রয়বাক্যের চেয়ে ব্যাপক হতে পারে না, তাকে অবরোহ অনুমান বলে। অন্যদিকে, যে অনুমান প্রক্রিয়ায় কয়েকটি বিশেষ দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়, তাকে আরোহ অনুমান বলে। উদ্দীপকের পলাশের বক্তব্য ও সুজনের বক্তব্য যথাক্রমে অবরোহ অনুমান ও আরোহ অনুমান প্রকাশ পেয়েছে। আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত সবসময় সার্বিক হয়। কিন্তু অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত বিশেষ বা সার্বিক হয়।
অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত কোনো সময়ই আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হয় না। কিন্তু আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত সব সময়ই বেশি ব্যাপক হয়। পলাশের বক্তব্যতে অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য তুলনায় বেশি ব্যাপক নয়। কিন্তু সুজনের বক্তব্যতে আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তটি সার্বিক। যা তার আশ্রয়বাক্যগুলোর তুলনায় ব্যাপক। পলাশের বক্তব্যতে এ আমরা সার্বিক থেকে বিশেষে উপনীত হয়েছি। কিন্তু সুজনের বক্তব্যতে এ আমরা বিশেষ থেকে সার্বিকে উপনীত হয়েছি। এছাড়াও অবরোহ অনুমানে আকারগত সত্যতা পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু আরোহ অনুমানে আকারগত ও বস্তুগত উভয় সত্য পরিলক্ষিত হয়ে থাকে।
সুতরাং বলা যায় যে, অবরোহ অনুমান ও আরোহ অনুমান উভয়েই অনুমানের দুটি দিক হলেও তাদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।

৬. দৃষ্টান্ত-১
রনি হয় মরণশীল
জলি হয় মরণশীল
টনি হয় মরণশীল
অতএব, সব মানুষ হয় মরণশীল।
দৃষ্টান্ত ২
সব মানুষ হয় মরণশীল
রওনক হয় মানুষ
সুতরাং, রওনক হয় মরণশীল।
ক. অনুমান কাকে বলে?
খ. অনুমানের বৈশিষ্ট্যগুলো বর্ণনা করো।
গ. উদ্দীপকের দৃষ্টান্ত-১ এর প্রকৃতি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২ এর পার্থক্য পাঠ্য বইয়ের অনুসরণে লেখো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো জ্ঞাত তথ্যের ভিত্তিতে অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে জ্ঞান লাভের মানসিক প্রক্রিয়াকে অনুমান বলে।

খ. অনুমানের কিছু বৈশিষ্ট্য আছে।
অনুমান সর্বদা এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্যের ওপর নির্ভরশীল। এটি একটি মানসিক প্রক্রিয়া বলে সত্য-মিথ্যা যাচাই করার জন্য একে ভাষায় প্রকাশ করার দরকার পড়ে। আর ভাষায় প্রকাশিত হলে সেটি হয় যুক্তি। যুক্তি আবার গঠিত হয় এক বা একাধিক জানা সত্যের ওপর ভিত্তি করে। অনুমান সর্বদা নতুন যুক্তিবাক্য স্থাপন করে। অনুমানের এই নতুন যুক্তিবাক্যকে বলা হয় সিদ্ধান্ত। আশ্রয়বাক্যের মধ্যেই এই নতুন বাক্য বা সিদ্ধান্তের মৌলিক দিক নিহিত থাকে। যেমন-
‘সকল মানুষ হয় মরণশীল'ত আশ্রয়বাক্য।
‘সকল দার্শনিক হয় মানুষ আশ্রয়বাক্য।
অতত্রব 'সকল দার্শনিক হয় মরণশীল' - সিদ্ধান্ত।

