G

HSC এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতার (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র গাইড
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Bangla 1st Paper Srijonshil Question and Answer. Bangla Srijonshil Proshno O Uttor for HSC Exam Preparation. pdf download

এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
জীবনানন্দ দাশ

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
💕 পাঠ সহায়ক অংশ
সৃজনশীল পদ্ধতি মুখস্থনির্ভর বিদ্যা নয়, পাঠ্যবই নির্ভর মৌলিক বিদ্যা। তাই অনুশীলন অংশ শুরু করার আগে গল্প/কবিতার শিখন ফল, পাঠ পরিচিতি, লেখক পরিচিতি, উৎস পরিচিতি, বস্তুসংক্ষেপ, নামকরণ, শব্দার্থ ও টীকা ও বানান সতর্কতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব বিষয়গুলো জেনে নিলে এ অধ্যায়ের যেকোনো সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হবে।

💕 শিখন ফল
☑️ বাংলার ভূ-প্রকৃতি ও রূপবৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা।
☑️ বাংলার সবুজ প্রকৃতি, ঘাস ও বিভিন্ন গাছপালা সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।
☑️ কবির প্রিয় স্বদেশের গুরুত্বপূর্ণ কয়েকটি নদী ও সেগুলোর গতি-প্রকৃতি সম্পর্কে ধারণা।
☑️ বাংলার প্রকৃত সৌন্দর্য ও রূপবৈচিত্র্য প্রকাশক নানা উপকরণ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।
☑️ বাংলার পাখি, শঙ্খচিল, লক্ষীপেঁচা প্রভৃতির স্বভাব-বৈশিষ্ট্য সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।
☑️ বাংলার সবুজ প্রকৃতিতে সন্ধ্যার আয়োজন ও তার স্বরূপ সম্পর্কে জ্ঞানার্জন।
☑️ জন্মভূমি স্বদেশের প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা এবং অকৃত্রিম অনুরাগ সম্পর্কে ধারণা।
☑️ কবির প্রিয় স্বদেশের অসাধারণ রূপবৈচিত্র্য সম্পর্কে ধারণা।
☑️ কবিতায় রূপক ও চিত্রকল্প ব্যবহারে কবি জীবনানন্দ দাশের কৃতিত্ব।
☑️ কবিতায় প্রতিফলিত কবির স্বদেশানুরাগ ও দেশপ্রেম থেকে প্রেরণা লাভ।

💕 পাঠ-পরিচিতি
  অনুপম সুন্দর এই দেশ। সারা পৃথিবীর মধ্যে অনন্য। প্রকৃতির সৌন্দর্যের এমন লীলাভূমি পৃথিবীর আর কোথাও নেই। অসংখ্য বৃক্ষ, গুল্ম ছড়িয়ে আছে এদেশের জনপদে-অরণ্যে। মধুকূপী, কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল তাদেরই কোনো-কোনোটির নাম। এদেশের পূর্বাকাশে যখন সূর্য ওঠে মেঘের আড়াল থেকে তার রং হয় করঞ্জা রঙিন। আর এদেশের প্রতিটি নদ-নদী ভরে থাকে স্বচ্ছতোয়া জলে। সেই জল ফুরায় না কখনই। জলের দেবতা অনিঃশেষ জলধারা দিয়ে স্রোতস্বিনী রাখে এদেশের অসংখ্য নদীকে।

প্রকৃতি আর প্রাণিকুলের বন্ধনে গড়ে উঠেছে চির অবিচ্ছেদ্য এক সংহতি। তাই হাওয়া যখন পানের বনে চঞ্চলতা জাগায় তখন দূর আকাশের শঙ্খচিল যেন চঞ্চল হয়ে ওঠে। আর ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট লক্ষীপেঁচাও মিশে থাকে প্রকৃতির গভীরে, অন্ধকারের বিচিত্ররূপ এই দেশে। অন্ধকার ঘাসের ওপর নুয়ে থাকে লেবুর শাখা কিংবা অন্ধকার সন্ধ্যার বাতাসে সুদর্শন উড়ে যায়।
এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির গাইড
জন্ম দেয় শঙ্খমালা নামের রূপসী নারীর হলুদ শাড়ির বর্ণশোভা। কবির বিশ্বাস, পৃথিবীর অন্য কোথাও শঙ্খমালাদের পাওয়া যাবে না। কেননা, বিশালাক্ষী বর দিয়েছিল বলেই নীল-সবুজে মেশা বাংলার ভূ-প্রকৃতির মধ্যে এই অনুপম সৌন্দর্য সৃষ্টি হয়েছে।

এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে কবিতা সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর জীবনানন্দ দাশ
💕 কবি পরিচিতি
নাম : জীবনানন্দ দাশ
জন্ম : ১৮৯৯ খ্রিস্টাব্দ।
জন্মস্থান : বরিশাল।
পিতার নাম : সত্যানন্দ দাশ
মাতার নাম : কুসুমকুমারী দাশ
মাধ্যমিক : ম্যাট্রিক (১৯১৫), ব্রজমোহন স্কুল, বরিশাল।
উচ্চ মাধ্যমিক : আই এ (১৯১৭), ব্রজমোহন কলেজ।
উচ্চতর ডিগ্রি : বিএ অনার্স (১৯১৯), কলকাতা প্রেসিডেন্সি কলেজ; এমএ ইংরেজি (১৯২১), কলকাতা বিশ্ববিদ্যালয়।
অধ্যাপনা  : কলকাতা সিটি কলেজ (১৯২২-১৯২৮); বাগেরহাট কলেজ (১৯২৯); দিল্লির রামযশ কলেজ (১৯২৯-১৯৩০); ব্রজমোহন কলেজ (১৯৩৫-১৯৪৬); খড়গপুর কলেজ (১৯৫১-১৯৫২); বড়িষা কলেজ (১৯৫২); হাওড়া গার্লস কলেজ (১৯৫৩-১৯৫৪)।
সম্পাদনা :  দৈনিক স্বরাজ। 
কাব্যগ্রন্থ : ঝরা পালক, ধূসর পাণ্ডুলিপি, বনলতা সেন, মহাপৃথিবী, সাতটি তারার তিমির, রূপসী বাংলা, ‘ বেলা অবেলা, কালবেলা’ ইত্যাদি।
উপন্যাস : মাল্যবান, সতীর্থ।
প্রবন্ধগ্রন্থ  : ‘কবিতার কথা’।
মৃত্যু তারিখ : ২২ অক্টোবর, ১৯৫৪ খ্রিস্টাব্দে।

💕 বস্তুসংক্ষেপ
  বাংলা ভাষার শুদ্ধতম কবি, তথা বাংলা কাব্যে আধুনিকতার পথিকৃৎদের অন্যতম কবি জীবনানন্দ দাশ। ‘রূপসী বাংলা’ কবির অন্যতম জনপ্রিয় কাব্যগ্রন্থ। এই কাব্যের অন্তর্গত, ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটিকে কবি বাংলার অপরূপ সৌন্দর্য ও নিসর্গের সাবলীল ছন্দকে অনন্যসাধারণ ভঙ্গিমায় উপস্থাপন করেছেন। এ কবিতায় বাংলাদেশের অনিন্দ্য সুন্দর প্রকৃতির প্রতি কবির গভীর অনুরাগ প্রকাশিত হয়েছে। বাংলার প্রকৃতির রূপবৈচিত্র্যকে কবি পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও করুণ বলে অভিহিত করেছেন।

এখানের কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজল গাছের স্নিগ্ধ ছায়া তৈরি করেছে মায়াময় পরিবেশ। সাগরের অবারিত জলরাশি, কর্ণফুলী-ধলেশ্বরী-পদ্মার স্রোতধারা বাংলার ঐশ্বর্যকে বাড়িয়েছে বহুগুণে। যেখানে গাঙচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় ডানা মেলে। ধানের স্বপ্ন জাগানিয়া গন্ধে লক্ষীপেঁচা নতুনত্বের স্বপ্ন বোনে। কবি সারা পৃথিবীতে বাংলা প্রকৃতির এই নয়নাভিরাম সৌন্দর্যের তুলনা খুঁজে পান না। বাংলার সবুজ-শ্যামল বন-বনান্তরের বিচিত্রতায় কবি অনুপম আনন্দ উপলদ্ধি করেন।

