G

HSC ঐকতান কবিতার (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র গাইড
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Bangla 1st Paper Srijonshil Question and Answer. Bangla Srijonshil Proshno O Uttor for HSC Exam Preparation. pdf download

ঐকতান
রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
💕 পাঠ সহায়ক অংশ
সৃজনশীল পদ্ধতি মুখস্থনির্ভর বিদ্যা নয়, পাঠ্যবই নির্ভর মৌলিক বিদ্যা। তাই অনুশীলন অংশ শুরু করার আগে গল্প/কবিতার শিখন ফল, পাঠ পরিচিতি, লেখক পরিচিতি, উৎস পরিচিতি, বস্তুসংক্ষেপ, নামকরণ, শব্দার্থ ও টীকা ও বানান সতর্কতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব বিষয়গুলো জেনে নিলে এ অধ্যায়ের যেকোনো সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হবে।

💕 শিখন ফল
☑️ বই পড়ে পৃথিবীর নানা দেশের স্থান, নগর, রাজধানী সম্পর্কে জানতে আগ্রহী হবে।
☑️ পৃথিবীর অনন্ত সময়ের মধ্যে সংক্ষিপ্ত মানবজীবন সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
☑️ বিশাল বিশ্বের ব্যাপক কর্মকাণ্ডের সাথে পরিচয় লাভে মানুষের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে জানবে।
☑️ সাহিত্য সৃষ্টি এবং নিম্নশ্রেণির মানুষের সাথে কবির মিশতে না পারার দীনতা সম্পর্কে জানতে পারবে।
☑️ মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষের জীবনবোধ সম্পর্কে অবগত হবে।
☑️ মানুষের সংক্ষিপ্ত জীবনে জ্ঞানের দীনতা সম্পর্কে জ্ঞাত হবে।
☑️ প্রকৃতির ঐকতান সুরের সাথে মানুষের জীবনের সুরের পার্থক্য নির্ণয় করতে পারবে।
☑️ ধনী-দরিদ্র, উঁচু-নিচু নির্বিশেষে সব মানুষ যে এক ও অভিন্ন এ সত্য অনুধাবন করতে পারবে।
☑️ কবির জীবনের নানা অসংগতি ও অতৃপ্তি সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।
☑️ মানুষকে বোঝার এবং মানুষের ভালোবাসা অর্জনের জন্য অন্তরে অন্তর মেশানোর বিষয়টির গুরুত্ব উপলব্ধি করবে।
☑️ চাষি, তাঁতি, জেলে ইত্যাদি নিম্নশ্রেণির মানুষের শ্রমে-চেষ্টায় কীভাবে সভ্যতা এগিয়ে চলছে তা অনুধাবন করতে পারবে।
💕 পাঠ পরিচিতি
“ঐকতান” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থের ১০ সংখ্যক কবিতা। কবির মৃত্যুর মাত্র চার মাস আগে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন সংখ্যা ‘প্রবাসী’তে কবিতাটি ‘ঐকতান’-নামে প্রথম প্রকাশিত হয়। “ঐকতান” অশীতিপর স্থিতপ্রজ্ঞ কবির আত্ম-সমালোচনা ; কবি হিসেবে নিজের অপূর্ণতার স্বতঃস্ফ‚র্ত স্বীকারোক্তি।

দীর্ঘ জীবন-পরিক্রমণের শেষ প্রান্তে পৌঁছে স্থিতপ্রজ্ঞ রবীন্দ্রনাথ পেছন ফিরে তাকিয়ে সমগ্র জীবনের সাহিত্য সাধনার সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসাব খুঁজেছেন “ঐকতান” কবিতায়। এখানে তিনি অকপটে নিজের সীমাবদ্ধতা ও অপূর্ণতার কথা ব্যক্ত করেছেন । জীবন-মৃত্যুর সন্ধিক্ষণে দাঁড়িয়ে কবি অনুভব করেছেন নিজের অকিঞ্চিৎকরতা ও ব্যর্থতার স্বরূপ। কবি বুঝতে পেরেছেন, এই পৃথিবীর অনেক কিছুই তাঁর অজানা ও অদেখা রয়ে গেছে।

বিশ্বের বিশাল আয়োজনে তাঁর মন জুড়ে ছিল কেবল ছোট একটি কোণে। জ্ঞানের দীনতার কারণেই নানা দেশের বিচিত্র অভিজ্ঞতা, বিভিন্ন গ্রন্থের চিত্রময় বর্ণনার বাণী কবি ভিক্ষালব্ধ ধনের মতো সযতেœ আহরণ করে নিজের কাব্যভাণ্ডার পূর্ণ করেছেন। তবু বিপুলা এ পৃথিবীর সর্বত্র তিনি প্রবেশের দ্বার খুঁজে পান নি। চাষি ক্ষেতে হাল চষে, তাঁতি তাঁত বোনে, জেলে জাল ফেলে- এসব শ্রমজীবী মানুষের ওপর ভর করেই জীবনসংসার এগিয়ে চলে। কিন্তু কবি এসব হতদরিদ্র অপাঙ্ক্তেয় মানুষের কাছ থেকে অনেক দূরে সমাজের উচ্চ মঞ্চে আসন গ্রহণ করেছিলেন। সেখানকার সংকীর্ণ জানালা দিয়ে যে জীবন ও জগৎকে তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন, তা ছিল খণ্ডিত তথা অপূর্ণ।

ক্ষুদ্র জীবনের সঙ্গে বৃহত্তর মানব-জীবনধারার ঐকতান সৃষ্টি না করতে পারলে শিল্পীর গানের পসরা তথা সৃষ্টিসম্ভার যে কৃত্রিমতায় পর্যবসিত হয়ে ব্যর্থ হয়ে যায়, কবিতায় এই আত্মোপলব্ধির প্রকাশ ঘটেছে কবির। তিনি বলেছেন, তাঁর কবিতা বিচিত্র পথে অগ্রসর হলেও জীবনের সকল স্তরে পৌঁছাতে পারে নি। ফলে, জীবন-সায়াহ্নে কবি অনাগত ভবিষ্যতের সেই মৃত্তিকা-সংলগ্ন মহৎ কবিরই আবির্ভাব প্রত্যাশা করেছেন, যিনি শ্রমজীবী মানুষের অংশীদার হয়ে সত্য ও কর্মের মধ্যে সৃষ্টি করবেন আত্মীয়তার বন্ধন। “ঐকতান” কবিতায় যুগপৎ কবির নিজের এবং তাঁর সমকালীন বাংলা কবিতার বিষয়গত সীমাবদ্ধতার দিক উন্মোচিত হয়েছে।
ঐকতান কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির গাইড
কবিতাটি সমিল প্রবহমান অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। কবিতাটিতে ৮+৬ এবং ৮+১০ মাত্রার পর্বই অধিক। তবে এতে কখনো-কখনো ৯ মাত্রার অসমপর্ব এবং ৩ ও ৪ মাত্রার অপূর্ণ পর্ব ব্যবহৃত হয়েছে।

ঐকতান কবিতা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর
💕 কবি পরিচিতি
প্রকৃত নাম : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর।
ছদ্মনাম : ভানুসিংহ ঠাকুর।
জন্ম তারিখ : ৭ মে, ১৮৬১ খ্রি. (২৫ বৈশাখ ১২৬৮ বঙ্গাব্দ)।
জন্মস্থান : জোড়াসাঁকো ঠাকুর পরিবার, কলকাতা, ভারত।
পিতার নাম : মহর্ষি দেবেন্দ্রনাথ ঠাকুর।
মাতার নাম : সারদা দেবী।
পিতামহের নাম : প্রিন্স দ্বারকানাথ ঠাকুর।
শিক্ষাজীবন : রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর বাল্যকালে ওরিয়েন্টাল সেমিনারি, নর্মাল স্কুল, বেঙ্গল একাডেমি, সেন্ট জেভিয়ার্স স্কুল প্রভৃতি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে অধ্যয়ন করলেও স্কুলের পাঠ শেষ করতে পারেন নি। ১৭ বছর বয়সে ব্যারিস্টারি পড়তে ইংল্যান্ড গেলেও কোর্স সম্পন্ন করা সম্ভব হয় নি। তবে গৃহশিক্ষকের কাছ থেকে জ্ঞানার্জনে কোনো ত্রুটি হয় নি।
পেশা ও কর্মজীবন : ১৮৮৪ খ্রি. থেকে রবীন্দ্রনাথ তাঁর পিতার আদেশে বিষয়কর্ম পরিদর্শনে নিযুক্ত হন এবং ১৮৯০ থেকে দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে জমিদারি দেখাশুনা করেন। এ সূত্রে তিনি কুষ্টিয়ার শিলাইদহ ও সিরাজগঞ্জের শাহাজাদপুরে দীর্ঘ সময় অবস্থান করেন।
কাব্য : মানসী, সোনার তরী, চিত্রা, চৈতালি, ক্ষণিকা, নৈবেদ্য, গীতাঞ্জলি, বলাকা, পূরবী, পুনশ্চ, বিচিত্রা, সেঁজুতি, জন্মদিনে, শেষলেখা বিশেষ উলে­খযোগ্য।
উপন্যাস : গোরা, ঘরে-বাইরে, চতুরঙ্গ, চোখের বালি, নৌকাডুবি, যোগাযোগ, রাজর্ষি, শেষের কবিতা প্রভৃতি।
কাব্যনাট্য : কাহিনী, চিত্রাঙ্গদা, বসন্ত, বিদায় অভিশাপ, বিসর্জন, রাজা ও রাণী প্রভৃতি।
নাটক : অচলায়তন, চিরকুমার সভা, ডাকঘর, মুকুট, মুক্তির উপায়, রক্তকরবী, রাজা প্রভৃতি।
গল্পগ্রন্থ : গল্পগুচ্ছ, গল্পস্বল্প, তিনসঙ্গী, লিপিকা, সে, কৈশোরক প্রভৃতি।
ভ্রমণ কাহিনী : জাপানযাত্রী, পথের সঞ্চয়, পারস্য, রাশিয়ার চিঠি, য়ুরোপ যাত্রীর ডায়েরী, য়ুরোপ প্রবাসীর পত্র প্রভৃতি।
নোবেল পুরস্কার (১৯১৩), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিলিট (১৯১৩), অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিলিট (১৯৪০), ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃক ডিলিট (১৯৩৬)।
মৃত্যু তারিখ : ৭ আগস্ট, ১৯৪১ খ্রি. (২২ শ্রাবণ ১৩৪৮ বঙ্গাব্দ)।

