HSC অর্থনীতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৮

HSC অর্থনীতি ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ৮

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Economics 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

উচ্চমাধ্যমিক

অর্থনীতি
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
৮ম অধ্যায়

HSC Economics 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. আবহমানকাল ধরেই বাংলাদেশ একটি আমদানি নির্ভর দেশ। প্রতি বছর দেশটি রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি করে থাকে। অতি সম্প্রতি দেশটি প্রচলিত পণ্যের পাশাপাশি বেশ কিছু অপ্রচলিত পণ্য পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করছে। তাছাড়া রপ্তানি সম্প্রসারণের জন্য উৎপাদন বৃদ্ধি, রপ্তানি শুল্ক হ্রাস, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন, শুল্ক রেয়াত, জ্বালানির মূল্য হ্রাস, বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য প্রতিনিধি প্রেরণ ও বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন ইত্যাদি কার্যক্রম গ্রহণ করেছে।
ক. বিশ্বায়ন কী?
খ. বৈদেশিক সাহায্যের তুলনায় বৈদেশিক বাণিজ্য উত্তম- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতি দূরীকরণে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ চিহ্নিত করে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য সরকারের গৃহীত ব্যবস্থা পর্যাপ্ত কি? উদ্দীপকের আলোকে বিশ্লেষণ করো।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিশ্বায়ন হলো মূলধনসহ পণ্য ও সেবা প্রবাহের একটি সম্মিলিত ব্যবস্থা।

খ. বৈদেশিক বাণিজ্য অর্থনীতির জন্য শুভ ফলাফল বয়ে আনে, কিন্তু বৈদেশিক সাহায্য বেশির ভাগ ক্ষেত্রে উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে।
সাধারণত, উন্নয়নশীল দেশ আধুনিক প্রযুক্তি, উন্নত যন্ত্রপাতি ও প্রয়োজনীয় কাঁচামালের জন্য বিদেশের ওপর নির্ভরশীল। এক্ষেত্রে বৈদেশিক সাহায্যের ওপর অত্যাধিক নির্ভরশীল হলে দেশের অর্থনীতিতে অনিশ্চয়তা দেখা দিতে পারে। তাছাড়া, বৈদেশিক দাতা সংস্থা বা দেশগুলো তাদের ঋণের বিপরীতে বিভিন্ন কঠিন শর্তারোপ করে। এর ফলে পরনির্ভরশীলতা আরও বৃদ্ধি পায়। পক্ষান্তরে, বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর গুরুত্বারোপ করলে দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের সদ্ব্যবহার নিশ্চিত হয় এবং বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের মাধ্যমে অর্থনৈতিক উন্নয়ন ঘটে। তাই স্পষ্টতই বলা যায়, বৈদেশিক সাহায্যের তুলনায় বাণিজ্যই অধিক উত্তম।

গ. উদ্দীপকে লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতি দূরীকরণে গৃহীত পদক্ষেপসমূহ চিহ্নিত করা হলো-
সাধারণত কোনো নির্দিষ্ট সময়ে কোনো দেশের দৃশ্যমান ও অদৃশ্যমান উভয় প্রকার আমদানির মূল্য অপেক্ষা রপ্তানি মূল্য কম হলে লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি দেখা দেয়। আর এই ঘাটতি দূরীকরণে সরকার বিভিন্ন ব্যবস্থা গ্রহণ করে থাকে। যেমন- প্রচলিত পণ্যের পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি বৃদ্ধি, রপ্তানি শুল্ক হ্রাস, প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির ক্ষেত্রে আমদানি উদারীকরণ, পরিবহন ব্যবস্থার উন্নয়ন ইত্যাদি। প্রকৃতপক্ষে লেনদেন ভারসাম্যের ঘাটতি দূর করার ক্ষেত্রে মূল লক্ষ্য হলো আমদানি হ্রাস ও রপ্তানি বৃদ্ধি।
উদ্দীপকে লক্ষ করা যায়, বাংলাদেশে প্রতি বছর রপ্তানির তুলনায় আমদানি বেশি হয়ে থাকে। এর ফলে বাণিজ্য ঘাটতি বা লেনদেন ভারসাম্যে ঘাটতি পরিলক্ষিত হয়। এই ঘাটতি দূরীকরণের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশ সরকার রপ্তানি বৃদ্ধির উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। যেমন- উৎপাদন বৃদ্ধি, শুল্ক ব্রেয়াত, বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য প্রতিনিধি প্রেরণ ও বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদন ইত্যাদি। কাজেই বলা যায়, উপরের পদক্ষেপসমূহ উক্ত ঘাটতি দূরীকরণে ইতিবাচক ভূমিকা পালন করবে।

ঘ. বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য সরকারের গৃহীত পদক্ষেপগুলোর মূল্যায়ন করা হলো-
সরকার রপ্তানি বাণিজ্যে সমস্যাবলি চিহ্নিতকরণ এবং তা দ্রুত সমাধানের জন্য জাতীয় পর্যায়ে সর্বোচ্চ কমিটি গঠন করেছে। এই কমিটি দেশের রপ্তানি বিষয়ের বিভিন্ন দিক সম্পর্কে সঠিক দিক নির্দেশনা প্রদান করে। সরকার রপ্তানিকারকদের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির ওপর বাণিজ্য শুল্ক অব্যাহতি দেয়। এছাড়া আবগারি শুল্কও প্রত্যাহার করে নেয়। সরকার রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের জন্য কম সুদে ঋণ প্রদান, রপ্তানি ঋণ নিশ্চিতকরণ, স্কিম প্রবর্তন, এক্সপোর্ট পারফরমেন্স লাইসেন্সে বিশেষ সুবিধা প্রদান, রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য বিভিন্ন দেশে বাণিজ্য প্রতিনিধি দল প্রেরণ, বাণিজ্য চুক্তি সম্পাদনে বিশেষ গুরুত্ব প্রদান করে। রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণে প্রযুক্তিবিদ্যা ও কারিগরি জ্ঞান, উন্নত কলাকৌশল ইত্যাদির উপরও যথাযথ গুরুত্বারোপ করা হচ্ছে। তাছাড়া রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য সরকার ১৯৭৮ সালের জানুয়ারি মাসে 'রপ্তানি ঋণ নিশ্চিতকরণ স্কিম' প্রবর্তন করে। এ স্কিমের আওতায় রাজনৈতিক বা অন্য কোনো কারণে রপ্তানি পণ্যের মূল্য প্রাপ্তিতে প্রতিবন্ধকতার সৃষ্টি হলে রপ্তানিকারকদের ঋণদানের ব্যবস্থা করা হয়েছে। এ স্কিমটি চালু হওয়ায় ঋণের নিশ্চয়তা দেওয়া সম্ভব হয়েছে এবং রপ্তানিকারকগণ রপ্তানির ক্ষেত্রে উৎসাহিত হয়েছে। উপর্যুক্ত পর্যালোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্য সম্প্রসারণের লক্ষ্যে সরকার কর্তৃক গৃহীত ব্যবস্থাগুলো পর্যাপ্ত।

২. মি. আরিফ বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি তথ্য জানার জন্য বাংলাদেশ পরিসংখ্যান ব্যুরোর ওয়েবসাইট দেখেন। তিনি সেখানে দেখতে পারেন যে, বাংলাদেশ সরকার রপ্তানি সংক্রান্ত জাতীয় কমিটি করেছে। রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর মাধ্যমে বিশ্ব বাজারে সার্ভে করাচ্ছে। রপ্তানিকারকদের আয়কর সুবিধা, রপ্তানি ঋণ ও কর অবকাশ সুবিধা দিচ্ছে। এর ফলে পাট, পাটজাত দ্রব্য, চা, চামড়া, তৈরি ও হোসিয়ারি পোশাক, হিমায়িত খাদ্য, শাকসবজি, ত পারেন যে, প্রচলিত পণ্যের চেয়ে অপ্রচলিত পণ্যের রপ্তানি আয় ক্রমান্বয়ে অনেক বেশি বৃদ্ধি পাচ্ছে।
ক. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কী?
খ. উদ্বৃত পণ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভিত্তি ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের ভিত্তিতে রপ্তানির ক্ষেত্রে প্রচলিত ও অপ্রচলিত পণ্যের একটি তালিকা তৈরি করো।
ঘ. উদ্দীপকের বর্ণিত সরকারি পদক্ষেপ দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে কীভাবে ভূমিকা রাখছে? বিশ্লেষণ করো।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দুই বা ততোধিক সার্বভৌম দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী দ্রব্য ও সেবার বিনিময়কে আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বাণিজ্য বলে।