কবি দেখেছেন পল্লিবাংলার ঘাসের বুকে নুয়ে থাকে লেবুর শাখা, সুদর্শন ওড়ে সন্ধ্যার বাতাসে, শঙ্খমালা নাম্নী তাঁর কাল্পনিক রূপসী প্রিয়ার শরীরে যেন লেগে থাকে হলুদ শাড়ি, তাকে আর খুঁজে পাওয়া যায় না এই পৃথিবীতে- যাকে বিশালাক্ষী দেবী বর দিয়েছিলেন। কবির অনুভবে তাঁর প্রিয়া তাই জন্ম নেয় এই নীল বাংলার ঘাসে আর ধানের ভিতর। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় বাংলা প্রকৃতির অপরূপ রূপময়তা এবং কবির গভীর মমতামাখা আবেগ প্রকাশিত হয়েছে শৈল্পিক মহিমায়।
  
💕 নামকরণের সার্থকতা যাচাই
  নামকরণ : বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে কবিতার নামকরণ করা হয়েছে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’। কবির দৃষ্টিতে তার প্রিয় জন্মভূমি বাংলাদেশই ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ এবং অনন্য। বাংলার অপরূপ প্রকৃতি তার সমৃদ্ধ ঐতিহ্যের আবহে কবিকে মোহমুগ্ধ করে রাখে। কবি চোখ ফেরাতে পারেন না, স্বদেশের ক্ষুদ্র ও অবহেলিত জীবও তাঁর চোখে পরম সুন্দর, স্নিগ্ধ ও মনোরম। কবিকে প্রতি মুহূর্তে আকর্ষণ করে, আনন্দে উদ্বেল করে তোলে বাংলার প্রকৃতির  মোহময় রূপ ও সৌন্দর্য। কবির কাছে তার প্রিয় বাংলাদেশ ব্যর্থতার কান্নার মতো সবচেয়ে করুণ, করুণের মতো সবচেয়ে সুন্দর।

তাঁর স্বদেশের স্থলভাগ সবুজ মধুকপি ঘামে ঢেকে আছে নরোম স্নিগ্ধতায়, সেখানে আছে কাঁঠাল, অশ্বত্থ, বট, জারুল, হিজলের শ্যামল ছায়া, সেখানে ছড়িয়ে আছে ভোরের মেঘে ঢাকা সুর্যের নাটা রঙ অপার মুগ্ধতায়। পৃথিবীর এই এক স্থান বাংলার গঙ্গাসাগরে জমে জলের দেবী বারুণীর মেলা আর জলের দেবতা বরুণ অবিরত জলের প্রবাহ হানে কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মা, জলাঙ্গীতে। সেখানে পানের বনে চঞ্চল হাওয়ায় ওড়ে শঙ্খচিল, ধানের সোঁদা গন্ধের মতো মাতাল করে দেয় লক্ষীপেঁচার অস্ফুট সুর। সন্ধ্যার অন্ধকারে ঘাসের ওপর নুয়ে থাকা লেবুর শাখা, সন্ধ্যার বাতাসে ঘরের দিকে উড়ে যাওয়া সুদর্শনও যেন বাংলার অপরূপ রূপের নিদর্শন।

কবির স্বপ্নের প্রেমিকা, প্রেমিকা রূপসী শঙ্খমালার শরীরের ওপর সন্ধ্যার অস্তায়মান সূর্যের শেষ হলদে রঙ খেলা করে। কিন্তু এ বিশাল পৃথিবীর কোনো নদী ঘাসে তার উপস্থিতি আর খুঁজে পাওয়া যাবে না। কেননা, পরমা সুন্দরী বনদেবী বিশালাক্ষীর বরে সে জন্ম নিয়েছে ‘নীল বাংলার ঘাসে আর ধানের ভিতর।’ কবিতার শরীর জুড়ে চরণে চরণে রূপসী বাংলার অপরূপ রূপ চিত্রায়িত, যা কেবল এই পৃথিবীতে এক ও একক এবং অন্যন্য। তাই কবিতার নামকরণ ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ যথার্থ ও সুন্দর হয়েছে।

  সার্থকতা : ‘আমি বাংলার রূপ দেখিয়াছি। তাই পৃথিবীর রূপ খুঁজিতে যাই না আর’- এই রূপমুগ্ধ প্রত্যয়ের মধ্যে লীন হয়ে আছে ‘এই পৃথিবী এক’ রূপসী বাংলা। তাই  এর প্রতিটি জীবন ও বস্তুর সাথে কবির নিবিড় সখ্যতা, এ সবের রূপ ও সৌন্দর্যের মধ্যে তার অন্তর্লীন মুগ্ধতা। তাই মধুক‚পী ঘাস, কাঁঠাল-অশ্বত্থ বট, শঙ্খচিল, লক্ষীপেঁচা, সুদর্শন, কর্ণফুলি-ধলেশ্বরী-জলাঙ্গী, ধানের গন্ধ ঘুরে ঘুরে আসে তার মনের পর্দায়। যা কিছু চোখে পড়ে তা-ই তাকে আকর্ষণ করে। বাংলার বুকে অনন্যরূপে ঝলকিত প্রতিটি উপাদান কবির কাছে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে;- বাংলায়।
  
💕 শব্দার্থ ও টীকা
এই পৃথিবীতে...সুন্দর করুণ = কবির চোখে সমগ্র পৃথিবীর মধ্যে সবচেয়ে সুন্দর, মমতারসে সিক্ত, সহানুভূতিতে আর্দ্র ও বিষণ্ণ দেশ বাংলাদেশ। 
নাটা  = লতাকরঞ্চ; গোলাকার ক্ষুদ্র ফল বা তার বীজ।
সেখানে ভোরের...জাগিছে অরুণ = বাংলার প্রভাতের সৌন্দর্য ও রহস্যময়তা আঁকতে গিয়ে ভোরে মেঘের আড়াল থেকে গাঢ় লাল সূর্যের আলো বিচ্ছুরণ যেন ধারণ করেছে করমচা বা করমচা ফুলের রং।
বারুণী = বরুণানী, বরুণের স্ত্রী, জলের দেবী।
সেখানে বারুণী থাকে...অবিরল জল = জলে পরিপূর্ণ এদেশের অসংখ্য নদী-নালার স্রোতধারার প্রাণৈশ্বর্য ও সৌন্দর্যের রূপ আঁকা হয়েছে এই পঙ্ক্তি দুটির মধ্যে। 
সেইখানে শঙ্খচিল ... অস্ফুট, তরুণ = জীবন আর প্রকৃতির ঐক্য ও সংহতিতে বাংলাদেশ একাকার। পানের বনে হাওয়ায় যে চঞ্চলতা জেগে ওঠে সেই চঞ্চলতা সম্প্রসারিত হয় দূর আকাশের শঙ্খচিলে। আর মিষ্টি ও ম্রিয়মাণ তরুণ ধানের গন্ধের মতো লক্ষীপেঁচাও মিলেমিশে থাকে প্রকৃতির পরিবেষ্টনীতে।
বিশালাক্ষী = যে রমণীর চোখ আয়ত বা টানাটানা। আয়তলোচনা সুন্দরী নারী।
সুদর্শন = এক ধরনের পোকা।
বর = এখানে আশীর্বাদ অর্থে ব্যবহৃত।

💕 বানান সতর্কতা
  মধুক‚পী, অশ্বত্থ, লক্ষীপেঁচা, জলাঙ্গী, বারুণী, শঙ্খচিল, কর্ণফুলী, অরুণ,  বিশালাক্ষী, রূপসী, সন্ধ্যা, ধলেশ্বরী, গঙ্গাসাগর।

এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
সৃজনশীল প্রশ্ন-০১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
১.  এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার কোথায় এমন ধূম্র পাহাড়
   কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে
  এমন ধানের ওপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে। 
২.  আঁখি মেলে তোমার আলো
  প্রথম আমার চোখ জুড়ালো
  ওই আলোতে নয়ন রেখে মুদব নয়ন শেষে।
ক.  জীবনানন্দ দাশের কাব্যবৈশিষ্ট্যকে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর কী বলে আখ্যায়িত করেছেন?
খ.  “জলাঙ্গীরে দেয় অবিরল জল”-কথাটির দ্বারা কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ.  উদ্দীপকের উভয় অংশে কোন বিশেষ দিকটি “এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে” কবিতায় অনুপস্থিত তা ব্যাখ্যা কর।
ঘ.  “স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের কারণে এখানকার প্রতিটি জিনিস কবির চোখে অপরূপ সৌন্দর্য জাগানিয়া।” -উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে মন্তব্যটির যৌক্তিকতা দেখাও।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍  রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ‘চিত্ররূপময়’ বলে আখ্যায়িত করেছেন।