💕 উৎস পরিচিতি
“ঐকতান” রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থের ১০ সংখ্যক কবিতা। কবির মৃত্যুর মাত্র চার মাস আগে ১৩৪৮ বঙ্গাব্দের পহেলা বৈশাখ ‘জন্মদিনে’ কাব্যগ্রন্থটি প্রথম প্রকাশিত হয়। ১৩৪৭ বঙ্গাব্দের ফাল্গুন সংখ্যা ‘প্রবাসী’তে কবিতাটি ‘ঐকতান’ নামে প্রথম প্রকাশিত হয়।

💕 বস্তুসংক্ষেপ
‘ঐকতান’ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের শেষ পর্যায়ের লেখা কবিতা। ঐকতান শব্দের অর্থ হচ্ছে বহু সুন্দরের সমন্বয়ে এক সুরঝংকার বা সম্মিলিত সুর। কবিতায় সেই সুর ও সুন্দরের সমন্বয় ঘটেছে। এ কবিতায় জগৎ ও জীবন সম্পর্কে কবির গভীর উপলব্ধির পরিচয় পাওয়া যায়। ‘ঐকতান’ কবিতায় কবির ব্যক্তিগত জীবন-দর্শন, ভাব-ভাবনা, বোধ-বিশ্বাস, অজ্ঞতা-অভিজ্ঞতা ইত্যাদি বিষয় প্রতিফলিত হয়েছে। জগতের নানা ঘাত-প্রতিঘাতের মধ্য দিয়ে এগিয়ে চলে মানুষের জীবন। সেই চলার পথে জীবনের নানা রং, হাসি, আনন্দ-বেদনা তাকে ছুঁয়ে যায়। কবি সেই মানুষদেরই একজন।

তিনিও তাদের মতো জীবন প্রত্যাশা করেন, তাদের সাথে মিশে গিয়ে তাদের অন্তরের মানুষ হয়ে উঠতে চান। কিন্তু সমাজ, সংস্কার, বিশ্বাস, আভিজাত্যের দেয়াল তার সামনে বাধা হয়ে দাঁড়ায়। জাত-ধর্মের, ধনী-দরিদ্রের বৈষম্যের কারণে চাষা, জেলে, তাঁতি ইত্যাদি নিচু শ্রেণি-পেশার মানুষের সাথে মিশতে না পারায় তিনি বেদনাহত। এ ব্যর্থতার কথা স্বীকার করে কবি মাটি-মানুষের দুঃখ-কষ্ট নিয়ে যারা বাণী রচনা করবেন তাদের জন্য অপেক্ষা করছেন। কবি নিজের জ্ঞানের দীনতার কথা স্বীকার করে ভিক্ষালব্ধ ধনে তা পূর্ণ করার কথা বলেন। অপরিচিত বিশাল বিশ্বের আয়োজনের সামান্য অংশই তাঁর দৃষ্টি ধারণ করেছে।

বহুমূল্য সুন্দর জগতের অনেক কিছুই তাঁর অদেখা, অজানা রয়ে গেছে। অজ্ঞতা, অক্ষমতার জন্য জগতের কল্যাণকর কাজে অংশগ্রহণে তাঁর যে দীনতা, তা যেন জগতের কবি-সাহিত্যিকদের স্পর্শ না করে। খ্যাতির মোহে পড়ে তাঁরা যেন অন্ধ হয়ে না যায়। মানব কল্যাণে তারা যেন নির্মোহ থাকেন। ‘ঐকতান’ কবিতায় কবি মূলত বিশাল বিশ্বের আয়োজনের সাথে নিজের ক্ষুদ্র আয়োজনকে একক করে দেখতে চেয়েছেন। জগতের বিচিত্র সুর ও সুন্দরের সমন্বয় ও ঐক্য সাধন করতে চেয়েছেন। সেখানে মানবতার কল্যাণচিন্তা নিহিত। তিনি নিজের অজ্ঞতা দূর করতে জ্ঞানের সাধনায় যেখানে যে অমূল্য ধন পান তাই সংগ্রহ করেন।

তিনি মিথ্যা বা মেকি দিয়ে, শুধু বাইরের আয়োজন দিয়ে তাঁর ভিতরের শূন্যতাকে আড়াল করতে চান না। কবির হৃদয় মানবতাবোধে উন্নীত। তিনি চাষা, জেলে, তাঁতিদের প্রতি গভীর মমতা অনুভব করেন। তাদের সাথে অন্য সবার মতো মিশতে না পারার ব্যর্থতা স্বীকার করে সাহিত্যের সংগীত সভায় একতারা হাতে দীনহীন বাউলের মর্যাদা দাবি করেন। আর যাঁরা সেই মর্যাদা দিবেন, তাদের তিনি শ্রদ্ধাভরে নমস্কার জানান।

💕 নামকরণ
নামকরণ হলো যেকোনো গল্প, কবিতা, প্রবন্ধ, উপন্যাসের গুরুত্বপূর্ণ একটি দিক। তাই অন্তর্নিহিত ভাব বা সুরের ওপর ভিত্তি করে আলোচ্য কবিতার নামকরণ করা হয়েছে ‘ঐকতান’। এ ঐকতান প্রকৃতির অন্তঃসুরের, সব স্তরের মানুষের সৌহার্দ্যরে, সাহিত্য ও সংগীতের কল্যাণ বীণার। প্রকৃতির সবকিছুর সাথে রয়েছে পরস্পর অন্তসম্পর্ক, রয়েছে সুরের মিল। কিন্তু মানুষের মধ্যে রয়েছে গুণগত, পেশাগত, স্তরগত নানা বৈচিত্র্য। কবি তাই বলেছেন- “বিপুলা এ পৃথিবীর কতটুকু জানি।” যেখানে যা পান কুড়িয়ে এনে তাঁর জ্ঞানের দীনতা পূরণ করেন। পৃথিবীর কবি হয়েও তাঁর ‘এই স্বরসাধনায় পৌঁছিল না বহুতর ডাক, রয়ে গেছে ফাঁক।’ অথচ ‘প্রকৃতির ঐকতান স্রোতে।

নানা কবি ঢালে গান নানা দিক হতে।’ কিন্তু কবি বিশ্বাস করেন ‘আমার কবিতা’ আমি জানি/গেলেও বিচিত্র পথে হয় নাই সর্বত্রগামী।’ কেননা, শ্রমজীবী মানুষের কাছে, অন্তজ শ্রেণির অসহায় মানুষের কাছে তিনি যেতে পারেন নি। এমনকি ‘একতারা যাহাদের........মূক যারা দুঃখে সুখে নতশির’ তাদেরকেও তুলে আনতে পারেন নি তার গানে-সাহিত্যে। কারণ ‘অন্তর মিশালে তবে তার অন্তরের পরিচয়’, যা তাঁর পক্ষে করা সম্ভব হয় নি। এ ব্যর্থতা স্বীকার করে কবি বলেন- ‘নিজে যা পারি না দিতে, নিত্য আমি থাকি তাঁর খোঁজে।’ কবি তাই পথ চেয়ে থাকেন- ‘যে আছে মাটির কাছাকাছি/সে কবির বাণী-লাগি কান পেতে আছি।’ সে উদ্দেশ্য পূরণের জন্যে নির্বাক মনের মর্মের বেদনা উদ্ধার করে, প্রাণহীন, গানহীন এদেশের অবজ্ঞার তাপে নিরানন্দ জীবনরসে পূর্ণ করে দিতে চান।

যাতে সাহিত্যের ঐকতান সংগীত সভায় সবার কণ্ঠেই ঐকতান ধ্বনিত হয় একই কথায়, একই গানে, একই সুরে। যাতে কাছে থেকে দূরে যারা, তারা তাদের নিজেদের খ্যাতিতেই মর্যাদাবান হয়ে ওঠে। তাহলেই সবার আনন্দের সাথে আনন্দ ভোগ করে কবিও হয়ে উঠবেন প্রাণবন্ত ও প্রাণস্ফূর্ত। প্রকৃতি আর মানুষের অন্তর্লীন সুর একাকার হয়ে যে ঐকতান সৃষ্টি করে, তা সব মানুষের কণ্ঠের সাথে একাত্ম হলেই সে ঐকতান সার্থক হয়। সে ঐকতানের প্রত্যাশায় কবি অধীর উদ্বেল হয়ে আছেন। কাজেই বিষয়ের অন্তর্নিহিত ভাবের আলোকে কবিতার নামকরণ ‘ঐকতান’ যথার্থ ও সার্থক হয়েছে।