খ. উদ্বৃত্ত পণ্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভিত্তি। কোনো দেশ তার ভৌগোলিক অবস্থান, জলবায়ু, প্রাকৃতিক সম্পদের প্রাচুর্যতা ইত্যাদির জন্য কোনো একটি পণ্য উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা ভোগ করে। ফলে যে দেশটি যে দ্রব্যটি বেশি উৎপাদন করে সেই দ্রব্যটির উদ্ধৃত অংশ রপ্তানি করে বিনিময়ে অন্যান্য দ্রব্য অন্য কোনো দেশ হতে আমদানি করে। উদাহরণস্বরূপ বলা যায়, বাংলাদেশে সস্তা শ্রমের প্রাচুর্যতা থাকায় গার্মেন্টস শিল্প গড়ে উঠেছে। প্রতি বছর বাংলাদেশে বিভিন্ন ধরনের তৈরি পোশাক নিজেদের চাহিদা মিটিয়ে পৃথিবীর বিভিন্ন দেশে রপ্তানি করে এর বিনিময়ে তৈরি পোশাক শিল্পের কাঁচামাল শিল্প প্রধান দেশ থেকে আমদানি করে। সুতরাং বলা যায়, উদ্ধৃত পণ্যই আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভিত্তি।

গ. বাংলাদেশে যেসব পণ্যসামগ্রী দীর্ঘকাল দরে বিশ্ববাজারে রপ্তানি করে আসছে, সেগুলোকে প্রচলিত রপ্তানি দ্রব্য বলে। অন্যদিকে, কিছু দিন পূর্বেও যেসব দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করা হতো না। কিন্তু সাম্প্রতিককালে রপ্তানি করা হয়, তাকে অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য বলা হয়। নিচে উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের প্রচলিত ও অপ্রচলিত রপ্তানি দ্রব্যসমূহের দ্রব্যসমূহের তালিকা:

প্রচলিত রপ্তানি দ্রব্যসমূ

আপ্রচলিত রপ্তানি

পাট

তৈরি ও হোসিয়ারি পণ্য

পাটজাত দ্রব্য

হিমায়িত খাদ্য

চা

শাকসবজি

চামড়া

ফলমূল

 

জুতা


ঘ. উদ্দীপকের বর্ণিত সরকারি পদক্ষেপ দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে বলে আমি মনে করি। নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
১. বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের সমস্যাবলি দ্রুত সমাধান এবং রপ্তানি সম্পর্কে সঠিক দিকনির্দেশনা প্রদানের লক্ষ্যে রপ্তানিসংক্রান্ত একটি জাতীয় কমিটি গঠন করা হয়েছে। এই কমিটি বেসরকারি খাতকে রপ্তানি ক্ষেত্রে অধিকতর সুসংগঠিত করার মাধ্যমে পণ্য উন্নয়ন ও বিপণন সম্প্রসারণের উদ্দেশ্যেও কাজ করছে।
২. দেশের রপ্তানি উন্নয়ন প্রচেষ্টাকে আরও জোরদার করার লক্ষ্যে সম্প্রতি সরকার দেশের রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোকে একটি স্বায়ত্তশাসিত কর্পোরেশনে উন্নীত করে।
৩. বিদেশে আমাদের দ্রব্যের আরও অধিক এবং উত্তম বাজার খুঁজে বের করার জন্য রপ্তানি উন্নয়নর ব্যুরো ইতোমধ্যেই বিভিন্ন আন্তর্জাতিক সংস্থার বিশেষজ্ঞদের সাহায্যে বিভিন্ন আন্তর্জাতিক বাজারের ওপর সার্ভে সম্পন্ন করেছে। সে অনুযায়ী বর্তমানে রপ্তানি বৃদ্ধির জন্য ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়েছে।
৪. পাট ও পাটজাত দ্রব্য, চা প্রভৃতি প্রচলিত রপ্তানি দ্রব্য ছাড়াও অপ্রচলিত রপ্তানি দ্রব্যের আয়ের ওপর সরকার আয়কর রিবেটের সুবিধা প্রদান করছে। ফলে অপ্রচলিত পণ্যাদির রপ্তানি উৎসাহিত হচ্ছে এবং বৃদ্ধি পাচ্ছে।
৫. দেশের রপ্তানি বাণিজ্যকে উৎসাহ প্রদানের জন্য সরকার রপ্তানিকারকদের স্বল্প সুদে প্রয়োজনীয় পরিমাণ ক্ষণ দানের ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে। ফলে রপ্তানিকারকদের জন্য ঋণের নিশ্চয়তা বৃদ্ধি পেয়েছে। বর্তমানে রপ্তানি ঋণের পরিমাণও বৃদ্ধি করা হয়েছে। সুতরাং, উপর্যুক্ত সরকারি পদক্ষেপ দেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে ভূমিকা রাখবে।

৩. বাংলাদেশে বিংশ শতাব্দীর শেষদিকেও রপ্তানিপণ্য বলতে হাতেগোনা কয়েকটি ছিল। কিন্তু বিংশ শতাব্দীর শেষ দশকে বাংলাদেশে রপ্তানিক্ষেত্রে কিছু নতুন পণ্য যুক্ত হয়। তৈরি পোশাক এমনই একটি পণ্য। কাঁচামাল প্রাপ্তি, শ্রমিকের মজুরি, অনিরাপদ কর্মপরিবেশ ইত্যাদি। সমস্যা থাকা সত্ত্বেও এটির ভূমিকা বাংলাদেশের রপ্তানি বাজারে উল্লেখযোগ্য। যদি আমরা আইটেম সংখ্যা বৃদ্ধি, শ্রম অসন্তোষ দূর এবং সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা নিশ্চিত করতে পারি, তবে আমাদের তৈরি পোশাক বিশ্ব বাজারে ১ম স্থান দখল করবে।
ক. বিশ্বায়ন কী?
খ. বাণিজ্য না হওয়ার চেয়ে কিছু বাণিজ্য ভালো।'- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রপ্তানি পণ্যটির সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্যাদি ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপক অনুসারে তৈরি পোশাক শিল্পের ভবিষ্যৎ সম্ভাবনা বিশ্লেষণ করো।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিশ্বায়ন হচ্ছে মূলধনসহ পণ্য ও সেবার অবাধ প্রবাহের একটি সম্মিলিত ব্যবস্থা।

খ. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ভিত্তি হচ্ছে আন্তর্জাতিক শ্রমবিভাগ ও ভৌগোলিক বিশেষীকরণ।
তুলনামূলক ব্যয়নীতির ভিত্তিতে যে দেশ যে পণ্য উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা পায়, সে দেশ সেই পণ্য উৎপাদন ও রপ্তানি করবে। আর, যে পণ্য উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা কম সেই পণ্য আমদানি করবে। এভাবে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্পন্ন হয়। আর বাণিজ্য না হলে বাধ্য হয়ে বেশি খরচে পণ্যটি উৎপাদন করতে হয়। এতে সম্পদের অপচয় হয়। তাই বলা যায়, একেবারে বাণিজ্য না হওয়ার চেয়ে কিছু বাণিজ্য হওয়া ভালো।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত রপ্তানি পণ্যটি হলো তৈরি পোশাক। এই পণ্যটির সাথে সংশ্লিষ্ট সমস্যাদি বাংলাদেশের পরিপ্রেক্ষিতে ব্যাখ্যা করা হলো-
১. কাঁচামালের অভাব: তৈরি পোশাক শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচামাল দেশের অভ্যন্তরে পর্যাপ্ত না হওয়ায় আমদানি করতে হয়। ফলে সময়মতো কাঁচামাল না পাওয়া ও বেশি দামে ক্রয় ইত্যাদির কারণে ব্যবসায়ীরা সমস্যার সম্মুখীন হন।
২. প্রতিকূল কর্মপরিবেশ: বাংলাদেশের অধিকাংশ তৈরি পোশাক কারখানাগুলোতে কাজের প্রতিকূল পরিবেশ লক্ষ করা যায়। যেমন- অস্বাস্থ্যকর পরিবেশ, স্বীকৃত কর্মসময় অনুসরণ না করা ইত্যাদি। এর ফলে শ্রমিকের উৎপাদন ক্ষমতা হ্রাস পায়।
৩. শ্রমিক অসন্তোষ এদেশের তৈরি পোশাক শিল্পের শ্রমিকদের মজুরি তুলনামূলক অনেক কম হয়ে থাকে। এ জন্য শ্রমিকরা প্রায়ই বেতন বৃদ্ধি, কর্মসময় নির্ধারণ ইত্যাদি বিষয় নিয়ে ধর্মঘট, ভাঙচুরে শিশু থাকে, যা প্রতিষ্ঠানের ভিত্তির ওপর আঘাত হানে।
উপযুক্ত সমস্যা ছাড়াও তৈরি পোশাক শিল্পে মূলধনের অভাব, দক্ষ শ্রমিকের অভাব, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা, অনুন্নত পরিবহন ব্যবস্থা ইত্যাদি সমস্যা দেখা যায়।

