G

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১০ pdf download

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sociology 2nd Paper Srijonshil question and answer pdf download.

সমাজবিজ্ঞান
দ্বিতীয় পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১০

HSC Sociology 2nd Paper
Srijonshil
Question and Answer pdf download

১. রাহেলার বিয়ে হয় তিন বছর আগে। তার দিনমজুর স্বামী হঠাৎ অসুস্থ হয়ে মারা যায়। সন্তানদের নিয়ে তার কষ্টে দিন কাটে। এরপর স্থানীয় একটি বেসরকারি সংস্থা হতে কিছু টাকা নিয়ে সে হাঁস-মুরগীর খামার গড়ে তোলে। অন্যদিকে অভাবী সখিনা রাহেলার মত টাকা নিয়ে শাক-সবজির বাগান করে পরিবারের আয় বৃদ্ধি করছে। তাদের সন্তানেরা স্কুলে লেখাপড়া করছে। 
ক. সরকারি সংস্থা কী?
খ. বৃক্ষ নিধনের ফলে কী সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে?
গ. উদ্দীপকে বেসরকারি সংস্থার যে কার্যক্রম প্রতিফলিত হয়েছে তা ব্যাখ্যা করো।
ঘ. গ্রামীণ নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে বেসরকারি সংস্থা কীভাবে ভূমিকা রাখে? বিশ্লেষণ করো।

❖ ১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সরকারি সংস্থা বলতে সম্পূর্ণরূপে সরকারি ব্যবস্থাপনায় পরিচালি প্রতিষ্ঠানকে বোঝায়।

খ. বৃক্ষ নিধনের ফলে নানা ধরনের প্রাকৃতিক সমস্যা সৃষ্টি হতে পারে। যেমন- বৃক্ষ নিধনের ফলে বায়ুমন্ডলে কার্বন ডাই-অক্সাইপের পরিমাণ বৃদ্ধি পাবে এবং বিশ্ব ক্রমাগত উষ্ণ হবে। ফলাফলস্বরূপ, পরিবেশ তার ভারসাম্য হারাবে এবং ঘন ঘন খরা, বন্যা, ঘূর্ণিঝড়, ভূমিকম্পের মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগ দেখা দিবে, যা সমাজজীবনে নেতিবাচক প্রভাব বিস্তার এবং স্বাভাবিক জীবনযাত্রাকে ব্যাহত করবে।

গ. উদ্দীপকে বেসরকারি সংস্থার ঋণদানমূলক কার্যক্রম প্রতিফলিত হয়েছে।
বেসরকারি সংস্থাসমূহ আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন ধরনের কার্যক্রম যেমন- গ্রামীণ উন্নয়ন, দারিদ্র্য বিমোচন, ঋণদান, কর্মসংস্থান সৃষ্টি, শিক্ষার উন্নয়ন, টিকাদান কর্মসূচি, পরিবার পরিকল্পনা বাস্তবায়ন প্রভৃতি কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে। এগুলোর মধ্যে ঋণ প্রদান কর্মসূচি বেসরকারি সংস্থার অন্যতম একটি কার্যক্রম। গ্রামীণ আর্থ সামাজিক অবস্থার উন্নয়নের লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থাগুলো বিভিন্ন খাতে ঋণ প্রদান করে থাকে। এসব খাতের মধ্যে রয়েছে- হাঁস-মুরগি পালন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প গঠন, মৎস্য চাষ, শাকসবজির বাগান, সার ক্রয়, গরু পালন ইত্যাদি। উদ্দীপকে দেখা যায়, রাহেলার স্বামীর মৃত্যুর পর সে বেসরকারি সংস্থা হতে কিছু টাকা নিয়ে হাঁস-মুরগির খামার গড়ে তুলে আর্থিকভাবে স্বচ্ছল হয়ে ওঠে। আবার রাহেলার ন্যায় সখিনাও একইভাবে টাকা নিয়ে শাকসবজির বাগান গড়ে তুলে পরিবারের আয় বৃদ্ধিতে ভূমিকা রাখছে। পূর্বোক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, উদ্দীপকে বেসরকারি সংস্থার ঋণদানমূলক কার্যক্রম প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. গ্রামীণ নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের ক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থা প্রশিক্ষণ ও ঋণদানের মাধ্যমে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। গ্রামীণ নারীদের আর্থ-সামাজিক অবস্থা উন্নয়নের মাধ্যমে নারীর ক্ষমতায়ন বৃদ্ধি বেসরকারি সংস্থার অন্যতম উদ্দেশ্য। এ লক্ষ্যে বেসরকারি সংস্থা গ্রামীণ নারীদের আত্মকর্মসংস্থানের প্রতি গুরুত্ব প্রদান করে। এক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থাসমূহ নারীদেরকে বিভিন্ন ধরনের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। যেমন- হাঁস-মুরগি পালন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, মৎস্য চাষ, শাকসবজির বাগান প্রভৃতি ক্ষেত্রে গ্রামীণ দুস্থ, অসহায় ও দরিদ্র নারীদের প্রশিক্ষণ প্রদান করে থাকে। শুধু প্রশিক্ষণ প্রদান নয় বরং প্রশিক্ষণ শেষে ঋণের ব্যবস্থাও করে থাকে। যার ফলে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারে। এভাবে বেসরকারি সংস্থা গ্রামীণ নারীদের আত্মকর্মসংস্থানে ভূমিকা রাখে।

২. মিসেস আমিনা এবং মুনির সাহেব দুটি আলাদা প্রতিষ্ঠানের প্রধান ব্যক্তি। দেশি-বিদেশী বিভিন্ন উৎস থেকে টাকা সংগ্রহ করে মিসেস আমিনা গ্রামীণ দরিদ্র নারীদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে ব্যবহার করেন। অন্যদিকে মুনির সাহেব গরীব, অশিক্ষিত ও অসহায় মানুষের কল্যাণে কাজ করেন, যা বিভিন্ন মন্ত্রণালয় থেকে সরাসরি মনিটরিং করা হয়। 
ক. গ্রামীণ ব্যাংক কোন ধরনের সংস্থা? 
খ. ‘কুমিল্লা মডেল' - বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকের মিসেস আমিনা কোন ধরনের প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন? তোমার পাঠ্যবইয়ের আলোকে ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে মিসেস আমিনা ও মুনির সাহেবদের প্রতিষ্ঠান একসাথে কাজ করলে সর্বাধিক সাফল্য অর্জিত হবে। তুমি কি একমত? উত্তরের সপক্ষে যুক্তি দাও। 

❖ ২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. গ্রামীন ব্যাংক হলো জামানতবিহীন ক্ষুদ্র ঋণ প্রদানকারী বেসরকারি সংস্থা।

খ. বাংলাদেশ পল্লী উনণয়ন একাডেমী বার্ড. থেকে উদ্ভূত ও বিকশিত একটি গ্রামোন্নয়ন উদ্যোগ হলো কুমিল্লা মডেল। কুমিল্লা মডেল হলো কুমিল্লা জেলা শহরে অবস্থিত এমন একটি প্রশিক্ষণ গবেষণা প্রতিষ্ঠান যা তৃণমূল পর্যায়ের জনগণ তথা কৃষকদের প্রত্যক্ষ অংশগ্রহণের মাধ্যমে ও সমবায়ের ভিত্তিতে কৃষি ও পল্লী উনণয়ন কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। উন্নত কৃষি পদ্ধতির প্রসার ঘটানো, প্রযুক্তিগত উদ্ভাবনসমূহ প্রয়োগে কৃষকদের উৎসাহ দান, কৃষকদের প্রশিক্ষণ প্রদান, পুজিগঠনে উৎসাহ দান, ঋণপ্রাপ্তিতে সাহায্য প্রভৃতির মাধ্যমে কৃষকদের দক্ষতা বৃদ্ধিপূর্বক গ্রামীন সমাজজীবনের সমস্যা সমাধান করা তথা সার্বিক গ্রামোন্নয়নই কুমিল্লা মডেলের মূল লক্ষ্য।