গ. দৃষ্টান্ত-১ আরোহ অনুমানকে নির্দেশ করে।
অনুমানকে প্রধানত দুইভাগে ভাগ করা হয়েছে। যার মধ্যে একটি হলো আরোহ অনুমান। যে অনুমানে বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সার্বিক সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় এবং সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হয় তাকে আরোহ অনুমান বলে। আরোহ অনুমানে বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করা হয় বলে এতে আরোহমূলক লম্ফ বিদ্যমান থাকে। উদ্দীপকের দৃষ্টান্ত-১-এর যুক্তিটি হচ্ছে-
রনি হয় মরণশীল
জলি হয় মরণশীল
টনি হয় মরণশীল
অতএব সব মানুষ হয় মরণশীল
এই যুক্তিটির ক্ষেত্রে দেখা যাচ্ছে যে, এখানে বিশেষ বিশেষ ব্যক্তির মরণশীল হওয়ার অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে সার্বিক সিদ্ধান্ত প্রতিষ্ঠা করা হয়েছে। এছাড়া সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হয়েছে। অর্থাৎ, এখানে বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করা হয়েছে। তাই দৃষ্টান্ত-১ এর উদাহরণটি আরোহ অনুমানের একটি যুক্তি।

ঘ. দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত ২ যথাক্রমে আরোহ অনুমান ও অবরোহ অনুমানকে প্রকাশ করে।
যে অনুমান প্রক্রিয়ায় কয়েকটি বিশেষ দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়, তাকে আরোহ অনুমান বলে। অন্যদিকে, যে অনুমান প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় এবং সিদ্ধান্তটি কখনোই আশ্রয়বাক্যের চেয়ে ব্যাপক হতে পারে না, তাকে অবরোহ অনুমান বলে। উদ্দীপকের দৃষ্টান্ত-১ ও দৃষ্টান্ত-২ এ যথাক্রমে আরোহ অনুমান ও অবরোহ অনুমান প্রকাশ পেয়েছে। আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত সবসময় সার্বিক হয়। কিন্তু অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত বিশেষ হয়।
অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত কোনো সময়ই আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হয় না। কিন্তু আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত সবসময়ই বেশিব্যাপক হয়। দৃষ্টান্ত-১ এ আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্যগুলোর তুলনায় বেশি ব্যাপক। কিন্তু, দৃষ্টান্ত-২ এ অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তটি একটি বিশেষ যুক্তিবাক্য। যা তার আশ্রয়বাক্যগুলোর তুলনায় কম ব্যাপক। দৃষ্টান্ত-১ এ আমরা বিশেষ থেকে সার্বিকে উপনীত হয়েছি। কিন্তু দৃষ্টান্ত-২ এ আমরা সার্বিক থেকে বিশেষে উপনীত হয়েছি। এছাড়াও অবরোহ অনুমানে আকারগত সত্যতা পরিলক্ষিত হয়, কিন্তু আরোহ অনুমানে আকারগত ও বস্তুগত উভয় সত্যতা পরিলক্ষিত হয়ে থাকে। আবার, অবরোহ ও আরোহ উভয় প্রকার অনুমান একই আদর্শ নিয়ে পরিচালিত হয়। উভয় প্রকার অনুমানের একটি আদর্শ এবং সেটি হলো সত্যের আদর্শ।
সুতরাং, অবরোহ অনুমান ও আরোহ অনুমান উভয়েই অনুমানের দুটি দিক এবং উভয়ের বেশকিছু সম্পর্কের দিক থাকলেও তাদের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।

৭. মা বললেন দুপুরে মাছ ও মুরগি দুটিই রান্না করা হয়েছে।
তোমরা দুপুরে মাছ ও রাতে মুরগি খাবে। তমা বলল, 'না আমি দুপুরে মাছ ও মুরগি এক সাথে খাব।' তখন মা বললেন, 'না দুপুরে যে কোনো একটা খেতে পারবে।
ক. যুক্তিবাক্য কয় প্রকার?
খ. কোন ধরনের যুক্তিবাক্যকে প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য বলা হয়?
গ. উদ্দীপকে মা এর শেষ বক্তব্য কোন ধরনের যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে?
ঘ. উদ্দীপকের মা ও তমার বক্তব্যের তুলনামূলক বিশ্লেষণ করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. গুণ ও পরিমাণ অনুসারে যুক্তিবাক্য চার প্রকার।

