G

HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর pdf download অধ্যায় ১

এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Agricultural Education 1st Paper Srijonshil question and answer. HSC Agricultural Education 1st Paper (Srijonshil) Creative Questions pdf download. HSC Krishi Shikkha 1st paper Srijonshil Proshno Uttor.

উচ্চ মাধ্যমিক
কৃষিশিক্ষা
প্রথম পত্র

সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
অধ্যায়-১

HSC Agriculture 1st Paper
Srijonshil Question and Answer pdf download

১. সুজন মিয়া ফুলতলা গ্রামের একজন কৃষক। বাড়ি থেকে বাজারে যেতে হলে তাকে দুপুরে প্রচ- রোদে চার কিলোমিটার পথ অতিক্রম করতে হয়। বিশ্রাম নেওয়ার মত ছায়া কোথাও নেই। তাই সে কয়েকজন কৃষকের সাথে আলোচনা করে সম্পূর্ণ রাস্তায় কিছু বনজ বৃক্ষের চারা রোপণ করেন। তারা উৎপাদিত দ্রব্যগুলো চুক্তি অনুযায়ী বণ্টনের সিদ্ধান্ত নেয়।
ক. মাঠ ফসল কী?
খ. টমেটো কেন উদ্যান ফসল? ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকের ফসলটি কৃষির কোন ক্ষেত্রের অন্তর্ভুক্ত? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সুজন মিয়ার উদ্যোগটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে মূল্যায়ন কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. উন্মুক্ত মাঠে বেড়াবিহীন অবস্থায় চাষকৃত ফসল হলো মাঠ ফসল। যেমন- ধান, পাট ইত্যাদি।

খ. টমেটো উদ্যান ফসল কারণ টমেটো বাড়ির আশে পাশে এমনকি ছাদে বা টবের মাটিতে চাষ করা যায়। টমেটো উৎপাদন খরচ কম কিন্তু দাম বেশি। টমেটো গাছ থেকে সংগ্রহ করে সরাসরি খাওয়া যায় অন্যান্যা উদ্যান ফসলের মত টমেটো একবারে পরিপক্ক হয় না এবং ধাপে ধাপে সংগ্রহ করা যায় তাই টমেটোকে উদ্যান ফসল বলে।

গ. উদ্দীপকের ফসলটি কৃষির সামাজিক বনায়নের অন্তর্ভুক্ত। ফসলটি সামাজিক বনায়নে অন্তর্ভুক্ত হওয়ার কারণ ব্যাখ্যা করা হলো।
যে বনায়ন ব্যবস্থাপনায় জনগণ স্বতঃস্ফূর্তভাবে অংশগ্রহণ করে এবং এতে যে লাভ হয় তা অংশগ্রহণকারী জনগণ সরাসরি ভোগ করে। অর্থাৎ জনগণের স্বতঃস্ফূর্ত অংশগ্রহণের মাধ্যমে, জনগণের কল্যাণে এবং জনগণ দ্বারা সৃষ্ট বনায়নকে সামাজিক বনায়ন বলে। ফুলতলা গ্রামের সুজন মিয়া ও কয়েকজন কৃষক মিলে রোপনকৃত চারা থেকে প্রাপ্ত উদ্ভিদের লভ্যাংশ দাবিদার সুজন মিয়াসহ অন্যান্য কৃষক। যা সামাজিক বনায়নের অন্যতম প্রধান বৈশিষ্ট্য। সামাজিক বনায়নে যেরূপ উদ্দীপকের উক্ত ফসলের ব্যবস্থাপনায় সুজন মিয়া ও অন্যান্য দরিদ্র লোক অংশগ্রহণ করে।
সামাজিক বনায়ন জনগণের জ্বালানি, খাদ্য কাঠসহ অন্যান্য চাহিদা মেটায় ভবিষ্যতে সুজন মিয়াদের দিয়ে সৃষ্ট বনভূমি একইভাবে জনগণের জ্বালানি, খাদ্য ও কাঠের চাহিদা মেটাবে। সুজন মিয়া ও অন্যান্য কৃষকের সৃষ্ট বনায়ন গ্রামীণ কৃষক ও ভূমিহীনদের অর্থ উপার্জন ও কর্মসংস্থানের সুযোগ-সৃষ্টি করে। যা সামাজিক বনায়নের অন্যতম প্রধান উদ্দেশ্য।
সুতরাং, উক্ত আলোচনা থেকে বলা যায় যে, সুজন মিয়া ও কয়েকজন কৃষক দিয়ে সৃষ্ট ফসলে, সামাজিক বনায়নের সকল বৈশিষ্ট্য, উদ্দেশ্য বিদ্যমান থাকায় ফসলটি সামাজিক বনায়নের অন্তর্ভুক্ত।

ঘ. উদ্দীপকের সুজন মিয়ার সামাজিক বনায়নের উদ্যোগটি বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে অত্যন্ত তাৎপর্যপূর্ণ ঘটনা।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক বনায়নের মূল্যায়ন করা হলো সামাজিক বনায়ন বা বৃক্ষ রোপণের মাধ্যমে দরিদ্র জনগোষ্ঠীর আয়ের উৎস তৈরি হয়। এই কার্যক্রমের সঙ্গে স্থানীয় জনগণ গাছের চারা রোপণের পাশাপাশি এর পরিচর্যার সব দায়িত্ব পালন করে। জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবেলায় সামাজিক বনায়ন গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। আমাদের দেশের বনভূমি যে অনুপাতে থাকা প্রয়োজন তা না থাকায় পরিবেশের বিভিন্ন উপাদানের (যেমন- তাপমাত্রা) ভারসাম্যতা নষ্ট হচ্ছে। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে বাংলাদেশের বনভূমির চাহিদা পূরণ করা সম্ভব। সামাজিক বনায়নের মাধ্যমে রোপণকৃত গাছ প্রাকৃতিক দেয়াল হিসেবে কাজ করে। এই বনায়নের মাধ্যমে উপকূলীয় অঞ্চলে সারিবদ্ধভাবে অধিক পরিমাণে গাছ লাগিয়ে সবুজ বেষ্টনী তৈরি করা যায়। সামাজিক বনায়নে ফলজ গাছ রোপণ করলে গ্রামের মানুষের খাদ্য ও পুষ্টির উৎস সৃষ্টি হয়। দেশের প্রতিটি অঞ্চলে গ্রামের মানুষ একটি বনজ, একটি ফলজ ও একটি ভেষজ গাছের চারা রোপণ করার পদ্ধতি অনুসরণ করায় খাদ্য ও পুষ্টি সরবরাহ নিশ্চিত হয়েছে। প্রাকৃতিক বন আছে তা উজাড় হয়ে যেত। বাংলাদেশে প্রতি বছর ৮.০ মিলিয়ন ঘনমিটারের বেশি জ্বালানি কাঠের চাহিদা রয়েছে যার প্রায় ৮২-৯৯% আসে সামাজিক বন থেকে। সামাজিক বনায়ন বাংলাদেশের গ্রামীণ জনসাধারণের কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির সুযোগ সৃষ্টি করে। সুতরাং, বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে সামাজিক বনায়ন আশির্বাদস্বরূপ। সংক্ষেপে এর মূল্যায়ন করা অসম্ভব।