গ. উদ্দীপকের মিসেস আমিনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। মানব সমাজের বিভিন্নমুখী চাহিদা পূরণ ও সমস্যা সমাধানে জনগণের উদ্যোগ ও অর্থানুকূল্যে বেসরকারি সংস্থার উদ্ভব। বেসরকারি সংস্থা বলতে বোঝানো হয় সেসব সংস্থাকে যেগুলো উন্নয়ন বা সেবামূলক কর্মকান্ডে কোনো না কোনোভাবে জড়িত। অর্থাৎ, সহজভাবে বলতে গেলে, জনগণের বহুমুখী চাহিদা ও প্রয়োজন পূরণের মাধ্যমে সার্বিক উন্নয়নের লক্ষ্যে জনগণ কর্তৃক স্বতঃস্ফূর্তভাবে প্রতিষ্ঠিত অলাভজনক প্রতিষ্ঠানই বেসরকারি সংস্থা। উদাহরণস্বরূপ: BRAC, ASA, Grameen Bank, Proshika প্রভৃতি বেসরকারি সংস্থা। বেসরকারি সংস্থাসমূহের তহবিলের উৎস হলো বিভিন্ন পুঁজিবাদী রাষ্ট্রীয় প্রতিষ্ঠান যেমন- USAID, CIDA, NORAD। এছাড়াও বিভিন্ন আন্তর্জাতিক ত্রাণ সংস্থা যেমন- Oxfam, Vivid Kusso প্রভৃতি। শিক্ষাবিস্তার, ক্ষুদ্র ঋণদান, কৃষি উন্নয়ন, নারীর ক্ষমতায়ন প্রভৃতি উন্নয়নমূলক কার্যক্রম বেসরকারি সংস্থা পরিচালনা করে থাকে।
উদ্দীপকের মিসেস আমিনা যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন, সেই প্রতিষ্ঠানের আর্থিক উৎস হলো বিভিন্ন দেশী-বিদেশী আর্থিক ও ত্রাণ সহায়তাকারী প্রতিষ্ঠান। উক্ত প্রতিষ্ঠানের অন্যতম কাজ হলো দরিদ্র নারীদের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে সাহায্য করা। সুতরাং, উপযুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায় যে, মিসেস আমিনা যে প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন তার সাথে বেসরকারি সংস্থার সাদৃশ্যতা বিদ্যমান।

ঘ. উদ্দীপকের মিসেস আমিনা বেসরকারি প্রতিষ্ঠানে এবং মুনির সাহেব সরকারি প্রতিষ্ঠানে কাজ করেন। বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উক্ত প্রতিষ্ঠানসমূহ এক সাথে কাজ করলে সর্বাধিক সাফল্য অর্জিত হবে- এ বিষয়ের সাথে আমি একমত।
কোনো দেশের আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সর্বাধিক সাফল্য অর্জন করতে হলে সরকারি ও বেসরকারি উভয় সংস্থায় একসাথে কাজ করা উচিত। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশে বিদ্যমান আর্থ-সামাজিক সমস্যা দূরীকরণে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার সমন্বয় খুবই গুরুত্বপূর্ণ। আর্থ সামাজিক উন্নয়নে দরিদ্রতা অন্যতম প্রতিবন্ধক। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা পাশাপাশি কাজ করার মাধ্যমে প্রচুর কর্মসংস্থান সৃষ্টি করে দারিদ্র্য বিমোচনে ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে সরকার শিক্ষার প্রসারে ব্যাপক গুরুত্বারোপ করেছে। প্রাথমিক শিক্ষাকে বাধ্যতামূলক, সর্বজনীন ও অবৈতনিক করেছে, বিনামূল্যে মাধ্যমিক শ্রেণি পর্যন্ত বই বিতরণ করছে, মেয়েদের জন্য উপবৃত্তির ব্যবস্থা করেছে। এক্ষেত্রে বেসরকারি সংস্থা বৃত্তির ব্যবস্থা, খাদ্যবিতরণ, কারিগরি শিক্ষা প্রভৃতির মাধ্যমে সরকারের পরিপূরক ও সহায়ক শক্তি হিসেবে ভূমিকা পালন করছে যা শিক্ষার প্রসারকে গতিশীল করে তুলেছে। জনসংখ্যা সমস্যা বাংলাদেশের অন্যতম একটি সমস্যা। এই বিরাট জনসংখ্যাকে জনশক্তিতে রূপান্তর করতে পারলে দেশের অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে বিশাল সাফল্য অর্জিত হবে। এক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা প্রয়োজনীয় শিক্ষা ও প্রশিক্ষণ প্রদানের মাধ্যমে দক্ষ মানব সম্পদ সৃষ্টিতে সহায়ক ভূমিকা পালন করবে। এছাড়াও কৃষি ও শিল্পের সমন্বিত উন্নয়ন সাধন, প্রাকৃতিক দুর্যোগ মোকাবিলা প্রভৃতি ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা একত্রে কাজ করলে আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সর্বাধিক সাফল্য অর্জন করা সম্ভব।
উপর্যুক্ত আলোচনা শেষে বলা যায় যে, আর্থ-সামাজিক ক্ষেত্রে সর্বাধিক সাফল্য লাভে সরকারি ও বেসরকারি সংস্থার একত্রে কাজ করা এখন সময়ের দাবি মাত্র।

৩. চিত্র-১: বেকার যুবক হাবিব সরকারি যুব উন্নয়ন একাডেমি থেকে মৎস্য চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তারপর নিজ গ্রামের পতিত পুকুরে মাছ চাষের উদ্দেশ্যে ঋণদান প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়। মাছ চাষের মাধ্যমে এখন সে সচ্ছল।
চিত্র-২: বেকার যুবক বেলাল স্ত্রীর নামে গ্রামীণ ব্যাংক থেকে ঋণ নিয়ে সাংসারিক কাজে ব্যয় করে ফেলে। পরবর্তীতে ঋণের টাকা শোধ করতে আবারো তাকে ঋণ নিতে হয়।
ক. বাংলাদেশে অধিবাসীদের মধ্যে কোন নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা সবচেয়ে বেশি?
খ. বস্তুগত সংস্কৃতি কী?
গ. উদ্দীপকে যুবক হাবিবের বর্তমান অবস্থান সরকারি কোন উদ্যোগের ফল? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উদ্দীপকের চিত্র-১ ও চিত্র-২ উভয় ক্ষেত্রে ঋণ নেওয়া হলেও ফলাফল দুই রকম হওয়ার কারণ কী? যুক্তিসহ তুলে ধরো। 

❖ ৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাংলাদেশে অধিবাসীদের মধ্যে চাকমা নৃ-গোষ্ঠীর সদস্য সংখ্যা সবচেয়ে বেশি।

খ. বস্তুগত সংস্কৃতি হচ্ছে মানুষের অর্জিত সেইসব গুণগত সাফল্য যার মাধ্যমে প্রধানত বোঝা যায় মানুষ প্রকৃতিকে কতটুকু আয়ত্তে এনেছে। বস্তুগত সংস্কৃতি হচ্ছে সংস্কৃতির অন্যতম একটি প্রকরণ। মানুষ তার জীবনযাপনের জন্য বস্তুগত যা কিছু তৈরি ও ব্যবহার করে তা বস্তুগত সংস্কৃতির মধ্যে পড়ে। যেমন-ঘরবাড়ি, চেয়ার-টেবিল, কলম ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকে যুবক হাবিবের বর্তমান অবস্থান অর্থাৎ বেকার যুবক হাবিবের সচ্ছল হওয়া সরকারি যুব উন্নয়নে গৃহীত উদ্যোগের ফল। যুব উন্নয়ন দেশের উন্নয়নের চেয়ে পৃথক কোনো ব্যাপার নয়। জাতীয় পর্যায়ে গৃহীত পরিকল্পনার ফলে বেকার যুবকরা যখন প্রশিক্ষণের মাধ্যমে নিজেদের যোগ্য করে কাজে জড়িয়ে পড়বে তখনই জাতীয় উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বাংলাদেশে বেকার সমস্যা সমাধানে সরকারি সংস্থাসমূহ বিশেষ ভূমিকা রাখছে। যুব উন্নয়ন একাডেমি বেকার যুবকদের প্রশিক্ষণ দিয়ে ঋণের ব্যবস্থা করে দিচ্ছে। ফলে তারা ছোট ছোট উদ্যোগ গ্রহণ করে সচ্ছল হচ্ছে।
উদ্দীপকে দেখা যায় যে, বেকার যুবক হাবিব সরকারি যুব উন্নয়ন একাডেমি থেকে মৎস্য চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তারপর নিজ গ্রামের পতিত পুকুরে মাছ চাষের উদ্দেশ্যে ঋণদান প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়। মাছ চাষের মাধ্যমে হাবিব একসময় সচ্ছল হয়। তাই বলা যায়, যুব উন্নয়ন একাডেমি বাংলাদেশে বেকার সম্যার সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