ঘ. দ্রুত বিকাশমান শিল্প হিসেবে তৈরি পোশাক শিল্পের সম্ভাবনা উজ্জ্বল। কারণ বাংলাদেশের রপ্তানি আয়ের বেশির ভাগই এই খাত থেকে আসে। এই শিল্পের প্রতি যত্নশীল হলে রপ্তানি আয় আরো বাড়বে।
বাংলাদেশ হতে তৈরি পোশাক শিল্পের মাত্র ১০-১২টি আইটেম রপ্তানি করা হয়। এই আইটেমের সংখ্যা বাড়ানো হলে রপ্তানি আয় আরো বাড়বে। আবার, কর্ম পরিবেশ উন্নত করার মাধ্যমে শ্রমিক অসন্তোষ দূর করা গেলে শ্রমিকের উৎপাদন ক্ষমতা বাড়বে এবং মালিক-শ্রমিক সম্পর্ক উন্নত হবে। এতে উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পাবে। যেকোনো ধরনের বৈদেশিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সরকারের পৃষ্ঠপোষকতা খুবই কার্যকর ভূমিকা রাখে। এদেশের তৈরি পোশাক শিল্পে সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা, প্রণোদনা ও উদার শিল্পনীতির মাধ্যমে রপ্তানি বৃদ্ধি করা সম্ভব। তাছাড়া, সরকার সব সময় এখাতে নিরবচ্ছিন্ন গ্যাস-বিদ্যুৎ সংযোগ প্রদানে আগ্রহী, যা অধিক উৎপাদনের ক্ষেত্রে সহায়ক।
বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্পে প্রয়োজনীয় বশ সহজলভ্য হলে উদ্যোক্তারা বেশি উৎসাহী হবে। ফলে উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে রপ্তানি বাড়বে। তাছাড়া বিদেশি বিনিয়োগের সুযোগ দেওয়া হলে এই শিল্পের আরো প্রসার ঘটবে। উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, বাংলাদেশে তৈরি পোশাক শিল্প একটি সম্ভাবনাময় শিল্প।

৪. বান্দরবানে প্রচুর আনারস উৎপাদন হয়। উৎপাদিত আনারসের মান যথেষ্ট ভালো। ব্যবসায়ীরা এ আনারস চট্টগ্রামের বাজারে নিয়ে গিয়ে বিক্রি করেন। আবার সিলেটে ভালো মানের প্রচুর চা উৎপাদন হয়। উৎপাদিত চারের আমেরিকার বাজারে যথেষ্ট চাহিদা আছে।
ক. বাংলাদেশের কয়েকটি আমদানি প্রব্যের নাম লেখ।
খ. বৈদেশিক সাহায্য বাংলাদেশের জন্য আবশ্যক'- ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকে চা এর বাণিজ্যকে কী নামে অভিহিত করা যায়? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. আনারস এবং চা এর বাণিজ্যের মধ্যে পার্থক্যসমূহ বিশ্লেষণ করো।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বাংলাদেশের প্রধান প্রধান আমদানি দ্রব্যসামগ্রী হলো- ভোজ্য তেল, গম, অপরিশোধিত পেট্রোলিয়াম, সার, ক্লিংকার, সূতা, ভারী যন্ত্রপাতি, লৌহ, ইস্পাত, কৃষি যন্ত্রপাতি, রেলওয়ে ইঞ্জিন, বৈদ্যুতিক সরঞ্জাম, খনিজ দ্রব্য প্রভৃতি।

খ. বৈদেশিক সাহায্য একটি দেশের স্বপ্ন ও দীর্ঘমেয়াদি উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। তাই এদেশে দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নে বৈদেশিক সাহায্যের গুরুত্ব অনস্বীকার্য।
বাংলাদেশের জনগণের মাথাপিছু আয় স্বর। ফলে এখানে সঞ্চয় ও মূলধন গঠনের হারও নিম্ন। তাই এদেশের দ্রুত অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভর করতে হয়। তাছাড়া বাংলাদেশে প্রায় প্রতিবছর বন্যা, খরা, ঘূর্ণিঝড়, জলোচ্ছ্বাস প্রভৃতি প্রাকৃতিক দুর্যোগ লেগেই থাকে। বৈদেশিক সাহায্য এসব দুর্যোগ মোকাবেলায় সাময়িকভাবে ব্যাপক সহায়তা করে থাকে। এ কারণে বলা যায়, বৈদেশিক সাহায্য বাংলাদেশের জন্য আবশ্যক।'

গ. উদ্দীপকে চা এর বাণিজ্যকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য নামে অভিহিত করা যায়।
দুই বা ততোধিক দেশ যখন দ্রব্য ও সেবার আমদানি ও রপ্তানি বাণিজ্যে অংশগ্রহণ করে তখন তাকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে। আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বিভিন্ন দেশ ও জাতির মধ্যে সংঘটিত হয়ে থাকে। যেমন, বাংলাদেশের সাথে আমেরিকা বা পৃথিবীর যেকোনো দেশের বাণিজ্যকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলা যায়। বিভিন্ন দেশের ভৌগোলিক অবস্থান, বিভিন্ন দ্রব্য উৎপাদনে আপেক্ষিক ব্যয় সুবিধা ভোগ প্রভৃতি কারণে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হয়।
উদ্দীপকে উল্লিখিত সিলেটে ভালো মানের প্রচুর চা উৎপাদিত হয়। উৎপাদিত চায়ের আমেরিকার বাজারে যথেষ্ট চাহিদা আছে। এই চা আমেরিকার বাজারে বিক্রি করে আমরা প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করতে পারি। বাংলাদেশের সাথে আমেরিকায় চায়ের এই বাণি আন্তর্জাতিকভাবেই হয়ে থাকে। তাই চায়ের বাণিজ্যকে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলা যেতে পারে।

ঘ. বান্দরবানের আনারস চট্টগ্রামের বাজারে বিক্রি হলে অভ্যন্তরীণ বাণিজ্য সংঘটিত হবে। অন্যদিকে, সিলেটের চা আমেরিকার বাজারে বিক্রি হলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হবে। অভ্যন্তরীণ এবং আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মূল ভিত্তি এক হলেও উভয়ের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য রয়েছে। উৎপাদনের উপাদানসমূহের গতিশীলতার পার্থক্য, পৃথক মুদ্রাব্যবস্থা, পৃথক বাজারব্যবস্থা, পৃথক অর্থনৈতিক পরিবেশ, পৃথক বাণিজ্যনীতি প্রভৃতি কারণে অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মধ্যে যথেষ্ট পার্থক্য বিদ্যমান।
প্রথমত, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে মুদ্রা ও ব্যাংকব্যবস্থা একই রকম। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে মুদ্রা ও ব্যাংক ব্যবস্থার পার্থক্য পরিলক্ষিত হয়। ফলে মুদ্রা রূপান্তরের প্রয়োজন পড়ে।
দ্বিতীয়ত, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে দেশের মধ্যে একই ধরনের কর ব্যবস্থা, আর্থিক নীতি, রাজস্ব নীতি বিদ্যমান থাকায় কোনো সমস্যা হয় ন অপরদিকে, পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের অর্থনৈতিক পরিবেশের মধ্যে পার্থক্য রয়েছে। ফলে বাণিজ্যের ক্ষেত্রে সমস্যা সৃষ্টি হয়।
তৃতীয়ত, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে নিজ দেশের মধ্যে পরিবহন ব্যয় খুব একটা প্রভাবিত করে না। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে দুটি দেশের মধ্যে পরিবহন ব্যয়ে যথেষ্ট বেগ পেতে হয়। কারণ দূরত্ব অনুযায়ী ব্যয় বৃদ্ধি পায়।
চতুর্থত, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে একই সরকার বিদ্যমান, ফলে কোনো সমস্যা হয় না। অন্যদিকে, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে পৃথক জাতীয় সরকার, ফলে পৃথক ও স্বাধীন বাণিজ্যনীতি অনুসরণ করে। এ কারণে কিছুটা সমস্যার সৃষ্টি হয়।"
পঞ্চমত, অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের ক্ষেত্রে, ভাষা, ধর্ম ইত্যাদি কোনোভাবে প্রভাবিত করে না। কিন্তু আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে ভাষা, ধর্ম ইত্যাদি বিভিন্নভাবে প্রভাবিত করে থাকে।

