G

HSC অর্থনীতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১০

HSC অর্থনীতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১০

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Economics 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চমাধ্যমিক

অর্থনীতি
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
১০ম অধ্যায়

HSC Economics 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. একটি সদ্য স্বাধীন ও উন্নয়নশীল দেশ। দেশটির জনসংখ্যার একটি বিরাট অংশ দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাস করে। দেশটি সূত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনমান বাড়ানোর জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, মূলধন গঠন, মানবসম্পদ উন্নয়ন, বেকার ও খাদ্য সমস্যার সমাধান, সুষম উন্নয়ন, লেনদেন ভারসাম্যের প্রতিকূলতা দূরীকরণ, বৈদেশিক সাহায্যের উপর নির্ভরশীলতা হ্রাস ইত্যাদি লক্ষ্যকে সামনে রেখে একটি ব্যবস্থাপত্র গ্রহণ করে। ফলে দেশটির দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্য বেশ সফলতা পায়।
ক. ঘূর্ণায়মান পরিকল্পনা কী?
খ. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের দেশটির গৃহীত ব্যবস্থাপত্রকে অর্থনীতির ভাষায় কী বলে? বর্ণনা করো।
ঘ. উদ্দীপকের দেশটির গৃহীত 'ব্যবস্থাপত্র' দারিদ্র্য বিমোচনে কতটা সফল হয়েছে বলে তুমি মনে করো? তোমার উত্তরের সপক্ষে মতামত দাও।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যে পরিকল্পনার সময় অবিচ্ছন্নভাবে চলতে থাকে তাকে ঘূর্ণায়মান পরিকল্পনা বলে।

খ. একটি দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের এমন কিছু লক্ষ্য আছে, যেগুলো স্বল্প সময়ে অর্জন করা যায় না। এ অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজনীয়তা দেখা দেয়।
সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয় তাদেরকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বলা হয়। এ ধরনের পরিকল্পনার মেয়াদ ১৫ বছরের বেশি হয়ে থাকে। প্রকৃতপক্ষে অব্যাহত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অর্থনীতির বিভিন্ন খাতের মধ্যে ভারসাম্য বজায় রাখার জন্য বা মধ্যম মেয়াদি পরিকল্পনা যথেষ্ট নয়। এ অবস্থায় দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করতে হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত দেশটির গৃহীত 'ব্যবস্থাপত্রকে নীতির ভাষায় উন্নয়ন পরিকল্পনা বলে।
কোনো দেশের প্রাপ্ত সম্পদের দ্বারা অর্থনৈতিক অগ্রগতির জন্য সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত কর্মসূচিই হলো উন্নয়ন পরিকল্পনা। বর্তমানে গণতান্ত্রিক বিশ্বে অর্থনৈতিক পরিকল্পনার গুরুত্ব দিনদিন বৃদ্ধি পাচ্ছে। এজন্য পৃথিবীর প্রায় প্রত্যেক দেশেই অর্থনৈতিক স্থিতিশীলতার জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়। মূলত একটি দেশের উন্নয়ন নির্দেশক নকশা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নকে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বা উন্নয়ন পরিকল্পনা বলা হয়। এ প্রসঙ্গে অধ্যাপক ডাল্টন বলেন- 'ব্যাপক অর্থে সঙ্গিত উদ্দেশ্য পূরণের জন্য অর্থনৈতিক কার্যাবলি পরিচালনার নিমিত্তে সীমিত সম্পদ ব্যবহারের সুস্পষ্ট নীতিকে উন্নয়ন পরিকল্পনা বলে।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশ দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়ন ও জনগণের জীবনযাত্রার মান বৃদ্ধির জন্য প্রাকৃতিক সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার, মূলধন গঠন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস ইত্যাদি লক্ষ্য পূরণে একটি ব্যবস্থাপত্র তথা অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। এক্ষেত্রে, দেশটির গৃহীত ব্যবস্থাপত্রটি হলো অর্থনৈতিক পরিকল্পনা।

ঘ. উদ্দীপকের দেশটির গৃহীত 'অর্থনৈতিক পরিকল্পনা দারিদ্র্য বিমোচনে যথেষ্ট সফল হয়েছে বলে আমি মনে করি।
সাধারণত উন্নয়নশীল দেশের অধিকাংশ জনগণ দরিদ্র হওয়ায় জাতীয় আয় ও মাথাপিছু আয় কম হয়, ফলে জীবনযাত্রার মান অত্যন্ত নিম্ন থাকে। এক্ষেত্রে একমাত্র সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনা গ্রহণের মাধ্যমেই দেশের জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন করা সম্ভব তথা দারিদ্র্য দূরীকরণ সম্ভব।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, সদ্য স্বাধীন হওয়া একটি দেশ তার দরিদ্র জনগণের আর্থ-সামাজিক অবস্থা পরিবর্তনের লক্ষ্যে ব্যবস্থাপত্র গ্রহ করেছে যা দারিদ্র্য বিমোচনে সফলতা অর্জন করে।
আবার, দেশটির আয় বৃদ্ধি ও দরিদ্রতা দূরীকরণের উদ্দেশ্যে সহস্রাব্দ উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে। সেখানে ২০২১ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১৫ হতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যে অতি দরিদ্রদের জন্য টেকসই সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী গড়ে তোলা হয়েছে। এর আওতায় বয়স্ক ভাতা, স্বামী পরিত্যাক্তা দুঃস্থ মহিলাদের ভাতা প্রদান করা হচ্ছে। এছাড়াও মহিলাদের আস্তেকর্মসংস্থানের জন্য ক্ষুদ্র ঋণ, একটি বাড়ি একটি খামার প্রকল্প, ভিক্ষাবৃত্তিতে নিয়োজিত জনগোষ্ঠীর পুনর্বাসন ও বিকল্প কর্মসংস্থান প্রভৃতি কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা হচ্ছে। এর ফলে ২০০০ সাল থেকে ২০১০ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ৪৮.৯ শতাংশ থেকে ৩১.৫ শতাংশে নেমে আসে। কাজেই উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, দেশটির গৃহীত অর্থনৈতিক উন্নয়ন পরিকল্পনা দারিদ্র্য বিমোচনে যথেষ্ট সফল হয়েছে।

২. বর্তমান বিশ্বের প্রায় সকল দেশ বিভিন্ন প্রকার পরিকল্পনা গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করছে। 'A' দেশ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের কর্মসূচি দ্রুত বাস্তবায়ন, দ্রুত প্রবৃদ্ধির লক্ষ্য অর্জন, অতীতে গৃহীত পরিকল্পনার মূল্যায়ন ও অনিশ্চয়তা হ্রাসের প্রক্রিয়া নির্ধারণ, বৈদেশিক সাহায্যের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিতকরণের জন্য ২০১৫-২০১৭ মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। 'B' দেশ সাক্ষরতার হার ১০০ ভাগে উন্নীতকরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৫,০০০ মেগাওয়াট নিশ্চিতকরণ, সমাজের আয় বৈষম্য দূরীকরণসহ নানাবিধ লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য ২০১৫-২০১৭ সাল মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
ক. বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পা কী?
খ. 'অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন'- ব্যাখ্যা করো।
গ. 'A' দেশের পরিকল্পনাটি কোন ধরনের? তার উদ্দেশ্য বর্ণনা করো।
ঘ. 'A' ও 'B' দেশের পরিকল্পনার মৌলিক কোনো পার্থক্য আছে কি? বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি আর্থিক বছরের (জুলাই-জুন) মেয়াদ বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যেসব উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়, তাকে বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনা বলে।

খ. সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য একটি দেশে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশ বর্তমানে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন। এসব সমস্যার মধ্যে খাদ্য ঘাটতি, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, ব্যাপক নিরক্ষরতা, মুদ্রাস্ফীতি, লেনদেনের ভারসাম্যে ক্রমবধর্মান প্রতিকূলতা প্রভৃতি প্রধান। এসব সমস্যার আশু সমাধানের জন্য প্রয়োজন উন্নয়ন পরিকল্পনা।