ঘ. উদ্দীপকের চিত্র-১-এ বেকার যুবক হাবিব এবং চিত্র-২-এ বেকার যুবক বেলালের ঋণ নেওয়া হলেও ঋণের সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবহার, প্রশিক্ষণ, উদ্যোগ ও পরিকল্পনার অভাবে ফলাফল দুই রকম হয়েছিল।
সরকারি ও বেসরকারি সংস্থাগুলোর কর্মসূচির অন্যতম দিক হচ্ছে ব্যাপক গণদারিদ্র্য মোচন ও বেকারত্ব দূরীকরণে লাগসই ব্যবস্থা প্রবর্তন করা। বাংলাদেশে এ সকল সংস্থা ঘূর্ণায়মান ঋণ কর্মসূচির আওতায় বৈদেশিক ও সরকারি ব্যাংকের সাহায্যপুষ্ট প্রকল্পের মধ্যে ঋণ তহবিল তৈরি করে। বাংলাদেশের বেসরকারি সংস্থাসমূহ সাধারণত ক্ষুদ্রঋণ প্রদান করে থাকে। এরা সাধারণত ক্ষুদ্র ব্যবসা বা ক্ষুদ্র উদ্যোগে ঋণ দিয়ে থাকে। কিন্তু উপযুক্ত ও প্রয়োজনীয় প্রশিক্ষণ না থাকায় সে ঋণের সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবহার না হলে ঋণগ্রহীতা উল্টো সমস্যায় পড়া়ন এবং হতাশায় নিমজ্জিত হন।
উদ্দীপকের চিত্র-১-এ দেখা যায়, বেকার যুবক হাবিব সরকারি যুব উন্নয়ন একাডেমি থেকে মৎস্য চাষের ওপর প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে। তারপর নিজ গ্রামের পতিত পুকুরে মাছ চাষের উদ্দেশ্যে ঋণদান প্রতিষ্ঠান থেকে ঋণ নেয়। মাছ চাষের মাধ্যমে সে সচ্ছল হয়ে যায়।
উদ্দীপকের চিত্র-২-এ বেকার যুবক বেলাল স্ত্রীর নামে গ্রামীণ ব্যাংক। থেকে ঋণ নিয়ে অসচেতনতামূলকভাবে সাংসারিক কাজে ব্যয় করে ফেলে। প্রশিক্ষণের অভাবে সে ঋণকে সঠিক উদ্যোগে ব্যয় না করায় পরবর্তীতে ঋণের টাকা শোধ করতে আবারও ঋণ নেয়। পরিশেষে বলা যায়, হাবিব ও বেলাল উভয়ে ঋণ গ্রহণ করলেও ঋণের সুষ্ঠু ও সঠিক ব্যবহার না করা, প্রশিক্ষণের অভাবে বেলাল ঘূর্ণায়মান ঋণের জালে আটকা পড়ে।

৪. জনাব 'খ' ১৯৫৯ সালে একটি জেলায় একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। যার অন্যতম কাজ হলো সমাজ সম্পর্কে জরিপ করা, টার্গেট গ্রুপকে প্রশিক্ষণদান এবং পল্লি জনগণকে নিয়ে সমবায় সমিতি গঠন ইত্যাদি। পরবর্তীতে এটির আদলে সারাদেশে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি পল্লি উনণয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়।
ক. NGO-এর পূর্ণরূপ কী?
খ. সরকারি সংস্থা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে জনাব 'খ'-এর কোন প্রতিষ্ঠানের কথা বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকের জনাব 'খ'-এর প্রতিষ্ঠান বাংলাদেশে পল্লি উনণয়নে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি কার্যক্রমের পথ প্রদর্শক- তুমি কি একমত? বিশ্লেষণ করো।

❖ ৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. NGO-এর পূর্ণরূপ হলো- 'Non Government Organization'.

খ. যেসব সংস্থা পুরোপুরি সরকারি ব্যবস্থাপনায় থাকে তা হলো সরকারি সংস্থা। সরকারি সংস্থা হলো সরকারের প্রশাসনিক একক। সাধারণ ভাষায় সরকার দ্বারা, সরকার কর্তৃক পরিচালিত সংস্থাকে সরকারি সংস্থা বলা হয়। সুতরাং সরকারি সংস্থা হলো সরকারের স্থায়ী বা আধা-স্থায়ী অঙ্গ যা প্রশাসনিক সুনির্দিষ্ট কাজের দায়িত্বে নিয়োজিত থাকে।

গ. উদ্দীপকে জনাব 'খ' এর প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে বাংলাদেশ পল্লি উনণয়ন একাডেমির কথা বলা হয়েছে। পল্লি অঞ্চলের উনণয়নের জন্য তৎকালীন পাকিস্তান সরকার ১৯৫৯ সালে কুমিল্লায় পল্লি উনণয়ন একাডেমি স্থাপন করেন। এ একাডেমির প্রতিষ্ঠাতা পরিচালক হিসেবে যোগদান করেন কুমিল্লা মডেলের রূপকার বিশিষ্ট সমাজবিজ্ঞানী ড. আখতার হামিদ খান। বাংলাদেশের স্বাধীনতার পর এ সংস্থা 'বাংলাদেশ পল্লি উনণয়ন একাডেমি' নামে পরিচিতি লাভ করে। সামাজিক উন্নয়নে এ সংস্থার গৃহীত কর্মসূচিগুলো হলোত কৃষি উন্নয়ন, বাংলাদেশ পল্লি উনণয়ন বোর্ড এবং পল্লি কর্মসূচিসহ পল্লি উনণয়নে নিয়োজিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দান। পল্লি অঞ্চলে বিভিনণ সমস্যা দূরীকরণ এবং উনণয়নের জন্য ব্যাপক গবেষণা ও জরিপ কাজ চালানো ছাড়াও পল্লি জনগণকে সুসংগঠিত করা যাতে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে সক্ষম হয়।
অনুরূপভাবে উদ্দীপকেও দেখা যায়, জনাব 'খ' ১৯৫৯ সালে একটি জেলায় একটি একাডেমি প্রতিষ্ঠা করেন। একাডেমির অন্যতম কাজ হলো সমাজ সম্পর্কে জরিপ করা, টার্গেট গ্রুপকে প্রশিক্ষণ দান এবং পল্লি জনগণকে নিয়ে সমবায় সমিতি গঠন ইত্যাদি। পাঠ্যবইয়ের পল্লি উনণয়ন একাডেমির সাথে জনাব 'খ' এর একাডেমি সাদৃশ্যপূর্ণ হওয়ায় বলা যায়, উদ্দীপকে পল্লি উনণয়ন একাডেমির কথা বলা হয়েছে।

