G

HSC সেই অস্ত্র কবিতার (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র গাইড
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Bangla 1st Paper Srijonshil Question and Answer. Bangla Srijonshil Proshno O Uttor for HSC Exam Preparation. pdf download

সেই অস্ত্র
আহসান হাবীব

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
💕  পাঠ সহায়ক অংশ
সৃজনশীল পদ্ধতি মুখস্থনির্ভর বিদ্যা নয়, পাঠ্যবই নির্ভর মৌলিক বিদ্যা। তাই অনুশীলন অংশ শুরু করার আগে গল্প/কবিতার শিখন ফল, পাঠ পরিচিতি, লেখক পরিচিতি, উৎস পরিচিতি, বস্তুসংক্ষেপ, নামকরণ, শব্দার্থ ও টীকা ও বানান সতর্কতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব বিষয়গুলো জেনে নিলে এ অধ্যায়ের যেকোনো সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হবে।

💕  শিখন ফল
  ☑️ অস্ত্রের ধ্বংসাত্মক রূপটি উপলব্ধি করতে পারবে।
  ☑️ ভালোবাসার শক্তিকে অনুভব করতে পারবে।
  ☑️ প্রকৃতির প্রতি সহানুভূতিশীল হতে শিখবে।
  ☑️ মানবতাবোধ জাগ্রত হবে।
  ☑️ মহাবিশ্ব সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে।
  ☑️ পৃথিবীতে অরণ্যের প্রয়োজনীয়তা ও গুরুত্ব সম্পর্কে ভাবতে শিখবে।
  ☑️ সৌহার্দ্য ও সম্প্রীতির চেতনা জাগ্রত হবে।
  ☑️ বিশ্বের ইতিহাস সম্পর্কে ধারণা লাভ করতে পারবে।
  ☑️ আত্মত্যাগের প্রতি উজ্জীবিত হতে পারবে।
  
💕  পাঠ-পরিচিতি
 “সেই অস্ত্র” কবিতাটি আহসান হাবীবের ‘বিদীর্ণ দর্পণে মুখ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে। এই কবিতায় কবির একমাত্র প্রত্যাশা - ভালোবাসা নামের মহান অস্ত্রকে পুনরায় এই মানবসমাজে ফিরে পাওয়া। কবির কাছে ভালোবাসা কেবল কোনো আবেগ কিংবা অনুভূতির দ্যোতনা জাগায় না। তাঁর বিশ্বাস, এটি মানুষকে সকল অমঙ্গল থেকে পরিত্রাণের পথ বাতলে দেয়। তাই কবি বিশ্বের মানবকুলের কাছেই এই ভালোবাসা ফিরিয়ে দেবার অনুরোধ করেছেন।

মানুষ যদি অপর মানুষের হিংসা, লোভ, ঈর্ষা থেকে মুক্ত থাকে তবে পৃথিবীতে বিরাজ করবে শান্তি; পৃথিবী এগিয়ে যাবে সুখ, শান্তি ও সমৃদ্ধির দিকে। বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিদ্বেষের বিষবাষ্পকে যদি অপসারণ করতে হয় তবে ভালোবাসা নামক অস্ত্রকে কবির কাছে এবং কবির মতো আরও বহু মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। কবি জানেন, হিংসা আর স্বার্থপরতার করাল গ্রাসে অনেকেই মানবিকতাশূন্য হয়ে পড়ে। আর তাই কবি মানবিকতার সেই হৃতবোধকে ফিরে পেতে চান তথা মানবসমাজে ফিরিয়ে দিতে চান। পৃথিবীতে ছড়িয়ে দিতে চান অফুরান ভালোবাসা।

সেই অস্ত্র কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির গাইড

 কবিতাটির গঠনগত বিশেষত্ব হলো, এর অনাড়ম্বর সহজ গতিময়তা। কোনো ভারি শব্দ ব্যবহার না করে সাবলীল ভাষায় কবি তাঁর একান্ত প্রত্যাশিত ভালোবাসার প্রত্যাবর্তন কামনা করেছেন। রচিত এই কবিতাটি শান্তিপ্রিয় পৃথিবীবাসীর জন্য এক চিরায়ত প্রার্থনাসংগীত।

কবিতাটি অন্ত্যমিলহীন অক্ষরবৃত্ত ছন্দে রচিত। এর পর্বগুলোর বিন্যাসও অসম।

'সেই অস্ত্র' কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
আহসান হাবীব
💕  কবি পরিচিতি
নাম : আহসান হাবীব।
জন্মতারিখ : ২ জানুয়ারি, ১৯১৭ খ্রিস্টাব্দ।
জন্মস্থান : শঙ্করপাশা, পিরোজপুর।
উচ্চ মাধ্যমিক : আইএ, ব্রজমোহন, কলেজ, বরিশাল।
কর্মজীবন : সহকারী সম্পাদক- দৈনিক তকবীর, মাসিক বুলবুল; ভারপ্রাপ্ত সম্পদক- মাসিক সওগাত। স্টাফ আর্টিস্ট- আকাশবাণী, কালকাতা, সাংবাদিকতা- দৈনিক আজাদ, মাসিক মোহাম্মদী, দৈনিক কৃষক, দৈনিক ইত্তেহাদ, সাপ্তাহিক প্রবাহ। সাহিত্য সম্পাদক- দৈনিক পাকিস্তান (পরবর্তীকালে দৈনিক বাংলা)।
কাব্যগ্রন্থ : রাত্রিশেষ, ছায়াহরিণ, সারা দুপুর, আশায় বসতি, বিদীর্ণ দর্পণে মুখ প্রভৃতি।
গদ্যগ্রন্থ : অরণ্যে নীলিমা, রাণী খালের সাঁকো প্রভৃতি।
শিশুতোষ গ্রন্থ  : ছোটদের পাকিস্তান, বৃষ্টি পড়ে টাপুর টুপুর, ছুটির দিন দুপুরে।
পুরস্কার ও সম্মাননা : বাংলা একাডেমি পুরস্কার (১৯৬১), একুশে পদক (১৯৭৮) প্রভৃতি।
মৃত্যু তারিখ  : ১০ জুলাই, ১৯৮৫ খ্রিস্টাব্দে।

💕  উৎস পরিচিতি
  “সেই অস্ত্র” কবিতাটি আহসান হাবীবের ‘বিদীর্ণ দর্পণে মুখ’ কাব্যগ্রন্থ থেকে সংকলন করা হয়েছে।
  
💕  বস্তুসংক্ষেপ
  বাংলা কাব্যসাহিত্যে স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশের সাহিত্য অঙ্গনের অভিভাবক, পঞ্চাশের দশকের অন্যতম প্রধান আধুনিক কবি আহসান হাবীব। তিনি ত্রিশোত্তর কবিদের ধারায় বাংলাদেশের প্রথম আধুনিক কবি। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় মানবজাতির কল্যাণে কবি প্রবল আশাবাদ ব্যক্ত করেছেন। কবিতাটির চরণে চরণে পুনঃমানবিকীকরণের উদ্বোধন ঘটিয়েছেন কবি আহসান হাবীব। কবিতায় কবি ‘সেই অস্ত্র’ ফিরে চেয়েছেন যে অস্ত্র মানবসভ্যতাকে টিকিয়ে রাখবে।

যার আঘাতে পৃথিবীর যাবতীয় অস্ত্র ধ্বংস হবে। সাহিত্যের গুণগত মানকে সম্মান জানিয়ে নিরবচ্ছিন্ন গতিতে বর্তমান পৃথিবীর বাস্তব চিত্র তুলে ধরতে চেয়েছেন ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায়। ক্ষমতার দম্ভে অন্ধ পৃথিবীর মানুষকে তিনি জীবনের অমোঘ ডাক, অর্থাৎ মানবিকতার প্রতি আনুগত্য প্রকাশ করার আহবান জানিয়েছেন কবিতাটিতে। কবি সেই অস্ত্র চেয়েছেন, যে অস্ত্র উত্তোলিত হলে অরণ্য হবে আরও সবুজ, পাখিরা শান্তিতে নীড়ে ঘুমাবে, ফসলের মাঝে আগুন জ্বলবে না, মানব বসতির বুকে আগুন ঝরবে না, লক্ষ লক্ষ মানুষ হবে না পঙ্গু। সেই অস্ত্র উত্তোলিত হলে বারবার ধবংস হবে না ট্রয় নগরী, থাকবে না কোনো ভেদাভেদ, জাত্যাভিমান, ঘৃণা, বিদ্বেষ, অহংকার।

সে অস্ত্র মানুষের আধিপত্য বিস্তারের লোভকে নিশ্চি‎হ্ন করে দেবে, মানুষের মাঝের ভেদাভেদকে ভুলিয়ে করবে সমাবিষ্ট- সেই অমোঘ অস্ত্রটি হলো ‘ভালোবাসা’। কবি এই অস্ত্রের আঘাতে সারা পৃথিবীতে শান্তির প্লাবন ঘটাতে চান। তাই তো তিনি ভালোবাসা নামক অস্ত্রটির প্রত্যাশা করেন বিশ্বব্যাপী।
  