খ. যে বাক্যে শর্ত ও বক্তব্য বক্তব্য থাকে তাকে প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে।
যে সাপেক্ষ যুক্তিবাক্যে 'যদি-তাহলে' বা অনুরূপ অর্থ প্রকাশক কোনো যোজক দ্বারা শর্ত উল্লেখ করা হয় তাকে প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন, যদি বৃষ্টি হয়, তাহলে মাঠ ভিজবে। এখানে 'যদি বৃষ্টি হয়' দ্বারা শর্ত আর 'তাহলে মাঠ ভিজবে' দ্বারা বক্তব্য প্রকাশ পায় বলে এটি একটি প্রাকল্পিক যুক্তিবাক্য।

গ. উদ্দীপকে মায়ের শেষ বক্তব্যে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যের (Disjunctive Proposition) প্রতিফলন ঘটেছে।
যে সাপেক্ষ যুক্তিবাক্যে দুই বা ততোধিক সরল যুক্তিবাক্য পরস্পর বিকল্প হিসেবে 'হয় না হয়', 'বা', 'অথবা', 'কিংবা' ইত্যাদি জাতীয় অর্থ প্রকাশক শব্দ দ্বারা যুক্ত থাকে তাকে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। এ ধরনের বাক্যে দুটি পৃথক বিকল্পের সম্ভাবনাকে কোনো ব্যক্তি বা বস্তুর ক্ষেত্রে প্রয়োগ করা হয়। দুটি বিকল্পের মধ্যে যে কোনো একটি সত্য হলে অন্যটি মিথ্যা হয়। যেমন- লোকটি হয় সৎ না হয় অসৎ। এখানে লোকটি যদি সৎ হয় তবে সে অসৎ নয়। আবার যদি অসৎ হয় তবে সে সৎ নয়।
উদ্দীপকে, মা তমাকে বলেন 'না দুপুরে যে কোনো একটা খেতে পারবে'। এখানে দুটি বিকল্প আছে। একটি মাছ অন্যটি মুরগি। তমা যদি মাছ নেয় তবে মুরগি নিতে পারবে না। আবার, সে যদি মুরগি নেয় তবে মাছ নিতে পারবে না। অর্থাৎ এখানে দুটি বিকল্প হয় না হয়' শর্ত দ্বারা যুক্ত এবং এদের একটি সত্য হলে অন্যটি মিথ্যা হবে। তাই তমার মায়ের বক্তব্য বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য।

ঘ. উদ্দীপকে তমার বক্তব্য সংযৌগিক যুক্তিবাক্যকে এবং মায়ের বক্তব্য বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে। এই দুধরনের বাক্যের তুলনামূলক সম্পর্ক নিচে আলোচনা করা হলো।
যে সাপেক্ষ যুক্তিবাক্যে একাধিক বিকল্প সম্ভাবনার উল্লেখ থাকে এবং এগুলো ‘হয়-না হয়’ ‘কিংবা' 'অথবা' এসব আকারে যুক্ত থাকে তাকে বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমনু সুমন হয় মেধাবী না হয় বোকা। আবার, যৌগিক যুক্তিবাক্যের অন্তর্গত প্রতিটি সরল বচন সদর্থক হলে তাকে সংযৌগিক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন: তাপস হয় সৎ ও বুদ্ধিমান। বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য এবং সংযৌগিক যুক্তিবাক্যের সাদৃশ্য হলো এরা উভয়ই দুই বা ততোধিক সরল বাক্যের সমন্বয়ে গঠিত হয়। উদ্দীপকে মায়ের বক্তব্য 'না দুপুরে যে কোনো একটা খেতে পারবে'। বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যটির দুটি সরল বাক্য ১. তমা মাছ পাবে ও ২. অথবা তমা মুরগি পাবে এর সমন্বয়ে গঠিত। আবার, তমার বক্তব্যটি সংযৌগিক বাক্য 'না আমি দুপুরে মাছ ও মুরগি এক সাথে খাব'। দুটি সরল বাক্য- ১. আমি মাছ নিব, ২. আমি মুরগি নিব এর সমন্বয়ে গঠিত।
বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য ও সংযৌগিক যুক্তিবাক্যের বৈসাদৃশ্য হলো, বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যে দুটি বিকল্পের একটি সত্য হলে অন্যটি মিথ্যা হয়। যেমনত উদ্দীপকে মায়ের মতে, তমা হয় মাছ পাবে নয়তো মুরগি পাবে। কিন্তু সংযৌগিক যুক্তিবাক্যে উভয় বিকল্পই একইসাথে সত্য বা মিথ্যা হতে পারে। যেমনত উদ্দীপকে তমা মাছ ও মুরগি উভয় নিবে।
আবার, বৈকল্পিক যুক্তিবাক্যে চিহ্ন হিসেবে অথবা, হয় না হয় ইত্যাদি ব্যবহৃত হয়। যেমনত উদ্দীপকে তমা মাছ না হয় মুরগি পাবে। কিন্তু, সংযৌগিক যুক্তিবাক্যে চিহ্ন হিসেবে ব্যবহৃত হয় ও, এবং ইত্যাদি। যেমনত উদ্দীপকে তমা মাছ ও মুরগি উভয় নিবে।
সুতরাং, বৈকল্পিক যুক্তিবাক্য ও সংযৌগিক যুক্তিবাক্যের তুলনামূলক আলোচনা থেকে আমরা বলতে পারি যে, এদের মধ্যে সাদৃশ্যে ও বৈসাদৃশ্যে উভয় সম্পর্কই রয়েছে।