💕 শব্দার্থ ও টীকা
বিপুলা - বিশাল প্রশস্ত। এখানে নারীবাচক শব্দ হিসেবে বিপুলা বলে পৃথিবীকে বোঝানো হয়েছে।
‘বিশাল বিশ্বের আয়োজন; - মন মোর জুড়ে থাকে অতি ক্ষুদ্র
তারি এক কোণ।’ - জীব ও জড়-বৈচিত্র্যের বিশাল সম্ভার নিয়ে এই বিশাল বিশ্বজগৎ। কিন্তু কবির মন জুড়ে রয়েছে তারই ছোট একটি কোণ।
‘যেথা পাই চিত্রময়ী বর্ণনার বাণী
কুড়াইয়া আনি।’ - কবি তাঁর কবিতাকে সমৃদ্ধ করার জন্য পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ সাহিত্যের সম্পদ কুড়িয়ে আনেন।
‘জ্ঞানের দীনতা এই আপনার মনে পূরণ করিয়া লই যত পারি
ভিক্ষালব্ধ ধনে।’ - নানা সূত্র থেকে জ্ঞান আহরণ করে কবি নিজের জ্ঞানভাণ্ডারকে সমৃদ্ধ করেন।
স্বরসাধনা - এখানে সুর বা সংগীত সাধনা বোঝানো হয়েছে।
‘এই স্বর সাধনায় পৌঁছিল না
বহুতর ডাক রয়ে গেছে ফাঁক।’ - কাব্যসংগীতের ক্ষেত্রে কবি যে স্বরসাধনা করেছেন তাতে ঘাটতি রয়ে গেছে।
ঐকতান - বিভিন্ন বাদ্যযন্ত্রের সমন্বয়ে সৃষ্ট সুর, সমস্বর। এখানে বহু সুরের সমন্বয়ে এক সুরে বাঁধা পৃথিবীর সুরকে বোঝানো হয়েছে।
‘অতি ক্ষুদ্র অংশে তার সম্মানের / চিরনির্বাসনে সমাজের উচ্চ মঞ্চে
বসেছি সংকীর্ণ বাতায়নে।’ - সম্মানবঞ্চিত ব্রাত্যজনতা থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে সমাজের উচ্চ মঞ্চে কবি আসন গ্রহণ করেছেন। তাই সেখানকার সংকীর্ণ জানালা দিয়ে বৃহত্তর সমাজ ও জীবনকে তিনি দেখতে পারেন নি।
‘মাঝে মাঝে গেছি আমি / ও পাড়ার প্রাঙ্গণের ধারে, / ভিতরে প্রবেশ করি সে শক্তি
ছিল না একেবারে।’ - মাঝে মধ্যে কবি ব্রাত্য মানুষের পাড়ায় ক্ষণিকের জন্য উঁকি দিয়েছেন। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার কারণে তাদের সঙ্গে ভালোভাবে যোগসূত্র রচনা সম্ভব হয় নি।
‘জীবনে জীবন যোগ করা / না হলে কৃত্রিম পণ্যে
ব্যর্থ হয় গানের পসরা।’ - জীবনের সঙ্গে জীবনের সংযোগ ঘটাতে না পারলে শিল্পীর সৃষ্টি কৃত্রিম পণ্যে পরিণত হয়। ব্রাত্য তথা প্রান্তিক মানুষকে শিল্প-সাহিত্যের অঙ্গনে যোগ্য স্থান দিলেই তবে শিল্প সাধনা পূর্ণতা পায়।
‘এসো কবি অখ্যাতজনের
নির্বাক্ মনের’ - রবীন্দ্রনাথ এখানে সেই অনাগত কবিকে আহবান করছেন, যিনি অখ্যাত মানুষের, অব্যক্ত মনের জীবনকে আবিষ্কার করতে সমর্থ হবেন।
রস - এখানে সাহিত্যরস বা শিল্পরস বোঝানো হয়েছে। কবিরা রসসৃষ্টির জন্য কবিতা রচনা করেন। সেই রস সৃষ্টি হয় পাঠকের অন্তরে।
‘অবজ্ঞার তাপে শুষ্ক নিরানন্দ / সেই মরুভূমি রসে পূর্ণ
করি দাও তুমি।’ - জেলে-তাঁতি প্রভৃতি শ্রমজীবী মানুষ সাহিত্যের বিষয়সভায় উপেক্ষার কারণে স্থানলাভে বঞ্চিত হওয়ায় সাহিত্যের ভুবন আনন্দহীন ঊষর মরুভূমিতে পরিণত হয়েছে। মরুভূমির সেই উষরতাকে রসে পূর্ণ করে দেয়ার জন্য ভবিষ্যতের কবির প্রতি রবীন্দ্রনাথের আহবান।
উদ্বারি - ওপরে বা ঊর্ধ্বে প্রকাশ করে দাও। অন্তরে যে উৎস (এখানে রসের উৎস) রয়েছে, তা উন্মুক্ত করে দেয়ার কথা বোঝানো হয়েছে।
সাহিত্যের ঐকতান / সংগীত সভায় - সাহিত্যে জীবনের সর্বপ্রান্তস্পর্শী সমস্বর বা ঐকতান।
‘একতারা যাহাদের তারাও
সম্মান যেন পায়’ - অবজ্ঞাত বা উপেক্ষিত মানুষও যেন সম্মান লাভ করে সে-কথা বলা হয়েছে।
‘মূক যারা দুঃখে সুখে, / নতশির স্তব্ধ যারা
বিশ্বের সম্মুখে’ - দুঃখ-সুখ সহ্য করা নির্বাক মানুষ, যারা এগিয়ে চলা পৃথিবীতে এখনো মাথা উঁচু করে দাঁড়াতে পারে না।

💕 বানান সতর্কতা
কীর্তি, সিন্ধু, ভ্রমণবৃত্তান্ত, ভিক্ষালব্ধ, পূরণ, স্রোত, বহুদূর, সংকীর্ণ, প্রাঙ্গণ, স্তব্ধ, গুণী, মূক, শুষ্ক, মরুভূমি, আত্মীয়, কৃষাণ, অবজ্ঞা, ব্যর্থ।


ঐকতান
সৃজনশীল প্রশ্ন-০১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
বিদেশ থেকে উচ্চশিক্ষা নিয়ে দেশে ফিরে রফিকুল বারি রাজনীতিতে মনোযোগী হতে চান। সুস্থ রাজনীতির মাধ্যমে দেশের মানুষের ভাগ্যোন্নয়ন তার লক্ষ্য। এই উদ্দেশ্যে তিনি বিভিন্ন পত্রিকায় লেখালেখি করেন এবং বিভিন্ন সভা-সমিতিতে যোগ দেন। একজন সৎ ও জ্ঞানী ব্যক্তি হিসেবে শহরের একটি বিশেষ শ্রেণির সবাই তাঁকে চেনে। একবার ঈদে গ্রামের বাড়ি গিয়ে তিনি বুঝতে পারেন, দেশের মানুষের কথা ভাবলেও গ্রামের সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখ সম্পর্কে তিনি কিছুই জানেন না। তাঁর নতুন উপলব্ধি হয় যে, দেশের সাধারণ মানুষের উন্নয়নকে বাদ দিয়ে দেশের উন্নয়ন সম্ভব নয়। এরপর থেকে তিনি গ্রামের মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে মিশতে শুরু করেন, তাদের জন্য কাজ করতে আরম্ভ করেন। ধীরে ধীরে তিনি সাধারণের প্রিয় নেতা হয়ে ওঠেন।
ক. কাছে থেকে দূরে যারা, কবি তাদের কী শুনাতে চেয়েছেন?
খ. কবি সর্বত্র প্রবেশের দ্বার পান না কেন তা বুঝিয়ে লেখ।
গ. রফিকুল বারির মধ্যে ‘ঐকতান’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “জীবনে জীবন যোগ করা/না হলে কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পসরা”- কবির এই উপলব্ধির আলোকে রফিকুল বারির নেতা হয়ে ওঠার বিষয়টি বিশ্লেষণ কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ কবি তাদের বাণী শুনাতে চেয়েছেন।

খ. অনুধাবন
✍ নিজের আভিজাত্যবোধে সমাজের উচ্চ মঞ্চে আসীন বলে কবি সর্বত্র প্রবেশের দ্বার পান না।

✍ আলোচ্য কবিতায় কবির বহুমাত্রিক চিন্তা-চেতনার প্রকাশ ঘটেছে। এখানে কবির মনে স্বদেশের অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের সাথে একাত্ম না হতে পারার অতৃপ্তি প্রকাশ পেয়েছে। কবি তাঁর নিজের আভিজাত্যবোধ ও জীবনযাত্রার বেড়ার কারণে সবার সাথে মিলতে পারেন নি। সব মানুষের সাথে তিনি অন্তর মেলাতে পারেন নি। বিপরীতক্রমে তাঁর অভিজাত ও নিয়ন্ত্রিত জীবনযাপনের কারণে নিম্নশ্রেণির মানুষেরা তাকে অতিরিক্ত শ্রদ্ধা ও ভয়ের চোখে দেখত, তাকে এড়িয়ে চলত। কবি তাই তাদের সাথে মিলতে পারেন নি। তাদের সাথে, তাদের জীবনযাপনের সাথে কবির ব্যবধান ঘোচেনি।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকে রফিকুল বারির মধ্যে ‘ঐকতান’ কবিতায় কবির অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের সাথে মিশতে না পারার আক্ষেপ এবং মাটির কাছাকাছি থাকা মানুষের কবিদের অবদানের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

✍ আমাদের এ পৃথিবী জাতি-ধর্ম-বর্ণ নির্বিশেষে সব মানুষেরই বাসভূমি। এ ধরণীর স্নেহচ্ছায়ায় এবং একই সূর্য ও চাঁদের আলোতে সবাই লালিত। অনুভূতির দিক থেকে সবাই এক ও অভিন্ন। অথচ মানুষের মধ্যে বৈষম্য ও অসাম্য বিরাজমান। এ বিষয়টি যাকে পীড়িত করে জগতে সেই মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগে এগিয়ে আসে।

✍ উদ্দীপকে রফিকুল বারির মানবকল্যাণে আত্মনিয়োগের ইচ্ছা এবং এর অন্তরায় দূর করার অদম্য চেষ্টার বিষয়টি তুলে ধরা হয়েছে। কেননা, তিনি শহরে থেকে সুস্থ রাজনীতি করতে চাইলেও গ্রামে যাওয়ার পর সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করেন। তিনি বুঝতে পারেন যে, দেশের সাধারণ মানুষের উন্নতি করতে না পারলে দেশের সার্বিক উন্নয়ন সম্ভব নয়। উদ্দীপক এবং ঐকতান উভয়েই সাধারণ্যের উন্নতির দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপকে কবির এ উপলব্ধির আলোকে রফিকুল বারির নেতা হয়ে ওঠার বিষয়টি একটি স্বাভাবিক বিষয়। কারণ সাধারণ মানুষের সাথে জীবনের যোগ ঘটাতে না পারলে কেউ নেতা হতে পারে না।