গ. উদ্দীপকের 'A' দেশের পরিকল্পনাটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা। নিচে এ পরিকল্পনার উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করা হলো-
স্বল্পমেয়াদি কতকগুলো সুনির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাকে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা বলে। এ পরিকল্পনার মধ্যে এমন ধরনের কর্মসূচি ও লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে যেগুলো জাতীয় স্বার্থে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন।
স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার উদ্দেশ্য: স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার প্রধান প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ নিম্নরূপ:
১. গুরুত্বপূর্ণ আর্থ-সামাজিক কর্মসূচির দ্রুত বাস্তবায়ন। ২. মেয়ানভিত্তিক বা নির্দিষ্ট সময়ে বৈদেশিক সাহায্যের ব্যবহার নিশ্চিত করা।
৩. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার অনিশ্চয়তা হ্রাস।
৪. উন্নয়ন কর্মসূচিসমূহের সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণ।
৫. অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির পথ ত্বরান্বিত করার জন্য বাস্তব পদক্ষেপ গ্রহণ।
৬. পরবর্তী পরিকল্পনার ভিত্তি স্থাপন।
সুতরাং উদ্দীপকের 'A' দেশের পরিকল্পনাটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অন্তর্গত যার মধ্যে উপরিল্লিখিত বৈশিষ্ট্যগুলো বিদ্যমান রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে 'A' ও 'B' দেশের পরিকল্পনার মধ্যে মৌলিক পার্থক্য নেই কিন্তু উদ্দেশ্যগত পার্থক্য রয়েছে। নিচে বিশ্লেষণ করা হলো- উদ্দীপকের 'A' দেশের গৃহীত পরিকল্পনাটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার অন্তর্গত। কারণ 'A' দেশটি আর্থ-সামাজিক উন্নয়ন, দ্রুত প্রবৃদ্ধি অর্জন,
বৈদেশিক সাহায্য গ্রাস, অতীতে গৃহীত পরিকল্পনা মূল্যায়ন ও অনিশ্চয়তা হ্রাসের জন্য ২০১৫-২০১৭ বা দুই বছর মেয়াদি একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পক্ষান্তরে, 'B' দেশটিও সময় মেয়াদের ভিত্তিতে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে কিন্তু এ পরিকল্পনার উদ্দেশ্যসমূহ ভিন্ন। 'B' দেশটির সাক্ষরতার হার ১০০ ভাগে উন্নীতকরণ, বিদ্যুৎ উৎপাদন ২৫,০০০ মেগাওয়াট নিশ্চিতকরণ, সমাজের আয় বৈষম্য দূরীকরণের মাধ্যমে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার জন্য ২০১৫-২০১৭ সাল মেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
পরিকল্পনার মেয়াদের ভিত্তিতে দুই দেশের পরিকল্পনাটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার পর্যায়ভুক্ত হলেও উদ্দেশ্যের ভিত্তিতে যথেষ্ট পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। যেমন- 'B' দেশটি স্বল্পমেয়াদে যে পরিকল্পনাগুলো গ্রহণ করেছে তা উদ্দেশ্যের দিক থেকে প্রেক্ষিত পরিকল্পনার আওতাভুক্ত। কারণ বিভিন্ন দেশ দীর্ঘমেয়াদে দেশের সাক্ষরতার হার ১০০ ভাগে উন্নীতকরণ, আয় বৈষম্য দূরীকরণ এসব পরিকল্পনা গ্রহণ করে। যেমন- বাংলাদেশ মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হওয়ার জন্য ২০১০-২০১১ সালে একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, 'A' ও 'B' দেশের পরিকল্পনার মধ্যে মৌলিক কোনো পার্থক্য না থাকলেও উদ্দেশে থেকে এ দুই পরিকল্পনার মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে।

৩. বর্তমান বাংলাদেশ সরকার ঘোষিত 'রূপকল্প-২০২১-এর সুনির্দিষ্ট ২২টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য প্রয়োজন সঠিক পরিকল্পনা গ্রহণ এবং এর যথাযথ বাস্তবায়ন। এ পরিকল্পনার অধীনে ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদ শেষ হওয়ায় সম্প্রতি সরকার সর্বশেষ সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকার মনে করে এসব পরিকল্পনার লক্ষ্য-উদ্দেশ্য অর্জন সহরা হবে বার্ষিক উন্নয়ন কর্মসূচির যথাযথ বাস্তবায়নের মাধ্যমে। বিশেষজ্ঞরাও আশা করেছেন, এসব পরিকল্পনার মাধ্যমে বাংলাদেশকে একটি আধুনিক প্রযুক্তি ও শিল্প সমৃদ্ধ মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা সম্ভব হবে।
ক. প্রেক্ষিত পরিকল্পনা কী?
খ. ‘‘স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ভীত রচনা করে।'- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহের মেয়াদকাল উল্লেখ করো।
ঘ. বিশেষজ্ঞগণের আশাবাদের আলোকে বাংলাদেশে উন্নয়ন পরিকল্পনার গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে ১০ থেকে ২৫ বছর সময়ের মধ্যে বাস্তবায়নযোগ্য অর্থনৈতিক ও সামাজিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য নির্বাচন করে যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়, তাকে প্রেক্ষিত পরিকল্পনা বলে।

খ. দীর্ঘমেয়াদে (যেমন- ১০ থেকে ২৫ বছরের মধ্যে) সুনির্দিষ্ট কতকগুলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে পরিকল্পনা প্রণীত হয় তাই হলো দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা আর সর্বাধিক ৫ বছরের জন্য যে পরিকল্পনা প্রণীত হয় তাই হলো স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার বাস্তবায়ন বহু বছর ধরে চলে বলে একে একাধিক স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনায় বিভক্ত করে ধাপে ধাপে এর বাস্তবায়ন করা হয়। তাই একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার সাফল্য এর অন্তর্গত স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনাগুলোর সাফল্যের ওপর নির্ভর করে। এজন্যই বলা হয় 'স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার ভীত রচনা করে।

গ. উদ্দীপকে বূপকল্প বা ভিশন ২০২১-এর ২২টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের উদ্দেশ্যে সরকার ২০১০-২০২১ সময় মেয়াদের জন্য একটি দীর্ঘমেয়াদি তথা একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে।
এ প্রেক্ষিতে পরিকল্পনার সকল লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের কাজ এক সাথে শুরু ও কার্যকর করে তোলা সম্ভব নয় বিধায় সরকার একে দুটি পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনায় বিভক্ত করেছে। বর্তমান সরকার ২০২১ সাল (স্বাধীনতার সুবর্ণ জয়মত্মী) নাগাদ যে দ্রুত বিকাশশীল, সুখী ও সমৃদ্ধ বাংলাদেশ গড়ার পরিকল্পনা করেছে তাই হলো 'রুপকল্প-২০২১-এর ২২টি আশাদীপ্ত লক্ষ্যমাত্রা লক্ষ্যমাত্রাগুলোর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হলো: প্রবৃদ্ধির হার ১০ শতাংশে। উন্নীতকরণ, দারিদ্র্যের হার ১৫ শতাংশে নামিয়ে আনা, ডিজিটাল বাংলাদেশ বিনির্মাণ ইত্যাদি। লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের জন্য সরকার ২০১০-২০২১ সময়ের জন্য একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। বাংলাদেশ সরকার কর্তৃক গৃহীত প্রেক্ষিত পরিকল্পনাটি ধাপে ধাপে। বাস্তবায়নের জন্য একে দুটি পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনায় বিভক্ত করেছে। এর মধ্যে একটি হলো ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা; অপরটি হলো সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা। ১ জুলাই ২০১০ সাল থেকে ৩০ জুন ২০১৫ সাল পর্যন্ত হলো ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময় মেয়াদ। ষষ্ঠ পণ্য- বার্ষিক পরিকল্পনার অসমাপ্ত কাজগুলো সঠিকভাবে মূল্যায়ন করে তার ভিত্তিতে ও প্রেক্ষিত পরিকল্পনা ২০১০-২০২১ এর প্রেক্ষাপটে সরকার সপ্তম পণ্য-বার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। এ পরিকল্পনার মেয়াদকাল হলো ১ জুলাই ২০১৫ থেকে ৩০ জুন ২০২০ সাল পর্যন্ত।

ঘ. বাংলাদেশ সরকার রূপকল্প-২০২১ এর সুনির্দিষ্ট ২২টি লক্ষ্যমাত্রা অর্জনের জন্য ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা এবং একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে। উন্নয়ন পরিকল্পনার গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো:
বাংলাদেশে যথেষ্ট প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদ থাকলেও তার সুষ্ঠু ব্যবহার করা সম্ভব হয় না। এ অবস্থায় উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে যথেষ্ট সময় নিয়ে এবং উপযুক্ত নীতি ও কৌশল অবলম্বনের দ্বারা সকল সম্পদের কামা ব্যবহার সম্ভব। বাংলাদেশে বাসস্থানের তুলনায় জনসংখ্যা অতিরিক্ত ও জন্মহার বেশি। প্রাপ্ত সম্পদের সাথে তা দারুণভাবে অসংগতিপূর্ণ হয়ে ওঠায় বিভিন্ন অর্থ-সামাজিক সমস্যা সৃষ্টি হয়েছে, যা উন্নয়নের গতিরোধ করছে। এ অবস্থায় জন্মহার হ্রাসের মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের জন্য দীর্ঘ সময়ব্যাপী নানামুখী কার্যক্রম গ্রহণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।
বাংলাদেশের অর্থনীতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো কৃষি ও শিল্প। বর্তমানে কৃষিতে আধুনিকীকরণের ছোঁয়া লাগলেও তা এখনো ব্যাপক হয়নি; অন্যদিকে, দেশে ভারী শিল্পের অভাবে শিল্পোন্নয়নের গতি মন্থর। এ অবস্থায় এ দুটি খাতের ধারাবাহিক ও দ্রুত উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা প্রণয়ন একান্ত জরুরি।
বাংলাদেশে বেকার সমস্যাও আয় বৈষম্যও প্রকট। ফলে জনসাধারণের জীবনযাত্রার মানও বেশ নিচু। এ প্রেক্ষিতে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হলে বেকারত্ব কমবে, কর্মসংস্থান বাড়বে, আর বৈষম্য কমবে এবং জীবনযাত্রার মান উন্নত হবে। কিন্তু এ বিরাট ও ব্যয়বহুল কাজ সুচিন্তিত পরিকল্পনা ছাড়া করা সম্ভব নয়।
উপরের আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, উদ্দীপকে বিশেষজ্ঞদের আশাবাদ বাস্তবায়িত করার জন্য বাংলাদেশে উন্নয়ন পরিকল্পনার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে।

