খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো ও তার প্রতিকার সম্পর্কে প্রতিবেদন

খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো ও তার প্রতিকার সম্পর্কে একটি প্রতিবেদন রচনা করো।
খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো ও তার প্রতিকার সম্পর্কে প্রতিবেদন

খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো ও তার প্রতিকার
‘খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল’ বিষয়টি মানুষের জন্য এক আতঙ্কের নাম। প্রায় প্রতিদিনই এ নিয়ে ইলেকট্রনিক ও প্রিন্ট মিডিয়ায় বিভিন্ন সংবাদ প্রচারিত হচ্ছে। মাছ, মাংস, চিনি, লবণ, চাল, আটা, দুধ, ঘি, মিষ্টি, ওষুধ- ভেজাল সর্বত্রই। এমনকি মিনারেল ওয়াটার নামে বোতলবন্দি ‘বিশুদ্ধ’ পানিতেও ভেজাল। উদ্বেগের বিষয় হলো- হচ্ছে এসব নকল ও ভেজাল খাদ্যসামগ্রীই বিশুদ্ধ বা খাঁটি লেবেল লাগিয়ে অনায়াসে বিক্রি হচ্ছে।

ভেজালের বর্তমান চিত্র
বর্তমানে দেশে ভেজালের দৌরাত্ম্যের কথা আমরা সবাই কমবেশি জানি। কিন্তু ভয়ের কথা হলো ভেজালের আওতার মধ্যে প্রতিনিয়তই নিত্যনতুন দ্রব্য যুক্ত হচ্ছে। আমরা প্রতিনিয়ত বাজার থেকে কিনে যেসব খাদ্যদ্রব্য খেয়ে থাকি, এদের মধ্যে কত শতাংশ ভেজাল তা নির্দিষ্ট করে বলা মুশকিল। তবে ঢাকা সিটি কর্পোরেশনের এক সূত্র থেকে জানা যায়, রাজধানীতে বিক্রিত খাদ্যসামগ্রীর শতকরা সত্তর ভাগ ভেজালযুক্ত। অন্যদিকে ইনস্টিটিউট অব পাবলিক হেলথ-এর সূত্র মতে, দেশের পঞ্চাশ শতাংশ খাদ্যদ্রব্যই ভেজাল মিশ্রিত করে বিক্রি করা হয়।

ভেজাল দেওয়ার প্রক্রিয়ায় খাদ্যশস্যে বহির্জাত পদার্থ সরাসরি যোগ করা হয়, যেমন: ওজন বৃদ্ধির জন্য বালি বা কাঁকর, ভালো শস্যের সঙ্গে কীটপতঙ্গ আক্রান্ত বা বিনষ্ট শস্য মেশানো ইত্যাদি। অনেক সময় মজুদ খাদ্যশস্যের ওজন বাড়ানোর জন্য কেউ কেউ তাতে পানি ছিটায়। ঘিয়ের সঙ্গে পশুচর্বি দিয়ে ভেজাল করা হয়। তিল বা নারিকেল তেলের সঙ্গে বাদাম তেল বা তুলাবীজের তেল মেশানো হয়। সয়াবিন তেলের সঙ্গে পামতেলের ভেজাল করা হয়। অনেক সময় দুধে পানি মিশিয়ে ভেজাল দুধ বাজারজাত করা হয়। বিভিন্ন ফলের রসের নামে কৃত্রিম ও নিষিদ্ধ দ্রব্য ব্যবহার করে নকল রস তৈরি হয়ে থাকে। বর্তমানে মিনারেল ওয়াটার নামে বাজারে যে পানির ব্যবসা চলছে তাতে গুণ ও মানের নিশ্চয়তা অতি সামান্য বা অনেক ক্ষেত্রে নেই বললেই চলে।