খ. অনুধাবন
✍  প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা কবি নদীমাতৃক বাংলার নদী-নালার স্রোতধারার প্রাণৈশ্বর্যকে বোঝাতে চেয়েছেন।

✍  বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে জালের মতো ছড়িয়ে ছিটিয়ে আছে ছোট-বড় ১৩০টি নদ-নদী। এগুলোর মধ্যে প্রধান হলো- পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী প্রভৃতি। এসব নদী ছাড়াও জলে পরিপূর্ণ হয় এদেশের অসংখ্য খাল-বিল, ডোবা নালা। তারা ফিরে পায় তাদের স্রোতধারার প্রাণৈশ্বর্য ও রূপ-সৌন্দর্য। প্রশ্নোক্ত কথাটি দ্বারা কবি মূলত এদেশের নদ-নদীর স্রোতধারার ঐশ্বর্যকে বোঝাতে চেয়েছেন। 

গ. প্রয়োগ
✍  উদ্দীপকের উভয় অংশে স্বদেশের বুকে শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করার বিশেষ দিকটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় অনুপস্থিত।

✍  দেশ ও দেশের মানুষের সঙ্গে প্রতিটি মানুষের আত্মার সম্পর্ক। তাই মানুষ তার স্বদেশকে ভালোবাসে অন্তরের অন্তস্থল থেকে। স্বদেশের প্রতিটি জিনিসই তার কাছে পায় অসীম মর্যাদা।

✍  উদ্দীপকের উভয় অংশে স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ প্রকাশ পেয়েছে। কেননা, এখানে স্বদেশের প্রতিটি জিনিসই পেয়েছে অনন্য মর্যাদা। স্বদেশের পাহাড়-প্রকৃতি, নদ-নদী সবকিছুই কবির কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনে হয়েছে। স্বদেশের প্রতি এমন মমত্ববোধের কারণে কবি তাঁর জন্মভূমির বুকেই শেষ-নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চেয়েছেন। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি গভীরভাবে তাঁর মাতৃভূমিকে ভালোবেসেছেন। তাইতো স্বদেশের সবকিছুই তাঁর কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ মনে হয়েছে। স্বদেশের রূপ-সৌন্দর্যের মাঝে তিনি খুঁজে পেয়েছেন প্রাণৈশ্বর্য। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের উভয় অংশে স্বদেশের বুকে শেষ-নিঃশ্বাস ত্যাগ করতে চাওয়ার বিশেষ দিকটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় অনুপস্থিত।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍  “স্বদেশের প্রতি গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধের কারণে এখানকার প্রতিটি জিনিস কবির চোখে অপরূপ সৌন্দর্য জাগানিয়া।”- উদ্দীপক ও কবিতার আলোকে মন্তব্যটি যৌক্তিক।

✍  প্রতিটি মানুষের মধ্যে তাঁর স্বদেশের প্রতি রয়েছে গভীর ভালোবাসা, যা মানুষের মনে আনে প্রশান্তির জোয়ার। স্বদেশের প্রতি এমন গভীর মমত্ববোধের কারণে স্বদেশের প্রতিটি বস্তু মানুষের কাছে পায় বিশেষ মর্যাদা।

✍  উদ্দীপকে জন্মভূমির প্রতি গভীর মমত্ববোধের বিষয়টি প্রকাশ পেয়েছে। কবির চোখে তাঁর দেশের নদী, পাহাড়, প্রকৃতি, আকাশ সবকিছুই যেন পৃথিবীর শ্রেষ্ঠ। ধান খেতে বাতাসের এমন খেলা পৃথিবীর আর কোথাও যেন খুঁজে পাওয়া যায় না। তাই কবি এমন ঐশ্বর্যমণ্ডিত দেশে জন্মে গর্বিত। তাঁর চোখে অসাধারণ সুন্দর এই দেশ যা সারা পৃথিবীর মধ্যে অনন্য। প্রকৃতির সৌন্দর্যের এমন লীলাক্ষেত্র পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না। এদেশের চিরসবুজ প্রকৃতি, নদ-নদী পাহাড় যেন সৌন্দর্যের প্রতীক। প্রকৃতি ও প্রাণির মধ্যে রয়েছে অসীম সংহতি।

✍  স্বদেশের প্রতি প্রতিটি মানুষের থাকে গভীর ভালোবাসা ও মমত্ববোধ। এ ভালোবাসা ও মমত্ববোধের কারণেই স্বদেশের সবকিছু মানুষের চোখে হয়ে ওঠে পৃথিবী-শ্রেষ্ঠ- যা উদ্দীপক ও কবিতায় ফুটে উঠেছে। এজন্যই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত 
মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে। 

এইচএসসি (HSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরসহ: বাংলা ১ম পত্র গাইড


এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
সৃজনশীল প্রশ্ন-০২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
ধনধান্য পুষ্পভরা আমাদের এই বসুন্ধরা;
তাহার মাঝে আছে দেশ এক- সকল দেশের সেরা;
ও সে স্বপ্ন দিয়ে তৈরি সে দেশ স্মৃতি দিয়ে ঘেরা;
এমন স্নিগ্ধ নদী কাহার, কোথায় এমন ধূম্র পাহাড়;
কোথায় এমন হরিৎক্ষেত্র আকাশ তলে মেশে।
এমন ধানের উপর ঢেউ খেলে যায় বাতাস কাহার দেশে।
পুষ্পে পুষ্পে ভরা শাখী; কুঞ্জে কুঞ্জে গাহে পাখি,
গুঞ্জরিয়া আসে অলি পুঞ্জে পুঞ্জে ধেয়ে-
তারা ফুলের উপর ঘুমিয়ে পড়ে ফুলের মধু খেয়ে।
এমন দেশটি কোথাও খুঁজে পাবে নাকো তুমি
সকল দেশের রাণী সে যে- আমার জন্মভূমি।
ক.  পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল কী?
খ.  “এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে- সবচেয়ে সুন্দর করুণ”-এখানে কোন স্থানের কথা বলা হয়েছে?
গ.  উদ্দীপকের কবির জন্মভূমি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কিসের প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ.  “প্রকৃতিপ্রেম থেকে উৎসারিত স্বদেশপ্রেমই উদ্দীপকের কবিতাংশ ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার মূল ভাবনা।”- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍  শঙ্খচিল পানের বনের মতো হাওয়ায় চঞ্চল।

খ. অনুধাবন
✍  “এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে- সবচেয়ে সুন্দর করুণ”- এখানে বাংলাদেশের কথা বলা হয়েছে।

✍ আমাদের এই বাংলার মানুষ অভাবগ্রস্ত হলেও প্রাকৃতিক সম্পদ আর প্রকৃতির রূপে বাংলা ঐশ্বর্যশালী। বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য এতোটাই মনোরম যে, পৃথিবীর কোথাও এমন স্থান খুঁজে পাওয়া যাবে না। বাংলার প্রতিটি তুচ্ছ উপাদানে কবি অপরূপ সৌন্দর্যের আভা দেখতে পান। তাই বলা যায়, এই পৃথিবীতে “এক স্থান আছে- সবচেয়ে সুন্দর করুণ”- তাহলো আমাদের রূপসী বাংলা। 

গ. প্রয়োগ
✍  উদ্দীপকের কবির জন্মভূমি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার বাংলাদেশের প্রতিনিধিত্ব করে।

✍  আমাদের এই বাংলাদেশ প্রকৃতির এক অপার সৌন্দর্যের লীলাভূমি। সাগর, নদী, পাহাড়, পশু-পাখি, ফুলে-ফসলে ঘেরা আমাদের এই বাংলাদেশ। প্রকৃতির ভুবন মোহিনী সৌন্দর্য আমাদের বিমোহিত ও মুগ্ধ করে।

✍  উদ্দীপকে বর্ণিত দেশটি পৃথিবীর সকল দেশের চেয়ে সেরা: এমন স্নিগ্ধ নদী আর ধূম্র পাহাড় আর কোথাও নেই। এখানকার বাতাস ধানের খেতের ওপর যেভাবে ঢেউয়ের খেলার সৃষ্টি করে তা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। পাখির কলরবে এখানকার প্রকৃতি সদা কল্লোলিত; ফুলের ওপর ভ্রমর আর মৌমাছির গুঞ্জন আমাদের চিত্তকে আন্দোলিত করে। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় যে স্থানের কথা বলা হয়েছে তার সবুজ ডাঙা মধুকূপী ঘাসে অবিরল। কর্ণফুলী, পদ্মার অবিরল জলের ধারা আর শঙ্খচিল, লক্ষীপেঁচার অস্ফুট তরুণ চঞ্চলতা প্রকৃতিতে এক মোহনীয় আবেশ সৃষ্টি করে। এখানে সন্ধ্যার অন্ধকার বাতাসে সুদর্শন উড়ে যায় আর বিস্তীর্ণ মাঠ জুড়ে ধানের খেত যেন হলুদ শাড়ির মতো রূপসীর গায়ে লেগে থাকে। নীল বাংলার ঘাসে আর ধানের ভেতরে যে অপার সৌন্দর্য তা সত্যিই অপরূপ রূপের প্রতীক। উদ্দীপকেও বলা হয়েছে, সকল দেশের রানি হলো আমাদের প্রিয় বাংলাদেশ। তাই বলা যায়, এই ভাবটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবির প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশেরই প্রতিনিধিত্ব করে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍  প্রশ্নোল্লিখিত মন্তব্যটি সঠিক ও যথার্থ।