৪. 'Y' একটি উন্নয়নশীল দেশ। গত বছর নতুন সরকার ক্ষমতা গ্রহণ করে। এ সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য একটি পরিকল্পনা (২০১৬-২০২০) এবং অপর একটি পরিকল্পনা (২০১৬-২০০৬) গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনাসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সরকার শিক্ষার সকল স্তরে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করা, সকল ইউনিয়নে বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান, সকল শিশুর স্কুল গমন নিশ্চিতকরণ এবং দেশের সকল পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করার পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে।
ক. উন্নয়ন পরিকল্পন কত প্রকার?
খ. লেনদেনের ভারসাম্যের প্রতিকূলতা দূর করার জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনার প্রয়োজন রয়েছে'- ব্যাখ্যা করো।
গ. "Y" দেশের সরকারের গৃহীত পরিকল্পনাসমূহ কী ধরনের? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, উদ্দীপকে সরকারের গৃহীত পদেক্ষপসমূহ দেশের দারিদ্র্য বিমোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে? বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উন্নয়ন পরিকল্পনা তিন প্রকার।

খ. উন্নয়নশীল দরিদ্র দেশগুলোতে অধিক আমদানি ব্যয়ের কারণে লেনদেনের ভারসাম্যে সবসময় প্রতিকূলতা বিরাজ করে। এক্ষেত্রে আমদানি হ্রাসের জন্য আমদানি বিকল্প শিল্পায়ন নীতি গ্রহণ আবশ্যক। তাছাড়া রপ্তানি আয় বৃদ্ধির জন্য রপ্তানিমুখী শিল্পায়ন প্রয়োজন। উভয়ক্ষেত্রে সুচিন্তিত, বাস্তবসম্মত ও কার্যকর উন্নয়ন পরিকল্পনা আবশ্যক। কারণ, কেবল পরিকল্পিত উপায়েই আমদানি বিকল্প শিল্পায়ন ও রপ্তানি বৃদ্ধির কৌশল অবলম্বনের মাধ্যমে লেনদেনের ভারসাম্যের প্রতিকূলতা দূর করা সম্ভব।

গ. 'Y' দেশের সরকারের গৃহীত পরিকল্পনাগুলো দু'ধরনের যথা: মধ্যম মেয়াদি পরিকল্পনা ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা। নিচে পরিকল্পনাগুলোর প্রকৃতি ব্যাখ্যা করা হলো:
১. সাধারণত পাঁচ বছর মেয়াদি পরিকল্পনাকে মধ্যমমেয়াদি পরিকল্পনা বলা হয়। উন্নয়ন পরিকল্পনার বহুমুখী অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্য থাকে। এ লক্ষ্য বাস্তবায়নের জন্য যেসব কর্মসূচি গ্রহণ করা হয় তা কার্যকর করতে কয়েক বছর সময় লাগে। যখন সুনির্দিষ্ট কতকগুলো আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য কয়েক বছরের মধ্যে বাস্তবায়নের জন্য একটি পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তখন ওই ধরনের পরিকল্পনাকে মধ্যমমেয়াদি পরিকল্পনা বলে। উদ্দীপকে উল্লিখিত (২০১৬-২০২০) পরিকল্পনাটি একটি মধ্যমমেয়াদি পরিকল্পনা।
২. দেশের উন্নয়ন পরিকল্পনার মধ্যে এমন কিছু উদ্দেশ্য, লক্ষ্য ও প্রকল্প থাকে যেগুলো বাস্তবায়নের জন্য দীর্ঘসময়ের প্রয়োজন। তাই দীর্ঘকালীন প্রেক্ষাপটে কিছু অর্থনৈতিক সামাজিক উদ্দেশ্য ও লক্ষ্য অর্জনের জন্য যে পরিকল্পনা প্রণীত হয়, তাকে দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা বলে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকে প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও বলা হয়। উদ্দীপকে ২০১৬-২০০৬ বছরমেয়াদি পরিকল্পনা হলো একটি প্রেক্ষিত পরিকল্পনা। একটি দেশে পরপর কয়েকটি মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনার সমন্বয়ে একটি দীর্ঘমেয়াদি বা প্রেক্ষিত পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। এ ধরনের পরিকল্পনার ব্যাপ্তি ১০ থেকে ২৫ বছর পর্যন্ত হতে পারে।

ঘ. উদ্দীপকে 'Y' দেশের সরকার একটি মধ্যম ও একটি দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। পরিকল্পনাগুলোর উদ্দেশ্য ও লক্ষ্যসমূহ বাস্তবায়নের জন্য সরকার বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। গৃহীত পদক্ষেপগুলো ওই দেশে বিদ্যমান দারিদ্র্য বিমোচনে কতটা সহায়ক হবে তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো:
কোনো দেশে দারিদ্র্য বিমোচনের অন্যতম উপায় হলো উন্নত মানবসম্পদ সৃষ্টি। মানবসম্পদ উন্নত ও দক্ষ হয়ে উঠলে তারা বিভিন্ন উপায়ে সহজেই তাদের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারে। উৎপাদন ও আয় বৃদ্ধিতে সহায়তা করে দারিদ্র্য দূর করতে পারে। এ রকম ধারণার প্রেক্ষিতে 'Y' দেশের সরকার পরিকল্পনাগুলোর মেয়াদে দারিদ্র্য বিমোচনের জন্য বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণ করেছে। আইসিটি তথা তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বে সর্বপ্রকার উন্নয়ন কর্মকা- সুষ্ঠু উপায়ে পরিচালনার অন্যতম হাতিয়ার। তাই দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির জন্য সরকার শিক্ষার সকল স্তরে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে। তাছাড়া এ শিক্ষা ও তার ব্যবহার উৎসাহিত করার জন্য সকল ইউনিয়ন বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করছে।
প্রাথমিক শিক্ষা উন্নত মানবসম্পদ সৃষ্টির প্রথম সোপান। তাই দেশের সরকার সকল শিশুর স্কুল গমন নিশ্চিত করেছে। ফলে দীর্ঘমেয়াদে দেশে কেউ নিরক্ষর থাকবে না। দারিদ্র্য বিমোচনের সকল সক্ষম লোকের জন্য কর্মসংস্থান জরুরি। এ ধারণার বশবর্তী হয়ে সরকার দেশের সকল পরিবারের কমপক্ষে একজন সদস্যের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছে।
উপরের আলোচনার আলোকে বলা যায়, 'Y' দেশের সরকারের গৃহীত পদক্ষেপসমূহ দেশের বিদ্যমান দারিদ্র্য মোচনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

৫. অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা আবশ্যক। বাংলাদেশ সরকার দেশের উন্নয়নের জন্য ব্যাপক কর্মসূচি গ্রহণ করেছে। পারমাণবিক বিদ্যুৎ কেন্দ্র, পদ্মা সেতুর মতো বিশাল প্রকল্পের বাস্তবায়ন এগিয়ে যাচ্ছে। এসব প্রকল্প বাস্তবায়নে পর্যাপ্ত মূলধন, সক্ষমতা ও দক্ষতা এবং বিশেষজ্ঞের অভাব বিদ্যমান।
ক. দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা কী?
খ. উন্নয়ন পরিকল্পনা কীভাবে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রকল্পগুলোসহ অন্যান্য প্রকল্পসমূহ বাস্তবায়নের সমস্যাবলি আলোচনা করো।
ঘ. উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে বাংলাদেশ সরকার কী কী পদক্ষেপ গ্রহণ করতে পারে? তোমার মতামত দাও।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বলে।