ঘ. বাংলাদেশ পল্লি উনণয়ন একাডেমি বাংলাদেশে পল্লি উনণয়নে বিভিন্ন সরকারি বেসরকারি কার্যক্রমের পথ প্রদর্শক- আমি এ বক্তব্যটির সাথে একমত। বাংলাদেশ পল্লি উনণয়ন একাডেমির কর্মসূচিগুলো হলো-
১. কৃষি উন্নয়ন, বাংলাদেশ পল্লি উনণয়ন বোর্ড এবং পল্লি কর্মসূচিসহ পল্লি উনণয়নে নিয়োজিত উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা ও কর্মচারীদের প্রশিক্ষণ দান। 
২. পল্লি অঞ্চলে বিভিনণ সমস্যা দূরীকরণ এবং উনণয়নের জন্য ব্যাপক গবেষণা ও জরিপ কাজ চালানো।
৩. পল্লি জনগণকে সুসংগঠিত করা যাতে নিজেদের সমস্যা নিজেরাই সমাধান করতে সক্ষম হয়।
প্রাথমিক সাফল্য অর্জনের পর পল্লি উনণয়ন একাডেমির পরিচালনায় ১৯৬০ সালে কুমিল্লা সমবায় সমিতি' চালু করা হয়। কুমিল্লা সমবায় সমিতির অন্যতম কর্মসূচি ছিল, কৃষকদের নিজস্ব সংগঠন গড়ে় তোলা, মূলধন গঠন এবং ঋণদান করা। স্বাধীনতার পর কুমিল্লা সমবায় সমিতির অন্যতম কর্মসূচি সারাদেশে ছড়িয়ে দেওয়ার জন্য ১৯৭২ সালে গঠন করা হয় *বাংলাদেশ পল্লি উনণয়ন বোর্ড'। এ প্রতিষ্ঠানের আওতায় পরবর্তীতে দেশব্যাপী নানা উন্নয়ন কর্মসূচি গ্রহণ করা হয়। পল্লি উনণয়ন একাডেমির সফলতায় উদ্বুদ্ধ হয়ে একে একে বেসরাকরি বিভিন্ন উন্নয়ন সংস্থা প্রতিষ্ঠিত হতে থাকে। এসব সংস্থার মধ্যে ব্র্যাক ১৯৭২ সালে, আশা ১৯৭৮ সালে, প্রশিকা ১৯৭৬ সালে এবং গ্রামীণ ব্যাংক ১৯৮৩ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এসব সংস্থা ক্ষুদ্রঋণ কর্মসূচি প্রবর্তনের ক্ষেত্রে পল্লি উনণয়ন একাডেমি অনুসৃত নীতি ও পদ্ধতি অনুসরণ করে। শুধু তাই নয়, অন্যান্য সামাজিক উন্নয়নের ক্ষেত্রেও প্রতিষ্ঠানগুলো পল্লি উনণয়ন একাডেমিকে অনুসরণ করে। উপর্যুক্ত আলোচনায় সুস্পষ্ট যে, বাংলাদেশের সরকারি ও বেসরকারি উন্নয়ন কার্যক্রমের পথপ্রদর্শক হিসেবে পল্লি উনণয়ন একাডেমি বার্ড.' মূল ভূমিকা পালন করেছে।

৫. করিমন বেগম গণেশপুর ইউনিয়নের বাসিন্দা। মেঘনার করালগ্রাসে তার ভিটেমাটি সবই তলিয়ে গেছে। বাস্তুহারা করিমন বেগম এখন নিঃস্ব। স্বামী মারা গেছে সেই কবে। কিন্তু ধৈর্যের বাঁধ ভাঙেনি। তবুও ঘুরে দাঁড়ানোর স্বপ্ন তিনি দেখছেন। পাশের গ্রামের একটি সংস্থা যে সংস্থাটি অলাভজনক স্বেচ্ছাসেবী হিসেবে পরিচিত. থেকে প্রশিক্ষণ এবং কিছু টাকা ঋণ নিয়েছেন। এই সংস্থার সহযোগিতায় তিনি ধীরে ধীরে আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের চেষ্টা করছেন। 
ক. সমবায়ের মূলনীতি কী? 
খ. স্বনির্ভর আন্দোলন বলতে কী বোঝায়? ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপকের করিমন বেগমের ঘটনার আলোকে উক্ত সংস্থাটির কোন কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উক্ত সংস্থার কতটুকু ভূমিকা রয়েছে বলে তুমি মনে কর? উত্তরের পক্ষে যুক্তি দাও।

❖ ৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সমবায়ের মূলনীতি হলো ‘সকলের তরে সকলে আমরা প্রত্যেকে আমরা পরের তরে।

খ. আভিধানিক অর্থে স্বনির্ভর মানে নিজের উপর নির্ভর করা। অর্থাৎ নিজের পায়ে দাঁড়িয়ে নিজের জীবনকে পরিচালিত করা। জাতীয় উন্নয়নের প্রেক্ষাপটে স্বনির্ভরতা বলতে একটি দেশের নিজস্ব সম্পদের যথাযথ ব্যবহারের মাধ্যমে অর্থনৈতিক ক্ষেত্রে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনকে বোঝায়। অর্থাৎ স্বনির্ভর আন্দোলন হচ্ছে গ্রামভিত্তিক এমন একটি উন্নয়ন কর্মসূচি যার মাধ্যমে গ্রাম এলাকায় প্রাপ্ত সম্পদ এবং সুযোগ-সুবিধা কাজে লাগিয়ে গ্রামের সকল শ্রেণির মানুষের আত্মনির্ভরশীলতা অর্জনের জন্য উদ্যোগ গ্রহণ।

গ. উদ্দীপকে করিমন বেগমের ঘটনার আলোকে বেসরকারি সংস্থাটির আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকান্ড- প্রশিক্ষণ এবং ঋণদান কার্যক্রম সম্পর্কে বলা হয়েছে।
বেসরকারি উন্নয়নমূলক সংস্থাগুলো গ্রামীণ দুস্থ, অসহায় ও দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের লক্ষ্যে বিভিন্ন আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকান্ড- প্রশিক্ষণ দিয়ে থাকে। যেমন- হাঁস মুরগি পালন, ক্ষুদ্র ও কুটির শিল্প, মৎস্য চাষ প্রভৃতি। এসকল কর্মকান্ড- প্রশিক্ষণ গ্রহণ করে গ্রামীণ অসহায় জনগোষ্ঠী নিজেদের অবস্থার পরিবর্তন ঘটিয়ে থাকে। এছাড়া এ ধরনের সংস্থাগুলো প্রশিক্ষণ শেষে ঋণের ব্যবস্থাও করে থাকে। যাতে প্রশিক্ষণপ্রাপ্তরা তাদের কার্যক্রম শুরু করতে পারে। যার প্রতিফলন আমরা দেখতে পাই উদ্দীপকে করিমন বেগমের জীবনে। নদীভাঙনে সবকিছু হারিয়ে নিঃস্ব বিধবা করিমন বেগম একটি বেসরকারি সংস্থা থেকে প্রশিক্ষণ এবং ঋণ গ্রহণ করে নিজের অবস্থার পরিবর্তনে চেষ্টা করছেন। তাই আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকে বেসরকারি সংস্থার প্রশিক্ষণ এবং ঋণদান কর্মসূচির প্রতিফলন ঘটেছে।