✍  জন্মভূমির অবারিত সৌন্দর্যই একজন মানুষের মনের গহিনে স্বদেশের প্রতিমূর্তি গড়ে দেয়। প্রকৃতির অপার রূপমুগ্ধতাই দেশবাসীর মনের ভেতরে সৃষ্টি করে দেশপ্রেম।

✍  উদ্দীপকের কবি তাঁর প্রিয় জন্মভূমির রূপবৈচিত্র্যে পুরোপুরি মুগ্ধ। কবি এই বসুন্ধরাকে ধনধান্য পুষ্পভরা হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। আর এই বসুধার মাঝে একটি দেশ আছে যেটি অন্যান্য দেশের তুলনায় সেরা। কেননা, সেই দেশটি স্বপ্ন দিয়ে তৈরি হয়েছে এবং স্মৃতি দিয়ে ঘেরা রয়েছে। দেশটি কবির মাতৃভূমি বাংলাদেশ। বাংলার স্নিগ্ধ নদী, ধূম্র পাহাড়, ধানের খেত, পাখির কলকাকলি কবির মনে দোলা দিয়ে যায়।

✍  ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাতেও কবি তাঁর জন্মভূমির অপার সৌন্দর্যের নিটোল বর্ণনা উপস্থাপন করেছেন। কবি ‘জীবনানন্দ দাশ’ নীল বাংলার ঘাসে আর ধানের ভেতরে যে সৌন্দর্য দেখেছেন তা এককথায় অপূর্ব। তিনি পাকা ধানের খেতকে দেখেছেন রূপসীর শরীরের উপরে থাকা হলুদ শাড়ির মতো। কবি তাঁর বাংলা মায়ের প্রতিটি তুচ্ছ উপাদানকেও ভালোবাসেন বলে কবিতায় তাদের স্থান দিয়েছেন। স্বদেশের প্রতি কবির গভীর ভালোবাসা আছে বলেই তিনি তাঁর দেশের প্রকৃতি বন্দনা করেছেন। উদ্দীপকের কবিতার ক্ষেত্রেও বিষয়টি সমানভাবে উঠে এসেছে। পরিশেষে বলা যায়, প্রকৃতিপ্রেম থেকে উৎসারিত স্বদেশপ্রেমই উদ্দীপকের কবিতাংশ ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার মূল ভাবনা- মন্তব্যটি যথার্থ।


এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
স্বাভাবিক ব্যস্ততাকে ধন্যবাদ জানিয়ে চার দিনের জন্য আমরা চলে গেলাম ভ্রমণে। সঙ্গে ছিল বন্ধু রাফি ও শাফি। এই সময় কক্সবাজারে পর্যটকের আনাগোনা খুব কম। তাই সমুদ্র আর পাহাড়কে যেন আমরা নিজের মতো করেই পেলাম। নিত্যদিনের রুটিন ভেঙে সকালে ঘুম থেকে উঠে সারাদিন শুধু ঘোরা আর দেখা। সমুদ্রের ঢেউ ভেঙে ভেসে বেড়ানো, ঝিরিঝিরি বৃষ্টিতে ভেজা- সবই ছিল তুলনাহীন আনন্দের উচ্ছ্বাস।

সন্ধ্যায় ঝিঁঝি পোকার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে তিন বন্ধুর গান ধরা। সবই ছিল ‘ইচ্ছে পূরণ’ গল্পের মতোই। ওহ! সবুজ পাতার ফাঁকে ভোরের দোয়েল কীভাবে শিস দেয় সেটাও আমরা দেখেছি আর শুনেছি। 
বন্ধু রাফি সবকিছুতেই যেন খুঁজে পেল নতুন এক বাংলাদেশ। ওর মতে, ‘এই বাংলাদেশ তো আমার সেই বাংলা। যেখানে সাম্পান ভাসে সাগরে। মাঝি গান গাইতে গাইতে ছুটে যায় মাঝ-দরিয়ায়। নানা পাখি আর ফুলের সমারোহে এই তো সোনার বাংলা, যাকে দেখে শুধু মুগ্ধতাই বাড়ে ।’
ক.  কবির চোখে পৃথিবীর সুন্দরতম স্থান কোনটি?
খ.  “সবুজ ডাঙা ভরে আছে মধুক‚পী ঘাসে অবিরল;”-চরণটি বুঝিয়ে লেখ।
গ.  উদ্দীপকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’-কবিতার কোন দিকটি ফুটে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ.  “উদ্দীপকের শেষ চরণে রাফির অনভূতিতে যেন কবি জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি চেতনারই প্রতিফলন ঘটেছে।”- মূল্যায়ন কর।

৩ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍  কবির চোখে পৃথিবীর সুন্দরতম স্থান হলো তাঁর জন্মভূমি বাংলাদেশ।

খ. অনুধাবন
✍  প্রশ্নোল্লিখিত চরণটি দিয়ে চিরসবুজ বাংলার প্রকৃতির চিত্র তুলে ধরা হয়েছে।

✍  বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত চিরসবুজ এক দেশ। এদেশের যেখানে তাকাই সেখানেই যেন সবুজ প্রকৃতি দ্বারা বেষ্টিত। যার সৌন্দর্য মানুষের সৌন্দর্য পিপাসু মনের তৃষ্ণা নিবারণ করে। এই চিরসবুজ বাংলা গাছপালা, বন-জঙ্গল, ফুলে ফুলে, ঘাস-পাতায় ভরপুর-প্রশ্নোক্ত চরণটি দ্বারা এ বিষয়টিই বোঝানো হয়েছে।

গ. প্রয়োগ
✍  “উদ্দীপকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় ফুটে ওঠা দিকটি হলো, বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধতা প্রকাশ।

✍  প্রকৃতি তার আপন রূপ-রস-গন্ধ দিয়ে সর্বদা সৌন্দর্য ছড়ায়।

✍  মানুষ প্রতিনিয়ত ছুটে যেতে চায় নিসর্গ প্রকৃতির মাঝে শুধু একটু আত্মতৃপ্তির আশায়। আর সেই প্রকৃতি যদি হয় মাতৃভূমির তবে সেই সৌন্দর্য তার কাছে হবে পৃথিবীর সর্বশ্রেষ্ঠ।

✍  উদ্দীপকের তিন বন্ধু শহরের ব্যস্ততাকে ধন্যবাদ জানিয়ে ছুটে গেছে পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে। সেখানে তারা উপভোগ করেছে সমুদ্রের মনোমুগ্ধকর সৌন্দর্য, ঝিঁঝি পোকার ডাক আর বৃষ্টির পরশ। এছাড়া সবুজ পাতার ফাঁকে ফাঁকে দোয়েলের শিস দেয়া দেখে তারা মুগ্ধ হয়েছে। বাংলা-প্রকৃতির এই অপরূপ সৌন্দর্য তাদের মনকে প্রসন্ন করে তুলেছে। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাতেও কবি বাংলাকে পৃথিবীর সুন্দরতম স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেখানে সবুজ ডাঙা ভরে থাকে মধুকূপী ঘাসে, যেখানে রয়েছে হাজারো নদীর মিলনমেলা, সবুজের সমারোহ। এই বাংলার এমন অপরূপ সৌন্দর্য কবি-হৃদয়ে এনে দিয়েছে প্রশান্তি, তাই তো কবি বাংলা প্রকৃতির বন্দনা করেছেন। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় বাংলার প্রকৃতির প্রতি মুগ্ধতার দিকটি ফুটে উঠেছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍  উদ্দীপকের শেষ চরণে রাফির অনুভূতিতে যেন কবি জীবনানন্দ দাশের প্রকৃতি চেতনারই প্রতিফলন ঘটেছে।” -মন্তব্যটি যথার্থ।