খ. সঠিক উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে মূলধনের যোগান বৃদ্ধি করে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করা যায়। উন্নয়নশীল দেশগুলো উন্নয়ন কর্মকা- পরিচালনার জন্য প্রায়শই বৈদেশিক সাহায্যের ধরন অনেক সময় দেশের জন্য অতি মাত্রার বোঝা সৃষ্টি করে। তাই প্রয়োজন হয় সুচিন্তিত ও সুপরিকল্পিত উন্নয়ন পরিকল্পনা। যা বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরতা হ্রাস করে। সঠিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশের সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করে নিজস্ব তথা অভ্যন্তরীণ অর্থায়ন বৃদ্ধি করতে পারলে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরতা হ্রাস পাবে।

গ. পর্যাপ্ত মূলধন, সক্ষমতা ও দক্ষতা এবং বিশেষজ্ঞের অভাবের কারণে মূলত উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রকল্পগুলোসহ অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়ন করা যায় না। প্রকল্প বাস্তবায়নের সমস্যাবলি নিচে আলোচনা করা হলো:
১. পর্যাপ্ত মূলধনের অভাবে গৃহীত প্রকল্পগুলোর ব্যয়ভার নিজস্ব অর্থায়ন: দ্বারা করা সম্ভব হয় না। ফলে বাংলাদেশ সরকারকে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীল হয়ে পরে।
২. এদেশের মানুষের সময় প্রবণতা খুবই কম। ফলে পর্যাপ্ত পরিমাণে মূলধন গঠন হচ্ছে না যা বিনিয়োগকে নিরুৎসাহিত করছে। বিনিয়োগ কম হলে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাধাগ্রস্ত হয়।
৩. কারিগরি শিক্ষা ও উন্নত প্রশিক্ষণের অভাবে দেশের মানবসম্পদকে দক্ষ জনশক্তিকে রূপান্তর করা যাচ্ছে না। বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য দক্ষ জনশক্তি খুবই জরুরি।
৪. সুষ্ঠু ও বাস্তবধর্মী অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়নের জন্য অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞের প্রয়োজন হয়। কিন্তু দেশে পর্যাপ্ত সুযোগ-সুবিধা না থাকায় বিদেশে মেধা পাচার তথা অভিজ্ঞ বিশেষজ্ঞরা চলে যাচ্ছে। যা উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নে হুমকিস্বরূপ।
পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রকল্পগুলোসহ অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নে উপরের সমস্যাগুলো পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নকে বাধাগ্রস্ত করে। এ সকল সমস্যার কারণে বাংলাদেশের উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করা খুবই কঠিন হয়ে পড়ে। এ ছাড়াও দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, নির্ভুল পরিসংখ্যানের অভাব, বৈদেশিক মুদ্রার অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, মুদ্রাস্ফীতি ইত্যাদি সমস্যা বিরাজমান থাকায় প্রকল্পসমূহের সঠিক বাস্তবায়ন সম্ভব হচ্ছে না।

ঘ. উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে সরকারকে নানাবিধ সমস্যার সম্মুখীন হতে হয়। এসব সমস্যা সমাধান করে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের জন্য বাংলাদেশ সরকার নিম্নে উল্লিখিত পদক্ষেপগুলো গ্রহণ করতে পারে:
১. অর্থনৈতিক পরিকল্পনা প্রণয়নে সুনির্দিষ্ট সময়সীমা নির্ধারণ করা যেতে পারে। যাতে কাঙ্ক্ষিত সময়ের মধ্যে প্রকল্প বাস্তবায়িত করা যায়।
২. সরকারের উচিত টেকসই ও বাস্তবমুখী প্রকল্প গ্রহণ করা। এতে দেশের সীমিত সম্পদের যথাযথ ব্যবহার সুনিশ্চিত হবে এবং বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস পাবে।
৩. সরকারকে সরকারি বিনিয়োগের পাশাপাশি বেসরকারি বিনিয়োগকে উৎসাহিত করতে হবে। ফলে নিজস্ব অর্থায়নে প্রকল্প বাস্তবায়ন করা সম্ভব হবে।
৪. শক্তিশালী আর্থিক নীতি ও রাজস্বনীতি গ্রহণ করে মুদ্রাস্ফীতি রোধ করা যেতে পারে।
৫. উন্নয়ন পরিকল্পনাসমূহ যেন সঠিকভাবে বাস্তবায়িত হয় সেই লক্ষ্যে উন্নত প্রশিক্ষণ ও কারিগরি শিক্ষার ব্যবস্থা করে দক্ষ জনশক্তি তৈরি করতে হবে।
৬. প্রকল্প প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের স্বার্থে বিশেষজ্ঞ নিয়োগ করতে হবে এবং পাশাপাশি প্রকল্পের কার্যক্রম তদারকির জন্য পরিকল্পনা কমিটি গঠন করতে হবে। ৭. দেশের বিলাসবহুল খাতসমূহ সংকুচিত করে জরুরি খাতসমূহতে বিনিয়োগ বাড়াতে হবে।
৮. উপযুক্ত ও দক্ষ জনশক্তির মাধ্যমে নির্ভুল ও প্রয়োজনীয় তথ্যাদি সংগ্রহ করে পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
উদ্দীপকে উল্লিখিত প্রকল্পসহ অন্যান্য প্রকল্প বাস্তবায়নের পথে উদ্ভূত সমস্যাগুলো সমাধানের ক্ষেত্রে উপরের পদক্ষেপগুলো কার্যকরি ভূমিকা পালন করবে। বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের জন্য এসব পদক্ষেপ খুবই গুরুত্বপূর্ণ বলে আমি মনে করি। সরকার এ সকল পদক্ষেপ গ্রহণ করলে কাঙ্ক্ষিত লক্ষে পৌঁছানো সম্ভব হবে।

৬. বর্তমান সরকার উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নারীসমাজকে উন্নয়নের মূল স্রোতে সম্পৃক্তকরণ, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা, দক্ষতা অর্জন ও ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির বিকাশ ও প্রয়োগে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে।
ক. ৬ষ্ঠ পণ্যবার্ষিক পরিকল্পনার সময়কাল কোনটি?
খ. স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন হয় কেন?
গ. উদ্দীপকের পরিকল্পনাটির উদ্দেশ্যসমূহ ব্যাখ্যা করো। তুমি কি মনে কর?
ঘ. বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরিকল্পনাটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে? যুক্তি দাও।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার সময়কাল হলো ২০১১-২০১৫ সাল।

খ. স্বল্পমেয়াদি কতকগুলো সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার প্রয়োজন।
স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মধ্যে এমন কিছু কর্মসূচি, প্রকল্প ও লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে যেগুলো জাতীয় স্বার্থে অল্পকয়েক বছরের মধ্যেই বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন। সাধারণত স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মেয়াদকাল সর্বোচ্চ পাঁচ বছর হতে পারে। স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে উন্নয়ন পরিকল্পনায় গৃহীত কর্মসূচির সফলতা ও ব্যর্থতা মূল্যায়ন করা হয়। যেকোনো পরিস্থিতিতে এটিকে পরিবর্তন করা যায়। রাষ্ট্রে সাময়িক কোনো পরিস্থিতির সৃষ্টি, খাদ্য পরিস্থিতির উন্নয়ন ও প্রাকৃতিক দুর্যোগকালীন পরিস্থিতির মোকাবিলার ক্ষেত্রে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা ব্যবহৃত হয়। তাই উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নের স্বার্থে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা প্রয়োজন হয়।