৫. মৎস্যজীবী কায়েস। বাণিজ্যিক ভিত্তিতে তিনি মৎস্য চাষ করেন। বিল ইজারা নেন। এ ছাড়াও বর্ষা মৌসুমে নদীতে ও হাওরে প্রচুর মাছ শিকার করেন। সব মাছ বাজারজাত করা সম্ভব হয় না। ফলে অবিক্রীত প্রচুর মাছ শুঁটকি করে রাখেন। কারণ তিনি জানেন বিদেশে শুঁটকি মাছের প্রচুর চাহিদা এবং দামও ভালো। তাই কায়েস মজুদকৃত শুঁটকি রপ্তানি করে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করেন।
ক. বৈদেশিক সাহায্য কী?
খ. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করো।
গ. জনাব কায়েসের উৎপাদিত শুঁটকি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে। সাহায্য করে- ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশ থেকে এরূপ আর কী ধরনের পণ্য রপ্তানি করা যায়? আলোচনা করো।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বৈদেশিক সাহায্য হলো একদেশ কর্তৃক অন্যদেশের জন্য সামরিক ও বেসামরিক পর্যায়ে সাময়িকভাবে অর্থ সম্পদ ও কারিগরি সহায়তা।

খ. পৃথিবীর কোনো দেশের পক্ষেই প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য বা সেবা উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। ফলে বিভিন্ন প্রকার প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবার জন্য একদেশ অন্যদেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। এজন্যই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের পার্থক্য যেহেতু কোনো বিশেষ দেশ, বিশেষ পণ্য উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা ভোগ করতে পারে। আপেক্ষিত সুবিধা অনুযায়ী, কোনো বিশেষ দ্রব্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে থাকে এবং আপেক্ষিকভাবে যা উৎপাদনে অসুবিধা সে দ্রব্য আমদানি করে। যেমন- বাংলাদেশ চীনে পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে সে দেশ থেকে কাপড় আমদানি করলে বাণিজ্য সংঘটিত হয়।

গ. জনাব কায়েসের উৎপাদিত শুঁটকি অপ্রচলিত রপ্তানি দ্রব্য হিসেবে বিদেশে রপ্তানি করলে তা প্রচুর পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনে সাহায্য করে।
যে সকল দ্রব্য কিছুকাল আগেও রপ্তানি করা হতো না, কিন্তু বর্তমানে রপ্তানি করা হয় তাকে অপ্রচলিত দ্রব্য বলে। এসব দ্রব্যের মধ্যে তৈরি পোশাক, হোসিয়ারি দ্রব্য, হিমায়িত খাদ্য, কৃষিজাত দ্রব্য উল্লেখযোগ্য। অপ্রচলিত দ্রব্য হিসেবে হিমায়িত খাদ্য একটি প্রধান রপ্তানিজাত দ্রব্য। বাংলাদেশ হতে টাটকা ও লোনামাহ, হিমায়িত গলদা চিংড়ি, হিমায়িত ইলিশ, ব্যাঙের পা এবং বিভিন্ন মাছের শুঁটকি রপ্তানি করা হয়। এসব দ্রব্য সাধারণত যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, চীন, ইতালি, ভারত, হল্যান্ড ও সিঙ্গাপুরে রপ্তানি করা হয়। ২০১৫-১৬ ও ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাত হতে অর্জিত আয় যথাক্রমে ৫৩৬ ও ৩৫৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার।
জনাব কায়েসের উৎপাদিত শুঁটকি অ-প্রচলিত রপ্তানি প্রব্যের অন্তর্ভুক্ত। উদ্দীপকে জনাব কায়েস একজন মৎস্যজীবী এবং বর্ষায় তিনি প্রচুর মাছ শিকার করেন যার সবটুকু বাজারজাত করা সম্ভব হয় না। ফলে প্রচুর মাছ অবিক্রীত থেকে যায়, যা তিনি শুটকি হিসেবে সংরক্ষণ করেন। বিদেশে শুঁটকির চাহিদা ও দাম ভালো হওয়ায় জনাব কায়েন্স মজুদকৃত শুঁটকি বিদেশে রপ্তানি করে তার অবিক্রীত মাছের লোকসানকে মুনাফায় রূপান্তর করেন। জনাব কায়েসের মতো অন্যান্য মৎস্যজীবীরাও যদি শুঁটকি উৎপাদন ও রপ্তানি করে তাহলে এ খাত আরো সম্প্রসারিত হবে, যা দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।

ঘ. বাংলাদেশ থেকে এরূপ আরও অনেক অপ্রচলিত দ্রব্য আছে যা রপ্তানি করলে প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
অপ্রচলিত পণ্য বলতে সে সকল পণ্য বা সেবাকে বোঝায় যেগুলো কিছুকাল আগেও রপ্তানি করা হতো না, কিন্তু বর্তমানে রপ্তানি করা হয়। এ সকল সম্ভাবনাময় খাতগুলো সংক্ষিপ্তভাবে নিচে আলোচনা করা হলো: তৈরি পোশাক: মধ্যপ্রাচ্য, ইউরোপ এবং আমেরিকায় বাংলাদেশি পোশাকের চাহিদা অনেক এবং ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এ খাতে আয় ১৫৬৩ মিলিয়ন ডলার।
হোসিয়ারি দ্রব্য বা নিটওয়্যার: হোসিয়ারি দ্রব্য যেমন: গেঞ্জি, আন্ডারওয়্যার, সুতি পায়জামা, টাইস ইত্যাদি। হস্তশিল্পজাত দ্রব্য বিভিন্ন প্রকার কুটিরশিল্প ও শৌখিন দ্রব্যাদি এর অন্তর্ভুক্ত। ২০১৬-১৭ অর্থবছরে এসব দ্রব্য রপ্তানি করে বাংলাদেশ ১০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার আয় করে। রাসায়নিক দ্রব্য: বাংলাদেশ থেকে প্রতিবছর কিছু পরিমাণ পরিশোধিত ও অপরিশোধিত সার এবং কিছু রাসায়নিক দ্রব্য রপ্তানি করা হয়। এছাড়াও আরও কিছু কৃষিপণ্য ও শিল্পপণ্য রয়েছে যেগুলো অপ্রচলিত রপ্তানি দ্রব্য হিসেবে পরিচিত। প্রচলিত রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি এই পণ্যগুলোও যদি সমান গুরুত্বের সাথে উৎপাদন ও রপ্তানি করা হয়। তাহলে প্রতিবছর প্রচুর পরিমাণে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন করা সম্ভব।
পরিশেষে বলা যায়, প্রচলিত রপ্তানি পণ্যের পাশাপাশি অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানির ক্ষেত্রেও আমাদের আরো যত্নবান হওয়া প্রয়োজন। এগুলো রপ্তানি করে যে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জিত হবে তা আমাদের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি অর্জনে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখবে।

৬. নববই দশকের শেষ দিকে বিশ্বায়ন ধারণার সাথে আমাদের পরিচিতি ঘটে। বিশ্বের প্রতিটি অঞ্চল স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে BIMSTEC, ASEAN, SAPTA, EU গড়ে তুলেছে। যেখানে পুঁজি, শ্রম ও পণ্যের অবাধ প্রবাহ লক্ষ করা যায়। অন্যদিকে, বিশ্বায়নের নেতিবাচক প্রভাবে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনসহ সমাজের নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি করে।

ক. আমদানি কী?
খ. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হয় কেন?
গ. বিশ্বায়নের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতিশীলতা বৃদ্ধি পেয়েছে- উদ্দীপকের আলোকে ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে বিশ্বায়নের পূর্বাভাব আলোচনা করো।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

ক. যে প্রক্রিয়ায় একটি দেশ অন্যদেশের পণ্য ও সেবা ক্রয় করে তাকে আমদানি বলে।

খ. পৃথিবীর কোনো দেশের পক্ষেই প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য বা সেবা উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। ফলে বিভিন্ন প্রকার প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবার জন্য একদেশ অন্যদেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। এজন্যই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের পার্থক্য যেহেতু কোনো বিশেষ দেশ, বিশেষ পণ্য উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা ভোগ করতে পারে। আপেক্ষিত সুবিধা অনুযায়ী, কোনো বিশেষ দ্রব্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে থাকে এবং আপেক্ষিকভাবে যা উৎপাদনে অসুবিধা সে দ্রব্য আমদানি করে। যেমন- বাংলাদেশ চীনে পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে সে দেশ থেকে কাপড় আমদানি করলে বাণিজ্য সংঘটিত হয়।