✍  পৃথিবীর অন্যান্য দেশের তুলনায় মানুষের কাছে মাতৃভূমির সৌন্দর্য সবসময়ই অনন্য মর্যাদা পায়। তাই প্রত্যেক মানুষের মধ্যে স্বদেশের প্রকৃতি চেতনার মাধ্যমেই দেশপ্রেমের প্রকাশ ঘটে।

✍  উদ্দীপকের শেষ চরণে রাফির বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যে মুগ্ধতার প্রগাঢ় প্রকাশ ঘটেছে। পৃথিবীর দীর্ঘতম সমুদ্র সৈকত কক্সবাজারে ঘুরতে গিয়ে এর প্রকৃতি দেখে সে বলেছে, এই বাংলাদেশ আমার সেই বাংলা। যেখানে সাম্পান ভাসে সাগরে। মাঝি গান গাইতে গাইতে নৌকা বেয়ে চলে যায় মাঝ-দরিয়ায়। নানা পাখি আর ফুলের সমারোহে এই সোনার বাংলাকে দেখে শুধু মুগ্ধতাই বাড়ে। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবির বাংলা-প্রকৃতির প্রতি সৌন্দর্যমুগ্ধতার তীব্র অনুভূতির প্রকাশ ঘটেছে। তিনি এই বাংলার সুবজ প্রকৃতি, বনায়ন, নদী, পাখি, ঘাস সবকিছুতেই মুগ্ধ। তাইতো কবি রূপসী বাংলার পাকা ধানকে প্রকৃতির হলুদ শাড়ি পরার সাথে তুলনা করেছেন। কবির মতে বিশালাক্ষী দেবী এই বাংলাকে যে সৌন্দর্য বর দিয়েছেন তা পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

✍  ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কবি জীবনানন্দ দাশ বাংলার প্রকৃতিপ্রেমে মুগ্ধ। তাই তিনি নানা উপমা ও চিত্রকল্পের সাহায্যে এদেশের সৌন্দর্যকে তুলে ধরেছেন। যার প্রতিফলন ঘটেছে উদ্দীপকের রাফির মধ্যে। তাই সংগত কারণেই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ হয়েছে।


এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
বাংলার চাঁদ নিত্য স্নিগ্ধ। বাংলার আকাশ নিত্য প্রসন্ন, বাংলার বায়ুতে চিরবসন্ত ও শরতের নিত্য মাধুর্য। বাংলার জল নিত্য-প্রাচুর্যে ও শুদ্ধতায় পূর্ণ। বাংলার মাটি নিত্য-উর্বর। এই মাটিতে নিত্য সোনা ফলে। এত ধান আর কোনো দেশে ফলে না। পাট শুধু একা বাংলার। এত ফুল, এত পাখি, এত গান, এত সুর, এত কুঞ্জ, এত ছায়া, এত মায়া আর কোথাও নাই। 
ক.  লক্ষীপেঁচা কীসের গন্ধের মতো অস্ফুট তরুণ?
খ.  “হলুদ শাড়ি লেগে থাকে রূপসীর শরীরের ‘পর-”চরণটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ.  ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কোন দিকটি উদ্দীপকের বাংলার প্রকৃতিতে দৃশ্যমান?”- বিচার কর।
ঘ.  “উদ্দীপক ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার মূল সুর যেন একই বৃন্তের দু’টি ফুল।”-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৪নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍  লক্ষীপেঁচা ধানের গন্ধের মতো অস্ফুট তরুণ।

খ. অনুধাবন
✍  প্রশ্নোক্ত চরণটি দিয়ে কবি কৃষিপ্রধান বাংলাদেশের ধান পাকার মৌসুমে মাঠের সৌন্দর্যকে বুঝিয়েছেন।

✍  বাংলাদেশ কৃষিপ্রধান দেশ। এদেশের মাঠ-ঘাট, প্রান্তর ধানসহ নানা ধরনের ফসলে ভরপুর। মাঠে মাঠে যখন ধান পাকে তখন যেন মাঠের প্রকৃতি হলুদের মিলনমেলায় পরিণত হয়। এই হলুদ প্রকৃতিকে কবি তাঁর কবিতার রূপসীর শাড়িরূপে কল্পনা করেছেন, যা জড়িয়ে থাকে বাংলাদেশ নাম্নী রূপসীর শরীরে। মূলত কবি ধান পাকার মৌসুমে প্রকৃতির নবরূপে সজ্জিত হওয়াকেই বুঝিয়েছেন প্রশ্নোক্ত চরণে।

গ. প্রয়োগ
✍  ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের ঐশ্বর্যের দিকটি উদ্দীপকে প্রকাশিত বাংলার প্রকৃতিতে দৃশ্যমান।

✍  প্রকৃতির এক অপরূপ লীলানিকেতন আমাদের এই বাংলাদেশ। এখানে প্রকৃতি অকৃপণভাবে দাঁড়িয়ে আছে সৌন্দর্যের ডালি নিয়ে। এখানে রয়েছে মাঠ ভরা ফুল-ফল, ফসলের সমারোহ। বাংলা প্রকৃতিতে ঋতু বিশেষে রয়েছে স্বতন্ত্র সৌন্দর্য।

✍  উদ্দীপকে বাংলার প্রাকৃতির সৌন্দর্যের প্রতি মুগ্ধতা ও বাংলার ঐশ্বর্যের বন্দনা করা হয়েছে। এই বাংলার চাঁদ নিত্য স্নিদ্ধ, আকাশ নিত্য প্রসন্ন, বাংলার বায়ুতে চিরবসন্ত ও শরতের নিত্য মাধুর্য ও শ্রী বিদ্যমান। এছাড়া বাংলার মাটি নিত্য উর্বর, যেখানে সবকিছুর চাষ করা সম্ভব। বাংলার মতো এমন প্রকৃতি ও ঐশ্বর্যমণ্ডিত দেশ আর নেই। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি বাংলা-প্রকৃতিকে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম প্রাকৃতিক সৌন্দর্যমণ্ডিত বিষয় হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। রয়েছে চিরসবুজ প্রকৃতি, আর  ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জেগে থাকা অরুণ। আমাদের স্বপ্নে সোনার বাংলায় রয়েছে অসংখ্য নদ-নদী ও প্রকৃতির চিরতরঙ্গিত খেলা। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার বাংলার প্রাকৃতিক দৃশ্যদৃশ্যমান হয়ে আছে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍  “উদ্দীপক ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার মূল সুর যেন একই ধারায় প্রবাহিত”- মন্তব্যটি আমি সমর্থন করি। কারণ উভয়ক্ষেত্রেই মাতৃভূমির বন্দনা ও স্বদেশপ্রেম উচ্চারিত হয়েছে।

✍  পৃথিবীর প্রতিটি মানুষের কাছে তার মাতৃভূমি অন্যান্য দেশের তুলনায় উত্তম। তাই মাতৃভূমির সবকিছুই তাকে মুগ্ধ করে। কেননা, স্বদেশের সৌন্দর্য মানব-হৃদয়কে যে তৃপ্তি দেয় তা আর অন্য কোনো দেশের পক্ষেই দেয়া সম্ভব নয়। তাই মানুষ স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে মাতৃভূমির বন্দনা করে।

✍  উদ্দীপকে বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্য ও ঐশ্বর্যের কথা বলা হয়েছে, যা মূলত স্বদেশপ্রেমেরই বহিঃপ্রকাশ। কেননা, স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই উদ্দীপকের লেখক বাংলার চাঁদ নিত্য স্নিগ্ধ, আকাশ নিত্য প্রসন্ন, বায়ুতে চিরবসন্ত ও শরতের নিত্য মাধুর্য ও শ্রীর কথা বলেছেন। কৃষিপ্রধান এই বাংলার প্রকৃতি সৌন্দর্য দিয়ে মোড়ানো, যা এক স্বর্গীয় লীলাভূমির সঙ্গে তুলনীয়। এমন স্নিগ্ধ রূপ যেন শুধু বাংলার একারই। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাতেও কবি দেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়ে এদেশের প্রকৃতির বন্দনা করেছেন। কবির চোখে নদীবিধৌত এই দেশ যেন এক ভূস্বর্গ। এই রূপসী বাংলার সর্বত্র যে অপার সৌন্দর্য ছড়িয়ে রয়েছে তা বাংলাদেশ ছাড়া পৃথিবীর আর কোনো দেশে নেই। কবিতায় কবি এমনই মত পোষণ করেছেন।