গ. উদ্দীপকের পরিকল্পনাটি ৬ষ্ঠ পণ্যবার্ষিক পরিকল্পনা যার উদ্দেশ্যেসমূহ নিচে ব্যাখ্যা করা হলো-
৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি একটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা। ২০২১ সালের মধ্যে বাংলাদেশকে একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করার লক্ষ্যে বর্তমান সরকার 'রূপকল্প-২০২১' নামে একটি চ্যালেঞ্জ বাস্তবায়নের সিদ্ধান্ত নেয়। কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য বাস্তবায়নের মাধ্যমে চ্যালেঞ্জটি পূরণ করা হবে। এই লক্ষ্যসমূহ দুটি স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনার মাধ্যমে ভাগ করা হয়, যার প্রথমটি হচ্ছে ৬ষ্ঠ পণ্যবার্ষিক প্রবক্স, মেয়াদকাল ২০১১-২০১৫ সাল। কিছু সুনির্দিষ্ট লক্ষ্য নিয়ে পরিকল্পনাটি প্রণয়ন করা হয়। উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন করে দারিদ্র্য বিমোচন করা এর প্রধান উদ্দেশ্য। খাদ্যের উৎপাদন বৃদ্ধি বহুগুণে বৃদ্ধি করে খাদ্যের নিরাপত্তা নিশ্চিত করা তথা খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করা এর অন্যতম উদ্দেশ্য। দেশের জনসংখ্যার অর্ধেকই নারী। তাই এই নারী সমাজকে বাদ দিয়ে কোনো প্রকার উন্নয়ন সম্ভব নয়। নারী সমাজকে উন্নয়নের মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করা তথা নারীর ক্ষমতায়ন এই প্রকল্পের অন্যতম উদ্দেশ্য। বিশ্বব্যাপী জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলার জন্য টেকসই পরিবেশ উন্নয়ন নিশ্চিত করা এ প্রকল্পের গুরুত্বপূর্ণ উদ্দেশ্য। তাছাড়া মানবসম্পদ উন্নয়নের মাধ্যমে মূলধন গঠনের হার বৃদ্ধি করা, আইসিটির মাধ্যমে দেশকে ডিজিটালাইজেশন করা এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
উদ্দীপকের প্রকল্পটিতে বর্তমান সরকার দেশকে ডিজিটাল বাংলাদেশ' হিসেবে গড়ে তোলার জন্য উপরের উদ্দেশ্যগুলোর সমন্বয়ে একটি ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে, যা 'রূপকল্প ২০২১' কে প্রতিনিধিত্ব করে। সুতরাং, বাংলাদেশকে উন্নত দেশের কাতারে দাঁড়াতে হলে অবশ্যই উক্ত উদ্দেশ্যগুলো পূরণ করতে হবে।

ঘ. হ্যাঁ, বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে পরিকল্পনাটি সহায়ক ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
প্রতিটি উন্নয়নশীল দেশের অর্থনীতির চাকাকে বেগবান রাখতে এবং প্রভূতম সময়ে কাঙ্ক্ষিত লক্ষ্যে পৌঁছাতে হলে পরিকল্পিত উপায় এবং সুষ্ঠুভাবে সম্পদের ব্যবহারের জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা অপরিহার্য। বিশেষ করে নামেয়াদি প্রকল্প উন্নয়নশীল দেশের উন্নয়নে সর্বাধিক সহায়ক ভূমিকা পালন করে থাকে। এ ধরনের প্রকল্প দ্বারা সুনির্দিষ্ট কিছু গুরুত্বপূর্ণ লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য সাধনের পথে এগোনো যায়। ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা দ্বারা কতিপয় উদ্দেশ্য অর্জনের অঙ্গীকার করা হয়েছে। যেমন- উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জন, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, নারী সমাজকে উন্নয়নের মূল স্রোতে সম্পৃক্ত করা, জলবায়ু পরিবর্তনজনিত ঝুঁকি মোকাবিলা, দক্ষতা অর্জন, ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার লক্ষ্যে তথ্য ও প্রযুক্তির বিকাশ ইত্যাদি। এই লক্ষ্যগুলো বাস্তবায়ন করা হলে বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে প্রকল্পটি অবশ্যই সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা উচ্চতর প্রবৃদ্ধি অর্জনে সহায়তা করবে যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকে অনেক শক্তিশালী করবে। খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিত করা হলে দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করবে। ফলে আমদানি ব্যয় হ্রাস পাবে ও বাণিজ্য শর্ত উন্নত হবে। উন্নয়নমূলক কাজে নারী সমাজের অংশগ্রহণ বৃদ্ধি পেলে নারীরাও অর্থনীতিতে সমান অবদান রাখবে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক প্রভাব ফেলবে। দক্ষতা অর্জনের মাধ্যমে মানবসম্পদ উন্নয়ন ঘটিয়ে দেশের বিপুল জনশক্তিকে দক্ষ মানবসম্পদে রূপান্তর করা যাবে। তাছাড়া তথ্য ও প্রযুক্তির বিকাশ ও প্রয়োগের মাধ্যমে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ে তোলা সম্ভব হবে।
সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, ৬ষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনাটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে।

৭. বাংলাদেশ একটি স্বল্প আয়ের দেশ। বাংলাদেশ সরকার দেশের অর্থনৈতিক উন্নতির কথা মাথায় রেখে বিভিন্ন উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করেছে। সরকার একটি পরিকল্পনায় দেশে দারিদ্র্য সীমার নিচে বসবাসকারী লোকের সংখ্যা ১৫% এ নামিয়ে আনার চেষ্টা করছে। শ্রমিকের হার ৫০% এ উন্নীত করার চেষ্টা করছে। শিল্পখাতে কর্মসংস্থান প্রায় ২৫% এ উন্নীত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এ লক্ষ্যে সরকার নতুন নতুন প্রযুক্তির দিকে গুরুত্ব দিচ্ছে, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, লিঙ্গ বৈষম্য দূরীকরণ, পাবলিক-প্রাইভেট পার্টনারশিপ শক্তিশালীকরণ ইত্যাদির ওপর জোর দিয়েছে।
ক. উন্নয়ন পরিকল্পনা কী?
খ. সঠিক তথ্য ও উপাত্তের অভাব পরিকল্পনা বাস্তবায়নের একটি অন্যতম সমস্যা- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের কোন পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত পরিকল্পনা সফল করার জন্য গৃহীত সরকারি পদক্ষেপসমূহ কতটুকু কার্যকর? যুক্তি দাও।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি নির্দিষ্ট সময়ে পূর্ব-নির্ধারিত কতগুলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সম্পদের সুষ্ঠু ও সচেতন ব্যবহারকে উন্নয়ন পরিকল্পনা বলে।

খ. কোনো দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও তার সফল বাস্তবায়নের জন্য সঠিক তথ্য ও উপাত্ত একান্ত প্রয়োজন। কারণ প্রয়োজনীয় তথ্য উপাত্ত নির্ভুল না হলে গৃহীত পরিকল্পনা বাস্তবসম্মত হয় না এবং তা লক্ষ্যভ্রষ্ট হয়।
বাংলাদেশের মতো দেশগুলোতে প্রাকৃতিক সম্পদ, বিভিন্ন দ্রব্য ও সেবাকর্ম উৎপাদনের পরিমাণ, জনসংখ্যা, শ্রমশক্তি, বেকারত্ব, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, আমদানি-রপ্তানি ইত্যাদি বিষয়ে সঠিক তথ্য উপাত্ত প্রায়ই পাওয়া যায় না। এ জন্য উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়ন বাধাগ্রস্ত হয়।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের ৬ষ্ঠ পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনার কথা বলা হয়েছে যা নিচে ব্যাখ্যা করা হলো:
সহস্রা উন্নয়ন লক্ষ্যমাত্রা (এমজিডি, মিলেনিয়াম গোলস ডেভেলপমেন্ট) অর্জনের জন্য বাংলাদেশ সরকার তার প্রেক্ষিত পরিকল্পনা রূপকল্প-২০২১ প্রণীত করেছে। এরই ধারাবাহিকতায় জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদ ২০১১-১৫ মেয়াদের জন্য যে পরিকল্পনা প্রণয়ন করেছে তা বাংলাদেশের ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বলে পরিচিত। ষষ্ঠ পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্যগুলো হলো : একটি ধর্মনিরপেক্ষ, প্রগতিশীল ও গণতান্ত্রিক রাষ্ট্র গঠন, পরিবেশবান্ধব ও অনুকূল শিল্পায়ন কৌশল গ্রহণ, পর্যাপ্ত অবকাঠামো সৃষ্টি, ডিজিটাল বাংলাদেশ গঠন, সুশাসন প্রতিষ্ঠা, দুর্নীতি দমন ইত্যাদি। এসব ছাড়াও টেকসই মানবসম্পদ উন্নয়ন, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, বিদ্যুৎ ও জ্বালানির পর্যাপ্ত সরবরাহ ইত্যাদি হলো এর অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য। সাতটি প্রধান ক্যাটাগরিতে অন্তর্ভুক্ত ষষ্ঠ পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনার লক্ষ্যমাত্রাসমূহ হলো- উৎপাদন, আয় সৃষ্টি ও দারিদ্র্য হ্রাস, মানবসম্পদ উন্নয়ন, নিরাপদ পানি ও পয়ঃনিষ্কাশন ব্যবস্থা লিঙ্গ সমতা ও নারীর ক্ষমতায়ন, পরিবেশ সংরক্ষণ এবং তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি।
ষষ্ঠ পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনায় উন্নয়ন কৌশলও রয়েছে; এগুলো হলো- উচ্চ প্রবৃদ্ধি অর্জন, কর্মসংস্থান বৃদ্ধি, জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস, খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ, আঞ্চলিক সুষম উন্নয়ন, আয় বৈষম্য হ্রাস, সামাজিক নিরাপত্তামূলক ব্যবস্থা জোরদারকরণ, পরিবেশ সংরক্ষণমূলক উন্নয়ন পদ্ধতি, সুশাসন প্রতিষ্ঠা ইত্যাদি।