✍ বহু প্রাচীনকাল থেকেই শ্রেণিবৈষম্যের বিভেদ চলে আসছে। আর তথাকথিত আভিজাত্যগর্বিত সম্প্রদায়ই এ শ্রেণিবৈষম্যের। দরিদ্র ও অভাবী মানুষেরা তাদের ন্যায্য অধিকার ও মর্যাদা থেকে বঞ্চিত। এ অনাহূত, অবহেলিত, নিন্দিত মানুষের প্রতি সহানুভূতিশীল হওয়া দরকার। কারণ মানুষ হিসেবে সবাই একই রকম মর্যাদার অধিকারী।

✍ ‘ঐকতান’ কবিতায় কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তাঁর দীর্ঘ জীবন পরিক্রমণের শেষপ্রান্তে এসে পেছন ফিরে তাকিয়ে সমগ্র জীবনের সাহিত্য সাধনার সাফল্য ও ব্যর্থতার হিসাব খুঁজেছেন। তিনি এখানে অকপটে নিজের সীমাবদ্ধতা, ব্যর্থতা ও অপূর্ণতার কথা স্বীকার করেছেন। কবি তাঁর নিজের আভিজাত্যবোধ ও জীবনযাত্রার বেড়ার কারণে অন্ত্যজ শ্রেণির সাধারণ মানুষের সাথে মিশতে পারেন নি। কবিতার এ বিষয়টি উদ্দীপকের রফিকুল বারিকে পীড়া দিয়েছে। তিনি যখন শহরের মানুষের কাছে আদৃত হয়ে গ্রামের মানুষের কাছে যান, তখন তিনি নিজের দীনতা বুঝতে পারেন। তারপর গ্রামে সাধারণ মানুষের কল্যাণে আত্মনিয়োগ করে ধীরে ধীরে তাদের প্রিয় মানুষ হিসেবে নিজেকে সক্ষম করে তোলেন।

✍ উদ্দীপকের রফিকুল বারির মতো নেতা হয়ে ওঠার পেছনে অন্তরায় হয়ে উঠেছিল গ্রামের সাধারণ মানুষের কাছে গ্রহণযোগ্যতার দীনতা। তিনি তা দূর করার জন্য গ্রামের সাধারণ মানুষের জীবনযাত্রার সাথে মিশতে শুরু করেন, তাদের জন্য সমাজকল্যাণমূলক কাজ করতে থাকেন। তিনি সাধারণ মানুষের সুখ-দুঃখে নিজেকে সম্পৃক্ত করে, তাদের অন্তরের সাথে অন্তর মিশিয়ে তাদেরই একজন হয়ে ওঠেন, যা ‘ঐকতান’ কবিতার কবির পক্ষে সম্ভব ছিল না। কবি নিজে সেই বিষয় বুঝতে পেরেই আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

এইচএসসি(HSC)বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরসহ:বাংলা ১ম পত্র গাইড


ঐকতান
সৃজনশীল প্রশ্ন-০২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
শহীদুল আমিন একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি হৃদয়ে সৃজনশীল চিন্তা লালন করেন। হঠাৎ আজ তার মনে হলো, দেশের এক কোণে বসে থেকে সংকীর্ণ জীবনযাপন করে তিনি কোনোক্রমেই শান্তি পাচ্ছেন না। তার মন আজ বিশাল পৃথিবীর অজানাকে জানার, অদেখাকে দেখার জন্য ব্যাকুল হয়ে উঠেছে। যখন পৃথিবীর অজানা রহস্যকে জানতে, অদেখাকে দেখতে তিনি ব্যর্থ হন, তখন ঘরের এক কোণে পড়তে বসেন। আর বইয়ের কালো অক্ষরে তিনি অজানা সৌন্দর্যকে হৃদয়ে ধারণ করতে থাকেন।
ক. কবির স্বরসাধনায় কী রয়ে গেছে?
খ. “দেশে দেশে কত না নগর রাজধানী”- কবি কেন বলেছেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত শহীদুল আমিনের চরিত্রের মাঝে ‘ঐকতান’ কবিতার কোন দিকটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “ঐকতান” কবিতার সমগ্র ভাব উদ্দীপকের শহীদুল আমিনের চরিত্রের মাঝে পাওয়া যায় না।- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ কবির স্বরসাধনায় ফাঁক রয়ে গেছে।

খ. অনুধাবন
✍ পৃথিবীর বিশালত্ব তুলে ধরতে কবি প্রশ্নোল্লিখিত উক্তিটি করেছেন।

✍ মহাকালের সাপেক্ষে জীবন যেমন কিছু না, মহাবিশ্বের কাছে পৃথিবীর এককোণে বাস করাও তেমনি কিছু না। পৃথিবীতে অসংখ্য নগর ও রাজধানী আছে যেগুলো সম্পর্কে আমরা খুব কমই জানি। বিশাল এ পৃথিবীর এক কোণে বাস করে এত সব বিষয় অনুমেয় মাত্র হয়। তাই কবি শহর ও রাজধানীর ব্যাপকতা তুলে ধরতে চরণটি ব্যবহার করেছেন।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকে বর্ণিত শহীদুল আমিনের চরিত্রের মাঝে ‘ঐকতান’ কবিতার ‘অজানাকে জানা’র দিকটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

✍ মানুষের জানার আকাক্সক্ষা অপরিমেয়। সে সবসময় নতুন কিছুকে জানতে ও দেখতে চায়। এ জানা ও দেখার আগ্রহ থেকে মানুষের মনে বাসনা জাগে, এ বাসনা মানুষের চিরন্তন।

✍ উদ্দীপকের শহীদুল আমিন একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি সব অজানাকে জানতে এবং অদেখাকে দেখতে চান। শত চেষ্টাতেও তিনি পৃথিবীর অনিন্দ্য সৌন্দর্যকে দেখতে না পেয়ে ক্ষোভে বই পড়তে থাকেন। ফলে বইয়ের কালো অক্ষরের লেখা পড়ে অনেক কিছু জানতে পারেন। ‘ঐকতান’ কবিতাতেও পৃথিবীর সৌন্দর্য অবলোকন করতে ব্যর্থ হয়ে কবিকে কাতর হতে দেখা যায়। পৃথিবীতে অসংখ্য পাহাড়, নদী, শহর, বন্দর রয়েছে যেগুলো দেখতে না পারলে কবির জীবন যেন সার্থকতা লাভ করবে না। তাই তিনি ক্ষোভে বই পড়ে সেসব জানতে চেষ্টা করেন। এভাবে উদ্দীপকে বর্ণিত শহীদুল আমিন চরিত্রে ‘ঐকতান’ কবিতার অজানাকে জানার দিকটি স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “ঐকতান’ কবিতার সমগ্র ভাব উদ্দীপকের শহীদুল আমিনের চরিত্রের মাঝে পাওয়া যায় না”- মন্তব্যটি সঠিক।

✍ পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের সীমাহীন স্বপ্ন থাকে। যে স্বপ্নের মুক্তঝরা ডানায় চড়ে সে নতুন দিগন্ত উন্মোচন করতে পারবে, পরতে পারবে গলায় বিজয়মাল্য। কিন্তু চাইলেই মানুষের সব আকাক্সক্ষা পূরণ করা সম্ভব নয়।

✍ উদ্দীপকে জানা যায় যে, শহীদুল আমিন একজন স্কুলশিক্ষক। তিনি পৃথিবীর অজানা রহস্যকে জানতে সদা ব্যাকুল। পৃথিবীর এক কোণে থেকে অজানা রহস্যকে জানা বাস্তবে সম্ভব নয় বলে তিনি বই পড়েন। অন্যদিকে ‘ঐকতান’ কবিতায় শুধু অজানাকে জানার বিষয়টিই ফুটে ওঠেনি। কবিতায় আরও অনেক বিষয়, যেমন- পৃথিবীর প্রতি কবির মনোভাব, আকাক্সক্ষা পূরণে কোনো কবির আবির্ভাব, শূন্যতাবোধ, নিজের জীবনের ও কর্মের সীমাবদ্ধতা ইত্যাদি বর্ণিত হয়েছে। এছাড়া কবিতায় সম্মিলিত সুরের মূর্ছনার যে দিকটি আছে তা উদ্দীপকে নেই।

✍ উদ্দীপকে শহীদুল আমিন চরিত্রের মাঝে শুধু অজানাকে জানার দিকটিই জোরালোভাবে প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে ‘ঐকতান’ কবিতায় উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ছাড়া আরও বিচিত্র বিষয় প্রকাশিত হয়েছে। এজন্য ‘ঐকতান’ কবিতার সমগ্র ভাব উদ্দীপকের শহীদুল আমিন চরিত্রের মাঝে পাওয়া যায় না। তাই উল্লিখিত মন্তব্যটি যৌক্তিক।


ঐকতান
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
সাইফুদ্দীন একজন কৃষক। সে জানে না কীভাবে রাষ্ট্র পরিচালিত হয়, কীভাবে দেশকে নিয়ে ভাবতে হয়, কীভাবে ব্যক্তিত্ববোধ বাড়ানো যায়। সে শুধু জানে বেঁচে থাকতে হলে তাকে দুবেলা দু’মুঠো ভাত খেতে হবে। তাই সে পাথরের মতো শক্ত মাটির বুকে লাঙল চালায়। সেখানে ফসল ফলাতে প্রাণান্ত চেষ্টা করে। সাইফুদ্দীনের মতো অসংখ্য মানুষের ঘামেই উন্নতির দিকে এগিয়ে যায় দেশ।
ক. কীসের দীনতা কবির মনে?
খ. “চাষি ক্ষেতে চালাইছে হাল।” উক্তিটি দিয়ে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘ঐকতান’ কবিতার কোন দিকটিকে নির্দেশ করেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘ঐকতান’ কবিতার সমগ্র ভাব ফুটে ওঠেনি।”- মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ কবির মনে জ্ঞানের দীনতা।

খ. অনুধাবন
✍ প্রশ্নোক্ত উক্তিটি দিয়ে কবি চাষির কঠিন মাটি কষে চাষ করার দিকটিকে বুঝিয়েছেন।