✍  ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবির মধ্যে দেশপ্রেম বিদ্যমান রয়েছে। তাই তিনি এই দেশকে পৃথিবীর সুন্দরতম স্থান বলেছেন, যার প্রতিফলন ঘটেছে প্রদত্ত উদ্দীপকে। তাই প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি সমর্থনযোগ্য।


এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
রূপসী বাংলাদেশ। এখানে প্রকৃতি তার স্বাভাবিক বিন্যাস ও বৈচিত্র্যে সৌন্দর্যের এক অপরূপ ছবি এঁকেছে। এমন রৌদ্রদীপ্ত উজ্জ্বল দিন আর জ্যোৎস্নালোকিত স্নিগ্ধ রাত্রি আর কোথায় পাব? এমন দিগন্তজোড়া শ্যামল শোভা আর ছায়াঘন বনরাজির তুলনা কোথায়? কোথায় মেলে এমন তরঙ্গভঙ্গে উদ্বেল পদ্মা-মেঘন-যমুনা, কপোতাক্ষ-কর্ণফুলী, সুরমা-গোমতী অথবা হাকালুকি হাওর, চলন বিল? কোথায় দৃষ্টি কাড়ে কাজলকালো বিল আর দিঘির জলে ফুটে থাকা অযুত শাপলার সৌন্দর্য, বাতাসে দোল খাওয়া সরষে ফুলের ফুলকিমালা?
ক.  সবুজ ডাঙা কীসে ভরে আছে?
খ.  ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি নদীর নাম উল্লেখ করেছেন কেন?
গ.  উদ্দীপকের ‘রূপসী বাংলাদেশ’ উক্তিটিতে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার আভাসিত দিকটি ব্যাখ্যা কর। 
ঘ.  “উদ্দীপকে নদীমাতৃক বাংলার যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তা ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার একটি বিশেষ ভাবার্থের দর্পণ।”- মন্তব্যটির যথার্থতা নিরূপণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍  সবুজ ডাঙা মধুক‚পী ঘাসে ভরে আছে।

খ. অনুধাবন
✍  ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় নদীমাতৃক বাংলার চিত্র বোঝাতে কবি নদীর নাম উল্লেখ করেছেন।

✍  বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে জালের মতো ছড়িয়ে আছে অসংখ্য নদ-নদী, যা এ দেশের প্রকৃতিকে করেছে সমৃদ্ধ আর অর্থনীতিকে রেখেছে চাঙ্গা। এদেশের প্রধান প্রধান নদীর মধ্যে রয়েছে পদ্মা, মেঘনা, কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী প্রভৃতি। মূলত কবি নদীপ্রধান বাংলার চিত্র বোঝাতেই কবিতায় নদীর নাম উল্লেখ করেছেন। 

গ. প্রয়োগ
✍  উদ্দীপকের ‘রূপসী বাংলাদেশ’ উক্তিটিতে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের দিকটি আভাসিত।

✍  বাংলাদেশ প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের এক স্বর্গীয় লীলাভূমি। প্রত্যেক ঋতুতে এদেশের প্রকৃতি সজ্জিত হয় নানা রূপে। এই বাংলার রৌদ্রদীপ্ত দিন আর জ্যোৎস্নাশোভিত স্নিগ্ধ রাত্রির যে সৌন্দর্য তা পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

✍  উদ্দীপকের ‘রূপসী বাংলাদেশ’ উক্তিটি দ্বারা বাংলার অপরূপ সৌন্দর্যের চিত্র তুলে ধরা হয়েছে। এই বাংলার প্রকৃতি তার আপন রূপ-রস-গন্ধ নিয়ে ভাস্বর। এখানে রয়েছে দিগন্তজোড়া শ্যামল-শোভা আর ছায়াঘন বনরাজি, রয়েছে নদীমাতৃক বাংলার চিত্র। এছাড়া খাল-বিলে সৌন্দর্যের প্রতীক হয়ে ফুটে থাকা শাপলা, বাতাসে দোল খাওয়া সর্ষে ফুল-সবকিছুই মানুষকে মুগ্ধ করে। অপরদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি তাঁর জন্মভূমি বাংলাকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম স্থান হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন। যেখানে রয়েছে চিরসবুজ প্রকৃতি, পাকা ফসলের রং রূপসী বাংলার শরীরে হলুদ শাড়ির মতো লেগে থাকে। তাই বলা যায়, উদ্দীপকের ‘রূপসী বাংলাদেশ’ উক্তিটিতে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার অপরূপ বাংলার প্রকৃতি বন্দনার দিকটি আভাসিত। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍  “উদ্দীপকে নদীমাতৃক বাংলার যে চিত্র অঙ্কিত হয়েছে তা ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার একটি বিশেষ ভাবার্থের দর্পণ।”- এই মন্তব্যটি যথার্থ।

✍  বাংলাদেশের প্রকৃতি তার সৌন্দর্য প্রকাশে অকৃপণ আর এই সৌন্দর্যকে আরও বেশি আকর্ষণীয় করেছে এদেশে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে থাকা অসংখ্য নদ-নদী, যার সুশোভিত ঢেউ আর নির্মল পানি দেশের মানুষের মনকে করেছে আন্দোলিত।

✍  বাংলাদেশ নদীমাতৃক দেশ। এদেশে জালের মতো ছড়িয়ে-ছিটিয়ে রয়েছে অসংখ্য নদী। যার সুশোভিত ঢেউ মানব- হৃদয়ে প্রশান্তি বয়ে আনে। এদেশের প্রধান প্রধান নদীর মধ্যে রয়েছে পদ্মা, মেঘনা, যমুনা, কর্ণফুলী- যা উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় নদীমাতৃক বাংলার বর্ণনার পাশাপাশি এদেশের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বর্ণনাও দেয়া হয়েছে। নদীবিধৌত এদেশের জল অবিরল, পাকা ধানের খেতে রূপসী বাংলার মাঠ যেন হলুদ শাড়ি পরে থাকে। এই বিশাল পৃথিবীর বুকে কবির চোখে সবচেয়ে সুন্দর দেশ এই বাংলাদেশ।

✍  কবিতায় কবি বাংলার প্রকৃতির বন্দনা করেছেন। কবির কাছে এ দেশ চিরসবুজ ও নদীবিধৌত প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দেশ, যার সৌন্দর্য যেন দেবী নিজ হাতে বর দিয়েছেন। কিন্তু উদ্দীপকে শুধু নদীমাতৃক বাংলার কথা বলা হয়েছে। তাই নিঃসন্দেহে এ কথা বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।


এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
সার্থক জনম আমার জন্মেছি এই দেশে
সার্থক জনম মাগো, তোমায় ভালোবেসে
জানিনে তোর ধন-রতন
আছে কিনা রানির মতন
শুধু জানি আমার অঙ্গ জুড়ায় তোমার ছায়ায় এসে।
ক.   শঙ্খমালাকে বর দিয়েছেন কে?
খ.   কবির চোখে এদেশ সবচেয়ে সুন্দর কেন?
গ.   উদ্দীপকের কবিতাংশের সঙ্গে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার বৈসাদৃশ্য চি‎হ্নিত কর।
ঘ.   “উদ্দীপক ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার মধ্যে আংশিক বৈসাদৃশ্য থাকলেও মূল সুর এক ও অভিন্ন।”-মূল্যায়ন কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍  শঙ্খমালাকে বর দিয়েছেন বিশালাক্ষী দেবী।

খ. অনুধাবন
✍  কবি এদেশে জন্মগ্রহণ করেছেন তাই এদেশ তাঁর চোখে সবচেয়ে সুন্দর।

✍  এদেশ কবির মাতৃভূমি তাই এদেশের সবকিছু কবি-হৃদয়কে মুগ্ধ করে। তাঁর মতে, বাংলাদেশ প্রকৃতিদেবীর বরদানের জন্য এতটা সৌন্দর্যমণ্ডিত, যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। এছাড়া কবির মধ্যে রয়েছে অপরিমেয় দেশপ্রেম, তাই তাঁর কাছে এদেশ সবচেয়ে সুন্দর।

গ. প্রয়োগ
✍  উদ্দীপকের কবিতাংশের সঙ্গে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার বৈসাদৃশ্য বিদ্যমান।

✍  প্রতিটি মানুষ স্বদেশকে ভালোবাসে। স্বদেশের বৃক্ষরাজির ছায়ায় তারা প্রসন্নবোধ করে। মাতৃভূমির রূপ-সৌন্দর্যই হয়ে ওঠে সর্বশ্রেষ্ঠ। এক্ষেত্রে তারা মাতৃভূমির ধন-রত্নের আকর কিনা তা বিবেচনা করে না।