গ. বিশ্বায়নের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতিশীতা অনেক পেয়েছে। বিশ্বায়ন হলো একটি বহুমুখী প্রক্রিয়া যেখানে বিশ্ব আন্তঃসম্পর্কিত এবং আন্তঃযোগাযোগের মধ্য দিয়ে অগ্রসর হচ্ছে। বিশ্বের প্রতিটি অংশের সাথে অন্যান্য অংশের অর্থনৈতিক, সামাজিক, সাংস্কৃতিক ও রাজনৈতিক ক্ষেত্রে পারস্পরিক আন্তনির্ভরতাই হচ্ছে বিশ্বায়ন। এর ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশে উৎপাদিত দ্রব্যসামগ্রী অবাধে একদেশ থেকে অন্যদেশে প্রবাহিত হচ্ছে। বিশ্বের যেকোনো প্রান্ত থেকে অন্যপ্রান্তে শ্রম চলাচল করতে পারে বিধায় বিভিন্ন দেশের মধ্যে গ্রামের অবাধ প্রবাহ ঘটে। পুঁজি বা মূলধনের অবাধ প্রবাহ বিশ্বায়নের একটি অন্যতম বৈশিষ্ট্য। বহুজাতিক কোম্পানিগুলো বিশ্বের বিভিন্ন দেশে শিল্প ও ব্যবসায় প্রতিষ্ঠানে প্রত্যক্ষ বিনিয়োগের মাধ্যমে মূলধনের আন্তর্জাতিক গতিশীলতার পথ সম্প্রসারিত করেছে। বিশ্বায়নের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে আমদানি ও রপ্তানির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ তুলে দেয়া হয়েছে। ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতিশীলতা বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। তাছাড়া মুক্ত বাণিজ্য ব্যবস্থার প্রসার, তথ্য ও প্রযুক্তিতে অভাবনীয় উন্নয়ন, তথ্যের অবাধ এবং বাণিজ্য উদারীকরণ ইত্যাদির ফে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটেছে।
উদ্দীপকের আলোকে বলা যায়, আমাদের দেশে বিশ্বায়ন ধারণার সঙ্গে পরিচয় ঘটে নববই দশকের শেষ দিকে। বাংলাদেশসহ বিশ্বের অন্যান্য উন্নয়নশীল বা অনুন্নত দেশসমূহ স্বনির্ভরতা অর্জনের লক্ষ্যে BIMSTEC ASEAN, SAPTA, EU এর মতো বেশকিছু আন্তর্জাতিক জোট গঠন করে। ফলে এ সকল অঞ্চলে পুঁজি, শ্রম ও পণ্যের অবাধ প্রবাহ পরিলক্ষিত হয়, যা এদের অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বৃদ্ধিতে সহায়তা করে এবং অর্থনৈতিক উন্নতির পথে পরিচালিত করে। এতে অনুন্নত ও উন্নয়নশীল রাষ্ট্রসমূহ উন্নত দেশের কাছ থেকে অনেক সুবিধা লাভ করে থাকে। এভাবে বিশ্বায়নের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের গতিশীলতা বৃদ্ধি পায়।

ঘ. বিশ্বায়নের ফলে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে ইতিবাচক ও নেতিবাচক উভয় প্রভাব লক্ষ করা যায়।
বিশ্বায়নের ফলে পুঁলি, শ্রম ও উপকরণের অবাধ প্রবাহ নিশ্চিত হওয়ায় পূর্বের তুলনায় উৎপাদন বহুগুণে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিভিন্ন জাতি কোম্পানি বা বিদেশি প্রতিষ্ঠান এদেশের উৎপাদন খাতে বিনিয়োগ করায় উৎপাদন বৃদ্ধির পাশাপাশি কর্মসংস্থানের ব্যবস্থাও হয়েছে। বাংলাদেশে তৈরি পোশাক রপ্তানিতে অনেক এগিয়ে গেছে। তাছাড়া বিভিন্ন আঞ্চলিক ও আন্তর্জাতিক জোট গঠনের মাধ্যমে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে অনেক সুবিধা অর্জন করেছে। ফলে বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের সম্প্রসারণ ঘটে। অন্যদিকে, বিশ্বায়নের ফলে দেশীয় পণ্যের বাজার ধ্বংস হয়ে যাচ্ছে। কমমূল্যে বিদেশি দ্রব্যের সরবরাহ বেশি। থাকায় মানুষ দেশীয় পণ্যের ব্যবহার থেকে মুখ ফিরিয়ে নিচ্ছে। এতে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে দেশীয় ক্ষুদ্র ও মাঝারি শিল্প। সাংস্কৃতিক আগ্রাসনের আমাদের ঐতিহ্য ও সংস্কৃতি হারিয়ে যাচ্ছে। বিশ্বায়নের ফলে দেশে আমদানি বৃদ্ধি পাচ্ছে ও রপ্তানি কমে যাচ্ছে, যা বাণিজ্য শর্তকে প্রতিকূলতার দিকে ধাবিত করছে। এর ফলে সমাজে বৈষম্য ব্যাপকভাবে পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা সম্পদের সুষ্ঠু বণ্টনকে ব্যাহত করছে। তাছাড়া মেধাপাচার, অর্থনৈতিক মন্দা, মুদ্রাস্ফীতি, সামাজিক অপরাধ প্রবণতা বৃদ্ধিসহ নানা ধরনের কুপ্রভাব পরিলক্ষিত হচ্ছে, যা দেশ ও জাতির জন্য হুমকিরূপ।
বিশ্বের অন্যান্য অঞ্চলের মতো স্বনির্ভর হওয়ার লক্ষ্যে বাংলাদেশও ASEAN, SAPTA এর মতো একাধিক আন্তর্জাতিক জোটের সদস্যপদ লাভ করে। এতে পুঁজি, শ্রম ও পণ্যের অবাধ প্রবাহ সৃষ্টি হওয়ার উৎপাদন যুগুণে বেড়ে যায়। যা বাংলাদেশের আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সম্প্রসারণে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। কিন্তু বিশ্বায়নের ফলে বাংলাদেশে বেশকিছু নেতিবাচক প্রভাবও লক্ষ করা যায়। ফলে অর্থনৈতিক ও সাংস্কৃতিক আগ্রাসনসহ সমাজের নৈতিক অবক্ষয় সৃষ্টি হয়েছে।
সুতরাং, বিশ্বায়ন বাংলাদেশে আশীর্বাদ ও অভিশাপ উভয়ই বয়ে এনেছে। তবে এ দেশের অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাবই বেশি।

৭. নিচে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের আকটি তথ্য দেওয়া হলো:

বছর

প্রাথমিক রপ্তানি

শিল্পজাত প্তানি

২০১০-১১

১৬১৬

২১৬১২

২০১১-১২

১২৬৭

২৩০৩৫

২০১২-১৩

১৩১০

২৫৭১৭

ক. বিশ্বায়ন কী?
খ. বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কেন গুরুত্বপূর্ণ। আলোচনা করো।
গ. উদ্দীপকের তথ্যের ভিত্তিতে রপ্তানি বাণিজ্যের পরিমাণ স্তব্ধ চিত্রের মাধ্যমে দেখা
ঘ. উদ্দীপক থেকে প্রাপ্ত তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের গতিধারার ওপর মন্তব্য করো।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. বিশ্বায়ন হচ্ছে মূলধনসহ পণ্য ও সেবার অবাধ প্রবাহের একটি সম্মিলিত ব্যবস্থা।

খ. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে তুলনামূলক বায় সুবিধার ভিত্তিতে বাংলাদেশে বিশ্বায়নের সুযোগ নিয়ে তার সীমিত সম্পদের সুষ্ঠু ব্যবহার করতে পারে।
আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ অতি-প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা আয় করে এবং তা দ্বারা শিল্পের প্রয়োজনীয় কাঁচা পাতি আমদানি করতে পারে। এ বাণিজ্যের মাধ্যমে বাংলাদেশ অনুৎপাদিত প্রয়োজনীয় দ্রব্যাদি, আধুনিক কারিগরি জ্ঞান ও প্রযুক্তি আমদানি করতে পারে। এসব বিভিন্ন সুবিধা অর্জনের উদ্দেশ্যে বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য আন্তর্জাতিক বাণিজ্য গুরুত্বপূর্ণ।

গ. উদ্দীপকে প্রদত্ত তথ্যাদি থেকে বিগত কয়েক বছরের বাংলাদেশের প্রাথমিক দ্রব্য ও শিল্পজাত দ্রব্যের রপ্তানির পরিমাণ (মিলিয়ন মার্কিন ডলারে) শুভ চিত্রের মাধ্যমে নিচে দেখা হলো:

ঘ. প্রদত্ত উদ্দীপকে বিগত কয়েক বছরে বাংলাদেশের প্রাথমিক দ্রব্য ও শিল্পজাত দ্রব্যের রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত আয়ের কিছু তথ্য দেয়া হয়েছে। এই তথ্যের ওপর ভিত্তি করে নিচে বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যের গতিধারার ওপর মন্তব্য করা হলো-
বাংলাদেশ থেকে বর্তমানে দু'শ্রেণিভূক্ত দ্রব্য বিদেশে রপ্তানি করা হয়। যথা- প্রাথমিক দ্রব্য ও শিল্পজাত দ্রব্য। এর মধ্যে রপ্তানি বাণিজ্যে শিল্পজাত দ্রব্যের নিরঙ্কুশ প্রাধান্য রয়েছে। প্রদত্ত তথ্য মতে, রপ্তানি বাণিজ্যে শিল্পজাত দুব্যের অবদান ৯০ শতাংশের বেশি। ধীর গতি হলেও আমাদের রপ্তানি আয় ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। ২০১০-১১ অর্থবছরে যেখানে মোট রপ্তানি হয়েছিল ২২৯২৮ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সেখানে ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা বেড়ে দাঁড়ায় ২৭০২৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। তাই ২০১০-১১ অর্থবছরের তুলনায় ২০১২-১৩ অর্থবছরে রপ্তানি আয় প্রায় ১৮ শতাংশ বৃদ্ধি পায়। স্বল্পকালের ব্যবধানে এ বৃদ্ধি রপ্তানি বাণিজ্যের উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি নির্দেশ করে।
উদ্দীপকের তথ্য থেকে জানা যায়, রপ্তানি বাণিজ্যে প্রাথমিক দ্রব্যের অবদান সময়ান্তরে তেমন একটা বাড়া-কমা না করলেও শিল্পজাত দ্রব্যের অবদান ক্রমশ বেড়েই চলেছে। প্রদত্ত তথ্যের ভিত্তিতে বলা যায়, ২০১০- ১১ অর্থবছরে যেখানে শিল্পজাত দ্রব্যের রপ্তানি থেকে আয় হয়েছিল ২১৬১২ মিলিয়ন মার্কিন ডলার সেখানে ২০১২-১৩ অর্থবছরে তা বেড়ে সীড়ায় ২৫৭১৭ মিলিয়ন মার্কিন ডলার। শতকরা হিসেবে এ বৃদ্ধি হলো প্রায় ১৯ শতাংশ।
উদ্দীপকের তথ্য থেকে আরো জানা যায়, বাংলাদেশের প্রাথমিক দ্রব্যের রপ্তানি থেকে প্রাপ্ত আয় ২০১০-১১ অর্থবছরের তুলনায় ২০১২-১৩ সালে বৃদ্ধি না পেয়ে বরং হ্রাস পায়। ২০১০-১১ অর্থবছরের তুলনায় ২০১২-১৩ সালে প্রাথমিক দ্রব্য থেকে রপ্তানি আয় হ্রাস পায় প্রায় ০.৪৫ শতাংশ।

৮. প্রত্যেকটি উন্নয়নশীল দেশের মতো বাংলাদেশও তার বৈদেশিক বাণিজ্য বাড়ানোর চেষ্টা করে। উন্নয়নের জন্য বিভিন্ন ধরনের পদক্ষেপ নিয়ে থাকে। বিভিন্ন দেশের সাথে সম্পর্ক স্থাপন করে জনশক্তি, পণ্যসামগ্রী রপ্তানির চেষ্টা করে। আবার বিভিন্ন বন্ধু-প্রতীম দেশ ও দাতাসংস্থা থেকে আর্থিক সহায়তা নিয়ে উন্নয়ন কর্মকান্ত পরিচালনা করে।
ক. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কী?
খ. অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য বলতে কী বোঝায়?
গ. বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের তালিকা তৈরি করো।
ঘ. বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক বাণিজ্য ও বৈদেশিক সাহায্যের কোনটি বেশি গুরুত্বপূর্ণ? যুক্তি দাও।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দুই বা ততোধিক সার্বভৌম দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, দ্রব্য ও সেবার বিনিময়কে আন্তর্জাতিক বা বৈদেশিক বাণিজ্য বলে।

খ. যেসব পণ্যসামগ্রী কিছুদিন আগেও বাংলাদেশ থেকে রপ্তানি করা হতো না; কিন্তু সাম্প্রতিককালে রপ্তানি করা হচ্ছে এসব পণ্যকে অপ্রচলিত পণ্য বলা হয়। যেমন- তৈরি পোশাক, হিমায়িত খাদ্যসামগ্রী, হোসিয়ারি দ্রব্য, হস্তশিল্পজাত দ্রব্য, সার ও রাসায়নিক দ্রব্য। কৃষিজাত দ্রব্য যথা- শাকসবজি, ফলমূল প্রভৃতি বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্য তালিকায় নতুন সংযোজন। এসব নতুন নতুন পণ্যসামগ্রীকে অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য বলা হয়।

গ. বাংলাদেশের প্রধান প্রধান রপ্তানি পণ্যকে দু'ভাগে ভাগ করা যায়; যথা- প্রচলিত ও অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য। প্রচলিত রপ্তানি পণ্য: বাংলাদেশ চিরাচরিতভাবে প্রথম থেকেই যেসব পণ্য বিশ্ব বাজারে রপ্তানি করে আসছে সেগুলোকেই এদেশের প্রচলিত রপ্তানি পণ্য বলা যায়। এ পণ্যের মধ্যে কয়েকটি কৃষিপণ্য এবং বেশিরভাগই কৃষিনির্ভর শিল্পদ্রব্য। যেমন-
১. কাঁচাপাট
২. পাটজাত দ্রব্য
৩. চা
৪. চামড়া ও চামড়াজাত দ্রব্য
৫. কাগজ ও নিউজপ্রিন্ট
৬. নেপথালিন, ফার্নেস তেল ও বিটুমিন প্রভৃতি
এসব বাংলাদেশের প্রধান প্রচলিত রপ্তানি পণ্য। অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য; সাম্প্রতিককালে যেসব পণ্য বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যে সংযোজিত হয়েছে বা প্রাধান্য পেয়েছে সেগুলোকে অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্য বলা হয়।

বাংলাদেশের অপ্রচলিত রপ্তানি পণ্যের মধ্যে উল্লেখ্য:
১. তৈরি পোশাক ও নিটওয়্যার
২. হিমায়িত খাদ্য
৩. জুতা
৪. হস্তশিল্পজাত দ্রব্য
৫. কৃষিপণ্য যেমন- শাকসবজি ও ফলমূল
৬. রাসায়নিক দ্রব্য প্রভৃতি উল্লেখযোগ্য।
উপরিউক্ত দ্রব্যাদি ছাড়াও বাংলাদেশ আরো কিছুসংখ্যক নতুন অপ্রচলিত পণ্য রপ্তানি করে। এসব পণ্যের মধ্যে কিছু প্রাথমিক পণ্য এবং কিছু শিল্পজাত দ্রব্য রয়েছে। অপ্রচলিত অন্যান্য এ ধরনের দ্রব্যাদির মধ্যে দিয়াশলাই, পার্টেক্স, রেয়ন, প্রকৌশল সামগ্রী, সিরামিক, বই-পুস্তক ও সাময়িকী, ফিচার ফিল্ম প্রভৃতি প্রধান।

ঘ. বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের অর্থনৈতিক উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে বৈদেশিক সাহায্যের প্রয়োজনীয়তা খুবই ব্যাপক। কিন্তু কোনো দেশের বৈদেশিক সাহায্যের ওপর অতিমাত্রায় নির্ভরশীল হওয়া উচিত নয়। কেননা বৈদেশিক সাহায্যের যেমন সুবিধা আছে তেমনি কিছু অসুবিধাও আছে।
বৈদেশিক সাহায্য প্রদানের সময় দাতা দেশ ও দাতা সংস্থাসমূহ বিভিন্ন ধরনের কঠিন শর্ত আরোপ করে থাকে। আর এসব শর্ত সবসময় দেশের স্বাধীনতা ও সার্বভৌমত্বের জন্য শুভ নাও হতে পারে। বৈদেশিক সাহায্য একটি দেশকে পরনির্ভরশীল করে তোলে। আর এর ফলে একটি দেশ স্বয়ংসম্পূর্ণ হয়ে উঠতে পারে না।
অন্যদিকে, অর্থনৈতিক উন্নয়নের জন্য প্রয়োজনীয় বৈদেশিক মুদ্রা সংগ্রহের উৎস হিসেবে বৈদেশিক বাণিজ্য অধিকতর বাঞ্ছনীয়। কারণ, বৈদেশিক সাহায্য গ্রহণের মধ্যে যেসব সমস্যার আশঙ্কা থাকে সেগুলো বৈদেশিক বাণিজ্যের মাধ্যমে সহজেই এড়ানো সম্ভব। এ বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বৈদেশিক সাহায্যের চেয়ে বৈদেশিক বাণিজ্য অধিক গুরুত্বপূর্ণ। তাছাড়া বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর নির্ভরশীল দেশসমূহের মধ্যে প্রতিযোগিতার মনোভাব গড়ে উঠে। প্রত্যেক দেশ প্রাকৃতিক সম্পদের পূর্ণ সদ্ব্যবহারের মাধ্যমে তার রপ্তানি পণ্যসামগ্রীর উৎপাদন বাড়াতে সচেষ্ট হয়। এর ফলে উন্নয়নের ক্ষেত্রে আস্তেনির্ভরশীলতার মনোভাব গড়ে ওঠে।
সুতরাং উপরিউক্ত আলোচনা হতে বলা যায় যে, বাংলাদেশের ন্যায় উন্নয়নশীল দেশের বৈদেশিক সাহায্যের ওপর নির্ভরশীলতা হ্রাস করে বৈদেশিক বাণিজ্যের ওপর যথেষ্ট গুরুত্ব আরোপ করা উচিত। এতে দেশের অর্থনীতি যেমন প্রভাবমুক্ত থাকবে তেমনি অর্থনৈতিক উন্নয়নের গতিশীলতা বৃদ্ধি পাবে।