✍ চাষিরা গ্রামের নিতান্তই সাধারণ মানুষ। তারা শুধু দু'বেলা দু’মুঠো ভাত খেয়ে বেঁচে থাকার জন্য নিরন্তর পরিশ্রম করে। তাদের পরিশ্রমের উপযুক্ত পারিশ্রমিকও তারা পায় না। এ বিষয়টিকে বর্ণনা করতেই কবি উল্লিখিত চরণটি ব্যবহার করেছেন।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘ঐকতান’ কবিতার খেটে খাওয়া মানুষের দিকটিকে ফুটিয়ে তুলেছে।

✍ সমাজে একশ্রেণির মানুষ আছে, যারা শুধু বেঁচে থাকার জন্য অক্লান্ত পরিশ্রম করে। অনেক সময় তাদের স্বাভাবিক জীবনযাপনেও বিঘœ ঘটে। ফলে এ শ্রেণির মানুষ নিজেদের আরও বেশি অসহায় ভাবতে থাকে।

✍ উদ্দীপকের সাইফুদ্দীন একজন কৃষক। সে দুবেলা দুমুঠো ভাতের আশায় নিরন্তর নিরলস পরিশ্রম করে। তার মতো অসংখ্য মানুষের পরিশ্রমেই যে দেশ এগিয়ে যায় তা সে জানে না। একইভাবে ‘ঐকতান’ কবিতাটিতেও চাষি ও তাঁতির বিষয়টি জানা যায়। তারা এই নিরন্তর পরিশ্রম করে শুধু খেয়ে-পরে বেঁচে থাকার জন্য। তারা রাষ্ট্রচিন্তা করতে পারে না। অথচ তাদের পরিশ্রমেই দেশ এগিয়ে যায়, এটি তাদের জানার বাইরে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘ঐকতান’ কবিতার খেটে খাওয়া মানুষের দিকটিকে ফুটিয়ে তুলেছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘ঐকতান’ কবিতার সমগ্র ভাব উদ্দীপকে ফুটে ওঠেনি।”-মন্তব্যটি সঠিক।

✍ অজানাকে জানার বাসনা মানুষের সহজাত ধর্ম, এটি চিরদিন থাকবে। এর মাঝে আনন্দ আছে, শিক্ষণীয় বিষয় আছে। কিন্তু নানা সীমাবদ্ধতার দরুন চাইলেও অনেক কিছু করা যায় না। ফলে সবসময় শূন্যতা বিরাজ করে মানুষের মাঝে।

✍ উদ্দীপকের সাইফুদ্দীন কৃষি কাজ করে জীবনযাপন করে। সে চায় দুবেলা দুমুঠো ভাত। তাদের নিরলস শ্রমেই এগিয়ে যায় একটি রাষ্ট্র- অথচ তা তারা জানে না। ‘ঐকতান’ কবিতাটিতে খেটে খাওয়া মানুষের চিত্র পাওয়া যায়। এ কবিতায় আরও বর্ণিত হয়েছে জীবনের সীমাবদ্ধতা, অজানা রহস্য, শূন্যতাবোধ। এছাড়া কবিতায় ফুটে উঠেছে বিভিন্ন সুরের মূর্ছনা।

✍ উদ্দীপকের সাইফুদ্দীনকে একজন খেটে খাওয়া মানুষ হিসেবে দেখা যায়। পক্ষান্তরে বিচিত্র বিষয় সংমিশ্রণে ‘ঐকতান’ কবিতাটিকে অনন্যসাধারণ রূপদান করা হয়েছে।


ঐকতান
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
আমিনুল ইসলাম একজন ডাক্তার। তিনি সবসময় চেষ্টা করেন পরের মঙ্গল করতে, বিনা খরচে সমাজে চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করতে। কিন্তু বিভিন্ন সীমাবদ্ধতার কারণে তাঁর পক্ষে সমাজের মানুষদের ভালো চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করা সম্ভব হয় নি। তাই তিনি এমন একজন ডাক্তারের পথ চেয়ে আছেন যিনি নিরীহ, বঞ্চিত, দরিদ্র, অসহায় ও বিকলাঙ্গ মানুষের সেবা নিশ্চিত করে একটি উত্তম সমাজ উপহার দিবেন।
ক. কবি কার বাণীর জন্য কান পেতে আছেন?
খ. “নিত্য আমি থাকি তার খোঁজে”-কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের আমিনুল ইসলামের মাঝে ‘ঐকতান’ কবিতার কোন দিকটি প্রকাশ পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “উদ্দীপকে ‘ঐকতান’ কবিতার আংশিক ভাব প্রতিফলিত হয়েছে।”-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ কবি মাটির কাছাকাছি মানুষের বাণীর জন্য কান পেতে আছেন।

খ. অনুধাবন
✍ কবির অসমাপ্ত দায়িত্ব সমাপ্ত করতে কোনো এক কবির আকাক্সক্ষায় চরণটি ব্যবহার করা হয়েছে।

✍ কবি একজন কবির আশায় পথ চেয়ে আছেন, যিনি দেশ ও মাটির টানে ছুটে আসবেন। তিনি এসে কবির অসমাপ্ত দায়িত্ব সমাপ্ত করবেন। এই প্রত্যাশা তুলে ধরতে প্রশ্নোক্ত চরণটি কবি ব্যবহার করেছেন।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের আমিনুল ইসলামের মাঝে ‘ঐকতান’ কবিতার আকাক্সক্ষার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

✍ দেশ, মাটি ও মানুষ একই চেতনাই লালিত। দেশ ও মাটির কল্যাণে যে মানুষটির পদচারণা শুরু হয় সেই হয় দেশপ্রেমিকের মূর্তমান চিত্র। দেশ, মাটি আর মানুষের জন্য কাজ করার অভিপ্রায় তৈরি করা উচিত।

✍ উদ্দীপকে জানা যায়, আমিনুল ইসলাম একজন ডাক্তার। তিনি সকলের কল্যাণ ও সেবা নিশ্চিত করতে চান। তবে যখন পুরো দায়িত্ব সুন্দরভাবে সমাপ্ত করতে পারেন নি, তখনই তিনি এমন একজন ডাক্তারের প্রত্যাশী হয়ে বসে আছেন, যিনি সমাজের মানুষের উত্তম চিকিৎসাসেবা নিশ্চিত করবেন। ‘ঐকতান’ কবিতার কবি অনুধাবন করেন যে, তাঁর পক্ষে পুরো দায়িত্ব পালন করা সম্ভব হয়নি। তিনি এমন একজন কবির প্রত্যাশায় বসে থাকেন যিনি দেশ, মাটি আর মানুষের কল্যাণে লিখবেন। উদ্দীপকের আমিনুল ইসলামের মাঝে ‘ঐকতান’ কবিতার আকাক্সক্ষার দিকটি প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপকে ‘ঐকতান’ কবিতার আংশিক ভাব প্রতিফলিত হয়েছে। মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ পৃথিবী এক রহস্যপুরী। মমতাময়ী এ পৃথিবীতে এমন অনেক নয়নাভিরাম দর্শনীয় স্থান রয়েছে যা দেখলে জীবনে মাহাত্ম্য বেড়ে যায়। সবার নিমিত্তে চিন্তা করার সুন্দর মন গড়ে ওঠে।

✍ ‘ঐকতান’ কবিতার কবিকে অন্য কবির প্রত্যাশী হয়ে থাকতে দেখা যায়, যিনি মাটি ও মানুষের সহযোগী হবেন। এ কবিতাটিতে বর্ণিত হয়েছে শূন্যতাবোধ, সীমাবদ্ধতা, মাতৃভূমি চেতনা ও প্রকৃতি চেতনা। পাশাপাশি কবিতাটিতে সুরের অপূর্ণতার দিকটিও ফুটে উঠেছে। পক্ষান্তরে উদ্দীপকে ডাক্তার আমিনুল ইসলামের আকাক্সক্ষার দিকটি বর্ণিত হয়েছে। তিনি এমন একজন ডাক্তারের আকাক্সক্ষা করেছেন, যিনি তার অসমাপ্ত দায়িত্ব সমাপ্ত করতে পারবেন।

✍ উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়ে শুধু ‘আকাক্সক্ষার’ দিকটি প্রকাশিত হয়েছে। অন্যদিকে ‘ঐকতান’ কবিতাটিতে বিচিত্র ভাবের সমাহার আছে। ফলে নির্দ্বিধায় বলা যায় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয় ‘ঐকতান’ কবিতার আংশিক ভাব ধারণ করে।


ঐকতান
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
বিশিষ্ট লেখক সাজেদ করিম নিরন্তর পৃথিবীর নানা দেশ ভ্রমণ করে বেড়ান। বিচিত্র দেশ ও বৈচিত্র্যময় মানুষকে জানার আগ্রহে এ পর্যন্ত তিনি প্রায় সাতাশটি দেশ ভ্রমণ করেছেন। তবুও তিনি অতৃপ্ত।
ক. নগর রাজধানী কোথায়?
খ. কবির অগোচরে কী রয়ে গেছে? বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের সাজেদ করিম ও ‘ঐকতান’ কবিতার কবির দৃষ্টিভঙ্গির বৈসাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ লাইনের আলোকে ‘ঐকতান’ কবিতার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ নগর রাজধানী দেশে দেশে।

খ. অনুধাবন
✍ জগতের বিচিত্র সৌন্দর্য কবির অগোচরে রয়ে গেছে।

✍ কবির অগোচরে অগণিত নগর রাজধানী, মানুষের বহু কীর্তি, বহু নদী-গিরি সিন্ধু-মরু, বহু অজানা জীব ও অপরিচিত তরু রয়ে গেছে। কারণ এই পৃথিবী যেমন বিশাল, তেমনি বৈচিত্র্যময়। একজন মানুষের অতি ক্ষুদ্র জীবনে সব কিছু দেখা সম্ভব নয়।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের বিশিষ্ট লেখক সাজেদ করিম এবং ‘ঐকতান’ কবিতার কবির মধ্যে কিছু বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