ঘ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের ষষ্ঠ পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা সফল করার জন্য সরকারি পর্যায়ে বিভিন্ন পদক্ষেপ গ্রহণের কথা বলা হয়েছে। উদ্দীপকের আলোকে তার কার্যকারিতা মূল্যায়ন করা হলো-
১. নতুন নতুন প্রযুক্তির ওপর গুরুত্ব প্রদান: ষষ্ঠ পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনার প্রধান উদ্দেশ্যসমূহ পূরণ ও লক্ষ্যমাত্রাসমূহ অর্জনের জন্য প্রেক্ষিতে পরিকল্পনার অন্তর্গত "ডিজিটাল বাংলাদেশ' নির্মাণের প্রচেষ্টা চালানো হবে। সকল ইউনিয়ন পর্যায়ে ইন্টারনেট সুবিধাসহ টেলিযোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন, সরকারের প্রশাসনিক ক্ষেত্রে এবং সকল জেলায় ই- গভর্নেন্স চালু, সমগ্র দেশে ওয়্যারলেস ব্রডব্যান্ড প্রবর্তন ইত্যাদিও উন্নয়ন কর্মকা-কে স্বচ্ছ ও গতিশীল করে তুলবে।
২. খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণ: খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণে খাদ্যোৎপাদন বৃদ্ধির জন্য উৎপাদনশীলতার উন্নয়ন এবং কৃষিক্ষেত্রে জলবায়ু পরিবর্তনজনিত প্রতিকূল প্রভাব হ্রাস করার উদ্যোগ নেওয়া হবে। এক্ষেত্রে গৃহীত প্রধান পদক্ষেপগুলো হলো: উপকূল এলাকাসহ দেশের সর্বত্র বনভূমি আচ্ছাদন বৃদ্ধি, দূষণমুক্ত বায়ু নিশ্চিতকরণ, নদীর পানিতে শিল্পবর্জ্য মিশ্রণ প্রতিরোধ, খাল ও প্রাকৃতিক জলাশয়ে অবাধ পানিপ্রবাহ নিশ্চিতকরণ।
৩. লিজা বৈষম্য দূরীকরণ: পরিকল্পনায় সমগ্র উৎপাদন কর্মকান্ড পুরুষের সাথে নারীদেরকেও সম্পৃক্ত করার পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে। এ উদ্দেশ্যে গৃহীত পদক্ষেপগুলো হলো: মধ্যবর্তী শিক্ষান্তরে পুরুষ-নারী। অনুপাত বর্তমান ১০০০০২ থেকে ১০০৬০ এ উন্নীতকরণ, ২০ থেকে ২৪ বছর বয়স কাঠামোয় শিক্ষিত পুরুষ নারী অনুপাত বর্তমানের ১০০১৮৫ থেকে ১০০:১০০ তে উন্নীত করা। এর ফলে দেশে সমগ্র মানবসম্পদের উৎপাদনশীলতা বাড়বে এবং উৎপাদন বৃদ্ধি পাবে।
৪. পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ (PPP) শক্তিশালীকরণ: পরিকল্পনার সফল বাস্তবায়নের জন্য পিপিপি শক্তিশালীকরণের প্রচেষ্টা গৃহীত হয়েছে। এর ফলে দেশের বড় বড় ও ব্যয়বহুল উন্নয়ন প্রকল্পে সরকারি ও বেসরকারি খাতের যৌথ মালিকানা, উদ্যোগ ও পুঁজি বিনিয়োগ বৃদ্ধি পাবে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত ষষ্ঠ পঞ্চ-বার্ষিক পরিকল্পনা সফল করার জন্য গৃহীত সরকারি পদক্ষেপসমূহ যথেষ্ট কার্যকর।

৮.সাকিব চীনে একটি মেডিকেল কলেজে পড়ে। সেখানে 'X' দেশের বন্ধু উনি এর সাথে আলাপকালে টনি জানায় যে, তাদের দেশে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। রয়েছে বন ও সমুদ্র। কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে অধিকাংশ প্রাকৃতিক সম্পদ অপচয় হচ্ছে। তাই তারা অনুন্নত।
ক. বাংলাদেশের দ্বি-বার্ষিক পরিকল্পনার মেয়াদকাল কত ছিল?
খ. সুষ্ঠু পরিকল্পনা উন্নয়নে সহায়ক ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে টনি এর দেশের উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনার গুরুত্ব বর্ণনা করো।
ঘ. সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে উদ্দীপকে বর্ণিত টনির দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা সম্ভব - বিশ্লেষণ করো।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের দ্বি-বার্ষিক উন্নয়ন পরিকল্পনার মেয়াদ ছিল ১লা জুলাই ১৯৭৮ থেকে ৩০শে জুন ১৯৮০ সাল।

খ. দেশের সকল প্রাকৃতিক ও মানবসম্পদ সর্বাধিক ব্যবহারের জন্য।
সুষ্ঠু উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন একান্ত প্রয়োজন। সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমেই অর্থনীতির সকল খাতকে একত্রিত করে উন্নয়ন গতিশীল করা যায়। একমাত্র পরিকল্পিতভাবে বিনিয়োগের পরিমাণ বৃদ্ধি দ্বারা নিয়োগস্তর বৃদ্ধি ও বেকারত্ব দূর করা যায়। দেশের মানবসম্পদকে পরিকল্পিত উপায়ে শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ দানের মাধ্যমে দক্ষ ও উন্নয়নের জন্য কর্মোপযোগী করে তোলা যায়। সুতরাং বলা যায়, সুষ্ঠু পরিকল্পনা উন্নয়নের সহায়ক।

গ. উদ্দীপকের টনির দেশ নানা প্রাকৃতিক সম্পদে সমৃদ্ধ। কিন্তু সুষ্ঠ পরিকল্পনার অভাবে অধিকাংশ প্রাকৃতিক সম্পদ ঠিক মতো চিহ্নিত, উত্তোলিত, ব্যবহৃত হয়নি; যথাযথভাবে রক্ষণাবেক্ষণের অভাবে কিছু প্রাকৃতিক সম্পদের অপচয়ও ঘটেছে। উক্ত সমস্যা সমাধানের জন্য টনির দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনার গুরুত্ব সর্বাধিক।
প্রাকৃতিক সম্পদের উপযুক্ত ব্যবহার দেশের শিল্পোন্নয়নে সহায়তা করে জাতীয় উৎপাদন তথা জাতীয় আয় বৃদ্ধি ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরান্বিত করে। কিন্তু এর জন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে প্রাকৃতিক সম্পদগুলোর যথাযথ ব্যবহার। টনির দেশে এরকম পরিকল্পনার অভাবে শিল্পোন্নয়ন ও অর্থনৈতিক উন্নয়ন ত্বরাজিত হয়নি।
মানুষের বিভিন্ন অভাব পূরণের উপযোগী দ্রব্যসমূহের উৎপাদন অনেকটাই প্রাকৃতিক সম্পদ প্রাপ্তি ও তার উপযুক্ত ব্যবহারের ওপর নির্ভর করে। সাধারণভাবে বলা যায়, প্রাকৃতিক সম্পদ বেশি হলে দ্রব্যসামগ্রীর পরিমাণও বেশি হয়। তবে একথা তখনই সত্য হয় যখন সুষ্ঠু পরিকল্পনার মাধ্যমে সম্পদগুলোর কাঙ্ক্ষিত ব্যবহার ঘটে। টনির দেশে সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে সম্পদ বেশি থাকা সত্ত্বেও দ্রব্যসামগ্রীর যথেষ্ট অভাব রয়েছে। সুতরাং বলা যায়, প্রাকৃতিক সম্পদে ভরপুর টনির দেশে অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সুষ্ঠু পরিকল্পনা আবশ্যক।