💕  নামকরণের সার্থকতা যাচাই
  স্বল্পভাষী, আত্মমগ্ন, স্পষ্টবাদী মানবদরদি শিল্পী আহসান হাবীবের ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার নামকরণ যথার্থ ও সার্থক হয়েছে। কারণ দেশ ও জনগণ তথা এই পৃথিবীর প্রতি সংবেদনশীলতা ও সুগভীর জীবনঘনিষ্ঠ আশাবাদী চেতনা কবিতাটিতে প্রকাশিত হয়েছে। কবি বিশ্বাস করেন ভালোবাসা দিয়ে মানুষের হিংসা বিদ্বেষ দূর করা সম্ভব। শান্তির অস্ত্র ভালোবাসা দিয়ে কবি সকল মারণাস্ত্রকে পরাভূত করার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেছেন। এক্ষেত্রে নামকরণ যথাযথ ও সার্থক হয়েছে।

আরও দেখা যায়, কবির একমাত্র প্রত্যাশা ভালোবাসা নামের ঐ মহান অস্ত্রকে পুনরায় এই মানবসমাজে ফিরে পাওয়া। কবি এই কবিতায় বর্ণনা করেছেন বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে থাকা বিদ্বেষের বিষবাষ্পকে যদি অপসারণ করতে হয় তবে ভালোবাসা নামক অস্ত্রকে কবির কাছে এবং কবির মতো বহু মানুষের কাছে ফিরিয়ে দিতে হবে। কবিতাটি যেন শান্তিপ্রিয় পৃথিবীর জন্য এক চিরায়ত প্রার্থনা সঙ্গীত। মূলবক্তব্য তথা বিষয়ের সাথে সঙ্গতি রেখে কবিতার নামকরণ করা হয়েছে বিধায় সেই অস্ত্র নামকরণ সুন্দর ও সার্থক হয়েছে।
  
💕  শব্দার্থ ও টীকা
অমোঘ  -   অব্যর্থ, সার্থক, অবশ্যম্ভাবী।
যে অস্ত্র উত্তোলিত হলে 
পৃথিবীর যাবতীয় অস্ত্র 
হবে আনত   -   কবি ভালোবাসা আর শান্তির অস্ত্র দিয়ে সকল মারণাস্ত্রকে পরাভ‚ত করবার আকাক্সক্ষা ব্যক্ত করেন। 
যে অস্ত্র উত্তোলিত হলে 
ফসলের মাঠে আগুন 
জ্বলবে না   -   কবি বিশ্বাস করেন, ভালোবাসা দিয়ে মানুষের হিংসা বিদ্বেষ দূর করা সম্ভব। ভালোবাসা থাকলে মানুষ মানুষকে শত্রু ভাববে না, কৃষকের দুঃখ-জ্বালার অবসান হবে এবং বিদ্রোহের আগুন জ্বলবে না।
যে অস্ত্র ব্যাপ্ত হলে
নক্ষত্রখচিত আকাশ থেকে
আগুন ঝরবে না   -   কবি এখানে যুদ্ধে ব্যবহৃত ছোট-বড় ক্ষেপণাস্ত্রের কথা বুঝিয়েছেন। কবি চান, মানুষ যেন যুদ্ধের ভয়াবহতায় জড়িয়ে না পড়ে, বিশ্বে যেন শান্তি নিশ্চিত হয়।
মানব বসতির বুকে মুহূর্তের 
অগ্ন্যুৎপাত লক্ষ লক্ষ মানুষকে 
করবে পঙ্গু-বিকৃত  -   ভালোবাসাহীন বিদ্বেষপূর্ণ পৃথিবীতে যুদ্ধের অনিবার্য ক্ষতি সম্পর্কে নিজের উৎকণ্ঠা কবি এখানে প্রকাশ করেছেন। অনুমান করা যায়, কবিচৈতন্যে দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা-নাগাসাকিতে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার স্মৃতি জাগ্রত ছিল। তাই আণবিক বোমার আঘাতে মৃত কিংবা প্রজন্ম-পরম্পরায় পঙ্গুত্ব বরণকারী বহু মানুষের আর্তনাদ কবির এই যুদ্ধবিরোধী মননকে আন্দোলিত করেছে। 
ট্রয়নগরী  -   প্রাচীন গ্রিসের স্থাপত্যকলায় নন্দিত এক শহর। মানুষের হিংসা-বিদ্বেষ ঈর্ষা আর দম্ভের শিকার হয়ে পৃথিবীর ইতিহাসে বারংবার ধ্বংস হয়েছে এই নগরী। যুদ্ধের নির্মমতার এক চিরায়ত দৃষ্টান্ত এই ট্রয়। 
জাত্যভিমান  -   কোনো যুক্তি ছাড়াই নিজ জাতিকে সর্বশ্রেষ্ঠ জ্ঞান করার অহংকারী মনোভাব।
সমাবিষ্ট  -   সমভাবে আবিষ্ট। সমাবেশ হয়েছে এমন; সমবেত হওয়া অর্থে।

💕  বানান সতর্কতা
  অস্ত্র, সভ্যতা, প্রতিশ্রুতি, অনন্য, উত্তোলিত, অরণ্য, কল্লোলিত, খাঁ খাঁ, গৃহস্থালি; ব্যাপ্ত, নক্ষত্রখচিত, মুহূর্ত, অগ্ন্যুৎপাত, পঙ্গু-বিকৃত, বিধ্বস্ত, অবিনাশী, প্রত্যাশী, ঘৃণা, বিদ্বেষ, অহংকার, জাত্যাভিমান, নিশ্চি‎‎হ্ন‎, সমাবিষ্ট, ব্যাপ্ত।

সেই অস্ত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন-০১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
  সবারে বাসিব ভালো, করিব না আত্মপর ভেদ
  সংসারে গড়িব এক নতুন সমাজ
  মানুষের মাঝে কভু রবে না বিচ্ছেদ-
  সর্বত্র মৈত্রীর ভাব করিবে বিরাজ।
  ...............................
  হিংসা দ্বেষ রহিবে না কেহ কারে করিবে না ঘৃণা
  পরস্পরে বাঁধি দিব প্রীতির বন্ধনে
  বিশ্বজুড়ে এক সুরে বাজিবে গো মিলনের বীণা
  মানব জাগিবে নব জীবন স্পন্দনে।
ক.  “সেই অস্ত্র” কবিতায় বর্ণিত নগরটির নাম কী?
খ.  “লক্ষ লক্ষ মানুষকে করবে না পঙ্গু-বিকৃত।”- উক্তিটি দ্বারা কী বোঝানো হয়েছে?
গ.  কবিতাংশের প্রথম স্তবকে “সেই অস্ত্র” কবিতার কোন ভাবের প্রতিফলন ঘটেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ.  “কবিতাংশের দ্বিতীয় স্তবক যেন কবি-ভাবনার চূড়ান্ত প্রতিফলন”- মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ কবিতায় বর্ণিত নগরীর নাম ট্রয় নগরী।

খ. অনুধাবন
✍ প্রশ্নোক্ত চরণে ভালোবাসাহীন বিদ্বেষপূর্ণ পৃথিবীতে যুদ্ধের অনিবার্য ক্ষতি সম্পর্কে কবির উৎকণ্ঠার প্রকাশ ঘটেছে।

✍ মানুষ যদি অপর মানুষের প্রতি হিংসা, লোভ, ঈর্ষা থেকে মুক্ত না থাকে তবে পৃথিবীতে বিপর্যয় নেমে আসবে। কবি এই বিপর্যয় আশঙ্কায় ভীত। তিনি দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধে জাপানের হিরোশিমা ও নাগাসাকিতে ঘটে যাওয়া নৃশংসতার স্মৃতি দ্বারা তাড়িত হয়েছেন। তাই তিনি আণবিক বোমার আঘাতে মৃত কিংবা প্রজন্ম-পরম্পরায় পঙ্গুত্ববরণকারী মানুষদের প্রতি সমবেদনার চেতনার ভাবটি প্রকাশ করেছেন চরণটিতে।

গ. প্রয়োগ
✍ কবিতাংশের প্রথম স্তবকে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় মানবসমাজের সকলের প্রতি ভালোবাসার ভাবের প্রতিফলন ঘটেছে।

✍ ভালোবাসা দ্বারা পৃথিবীর সকল অজেয় ক্ষেত্রকে জয় করা সম্ভব। ভালোবাসার শক্তি অসীম। মানুষের মাঝে এই ভালোবাসার মিলন মেলা বসাতে পারলে পৃথিবীর অর্ধেক সমস্যার সমাধান হতো। অথচ মানুষ এই সহজ সত্যকে উপলব্ধি করতে পারে না বা করে না। এজন্য সারা পৃথিবীতে এত অশান্তি, যুদ্ধবিগ্রহ লেগেই আছে।