✍ সাজেদ করিম ও কবি দুজনই বিচিত্র দেশ ও বৈচিত্র্যপূর্ণ জনজীবনকে জানতে আগ্রহী। অবশ্য কবির এই অবস্থান তাঁর কাছেও সন্তোষজনক ছিল না। তিনি এটিকে বলেছেন ‘ভিক্ষালব্ধ ধন’। সাজেদ করিম সাতাশটি দেশ ভ্রমণ করেও অতৃপ্ত। কারণ তিনি জানেন আরও অগণিত দেশ ও মানুষকে তাঁর জানা হয়নি।

✍ সুদূরকে কাছ থেকে জানার আগ্রহে সাজেদ করিম পৃথিবীর নানা দেশ ভ্রমণ করে বেড়ান। ভ্রমণের মধ্য দিয়েই মানুষকে তিনি কাছে টানতে চান, খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে দেখতে চান পৃথিবীর নানাপ্রান্ত। অন্যদিকে কবি ভ্রমণ নয়; বরং ভ্রমণ বৃত্তান্ত পড়েন। অধিক জ্ঞানের মধ্য দিয়ে তিনি জীবন জগৎ ও পারিপার্শ্বকে জানতে চান, জানতে চান পৃথিবীর জনজীবন কোলাহলকেও। এখানেই তাঁদের বৈসাদৃশ্য।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপকের শেষ লাইনে ‘ঐকতান’ কবিতার তাৎপর্য নিহিত। ‘ঐকতান’ কবিতায় ব্যাপ্ত হয়েছে একটি অতৃপ্তির সুর। জীবন-জগৎ ও পারিপার্শ্বিককে নিবিড়ভাবে জানতে না পারার অতৃপ্তি কিংবা বৈচিত্র্যময় জনজীবনের সঙ্গে একাত্ম হতে না পারার আক্ষেপ কবিতায় স্পষ্ট।

✍ উদ্দীপকের সাজেদ করিম অজানাকে জানার আগ্রহে পৃথিবীর নানান দেশ ভ্রমণ করেছেন। এর মধ্য দিয়ে তিনি হয়তো অনেক দেশ, দর্শনীয় স্থান ও মানুষকে জানার ও দেখার সুযোগ পেয়েছেন তাতে কোনো সন্দেহ নেই। কিন্তু বাকি রয়ে গেছে বহু দেশ ও বহু মানুষ। সেখানেও আছে অফুরন্ত কর্মকোলাহল, আছে জীবনের নিবিড় উত্তাপ। যা হয়তো তাঁর পক্ষে একজীবনে জানা ও বুঝা সম্ভব হবে না।

এই বোধ ও সচেতনতাই তাঁর ভেতরে অতৃপ্তির জন্ম দিয়েছে। ‘ঐকতান’ কবিতার কবিও এই বিষয়ে অনেক বেশি সচেতন। পৃথিবীর বিশালতা ও জীবনের সীমাবদ্ধতা সম্পর্কে সচেতনতা তাঁর মধ্যে সৃষ্টি করে অতৃপ্তির অনিশ্চয়তাবোধ।

✍ তাই বলা যায়, উদ্দীপকের শেষ লাইনে ‘ঐকতান’ কবিতার অন্তর্নিহিত তাৎপর্য ধরা পড়েছে।


ঐকতান
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
হরিশংকর জলদাস বর্তমান সময়ের একজন উলে­খযোগ্য কথাসাহিত্যিক। অদ্বৈত মল­বর্মণের উত্তরসূরি এই লেখক উঠে এসেছেন জেলে সম্প্রদায় থেকে। ফলে নদী-তীরবর্তী জেলেদের নিদারুণ জীবন বাস্তবতা তিনি প্রত্যক্ষ করেছেন একেবারে ভেতর থেকে। এই জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতাই সঞ্চারিত হয়েছে তাঁর সাহিত্যকর্মে। এজন্য তাঁর সৃষ্টিকর্ম কৃত্রিমতায় আড়ষ্ট না হয়ে জীবন্ত হয়ে উঠেছে।
ক. জ্ঞানের দীনতা কবি কীসের দ্বারা পূর্ণ করেন?
খ. “এই স্বরসাধনায় পৌঁছিল না বহুতর ডাক” বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের হরিশংকর জলদাস ও ‘ঐকতান’ কবিতার কবির অবস্থানগত বৈসাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. “কৃত্রিম পণ্যে ব্যর্থ হয় গানের পসরা”- উদ্দীপক ও ‘ঐকতান’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ জ্ঞানের দীনতা কবি ভিক্ষালব্ধ ধন দ্বারা পূর্ণ করেন।

খ. অনুধাবন
✍ “এই স্বরসাধনায় পৌঁছিল না বহুতর ডাক” পঙ্ক্তিটি দিয়ে কবির সাহিত্যসাধনার সীমাবদ্ধতার প্রসঙ্গটি তুলে ধরা হয়েছে।

✍ তিনি পৃথিবীর কবি। পৃথিবীর সমূহ কণ্ঠস্বর তার স্বরসাধনায় স্থান পাওয়া উচিত ছিল। কিন্তু বিভিন্ন কারণে তা হয় নি। এই আক্ষেপই আলোচ্য পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে প্রকাশিত হয়েছে।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের হরিশংকর জলদাস ও কবির অবস্থানগত বৈসাদৃশ্য রয়েছে।

✍ হরিশংকর উঠে এসেছেন প্রান্তিক জনস্রোত থেকে। তাঁর পূর্বপুরুষ ছিল জেলে সম্প্রদায়ভুক্ত। তিনি নিজেও ছোটবেলায় বাবার সঙ্গে মাছ ধরেছেন। নদী-তীরবর্তী মানুষের নির্মম জীবন বাস্তবতার তিনি নিজেও শিকার এবং প্রত্যক্ষ সাক্ষী। এই অভিজ্ঞতাই তাঁর সাহিত্যকর্মে সঞ্চারিত হয়েছে। ফলে তাঁর সাহিত্যকর্ম হয়ে উঠেছে জীবন্ত। ‘ঐকতান’ কবিতার কবি শ্রেণিগত অবস্থানের কারণে সমাজের এসব অপাঙ্ক্তেয় মানুষের সঙ্গে মেশার সুযোগ পাননি। ফলে তিনি পাঠলব্ধ অভিজ্ঞতা থেকেই এদের জানার চেষ্টা করেছেন। তাই এই বৈচিত্র্যপূর্ণ প্রান্তিক জীবনকে তিনি নিখুঁতভাবে আঁকতে পারেন নি।

✍ অন্যদিকে, হরিশংকর জলদাস অত্যন্ত ঘনিষ্ঠভাবে প্রান্তিক জীবনলগ্ন হওয়ায় তাঁর সাহিত্যকর্ম এই জীবনের স্পন্দনে ঋদ্ধ। এদিক থেকে হরিশংকর জলদাস ও কবির বৈসাদৃশ্য লক্ষ করার মতো।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ কৃত্রিম পণ্যে গানের পসরা ব্যর্থ হয় ‘ঐকতান’ কবিতায় কবি এ বিষয়ে সচেতন। কারণ জীবনে জীবন যোগ না করলে সাহিত্যের ফসল ফলে না।

✍ উদ্দীপকে আমরা দেখি, হরিশংকর জলদাস বাস্তব অভিজ্ঞতাকেই সাহিত্যকর্মে সঞ্চারিত করেন। তিনি যেহেতু জেলে সম্প্রদায়ভুক্ত, সেহেতু জেলেদের জীবন সংগ্রাম, অস্তিত্বের লড়াই ও শোষণের চিত্র তাঁর হাতে জীবন্তরূপে চিত্রিত হয়।

✍ কবি সমাজের উঁচু শ্রেণিভুক্ত হওয়ায় ব্রাত্যজীবনকে গভীরভাবে জানার সুযোগ পাননি। ফলে এদের জীবনচিত্রকে তিনি তুলে ধরতে পারেননি। কিন্তু তিনি তার অভিজ্ঞতায় মধ্যবিত্ত ও উচ্চবিত্তের জীবনকে সফলভাবে তুলে ধরতে পেরেছেন। বাস্তব জীবনলব্ধ অভিজ্ঞতার কারণেই সেটি সম্ভব হয়েছে। সাহিত্যের ক্ষেত্রে কৃত্রিমতা যেহেতু কোনোভাবেই গ্রহণযোগ্য নয়, সেহেতু নিবিড় জীবন অভিজ্ঞতার প্রসঙ্গটি সবসময় গুরুত্বপূর্ণ।

✍ পরিশেষে বলা যায়, যে জীবনের সঙ্গে কোনো নিবিড় সম্পর্ক নেই, সে জীবনকেন্দ্রিক সাহিত্য নিশ্চিতভাবেই ব্যর্থ হবে। উদ্দীপক ও ‘ঐকতান’ কবিতা থেকে এটি সহজেই প্রতিভাত।


ঐকতান
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র শিহাবের বাসার খুব কাছেই বস্তি এলাকা। বস্তির নোংরা ও অশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের সে প্রতিদিন বিকেলে অক্ষরজ্ঞান শিক্ষা দেয়। শিহাবের ইচ্ছা, এই অবহেলিত ও বঞ্চিত মানুষগুলো যেন নিজেদের বঞ্চনার কথা বলার ভাষা খুঁজে পায়।
ক. কবি কাদের বাণী শুনতে চেয়েছেন?
খ. “মর্মের বেদনা যত করিয়া উদ্ধার”-কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের শিহাব ও ‘ঐকতান’ কবিতার কবির মনোভাবের মিল কোথায়? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. “কাছে থেকে দূরে যারা তাহাদের বাণী যেন শুনি”-উদ্দীপক ও ‘ঐকতান’ কবিতার আলোকে পঙ্ক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ কাছে থেকে দূরে যারা কবি তাদের বাণী শুনতে চেয়েছেন।

খ. অনুধাবন
✍ “মর্মের বেদনা যত করিয়া উদ্ধার” পঙ্ক্তিটির মধ্য দিয়ে মূলত অখ্যাতজনের ও নির্বাক মনের অন্তর্নিহিত বেদনাকে ভাষা দেয়ার কথা বলা হয়েছে।