ঘ. বাংলাদেশের মানুষের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বেসরকারি সংস্থার ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ বলে আমি মনে করি। কৃষিপ্রধান বাংলাদেশে বেসরকারি সংস্থাগুলো উন্নতমানের বীজ উৎপাদন ও সরবরাহকরণ, বীজ ও সারের ব্যবহার সম্পর্কে জনগণকে সচেতন করে তোলা, বীজ বিতরণ, উন্নত প্রযুক্তি সম্পর্কে প্রশিক্ষণ প্রদান প্রভৃতি কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এ সকল কর্মকান্ড আমাদের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে কার্যকরী ভূমিকা রাখছে। এছাড়া বেসরকারি সংস্থানগুলো দেশের অবকাঠামোগত উন্নয়নে কাজ করে যাচ্ছে, যা আমাদের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ঋণদান কার্যক্রমের আওতায় দরিদ্র ও অসহায় জনগোষ্ঠী বিভিন্ন আত্ম কর্মসংস্থানের মাধ্যমে নিজেদের দরিদ্রতা দূর করতে সক্ষম হচ্ছে। সংস্থাগুলো নারীদের সংগঠিত করে তাদের আইনগত অধিকার, পারস্পরিক সম্পর্ক, ব্যক্তিগত ও পারিবারিক স্বাস্থ্য উন্নয়নে সক্রিয় করে তোলে। স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা বিষয়ক কার্যক্রমে বেসরকারি সংস্থাসমূহের ভূমিকা, অবদান ও সাফল্য উল্লেখযোগ্য। এর ফলে দেশের সাধারণ জনগণ জনসংখ্যা বৃদ্ধির কুফল সম্পর্কে সচেতন হয়ে উঠেছে। মা ও শিশু স্বাস্থ্যের উন্নয়নে এ ধরনের সংস্থার অবদান অনস্বীকার্য।
পরিশেষে বলা যায়, বেসরকারি সংস্থাগুলো দেশের বিভিন্ন ক্ষেত্রে তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে যাচ্ছে। এ সকল কর্মকান্ড দেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

৬. স্বামীর মৃত্যুর পর দিশেহারা করিমন বিবি তার প্রতিবেশীর সহায়তায় এমন একটি সংস্থার সদস্যভুক্ত হয়, যা ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এবং যারা জীবিকার জন্য বছরে কমপক্ষে ১০০ দিন শ্রম বিক্রয় করে সেসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন উপার্জনমূলক কাজের জন্য স্বল্প সুদে ঋণদান করে। এমনকি মাধ্যমিক স্কুল পর্যায়ে বিজ্ঞান ও ইংরেজি শিক্ষকদের বিষয়ভিত্তিক প্রশিক্ষণের জন্য সরকারকে সহায়তা করে সংস্থাটি। 
ক. BRDB-এর পূর্ণরূপ কী? 
খ. বেসরকারি সংস্থা বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে করিমন বিবি যে বেসরকারি সংস্থার সদস্যভুক্ত হয়েছে তার কার্যক্রম ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংস্থাটি সরকারের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে গতিশীল ভূমিকা পালন করে তোমার মতামত দাও।

❖ ৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. BRDB-এর পূর্ণরূপ হলো Bangladesh Rural Development Board.

খ. বেসরকারি সংস্থা বলতে সাধারণত মানবতাবাদী, ব্যক্তিগত সংগঠন বা সংস্থাকে বোঝানো হয়। বৃহত্তর দৃষ্টিকোণ থেকে বেসরকারি সংস্থা বলতে কার্যত সকল ব্যক্তিগত ও স্বেচ্ছাসেবী মুনাফাহীন সংগঠনকে বোঝায়, যা মানবতার পক্ষে কাজ করে। বাংলাদেশের প্রেক্ষিতে বেসরকারি সংস্থা বলতে কার্যত ব্যক্তিগত স্বেচ্ছাসেবী উন্নয়ন সংস্থা এবং বেসরকারি উন্নয়ন সংস্থাকে বোঝানো হয়। এসব সংস্থা সরকারি কাঠামোর বাইরে নির্দিষ্ট দেশের আইনগত কাঠামোর মধ্যে কাজ করে থাকে।

গ. উদ্দীপকে করিমন বিবি ব্র্যাকের সদস্যভুক্ত হয়েছেন।
ব্র্যাক ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। এছাড়া যারা জীবিকার জন্য বছরে কমপক্ষে ১০০ দিন শ্রম বিক্রয় করে সেসব দরিদ্র জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন উপার্জনমূলক কাজের জন্য সংস্থাটি ঋণ প্রদান করে। ব্র্যাকের কার্যক্রম ব্যাখ্যা করা হলো-
ব্র্যাকের প্রধান কার্যক্রম হলো গ্রামের ভূমিহীন দরিদ্রদের মধ্যে বিভিন্ন উপার্জনমূলক কাজের জন্য স্বল্প সুদে ঋণদান করা। এতে ব্র্যাকের সকল উদ্যোগের মূলে রয়েছে গ্রাম সংগঠন। গ্রাম সংগঠনগুলো সদস্যদের সামাজিক সহায়তা এবং ক্ষুদ্র ঋণ সেবা প্রদান করে থাকে। ব্র্যাক পরিচালিত দরিদ্র শিশুদের জন্য উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা একটি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি। যারা কোনোদিন বিদ্যালয়ের চৌকাঠ মাড়াতে পারত না ব্র্যাক সেসব দরিদ্র শিশুদের জন্য বিনা বেতনে এবং বিনামূল্যে বই খাতা, শ্লেট, পেন্সিল সরবরাহ করে শিক্ষাদানের ব্যবস্থা করছে। এছাড়া খাবার স্যালাইন তৈরি, শিশুদের টিকাদান ও ভিটামিন 'এ' বিতরণ, পরিবার পরিকল্পনা, পুষ্টি ও পয়ঃনিষ্কাশন প্রভৃতি কর্মসূচি গ্রহণ করে ব্র্যাক গ্রামীণ মানুষের স্বাস্থ্য ও পরিবেশের উন্নয়নের ক্ষেত্রেও গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে চলেছে।

ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংস্থাটি হচ্ছে ব্র্যাক। সরকারের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে ব্র্যাক সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে গতিশীল ভূমিকা পালন করে। এর সাথে আমি একমত পোষণ করছি।
দেশের সার্বিক উন্নয়নের নীতি নির্দেশনা প্রণয়নের দায়িত্ব সরকারের। তবে সরকারের একক প্রচেষ্টায় সকল উন্নয়ন কর্মসূচি বাস্তবায়ন করা সম্ভব নয়। এক্ষেত্রে ব্র্যাক সরকারের কার্যক্রম বাস্তবায়নে সহায়তা করতে পারে। সম্পদের সীমাবদ্ধতার কারণে সরকার একা সকল সমস্যা মোকাবিলা করে জনগণের মৌল মানবিক চাহিদা পূরণ করতে পারে না। এক্ষেত্রে ব্র্যাক কার্যকরী পদ্ধতি ও কর্মসূচি গ্রহণ করে সরকারি কর্মসূচির পরিপূরক হিসেবে ভূমিকা পালন করতে পারে। ব্র্যাক জনগণের চাহিদা ও প্রয়োজন অনুসারে বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষামূলক প্রকল্প গ্রহণ ও বাস্তবায়ন করে। এসব কার্যাবলি ও প্রকল্পের সফলতা ও ব্যর্থতা সরকারি কার্যাবলি সঠিক দিক নির্দেশনা দিয়ে সহায়তা করতে পারে। ব্র্যাক, দারিদ্র্য বিমোচনের মাধ্যমে জাতীয় উন্নয়নের লক্ষ্যে ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারি সহায়তার সমন্বয়ে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে।
পরিশেষে বলা যায়, ব্র্যাক দেশের সার্বিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে যাচ্ছে। এক্ষেত্রে সরকারি সহায়তা এই কর্মসূচিকে আরো গতিশীল করে তুলবে।

HSC সমাজবিজ্ঞান ২য় পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১০ pdf download

৭. শফি তার গ্রামে অসহায় বয়স্ক জনগোষ্ঠীর স্বার্থে একটি সংস্থা গড়ে তোলেন। এই সংস্থার নাম দেন Soul of the old. সম্প্রতি এটি সরকারের NGO বিষয়ক ব্যুরো থেকে নিবন্ধিত হয়। স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠান এই সংস্থায় চাঁদা প্রদান করেন। দুগ্ধ জনগোষ্ঠীকে নিয়মিত মাসিক ভাতা প্রদানের পাশাপাশি এটি প্রয়োজনে আর্থিক সাহায্য প্রদান করে। 
ক. NGO এর পূর্ণরূপ লেখো। 
খ. সামাজিক উন্নয়ন বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত Soul of the old কোন ধরনের সংস্থা? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. উক্ত সংস্থাটি শফির গ্রামের সামাজিক উন্নয়নে কীরূপ ভূমিকা রাখতে পারে বলে তুমি মনে কর।

❖ ৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. NGO-এর পূর্ণরূপ হচ্ছে Non-Govornment Organization.