ভেজাল মেশানোর কারণ
খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানোর প্রধান কারণ হলো অতিরিক্ত মুনাফা অর্জনের লোভ। নৈতিক শিক্ষা ও মূল্যবোধের অভাবে ব্যবসায়ীরা লোভে পড়ে নানা রকম দুর্নীতি ও অসৎ কর্মকাণ্ডে জড়িয়ে পড়ে। ভোগবাদী প্রবণতা এবং রাতারাতি ধনী হওয়ার প্রবণতা থেকেও খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মিশিয়ে এক শ্রেণির ব্যবসায়ী অধিক মুনাফা করছে। প্রশাসনিক নিয়মকানুনের দুর্বলতার কারণে এবং কঠিন দণ্ডবিধি বা শক্ত কোনো আইন কার্যকর না থাকায় একশ্রেণির অসাধু ব্যবসায়ী নিন্দনীয় এ কাজটির সঙ্গে অবলীলায় জড়িয়ে পড়ছে।

খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল রোধের উপায়
দেশের সংবিধানের ১৮ (১) অনুচ্ছেদে বলা হয়েছে: ‘জনগণের পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন রাষ্ট্রের অন্যতম প্রাথমিক কর্তব্য বলিয়া গণ্য করিবে।’ বাজার যেখানে ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্যে পূর্ণ সেখানে জনগণের ‘পুষ্টির স্তর উন্নয়ন ও জনস্বাস্থ্যের উন্নতি সাধন’ করতে  হলেও রাষ্ট্রকে অবশ্যই সর্বাগ্রে ভেজাল ও নিম্নমানের খাদ্যদ্রব্য এবং এসবের জোগানদাতাদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নিতে হবে। জনগণকেও এ ব্যাপারে সচেতন করে তুলতে হবে। খাদ্যদ্রব্যে ভেজাল মেশানো ও তার প্রতিকার সম্পর্কে নিম্নলিখিত পদক্ষেপগুলো নেওয়া যেতে পারে-

বাংলাদেশে নিরাপদ খাদ্য আইন ২০১৩ নামে একটি আইন করা হয়েছে। আইনটির যথাযথ প্রয়োগ নিশ্চিত হবে। খাদ্যনমুনা পরীক্ষা করার জন্য প্রত্যেক জেলায় এবং সম্ভব হলে বড় বড় বাজারগুলোতে পরীক্ষাগার স্থাপন করতে হবে। বিএসটিআইকে দুর্নীতিমুক্ত হতে হবে। ভেজালবিরোধী ভ্রাম্যমাণ আদালত এবং বাজার তদারকির জন্য ব্যবস্থা রাখতে হবে। পণ্যের মান নিয়ন্ত্রণ এবং পণ্যের প্যাকেটের গায়ে কোম্পানির লাইসেন্স নম্বর, ট্রেড মার্ক, পণ্যের উৎপাদন সময়সহ এমন সব কৌশল ও ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে যাতে ক্রেতাসাধারণ সহজেই খাদ্যদ্রব্যের ভেজাল বুঝতে পারে। ভেজালের প্রতিকারের লক্ষ্যে ক্রেতাস্বার্থ আন্দোলন গড়ে তোলা দরকার। প্রচারমাধ্যমে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের নানা রকম প্রক্রিয়া সম্পর্কে ধারণা দিতে হবে। সমাজে ভেজালকারীকে চিহ্নিত করে সামাজিকভাবে বয়কট করতে হবে। ব্যবসায়ীদের খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের ভয়াবহ দিক সম্পর্কে জানিয়ে তাদের মধ্যে নৈতিক মূল্যবোধ জাগ্রত করতে হবে।

আশা করা যায়, উল্লিখিত পদক্ষেপসমূহের আলোকে সরকারের সদিচ্ছা এবং আইন প্রয়োগকারীদের সততা অটুট থাকলে খাদ্যদ্রব্যে ভেজালের পরিমাণ কমবে।

প্রতিবেদক
নিগার সুলতানা
সাত্তারখান, চট্টগ্রাম।
[এখানে প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা সংবলিত খাম আঁকতে হবে]
Share:

0 Comments:

Post a Comment