৯. মি. হাবিব নোয়াখালী জেলার একজন বৈদ্যুতিক মিস্ত্রি। সে কাজের সন্ধানে দুবাই যায়। একদিন সে একটি শপিংমলে প্রাণ আচার, চানাচুর ও RFL এর পণ্যসামগ্রী দেখে আনন্দ অনুভব করে। কিন্তু তা সামান্য মাত্র। শপিংমলের অন্যান্য দ্রব্যসামগ্রী চীন, জাপান, আমেরিকা ও ইংল্যান্ডের। দোকানদার হাবিবকে বলেন যে, তোমার দেশের উৎপাদিত পণ্যের মান নিম্ন, পরিবহন সমস্যা, রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতার জন্য আমরা কম পণ্য আমদানি করি।
ক. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কী?
খ. আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের প্রধান দুটি পার্থক্য লেখ।
গ. শপিংমলে হাবিবের দেশের পণ্য কম হওয়ার কারণ কী?
ঘ. উদ্দীপকে হাবিবের দেশের বেশি পণ্যসামগ্রী শপিংমলে দেখতে হলে কী করা প্রয়োজন?

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দুই বা ততোধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী দ্রব্য ও সেবাকর্মের বিনিময়কে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে।

খ. আন্তর্জাতিক ও অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যের মধ্যে প্রধান দুটি পার্থক্য হলো :
১. আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে মুদ্রা ও ব্যাংক ব্যবস্থার পার্থকাহেতু বাণিজ্য ক্ষেত্রে বাধা সৃষ্টি হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে এ ধরনের কোনো বাধা না।
২. বিভিন্ন দেশের মধ্যে সরকারি বাধা-নিষেধ, শুল্ক, কর, বৈদেশিক বিনিময় হার ইত্যাদি ক্ষেত্রে পার্থক্য থাকে বলে বাণিজ্য নিষ্পত্তির ক্ষেত্রে নিয়ন্ত্রণ ও জটিলতা সৃষ্টি হয়। কিন্তু অভ্যন্তরীণ বাণিজ্যে এরূপ সরকারি বিধি-নিষেধের পার্থক্য না থাকায় দেনা-পাওনা নিষ্পত্তিতে জটিলতা থাকে না।

গ. বাংলাদেশের হাবিব দুবাই- এর শপিংমলে কেনাকাটা করতে গিয়ে সেখানে বাংলাদেশের প্রাণ ও RFL কোম্পানির পণ্যসমানী দেখে পুলকিত হয়। তবে সে লক্ষ করে, সেখানে অন্যান্য শিল্পোনত দেশের পণ্যসামগ্রীর তুলনায় তার নিজ দেশের পণ্যসামগ্রীর পরিমাণ অনেক কম। দুবাই-এর শপিংমলে হাবিবের দেশের পণ্যসামগ্রী কম হওয়ার কিছু কারণ রয়েছে। নিচে উদ্দীপকের আলোকে তা ব্যাখ্যা করা হলো:
পণ্যের নিম্নমান; বাংলাদেশের অধিকাংশ রপ্তানি পণ্য নিম্নমানের। নিম্নমানের কাঁচামাল, অদক্ষ শ্রমিক, পুরাতন প্রযুক্তি, বিদ্যুৎ বিভ্রাট ইত্যাদি কারণে এখানকার কলকারাখানায় উৎপাদিত পণ্য হয় নিম্নমানের। তাছাড়া রপ্তানিযোগ্য পণ্য যথাযথভাবে সংরক্ষণ ও গুদামজাতকরণের অভাবেও তার মানের অবনতি ঘটে। এসব পণ্য বিদেশের বাজারে অন্যান্য দেশের উন্নতমানের পণ্যের সাথে প্রতিযোগিতায় টিকতে পারে না এবং ক্রেতা হারায়।
পরিবহন সমস্যা: সাধারণভাবেই বাংলাদেশের পরিবহন বা অনুন্নত, ঝুঁকিপূর্ণ ও ব্যয়বহুল। আর রপ্তানিযোগ্য পণ্যের ক্ষেত্রে এ সমস্যা আরো বিস্তৃত ও প্রকট। অন্যান্য দেশের জাহাজ সংস্থার তুলনায় আমাদের জাতীয় জাহাজ চলাচল সংস্থা 'বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশন দুর্বল ও অদক্ষ। এ কারণে রপ্তানি পণ্যের পরিবহনের জন্য আমাদেরকে বিদেশি জাহা কোম্পানির ওপর নির্ভর করতে হয়। পরিবহনের অসুবিধার জন্য অনেক সময় বিদেশি ক্রেতাদেরকে সময়মতো পণ্য সরবরাহ করা যায় না।
রাজনৈতিক অস্থিতিশীলতা: দেশে দ্রুত শিল্পোন্নয়নের স্বার্থে রাজনৈতিক স্থিতিশীলতা বজায় রাখা দরকার। বাংলাদেশে বহু বছর যাবৎ রাজনৈতিক হানাহানি, হরতাল, জ্বালাও পোড়াও আন্দোলন ইত্যাদি চলে আসছে। এ পরিস্থিতিতে শিল্পোৎপাদন দারুণভাবে বিঘ্নিত হয়। অনেক সময় বিদেশি ক্রেতার চাহিদা অনুযায়ী, পণ্য সময়মতো পাঠানো যায় না। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে উল্লিখিত বিভিন্ন সমস্যার কারণে বিদেশের বাজারে এ দেশের পণ্যের পরিমাণ লক্ষণীয়ভাবে কম।

ঘ. উদ্দীপকটি পড়ে জানা যায়, বিদেশের বাজারে হাবিবের দেশের তথ্য বাংলাদেশের পণ্যের পরিমাণ বেশ কম। বিদেশের বাজারে এদেশের পণ্য বেশি পরিমাণে প্রেরণ করতে হলে গুরুত্বপূর্ণ কিছু পদক্ষেপ গ্রহণ করা প্রয়োজন।
১. বিদেশে আমাদের রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ বৃদ্ধি করতে হলে রপ্তানি পণ্যের পরিবহণ ও বন্দরের বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাসহ সকল প্রকার অবকাঠামোর উন্নয়ন সাধন দরকার। এ উদ্দেশ্যে নতুন কন্টেইনার বন্দর নির্মাণসহ চট্টগ্রাম ও খুলনার বন্দরের বিদ্যমান সুযোগ-সুবিধা আরো সম্প্রসারণ আবশ্যক।
২. অন্য দেশের জাহাজের ওপর নির্ভর রপ্তানি বাণিজ্য পরিচালনা অনিশ্চিত, ঝুঁকিপূর্ণ ও অত্যন্ত ব্যয়বহুল হয়ে দাঁড়ায়। তাই আমাদের নিজস্ব চলাচল সংস্থা তথা বাংলাদেশ শিপিং করপোরেশনকে আরো শক্তিশালী ও বাণিজ্যিক জাহাজের বহর সম্প্রসারিত করতে হবে।
৩. বাংলাদেশের রপ্তানি পণ্যের অধিকাংশের গুণগত মান সন্তোষজনক নয়। সুতরাং, রপ্তানি পণ্যের পরিমাণ বাড়াতে হলে দক্ষ শ্রমিক ও উন্নত প্রযুক্তি ব্যবহারের মাধ্যমে রপ্তানি পণ্যের উৎকর্ষ বৃদ্ধি করতে হবে।
৪. রপ্তানি পণ্যের নাম ম র জন্য খী শিল্পের উৎপাদন বায় হ্রাস করতে হবে। এ উদ্দেশ্যে রপ্তানিমুখী শিল্পে বিদ্যুৎ ও গ্যাসের দাম হ্রাস, প্রয়োজনীয় কাঁচামাল আমদানির ওপর রেয়াত, ট্যাক্স হলিডে সুবিধা ইত্যাদি ব্যবস্থা গ্রহণ করা দরকার।
৫. আমাদের কৃষিজাত পণ্যের রপ্তানির পরিমাণ বাড়াতে হলে পণ্যের শ্রেণিবিভাগ ও নমুনাকরণের ব্যবস্থা গ্রহণ করতে হবে। এমনটি হলে বিদেশি ক্রেতারা তাদের চাহিদামাফিক পণ্য ক্রয় করতে পারবে।
৬. রপ্তানির পরিমাণ বৃদ্ধির উদ্দেশ্যে বিভিন্ন দেশে অনুষ্ঠিত শিল্প মেলায় এদেশের পণ্যের প্রচারের ব্যবস্থা করতে হবে। বিভিন্ন দেশে অবস্থিত আমাদের কূটনৈতিক মিশনগুলোও এ ব্যাপারে জামাদেরকে সাহায্য করতে পারে।
উপরের ব্যবস্থাদি গ্রহণ করলে আমাদের রপ্তানির পরিমাণ বাড়বে। তখন বিদেশের শপিংমলগুলোতে হাবিবের দেশ তথা বাংলাদেশের পণ্য বেশি পরিমাণে দেখা যাবে।