খ. সামাজিক উন্নয়ন বলতে সমাজের সার্বিক কাঠামোগত ও প্রাতিষ্ঠানিক উন্নয়নকে বোঝায়। সামাজিক উন্নয়ন একটি বিমূর্ত বিষয়। সমাজের বিদ্যমান অবস্থা থেকে উন্নততর অবস্থায় উত্তরণকে সামাজিক উন্নয়ন বলা হয়। সমাজবিজ্ঞানী জেমস মিজলে বলেন, ‘‘সামাজিক উন্নয়ন বলতে পরিকল্পিত সামাজিক পরিবর্তনের এমন এক প্রক্রিয়াকে বোঝায়, যা গতিশীল অর্থনৈতিক উন্নয়ন প্রক্রিয়ার সাথে সামঞ্জস্য রেখে সমগ্র জনগোষ্ঠীর জন্য কল্যাণকর অবস্থার উন্নয়ন সাধনের প্রচেষ্টা চালায়।"

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত Soul of the old সংস্থাটি হচ্ছে বেসরকারি সংস্থা।
বেসরকারি সংস্থা হচ্ছে অলাভজনক বা মুনাফাবিহীন প্রতিষ্ঠান, যেগুলো জনস্বার্থে সেবা প্রদান করে। সাধারণত স্থানীয়, আন্তর্জাতিক এবং বিভিন্ন ব্যক্তি ও প্রতিষ্ঠানের আর্থিক সহায়তা ও অনুদানে এধরনের সংস্থাগুলো তাদের কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। এসকল সংস্থা সরকারি কাঠামোর বাইরে কিছু নির্দিষ্ট আইনগত কাঠামোর মধ্যে কাজ করে থাকে। বেসরকারি সংস্থাগুলো দরিদ্র, অসহায় ও দুস্থ জনগোষ্ঠীর কল্যাণে কাজ করে থাকে। উদ্দীপকে উল্লিখিত শফির প্রতিষ্ঠিত সংগঠনটিও সম্পূর্ণ ব্যক্তিগত উদ্যোগে গঠিত হয়েছে। এছাড়া সংস্থাটি সরকারের ঘএঙ বিষয়ক ব্যুরোতে নিবন্ধিত হয়েছে। সংস্থাটি বিভিন্ন চাঁদা ও আর্থিক অনুদান সংগ্রহের মাধ্যমে কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। গ্রামীণ অসহায় বয়স্ক জনগোষ্ঠীর কল্যাণ সাধনই সংগঠনটি অন্যতম লক্ষ্য। ঝড়ঁষ ড়ভঃযব ড়ষফ সংগঠনটির এ সকল বৈশিষ্ট্য বেসরকারি সংস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। তাই আমরা বলতে পারি, উদ্দীপকের ঝড়ঁষ ড়ভঃযব ড়ষফ সংস্থাটির হচ্ছে বেসরকারি সংস্থা।

ঘ. উদ্দীপকের সংস্থাটি হচ্ছে বেসরকারি সংস্থা। শফির গ্রামের সামাজিক উন্নয়নে এ ধরনের সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
শফির প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি সংস্থাটি গ্রামের কৃষির উন্নয়নে কাজ করতে পারে। সেক্ষেত্রে কৃষকদের উন্নত বীজ সরবরাহ, আধুনিক কৃষি উপকরণের ব্যবহার সম্পর্কে সচেতন করে তুলতে পারে। এর ফলে গ্রামের উৎপাদন পূর্বের তুলনায় বৃদ্ধি পাবে। এছাড়া সংস্থাটি গ্রামের অসহায়, দরিদ্র ও দুস্থ জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন আত্মকর্মসংস্থানমূলক কর্মকান্ডের প্রশিক্ষণ দিতে পারে। এর ফলে দরিদ্র জনগোষ্ঠী দারিদ্র্য দূরীকরণের সক্ষম হবে। তারা সচ্ছলভাবে জীবনযাপন করতে পারবে। সংস্থাটি ঋণ প্রদান কর্মসূচিরও ব্যবস্থা করতে পারে। এর ফলে দরিদ্র অনগোষ্ঠী ঋণ গ্রহণ করে স্বল্প পরিসরে যেকোনো আয়মূলক কাজ শুরু করতে পারবে। যা তাদেরকে আর্থিকভাবে সচ্ছল করে তুলবে।
এছাড়া সংস্থাটি গ্রামে শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখতে পারে। যে সকল দরিদ্র জনগণ অর্থের অভাবে ছেলেমেয়েদের লেখাপড়া করাতে পারে না তাদের জন্য সংস্থাটি বিনামূল্যে শিক্ষার ব্যবস্থা করতে পারে। এছাড়া গ্রামের জনগণকে প্রাথমিক স্বাস্থ্য সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করতে পারে সংস্থাটি। যার ফলে গ্রামবাসীর সুস্বাস্থ্য নিশ্চিত হবে। পরিশেষে বলা যায়, শফির প্রতিষ্ঠিত বেসরকারি সংস্থাটি উপরিউক্ত পদক্ষেপসমূহ গ্রহণের মাধ্যমে গ্রামটির সামাজিক উন্নয়নে ভূমিকা রাখতে পারবে।

৮. ভ্যানচালক স্বামী দুর্ঘটনায় আহত হয়ে পঙ্গু জীবনযাপনে হিমশিম সোনাভান বিবি তার প্রতিবেশী কুলসুম বেওয়ার সহায়তায় এমন একটি বেসরকারি সংস্থার সদস্যভুক্ত হয় যা ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়েছে। যারা দরিদ্র ভূমিহীন পরিবার, প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার, জীবিকার জন্য শ্রম বিক্রয় করে এমন জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন উপার্জনমূলক কাজের জন্য স্বল্প ঋণদান করে। উক্ত সংস্থাটির কার্যক্রম সামাজিক উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড ছাড়াও সরকারের বিভিন্ন জাতীয় কর্মকান্ড- সহায়তা করে থাকে।
ক. NGO এর পূর্ণরূপ কী? 
খ. সরকারি সংস্থা বলতে কী বোঝ?
গ. উদ্দীপকে সোনাভান বিবি কোন বেসরকারি সংস্থার সদস্যভুক্ত হয়েছে? তার কার্যক্রম ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংস্থাটি সরকারে সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে গতিশীল ভূমিকা পালন করে তোমার মতামত দাও।

❖ ৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. NGO এর পূর্ণরূপ হলো Non Government Organization.

খ. সাধারণত সরকার কর্তৃক পরিচালিত কোনো দপ্তর বা প্রতিষ্ঠানকে সরকারি সংস্থা বলা হয়।
সরকারি সংস্থা হলো সরকারের প্রশাসনিক কার্যক্রম সম্পাদনের এক একটি একক। সরকার তার নানামুখী কার্যক্রম পরিচালনা করতে গিয়ে সংশ্লিষ্ট নির্দিষ্ট মন্ত্রাণালয়, বিভাগ ও দপ্তরের ওপর নির্ভরশীল থাকে। তাই সরকারি সংস্থা বলতে এসব মন্ত্রাণালয়ের অধীন বিভাগ, দপ্তর ও প্রতিষ্ঠানকে বোঝানো হয়। এসব সংস্থা, দপ্তর বা প্রতিষ্ঠান আইনগত বা প্রশাসনিক ক্ষমতাবলে প্রতিষ্ঠিত।