✍  উদ্দীপকের কবিতাংশে কবি তাঁর জন্মভূমির ঐশ্বর্য আছে কি-না জানতে চান না। তিনি দেখতে চান না এদেশ ধন-রত্নের আকর কি-না। কবি শুধু জানেন এদেশের ছায়ায় এসে তাঁর হৃদয় তৃপ্ত হয়। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় কবি তাঁর মাতৃভূমি বাংলাদেশের সৌন্দর্যের পাশাপাশি ঐশ্বর্যের বন্দনা করেছেন। তাঁর মতে, বাংলাদেশ পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দরতম স্থান। যেখানে রয়েছে চিরসবুজ প্রকৃতি, নদীবিধৌত জনপদ, সোনালি ফসলের খেত, যা পৃথিবীর আর কোথাও নেই। সুতরাং বলা যায়, উদ্দীপকের কবিতাংশে জন্মভূমির ঐশ্বর্যের খোঁজ না করা হলেও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় স্বদেশের সেই ঐশ্বর্যপূর্ণ প্রকৃতির বন্দনা করা হয়েছে- এ বিষয়টিতেই উভয়ের মধ্যে বৈসাদৃশ্য রয়েছে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍  “উদ্দীপক ও ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার মধ্যে আংশিক বৈসাদৃশ্য থাকলেও মূল সুর এক ও অভিন্ন।”    -মন্তব্যটি যথার্থ।

✍  স্বজাতির প্রতি, জন্মভূমির প্রতি, মাতৃভাষার প্রতি গভীর ও অকৃত্রিম মমত্ববোধই হলো স্বদেশপ্রেম। প্রতিটি মানুষের রয়েছে স্বদেশের প্রতি অকৃত্রিম ভালোবাসা ও সীমাহীন আনুগত্য।

✍  উদ্দীপকে কবি এদেশে জন্মগ্রহণ করে, এদেশকে ভালোবেসে সার্থকতা অনুভব করেন। তিনি জন্মভূমি ধন-সম্পদের আকর কি-না তা জানতে চান না। শুধু জানেন এদেশের ছায়ায় তাঁর আত্মা তৃপ্তি পায়, যা কবির স্বদেশপ্রেমেরই প্রগাঢ় প্রকাশ। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাতেও কবি স্বদেশের প্রকৃতির বন্দনা করেছেন। জন্মভূমি তাঁর কাছে পৃথিবীর শ্রেষ্ঠতম স্থান, যেখানে রয়েছে চিরসবুজ প্রকৃতি, নদীবিধৌত অঞ্চল। যার রূপসী প্রকৃতি পাকা ধানের মৌসুমে হলুদ শাড়িতে সজ্জিত হয়। কবির মতে, এই বাংলার মতো অপরূপ সৌন্দর্য পৃথিবীর আর কোথাও খুঁজে পাওয়া যাবে না।

✍  উদ্দীপকে স্বদেশের ধন-রত্নের খোঁজ না করেই স্বদেশপ্রেমের বাণী উচ্চারিত হয়েছে। আর কবিতায় কবি স্বদেশপ্রেমে উদ্বুদ্ধ হয়েই বাংলার প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বন্দনা করেছেন। তাই নিরঙ্কুশভাবে বলা যায়, প্রশ্নোল্লিখিত মন্তব্যটি সঠিক ও যথার্থ।


এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
জাফলং পাহাড় বাংলাদেশের প্রাকৃতির সৌন্দর্যের এক লীলাভূমি। সেখানে ক’দিন আগে রাকিব ও রাসেল বেড়াতে গিয়ে বড় বেশি মনোমুগ্ধকর পরিবেশ দেখতে পায়। সেখানকার পাহাড়, ঝরনা, চায়ের বাগান, নানা প্রজাতির গাছ ও সবুজ প্রকৃতির অপরূপ সৌন্দর্য তাদের অভিনবত্বরূপে প্রাণের সঞ্চার করে। তারা সবচেয়ে বেশি বিস্মিত হয় তখন, যখন সূর্যের স্নিগ্ধ আলো পাহাড় থেকে অনাবিল সুখে গড়িয়ে পড়া ঝরনাকে মুক্তোর রূপ দেয়। 
ক.  ‘অস্ফুট’ শব্দের অর্থ কী?
খ.  “সেখানে ভোরের মেঘে নাটার রঙের মতো জাগিছে অরুণ”-পঙ্ক্তিটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ.  উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটির কোন দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ.  ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটির এক-তৃতীয়াংশ ভাব উদ্দীপকে স্থান  পেয়েছে।”-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৭নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍  ‘অস্ফুট’ শব্দের অর্থ যা ফোটেনি, অর্থাৎ অবিকশিত।

খ. অনুধাবন
✍  প্রশ্নে উল্লিখিত চরণটি দ্বারা কবি ভোরবেলায় মেঘের আড়াল থেকে বেরিয়ে আসা সূর্যের অস্ফুট প্রভাকে বুঝিয়েছেন।

✍  বর্ষাকাল প্রকৃতির সৌন্দর্য হৃদয়ে লালন করে বাংলায় আসে। তখন সমস্ত আকাশ মেঘের পোশাক পরে। সেই মেঘের আড়ালে প্রাণোদ্দীপ্ত সূর্যের আলো আচ্ছন্ন হয়। মেঘের কঠিন পর্দা ছাপিয়ে অস্পষ্টভাবে অরুণ রাঙা করে তোলে আকাশকে- প্রশ্নোক্ত চরণ দ্বারা কবি এই দৃশ্যই এঁকেছেন। 

গ. প্রয়োগ
✍  উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটি প্রতিনিধিত্ব করে।

✍  প্রকৃতির সেবাতেই প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের বিশালত্ব সৃষ্টি হয়। প্রাকৃতিক অনিন্দ্য সৌন্দর্যের সাথে সুন্দর হতে থাকে মানবের চপল মন। ফলে প্রকৃতির রূপ স্পষ্ট হয়ে ওঠে মনের মণিকোঠায়।

✍  উদ্দীপকে বর্ণিত হয়েছে রাকিব ও রাসেলের জাফলং ভ্রমণের দৃশ্য। সেখানে গিয়ে তারা প্রাকৃতিক মনোমুগ্ধকর পরিবেশ যেমন- পাহাড়, ঝরনা, বিভিন্ন প্রজাতির বৃক্ষ ইত্যাদি দেখেছে। আকর্ষণীয় বিষয় হলো দেখে তাদের চপল মনে আনন্দের শিহরণ বয়ে গেছে। অনুরূপভাবেই ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটিতেও প্রাকৃতিক লীলা-বৈচিত্র্যের সৌন্দর্যের বর্ণনা উঠে এসেছে। এখানে স্থান পেয়েছে সবুজ ডাঙা, মধুক‚পী ঘাসসহ কাঁঠাল, অশ্বত্থ, জারুল, হিজল ইত্যাদি প্রাকৃতিক উপকরণের পাশাপাশি আরও  রয়েছে মেঘের পর্দার আড়াল থেকে রাঙা অরুণ উঁকি দেয়ার অপরূপ দৃশ্য। সুতরাং স্পষ্টতই প্রতীয়মান হয় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত সৌন্দর্যই ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার সৌন্দর্যের দিকটির প্রতিনিধিত্ব করে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍  “এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটির এক-তৃতীয়াংশ ভাব উদ্দীপকে স্থান পেয়েছে।”- মন্তব্যটি যুক্তিযুক্ত।

✍  অপরূপ মহিমায় মহিমান্বিত বাংলা মায়ের রূপ। এমন বিশাল সৌন্দর্যের লীলাভূমি পৃথিবীতে খুব কমই আছে। ঋতুর পরিবর্তনে প্রাকৃতিক রূপের তথা পরিবেশের পরিবর্তন হয়; পরিবর্তন হয় বাংলার নদী, মাঠ, ঘাটের চিত্র ও বাঙালির মন।

✍  উদ্দীপকে রাকিব ও রাসেলের জাফলং পাহাড়ে যাওয়ার বিষয়টিতে পাহাড়ের প্রাকৃতিক সৌন্দর্যও স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। তারা সেখানে ঝরনা, নদী, চা-বাগান, বিভিন্ন প্রজাতির পাখি ইত্যাদি দেখে প্রকৃতির চেতনায় নিজেদেরও আবিষ্ট করেছে। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটিতেও প্রকৃতির রূপসৌন্দর্য উপস্থাপিত হয়েছে। এখানে আরও বর্ণিত হয়েছে নারীর সৌন্দর্য, দেবতাদের দান, লক্ষীপেঁচা ও শঙ্খচিলের কথা। বাংলাদেশের প্রেমময়ী রূপও এ কবিতাটিতে বণিত হয়েছে অসাধারণ শিল্পসৌন্দর্যে।