২. জামান সাহেব আমন মৌসুমে ধান চাষ করে কম লাভ হওয়ায় উপজেলা কৃষি অফিসারের নিকট যান। কৃষি অফিসার কৃষির বিভিন্ন ক্ষেত্র নিয়ে আলোচনা করেন। জমিতে পর্যাপ্ত পরিমাণে জৈব সার প্রয়োগ করে সবজি চাষ করতে বলেন। তিনি সময়মতো সেচ এবং বালাইনাশকও প্রয়োগ করতে বলেন। এতে উৎপাদন খরচ বাড়লেও জামান সাহেব পূর্বের তুলনায় বেশি লাভবান হন।
ক. মাঠ ফসল কী?
খ. আলু কেন উদ্যান ফসল- ব্যাখ্যা কর।
গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ফসলের ক্ষেত্রগুলোর মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা কর।
ঘ. জামান সাহেবের লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শের যথার্থতা মূল্যায়ন কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব ফসল সাধারণত বিস্তীর্ণ মাঠে, বড় জমিতে, নিচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে চাষ করা হয় তাদেরকে মাঠ ফসল বলে। যেমন- ধান, গম ইত্যাদি।

খ. উদ্যান জাতীয় ফসল বাড়ির আশপাশে উর্বর জমিতে চাষ করা হয়। ব্যবসায়িক ভিত্তিতে আলু চাষ করা হলেও কম জমিতে স্বল্প পরিসরে বাড়ির আশপাশে চাষ করা হয়। আলু সারা বছর সবজি হিসেবে খাওয়া হয়। সবজি জাতীয় ফসল উদ্যান ফসলের অন্তর্ভুক্ত। আলু চাষের সময় ও পরিপক্বের পর উত্তোলনের সময় বিশেষ যত্নের প্রয়োজন হয়। যা উদ্যান ফসলের বৈশিষ্ট্য। এসব কারণে আলুকে উদ্যান ফসল বলা হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লিখিত ফসলের ক্ষেত্রগুলো হলো মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসল। কারণ ধান মাঠ ফসল আর সবজি হলো উদ্যান ফসল। নিচে মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসলের মধ্যে তুলনামূলক আলোচনা করা হলো-
উদ্যান ফসল ক্ষুদ্রায়তনের জমিতে চাষ করা হয় এবং পৃথকভাবে প্রতিটি গাছের যত্ন নেওয়া হয়, যেমন- আম, কলা, কাঁঠাল, ফুলকপি, আনারস ইত্যাদি অপরদিকে মাঠ ফসল বৃহদায়তনের জমিতে চাষ করা হয় এবং সমষ্টিগতভাবে যত্ন ও পরিচর্যা করা হয়। যেমন- ধান, গম, ভুট্টা, পাট ইত্যাদি। উদ্যান ফসল ভূপৃষ্ঠ থেকে কম-বেশি উঁচু জমিতে চাষ করা হয় কিন্তু মাঠ ফসল নিচু ও মাঝারি উঁচু জমিতে চাষ করা হয়। উদ্যান ফসল রক্ষার জন্য চারদিকে বেড়া নির্মাণের প্রয়োজন হয়, পক্ষান্তরে মাঠ ফসল রক্ষার জন্য চারদিকে বেড়া নির্মাণের প্রয়োজন হয় না। উদ্যান ফসলের বেশি যত্ন ও পরিচর্যা প্রয়োজন হয় অপরদিকে মাঠ ফসলের কম যত্ন ও পরিচর্যার প্রয়োজন হয়। উদ্যান ফসল একাধারে পরিপক্ব হয় না এবং ধাপে ধাপে সংগ্রহ করা হয় কিন্তু মাঠ ফসলের সবগুলো একত্রে পরিপক্ব হয় এবং তা একত্রে সংগ্রহ করা হয়। ফসলের মূল্য মৌসুমের শুরুতে বেশি থাকে অন্যদিকে ফসলের মূল্য মৌসুমের শুরুতে কম থাকে। উদ্যান ফসলের উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে বেশি এবং নিট লাভ কম হয়, পক্ষান্তরে মাঠ ফসলের উৎপাদন খরচ তুলনামূলকভাবে কম এবং নিট লাভ বেশি হয়। উদ্যান ফসল সাধারণত তাজা অবস্থায় ব্যবহার করা হয়, অন্যদিকে মাঠ ফসল সাধারণত শুকিয়ে ব্যবহার করা হয়।

ঘ. কৃষি কর্মকর্তা জামান সাহেবকে সবজি চাষ করার পরামর্শ দেন। তিনি সময়মতো সেচ ও বালাইনাশক প্রয়োগ করারও পরামর্শ দেন। নিচে জামান সাহেবের লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শের যথার্থতা মূল্যায়ন করা হলো-
সবজি একটি উদ্যান ফসল। উদ্যান ফসল চাষ করা শ্রমসাপেক্ষ হলেও লাভজনক ও ঝুঁকি কম। উদ্যান ফসলের গাছ হতে ফল সংগ্রহ করে সরাসরি খাওয়া যায়। অনেক উদ্যান ফসল থেকে সারাবছরই ফল পাওয়া যায়। উদ্যান ফসল অত্যন্ত স্বল্প পরিসরে চাষ করা যায়। তাছাড়া পারিবারিক পুষ্টি চাহিদা পূরণ, ব্যবসা, কাঠ ও জ্বালানি কাঠের চাহিদা পূরণ, আত্মকর্মসংস্থান বৃদ্ধিতে উদ্যান ফসল গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। উদ্যান ফসলে নিয়মিত পানি সেচ দেওয়ার প্রয়োজন হয়। তাছাড়া সবজি জাতীয় ফসলে পোকা ও রোগাক্রমণ বেশি হয়। তাই সময়মতো বালাইনাশক প্রয়োগ করতে হয়। এতে উৎপাদন বেশি হয়। উপরোক্ত আলোচনার পরিপ্রেক্ষিতে বলা যায়, লাভবান হওয়ার ক্ষেত্রে কৃষি কর্মকর্তার পরামর্শ যথার্থ ছিল।

৩. আরমান সাহেবের একটি পোল্ট্রি খামার আছে। তিনি খামারে ব্রয়লার ও লেয়ার মুরগি পালন করেন। এতে তার খামারে কর্মসংস্থানের সৃষ্টি হয়। তিনি আর্থিকভাবেও লাভবান হন।
ক. পোল্ট্রি কী?
খ. ব্রয়লার মুরগি পালন করা হয় কেন?
গ.উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পের সমস্যা কীভাবে সমাধান হতে পারে বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকে উল্লিখিত শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব আলোচনা কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব পাখি গৃহে মানুষের তত্ত্বাবধানে লালিত-পালিত হয়, বংশ বৃদ্ধি করে, ডিম ও মাংস উৎপাদন করে তাদের পোল্ট্রি বলে।

খ. ব্রয়লার মুরগি দ্রুত বৃদ্ধি পায় এবং অধিক মাংস উৎপাদন করে। ফলে মাংসের ঘাটতি পূরণ হয়। দ্রুত বৃদ্ধি পাওয়ার কারণে ব্রয়লার মুরগি পালন করে অধিক লাভবান হওয়া যায়। তাই ব্রয়লার মুরগি পালন করা হয়।