গ. উদ্দীপকে সোনাভান বিবি ব্র্যাক নামক বেসরকারি সংস্থার সদস্যভুক্ত হয়েছে।
ব্র্যাক বেসরকারি সংস্থাটি ১৯৭২ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়। সংস্থাটি দরিদ্র ভূমিহীন পরিবার, প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার, জীবিকার জন্য শ্রম বিক্রয় করে এমন জনগোষ্ঠীকে বিভিন্ন উপার্জনমূলক কাজের জন্য স্বল্প সুদে ঋণ প্রদানের পাশাপাশি সরকারের বিভিন্ন কর্মকান্ড- সহায়তা করে, যা সোনাভান বিবির সদস্যভুক্ত সংস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
ব্র্যাক তার প্রতিষ্ঠানলগ্নে ঋণদানমূলক কর্মসূচি দিয়ে যাত্রা শুরু করলেও বর্তমানে নানাবিধ কার্যক্রম পরিচালনা করে থাকে। যেমন- পল্লি উনণয়ন কর্মসূচি। ব্র্যাক মোট চারটি সমন্বিত পল্লি উনণয়নমূলক কর্মসূচির মাধ্যমে এ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। এছাড়াও শিক্ষা কার্যক্রম ব্র্যাকের অন্যতম। ব্র্যাকের শিক্ষা কার্যক্রম উপ-আনুষ্ঠানিক শিক্ষা ও বয়স্কদের কর্মসূচি। জন্য ব্যবহারিক শিক্ষা এ দু'ভাগে বিভক্ত। ব্র্যাক গ্রামীণ দরিদ্র ও ভূমিহীন পুরুষ মহিলাকে স্বল্প সুদে ঋণ দিয়ে থাকে। এছাড়া মানবাধিকার ও আইন সহায়তা কর্মসূচি, বাণিজ্যিক হস্তশিল্প ও বাজারজাতকরণ এবং কর্মসংস্থান ও আয়বৃদ্ধিমূলক কর্মসূচি পরিচালনা করে থাকে।

ঘ. বেসরকারি সংস্থা হিসেবে ব্র্যাক সরকারের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে সমাজ উন্নয়নের ক্ষেত্রে গতিশীল ভূমিকা পালন করে বলে আমি মনে করি।
বাংলাদেশের সার্বিক উন্নয়নে সরকারি সংস্থার পাশাপাশি বেসরকারি সংস্থা হিসেবে ব্র্যাক গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। সরকারের পাশাপাশি দরিদ্র জনগণের স্বাস্থ্যসেবার চাহিদা পূরণে ব্র্যাক ব্যাপকভিত্তিক চিকিৎসা, পুষ্টি এবং জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ কার্যক্রম পরিচালনা করছে। ব্র্যাকের স্বাস্থ্যসেবার সুবিধাভোগী লোকের সংখ্যা প্রায় ১৮০ মিলিয়ন। সরকারি শিক্ষা কর্মসূচির পাশাপাশি ব্র্যাক প্রায় ৩৮ হাজারের অধিক এক কক্ষ বিশিষ্ট বিদ্যালয়ের মাধ্যমে পরিচালিত উপ আনুষ্ঠানিক শিক্ষা কার্যক্রমে ১.১২ মিলিয়ন শিশুকে প্রাথমিক শিক্ষা প্রদান করছে। যাদের মধ্যে ৬৫ শতাংশ মেয়ে। এছাড়াও ব্র্যাক ২৬,৩৫০টি প্রাক-প্রাথমিক বিদ্যালয় পরিচালনা করছে। সারাদেশে ব্র্যাকের উদ্যোগে শিক্ষা কর্মসূচির আওতায় ২ হাজারেরও অধিক গণকেন্দ্র, পাঠাগার, প্রায় ছয়শ ভ্রাম্যমান পাঠাগার এবং প্রায় ৯ হাজার কিশোরী উন্নয়ন কেন্দ্র পরিচালিত হচ্ছে। এছাড়া ২০০১ সালে স্থাপন করা হয়েছে ব্র্যাক ইউনিভার্সিটি।
ব্র্যাক সরকারের পাশাপাশি মানবাধিকার ও আইনি সহায়তা কর্মসূচি, সামাজিক উন্নয়ন কর্মসূচি, অ্যাডভোকেসি এবং জেন্ডার জাস্টিস এন্ড ডাইভারসিটি কর্মসূচির মাধ্যমে মানবাধিকার রক্ষা, লিঙ্গ সমতা প্রতিষ্ঠায় গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে। এছাড়াও ঋণদান কর্মসূচির আওতায় ব্র্যাক গ্রামের দরিদ্র বিশেষত নারী প্রধান অতি দরিদ্র পরিবারের আর্থ সামাজিক উন্নয়নে বিশেষ ভূমিকা রাখছে।
সার্বিক আলোচনায় তাই বলা যায় যে, বেসরকারি সংস্থা ব্র্যাক সরকারের সাথে সমন্বয়ের মাধ্যমে উল্লিখিত কর্মসূচি পরিচালনা করে সমাজ উনণয়নের ক্ষেত্রে গতিশীল ভূমিকা পালন করে।

৯. বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও সংগঠক ফজলে হাসান আবেদ ১৯৭২ সালে একটি সংগঠন গড়ে তোলেন। বর্তমানে এই সংগঠনের ন্যায়। বাংলাদেশে প্রায় ২০০০ দেশি-বিদেশি সংগঠন রয়েছে। এসব সংগঠন দেশের অনেক মানুষের বেকারত্ব দূর করার পাশাপাশি মানবাধিকার, স্বাস্থ্যসেবা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে।
ক. বাংলাদেশে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলোকে প্রধানত কয়ভাগে ভাগ করা হয়?
খ. উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড- সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা কীরূপ ভূমিকা পালন করে?
গ. উদ্দীপক দ্বারা কোন ধরনের সংগঠনকে নির্দেশ করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো।
ঘ. বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে উদ্দীপক দ্বারা নির্দেশকৃত সংগঠনসমূহের ভূমিকার মূল্যায়ন কর। 

❖ ৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. বাংলাদেশে কর্মরত বেসরকারি সংস্থাগুলোকে প্রধানত পাঁচ ভাগে বিভক্ত করা হয়।

খ. উন্নয়নমূলক কর্মকান্ড- সরকারি ও বেসরকারি সংস্থা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। বাংলাদেশে বেশ কিছু সরকারি সংস্থা জনগণের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নের দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছে। এছাড়া কিছু বেসরকারি সংস্থাও জনগণের জীবনমান উন্নয়নের লক্ষ্যে কাজ করে যাচ্ছে। দেশের জনগণের উন্নয়নের লক্ষ্যে সরকারি ও বেসরকারি উভয় সংস্থাই কৃষি, শিক্ষা, স্বাস্থ্য, যোগাযোগ ব্যবস্থা প্রভৃতি ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখে যাচ্ছে।

গ. উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠনসমূহ এনজিও বা বেসরকারি সংস্থাকে নির্দেশ করে।
উদ্দীপকে দেখা যায়, বিশিষ্ট সমাজকর্মী ও সংগঠক ফজলে হাসান আবেদের সংগঠনের ন্যায় দেশে বর্তমানে প্রায় ২০০০ দেশি-বিদেশি সংগঠন রয়েছে। অনুরূপভাবে এনজিওর ক্ষেত্রেও দেখা যায়, বর্তমানে দেশে প্রায় ২০০০ দেশি-বিদেশি এনজিও রয়েছে। এসব এনজিও অসংখ্য মানুষের কর্মসংস্থান সৃষ্টি করেছে, যা উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠনসমূহের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।
উদ্দীপকে বর্ণিত সংগঠনসমূহও দেশের অনেক মানুষের বেকারত্ব দূর করেছে। এছাড়া উক্ত সংগঠনগুলো মানবাধিকার, স্বাস্থ্যসেবা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে কাজ করছে, যা এনজিও বা বেসরকারি সংস্থার কার্যক্রমকে নির্দেশ করে। কারণ এনজিও বা বেসরকারি সংস্থাও মানবাধিকার, স্বাস্থ্যসেবা ও নারীর ক্ষমতায়নসহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।