✍  উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয় থেকে মাত্র প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের দিকটিকে উপলব্ধি করা যায়। অন্যদিকে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটিতে শুধু এই দিকটিই প্রধান হয়ে ওঠেনি; স্বদেশপ্রেম, প্রাকৃতিক দৃশ্যের প্রতি মুগ্ধতা, মাতৃভূমিকে নিয়ে অহংকার প্রভৃতি বিষয় প্রাধান্য পেয়েছে। সুতরাং নিঃসন্দেহে বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টিতে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে, কবিতাটির এক-তৃতীয়াংশের ভাব স্থান পেয়েছে।


এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
রায়হান সাহেব প্রকৃতিপ্রেমী মানুষ। বিশেষ করে তিনি বাংলাদেশের নদ-নদীর মনোরম দৃশ্যকে নিরঙ্কুশভাবে প্রত্যক্ষ করেন। নদীবক্ষে অথবা বালুকাময় নদী তীরে ঘুরে বেড়াতেই তিনি বেশি পছন্দ করেন। এমনি করে চলতে চলতে তিনি একদিন হাজির হলেন ঐশ্বর্যশালিনী পদ্মার তীরে। এখানে তিনি দু’চোখ ভরে দেখলেন পদ্মার অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ দিগন্তবিস্তৃত ফসলের খেত ও জনপদগুলো, যা নদীপাড়ের অনির্বচনীয় দৃশ্যকে পূর্ণতা দান করেছে। তারই সাথে শালিক, শঙ্খচিলের আনাগোনা এবং চঞ্চলতা যেন নদীর হৃদস্পন্দন অনুভব করতে সহায়তা করছে। তিনি করুণাময়ের কাছে কৃতজ্ঞতা জানালেন এই বাংলার বুকে জন্মগ্রহণ করতে পেরেছেন বলে।
ক.  কার শরীরে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে?
খ.  “সেখানে বরুণ কর্ণফুলী ধলেশ্বরী পদ্মা জলাঙ্গীরে দেয় অবিরল জল”-এটি দ্বারা কবি কী বুঝিয়েছেন?
গ.  উদ্দীপকে বর্ণিত পদ্মা নদীর চিত্রটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কোন দিককে নির্দেশ করে? ব্যাখ্যা কর। 
ঘ.  ‘উদ্দীপকে বর্ণিত রায়হান সাহেবের দৃষ্টিতে পদ্মা নদীর দৃশ্যটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাটির আংশিক ভাবকে তুলে ধরতে সক্ষম হয়েছে মাত্র, সম্পূর্ণ ভাবকে নয়।”- মন্তব্যটির মূল্যায়ন কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍  রূপসীর শরীরে হলুদ শাড়ি লেগে থাকে।

খ. অনুধাবন
✍  প্রশ্নোল্লিখিত চরণ দ্বারা কবি কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মার অফুরন্ত জলরাশি বাংলা প্রকৃতিতে সারাবছর সজীব রাখার বিষয়টি বুঝিয়েছেন।

✍  হিন্দু পুরাণ অনুসারে জলের দেবতা হলেন বরুণ। বাংলাদেশের কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মাসহ বিভিন্ন নদী সারাবছরই নাব্য থাকে- এ বিষয়টিকে কবি জলের দেবতা বরুণের আশীর্বাদ হিসেবে দেখেছেন। তার আশীর্বাদেই এ নদীগুলোর অফুরন্ত জলধারা বাংলার ভূমি ও প্রকৃতির সমস্ত রুক্ষতা, মলিনতাকে দূরীভূত করে সজীব ও সতেজ রাখে। প্রশ্নোক্ত চরণটিতে এমন ভাবই প্রকাশিত হয়েছে। 

গ. প্রয়োগ
✍  উদ্দীপকে বর্ণিত পদ্মা নদীর চিত্রটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার কর্ণফুলী, পদ্মা ও ধলেশ্বরীসহ বিভিন্ন নদীর বৈশিষ্ট্যের দিকটিকে নির্দেশ করে।

✍  বাস্তব জীবনের সমস্ত কঠিনতাকে পাশ কাটিয়ে কিছু সময়ের জন্য মনের মুক্তি দিতে প্রকৃতির স্নিগ্ধ সংস্পর্শের প্রয়োজন অনিবার্য হয়ে দাঁড়ায়। মনের সৃজনশীলতা বাড়াতে, জীবনকে সজীব-সতেজ রাখতে মানুষ প্রকৃতির মায়াঞ্জন চোখে মাখে।

✍  উদ্দীপকে দেখা যায়, প্রকৃতি প্রেমিক রায়হান সাহেব প্রকৃতির মায়াবী আকর্ষণে ঘরছাড়া হয়ে বাংলার নদী-মাঠ-প্রান্তরে ঘুরে বেড়ান। যার সূত্র ধরে তিনি হাজির হন পদ্মার তীরে। এখানে এসে তাঁর সমস্ত অনুভূতিকে একসঙ্গে করে পদ্মার বিশালতা ও তার অকৃপণ দানে সমৃদ্ধ প্রকৃতি ও দুই পাড়ের জনপদ দেখে বিস্মিত হন এবং এদেশে জন্মাতে পেরে গর্ববোধ করেন। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতাতেও দেখা যায়- কর্ণফুলী, ধলেশ্বরী, পদ্মা নদীর অপরূপ শোভা। জলের দেবতা বরুণের আশীর্বাদে পুষ্ট হয়ে এ নদীগুলো সারাবছরই বাংলার প্রকৃতি ও জনপদকে সজীব ও সতেজ রেখেছে। উদ্দীপকে বর্ণিত চিত্রে ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় নদীগুলোর বৈশিষ্ট্যের দিককেই নির্দেশ করা হয়েছে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍  “উদ্দীপকের রায়হান সাহেবের দৃষ্টিতে দেখা পদ্মা নদীর দৃশ্যটি ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতার একটি দিককে ধারণ করেছে মাত্র, সম্পূর্ণ দিককে নয়।”- মন্তব্যটি যথার্থ।

✍  প্রকৃতির স্নিগ্ধ কোমল রূপ মানুষকে কঠিন বাস্তবতার মাঝে বেঁচে থাকার আশার সঞ্চার করে। বাংলার রূপ-বৈচিত্র্য, মানুষের সরল কোমল স্বভাব- সবই প্রকৃতির আশীর্বাদের ফসল।

✍  উদ্দীপকে প্রকাশিত হয়েছে বাংলাদেশের সমৃদ্ধির ক্ষেত্রে নদী তথা প্রকৃতির অপরিমেয় দানের বিষয়টি। রায়হান সাহেবের দৃষ্টিতে বাংলার প্রকৃতি ও জনপদের সমৃদ্ধির পেছনে পদ্মা নদীর ভূমিকাকে আমরা প্রত্যক্ষ করি। এখানে দিগন্তবিস্তৃত ফসলের খেত, সমৃদ্ধশালী জনপদ সবই পদ্মার কাছে ঋণী। প্রকৃতির অপরূপ দৃশ্য এই পদ্মাকে ঘিরেই রচিত হয়েছে। ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায়ও উপস্থাপিত হয়েছে নদীর দৃশ্য। কিন্তু তার সাথে বাংলার প্রকৃতির অন্যান্য চিত্রও বর্ণিত হয়েছে।

✍ ‘এই পৃথিবীতে এক স্থান আছে’ কবিতায় শুধু নদীর সৌন্দর্যই প্রকাশিত হয়নি, কবি এখানে বাংলাদেশকে পৃথিবীর সবচেয়ে সুন্দর ও করুণ বলে আখ্যায়িত করেছেন। বাংলার বিভিন্ন প্রকারের গাছপালার বর্ণনা, ভোরের মেঘাচ্ছন্ন আকাশে সূর্যের অস্পষ্ট আভা, গাছপালা, ঘাস, গোধূলি আকাশের হলুদাভ মেঘের অনির্বচনীয় রূপ, স্বদেশকে শঙ্খমালা নামে কাল্পনিক প্রিয়া হিসেবে আখ্যায়িত করা, বিশালাক্ষী দেবীর বর প্রভৃতি বিষয় উঠে এসেছে- যা উদ্দীপকে অনুপস্থিত। তাই বলা যায়, প্রশ্নোক্ত মন্তব্যটি যথার্থ।

No comments:

Post a Comment