৮. সাকিব ও সাদমান ফুটবল খেলা পছন্দ করে। সাকিব বলল ‘লাতিন আমেরিকার ফুটবল অবকাঠামো ভালো নয়। অন্যদিকে সাদমান বলল, 'ইউরোপীয় ফুটবল অবকাঠামো হয় ভালো মানের'। সাকিব ও সাদমানের অপর বন্ধু রাকিব বলল, ঋওঋঅ এর সহযোগী দেশসমূহের মধ্যে ইউরোপীয় সকল দেশের অবকাঠামো হয় সুন্দর।
ক. Proposition কী?
খ. কোন ধরনের যুক্তিবাক্যে দুটি পদই ব্যাপ্য হয়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে সাদমানের উক্তিটি কোন ধরনের যুক্তিবাক্যকে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে সাকিব ও রাকিবের উক্তি দুটির মধ্যে পার্থক্য বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দুটি পদের মধ্যকার স্বীকৃতি ও অস্বীকৃতিমূলক কোনো সম্পর্কের লিখিত ও মৌখিক বিবৃতিই হলো Proposition বা যুক্তিবাক্য।

খ. সার্বিক নঞর্থক যুক্তিবাক্য বা ঊ বাক্যের দুটি পদই ব্যাপ্য হয়।
সার্বিক যুক্তিবাক্য হওয়ার জন্য এর উদ্দেশ্য পদ ব্যাপ্য হয়। আবার নঞর্থক যুক্তিবাক্য হওয়ার জন্য এর বিধেয় পদও ব্যাপ্য হয়। যেমন- 'কোনো মানুষ নয় অমর' এ যুক্তিবাক্যে উদ্দেশ্য পদ 'মানুষ' এবং বিধেয় পদ 'অমর' উভয়ই সমগ্র ব্যক্ত্যর্থসহ উপস্থাপিত হয়েছে। সুতরাং, সার্বিক নঞর্থক যুক্তিবাক্যের উভয় পদই ব্যাপ্য।