গ. উদ্দীপকে উল্লেখিত পোল্ট্রি শিল্পের সমস্যা নিম্নোক্তভাবে সমাধান হতে পারে-
১। উন্নত জাতের পোল্ট্রির বাচ্চা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
২। পোল্ট্রির স্বাস্থ্যসম্মতভাবে বাসস্থান তৈরি করতে হবে।
৩। পোল্ট্রির জন্য সুষম খাদ্য সরবরাহ নিশ্চিত করতে হবে এবং এই খাদ্যের উপকরণ সহজলভ্য হতে হবে।
৪। পোল্ট্রির রোগ প্রতিষেধক টিকা প্রাপ্যতা নিশ্চিত করতে হবে।
৫। পোল্ট্রির ডিম বাজারজাতকরণের ব্যবস্থা নিশ্চিত করতে হবে যাতে খামারি উপযুক্ত মূল্য পেতে পারেন।
৬। পোল্ট্রির খামারের সাথে বাজারের যোগাযোগ ব্যবস্থা উন্নত থাকতে হবে।
৭। পোল্ট্রি পালন ও বিভিন্ন রোগের চিকিৎসা সম্পর্কিত প্রশিক্ষণ কার্যক্রম জোরদার করতে হবে।
৮। বাচ্চার প্রাপ্যতা সহজলভ্য হতে হবে।
৯। খামারি যাতে সহজ শর্তে হাঁস-মুরগির খামারের জন্য ঋণ পেতে পারে, সেজন্য প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা নিতে হবে।

ঘ. দেশের আমিষের চাহিদা পূরণ, খাদ্য, অর্থনৈতিক, কর্মসংস্থান ও মানবজাতির আর্থসামাজিক উন্নয়নে পোল্ট্রির গুরুত্ব অপরিসীম। পোল্ট্রি শিল্পের অর্থনৈতিক গুরুত্ব নিচে আলোচনা করা হলো-
১. পোল্ট্রি শিল্পে প্রায় ২০ শতাংশ হারে প্রবৃদ্ধি হচ্ছে। তাই এটি আয়ের উত্তম উৎস।
২. বর্তমানে পোল্ট্রি শিল্পে প্রায় ২১ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগ হচ্ছে।
৩. খুব অল্প সময়ে বিনিয়োগ থেকে অর্থ প্রাপ্তি হয়।
৪. পোল্ট্রির বিষ্ঠা থেকে বায়োগ্যাস তৈরি হয়।
৫. পোল্ট্রির বিষ্ঠা উত্তম জৈবসার যা ফসলের জমিতে ও পুকুরে প্রয়োগ করা যায়।
৬. অন্য পেশার সাথে অবসরে পোল্ট্রি পালন করা যায়। ফলে আত্মকর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়।
৭. জায়গা কম লাগে বলে অল্প জায়গা থেকে ফসলের চেয়ে লাভ বেশি হয়।
৮. দারিদ্র্য দূর করা হয়। ফলে বেকার যুবক-যুবতী, কৃষক ও দুস্থ নারীদের কর্মসংস্থানের পথ সৃষ্টি হয়।
৯. মাংস, ডিম ও পালক বিদেশে রফতানির সুযোগ আছে।
১০. নাড়িভুঁড়ি মাছের খাদ্য হিসেবে ব্যবহৃত হয়। উক্তভাবে পোল্ট্রি আমাদের অর্থনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

৪. বিপ্লব শেরেবাংলা কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ের তৃতীয় বর্ষের ছাত্র। বিপ্লব ও তার সহপাঠীদের সবাইকে নিয়ে তাদের শিক্ষক একদিন গাজীপুর গেলেন। তারা প্রথম বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI) এবং পরবর্তী সময়ে বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI) ঘুরে দেখে।
ক. কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান কী?
খ. বাংলাদেশের ৭টি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের নাম লেখ।
গ. বিপ্লব ও তার সহপাঠীর ঘুরে দেখা প্রতিষ্ঠানের উদ্দেশ্য কী? তা বর্ণনা কর।
ঘ. কৃষি উন্নয়নে প্রতিষ্ঠান দুটি কোনো ভূমিকা রাখে কি? ব্যাখ্যা কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষি উন্নয়নকে ত্বরান্বিত এবং কৃষিবিষয়ক যাবতীয় সমস্যা সমাধানের নিমিত্তে বিভিন্ন ধরনের গবেষণা যে প্রতিষ্ঠানে করা হয়, তাকে কৃষি গবেষণা প্রতিষ্ঠান বলে।

খ.বাংলাদেশের ৭টি কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের নাম নিম্নরূপ:
১. বাংলাদেশ ধান গবেষণা ইনস্টিটিউট (BRRI)
২. বাংলাদেশ কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট (BARI)
৩. বাংলাদেশ পরমাণু গবেষণা ইনস্টিটিউট (BINA)
৪. বাংলাদেশ পাট গবেষণা ইনস্টিটিউট
৫. বাংলাদেশ মৎস্য গবেষণা ইনস্টিটিউট
৬. বাংলাদেশ প্রাণিসম্পদ গবেষণা ইনস্টিটিউট
৭. মৃত্তিকা সম্পদ উন্নয়ন ইনস্টিটিউট

গ. বিপ্লব ও তার সহপাঠীর ঘুরে দেখা প্রতিষ্ঠান দুটি হলো বাংলাদেশ ধান গবেষণা ও কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউট। প্রতিষ্ঠান দুটির উদ্দেশ্য বহুবিদ। নিচে তা বর্ণনা করা হলো-
ধান গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্দেশ্যাবলি:
i. ধানের উন্নত ও উপযোগী জাত উদ্ভাবন করা।
ii. ধানের উন্নত ও সহজ চাষাবাদ কৌশল উদ্ভাবন করা।
iii. ধানের রোগবালাই দমন নিয়ে গবেষণা করা।
iv. ধানের সার ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করা।
v. কম পানি দিয়ে ধান চাষের প্রযুক্তি উদ্ভাবন করা।

কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের উদ্দেশ্যাবলি:
i. ফসলের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন সাধন করা।
ii. ফসলের উন্নত চাষাবাদ কলাকৌশল উদ্ভাবন।
iii. সার ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করা।
iv. উন্নত সেচ পদ্ধতি উদ্ভাবন করা।
v. বিভিন্ন গবেষণা প্রকল্প তদারকিকরণ।
vi. শস্যবিন্যাস পদ্ধতির আধুনিকীকরণ ও উন্নয়ন।

ঘ. কৃষি উন্নয়নে প্রতিষ্ঠান দুটি গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে। তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
i. ফসলের জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন।
ii. দেশের চাহিদাভিত্তিক কৃষি গবেষণা পরিচালনা ও সরকারকে কৃষি উন্নয়নে পরামর্শ দান।
iii. কৃষিক্ষেত্রে প্রযুক্তিগত উন্নয়নের জন্য বিদেশের সঙ্গে যোগাযোগ সাধন।
iv. কৃষি ব্যবস্থাপনা সংক্রান্ত প্রযুক্তি উদ্ভাবন।
v. ফসলের বালাই ও প্রতিকার সংক্রান্ত গবেষণা পরিচালনা করা।
vi. মৃত্তিকার উর্বরতা রক্ষা ও উন্নয়ন।
vii. সার ও অন্যান্য উপকরণের সুষ্ঠু ব্যবস্থাপনা ও মাত্রা নির্ধারণ।
viii. পানি সেচ ব্যবস্থা সংক্রান্ত পরামর্শ দান।
ix. চাষাবাদ ও পণ্য প্রক্রিয়াজাতকরণ যন্ত্র উদ্ভাবন।
x. কৃষি পণ্যের বহুমুখী ব্যবহার কৌশল উদ্ভাবন।