✍ উদ্দীপকে কবি সবাইকে ভালোবাসার কথা ব্যক্ত করেছেন। নিজের আত্মপ্রসাদে বিভোর হয়ে আপনপর ভেদাভেদ না করে এক নতুন সমাজ গঠন করার প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। মানুষের মাঝে কোনো বিচ্ছেদ ভাব কবি কামনা করেন নি। সর্বত্র একটা মৈত্রীর ভাব বিরাজ করবে এটাই কবি প্রত্যাশা করেন। এই ভাবটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতাতেও পরিলক্ষিত হয়। কবিতায় কবি এমন অস্ত্র ফিরিয়ে দিতে বলেছেন, যে অস্ত্রের আঘাতে মাঠে আগুন জ্বলবে না। খাঁ খাঁ করবে না গৃহস্থালি, নক্ষত্র খচিত আকাশ থেকে আগুন ঝরবে না। সে অস্ত্র ভালোবাসার। কবি ভালোবাসা দিয়েই এই বিশ্বের সমস্ত হিংসা হানাহানি বন্ধ করতে চান। মানুষের মাঝের জাত্যভিমানের দেয়াল ভেঙে ফেলতে চান। ঘৃণা বিদ্বেষ দূর করে সবাইকে ভালোবাসার মাধ্যমে এক সুখী ও সমৃদ্ধশালী পৃথিবী গঠন করতে চান। কবিতার এই ভাবটিই উদ্দীপকের প্রথম স্তবকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ কবিতাংশের দ্বিতীয় স্তবক যেন কবির ভাবনার চূড়ান্ত প্রতিফলন- মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ মানুষের প্রতি যখন ভালোবাস-বোধের সৃষ্টি হয় তখন চিত্তজগৎ মহৎ হয়। সেই মহৎ চেতনা মানবসমাজের কল্যাণ বয়ে আনে। এটি মানুষকে সব ধরনের অমঙ্গল থেকে পরিত্রাণের পথ বাতলে দেয়। কিন্তু আমাদের এই মানবসমাজে হিংসা আর স্বার্থপরতার করাল গ্রাসে অনেকেই মানবিকতাশূন্য হয়ে পড়েছে। পরস্পরের প্রতি ভালোবাসাই পারে একটি বৈষম্যহীন অহিংস মানবসমাজ গড়তে।

✍ উদ্দীপকের কবি এমন সমাজেরই প্রত্যাশা করেন যেখানে হিংসা-বিদ্বেষ থাকবে না। কেউ কাউকে ঘৃণা করবে না। পরস্পরকে প্রীতির বন্ধনে বেঁধে এখানেই স্বর্গ রচনা করবে। সেই জগৎ সংসারে জাগবে নব জীবনের স্পন্দন। উদ্দীপকের এই শেষোক্তভাবে যেন ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবির ভাবনার চূড়ান্ত প্রতিফলন ঘটেছে।

✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবি ভালোবাসা নামের অস্ত্রকে আবারও এই মানবসমাজে ফিরে পেতে চেয়েছেন। কবির কাছে ভালোবাসা কেবল আবেগ কিংবা অনুভূতির দ্যোতনা জাগায় না। এটি মানুষকে অশান্তি, অমঙ্গল থেকে পরিত্রাণের পথ দেখায়। তাই বলা যায়, প্রশ্নোলি­খিত মন্তব্যটি যথার্থ।

এইচএসসি (HSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরসহ: বাংলা ১ম পত্র গাইড


সেই অস্ত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন-০২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
পৃথিবীকে সুন্দর রাখতে হলে প্রকৃতির সাবলীল গতিকে টিকিয়ে রাখতে হবে। বর্তমান পৃথিবীতে যে প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঘনঘটা, তার অন্যতম কারণ হলো প্রকৃতির বুকে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক নির্যাতন। যেমন- রাসায়নিক অস্ত্র কারখানা, চুলি­ ও অস্ত্র উৎক্ষেপণ পরীক্ষা।
ক.  ভালোবাসার অস্ত্র উত্তোলিত হলে অরণ্য কী হবে?  
খ.  অরণ্য আরো সবুজ হওয়া বলতে কী বোঝানো হয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
গ.  উদ্দীপকে বর্ণিত প্রকৃতির সাবলীলতার কথার সাথে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবির আকাক্সক্ষার সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ.  “বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক কর্মযজ্ঞের কারণেই বর্তমান প্রকৃতি এত বেশি বিপর্যস্ত”- ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে উক্তিটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ ভালোবাসার অস্ত্র উত্তোলিত হলে অরণ্য আরো সবুজ হবে।

খ. অনুধাবন
✍ অরণ্য আরো সবুজ হওয়ার আবশ্যকতা অনুভব করার কারণ হলো পৃথিবীর পরিবেশকে আরো সুন্দর, সতেজ ও বসবাস উপযোগী করা।

✍ প্রাণিকুলের জীবন নির্ভর করে উদ্ভিদের ওপর। সবুজ উদ্ভিদ না থাকলে পৃথিবীতে কোনো প্রাণীই অস্তিত্ব টিকিয়ে রাখতে পারবে না। কিন্তু বর্বর মানসিকতার মানুষ গাছপালা কেটে পৃথিবীকে ক্রমশ মরুভূমি বানিয়ে ফেলছে। কবি এ মরুকরণের ভয়াবহতা থেকে মুক্তি পেতে চান। এজন্যই কবি অরণ্য আরো সবুজ হওয়া, অর্থাৎ আরো উদ্ভিদের উৎপাদন আবশ্যক বলে মনে করেন।

গ. প্রয়োগ
✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতা ও উদ্দীপকে অরণ্যের বৃদ্ধি কামনা করা হয়েছে, যা পরস্পর সাদৃশ্যপূর্ণ।

✍ পৃথিবীর ভারসাম্য টিকিয়ে রাখতে হলে পর্যাপ্ত পরিমাণ উদ্ভিদ রাখা প্রয়োজন। উদ্ভিদের নিয়ত নিধন মানব সভ্যতাকে দিনে দিনে ভয়াবহ অবস্থায় নিয়ে যাচ্ছে এবং প্রাকৃতিক দুর্যোগ ক্রমশ বেড়ে চলছে।

✍ উদ্দীপকে দেখানো হয়েছে উদ্ভিদের হার কমে যাওয়ায় পৃথিবীতে প্রাকৃতিক জটিলতা দিনদিন বেড়েই চলছে। মানুষ বিভিন্নভাবে বৃক্ষ নিধন করছে। রাসায়নিক কর্মকাণ্ডে উদ্ভিদের ব্যাপক ক্ষতি হয়। কিন্তু এ কাজ কেউ বন্ধ করছে না। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি এ জন্য হাহাকার করেছেন। সবুজের প্রয়োজনীয়তা অনুভব করায় তিনি অরণ্যকে আরো সবুজ করে তোলাার দাবি জানিয়েছেন। কারণ অরণ্য যত ধূসর হবে, যত নি®প্রভ হবে, পৃথিবী ও প্রাণিকুল ততই বিপন্নতার দিকে এগিয়ে যাবে। এদিক বিবেচনায় বলা যায়, উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার মাঝে আকাক্সক্ষাগত সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে প্রশ্নোলি­খিত উক্তিটির যৌক্তিকতা বিচার করা যুক্তিযুক্ত।

✍ মানুষ নতুন নতুন আবিষ্কার করছে। বিজ্ঞানের উৎকর্ষে নতুন নতুন দিক উন্মোচিত হচ্ছে। সেই সাথে ধ্বংসযজ্ঞও থেমে নেই। বিজ্ঞানের কল্যাণেই মানুষ তৈরি করছে নতুন নতুন মৃত্যুবাণ, যা শুধু মানুষকে নয়, পরিবেশ প্রকৃতিকেও ধ্বংস করার ক্ষমতা রাখে।

✍ রাসায়নিক কর্মকাণ্ডের ভয়াবহতা উদ্দীপকের আলোচনায় স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। বর্তমানে অস্ত্র-কারখানায় ব্যবহৃত হচ্ছে রাসায়নিক প্রযুক্তি। এ প্রযুক্তির প্রভাব পরিবেশে ব্যাপক হারে পড়ছে। দিনদিন নষ্ট হচ্ছে প্রাকৃতিক ভারসাম্য, ফলে সবুজ অরণ্য আরো নি®প্রভ হয়ে যাচ্ছে। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি এ দিকটি নিয়ে আক্ষেপ প্রকাশ করেছেন, তিনি আরো সবুজ অরণ্য দাবি করেন। যা মানব অস্তিত্বের জন্য একান্ত প্রয়োজনীয়। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি বর্তমান পৃথিবীতে ব্যবহৃত বিভিন্ন ঘৃণ্য অস্ত্রের কথা বলেছেন। এগুলো হলো মানুষের মনের পঙ্কিলতা থেকে সৃষ্ট অস্ত্র, মানবতাবোধ না থাকায় প্রকাশিত হচ্ছে পাশবিকতা; এই পাশবিকতার চূড়ান্ত রূপ বাস্তবায়ন করতেই মানুষ বানাচ্ছে বিভিন্ন প্রকার রাসায়নিক অস্ত্র।

✍ হাইড্রোজেন বোমা, নিউক্লিয়ার বোমা বা এ জাতীয় অস্ত্র তৈরির জন্য সৃষ্ট রাসায়নিক চুলি­ পরিবেশের জন্য খুব বেশি হুমকিস্বরূপ। বস্তুত, বর্তমান পৃথিবীর হিংস্র মানুষগুলো রাসায়নিক অস্ত্র তৈরির প্রতিযোগিতা চালাচ্ছে, যা প্রশ্নোক্ত উক্তির সত্যতা প্রমাণ করে।


সেই অস্ত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
আসুন, চিরচেনা পৃথিবীতে
মানবতার সুর ধরি।
ঝঙ্কার তুলি বিবেকের তারে,
বীণায় বাজাই ভালোবাসার কবিতা।
ক.  সেই অমোঘ অস্ত্র কী?
খ.  ‘সভ্যতার প্রতিশ্রুতি’ বলতে কী বোঝ?
গ.  “আমাকে সেই অস্ত্র ফিরিয়ে দাও, সভ্যতার সেই প্রতিশ্রুতি”- লাইনটির সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য নির্ণয় কর।
ঘ.  “উদ্দীপকের কবি ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবি একই মানসিতার অধিকারী” -মন্তব্যটির সত্যতা প্রমাণ কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ সেই অমোঘ অস্ত্র হলো ভালোবাসা।