গ. উদ্দীপকে সাদমানের বক্তব্যটি হলো সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য (Universal Affirmative Proposition) বা অ বাক্য।
যে সকল যুক্তিবাক্যে বিধেয়কে উদ্দেশ্য পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করে নেওয়া হয় তাকে সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য বলে। এ ধরনের বাক্য পরিমাণগত দিক থেকে 'সার্বিক' এবং গুণগত দিক থেকে ‘সদর্থক' হয়ে থাকে। যেমনত 'সকল দার্শনিক হয় মরণশীল'। এখানে ‘মরণশীল' বিধেয় পদকে 'দার্শনিক' উদ্দেশ্য পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। কাজেই এটি একটি সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য। এরূপ বাক্যে পরিমাণসূচক শব্দ হিসেবে 'সব' বা 'সকল' এবং গুণ প্রকাশক শব্দ হিসেবে 'দার্শনিক' কথাটি ব্যবহৃত হয়।
উদ্দীপকে, সাদমানের বক্তব্যে বলা হয়েছে, ‘‘ইউরোপীয় ফুটবল অবকাঠামো হয় ভালো মানের।' এর যৌক্তির রূপ হলো ইউরোপীয় ফুটবল হয় সুন্দর।' এখানে, বিধেয় 'সুন্দর' পদটিকে উদ্দেশ্য ‘ইউরোপীয় ফুটবল' পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করে নেওয়া হয়েছে। তাই সাদমানের বক্তব্যটি হলো সার্বিক সদর্থক যুক্তিবাক্য।

ঘ. উদ্দীপকে সাকিবের ভাবনা হচ্ছে সার্বিক নঞর্থক যুক্তিবাক্য এবং রাবিকের বক্তব্য বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য।
যে সকল যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের আংশিক ব্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয় তাকে বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন- ‘‘কিছু দার্শনিক হন কবি।' এখানে, বিধেয় 'কবি' পদকে উদ্দেশ্য ‘দার্শনিক' পদের আংশিক ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে স্বীকার করা হয়েছে। আবার, যেসকল যুক্তিবাক্যে বিধেয় পদকে উদ্দেশ্য পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করা হয় তাকে সার্বিক নঞর্থক যুক্তিবাক্য বলে। যেমন- কোনো মানুষ নয় অমরণশীল।' এখানে, বিধেয় 'মরণশীল' পদটিকে উদ্দেশ্য 'মানুষ' পদের সমগ্র ব্যক্ত্যর্থ সম্পর্কে অস্বীকার করে নেওয়া হয়েছে।
উদ্দীপকে, সাকিবের ভাবনা হলো- লাতিন আমেরিকার ফুটবল অবকাঠামো ভালো নয়। এর যৌক্তিক রূপ হলো- লাতিন আমেরিকার ফুটবল নয় ভালো যা একটি সার্বিক নঞর্থক যুক্তিবাক্য। আবার, রাকিবের বক্তব্য হলো- FIFA এর সহযোগী দেশসমূহের মধ্যে ইউরোপীয় সকল দেশের অবকাঠামো হয় সুন্দর। এর যৌক্তিক রূপ হলো "ঋওঋঅ-এর সহযোগী দেশসমূহের মধ্যে ইউরোপীয় সকল দেশের ফুটবল কাঠামো হয় ভালো’ যা একটি বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য।
সুতরাং, সাকিব ও রাকিবের বক্তব্য গুণগত দিক থেকে উভয়ই সদর্থক ও নঞর্থক। সাকিবের বক্তব্য হলো সার্বিক নঞর্থক যুক্তিবাক্য। অপরদিকে রাকিবের বক্তব্য বিশেষ সদর্থক যুক্তিবাক্য।

৯. জনাব আরিফ তরফদার একজন মৃত্তিকাবিজ্ঞানী। তিনি বিভিন্ন এলাকার মাটি নিয়ে গবেষণা করছেন। তিনি 'ক' এলাকার উর্বর মাটির তথ্য নিয়ে দেখলেন সেখানে ভালো ফসল জন্মে। 'খ' এলাকার উর্বর মাটির তথ্য নিয়ে দেখলেন সেখানে ভালো ফসল জন্মে এবং 'গ' এলাকার উর্বর মাটির তথ্য নিয়ে দেখলেন, সেখানেও ভালো ফসল জন্মে। এর পর জনাব তরফদার সিদ্ধান্ত নিলেন, সকল উর্বর মাটিতেই ভালো ফসল জন্মে।
ক. যোসেফের মতে অনুমান কী?
খ. অবরোহ ও আরোহ অনুমানের দুটি পার্থক্য লেখো।
গ. উদ্দীপকে জনাব আরিফ তরফদার উর্বর মাটি সম্পর্কে যে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে তার মাধ্যমে কোন প্রকার অনুমানের ইঙ্গিত পাওয়া যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত অনুমানের কোন কোন ক্ষেত্রে মূল্য ও গুরুত্ব আছে? তোমার উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যুক্তিবিদ যোসেফ অনুমানের সংজ্ঞা দিতে গিয়ে বলেন, অনুমান হচ্ছে এমন একটি চিন্তন প্রক্রিয়া যা এক বা একাধিক অবধারণ দ্বারা শুরু হয়ে অন্য একটি অবধারণে পৌঁছে যার সত্যতা পূর্ববর্তী অবধারণের সত্যতার সাথে সম্পর্কিত বলে পরিলক্ষিত হয়।