✍ পৃথিবীতে এমন অনেক অবহেলিত ও নিপীড়িত জনতা আছে, যাদের নিজেদের কোনো কণ্ঠস্বর নেই। কিন্তু তাদেরও আছে বলার মতো অনেক কষ্ট ও যন্ত্রণা। এই অনুভূতি রূপায়ণের জন্য একজন কবির আগমন প্রত্যাশা করেন তিনি।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের দ্বাদশ শ্রেণির ছাত্র শিহাব ও কবির মধ্যে যথেষ্ট মিল লক্ষ করা যায়।

✍ শিহাব বস্তির অসহায়, নোংরা, অশিক্ষিত ছেলেমেয়েদের শিক্ষিত করে তুলতে চায়। কারণ সে জানে এদেরও বলার মতো অনেক কথা আছে; আছে অনেক সুপ্ত বেদনা। কিন্তু শিক্ষিত না হলে ওদের এই অনুভূতি অব্যক্তই থেকে যাবে। অন্য কারো পক্ষে এদের অনুভবের কাছাকাছি পৌঁছানো প্রায় অসম্ভব। তাই সে এদের মুখে ভাষা দেয়ার কাজ করে যায়।

✍ উদ্দীপকের শিহাবের মতো ‘ঐকতান’ কবিতার কবিও সমাজের অবহেলিত ও নিপীড়িত মানুষের কণ্ঠস্বর শুনতে চেয়েছেন। তিনি নিজে যেহেতু এদের মনোগহনে পৌঁছাতে অক্ষম, তাই তিনি এমন একজন কবির আগমন প্রত্যাশা করেছেন যিনি এদেরই স্বগোত্রীয়। তাঁর পক্ষেই এদের অব্যক্ত মনের অনুভব রূপায়ণ সম্ভব। কবি যা প্রত্যাশা করেছেন তা বাস্তবায়নের লক্ষ্যেই শিহাব এগিয়ে যায়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ কবির এই অনুভূতির সঙ্গে একাত্ম হয়ে শিহাব নিজ দায়িত্ব সম্পর্কে তৎপর হয়ে ওঠে।

✍ শিহাবের বাসার খুব কাছে বস্তি এলাকা। শিহাব শিক্ষিত ছেলে। কিন্তু তার পাশেই বস্তির ছেলেরা নোংরা ও অশিক্ষিত, যা তাকে পীড়া দিয়েছে। ফলে এদের শিক্ষার ভার সে নিজের কাঁধে তুলে নিয়েছে। কারণ, সে জানে জগতের প্রতিটি মানুষেরই মনোগহনে কিছু গুপ্ত বাণী থাকে। শিক্ষা ও চর্চার দ্বারাই কেবল তার সঠিক রূপ প্রকাশ করা সম্ভব।

✍ অশিক্ষিত মানুষ তার অধিকার ও প্রাপ্যের দাবি সঠিকভাবে জানাতে পারে না। তাই তার কথা শুনতে হলে তার মধ্যে প্রথমে জ্বালাতে হবে শিক্ষার আলো। তাহলেই এদের মধ্য থেকেই বেরিয়ে আসবে এমন একজন, যিনি তাঁর স্বজাতির বেদনার ভাষ্যকার হবেন।

✍ ‘ঐকতান’র কবিও শুনতে চান সেই অব্যক্ত ভাষ্য, নির্বাক মনের নিদারুণ যন্ত্রণার কথা। না হলে পৃথিবীর একটি বড় বাস্তবতা তাঁর কাছে অধরাই থেকে যাবে। শিহাবও এ সম্পর্কে সচেতন হয়ে কাজ করে যায়।


ঐকতান
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
বাদশাহ আকবরের সভায় ‘নবরত্ন’ খ্যাত নয়জন ব্যক্তি ছিলেন। এঁদের কেউ কবি, কেউ ইতিহাসবিদ, কেউ বা হাস্যরসিক। বৈচিত্র্যময় জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটানোর জন্য বাদশাহ এঁদের রাজসভায় স্থান দিয়েছিলেন।
ক. কবি কী কুড়িয়ে আনেন?
খ. “নানা কবি ঢালে গান নানা দিক হতে”- কথাটি বুঝিয়ে লেখ।
গ. উদ্দীপকের বাদশাহ আকবর ও ‘ঐকতান’ কবিতার কবির মনোভাবের সাদৃশ্য চিহ্নিত কর।
ঘ. “সঙ্গ পাই সবাকার, লাভ করি আনন্দের ভাগ”-উদ্দীপক ও ‘ঐকতান’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ কবি চিত্রময়ী বর্ণনার বাণী কুড়িয়ে আনেন।

খ. অনুধাবন
✍ বৈচিত্র্যময় জীবনের বিচিত্র অনুভব নানা কবির নানা গানে উদ্ভাসিত হয়ে ওঠে।

✍ নানা কবি স্বকীয় জীবনাভিজ্ঞতায় ঋদ্ধ হয়ে কবিতা রচনা করেন। তাই প্রত্যেকের কবিতাই স্বতন্ত্র ভাব ও ভাষায় সমৃদ্ধ। এসব কবিতা পাঠের মধ্য দিয়ে অজানা ও অদেখা মানুষের হৃদয়ের স্পন্দন কিছুটা হলেও টের পাওয়া যায়।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের বাদশাহ আকবর ও ‘ঐকতান’ কবিতায় কবির মনোভাবের সাদৃশ্য দৃশ্যমান।

✍ বাদশাহ আকবর তাঁর রাজসভায় নয়জন জ্ঞানী ব্যক্তিকে স্থান দিয়েছিলেন, যাদের ‘নবরত্ন’ হিসেবে আখ্যায়িত করা হয়। এদের কেউ কবি, কেউ ইতিহাসবিদ, কেউ বা হাস্যরসিক। অর্থাৎ, বিচিত্র জ্ঞানের তৃষ্ণা মেটানোর আকাক্সক্ষা থেকেই মূলত বাদশাহ আকবরের এই প্রচেষ্টা, তা সহজেই অনুমেয় হয়।

✍ বাদশাহ আকবরের পক্ষে একই সঙ্গে কবি, ইতিহাসবিদ কিংবা হাস্যরসিক হওয়া সম্ভব নয়। কিন্তু রাজসভায় বিচিত্র জ্ঞানের অধিকারী এসব ব্যক্তিকে স্থান দিয়ে তিনি নিজের অপূর্ণতাকে পূর্ণ করার চেষ্টা করেন। ‘ঐকতান’ কবিতার কবির পক্ষেও জগতের সব দেশ কিংবা সব মানুষকে জানা অসম্ভব। তাই তিনি একদিকে যেমন ভ্রমণবৃত্তান্ত পড়েন, অন্যদিকে মাটির কাছাকাছি অবস্থান করেন এবং এমন কবি অর্থাৎ অন্ত্যজ শ্রেণির মানুষের কবির আগমন প্রত্যাশা করেছেন। যার কাছ থেকে তিনি সেই অজ্ঞাত জীবনের অনুভবকে উপলব্ধি করতে পারবেন। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের বাদশাহ আকবর ও কবির মনোভাব সাদৃশ্যপূর্ণ।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপকের বাদশাহ আকবর ‘নবরত্ন’ খ্যাত নয়জন ব্যক্তিকে তাঁর রাজসভায় স্থান দিয়েছিলেন, তাঁদের সঙ্গ তাঁর অতৃপ্ত মনের বাসনাকে তৃপ্ত করেছে এবং জ্ঞানের বিচিত্র শাখা, বৈচিত্র্যময় পরিবেশ থেকে উঠে আসা এসব ব্যক্তির সৃজনশীল কর্ম তাঁর সীমাবদ্ধতাকে অনেকটাই লাঘব করেছে।

✍ ‘ঐকতান’ কবিতার কবি নানা কবির নানা গান শুনে তার অচরিতার্থ বাসনাকে চরিতার্থ করেন। কারণ তাঁর পক্ষে এককভাবে জগতে সমস্ত মানুষ, পারিপার্শ্বের সমস্ত কোলাহলকে ধারণ করা সম্ভব নয়। তাই তিনি নির্ভর করেন বিচিত্র পরিবেশ থেকে আসা বিচিত্র বাণীর কবির ওপর, যা তাঁর আনন্দের ভোগে উৎসাহ জোগায়। এদের সঙ্গও তাঁকে অনিঃশেষ আনন্দ দেয়।

✍ উদ্দীপকের বাদশাহ আকবরও তাঁর নবরতেœর সান্নিধ্যে আনন্দিত ও ঋদ্ধ। বিচিত্র প্রতিভার কবি, ইতিহাসবিদ ও হাস্যরসিকের সঙ্গ তাঁর জ্ঞানপিপাসু ও মানবসঙ্গলিপ্সু অভিলাষকে বাস্তব রূপ দিয়েছে।

✍ সুতরাং বলা যায়, এই যে বৈচিত্র্যময় প্রতিভার সঙ্গলাভের বাসনা ও এঁদের অভিজ্ঞতা বিনিময়ের যে আনন্দ তা উদ্দীপক ও ‘ঐকতান’ কবিতায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।


ঐকতান
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৯
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
রায়হান সাহেব একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। কিন্তু আর্থিক দুরবস্থার কারণে তিনি কাক্সিক্ষত বহু স্থানে যেতে পারেননি। ফলে তিনি ভ্রমণকাহিনি পড়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা করেন।
ক. রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম কী?
খ. “সেই ক্ষোভে পড়ি গ্রন্থ ভ্রমণবৃত্তান্ত আছে যাহে”- কবি কথাটি কেন বলেছেন?
গ. উদ্দীপকে ‘ঐকতান’ কবিতার বক্তব্যের আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে- ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের শেষ লাইনটি ‘ঐকতান’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রথম প্রকাশিত কাব্যগ্রন্থের নাম ‘বনফুল’।

খ. অনুধাবন
✍ বই পড়ে দেশ ভ্রমণের অপূর্ণতা দূর করার জন্য কবি প্রশ্নোক্ত উক্তিটি করেছেন।