খ. অনুধাবন
✍ সভ্যতার প্রতিশ্রুতি বলতে মানুষের মানবিকতাবোধকে বোঝানো হয়েছে।

✍ মানুষ সমাজে, রাষ্ট্রে বাস করার জন্য বহুযুগ ধরে চর্চা করে আসছে এবং ব্যাপক সফলতা লাভ করেছে, মানুষ সামাজিক প্রাণী হিসেবে প্রতিষ্ঠা পেয়েছে। এটা সম্ভব হয়েছে শুধু ভালোবাসার কারণেই। বস্তুত, যেকোনো সভ্যতা বা সমাজ সৃষ্টির প্রথম শর্ত হলো সহমর্মিতা, ভালোবাসা ও পরোপকারী মনোভাব। এগুলো না হলে কোনো সভ্যতাই সৃষ্টি হতো না।

গ. প্রয়োগ
✍ “আমাকে সেই অস্ত্র ফিরিয়ে দাও, সভ্যতার সেই প্রতিশ্রুতি”- চরণটির সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ ভালোবাসা মানুষের জীবনে এক মৌলিক প্রয়োজনীয় উপকরণ। ভালোবাসা ব্যতিরেকে সভ্যতা চর্চা করা আদৌ সম্ভব নয়। আবেগের বহিঃপ্রকাশ দুরূহ ও জানার আকাক্সক্ষা প্রায় নিঃশেষ হয়ে পড়ে। কারণ ভালোবাসা ছাড়া কোনো কিছুই তার সুন্দর রূপ মেলে ধরে না। কবি তাই মানবতার সুর তুলতে বলেছেন, বিবেকের কাছে আত্মজিজ্ঞাসায় নিমগ্ন হতে বলেছেন। কারণ এর মাধ্যমেই সৃষ্টি হবে ভালোবাসার কবিতা।

✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি এ ভালোবাসাকে সভ্যতার প্রতিশ্রুতি হিসেবে আখ্যা দিয়েছেন। সভ্যতার প্রাচীন প্রতিশ্রুতি হলো ভালোবাসা, যা প্রায় হারিয়ে যাচ্ছে। এ ভালোবাসার জন্য কবি জোর দাবি প্রকাশ করেছেন। কারণ ভালোবাসা ছাড়া মানবতা স্ফুরিত হবে না। অর্থাৎ, প্রশ্নোক্ত চরণটির সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য বিদ্যমান।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতা পাঠে দুই কবির মানসিকতায় চমৎকার সামঞ্জস্য লক্ষ করা যায়। কারণ দুজনেই ভালোবাসার জন্য জোর দাবি তুলেছেন।

✍ ভালোবাসা মানে মনের সুকুমার বৃত্তির নান্দনিক রূপ। আর সুকুমার বৃত্তি আছে বলেই মানুষ সভ্য ও সুন্দর। যার মনে সুকুমার বৃত্তিগুলো কাজ করে না, তার আর পশুর মধ্যে কোনো পার্থক্য নেই। সভ্যতায় শান্তি সৌন্দর্য বাড়াতে মনের এই সুকুমার বৃত্তির চর্চা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি প্রয়োজন।

✍ ভালোবাসাকে জাগিয়ে তোলার জন্য উদ্দীপকের কবি মানুষের প্রতি উদাত্ত আহবান জানিয়েছেন। চিরচেনা এই পৃথিবীতে মানবতাবোধকে জাগিয়ে তোলা আজকের সবচেয়ে জোরালো দাবি। বিবেকের কাছে এ প্রশ্ন সবচেয়ে আবেদনময়ী। যদি মানবতার চর্চা বাড়ে, তবে জাগবে ভালোবাসা। এ ভালোবাসা প্রাপ্তির জন্য হাহাকার ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবির কণ্ঠে আরো জোরালোভাবে ধ্বনিত হয়েছে।

✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি ভালোবাসাকে সভ্যতার প্রতিশ্রুত অস্ত্র ও সৌন্দর্য সৃষ্টির একমাত্র অস্ত্র হিসেবে উপস্থাপন করেছেন। এ অস্ত্র করায়ত্ত করতে পারলেই কবি পৃথিবীর যাবতীয় সমস্যার সমাধান করতে পারবেন। পৃথিবীতে যত অন্যায়, নিপীড়ন সব হচ্ছে ভালোবাসাহীন নিষ্ঠুরতার ফলাফল। যদি ভালোবাসা জাগিয়ে তোলা যায়, তবে জাগবে মানবতা, জাগবে সৌন্দর্য, যা উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবিদ্বয়ের কণ্ঠে সমানভাবে প্রকাশ পেয়েছে। অর্থাৎ, দুজনেই একই মানসিকতার ধারক।


সেই অস্ত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
গ্রিক এবং ট্রয় নগরীর যুদ্ধ-ইতিহাসের কলঙ্কিত অধ্যায়। ট্রয় নগরীর প্রতি ইঞ্চি মাটিতে মিশে আছে লাখ সৈনিকের রক্ত, অসংখ্য আহত ঘোড়ার হাহাকার, অগণিত মায়ের পুত্র শোকের আর্তনাদ আর জাতি-বিদ্বেষের পরিণাম।
ক.  জাত্যাভিমানকে বার বার পরাজিত করতে কী প্রয়োজন?
খ.  “বার বার বিধ্বস্ত হবে না ট্রয় নগরী”- বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ.  ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় ট্রয় নগরীর ধ্বংসের ইতিহাসের যে ইঙ্গিত রয়েছে তার সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ.  “আমাদের হিংস্র মানসিকতাই ট্রয়ের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত”- উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে বিচার কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ জাত্যাভিমানকে বার বার পরাজিত করতে ভালোবাসা প্রয়োজন।

খ. অনুধাবন
✍ “বার বার বিধ্বস্ত হবে না ট্রয় নগরী” বলতে বিভিন্ন সভ্যতার পতনকে বোঝানো হয়েছে, যার পেছনে দায়ী একমাত্র মানুষ।

✍ সভ্যতা গড়ে তোলার জন্য অনেক শতাব্দীর প্রয়োজন হয়। প্রজন্মের পর প্রজন্মের নিরন্তর প্রচেষ্টায় গড়ে ওঠে এক একটি সভ্যতা। অথচ অল্পক্ষণেই তা ধ্বংস করা যায়। কোনো এক প্রজন্মের মানুষের ভয়াল হানাহানিতে শেষ হতে পারে হাজার বছরের পুরনো সভ্যতা। শুধু ট্রয় নয়, পৃথিবীতে এমন অনেক সভ্যতাই মানুষের নিষ্ঠুরতায় হারিয়ে গেছে।

গ. প্রয়োগ
✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় ট্রয় নগরীর ধ্বংসের ইতিহাসের যে ইঙ্গিত রয়েছে তার সাথে উদ্দীপকের সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ ট্রয় এক সুবিশাল নগরীর নাম। প্রাচীনকালে এ নগরীতে উন্নতির জোয়ার বয়ে গিয়েছিল। মানুষ ছিল প্রবল শৌর্য-বীর্যের অধিকারী। কিন্তু তাদের মনে ভালোবাসার চেয়ে হিংস্রতা বেশি ছিল। ফলে গ্রিক নগরীর সাথে যুদ্ধ বাঁধলে ট্রয় নগরী ধুলোয় মিশে যায়।

✍ উদ্দীপকের ট্রয় ও গ্রিকের ঐতিহাসিক যুদ্ধের কথা বলা হয়েছে। ট্রয়ের ভয়াবহ পতনের কথা আজো ইতিহাসের পাতায় নৃশংসতার সাক্ষ্য দিচ্ছে। শুধু ট্রয় নয়, অসংখ্য গ্রিক সেনারও প্রয়াণ ঘটেছিল এ যুদ্ধে। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতাতেও কবি এই ঐতিহাসিক নৃশংসতাকে চি‎িহ্নত করেছেন। এর মধ্য দিয়ে কবি মূলত ধ্বংস হয়ে যাওয়া সকল সভ্যতার কথাই বলেছেন। অর্থাৎ, উদ্দীপকে বর্ণিত যুদ্ধ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার সভ্যতার পতনের দিকটিতে সুন্দরভাবে উপমিত হয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “আমাদের হিংস্র মানসিকতাই ট্রয়ের ইতিহাসের পুনরাবৃত্তি ঘটাচ্ছে প্রতিনিয়ত”- উক্তিটির প্রমাণ উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় প্রকাশিত হয়েছে।

✍ মানুষের চরিত্রে হিংস্রতা রয়েছে। এ হিংস্রতা যার চরিত্রে সুপ্ত, সুকুমার বৃত্তির চর্চা সেই বেশি করে, কিন্তু যার চরিত্রে হিংস্রতা প্রকট, সে শুধু অনর্থক ঝামেলা তৈরি করে। মানুষের রক্ত ঝরাতে তার কোনো কষ্ট হয় না। মূলত পৃথিবীর যাবতীয় অন্যায় ও ধ্বংসের পেছনে এই হিংস্রতাই দায়ী।

✍ উদ্দীপকে গ্রিক ও ট্রয়ের ঐতিহাসিক যুদ্ধ এবং এর ভয়াবহতা পাওয়া যায়। এ যুদ্ধে গ্রিকদের কাছে ট্রয় পরাজিত হয়েছিল। গ্রিকরা ভয়াবহ ক্রোধে ট্রয় নগরীকে ধুলোয় মিশিয়ে দেয়। সভ্যতার এই পতনের কথা ‘সেই অস্ত্র’ কবিতাতেও পাওয়া যায়। কবি ট্রয় নগরীর পতনের উদ্যোগের মাধ্যমে মূলত পৃথিবীর আগে অনেক সভ্যতার পতনের দিকটাই ইঙ্গিত করেছেন।