ঘ. টনির দেশে যথেষ্ট প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে। কিন্তু সুষ্ঠু পরিকল্পনার অভাবে তার সদ্ব্যবহার না ঘটায় অর্থনৈতিক উন্নয়ন ব্যাহত হয়েছে। তাই টনির দেশকে উন্নত করতে হলে দরকার সুষ্ঠু উন্নয়ন পরিকল্পনা। নিচে বিষয়টি আলোচনা করা হলো-
১. টনির দেশে যথেষ্ট প্রাকৃতিক সম্পদ থাকা সত্ত্বেও তার সুষ্ঠু ও কামা ব্যবহার হয়নি। এ অবস্থার সুচিন্তিত উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে সব প্রাকৃতিক সম্পদের জরিপ, উত্তোলন ও যথাযথ ব্যবহার সম্ভব।
২. টনির দেশের অর্থনীতির দুটি গুরুত্বপূর্ণ খাত হলো- কৃষি ও শিল্প। এ দুটি খাতের দ্রুত উন্নয়নের জন্য একটি সুষ্ঠু পরিকল্পনা প্রণয়ন প্রয়োজন।
৩. টনির দেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় বিভিন্ন আর্থ-সামাজিক সমস্যা যেমন- পারিদ্র্য, অপুষ্টি, বেকারত্ব, ছিনতাই, সন্ত্রাস ইত্যাদি দেখা দিয়েছে। এ অবস্থায় জন্মহার হ্রাসের মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণের দীর্ঘমেয়াদি কর্মসূচি পরিচালনা করা যায়।
৪. উক্ত দেশে বেকার সমস্যা প্রকট; জনসংখ্যার প্রায় এক-তৃতীয়াংশই বেকার। এরূপ পরিস্থিতিতে উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে বিনিয়োগ ব্যাপকভাবে বৃদ্ধি করা হলে দেশে কর্মসংস্থান বাড়বে ও বেকারত্ব কমবে।
৫. দেশকে উন্নত করতে হলে দক্ষ মানবসম্পদের প্রয়োজন পড়ে টনির দেশে লোক অনেক; কিন্তু উপযুক্ত শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের অভাবে তারা অদক্ষই থেকে গেছে। দেশের মানুষের জন্য উপযুক্ত খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, চিকিৎসা এবং শিক্ষা ও প্রশিক্ষণের ব্যবস্থা করতে পারলে তারা দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত হয়। এজন্য প্রয়োজন সুষ্ঠু উন্নয়ন পরিকল্পনা।
সুতরাং বলা যায়, সুষ্ঠু ও সুচিন্তিত পরিকল্পনার টনির দেশকে উন্নত দেশে পরিণত করা সম্ভব।

৯. 'ক' একটি উন্নয়নশীল দেশ। 'ক' দেশের কতকগুলো সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য এবং দেশের সম্পদ উপযুক্ত ব্যবহারের জন্য বিভিন্ন মেয়াদি উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করে। 'ক' দেশের ন্যায় আমাদের দেশেও উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা গৃহীত হয়। এর মধ্যে সর্বশেষ ২০১০-২০২১ সাল মেয়াদি পরিকল্পনা। উষ্ণ পরিকল্পনা দারিদ্র্যসীমার নিচে বসবাসকারী জনসংখ্যা বর্তমানে ৩১.৫% থেকে ১৫% এ নামিয়ে আনা, প্রাথমিক শিক্ষান্তরে শতভাগ এনরোলমেন্ট নিশ্চিত করা, ICT এর সুবিধা অর্জনের মাধ্যমে দেশকে ডিজিটালাইজড করা ইত্যাদি লক্ষ্য নির্ধারিত হয়।
ক. পরিকল্পনা কী?
খ. সুষম উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনার প্রয়োজন'- ব্যাখ্যা করো।
গ. দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের কারণ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. ২০১০-২০২১ মেয়াদি পরিকল্পনার উল্লিখিত লক্ষ্যগুলো আমাদের দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করতে কীভাবে ভূমিকা রাখতে পারে? তোমার মতামত দাও।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. একটি নির্দিষ্ট সময়ে পূর্বনির্ধারিত সুনির্দিষ্ট কতগুলো অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্য অর্জনের জন্য রাষ্ট্র কর্তৃক প্রাপ্ত সম্পদের সুষ্ঠু ও সচেতন ব্যবহারকে পরিকল্পনা বলে।

খ. অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুফল দেশের সকল অঞ্চলের লোকের কাছে পৌঁছে দেওয়ার জন্য, দেশের প্রায় সব অঞ্চলেই উন্নয়ন ঘটাদেরকার। এর ফলে দেশে উন্নয়ন সুসম হয়। অবশ্য এর জন্য সুষ্ঠু ও বাস্তবভিত্তিক উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ আবশ্যক।
ব্যাপকভিত্তিতে দেশের প্রায় সকল অঞ্চলকে একসাথে উন্নয়ন ঘটানোর জন্য সুপরিকল্পিত সুচিন্তিত ও বাস্তবসম্মত চিন্তা-ভাবনা দরকার যা কেবল একটি কার্যকর পরিকল্পনা প্রণয়নের মাধ্যমে সম্ভব। তাই বলা যায়, সুষম উন্নয়নের জন্য পরিকল্পনা প্রয়োজন।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত 'ক'" দেশে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণের নিম্নোক্ত কারণসমূহ রয়েছে।
উদ্দীপকের 'ক' দেশ একটি উন্নয়নশীল দেশ উন্নয়নের উদ্দেশ্যে দেশটি কতকগুলো সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্য রয়েছে। লক্ষ্যগুলো বিক্ষিপ্তভাবে বিভিন্ন কর্মসূচির সাহায্যে বাস্তবায়িত করা সম্ভব নয়। লক্ষ্যগুলো পূরণ করতে চিন্তা-ভাবনা, সম্পদ সমাবেশ ও সময় প্রয়োজন। এ কাজ একমাত্র উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমেই সম্ভব। তাই বলা যায়, কেবল বাস্তবসম্মত ও সুপরিকল্পিত পরিকল্পনা প্রণয়ন ও বাস্তবায়নের মাধ্যমে দেশটি নির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্যসমূহ অর্জন করতে পারে। প্রকৃতপক্ষে লক্ষ্যগুলো অর্জনের জন্য প্রয়োজনীয় সম্পদ, কৌশল ও অভিজ্ঞতা সর্বোত্তম উপায় কীভাবে কাজে লাগানো যাবে তা নির্ধারণের সার্বোৎকৃষ্ট উপায় হলো উন্নয়ন পরিকল্পনা। সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্যগুলো একসঙ্গে অর্জন করা সম্ভব নয়; কারণ লক্ষ্যগুলোর কোনোটি কম, কোনোটি বেশি আবার কোনেটি দীর্ঘসময় নিতে পারে। এ প্রেক্ষিতে দেশটিকে স্বপ্ন, মাধ্যম ও দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা প্রণয়ন করতে হবে।
'ক' দেশে প্রচুর প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে যার সদ্ব্যবহার দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য অপরিহার্য। সম্পদগুলোর অনুসন্ধান, শনাক্তকরণ উত্তোলন ও ব্যবহার এক ব্যয়বহুল, সময় সাপেক্ষ ও জটিল ব্যাপার। এক্ষেত্রে উন্নয়ন পরিকল্পনার মাধ্যমে পর্যাপ্ত সময় এবং উপর্যুক্ত নীতি ও কৌশল দ্বারা সম্পদগুলোর কামা ব্যবহার সম্ভব।

ঘ. উদ্দীপকটি পড়ে জানা যায়, বাংলাদেশে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ধরনের পরিকল্পনা গৃহীত হয়েছে। এর মধ্যে সর্বশেষ পরিকল্পনাটি হলো ২০১০- ২০২১ সাল মেয়াদি প্রেক্ষিতে পরিকল্পনা। এ পরিকল্পনার লক্ষ্যসমূহ ষষ্ঠ ও সপ্তম পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের মধ্যে দিয়ে অর্জিত হবে এবং দেশকে মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত করবে।
বাংলাদেশে দারিদ্র্যের উচ্চহার হ্রাসের জন্য সরকার অনেক আগে থেকেই দারিদ্র্য বিমোচনের উদ্দেশ্যে বিভিন্ন কর্মসূচি গ্রহণ করে আসছে। এর মধ্যে রয়েছে দারিদ্র্য নিরসন কৌশলপত্র, বা দুগ্ধ মহিলা, অসচ্ছল মুক্তিযোদ্ধা, প্রতিবন্ধী, এতিম প্রভৃতি জনগোষ্ঠীর জন্য বিভিন্ন ভাতা প্রদান; কাজের বিনিময়ে খাদ্য কর্মসূচি, গৃহায়ন তহবিল গঠন, কর্মসংস্থান ব্যাংক প্রতিষ্ঠা; একটি বাড়ি একটি খামার প্রভৃতি। সরকারের দারিদ্র্য বিমোচনের এসব কর্মসূচি সফল হলে দেশে দারিদ্রোর হার কমবে এবং জনসাধারণের আয় বাড়বে।
দেশকে দ্রুত উন্নত করতে হলে এর মানবসম্পদকে দক্ষ জনশক্তিতে পরিণত করা প্রয়োজন। এক্ষেত্রে প্রাথমিক শিক্ষার যথেষ্ট গুরুত্ব রয়েছে। প্রাথমিক শিক্ষাব্যবস্থা উন্নয়নের জন্য সরকার ইতোমধ্যে বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। এগুলো হলো: প্রাথমিক শিক্ষান্তরে শতকরা শতভাগ এনরোলমেন্ট; সারা দেশে পথম শ্রেণির সমাপনী পরীক্ষা: বছরের শুরুতে বিনামূল্যে বই বিতরণ; প্রাথমিক শিক্ষার জন্য উপবৃত্তি সুবিধাগতি স্কুল-বহির্ভূত ঝরে পড়া এবং শহরের কর্মজীবী শিশুদের প্রাথমিক শিক্ষা কার্যক্রমের আওতায় আনা ইত্যাদি। এসবের ফলে ভবিষ্যতে শিক্ষিত শ্রমিকের যোগান বাড়লে উৎপাদন ও আয় বাড়বে।
আইসিটি তথা তথ্যপ্রযুক্তি বর্তমান বিশ্বে সর্ব প্রকার উন্নয়ন কর্মকা- সুষ্ঠু উপায়ে পরিচালনার অন্যতম হাতিয়ার। সরকার তাই তথ্যপ্রযুক্তির ব্যবহার শেখার জন্য স্কুল থেকে শুরু করে বিশ্ববিদ্যালয় পর্যন্ত কম্পিউটার শিক্ষাক্রম চালু করেছে। দক্ষ মানবসম্পদ সৃষ্টির জন্য সরকার শিক্ষার সকল স্তরে আইসিটি শিক্ষা বাধ্যতামূলক করেছে।
তাছাড়া আইসিটি শিক্ষার ব্যবহার বৃদ্ধি করার জন্য সকল ইউনিয়নে 'বিনামূল্যে ইন্টারনেট সুবিধা প্রদান করছে। এ সবই ভবিষ্যতে মানবসম্পদ উন্নয়ন ও দারিদ্র্য হার হ্রাসে ভূমিকা রাখবে। সুতরাং বলা যায় প্রেক্ষিতে পরিকল্পনার উল্লিখিত লক্ষ্যগুলো অর্জিত হলে বাংলাদেশ একটি মধ্যম আয়ের দেশে পরিণত হবে।