খ. অবরোহ ও আরোহ অনুমানের দুটি পার্থক্য হলো-
অবরোহ অনুমানে বেশি ব্যাপক আশ্রয়বাক্য থেকে কম ব্যাপক সিদ্ধান্ত অনুমান করা হয়। অন্যদিকে, আরোহ অনুমানে কম ব্যাপক আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক সিদ্ধান্ত অনুমান করা হয়।
অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত বিশেষ বা সার্বিক বাক্য হয়। অন্যদিকে, আরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত সর্বদা সার্বিক বাক্য হয়।

গ. উদ্দীপকের জনাব আরিফ তরফদারের মাটি সম্পর্কে সিদ্ধান্তে আরোহ অনুমানের প্রতিফলন ঘটেছে।
বিশেষ বিশেষ দৃষ্টান্তের বা ঘটনার পর্যবেক্ষণের বাস্তব অভিজ্ঞতার ভিত্তিতে একটি সার্বিক সংশ্লেষক যুক্তিবাক্য স্থাপনের প্রক্রিয়াকে আরোহ অনুমান বলে। আরোহ অনুমানে সিদ্ধান্তটি সবসময় আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হয়। যেমন- রিনা হয় মরণশীল, বিনা হয় মরণশীল, শান্ত হয় মরণশীল, অতএব সকল মানুষ হয় মরণশীল। উপযুক্ত যুক্তিটিতে রিনা, বিনা ও শান্তা প্রমুখ মানুষের মৃত্যুর বাস্তব দৃষ্টান্ত পর্যবেক্ষণ করে সার্বিকভাবে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়েছে যে, 'সকল মানুষ হয় মরণশীল'। এটি আরোহ অনুমানের দৃষ্টান্ত। এর সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্যের তুলনায় বেশি ব্যাপক।
উদ্দীপকে মৃত্তিকাবিজ্ঞানী জনাব আরিফ তরফদার 'ক', 'খ' ও 'গ' এলাকার মাটি গবেষণা করে দেখেন যে সব এলাকার মাটি উর্বর এবং এই মাটিতে ফসল ভালো হয়। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন সকল উর্বর মটিতেই ফসল ভালো হয়। তাই তিনি সিদ্ধান্ত নেন সকল উর্বর মাটিতেই ফসল ভালো হয়। যা আশ্রয়বাক্যগুলোর তুলনায় বেশি ব্যাপক। তাই এটি আরোহ অনুমান।