✍ সভ্যতা সৃষ্টি হয় ভালোবাসার টানে, সৌন্দর্যের আকাক্সক্ষায়। আর ধ্বংস হয় ঘৃণা আর হিংসার কারণে। একেকটা সভ্যতা সৃষ্টির জন্য অনেক শতাব্দী ব্যয় করতে হয়েছে। বহু প্রজন্মের মানুষের শ্রমের ওপর দাঁড়িয়ে থাকে সভ্যতা। কিন্তু ক্রোধ আর হিংস্রতার সামনে কোনোকিছুই টিকে থাকে না। হাজার বছরের সুনিপুণ সৃষ্টি নিমিষে ধ্বংসস্তূপে পরিণত হয়। ঠিক যেভাবে ট্রয় ধ্বংস হয়েছে, যেভাবে আরো অনেক সভ্যতা এ পৃথিবী থেকে বিলীন হয়েছে এবং এ ধ্বংসের ধারাবাহিক ইতিহাসের পেছনে আমাদের হিংস্র মানসিকতাই দায়ী।


সেই অস্ত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
‘বংশে বংশে নাহিকো তফাত
বনেদি কে আর গর-বনেদি
দুনিয়ার সাথে গাঁথা বুনিয়াদ
দুনিয়া সবারি জন্ম বেদি।’
ক.   কে অবিনাশী অস্ত্রের প্রত্যাশী?
খ.  “আমি সেই অবিনাশী অস্ত্রের প্রত্যাশী”- এখানে ‘অবিনাশী’ অস্ত্র বলতে কী বোঝানো হয়েছে?
গ.  “যে অস্ত্র মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে না”- লাইনটির সাথে উদ্দীপকের “বংশে বংশে নাহিকো তফাত”- লাইনের সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ.  “মানুষ মানুষের জন্য” - উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে উক্তিটির যৌক্তিকতা বিচার কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ কবি অবিনাশী অস্ত্রের প্রত্যাশী।

খ. অনুধাবন
✍ “আমি সেই অবিনাশী অস্ত্রের প্রত্যাশী”, বাক্যে ‘অবিনাশী অস্ত্র’ বলতে ভালোবাসাকে বোঝানো হয়েছে।

✍ অস্ত্র মানেই ধ্বংস করা- বিনাশ করা। ‘অবিনাশী অস্ত্র’ মানে যে-অস্ত্রের ধ্বংস করার ক্ষমতা নেই। এ অস্ত্র হলো ভালোবাসা, ভালোবাসা শুধু সৃষ্টি করে। মানুষকে সৌন্দর্যের মন্ত্র শেখায়, পরিবেশকে আপন করে নিতে উদ্বুদ্ধ করে। কবি এজন্যই অবিনাশী অস্ত্র অর্থাৎ ভালোবাসার প্রত্যাশী। একমাত্র ভালোবাসাই পারে পৃথিবীকে আসন্ন ধ্বংসের হাত থেকে রক্ষা করতে।

গ. প্রয়োগ
✍ “যে অস্ত্র মানুষকে বিচ্ছিন্ন করে না”- এ লাইনের সাথে উদ্দীপকের “বংশে বংশে নাহিকো তফাত”- লাইনের মিল রয়েছে।

✍ পৃথিবীতে অসংখ্য জাতি-ধর্ম-বর্ণের মানুষ রয়েছে। কিন্তু এই জাতি, ধর্ম বা বর্ণ সবই মানুষের সৃষ্টি। এর মাধ্যমে মানুষ নিজেদের মধ্যে পার্থক্য সৃষ্টি করেছে। বস্তুত সকল মানুষ সমান। সকলের দেহে একই রক্তের চলাচল রয়েছে।

✍ উদ্দীপকে মানুষের মধ্যে সকল প্রকার ভেদাভেদকে অস্বীকার করা হয়েছে। উদ্দীপকের কবির মতে বংশের পার্থক্য বলতে কিছুই নেই। বনেদি বলে মানুষকে আলাদা করার কোনো যৌক্তিকতা নেই। কারণ সবাই এই পৃথিবীর বুকে জন্মেছে। এই সাম্যের গান ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবির কণ্ঠেও রূপকভাবে প্রকাশ পেয়েছে। কবির ভালোবাসা চাওয়ার একমাত্র কারণ হলো পৃথিবীতে বিরাজমান সমস্ত পার্থক্য নিরসন করে মানুষের মধ্যে ভালোবাসা ও সহমর্মিতা জাগিয়ে তোলা। অর্থাৎ, কবিতার এ দিকটির সাথে উদ্দীপকের “বংশে বংশে নাহিকো তফাত”- লাইনটির সাদৃশ্য রয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “মানুষ মানুষের জন্য”- উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে উক্তিটির যৌক্তিকতা বিচারের দাবি রাখে।

✍ মানুষ সংসারে একা বাস করতে পারে না। জীবনের সমস্ত মৌলিক প্রয়োজনীয়তা পূরণের ক্ষেত্রেই একজন অন্যজনের মুখাপেক্ষী। এই মুখাপেক্ষিতা সরলভাবে স্বীকার করার নামই ভালোবাসা, আর অস্বীকার করার মাধ্যমে সৃষ্ট অনাচারের নাম হিংসা।

✍ উদ্দীপকের কবি পৃথিবীর সমস্ত মানুষকে একই কাতারে বন্দি করেছেন। কবির মতে, পৃথিবীর কেউ বনেদি বা গর-বনেদি নয়, সবাই মানুষ। এই পৃথিবীর মাটি সকলের জন্মস্থান, এর মাধ্যমে মূলত কবি পৃথিবীর মানুষের মনে অন্যের প্রতি সহমর্মিতা ও মানবতাবোধকে জাগিয়ে তুলতে চেয়েছেন। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবিও ভালোবাসার ব্যাপ্তির মাধ্যমে পৃথিবীতে মানবতার জয়গান গাওয়ার অনুপ্রেরণা জুগিয়েছেন।

✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবিকণ্ঠে ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা খুব বেশি প্রকট হয়ে উঠেছে। কারণ বর্তমান পৃথিবীতে শুধু অস্থিরতা, শুধুই হানাহানি। ফলে ধীরে ধীরে পৃথিবী এগিয়ে যাচ্ছে ধ্বংসের দিকে। পৃথিবী ও মানুষকে এই আসন্ন ধ্বংস থেকে রক্ষা করতে পারে একমাত্র ভালোবাসা, এর মধ্য দিয়ে মানুষ সহমর্মিতাবোধ সৃষ্টি করবে, পৃথিবীতে নেমে আসবে শান্তি। মানুষ মানুষের জন্য সহায়ক হবে। সুতরাং প্রশ্নোক্ত উক্তিটি সঠিক ও যথার্থ।


সেই অস্ত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
অধিক মুনাফার লোভে অপর্যাপ্ত পরিসরে অসংখ্য মানুষকে কাজ করতে বাধ্য করে একশ্রেণির ক্ষমতাবান ও ধনিক শ্রেণির মানুষ। সাভারের রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি এই লোভের পরিণাম কেই জাতির সামনে তুলে ধরেছে।
ক.  ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় আধিপত্যের প্রতি মানুষের কী রয়েছে?
খ.  ‘পৃথিবীর যাবতীয় অস্ত্র’ বলতে কী বোঝ?- ব্যাখ্যা কর।
গ.  “মানব বসতির বুকে মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত”- চরণটির সাথে উদ্দীপকের রানা প্লাজার পতনের বিষয়টি তুলনা কর।
ঘ.  “রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি মূলত লোভের কারণেই সংঘটিত হয়েছে”- ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে উক্তিটির সাদৃশ্য নির্ধারণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় আধিপত্যের প্রতি মানুষের লোভ রয়েছে।

খ. অনুধাবন
✍ ‘পৃথিবীর যাবতীয় অস্ত্র’ বলতে পৃথিবীর সেই সকল অস্ত্রকে বোঝানো হয়েছে, যেগুলো সৃষ্টি হয় শুধু ধ্বংসযজ্ঞ সৃষ্টির জন্যই।

✍ প্রাগৈতিহাসিক সময়ে মানুষ অস্ত্র তৈরি করেছিল আত্মরক্ষার জন্য। ধীরে ধীরে সভ্যতার উৎকর্ষ যত ঘটেছে অস্ত্রও তত আগ্রাসী হয়ে পড়েছে। এখন অস্ত্র তৈরি হয় শুধু ধ্বংসের জন্য। নিরপরাধকে আঘাত করার জন্য। পৃথিবীর এই ভয়াবহ অস্ত্রসমূহের কারণে মানবজাতি দারুণভাবে বিপদাপন্ন।

গ. প্রয়োগ
✍ “মানববসতির বুকে মুহূর্তের অগ্নুৎপাত”- লাইনটির সাথে উদ্দীপকের রানা প্লাজার পতনের সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ পৃথিবীতে সামান্য পরিমাণ মানুষ খুবই ধনী। আর বিপুলসংখ্যক মানুষ গরিব ও সাধারণ। এই সাধারণ মানুষগুলোর জীবনাচারও সাধারণ। কিন্তু এদের শান্তিভাব বজায় থাকে না। ধনিক শ্রেণির লোভের আগুনে এসব সাধারণ মানুষের সুখের নীড় ঝলসে যায়।