১০. বাংলাদেশের রপ্তানিকৃত পণ্যের মূল্য:

ক্রমিক নং

পণ্য

২০১২-১৩  (কোটি টাকা)

২০১৩-১৪  কোটি (টাকা)

চা

তৈরি পোশাক

১১০৪০

১২৪৪২

হস্তশিল্পজাত পণ্য

ক. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য কী?
খ. আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হয় কেন?
গ. উদ্দীপকে ২নং সারিতে উল্লিখিত পণ্যটির অর্থনৈতিক গুরুত্ব ব্যাখ্যা করো।
ঘ. তুমি কি মনে কর, এনং সারিতে উল্লিখিত খাতটি বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি সম্ভাবনাময় খাত তোমার মতের পক্ষে যুক্তি তুলে ধরো।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. দুই বা ততোধিক স্বাধীন ও সার্বভৌম দেশের মধ্যে চুক্তি অনুযায়ী, দ্রব্য ও সেবার বিনিময়কে আন্তর্জাতিক বাণিজ্য বলে।

খ. পৃথিবীর কোনো দেশের পক্ষেই প্রয়োজনীয় সকল দ্রব্য বা সেবা উৎপাদন করা সম্ভব হয় না। ফলে বিভিন্ন প্রকার প্রয়োজনীয় দ্রব্য ও সেবার জন্য একদেশ অন্যদেশের ওপর নির্ভরশীল হয়ে থাকে। এজন্যই আন্তর্জাতিক বাণিজ্য সংঘটিত হয়।
বিশ্বের বিভিন্ন দেশের মধ্যে প্রাকৃতিক সম্পদের পার্থক্য যেহেতু কোনো বিশেষ দেশ, বিশেষ পণ্য উৎপাদনে আপেক্ষিক সুবিধা ভোগ করতে পারে। আপেক্ষিত সুবিধা অনুযায়ী, কোনো বিশেষ দ্রব্য উৎপাদন ও রপ্তানি করে থাকে এবং আপেক্ষিকভাবে যা উৎপাদনে অসুবিধা সে দ্রব্য আমদানি করে। যেমন- বাংলাদেশ চীনে পাটজাত দ্রব্য রপ্তানি করে সে দেশ থেকে কাপড় আমদানি করলে বাণিজ্য সংঘটিত হয়।

গ. উদ্দীপকের ২নং সারণিতে উল্লিখিত পণ্যটি হলো তৈরি পোশাক। বর্তমানে এটি হলো আমাদের প্রধান রপ্তানি পণ্য। আমাদের দেশে পণ্যটির তথা পোশাক শিল্পের অর্থনৈতিক অনেক গুরুত্ব রয়েছে। নিচে তা ব্যাখ্যা করা হলো:
বাংলাদেশে বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের সর্ববৃহৎ খাত হলো তৈরি পোশাক শিল্প। এ শিল্পে প্রায় ১.৫ কোটি শ্রমিক নিয়োজিত আছে। তাছাড়া বাংলাদেশের বিপুলসংখ্যক অবহেলিত, সুবিধাবতি ও দরিদ্র নারীরা এ শিল্পে কর্মসংস্থানের মাধ্যমে তাদের জীবনযাত্রার মান উন্নত করার সুযোগ পেয়েছে। পোশাক শিল্প দেশে একদল দক্ষ উদ্যো-া শ্রেণি গড়ে তুলেছে। দেশে শিল্পবান্ধব পরিবেশ ও বিনিয়োগ পরিস্থিতি ভালো থাকলে এ উদ্যোক্তা শ্রেণি দেশের শিল্পায়নে মূল্যবান ভূমিকা রাখতে পারবে।
পোশাক শিল্পের প্রয়োজনে দেশে অন্যান্য সহায়ক শিল্প যেমন সুতা, কার্টন, পলিব্যাগ, লেভেল, গামটেপ, প্যাকিং ইত্যাদি শিল্প গড়ে উঠেছে। পোশাক শিল্পের উন্নয়নে সাথে সাথে এসব ব্যাকওয়ার্ড লিংকেরা শিল্প (পশ্চাৎ সংযোগ শিল্প) এর দ্রুত বিকাশ ঘটছে। এছাড়া পোশাক শিল্পের শ্রমিকের জন্য বাড়তি খাদ্য, বস্ত্রসহ বিভিন্ন ভোগ্যদ্রব্যের বাজার সৃষ্টি হয়েছে। এর ফলে দেশে অনেক ভোগ্যপণ্য উৎপাদনকারী কারখানা গড়ে উঠে যেগুলো উৎপাদন, আয় বৃদ্ধি ও কর্মসংস্থানে সাহায্য করছে। তাছাড়া পোশাক শিল্পের জন্য বর্তমানে যে বিপুল পরিমাণ কাপড় আমদানি করা হয়, ভবিষ্যতে তা দেশেই উৎপাদন করলে বস্ত্র শিল্পেরও উন্নয়ন ঘটবে।
সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে ২নং সারণিতে উল্লিখিত পণ্যটির যথেষ্ট অর্থনৈতিক গুরুত্ব রয়েছে।

ঘ. উদ্দীপক অনুসারে ৩নং সারপিতে উল্লিখিত খাতটির হলো কুটিরশিল্প খাত। হস্তশিল্পজাত পণ্য এ খাতের উৎপাদিত পণ্য। এটি বিভিন্ন কারণে বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে আস্তেপ্রকাশ করেছে। এমন ধারণার সপক্ষে নিচে কিছু যুক্তি তুলে ধরা হলো:
বাংলাদেশের শিল্পখাতে কুটিরশিল্প একটি অত্যন্ত পরিচিত শিল্প। এ দেশের অর্থনীতিতে এ শিল্পে উজ্জ্বল সম্ভাবনা রয়েছে। কুটিরশিল্প স্ব মূলধন, সহজলভ্য কাঁচামাল ও সাধারণ যন্ত্রপাতি দ্বারা স্ব-উদ্যোগে গৃহেই প্রতিষ্ঠা করা যায়। এ দেশে তাই বেশিরভাগ আস্তেকর্মসংস্থানের ব্যবস্থা কুটিরশিল্প স্থাপনের মাধ্যমেই করা যায়। তাছাড়া বাংলাদেশ হলো বেশি শ্রমশক্তি ও স্বল্প পুঁজির দেশ। এ প্রেক্ষিতে এখানে স্বল্প পুঁজির বিনিয়োগ দ্বারা কুটিরশিল্প স্থাপন সুবিধাজনক।
বাংলাদেশের অন্যতম প্রধান সমস্যা হলো বেকার সমস্যা। দেশের বিপুল বেকার জনশক্তিকে কুটির শিল্পের মাধ্যমে তাদের ঘরে বসেই কাজের ব্যবস্থা করা যায়। তাছাড়া বাংলাদেশের কৃষিখাতে প্রচুর লোক ছদ্মবেশী বেকার, মৌসুমি বেকার হিসেবে নিয়োজিত আছে। এসব বেকারকে সহজেই কুটির শিল্পে নিয়োগ করা যায়। অন্যদিকে আমাদের দেশে পল্লি অঞ্চলে অনেক প্রাকৃতিক সম্পদ রয়েছে; এগুলো কুটিরশিল্পে কাঁচামাল হিসেবে ব্যবহার করা যায়। তাছাড়া দেশের বৃহৎ শিল্পের অনেক পরিত্যক্ত উপজাত দ্রব্যাদি কুটিরশিল্পে ব্যবহৃত হতে পারে। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের ৩নং সারণিতে উল্লিখিত খাতটি। বাংলাদেশের অর্থনীতিতে একটি সম্ভাবনাময় খাত।
Share:

0 Comments:

Post a Comment