ঘ. নিশ্চিত সত্য লাভের ক্ষেত্রে উক্ত অনুমানের তথা আরোহ অনুমানের গুরুত্ব রয়েছে।
মানুষের ব্যবহারিক জীবনে জ্ঞানলাভের একটি অন্যতম গুরুত্বপূর্ণ মাধ্যম হিসেবে আরোহ অনুমান বিশেষ স্থান দখল করে আছে। দার্শনিক ও বৈজ্ঞানিক গবেষণার ক্ষেত্রেও আরোহ অনুমান গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। চিন্তার যথাযথ বিকাশ অত্যন্ত জরুরি। চিন্তাশীল প্রাণী হবার কারণেই মানুষ সকল প্রাণী হতে আলাদা। মানুষের চিন্তার পরিপূর্ণতা ও বিকাশে আরোহ অনুমান জরুরি। বস্তুগত সত্যতা লাভের চেষ্টা করলেও
আরোহ অনুমান কখনও সুনিশ্চিত সত্য প্রতিষ্ঠার দাবি করে না। অর্থাৎ কোনো সত্যকে চূড়ান্তভাবে নিশ্চিত করে না। কেননা অভিজ্ঞতার আলোকে তা যে কোনো সময়ে ভ্রান্ত প্রমাণিত হতে পারে। আরোহ অনুমানের লক্ষ্য থাকে আকারগত ও বস্তুগত উভয় প্রকার সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা। যদিও অবরোহ অনুমানের মূল লক্ষ্য থাকে আকারগত সত্যতা প্রতিষ্ঠা করা। কিন্তু আরোহ অনুমানের ক্ষেত্রে এমনটি হয় না। আরোহ অনুমান প্রক্রিয়ায় বিশেষ থেকে সার্বিকে গমন করা হয়। আরোহ অনুমানে আরোহাত্মক লম্ফ বিদ্যমান থাকে। অর্থাৎ জ্ঞাত তথ্যের সাথে অজ্ঞাত তথ্যের ব্যাপকতা থাকে অনেক বেশি। এই দূরত্বকে মানসিকভাবে অতিক্রম করার জন্য চিন্তাগত এই লম্ফ প্রদান আবশ্যক হয়।
উদ্দীপকের জনাব আরিফ তরফদার ক, খ, গ এলাকার জমির মাটি পরীক্ষা করে দেখলেন যে, এই এলাকার মাটি উর্বর ও এখানে ফসল ভালো জন্মে। এর পরিপ্রেক্ষিতে তিনি সিদ্ধান্ত নিলেন যে, উর্বর মাটিতে ভালো ফসল জন্মে। এভাবে জনাব আরিফ তরফদার কয়েকটি মাটির নমুনা পরীক্ষা করে একটি নিশ্চিত সিদ্ধান্ত লাভ করলেন যার ব্যবহারিক মূল্য অপরিহার্য।
পরিশেষে আমি মনে করি, আরোহ অনুমানের সকল ক্ষেত্রের পাশাপাশি আরও অনেক দিকে মূল্য ও গুরুত্ব রয়েছে।

১০. আসিফ সকালে ঘুম থেকে জেগে গাছপালা, ঘরবাড়ি ও মাঠ ভিজা দেখল। সে ধারণা করল যে রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। সে বাগানে প্রবেশ করল এবং অনুভব করল যে, গোলাপ ফুল সুগন্ধযুক্ত, বকুল ফুল সুগন্ধযুক্ত এবং শিউলি ফুলও সুগন্ধযুক্ত। তাই সে ভাবল, সব ফুলই সুগন্ধযুক্ত। কিছুক্ষণ পরে আসিফের বন্ধু কামাল বাগানে প্রবেশ করে আসিফকে বলল, সকলেই সুন্দরের পূজারী। তুমি বাগানের সৌন্দর্য উপভোগ করছ বলে তুমিও সুন্দরের পূজারী।
ক. অনুমান কত প্রকার?
খ. অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্যের তুলনায় কম ব্যাপক হয় কেন?
গ. আসিফের সকালের ধারণাটি কী নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাগানে প্রবেশের পর আসিফ ও কামালের চিন্তা কি একই রকম? ব্যাখ্যা করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. অনুমান (Inference) দুই প্রকার; যথা- অবরোহ অনুমান এবং আরোহ অনুমান।

খ. অবরোহ অনুমানের আশ্রয়বাক্য সার্বিক যুক্তিবাক্য এবং সিদ্ধান্ত বিশেষ যুক্তিবাক্য হওয়ায় সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্যের তুলনায় কম ব্যাপক হয়।
যে অনুমান প্রক্রিয়ায় এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য থেকে তার চেয়ে অপেক্ষাকৃত কম ব্যাপক কোনো সিদ্ধান্ত অনুমিত হয় তাকে অবরোহ অনুমান বলে। যেমন- সকল গোলাপ হয় লাল। অতএব, কিছু লাল ফুল হয় গোলাপ। এ যুক্তিটিতে আশ্রয়বাক্যটি একটি সার্বিক যুক্তিবাক্য কিন্তু সিদ্ধান্তটি একটি বিশেষ যুক্তিবাক্য। তাই সিদ্ধান্তটি আশ্রয়বাক্যের তুলনায় কম ব্যাপক।