১০. জনাব কামাল অর্থনীতির ক্লাসে বললেন, দেশে জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন ও নানাবিধ উন্নয়নের জন্য সরকার বিভিন্ন মেয়াদি। পরিকল্পনা গ্রহণ করে থাকে। তবে দেশের প্রকৃত অর্থনৈতিক উন্নয়ন নির্ভও করে পরিকল্পনাগুলো বাস্তবায়নের ওপর।
ক. উন্নয়ন পরিকল্পনা কী?
খ. পদ্মবার্ষিকী পরিকল্পনা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের আলোকে উন্নয়ন পরিকল্পনার সময়ভিত্তিক শ্রেণিবিভাগ ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে উন্নয়ন পরিকল্পনা বাস্তবায়নের গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কোনো দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য সচেতনভাবে পরিকল্পিত ও প্রণীত আর্থ-সামাজিক কর্মসূচিকে উন্নয়ন পরিকল্পনা বলে।

খ. এক থেকে পাঁচ আর্থিক বছরের মেয়াদে বাস্তবায়নের লক্ষ্যে যেসব উন্নয়ন কর্মসূচি প্রণয়ন করা হয়, তাকে পণ্যবার্ষিক পরিকল্পনা বলে। সরকার প্রতি পাঁচ বছরের জন্য যে পরিকল্পনা প্রণয়ন ও ঘোষণা করে থাকে তাকে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনা বলে অভিহিত করা হয়। বাংলাদেশে পঞ্চবার্ষিক পরিকল্পনায় দারিদ্র্য বিমোচন, মানবসম্পদ উন্নয়ন ও স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে দেশের পদ্মাবার্ষিক পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয়। অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধির হার বৃদ্ধি করে স্বল্প সময়ের মধ্যে দেশের অর্থনীতিকে কাঙ্ক্ষিত স্থানে উপনীত করাই এ ধরনের পরিকল্পনার মূল লক্ষ্য।

গ. জনাব কামাল অর্থনীতির ক্লাসে বিভিন্ন মেয়াদি পরিকল্পনা সম্পর্কে ধারণা দেন। সময়ের ভিত্তিতে উন্নয়ন পরিকল্পনাকে তিন ভাগে ভাগ করা যায়। যথা-
স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা: স্বল্পমেয়াদি কিছু সুনির্দিষ্ট অর্থনৈতিক ও সামাজিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য অর্জনের জন্য যে পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাকে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা বলে। এ পরিকল্পনার মধ্যে এমন ধরনের কর্মসূচি, প্রকল্প ও লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে যেগুলো জাতীয় স্বার্থে আর কয়েক বছরের মধ্যেই বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন। প্রচলিত অর্থে বাংলাদেশের দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনাগুলোকে স্বল্পমেয়াদি পরিকল্পনা বলা যায়।
মধ্যমমেয়াদি পরিকল্পনা: কতকগুলো সুনির্দিষ্ট আর্থ-সামাজিক লক্ষ্য ও উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে ৩ বছর বা তার চেয়ে বেশি সময়কাল কিন্তু ৫ বছরের চেয়ে কম সময় মেয়াদের জন্য যে উন্নয়ন পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাকে মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বলে। যেমন, বাংলাদেশে ১৯৭৮ সালে প্রণীত দ্বিবার্ষিক পরিকল্পনা হলো মধ্যমমেয়াদি পরিকল্পনা। পরিকল্পনার মধ্যে এমন ধরনের কর্মসূচি, প্রকল্প ও লক্ষ্য অন্তর্ভুক্ত থাকে যেগুলো জাতীয় স্বার্থে অল্প কয়েক বছরের মধ্যেই বাস্তবায়িত হওয়া প্রয়োজন। প্রচলিত অর্থে বাংলাদেশের পদ্মবার্ষিক পরিকল্পনাকেও মধ্যমেয়াদি পরিকল্পনা বলা হয়।
দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা: সাধারণত দীর্ঘমেয়াদে বাস্তবায়নযোগ্য যেসব পরিকল্পনা গ্রহণ করা হয়, তাকে দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা বলে। দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনাকে আবার প্রেক্ষিত পরিকল্পনাও বলা হয়। সাধারণত ১৫, ২০ ও ২৫ বছর মেয়াদের ভিত্তিতে যে উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়ন করা হয় তাকে 'দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনা' বলে।

ঘ. বাংলাদেশ বর্তমানে বহুবিধ সমস্যার সম্মুখীন। এসব সমস্যার মধ্যে খাদ্য ঘাটতি, দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি, ক্রমবর্ধমান বেকারত্ব, ব্যাপক নিরক্ষরতা, ভয়াবহ মুদ্রাস্ফীতি, লেনদেনের ভারসাম্যে ক্রমবর্ধমান প্রতিকূলতা প্রভৃতি প্রধান। সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহারের মাধ্যমে এ সমস্যাবলির সমাধান তথা দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বাংলাদেশে অর্থনৈতিক পরিকল্পনা একান্ত প্রয়োজন।
বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের প্রধান সমস্যা হলো দারিদ্র্য&য। বাংলাদেশের অধিকাংশ লোক দারিদ্র্য সীমার নিচে বাস করে। দারিদ্র্যের কারণে বাংলাদেশের বেশির ভাগ লোক খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থান, শিক্ষা প্রভৃতি মৌলিক সুবিধা থেকে বঞ্চিত। দারিদ্র্য দূরীকরণে উন্নয়ন পরিকল্পনার গুরুত্ব অপরিসীম।
বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশগুলোর জীবনযাত্রার মান খুবই নিম্ন। তাই অধিকাংশ অনুন্নত ও উন্নয়নশীল দেশের পরিকল্পনার মূল উদ্দেশ্য হলো দেশের জনসাধারণের জীবনযাত্রার মান উন্নয়ন। জীবনযাত্রার মান উন্নয়নে উন্নয়ন পরিকল্পনার গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে।
অর্থনৈতিক উন্নয়নের সুযোগ-সুবিধা দেশের সকল অঞ্চলের জন যাতে সমভাবে ভোগ করতে পারে সেজন্য সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন একান্ত প্রয়োজন। একমাত্র সুষ্ঠু অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশে সুষম অর্থনৈতিক উন্নয়ন লাভ করা সম্ভব। তাছাড়া বাংলাদেশে দ্রুত জনসংখ্যা বৃদ্ধি পাচ্ছে। ফলে আমাদের অর্থনীতিতে নানা ধরনের সংকট দেখা দিয়েছে এবং অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। এ অবস্থায় দেশের বর্তমান ভয়াবহ জনসংখ্যার সমস্যা সমাধানের জন্য অর্থনৈতিক পরিকল্পনা অপরিহার্য।
বাংলাদেশের প্রচুর পরিমাণ প্রাকৃতিক সম্পদ ও মানবসম্পদ রয়েছে। এসব সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার নিশ্চিত করতে পারলে দেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নতি লাভ করা সম্ভব হবে। একমাত্র অর্থনৈতিক পরিকল্পনার মাধ্যমে দেশীয় সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করে অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতি ত্বরান্বিত করা সম্ভব।

No comments:

Post a Comment