৫. রহমত আলী টেলিভিশনে কৃষি সম্প্রসারণ বিষয়ে একটি প্রতিবেদন দেখেছিলেন। প্রতিবেদনে কৃষি সম্প্রসারণে উন্নত প্রযুক্তির ব্যবহার দেখানো হয়েছিল। তিনি অনুষ্ঠান দেখে উদ্বুদ্ধ হন এবং জমিতে সার প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন।
ক. ই-কৃষি কী?
খ. কৃষি কলসেন্টার বলতে কী বোঝ?
গ. কৃষি সম্প্রসারণে কোন কোন উন্নত প্রযুক্তি দেখে রহমত আলী উদ্বুদ্ধ হন তা বর্ণনা কর।
ঘ. উদ্দীপকের আলোকে রহমত আলীর সিদ্ধান্ত মূল্যায়ন কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. ই-কৃষি হলো একটি ইলেকট্রনিকস ভিত্তিক কৃষি তথ্য প্রদান কার্যক্রম।

খ. কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তির যুগে কৃষি তথ্য সার্ভিসকেও যুগোপযোগী করার লক্ষ্যে আধুনিক মানসম্মত আইসিটি সেন্টারকে কৃষি কলসেন্টার বলে। কৃষি তথ্য সার্ভিসই প্রথম আইপিএম/আইসিএম ক্লাবের কৃষক ইন্টারনেট গ্রাম পর্যায়ে কৃষি তথ্য ও যোগাযোগ কেন্দ্র স্থাপন করে কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি হস্তান্তরের যুগোপযোগী, আধুনিক এবং সহজতর পদ্ধতি ব্যবহারের সূত্রপাত করেছে।

গ. রহমত আলী কৃষি সম্প্রসারণে যে বিষয় দেখে উদ্বুদ্ধ হন তা হলো ইন্টারনেটের ব্যবহার। কৃষি তথ্যের সবচেয়ে বড় ভান্ডার হচ্ছে ইন্টারনেটের ওয়েবসাইট। আধুনিক কৃষি প্রযুক্তিনির্ভর। প্রতিনিয়ত নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন হচ্ছে। যেমন- ফসলের জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ একটি আধুনিক প্রযুক্তি। যার ফলে উদ্দীপকে রহমত আলী বিটিভিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের একটি প্রতিবেদন দেখে এবং প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ হয়। বোরো ধানে প্রযুক্তিটি ব্যবহার করে সফল হন। ফলে এলাকার কৃষকরা এই প্রযুক্তি ব্যবহারে আগ্রহী হন। কৃষক চান কম খরচে অধিক ফসল উৎপাদন করতে এবং অধিক লাভবান হতে। জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে খরচ কমে, উৎপাদন বাড়ে, এতে কৃষকরা লাভবান হন। দেখা যায় গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে ২০-৩০ ভাগ নাইট্রোজেন সাশ্রয় হয় ফলে খরচ কমে। গুটি ইউরিয়া ফসলের জমিতে ধীরে ধীরে কাজ করে সেজন্য কৃষকদের বার বার ইউরিয়া প্রয়োগের ঝামেলা করতে হয় না। গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে ফলন ১৫-২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। তাই রহমত আলীর দেখাদেখি তার এলাকার অন্য কৃষকরাও পরবর্তীতে ধানের জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করেন এবং ফলন বেশি পান। ফলে কৃষকরা বেশি করে। ধান চাষ করবেন। উৎপাদন বৃদ্ধির মাধ্যমে পারিবারিক চাহিদা মিটিয়ে অতিরিক্ত ধান বিক্রয় করে আর্থিকভাবে লাভবান হবে। দেশ খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ হবে। গুটি ইউরিয়া প্রযুক্তি ব্যবহার করে লাভবান হওয়ার কারণে কৃষির অন্যান্য প্রযুক্তির প্রতি আকৃষ্ট হবে। ফলে বাংলাদেশের কৃষি তথা কৃষকের ভাগ্যোন্নয়ন ত্বরান্বিত হবে।

ঘ. উদ্দীপকে রহমত আলীর সিদ্ধান্তটি ছিল জমিতে সার প্রয়োগ। ফসলের জমিতে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ একটি অন্যতম কৃষি প্রযুক্তি। প্রযুক্তিটি জনপ্রিয় করার জন্য কৃষি সেবা প্রদানকারী প্রতিষ্ঠানসমূহ দিনরাত কাজ করে যাচ্ছেন। উদ্দীপকে রহমত আলী বিটিভিতে গুটি ইউরিয়ার উপর একটি প্রতিবেদন দেখে জানতে পারেন যে, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে খরচ কম ও ফলন বেশি হয়। তাই তিনি বোরো ধানে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করে ফলন বেশি পান। এছাড়াও তিনি একটি সমীক্ষায় দেখেন, গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করে ২০-৩০ ভাগ নাইট্রোজেন সাশ্রয় করা যায়। গুটি ইউরিয়া ধীরে ধীরে গাছরে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। ফলে মৌসুমে একবার ব্যবহার করলে দ্বিতীয়বার করতে হয় না। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের ফলে ফলন ১৫-২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সপ্তাহে ৬ দিন 'মাটি ও মানুষ' এবং একদিন 'হৃদয়ে মাটি ও মানুষ' অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানগুলোতে প্রতিবেদন, সফল কাহিনী, কৃষি সমস্যা ও সমাধান, টকশো, টেলপ, বিজ্ঞপ্তি সম্প্রচার করা হয়। এছাড়াও বাংলাদেশ বেতার, রেডিও টুডে, চ্যানেল আইতে কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচার হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে কৃষকদের কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতির বিভিন্ন প্রতিবেদন ও চিত্র দেখে রহমত আলী তার জমিতে ইউরিয়া সারের পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগের সিদ্ধান্ত নেন, যা অত্যন্ত সময়োপযোগী।

৬. দীপু এইচএসসি পাস করার পর তার ইচ্ছা যে সে কৃষিবিজ্ঞান নিয়ে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করবে। সে জানতে পারল কৃষিবিজ্ঞানে উচ্চশিক্ষা গ্রহণ করে বাংলাদেশের কৃষি উন্নয়ন ও বিভিন্ন সমস্যা সমাধান করা সম্ভব। সেই লক্ষ্যে সে বাংলাদেশের ময়মনসিংহে অবস্থিত বিশ্ববিদ্যালয়টিতে ভর্তি হয়।
ক. কৃষি তথ্য সার্ভিস কী?
খ. বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ কেন?
গ. দীপু যে বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল ঐ প্রতিষ্ঠানটির উদ্দেশ্য বর্ণনা কর।
ঘ. উক্ত প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রমগুলো আমাদের কৃষি ক্ষেত্রের উপর নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে তা বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষি তথ্য সার্ভিস গণপ্রজাতন্ত্রী বাংলাদেশ সরকারের কৃষি মন্ত্রণালয়ের আওতাধীন একটি স্বতন্ত্র প্রতিষ্ঠান। এটি কৃষি তথ্য ও প্রযুক্তি তৃণমূল পর্যন্ত দ্রুত বিস্তার কার্যক্রম বাস্তবায়ন করে আসছে।