✍ উদ্দীপকে ধনিক শ্রেণির লোভের পরিণাম ও জনসাধারণের ভাগ্যের নির্মম পরিণতি পাওয়া যায়। যার উদাহরণ হলো রানা প্লাজা মালিকের লোভের আগুনে কর্মরত অসংখ্য মানুষ ভবন ধসে মারা যায়। অথচ তারা এজন্য কোনোভাবেই দায়ী নয় এবং প্রস্তুতও ছিল না। এ আকস্মিক মৃত্যুবাণকেই ‘সেই অস্ত্র’ “কবিতায় ‘মানব বসতির বুকে মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত” হিসেবে আখ্যা দেয়া হয়েছে, যা উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্য।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘রানা প্লাজা ট্র্যাজেডি মূলত লোভের কারণেই সংঘটিত হয়েছে’- উক্তিটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে যৌক্তিক হিসেবে বিবেচনা করা যায়।

✍ লোভ হলো বাড়তি প্রাপ্তির মানসিক প্রণোদনা এবং এই প্রাপ্তি অবশ্যই আসে অন্যায় সংঘটনের মাধ্যমে। মানুষের মনে লোভ জাগলে সে সহজেই অন্যায় করতে পারে। অন্যের মৌলিক অধিকার হরণ করতে পারে। মূলত যাদের অন্তরে লোভ থাকে, তারা পশুর মতোই হিংস্র।

✍ উদ্দীপকে রানা প্লাজার ট্র্যাজেডির কথা পাওয়া যায়। এটা মূলত পোশাক শিল্পের ঘটনা, যেখানে অপ্রতুল পরিবেশে অধিক লোকবল নিয়োগ করে অন্যায়ভাবে অধিক উৎপাদনের পদক্ষেপ নেয়া হয়েছিল। দুর্বল স্থাপনা হওয়ার কারণে হঠাৎ করেই রানা প্লাজা ধসে পড়ে এবং সেখানে কর্মরত অনেক মানুষ মৃত্যুবরণ করে। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে বলা যায়, এর জন্য দায়ী হলো মালিক পক্ষের লোভ।

✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতাটি মূলত হিংসা নয়, ভালোবাসার কবিতা। এখানে কবি বিপন্ন পৃথিবীকে বাঁচাতে ভালোবাসার প্রয়োজনীয়তা প্রকাশ করেছেন। ভালোবাসা থাকলে পৃথিবীতে আর অনাচার ঘটবে না; বরং ঘরে ঘরে বিরাজ করবে সুখের বাতাস। মূলত ভালোবাসা না থাকার কারণেই মানুষ লোভী হয়। অন্যের অধিকার আর জীবন নিয়ে খেলা করে। যদি রানা প্লাজার মালিক পক্ষ লোভী না হতো, তবে এ দুর্ঘটনা হতো না, যা প্রশ্নোক্ত উক্তির যথার্থতা নিশ্চিত করে।


সেই অস্ত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
১৯৭১ সাল, বাংলার বুকে মৃত্যুর তাণ্ডব, হন্তারকের কালো থাবায় ছোপ ছোপ রক্ত। ভূলুণ্ঠিত বাংলার সৌন্দর্য-সম্ভ্রম। দিগন্তে দিগন্তে আগুনের কালো ধোঁয়া। মৃত্যুর তাণ্ডবে থমকে আছে দখিনা বাতাস। সেখানে ফুলের সৌরভ নেই। শুধু লাশের গন্ধ, শুধু কচি প্রাণের ভীষণ চিৎকার।
ক.  ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কোথায় নক্ষত্র খচিত থাকে?
খ.  কী কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ পঙ্গু-বিকৃত হয়?- ব্যাখ্যা কর।
গ.  উদ্দীপকের ১৯৭১ সালের যুদ্ধের সাথে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার মানুষের সৃষ্ট হিংস্রতার সাদৃশ্য দেখাও।
ঘ.  ‘সেই অস্ত্র’ কবিতা ও উদ্দীপকে যে ভয়াবহতা প্রকাশ পেয়েছে, তার অন্যতম কারণ হলো ভালোবাসার ঘাটতি- এ বিষয়ে তোমার মতামত বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় আকাশে নক্ষত্র খচিত থাকে।

খ. অনুধাবন
✍ মানব বসতির বুকে হঠাৎ অগ্ন্যুৎপাত তথা মানুষের সৃষ্ট অনাচারের কারণে লক্ষ লক্ষ মানুষ পঙ্গু-বিকৃত হয়।

✍ ক্ষমতার লোভে পৃথিবীর ক্ষমতাসীনরা প্রতিনিয়ত লড়াই করছে। যুদ্ধ করে দিগন্ত জ্বালিয়ে দিচ্ছে। সাধারণ মানুষের মধ্যে মৃত্যুর মহামারী ছড়িয়ে দিচ্ছে। শুধু ক্ষমতালোভী প্রভুদের অনাসৃষ্টিতে অসংখ্য সাধারণ শান্তিকামী জীবন অশান্তিতে ভরে যাচ্ছে। লক্ষ লক্ষ মানুষ এ জন্যই পঙ্গু-বিকৃত হচ্ছে।

গ. প্রয়োগ
✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় মানুষের হিংস্রতার যে রূপ প্রকাশ পেয়েছে, তার সাথে উদ্দীপকের ১৯৭১ সালের মুক্তিযুদ্ধের সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ আধিপত্য ও ক্ষমতার লোভে মানুষ যুদ্ধ করে, রাজ্য বিস্তারের লোভে অন্য রাজ্যের জনসাধারণের জীবনে বইয়ে দেয় রক্তের স্রোত। এর উপমা মানব ইতিহাসে অসংখ্যবার রচিত রয়েছে।

✍ উদ্দীপকে ১৯৭১ সালের ভয়াবহতার কথা আলোকিত হয়েছে। এদেশের বুকে সে সময় নেমে এসেছিল পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী। রাতের আঁধারে তারা শহরের বুকে রক্তগঙ্গা বইয়ে দিয়েছিল। অগণিত মানুষের লাশে সারাদেশ ভরে গিয়েছিল। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি এই হিংস্রতার কথা উলে­খ করেছেন। কবির মতে, যুদ্ধ লক্ষ লক্ষ মানুষকে পঙ্গু আর বিকৃত করে, যা উদ্দীপকের স্বাধীনতা যুদ্ধের সাথে সাদৃশ্য সৃষ্টি করে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতা ও উদ্দীপকে যে ভয়াবহতা প্রকাশ পেয়েছে, তার অন্যতম কারণ হলো ভালোবাসার ঘাটতি- এ বিষয়ে আমি ঐকমত্য পোষণ করি।

✍ যুদ্ধ কিংবা দাঙ্গা এসব আসে হিংস্রতা থেকে। হিংস্রতা ভালোবাসার সম্পূর্ণ বিপরীতে অবস্থান করে। যেখানে ভালোবাসা আছে, সেখানে কখনোই হিংস্রতা থাকতে পারে না।

✍ উদ্দীপকে ১৯৭১ সালে এদেশে ঘটে যাওয়া বর্বরতার চিত্র ফুটে উঠেছে। পশ্চিম পাকিস্তানি হানাদাররা রাতের অন্ধকারে এদেশের বুকে শ্বাপদের মতো নেমে এসেছিল। ঘন অন্ধকারে মুহূর্তের মধ্যে সমস্ত দেশে মৃত্যুর স্রোত বইয়ে দিল। এ ভয়াবহতা ‘সেই অস্ত্র’ কবিতাতেও পাওয়া যায়। কবি যুদ্ধের ভয়াবহতা দেখিয়েছেন পঙ্গু আর বিকৃত মানুষের আর্তচিৎকারে।

✍ ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি ভালোবাসার ব্যাপ্তি ঘটানোর জন্য সকলের কাছে করুণ আবেদন করেছেন। কবির মতে একমাত্র ভালোবাসাই পারে এ পৃথিবী থেকে সমস্ত পঙ্কিলতা আর যুদ্ধ দূর করতে। এই সূত্র থেকে বলা যায়, যদি পশ্চিম পাকিস্তানি মানুষের মনে মানবতার প্রতি ন্যূনতম ভালোবাসা থাকত, তবে তারা ১৯৭১ সালে বর্বরতা চালাত না। এর দ্বারাই প্রমাণ হয় যে, সকল যুদ্ধ সংঘটনের একমাত্র কারণ হলো ভালোবাসাহীনতা।


সেই অস্ত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
বঙ্গোপসাগরের লঘুচাপের ফলে সৃষ্ট প্রলয়ঙ্করী ঘূর্ণিঝড়, আইলা, সিডর যে ভয়াবহ আঘাত হানে সুন্দরবন তার বুক দিয়ে প্রথম চরম ধাক্কাগুলো প্রতিহত করে, গোটা দেশকে সুরক্ষা দেয়। সকল প্রকার দূষণকে হজম করে সে আমাদের জন্য অক্সিজেন ও নির্মল বাতাস সরবরাহ করে। আর বাংলাদেশের বুকে ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য নদ-নদী আমাদের সুরক্ষা দেয় বন্যার কবল থেকে মুক্ত রেখে। আমাদের স্বার্থেই এগুলো রক্ষা করা তাই আমাদের জন্য অত্যাবশ্যকীয় কর্তব্য।
ক.  কবি কেমন নদী দেখতে চান?
খ.  “অরণ্য হবে আরও সবুজ” বলতে কবি কী নির্দেশ করেছেন?
গ.  উদ্দীপকটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কোন বিষয়টি তুলে ধরে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ.  “উদ্দীপকটি ‘ সেই অস্ত্র’ কবিতার সম্পূর্ণ ভাবকে মূর্ত করে তোলে।”-মন্তব্যটির যথার্থতা যাচাই কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ কবি কল্লোলিত নদী দেখতে চান।