✍ অজানাকে জানার গভীর আগ্রহ থেকে কবি ভ্রমণবৃত্তান্ত পড়েন অতি উৎসাহে। কারণ, কবির পক্ষে জগতের সমস্ত দেশভ্রমণ সম্ভবপর নয়। কিন্তু এসব দেশ ও জনজীবনকে জানার তৃষ্ণা তাঁর অফুরন্ত। তাই ভ্রমণকাহিনি পড়ে তিনি সেই তৃষ্ণা নিবারণ করেন।

গ. প্রয়োগ
✍ বিশ্বভ্রমণের ইচ্ছা থাকা সত্তে¡ও তা না পারার খেদের দিক থেকে উদ্দীপকের রায়হান সাহেবের সাথে ‘ঐকতান’ কবিতার কবির মিল রয়েছে।

✍ উদ্দীপকে ‘ঐকতান’ কবিতার বক্তব্যের আংশিক প্রতিফলন ঘটেছে। কারণ, ঐকতান কবিতায় কবি শুধু ভ্রমণবৃত্তান্ত পড়েই ক্ষান্ত হন না, কল্পনার অনুমানে জগতের ঐকতান অনুভবের চেষ্টা করেন। পাশাপাশি তিনি সেই মাটি নিকটবর্তী কবির আগমন প্রত্যাশী, যিনি তাঁকে সাধারণ মানুষের জীবনালেখ্য শোনাবেন; জানাবেন তাদের অকৃত্রিম হৃদয় বেদনা।

✍ উদ্দীপকে আমরা দেখি রায়হান সাহেব একজন ভ্রমণপিপাসু মানুষ। তিনি পৃথিবীর নানা দেশ ও মানুষকে জানতে আগ্রহী কিন্তু আর্থিক অসচ্ছলতার কারণে খুব বেশি দেশ তিনি ভ্রমণ করতে পারেননি। এজন্য তিনি ভ্রমণকাহিনি পড়ে সেই অপূর্ণতা পূরণের চেষ্টা করেন। এদিক দিয়ে কবির মনোভাবের সঙ্গে তাঁর মিল রয়েছে। কবিও পৃথিবীর সমস্ত দেশ ভ্রমণে অক্ষম। তাই তিনিও ভ্রমণবৃত্তান্তের ওপর নির্ভর করেন। এর মধ্য দিয়ে বিশ্বজনজীবনের অকৃত্রিম উপলব্ধি সম্ভব না হলেও পাঠজনিত অভিজ্ঞতা লাভ সম্ভব। এদিক দিয়ে উদ্দীপকের রায়হান সাহেব ও ‘ঐকতান’ কবিতার কবির মনোভঙ্গির সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপকের রায়হান সাহেব ভ্রমণকাহিনি পড়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা করেন। ‘ঐকতান’ কবিতার কবিও ভ্রমণবৃত্তান্ত পড়ে অদেখাকে দেখার ও অজানাকে জানার চেষ্টা করেন। রায়হান সাহেবের জীবন বাস্তবতা ও কবির অবস্থান এদিক থেকে প্রায় নিকটবর্তী।

✍ বিশ্বের যাবতীয় সৌন্দর্য একজনের পক্ষে অবলোকন করা সম্ভব নয়। তাই এক্ষেত্রে পাঠের মাধ্যমে মনের অপূর্ণ স্বাদ মেটানো সম্ভব।

✍ মহাবিশ্বের বিশাল রহস্য, বৈচিত্র্যময় জীবনের কোলাহল কবি একান্তভাবে উপলব্ধি করতে চান। দেশে দেশে কত নগর রাজধানী, মানুষের অবিনশ্বর কীর্তি, নদী, গিরি, সিন্ধু, মরু তাঁর অগোচরে রয়ে গেল। যেগুলো একজীবনে তিনি দেখার সুযোগ পাবেন না। তাই বলে কবি থেমে যান না। ভ্রমণবৃত্তান্ত পড়ে তিনি তার কিছুটা হলেও পূরণ করতে চান। রায়হান সাহেবও তার অক্ষমতার কথা জানেন। কিন্তু তিনিও হার মানতে নারাজ। ভ্রমণকাহিনি পড়ে দুধের স্বাদ ঘোলে মেটানোর চেষ্টা করেন। এদিক থেকে বলা যায়, ‘ঐকতান’ কবিতার কবিও দুধের স্বাদ ঘোলে মেটান। কারণ তার পক্ষেও সবদেশ ভ্রমণ করা অসম্ভব। রায়হান সাহেব ও কবি এদিক দিয়ে একই বিন্দুতে এসে দাঁড়ান।

✍ সুতরাং উদ্দীপকের শেষ লাইনে ‘ঐকতান’ কবিতার পূর্ণ ছায়াপাত ঘটেছে।


ঐকতান
সৃজনশীল প্রশ্ন-১০
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
‘বহু দিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে
বহু ব্যয় করি বহু দেশ ঘুরে
দেখিতে গিয়োছ পর্বতমালা
দেখিতে গিয়েছি সিন্ধু।
দেখা হয় নাই চক্ষু মেলিয়া
ঘর হতে শুধু দুই পা ফেলিয়া
একটি ধানের শিষের উপরে
একটি শিশিরবিন্দু।’
ক. কত খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন?
খ. “বিশাল বিশ্বের আয়োজন” বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. উদ্দীপক ও ‘ঐকতান’ কবিতার ভাবগত বৈসাদৃশ্য চিহ্নিত কর।
ঘ. “উদ্দীপক ও ‘ঐকতান’ কবিতার মূলভাবে আপাত বৈপরীত্য থাকলেও দুটোতেই প্রাধান্য পেয়েছে দূর ও নিকটকে জানা”-উক্তিটি বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ ১৮৬১ খ্রিস্টাব্দে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর জন্মগ্রহণ করেন।

খ. অনুধাবন
✍ “বিশাল বিশ্বের আয়োজন” বলতে কবি বোঝাতে চেয়েছেন বৈচিত্র্যময় পৃথিবী ও জনজীবনের অনিঃশেষ কর্মযজ্ঞকে।

✍ পৃথিবীতে অগুনতি নগর, রাজধানী, নদী, সিন্ধু, তরু ও বহু অজানা জীবনের সন্নিবেশ। এছাড়া বিভিন্ন দেশের মানুষের রয়েছে নানারকমের সংস্কৃতি। জাতিতে জাতিতে রয়েছে বিস্তর পার্থক্য। এটিকে কবির কাছে মনে হয়েছে বিশাল বিশ্বের আয়োজন।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপক ও ‘ঐকতান’ কবিতার ভাবগত বৈসাদৃশ্য সহজেই ধরা পড়ে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, দূরকে দেখতে গিয়ে নিকটকে অবহেলার মর্মযাতনা। মানুষ সবসময় সুদূরের প্রতি স্বভাবগত আকর্ষণ বোধ করে। ফলে দূরের পর্বতমালা কিংবা সিন্ধু দেখতে পাড়ি দেয় দূরের দেশে। ব্যয় করে বহু অর্থ ও শ্রম। কিন্তু ঘর থেকে দুপা ফেলে একটি ধানের শিষের ওপর যে অপূর্ব শিশিরবিন্দু ঝলমল করে তা দেখার অবসর হয় না।

✍ অন্যদিকে ‘ঐকতান’ কবিতায় লক্ষ করা যায়, সমগ্র বিশ্বচরাচরকে দেখার ও জানার অফুরন্ত আগ্রহ। কবির অনুভব, দেশে দেশে কত নগর রাজধানী, নদী, গিরি, সিন্ধু ও মরু যেগুলোর কিছুই হয়তো তাঁর দেখা হবে না। আর উদ্দীপকে স্বদেশ ও পারিপার্শ্বকে জানার আগ্রহ প্রকাশিত হয়েছে। এদিক থেকে উদ্দীপক ও ‘ঐকতান’ কবিতার ভাবধারা মূলত বিপরীতমুখী।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপক ও ‘ঐকতান’ কবিতার মূলভাবে আপাত-বৈপরীত্য দৃশ্যমান। কিন্তু দুটোতেই প্রাধান্য পেয়েছে দূর ও নিকটকে জানার দুর্মর আগ্রহ।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, দূরকে জানতে গিয়ে নিকটকে অবহেলার চিত্র। মানুষের দৃষ্টিসীমায় পড়ে থাকা অগুণতি অভূতপূর্ব দৃশ্যও অনেকক্ষেত্রে অবহেলার শিকার হয়, যা সমর্থনযোগ্য নয়।

✍ দূরদেশেও রয়েছে বিচিত্র জনজীবনস্রোত, যাদের বহু কীর্তি ও কর্মের কথা অজানা থেকে যায়। এক জীবনের আয়ুসীমায় হয়তো জগতের বৈচিত্র্যময় উদ্ভাসনকে উপলব্ধি করা সম্ভব নয়। কিন্তু এদের জানার ও বোঝার কৌত‚হল মানুষের স্বভাবগত। উদ্দীপকেও দেখা যায়, বহুদিন ধরে বহু ক্রোশ দূরে গিয়ে বহু ব্যয় করে পর্বতমালা ও সিন্ধু দর্শনের দৃশ্য। এখানেও আছে দূরকে নিকট করার অভীপ্সা। কিন্তু নিকটকে অবহেলা কবি নিজের অজান্তেই করেছেন। পরবর্তীকালে সচেতন মনের প্রণোদনায় তিনি স্বদেশমুখী হয়েছেন। ‘ঐকতান’ কবিতায়ও শুধু দূর নয় পারিপার্শ্বকে দেখার প্রতি গুরুত্ব দেয়া হয়েছে। বলা যায়, উদ্দীপক ও ‘ঐকতান’ কবিতায় প্রাধান্য পেয়েছে দূর ও নিকটকে জানার অনিঃশেষ অভিলাষ।

✍ সুতরাং, উদ্দীপক ও ‘ঐকতান’ কবিতার মাঝে যে অতৃপ্তির বেদনা প্রকাশিত হয়েছে তা প্রশ্নোক্ত উক্তিটিকে সমর্থন করে।

No comments:

Post a Comment