খ. বাংলাদেশের উন্নয়নে প্রাণিসম্পদ গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। খাদ্য নিরাপত্তা, সুষম পুষ্টি সরবরাহ, আত্মকর্মসংস্থান সৃষ্টি, বৈদেশিক মুদ্রা অর্জন, কৃষি জমির উর্বরতা বৃদ্ধি ও নারীর ক্ষমতায়নে প্রাণিসম্পদ বিশেষ ভূমিকা রাখে। বাংলাদেশের জনসংখ্যার প্রায় ২২% সরাসরি এবং ৫০% পরোক্ষভাবে প্রাণিসম্পদ খাতের উপর নির্ভরশীল।

গ. দীপু বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হয়েছিল। উক্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যতম প্রধান লক্ষ্য হচ্ছে মানসম্মত উচ্চতর কৃষিশিক্ষা ব্যবস্থার নিশ্চয়তা বিধানের মাধ্যমে দেশে কৃষি উন্নয়নের গুরুদায়িত্ব বহনে সক্ষম তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক জ্ঞানসম্পন্ন দক্ষ কৃষিবিদ, কৃষিবিজ্ঞানী, প্রযুক্তিবিদ ও কৃষি প্রকৌশলী তৈরি করা। এ প্রতিষ্ঠানের প্রধান উদ্দেশ্য নিম্নরূপ:
i. কৃষির সকল শাখায় পেশাভিত্তিক উচ্চশিক্ষা প্রদান করা।
ii. কৃষির বিভিন্ন বিষয়ে মৌলিক ও ফলিত গবেষণা পরিচালনা করা।
iii. বিভিন্ন পর্যায়ে ও বিভিন্ন ধরনের কৃষি সম্প্রসারণ ও জাতি গঠনমূলক কার্যকলাপ পরিচালনা ও তদারকি করা।
iv. কৃষি ও পল্লী উন্নয়নের বিভিন্ন ক্ষেত্রে সরকারি ও বেসরকারি প্রতিষ্ঠান কর্মী, কৃষক ও খামার নেতাদের জন্য প্রশিক্ষণ ব্যবস্থা করা।
v. দেশের ভেতরের ও বাইরের বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বা সংস্থার মধ্যে দ্বিপক্ষীয় এবং বহুপক্ষীয় সহযোগিতা ও যৌথ উদ্যোগের জন্য প্রয়োজনীয় সুবিধাদি প্রদান করা।

ঘ. উক্ত প্রতিষ্ঠানটি অর্থাৎ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয় কার্যক্রম আমাদের কৃষি ক্ষেত্রের উপর নতুন দিগন্ত উন্মোচন করছে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
বাংলাদেশ একটি কৃষিপ্রধান দেশ এবং এদেশের অধিকাংশ লোকই কৃষক। তা সত্ত্বেও এদেশের কৃষকরা কৃষিশিক্ষায় শিক্ষিত নয়। যার কারণে উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি প্রয়োগ করা সম্ভব হয়নি। এর ফলে এদেশে আজও খাদ্য ঘাটতি সম্পূর্ণ লাঘব হয়নি। এদেশে প্রান্তিক চাষির পরিমাণ বৃদ্ধি পাচ্ছে, এতে জমিগুলো খ- ও বিখ--ত হয়ে যাচ্ছে। কৃষি ফসল উৎপাদনের জমি ক্রমশ হ্রাস পাচ্ছে। তাই এদেশের ক্রমহ্রাসমান জমি থেকে ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যার জন্য খাদ্য, বস্ত্র ও বাসস্থানের চাহিদা পূরণ করতে চাইলে কৃষিশিক্ষার প্রতি গুরুত্ব দেওয়া এবং গবেষণা কার্যক্রম, শিক্ষা কার্যক্রম, প্রশিক্ষণ কার্যক্রম সম্প্রসারণের বিকল্প নেই। কৃষিশিক্ষার মাধ্যমে এদেশের জনগণ দক্ষ জনশক্তিতে রূপান্তরিত হয়। কৃষিশিক্ষার মাধ্যমে উৎপাদনের কলাকৌশল অধিক ফলনশীল, উদ্ভাবন, প্রযুক্তিগত সম্প্রসারণ, বিভিন্নভাবে ক্ষতিকর প্রভাব থেকে ফসলকে রক্ষা, আধুনিক কৃষি যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন, সেচ ও সার ব্যবস্থাপনা, উন্নত বীজ ও জাত নির্বাচন, কৃষি সমস্যা দূরীকরণ ইত্যাদি ক্ষেত্রে কৃষিশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কৃষিশিক্ষার এসব প্রয়োজনীয়তার আলোকে কাজ করে চলেছে বাংলাদেশ কৃষি বিশ্ববিদ্যালয়। এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা ডিগ্রি অর্জন শেষে দেশের সব অঞ্চলে তাদের অর্জিত জ্ঞান ছড়িয়ে দিচ্ছে। পাশাপাশি গবেষণা, প্রশিক্ষণ ও সম্প্রসারণ কার্যক্রমে অংশগ্রহণ করেও শিক্ষা বিস্তারে ভূমিকা রাখছে। ফলে আমাদের কৃষি ক্ষেত্র দিন দিন সম্প্রসারণ হচ্ছে।

HSC কৃষিশিক্ষা ১ম পত্র (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর অধ্যায় ১ pdf download

৭. আসিফ গ্রীষ্মকালীন ছুটিতে মামার বাড়ি বেড়াতে যান। গিয়ে দেখে বাড়ির সামনে মামা রফিকের ছোট জমিতে শাকসবজি। দূরে একটি ভুট্টাক্ষেত দেখেন। গত বছর যে জমিতে আউশ ধান দেখেছিলেন। লাভের কথা চিন্তা করে এবার সেই জমিতে কিছু ফলের গাছ রোপণ করা হয়েছে। তবে ভুট্টা ও আউশ চাষ, পরিচর্যা, সংরক্ষণসহ প্রায় সকল কাজই শাকসবজি ও ফল চাষের চেয়ে ভিন্ন। লাভ দেখে অন্যান্য কৃষকরাও শাকসবজি ও ফল চাষ শুরু করেন।
ক. কৃষির ক্ষেত্র কী?
খ. কৃষক সভা ও উঠোন বৈঠকের বৈশিষ্ট্য তুলনামূলক ব্যাখ্যা কর।
গ. ভুট্টা ও আউশ উৎপাদনের সাথে শাকসবজি ও ফল উৎপাদনের ভিন্নতা বিশ্লেষণ কর।
ঘ. আউশ ধানের জমিতে কেন ফল গাছ রোপণ করা হয়েছে বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষির বিভিন্ন উপাদান বা শাখা রয়েছে এই শাখাগুলোকে কৃষির ক্ষেত্র বলে। বাংলাদেশের কৃষির ক্ষেত্র ৬টি।

খ. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কৃষি অফিসের কর্মকর্তারা প্রায় প্রতি মাসে অথবা প্রয়োজন অনুসারে মাঝে মাঝে কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে যে সভা বা বৈঠক করে তাকে কৃষক সভা বলে। অন্যদিকে কৃষকের উঠানে কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তত্ত্বাবধানে যে সভা বা বৈঠক করা হয়। তাকে উঠোন বৈঠক বলে।