ঘ. বাংলাদেশের আর্থ-সামাজিক উন্নয়নে বেসরকারি সংগঠনসমূহ বা এনজিওর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
বাংলাদেশের খরা, ঝড়, জলোচ্ছ্বাস ও বন্যাসহ নানা প্রাকৃতিক দুর্যোগে সরকারের পাশাপাশি কর্মরত এনজিওসমূহ ত্রাণকাজে ব্যাপক ভূমিকা রাখে। এছাড়াও এনজিওসমূহ দেশে শিশু ও বয়স্ক শিক্ষা কার্যক্রমের মাধ্যমে নিরক্ষরতা মুক্ত দেশ গড়তে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে। গ্রামের দরিদ্র জনগণকে ক্ষুদ্র ঋণ প্রদান এবং গরিব মানুষকে মূলধন সরবরাহ করছে। ফলে দেশে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হচ্ছে। জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার হ্রাস করার ক্ষেত্রে দেশে কর্মরত এনজিওসমূহের ভূমিকা খুবই ইতিবাচক। বাংলাদেশের কৃষি উৎপাদন বৃদ্ধিতে এনজিওসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে। ঋণদান, সেচব্যবস্থা সম্প্রসারণ, স্বল্প বা বিনামূল্যে বীজ ও সার সরবরাহ করে কৃষি উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে। এছাড়া নারীর ক্ষমতায়ন, বেকার সমস্যা দূরীকরণ এবং কুটির শিল্প উন্নয়নে এনজিওসমূহ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করছে।
উপর্যুক্ত আলোচনার প্রেক্ষিতে বলা যায়, এদেশের গ্রাম ও শহরের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর উন্নতির ক্ষেত্রে এনজিও কার্যক্রমের ভূমিকা অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ।

১০. লন্ডন প্রবাসী রায়হান সাহেব তার গ্রামের বাড়ি সিলেটে বেড়াতে এসে সেখানে কর্মরত একটি সরকারি সংস্থার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারেন। সংস্থাটি গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে সংস্থাটি প্রতিষ্ঠিত হয়। তবে শুধু খাদ্যের স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন নয়, সার্বিক গ্রাম উন্নয়নই সংস্থাটির মূল লক্ষ্য। 
ক. সামাজিক উন্নয়ন প্রত্যয়টি কখন থেকে ব্যবহৃত হতে থাকে?
খ. সরকারি সংস্থার বৈশিষ্ট্যসমূহ ব্যাখ্যা করো।
গ. উদ্দীপক দ্বারা বাংলাদেশের কোন সরকারি সংস্থার ভূমিকাকে ইঙ্গিত করা হয়েছে? ব্যাখ্যা করো। 
ঘ. উদ্দীপক দ্বারা ইঙ্গিতকৃত সংস্থাটি পল্লি এলাকার আর্থ সামাজিক সমস্যা সমাধানে গুরুতবপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে - তুমি কি বক্তব্যটি সমর্থন কর? সুচিন্তিত মতামত দাও। 

❖ ১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর ❖
ক. সামাজিক উন্নয়ন প্রত্যয়টি ষাটের দশকের শুরু থেকে ব্যবহৃত হতে থাকে।

খ. সরকারি সংস্থা হচ্ছে সরকারের প্রশাসনিক একক। সরকারি সংস্থার কতকগুলো বৈশিষ্ট্য রয়েছে। এগুলো হলো- ১. বৃহৎ পরিসরের কর্ম এলাকা বিদ্যমান, ২. সীমিত সেবা এবং সকল এলাকার জন্য কর্মসূচি, ৩. উপকারভোগীদের সাথে মিথস্ক্রিয়ার অভাব, ৪. পদক্ষেপ গ্রহণ ও প্রেষণার অভাব, ৫. কেঠার ও ক্রমসোপান আমলাতান্ত্রিক কাঠামো, ৬. সাধারণ জনগণের কাছে দায়বদ্ধতা ইত্যাদি।

গ. উদ্দীপকে বাংলাদেশের অন্যতম সরকারি সংস্থা 'স্বনির্ভর আন্দোলন' এর ভূমিকার প্রতিফলন ঘটেছে। উদ্দীপকে দেখা যায়, লন্ডন প্রবাসী রায়হান সাহেব তার গ্রামের বাড়ি সিলেটে বেড়াতে এসে সেখানে কর্মরত একটি সরকারি সংস্থার ভূমিকা সম্পর্কে জানতে পারেন; যে সংস্থাটি গ্রামের অর্থনৈতিক উন্নয়নের লক্ষ্যে স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত হচ্ছে। অনুরূপভাবে স্বনির্ভর আন্দোলনের ক্ষেত্রেও দেখা যায়, স্বনির্ভর আন্দোলন স্বেচ্ছাশ্রমের ভিত্তিতে পরিচালিত একটি প্রয়াস যা সিলেট জেলায় শ্যামল সিলেট নামে পরিচিত।
খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের উদ্দেশ্যে ১৯৭৫ সালে প্রথম স্বনির্ভর আন্দোলনের সূত্রপাত ঘটে যা উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারি সংস্থার সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ। কেননা উদ্দীপকে উল্লিখিত সরকারি সংস্থাটিরও খাদ্যে অর্জনের লক্ষ্যে ১৯৭৫ সালে সর্বপ্রথম সূচনা হয়। তবে শুধু খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনই নয়, সার্বিক গ্রাম উন্নয়নই উদ্দীপকে বর্ণিত সরকারি সংস্থার মূল লক্ষ্য, যা স্বনির্ভর আন্দোলনের মূল্য লক্ষ্যকে নির্দেশ করে। কেননা স্বনির্ভর আন্দোলনেরও মূল লক্ষ্য খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জনের পাশাপাশি সার্বিক গ্রাম উন্নয়ন।

ঘ. স্বনির্ভর আন্দোলন পল্লি এলাকার আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানে গুরুতবপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারেত বক্তব্যটি আমি সমর্থন করি। স্বনির্ভর আন্দোলন সংস্থাটি বাংলাদেশের আর্থসামাজিক সমস্যা সমাধানে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করেছে। বাংলাদেশে ব্যাপক খাদ্য ঘাটতি বিদ্যমান। তাই প্রতিবছর ১৫ থেকে ২০ লক্ষ টন খাদ্য আমদানি করতে হয়। ফলে দেশের উন্নয়ন ব্যাহত হচ্ছে। তাই স্বনির্ভর আন্দোলনের মাধ্যমে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণতা অর্জন করতে পারলে দেশের উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। স্বনির্ভর আন্দোলনের মাধ্যমে দেশে কর্মসংস্থান সৃষ্টি ও জনগণকে কর্মে উদ্বুদ্ধ করতে পারলে স্বনির্ভর আন্দোলন আমাদের জাতীয় অর্থনীতিতে অবদান রাখতে পারবে। দেশের গ্রামাঞ্চলের অধিকাংশ মানুষ ধর্মভীরু এবং কুসংস্কারাচ্ছন্ন হওয়ার ফলে অর্থনৈতিক উন্নয়ন কার্যক্রম ব্যাহত হয়। তাই স্বনির্ভর আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে গ্রামের কর্মশালা করতে পারলে সামাজিক গোঁড়vমি ও কুসংস্কার দূর হবে এবং উন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে। বাংলাদেশের বিশেষ করে গ্রামীণ পরিবহন ও যোগাযোগ ব্যবস্থার অবকাঠামো খুব দুর্বল। এমতাবস্থায় স্বনির্ভর আন্দোলন কর্মসূচির মাধ্যমে স্বেচ্ছাশ্রম দ্বারা রাস্তাঘাট তৈরিতে স্বনির্ভর আন্দোলন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখতে পারে। বর্তমানে বাংলাদেশের জনসংখ্যা ১.৩৭% হারে বৃদ্ধি পাচ্ছে যা দেশের জন্য খুবই ভয়াবহ সংকেত। তাই স্বনির্ভর আন্দোলনের মাধ্যমে পরিবার পরিকল্পনা কর্মসূচি জোরদার করা যেতে পারে। এভাবে স্বনির্ভর আন্দোলন পল্লি এলাকার আর্থ-সামাজিক সমস্যা সমাধানে গুরুতবপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।

No comments:

Post a Comment