গ. উদ্দীপকের আসিফের সকালের ধারণা অনুমানকে নির্দেশ করে।
যুক্তিবিদ্যায় আলোচিত বিষয়গুলোর মধ্যে অন্যতম হলো অনুমান। যুক্তিবিদ্যার ইতিহাস পর্যালোচনা করলে দেখা যায় যে, প্রাচীনকাল থেকেই অনুমানের বিষয়টি অত্যন্ত গুরুত্বের সাথে আলোচিত হয়ে আসছে। অনুমান হলো জ্ঞাত থেকে অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা। অর্থাৎ, কোনো জ্ঞাত বা জানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে যখন কোনো অজ্ঞাত বিষয় সম্পর্কে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয় তখন তাকে অনুমান বলে।
উদ্দীপকে আসিফ ঘুম থেকে জেগে গাছপালা, ঘরবাড়ি ও মাঠ ভিজা দেখল। এর ভিত্তিতে সে অনুমান করল রাতে বৃষ্টি হয়েছিল। এখানে গাছপালা, ঘরবাড়ি ও মাঠ ভেজা এগুলো জানা বিষয়। এভাবে জানা বিষয়ের ওপর ভিত্তি করে রাতের বৃষ্টি অনুমান করা হল অজানা বিষয়। এটি একটি মানসিক প্রক্রিয়া। অনুমানে জ্ঞাত বিষয় থেকে অজ্ঞাত বিষয়ে গমন করা হলেও জ্ঞাত ও অজ্ঞাত বিষয়ের মধ্যে একটি অনিবার্য সম্পর্ক থাকে।

ঘ. বাগানে প্রবেশের পর আসিফের চিন্তা আরোহ অনুমান এবং কামালের চিন্তা অবরোহ অনুমানকে নির্দেশ করে। অর্থাৎ তাদের চিন্তা একই রকম নয়।
যে অনুমান প্রক্রিয়ায় কয়েকটি শেষ দৃষ্টান্তের ওপর নির্ভর করে একটি সার্বিক সিদ্ধান্ত নিঃসৃত হয়, তাকে আরোহ অনুমান বলে। অন্যদিকে, যে অনুমান প্রক্রিয়ায় সিদ্ধান্ত এক বা একাধিক আশ্রয়বাক্য থেকে অনিবার্যভাবে নিঃসৃত হয় এবং সিদ্ধান্তটি কখনোই আশ্রয়বাক্যের চেয়ে বেশি ব্যাপক হতে পারে না তাকে অবরোহ অনুমান বলে। উদ্দীপকে বাগানে প্রবেশের পর আসিফের ধারণা বিশেষ থেকে সার্বিকে গমনকে নির্দেশ করে এবং কামালের মন্তব্য সার্বিক থেকে বিশেষে গমনকে নির্দেশ করে।
অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্ত কোন সময়ই আশ্রয়বাক্য থেকে বেশি ব্যাপক হয় না। কিন্তু আরোহ অনুমানে সিদ্ধান্ত সব সময়ই বেশি ব্যাপক হয়। উদ্দীপকে আসিফের অনুমানটিতে সিদ্ধান্ত আশ্রয়বাক্যের তুলনায় বেশি ব্যাপক। কিন্তু কামালের অনুমানটি, অবরোহ অনুমানের সিদ্ধান্তটি একটি বিশেষ যুক্তিবাক্য, যা তার আশ্রয়বাক্যের তুলনায় কম ব্যাপক। এ ছাড়াও অবরোহ অনুমানে আকারগত সত্যতা পরিলক্ষিত হয়। কিন্তু আরোহ অনুমানে আকারগত ও বস্তুগত উভয় সত্যতা পরিলক্ষিত হয়।
সুতরাং, সার্বিক আলোচনার পর বলা যায় বাগানে প্রবেশের পর আসিফ ও কামালের চিন্তা একই রকম নয়। একজনের অনুমান আরোহ এবং অপরজনের অনুমান অবরোহ অনুমানকে নির্দেশ করে।

No comments:

Post a Comment