গ. ভুট্টা ও আউশ হলো মাঠ ফসল অন্যদিকে শাকসবজি ও ফল উদ্যান ফসল। মাঠ ফসল ও উদ্যান ফসল উৎপাদনে ভিন্নতা পরিলক্ষিত হয়। নিচে তা বিশ্লেষণ করা হলো-
মাঠ ফসল বিস্তীর্ণ মাঠে চাষ করা হয় আর উদ্যান ফসল ছোট জমিতে চাষ করা হয়। সাধারণত একসঙ্গে অনেক বেশি। জমিতে মাঠ ফসল চাষ করা যায় কিন্তু উদ্যান ফসল একসঙ্গে কম জমিতে চাষ করা যায়। মাঠ ফসলের বীজ সাধারণত ছিটিয়ে বপন করা হয়। অন্যদিকে উদ্যান ফসল রোপণকালে আলাদা আলাদা গর্ত করতে হয়। মাঠ ফসলের জমিতে কোনো বেড়া বা ঘেরার প্রয়োজন হয় না কিন্তু উদ্যান ফসলে বেড়া বা ঘেরা দিতে হয়। মাঠ ফসলে প্রতিটি গাছের পৃথক পরিচর্যার প্রয়োজন হয় না। অন্যদিকে উদ্যান ফসলের ক্ষেত্রে প্রতিটি গাছের পৃথকভাবে পরিচর্যা করা হয়। মাঠ ফসলের ক্ষেত্রে পুরো মাঠের ফসল একসঙ্গে সংগ্রহ করা হয় কিন্তু উদ্যান ফসল একসঙ্গে পরিপক্ব হয় না। তাই ধাপে ধাপে সংগ্রহ করা হয়।

ঘ. আউশ ধান মাঠ ফসল এবং ফল গাছ উদ্যান ফসল। নিচে আউশ ধানের জমিতে ফল গাছ রোপণ করার কারণ ব্যাখ্যা করা হলো-
আসিফ গত বছর গ্রীষ্ম মৌসুমে যে জমিতে আউশ ধান দেখেছিল সেই জমিতে এ বছর ফলের চাষ করা হয়েছে। এর কারণ মাঠ ফসলের উৎপাদন খরচ ও ঝুঁকি বেশি কিন্তু দাম কম। ঝুঁকি ও ব্যয়বহুল ফসল চাষ করে কৃষককে লোকসান গুনতে হয়।
অন্যদিকে উদ্যান ফসল চাষাবাদে লাভ বেশি এবং ঝুঁকি কম। উদ্যান ফসল লাভজনক হওয়ায় এর চাষ বাড়ছে। উদ্যান ফসল বিশেষ করে ফল ধাপে ধাপে সংগ্রহ করা যায়। ফলে হঠাৎ করে দাম কমে গেলেও লোকসান হওয়ার সম্ভাবনা কম। উদ্যান ফসলের দাম মৌসুমের শুরুতে বেশি থাকে। কৃষক উদ্যান ফসল চাষে যে বিনিয়োগ করে তা মৌসুমের শুরুতে উঠে আসে। উঁচু বন্যামুক্ত জায়গায় চাষ করা হয় বলে বন্যার কারণে ফসলহানির ঝুঁকি কম। এ ধরনের ফসল অর্থাৎ ফল চাষে উৎপাদন খরচ কম হওয়ার কারণে কৃষক বেশি লাভবান হন। এছাড়া ফল তাজা খাওয়া যায় এবং ফলে পুষ্টিমান বেশি থাকে। এজন্য কৃষক তার পরিবারের প্রয়োজনেও উদ্যান ফসলের চাষ দিন দিন বৃদ্ধি করছে। উপরের আলোচনা থেকে বলা যায়, অধিক লাভের উদ্দেশ্যে।আউশ ধানের পরিবর্তে ফল চাষ করা হয়েছে।

৮. ইউরিয়া সারের দাম বাড়ায় কৃষক মফিজ চিন্তায় পড়েন। তিনি বিটিভিতে গুটি ইউরিয়ার উপর একটি প্রামাণ্যচিত্র দেখে জানতে পারেন যে, গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে খরচ কম ও ফলন বেশি হয়। তিনি বোরো ধানে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করে ফলন বেশি পান। মফিজের জমির ধান দেখে এবং উৎপাদন খরচ কম জেনে এলাকার অন্য কৃষকরা গুটি ইউরিয়া ব্যবহারে উদ্বুদ্ধ হয়। সাকিব ওয়েবসাইট থেকে অনেক আগে এসব তথ্য পেয়েছিলেন।
ক. উদ্যান ফসল কী?
খ. কৃষি তথ্য পেতে কৃষক বিদ্যালয়ের ভূমিকা ব্যাখ্যা কর।
গ. মফিজ গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ কীভাবে হলো ব্যাখ্যা কর।
ঘ. সাকিব কোন উৎস থেকে সহজে কৃষির তথ্য ও সেবা পেয়েছিল কারণসহ বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. যেসব ফসল সাধারণ কম বা ছোট জমিতে উদ্যানে বাগানে, স্বল্প পরিসরে, বন্যামুক্ত এলাকায় চাষ করা হয় সেসব ফসলকে উদ্যান ফসল বলে।

খ. কৃষক বিদ্যালয়ের মাধ্যমে কৃষকরা বিভিন্ন তথ্য সেবা পেয়ে থাকেন। সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম), সমন্বিত ফসল ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) ও সমন্বিত খামার ব্যবস্থাপনা (আইএফএম) বিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ ক্লাস করার মাধ্যমে কৃষকরা কৃষিবিষয়ক তথ্য ও সেবা পান। এ তথ্য সমৃদ্ধ জ্ঞান তারা কৃষি কাজে সরাসরি বাস্তব প্রয়োগ করতে পারেন।

গ. উদ্দীপকে মফিজ বিটিভিতে গুটি ইউরিয়ার উপর একটি প্রতিবেদন দেখেন এবং জানতে পারেন যে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে খরচ কম ও ফলন বেশি হয়। তিনি বোরো ধানে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগ করে ফলন বেশি পান। এছাড়াও তিনি একটি সমীক্ষায় দেখেন, গুটি ইউরিয়া ব্যবহার করে ২০-৩০ ভাগ নাইট্রোজেন সাশ্রয় করা যায়। গুটি ইউরিয়া ধীরে ধীরে গাছকে নাইট্রোজেন সরবরাহ করে। ফলে মৌসুমে একবার ব্যবহার করলে দ্বিতীয়বার করতে হয় না। গুটি ইউরিয়া ব্যবহারের ফলে ফলন ১৫-২০ ভাগ বৃদ্ধি পায়। বাংলাদেশ টেলিভিশনে সপ্তাহে ৬ দিন 'মাটি ও মানুষ' এবং একদিন 'হৃদয়ে মাটি ও মানুষ' অনুষ্ঠানটি প্রচার করা হয়। অনুষ্ঠানগুলোতে প্রতিবেদন, সফল কাহিনী, কৃষি সমস্যা ও সমাধান, টকশো, টেলপ, বিজ্ঞপ্তি সম্প্রচার করা হয়। এছাড়াও চ্যানেল আই, বাংলাদেশ বেতার, রেডিও টুডেতে কৃষিবিষয়ক অনুষ্ঠান প্রচারিত হচ্ছে। এসব অনুষ্ঠানে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে কৃষকদের কৃষি ক্ষেত্রে উন্নতির বিভিন্ন প্রতিবেদন ও চিত্র দেখে মফিজ তার জমিতে ইউরিয়া সারের পরিবর্তে গুটি ইউরিয়া প্রয়োগে উদ্বুদ্ধ হন।