খ. অনুধাবন
✍ “অরণ্য হবে আরও সবুজ” বলতে কবি গাছপালা বৃদ্ধির প্রয়োজনীয়তাকে নির্দেশ করেছেন।

✍ জীবনধারণের জন্য মানুষের প্রয়োজনীয় অক্সিজেন গাছের মাধ্যমেই সরবরাহ হয়। অথচ এই মানুষই প্রতিনিয়ত একের পর এক গাছ ধ্বংস করে চলেছে নিজের ব্যক্তিস্বার্থের তাগিদে। অপরপক্ষে গাছপালা বৃদ্ধির মাধ্যমে যেমন একদিকে প্রাকৃতিক সৌন্দর্য বৃদ্ধি পাবে, অন্যদিকে তেমনি মানুষের স্বাভাবিক জীবন হবে সুরক্ষিত। আলোচ্য কথাটি দিয়ে কবি এটিই নির্দেশ করেছেন।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার প্রকৃতি রক্ষার অপরিহার্যতার বিষয়টিকে তুলে ধরে।

✍ বিনষ্ট করো না এবং অতিরিক্ত চেয়ো না- এটা প্রকৃতির আইন। আর তাই সুযোগসন্ধানী মানুষ প্রকৃতিকে যত ধ্বংস করেছে প্রকৃতি ততটাই মানুষের প্রতি বিরূপ প্রভাব নিয়ে আবির্ভূত হয়েছে। বর্তমানে প্রকৃতিকে রক্ষা করা মানুষের জন্য অপরিহার্য হয়ে দাঁড়িয়েছে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, সুন্দরবন বঙ্গোপসাগর থেকে সৃষ্ট ঘূর্ণিঝড়কে প্রতিহত করে আমাদের দেশকে সুরক্ষা দিয়ে আসছে। আমাদের জন্য সরবরাহ করছে প্রয়োজনীয় অক্সিজেন। আর নদীগুলো বন্যার প্রকোপকে অনেকটাই কমিয়ে দিয়েছে। প্রকৃতির এসব উপাদানকে রক্ষা করা মানুষের জন্য আবশ্যকীয় কর্তব্য বলে মনে করা হচ্ছে। অন্যদিকে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি পৃথিবীতে ভালোবাসা ব্যাপ্ত করে প্রকৃতিকে আরও সুন্দর করে তুলতে চান। কল্লোলিত নদীর পাশাপাশি অরণ্যকে তিনি দেখতে চান আরও সবুজরূপে। কারণ এগুলোই মানুষের সুস্থ স্বাভাবিক জীবনযাপনে একটা বড় ভূমিকা পালন করে। মূলত উদ্দীপকটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার প্রকৃতি রক্ষার প্রয়োজনীয়তাকেই গুরুত্বসহকারে তুলে ধরেছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “উদ্দীপকটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার সম্পূর্ণ ভাবকে মূর্ত করে তোলে।”- মন্তব্যটি যথার্থ নয়।

✍ ভালোবাসার মাধ্যমেই জগৎকে সুন্দর করে তোলা যায়। প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসা, প্রাণিজগতের প্রতি ভালোবাসা কিংবা মানুষের প্রতি ভালোবাসাই মানুষকে যথার্থ জীবনযাপনে সাহায্য করে। এই ভালোবাসার প্রতিদানও মানুষ কোনো না কোনোভাবে পেয়ে যায়। উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতা উভয়ক্ষেত্রে এই ভাব প্রকাশ পেলেও ব্যাপকতার পার্থক্য দেখা যায়।

✍ উদ্দীপকে মানবজীবনে প্রকৃতির বিশেষ ভূমিকাকে তুলে ধরা হয়েছে। এখানে সুন্দরবন একদিকে মানুষকে ঝড় থেকে রক্ষা করছে অন্যদিকে অক্সিজেন আর নির্মল বাতাস দিয়ে সাহায্য করছে প্রতিনিয়ত। এমনকি নদীগুলো মানুষকে বন্যার কবল থেকে রক্ষা করে চলেছে নীরবে। এজন্য প্রকৃতিকে ভালোবেসে রক্ষা করার প্রতি জোর দেয়া হয়েছে। কিন্তু ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার কথা একদিকে যেমন বলা হয়েছে অন্যদিকে তেমনি মানুষের প্রতি ভালোবাসার সমান আকাক্সক্ষাও প্রকাশ পেয়েছে। এ কবিতায় কবি ভালোবাসার অস্ত্র প্রয়োগ করে প্রকৃতি ধ্বংসকারী অস্ত্রকে ধ্বংস করতে চান। যুদ্ধকে থামিয়ে দেয়ার জন্য তাঁর কাছে ভালোবাসাই মুখ্য। এমনকি মানুষকে এক কাতারে বন্দি করার জন্য কবির কাছে ভালোবাসার কোনো বিকল্প নেই।

✍ উদ্দীপকে শুধু প্রকৃতির প্রতি ভালোবাসার ভাবটিকে তুলে ধরা হয়েছে, কিন্তু ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় প্রকৃতি ছাড়াও সমগ্র মানুষের মধ্যে ভালোবাসাকে ব্যাপ্ত করার ভাব রপ্ত করা হয়েছে। এজন্য বলা যায়, উদ্দীপকটি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আংশিক ভাবকে ধারণ করে, সম্পূর্ণটি নয়।


সেই অস্ত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৯
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
ইসরাইল ও ফিলিস্তিন অধ্যুষিত একটি অঞ্চল গাজা। এই অঞ্চলটি দখল করার জন্য ইসরাইল প্রতিনিয়ত পশুর মতো নির্বিচারে মানুষ মারছে। সন্ত্রাস দমনের নামে তারা গুলি ছুঁড়ছে, বোমা ফেলছে একের পর এক। কিছু সামরিক লোকের সাথে মৃত্যুর মুখে পতিত হচ্ছে অসহায় নারী, শিশু, বৃদ্ধসহ সর্বশ্রেণির মানুষ। আবার বেঁচে থেকেও বোমার আঘাতে কাউকে বা বরণ করে নিতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব। তাই জাতিসংঘ দীর্ঘদিন ধরে এই অঞ্চলে শান্তি প্রতিষ্ঠার চেষ্টা করে আসছে।
ক.  নক্ষত্রখচিত আকাশ থেকে কী ঝরে?
খ.  “মানব বসতির বুকে মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত” বলতে কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ.  উদ্দীপকের সাথে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কোন বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ? ব্যাখ্যা কর।
ঘ.  “যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের প্রত্যাশা আর ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কবির প্রত্যাশা যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।”-মন্তব্যটির যথার্থতা বিচার কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ নক্ষত্রখচিত আকাশ থেকে আগুন ঝরে।

খ. অনুধাবন
✍ “মানববসতির বুকে মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত” বলতে কোনো জনবসতিপূর্ণ স্থানে বোমা নিক্ষেপের ফলে যে ধবংসলীলা সৃষ্টি হয়- কবি তাকেই বুঝিয়েছেন।

✍ মানুষ মানুষেরই জন্য। আবার এই মানুষই অন্য মানুষের ধ্বংসের কারণ। নিজের ক্ষমতা প্রদর্শন আর আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য এই ক্ষমতাধররা বোমা মেরে জনবসতি পরিণত করে ধ্বংসস্তূপে। আলোচ্য কথাটি দিয়ে কবি এটিই বুঝিয়েছেন।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের সাথে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার যুদ্ধের ভয়াবহ পরিস্থিতিতে মানুষের অসহায়তার বিষয়টি সাদৃশ্যপূর্ণ।

✍ যুদ্ধ সবসময়ই ভয়ঙ্কর। আর এই ভয়াবহ পরিস্থিতির সবচেয়ে বেশি শিকার হতে হয় বেসামরিক অসহায় মানুষগুলোকে। উদ্দীপক ও ‘ সেই অস্ত্র’ কবিতায় এই বিষয়টিই যেন জীবন্ত হয়ে উঠেছে।

✍ উদ্দীপকে ‘গাজা’ নামক অঞ্চলটিতে নিজেদের অধিকার প্রতিষ্ঠার জন্য ইসরাইল যুদ্ধ শুরু করেছে। তারা নির্বিচারে গুলি ছুঁড়ছে, বোমা নিক্ষেপ করছে। সেই গুলি আর বোমার আঘাতে যতজন সামরিক লোক নিহত হচ্ছে তার চেয়ে বহুগুণে মৃত্যুবরণ করছে অসহায় বেসামরিক মানুষ। আর যারা বেঁচে থাকছে তাদের মেনে নিতে হচ্ছে মানবেতর জীবন। ঠিক একইভাবে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় মানুষের জীবন মুহূর্তের মধ্যে নির্বাপিত হয়ে যাচ্ছে। সেখানে আকাশ থেকে আগুন ঝরে পড়ার মতো করে বোমা পড়ছে, মানুষ মরছে। আর তারই সাথে লক্ষ লক্ষ মানুষকে বরণ করতে হচ্ছে পঙ্গুত্ব কিংবা বিকৃতি। বস্তুত যুদ্ধ নামের ধ্বংসলীলার মধ্যে সাধারণ মানুষের অসহায়তার এই বিষয়টিতে উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার মধ্যে সাদৃশ্য লক্ষ করা যায়।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ যুদ্ধকে কেন্দ্র করে জাতিসংঘের প্রত্যাশা আর ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবির প্রত্যাশা যেন একই মুদ্রার এপিঠ-ওপিঠ।” -মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ কেউ যুদ্ধ করে মুক্তির জন্য, কেউ বা আবার আধিপত্য প্রতিষ্ঠার জন্য যুদ্ধে নেমে পড়ে। কিন্তু কারণ যাই হোক, যুদ্ধে দুই পক্ষকেই কমবেশি ক্ষতিগ্রস্ত হতে হয়। তাই এই যুদ্ধের পরিবর্তে শান্তি প্রতিষ্ঠার জন্য কাউকে না কাউকে পালন করতে হয় অগ্রণী ভূমিকা।