ঘ. সাকিব কৃষি তথ্য সার্ভিস এর 'অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন সিস্টেম' নামক ওয়েবসাইট থেকে কৃষি তথ্য ও সেবা পেয়েছিলেন। এই কৃষি তথ্য ও সেবা পাওয়ার কারণসমূহ নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
সারাদেশে ভূমি ও মৃত্তিকা সম্পদ ব্যবহার নির্দেশিকায় সন্নিবেশিত মৃত্তিকা উর্বরতা বিষয়ক তথ্য-উপাত্ত জিআইএস প্রযুক্তির মাধ্যমে তথ্যে রূপান্তরের জন্য এই অনলাইন সার্ভিস চালু করা হয়েছে। যাতে সহজে কৃষকরা অনলাইন ফার্টিলাইজার রিকমেন্ডেশন সার্ভিসের মাধ্যমে সুষম সার ব্যবহারের ফলাফল পায়। এছাড়াও এর অন্যান্য কারণসমূহ নিম্নরূপ-
i. উৎপাদন বৃদ্ধি যেমন- ধান ফসলের ফলন ২০-২৫% এবং অন্যান্য ফসলের ফলন ১৫-২০% বৃদ্ধির জন্য।
ii. সারের অপচয়রোধ করে ২৫-৩০ ভাগ পর্যন্ত সার ব্যবহার কমানোর জন্য।
iii. উৎপাদিত ফসলের মান বৃদ্ধির জন্য।
iv. রাসায়নিক পদার্থ দ্বারা মাটি ও পানির দূষণ সর্বনিম্ন পর্যায়ে রাখার জন্য।
v. দানাদার ইউরিয়া থেকে গুটি ইউরিয়া ব্যবহার সাশ্রয়ের জন্য। সর্বোপরি একজন কৃষক যাতে সর্বোচ্চ সেবা পেয়ে ফসল উৎপাদন বৃদ্ধি করতে পারে। আর এটি খাদ্য নিরাপত্তা নিশ্চিতকরণের মাধ্যমে বাংলাদেশ সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার ক্ষেত্রে যুগান্তকারী মাইলফলক হিসেবে কাজ করবে বলে আমি মনে করি।

৯. হারুনুর রশিদ এখন খুব নামকরা কৃষিবিজ্ঞানী। তিনি একাদশ শ্রেণির ছাত্র থাকাকালীন কৃষিশিক্ষা বইয়ের 'উচ্চ শিক্ষা ও গবেষণা প্রতিষ্ঠান' বিষয়ে পড়ার সময় কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করে। কৃষিবিজ্ঞানী হওয়ার আগ্রহী হন। তিনি গবেষণা করে বিভিন্ন কিছু উদ্ভাবন, উন্নয়ন ও সংরক্ষণ করেছেন। তার গবেষণা কার্যক্রমে দেশ অনেক উপকৃত হয়েছে।
ক. ই-কৃষি কী?
খ. কৃষি শিক্ষার প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
গ. হারুনুর রশিদ কী কাজ করে নামকরা কৃষিবিজ্ঞানী' হলেন ব্যাখ্যা কর।
ঘ. হারুনুর রশিদের গবেষণা কাজে দেশ উপকৃত হওয়ার বিষয়টি বিশ্লেষণ কর।

৯ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষি সংক্রান্ত তথ্য ও সেবা ইলেকট্রনিক্স প্রক্রিয়ায় পাওয়াকে ই-কৃষি বলে।

খ. বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। কৃষি উন্নয়নের উপর এদেশের উন্নতি নির্ভর করছে। কৃষি বিষয়ে শিক্ষা বা জ্ঞান অর্জন করে বাস্তবে প্রয়োগ করলে দেশে কৃষিপণ্যের উৎপাদন বাড়বে। দেশের খাদ্য, বস্ত্র, বাসস্থানসহ সকল মৌলিক চাহিদা পূরণ হবে। কৃষিশিক্ষা বিষয়ক জ্ঞান উন্নত চাষ পদ্ধতি, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি, সংরক্ষণের উপায়, জৈব ও অজৈব সার উৎপাদনে ব্যবহার করা যায়। হাঁস-মুরগি পালন, গবাদিপশু পালন, মাছ চাষ, বনায়ন ইত্যাদি বিষয়গুলো কৃষিশিক্ষার সঙ্গে জড়িত। তাই বলা যায়, কৃষিশিক্ষার প্রয়োজনীয়তা অপরিসীম।

গ. উদ্দীপকে হারুনুর রশিদ কৃষিতে উচ্চ শিক্ষা গ্রহণ করেন এবং গবেষণা করে নামকরা বিজ্ঞানী হয়ে যান। এজন্য তাকে অনেক পরিশ্রম করতে হয়েছে। নাম করা বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য হারুনুর রশিদকে নিচের কাজগুলো করতে হয়েছে-
i. ফসলের নতুন জাত উদ্ভাবন ও উন্নয়ন করতে হয়েছে।
ii. ফসলের উন্নত চাষাবাদ পদ্ধতি উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
iii. ফসলের রোগ-বালাই দমন নিয়ে গবেষণা করে লাগসই প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
iv. সার ব্যবস্থাপনা নিয়ে গবেষণা করে উন্নত সার প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হয়েছে।া. উন্নত সেচ পদ্ধতির উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
vi. উন্নত কৃষি যন্ত্রপাতি উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
vii. ফসল প্রক্রিয়াজাতকরণ ও সংরক্ষণ বিষয়ে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
viii. মাটির উর্বরতা রক্ষা ও বৃদ্ধির প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হয়েছে।
ix. জলবায়ু পরিবর্তনের সাথে সাথে উপযোগী শস্য বিন্যাস তৈরি করতে হয়েছে।

ঘ. উদ্দীপকে হারুনুর রশিদ একজন নামকরা কৃষিবিজ্ঞানী। এ জায়গায় আসতে তাকে অনেক গবেষণা করতে হয়েছে।
গবেষণালব্ধ ফলাফল যখন সুফল বয়ে আনে তখনই বিজ্ঞানী হওয়া যায়। হারুনুর রশিদের ক্ষেত্রে তাই ঘটেছে। বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। হারুনুর রশিদ কৃষির ওপর গবেষণা করে বড় বিজ্ঞানী হয়েছেন। বড় বিজ্ঞানী হওয়ার জন্য অবশ্যই তাকে নতুন নতুন প্রযুক্তি উদ্ভাবন করতে হয়েছে। বাংলাদেশের কৃষির বর্তমান প্রেক্ষাপটে উন্নত প্রযুক্তি উদ্ভাবন একটি গুরুত্বপূর্ণ। ব্যাপার। হারুনুর রশিদ নিরলস প্রচেষ্টার মাধ্যমে তাই করতে পেরেছেন। বাংলাদেশের প্রধান খাদ্য ফসল ধান ও প্রধান অর্থকরী ফসল পাট। হারুনুর রশিদ এই ফর্সল দুটির উন্নত ও অধিক ফলনশীল জাত উদ্ভাবন করেছেন। তিনি হয়তো বিরূপ পরিবেশে সহনশীল নতুন ফসলের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এমনও হতে পারে, স্থানীয় জাতের ধানের জিন সংরক্ষণ করে উন্নত জাতে রূপান্তরিত করেছেন। আবার, মাটির উর্বরতা বৃদ্ধি ও সংরক্ষণের নতুন প্রযুক্তিও উদ্ভাবন করেছেন। ফসলের সার, রোগবালাই, সেচ ইত্যাদি নিয়ে কাজ করে বিজ্ঞানী হওয়ার পাশাপাশি বাংলাদেশের কৃষির উন্নয়নে অবদান রেখেছেন।
উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায়, হারুনুর রশিদের উদ্ভাবন বাংলাদেশের কৃষি তথা কৃষকের উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।

১০. ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞানদান ও সমস্যা সমাধানের জন্য আইপিএম স্কুল স্থাপন করেন। এখানে কৃষক ও কৃষাণীরা ক্লাস করেন। তার এই জ্ঞান এলাকায় প্রচার করে। ঘাটাইলে প্রতিবছর বোরো ধানক্ষেতে পোকা আক্রমণ হয়। উপজেলা কৃষি কর্মকর্তা মো. নূরে আলম সিদ্দিকী কৃষক বিদ্যালয়ে কৃষকদের পোকা দমনের জন্য সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার কৌশল। শিখিয়ে দেন। কৃষক বিদ্যালয়ের জ্ঞান দিয়ে কৃষকরা পোকা দমন করে। সফল হন এবং বিরাট ক্ষতি থেকে বেঁচে যান।
ক. কৃষক সভা কাকে বলে?
খ. কৃষক সভা ও উঠোন বৈঠকের প্রয়োজনীয়তা ব্যাখ্যা কর।
গ. ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিস কেন ও কীভাবে কৃষক বিদ্যালয়। স্থাপন করেছিল বিশ্লেষণ কর।
ঘ. কৃষক ও উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গৃহীত পদক্ষেপ মূল্যায়ন কর।

১০ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের উপজেলা কর্মকর্তা কৃষকদের নিয়ে বিভিন্ন বিষয়ে ইউনিয়ন পরিষদে অথবা গ্রোথ সেন্টারে যে সভা করেন তাকে কৃষক সভা বলে।

খ. ফসল চাষাবাদের মৌসুম শুরুর আগে অথবা মাঝে কৃষক সভা ও উঠোন বৈঠক করা হয়। এর লক্ষ্য ও উদ্দেশ্য হচ্ছে- নতুন প্রযুক্তি হস্তান্তরে উদ্বুদ্ধ করা, কৃষকদের বিভিন্ন সমস্যার সমাধান দেওয়া, মতবিনিময় করা। এই সভার মাধ্যমে কৃষকদের মধ্যে অভিজ্ঞতা, জ্ঞান ও তথ্য নিয়ে মতবিনিময় হয়। কৃষি কর্মকর্তাদের অংশগ্রহণের ফলে কৃষকদের জ্ঞান ও তথ্যে দুর্বল কৃষকের জ্ঞান বাড়ে এবং কাজে স্পৃহা হয়। এই জ্ঞান মাঠ পর্যায়ে প্রয়োগ করে কৃষি উন্নয়নে ভূমিকা পালন করছে। কৃষক সভা ও উঠোন বৈঠকের মাধ্যমে কৃষকরা তথ্য সেবা পায়।

গ. ঘাটাইল উপজেলা কৃষি অফিস কৃষকদের বিভিন্ন বিষয়ে জ্ঞান ও সমস্যা সমাধানের জন্য কৃষক বিদ্যালয় স্থাপন করেছিল। এই বিদ্যালয়ের মাধ্যমে তাদের বোরো ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমণ দমনের জন্য সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার কৌশল শিখেছিল। উদ্দীপকে যেভাবে বিদ্যালয় অর্থাৎ আইপিএম স্কুল স্থাপন হয়েছিল তা নিচে বিশ্লেষণ করা হলো-
কৃষক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠার জন্য যেসব ধাপ অনুসরণ করা হয় তা হলো- গ্রাম শনাক্তকরণ, গ্রামের অবস্থা পর্যালোচনা, স্থানীয় জনপ্রতিনিধিদের সঙ্গে আলোচনা, কৃষক নির্বাচন, পরিকল্পনা সভা আয়োজন এবং কৃষক মাঠ স্কুল পরিচালনার সময় নির্ধারণ। সাধারণত মাঠের কোনায়, বাড়ির উঠানে, ক্লাব ঘরকে কৃষক বিদ্যালয়ের কেন্দ্র হিসেবে ব্যবহার করা হয়। এই বিদ্যালয়ের মাধ্যমে ৫০ জন কৃষক-কৃষাণীকে একটি মৌসুমের পুরো সময় ধরে ২০টি অধিবেশনের মাধ্যমে হাতে-কলমে প্রশিক্ষণ দেওয়া হয়। এর মধ্যে মহিলাদের জন্য পৃথক সেশন রয়েছে এবং পুরুষ ও মহিলা কৃষকদের যৌথ সেশন রয়েছে। এছাড়াও শুধু পুরুষদের জন্য সেশন রয়েছে। প্রতিটি সেশনের সময় ৩-৪ ঘণ্টা। এসব সেশন থেকে প্রশিক্ষণার্থীরা তাত্ত্বিক ও ব্যবহারিক উভয় বিষয়ে শিক্ষা লাভ করে থাকেন। পাঠদানের ক্ষেত্রে কৃষকদের মাঠের অভিজ্ঞতা, প্রত্যাশা, দলীয় অনুশীলন। ইত্যাদি বিষয়ে উৎসাহিত করা হয়। এভাবে ঘাটাইল গ্রামের কৃষকরা বিদ্যালয় থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে তাদের ধানক্ষেতের পোকা দমনের কৌশল শিখে ধান চাষে সফল হন এবং বিরাট ক্ষতির হাত থেকে বেঁচে যান।

ঘ. উদ্দীপকে ঘাটাইলে বোরো ধান ক্ষেতে পোকার আক্রমণ হলে কৃষি কর্মকর্তা কৃষকদের কৃষক মাঠ স্কুলে একত্রিত করেন। এবং পোকা দমনের জন্য সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থার (আইপিএম) পরামর্শ দেন। পরামর্শ মোতাবেক কৃষকরা পোকা দমন করে সফল হন এবং বিরাট ক্ষতি থেকে বেঁচে যান। কৃষি কর্মকর্তার উদ্যোগের ফলে মাঠের ফসল রক্ষা পায়। রাসায়নিক কীটনাশক ব্যবহার না করার কারণে খরচ বৃদ্ধি পায়নি এবং পরিবেশেরও কোনো ক্ষতি হয়নি। পরিবেশ রক্ষা করে ফসল রক্ষার এমন ব্যবস্থা বিশ্বব্যাপী যেমন সমাদৃত তেমনি আমাদের দেশেও। তাই দিন দিন সমন্বিত বালাই দমন ব্যবস্থা জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। প্রশিক্ষণের মাধ্যমে সমন্বিত বালাই ব্যবস্থাপনা (আইপিএম) সমাধা করা হয় বলে কৃষকরা তাদের অর্জিত জ্ঞান, অভিজ্ঞতা ও তথ্য নিজেদের মধ্যে বিনিময় করতে পারে। কৃষি কর্মকর্তার উদ্যোগের ফলে পোকা দমনে কৃষকরা আরও দক্ষ হয়ে উঠতে পারে। তারা উপকারী ও ক্ষতিকর পোকার সঙ্গে পরিচিত হয়। তারা তাদের ফসলের জমিতে উপকারী পোকা সংরক্ষণ করতে পারবে এবং ক্ষতিকর পোকা কম খরচে দমন করতে পারবে।
উপরের আলোচনা থেকে দেখা যায়, উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার গৃহীত পদক্ষেপ খুবই মূল্যবান। তার গৃহীত পদক্ষেপের কারণে কৃষকদের ফসল রক্ষা পায় ও ভবিষ্যতে পোকা দমনে স্বাবলম্বী হতে সাহায্য করে।

No comments:

Post a Comment