✍ উদ্দীপকে অশান্ত গাজা অঞ্চলে মানুষের জীবনের কোনো নিশ্চয়তা নেই। যুদ্ধের করাল গ্রাসের সামনে বসে মানুষকে যেন মৃত্যুর প্রহর গুনতে হয়। পঙ্গুত্ব নিয়ে বেঁচে থেকে কাউকে আবার পরনির্ভরশীল হয়ে দিনাতিপাত করতে হয়। অশান্তির বুকে শান্তির বিস্তার ঘটাতে জাতিসংঘ তাই কাজ করে চলেছে। ঠিক তেমনি ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবিও ভালোবাসা নামক শান্তির বাণীতে মানব বসতির বুকে মুহূর্তের অগ্ন্যুৎপাত বন্ধ করতে চান। কারণ সেখানেও নাগাসাকি, হিরোশিমার মতো লক্ষ লক্ষ মানুষ বোমার আঘাতে হয়ে পড়েছে পঙ্গু, বিকৃত। কবি তাই চান না আকাশ থেকে আর কোনো বোমা পড়ুক কিংবা ট্রয় নগরীর মতো অন্য কোনো অঞ্চল ধ্বংস হোক। এজন্য তিনি পৃথিবীতে ভালোবাসা ব্যাপ্ত করতে চান।

✍ পরিশেষে বলা যায়, উদ্দীপকে মানুষের মধ্যে শুভবোধ জাগিয়ে জাতিসংঘ শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চায় এবং ‘ সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি ভালোবাসার অস্ত্র দিয়ে যুদ্ধাবসান ঘটিয়ে সেখানে শান্তি প্রতিষ্ঠা করতে চান। এই বিবেচনায় বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি সঠিক ও যথার্থ।


সেই অস্ত্র
সৃজনশীল প্রশ্ন-১০
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
কমলবাবু আর রহিম মিয়া একই গ্রামের দুইজন বন্ধুসুলভ প্রতিবেশী। জীবনের প্রতিটা ক্ষেত্রে তারা একে-অপরকে সাহায্য করে এসেছে নিঃস্বার্থভাবেই। অথচ তাদের ছেলেমেয়েরা তুচ্ছ সব ঘটনা নিয়ে এখন প্রায়ই জড়িয়ে পড়ে ধর্মীয় বিবাদে। শুরু হয় হিংসা, বিদ্বেষ, জাত্যভিমান আর অহংকারের বাড়াবাড়ি। আরও পরে আড়তের ব্যবসাকে কেন্দ্র করে ভেদাভেদ সূচিত হয় ভাইয়ে ভাইয়ে। তারা এখন শুধু বসবাস সূত্রে দূরে নয়, মনের দিক দিয়েও একে অপরের থেকে সম্পূর্ণ বিচ্ছিন্ন।
ক.  কবি পৃথিবীতে কী ব্যাপ্ত করতে বলেছেন?
খ.  মানুষের আধিপত্যের লোভকে কবি নিশ্চি‎হ্ন করতে চান কেন?
গ.  উদ্দীপকে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার কোন বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ.  “একমাত্র ভালোবাসাই মানুষের ভেদাভেদ দূর করে সমাবিষ্ট করতে পারে।”- উদ্দীপক ও ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার আলোকে মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ কবি পৃথিবীতে ভালোবাসা ব্যাপ্ত করতে বলেছেন।

খ. অনুধাবন
✍ মানুষের মধ্যে সমতা বিধানের জন্য কবি মানুষের আধিপত্যের লোভকে নিশ্চি‎হ্ন করতে চান।

✍ পৃথিবীতে মানুষ যত পায় ততই চায়। এই পর্যায়ক্রমিক চাওয়া থেকে সে একসময় রূপান্তরিত হয় আধিপত্যবাদীতে। আধিপত্যবাদী এই মানুষের লোভের কারণে সাধারণ মানুষেরা বঞ্চিত হয় তাদের প্রাপ্তি থেকে। এজন্য কবি আধিপত্যের লোভকে নিশ্চি‎হ্ন করতে চান।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার অন্তর্গত মানুষে-মানুষে বিচ্ছিন্নতার বিষয়টি প্রাধান্য পেয়েছে।

✍ মানুষে-মানুষে যখন ভেদাভেদ সৃষ্টি হয় তখন প্রতিটা মানুষই হয়ে পড়ে এক একটা বিচ্ছিন্ন দ্বীপের মতো। এমনকি মানুষের মনটাও তখন হয়ে পড়ে অনেক বেশি সংকুচিত। সবচেয়ে বড় কথা যেটি- এ পর্যায়ে মানুষের জীবন হয়ে যায় যান্ত্রিক, ভালোবাসাশূন্য।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, ধর্মীয় বিবাদকে কেন্দ্র করে দুই পরিবারের ছেলে-মেয়েদের মধ্যে বিচ্ছেদের প্রথম সূত্রপাত। পরবর্তীতে সেই বিচ্ছেদ আরও বেশি বিস্তৃত হয়েছে আড়তের ব্যবসা নিয়ে। এক পর্যায়ে নিজের ভাই থেকেই তারা সরে গেছে অনেক দূরে। অর্থাৎ, নিজ নিজ আধিপত্য প্রতিষ্ঠা করতে গিয়ে মানুষ হিসেবে তারা এখন একে-অপর থেকে বিচ্ছিন্ন। ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবিও এই বিচ্ছিন্নতা নিয়ে উদ্বিগ্ন। মানুষ যখন নিজের চাওয়াটাকে প্রধানরূপে বিবেচনা করে অন্যের চাওয়াকে হেয় জ্ঞান করে তখনই এই বিচ্ছিন্নতা মানুষের ওপর ভর করে। কবি তাই ভালোবাসা দিয়ে এই বিচ্ছিন্ন মানুষদের সমাবিষ্ট করতে চান। বস্তুতপক্ষে উদ্দীপকে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতার একটি বিষয় মানুষে-মানুষে বিচ্ছিন্নতাকে গুরুত্ব দিয়ে তুলে আনা হয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “একমাত্র ভালোবাসাই মানুষের ভেদাভেদ দূর করে সমাবিষ্ট করতে পারে।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ মানুষের মধ্যে যখন হিংসা-বিদ্বেষ, অহংকার আর জাত্যভিমান বাসা বাঁধে তখন মানুষের মনুষ্যত্বের অপমৃত্যু ঘটে। মানুষ একে অপরের প্রতি মুহূর্তেই হয়ে ওঠে আগ্রাসী। এই মানুষের শুভবুদ্ধি তখন নেমে আসে শূন্যের কোঠায়, সেক্ষেত্রে কেবল ভালোবাসার রসই ভেদাভেদের শক্ত মাটিকে সমাবিষ্ট করে উর্বর করে তুলতে পারে।

✍ উদ্দীপকে কমলবাবু আর রহিম মিয়া একে-অপরের প্রতি সহানুভূতি, সৌহার্দ আর ভালোবাসা ছিল বলে বসবাস করতে পেরেছিল শান্তিতে। অথচ তাদের ছেলে-মেয়েরা জাত্যভিমান, ঈর্ষা, হিংসা আর অহংকারের ছোবলে পড়ে বিচ্ছিন্নতার জ্বালা ভোগ করতে বাধ্য হয়েছে। কেননা, ভালোবাসা পাওয়া কিংবা দেয়ার মতো মনের অধিকারী কেউ ছিল না। অর্থাৎ, ভালোবাসাহীনতার জন্যই তাদের এই দুরবস্থা। অন্যদিকে ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি বুঝেছেন, পৃথিবীতে ভালোবাসার অভাবেই ঘৃণা, বিদ্বেষ, অহংকার জাত্যভিমানের দৌরাত্ম্য বৃদ্ধি পেয়েছে। ভালোবাসা থাকলে এগুলোর বৃদ্ধি হতো না, বিচ্ছিন্নতা সৃষ্টি হতো না মানুষের মধ্যে। কবি তাই পৃথিবীতে ভালোবাসা ব্যাপ্ত করতে চান। মানুষকে সমাবিষ্ট করার জন্য কবির কাছে ভালোবাসাই মুখ্য হাতিয়ার।

✍ উদ্দীপকের মানুষগুলো ভালোবাসাহীনতার কারণেই বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েছে। আর ‘সেই অস্ত্র’ কবিতায় কবি মানুষকে সমাবিষ্ট করার জন্য ভালোবাসাকেই একমাত্র হাতিয়ার মনে করেছেন। তাই একমাত্র ভালোবাসাই মানুষের ভেদাভেদ দূর করে মানুষকে সমাবিষ্ট করতে পারে।

No comments:

Post a Comment