G

HSC আমি কিংবদন্তির কথা বলছি কবিতার (Srijonshil) সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র গাইড
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Bangla 1st Paper Srijonshil Question and Answer. Bangla Srijonshil Proshno O Uttor for HSC Exam Preparation. pdf download

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ

সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর
💕 পাঠ সহায়ক অংশ
সৃজনশীল পদ্ধতি মুখস্থনির্ভর বিদ্যা নয়, পাঠ্যবই নির্ভর মৌলিক বিদ্যা। তাই অনুশীলন অংশ শুরু করার আগে গল্প/কবিতার শিখন ফল, পাঠ পরিচিতি, লেখক পরিচিতি, উৎস পরিচিতি, বস্তুসংক্ষেপ, নামকরণ, শব্দার্থ ও টীকা ও বানান সতর্কতা সম্পর্কিত গুরুত্বপূর্ণ তথ্যাবলি উপস্থাপন করা হয়েছে। এসব বিষয়গুলো জেনে নিলে এ অধ্যায়ের যেকোনো সৃজনশীল ও বহুনির্বাচনি প্রশ্নের উত্তর দেয়া সম্ভব হবে।

💕 শিখন ফল
☑️ বাংলাদেশের ইতিহাস-ঐতিহ্যের ধারণা লাভ করবে।
☑️ যুগে যুগে ভিনদেশি শাসকদের প্রতি বাঙালির আনুগত্য ও দাস মনোবৃত্তি সম্পর্কে জ্ঞাত হবে।
☑️ যুগে যুগে এদেশের মানুষের ওপর শাসক-শোষকদের অত্যাচার-নির্যাতন সম্পর্কে অবগত হবে।
☑️ এদেশের কৃষিজীবী মানুষের জীবনযাপন ও পরাধীনতার শৃঙ্খলমুক্তির স্বপ্ন সম্পর্কে জানতে পারবে।
☑️ অধিকার আদায় সংগ্রামে সাহসী ও সচেতন হয়ে ওঠার ক্ষেত্রে কবির যুক্তিনিষ্ঠ বক্তব্য উপলব্ধি করতে পারবে।
☑️ বাংলাদেশের স্বাধীনতার নব-চেতনায় উদ্দীপ্ত হতে শিখবে।
☑️ স্বাধীনতার স্বপ্নসাধ পূরণে ঐক্যবদ্ধ হয়ে শত্রুর বিরুদ্ধে রুখে দাঁড়ানোর ক্ষেত্রে বাঙালির ভূমিকা সম্পর্কে জ্ঞান লাভ করবে।
☑️ সংগ্রামী চেতনা কীভাবে সাধারণ মানুষের মধ্যে বিস্তার লাভ করে ও প্রতিফলিত হয় তা অনুধাবন করতে পারবে।
☑️ শত্রুর অত্যাচারে নারী, শিশু, গর্ভবতী মায়ের নির্মম মৃত্যু সম্পর্কে জ্ঞাত হবে।
☑️ সন্তানের জন্য মুক্ত স্বাধীন দেশ নির্মাণে সাহসী পিতার যুদ্ধে জীবনদান সম্পর্কে জানতে পারবে।
☑️ এদেশের মানুষের সার্বিক মুক্তি ও কল্যাণের প্রতীক ‘কবিতা’র চেতনা সম্পর্কে ধারণা লাভ করবে।

💕 পাঠ পরিচিতি
কবিতাটি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতা। রচনাটিতে বিষয় ও আঙ্গিকগত অভিনবত্ব রয়েছে। আলোচ্য কবিতাটিতে উচ্চারিত হয়েছে ঐতিহ্যসচেতন শিকড়সন্ধানী মানুষের সর্বাঙ্গীণ মুক্তির দৃপ্ত ঘোষণা। প্রকৃতপক্ষে, রচনার প্রেক্ষাপটে আছে বাঙালি সংস্কৃতির হাজার বছরের ইতিহাস; এই জাতির সংগ্রাম, বিজয় ও মানবিক উদ্ভাসনের অনিন্দ্য অনুষঙ্গসমূহ। তিনি এই কবিতায় পৌনঃপুনিকভাবে মানবমুক্তির আকাক্সক্ষায় সোচ্চার হন। কবির একান্ত প্রত্যাশিত মুক্তির প্রতীক হয়ে উপস্থাপিত হয় একটি বিশেষ শব্দবন্ধ ‘কবিতা’।

কবি তাঁর পূর্বপুরুষের সাহসী ও গৌরবোজ্জ্বল ইতিহাসের কথা উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে তাঁর বক্তব্যকে এগিয়ে নিয়ে চলেন। কবির বর্ণিত এ ইতিহাস মাটির কাছাকাছি মানুষের ইতিহাস; বাংলার ভূমিজীবী অনার্য ক্রীতদাসের লড়াই করে টিকে থাকার ইতিহাস। ‘কবিতা’ ও সত্যের অভেদকল্পনার মধ্যদিয়ে কবি নিয়ে আসেন মায়ের কথা, বোনের কথা, ভাইয়ের কথা, পরিবারের কথা। কবি এ-ও জানেন মুক্তির পূর্বশর্ত যুদ্ধ। আর সেই যুদ্ধে পরিবার থেকে দূরে সরে যেতে হয়। ভালোবাসার জন্য, তাদেরকে মুক্ত করার জন্যই তাদের ছেড়ে যেতে হয়। এ অমোঘ সত্য কবি জেনেছেন আমাদের স্বাধীনতাযুদ্ধের ইতিহাস থেকে। 

কবিতাটির রসোপলব্ধির অবিচ্ছেদ্য অংশ হলো এর আঙ্গিক বিবেচনা। এক্ষেত্রে, প্রথমেই যে বিষয়টি পাঠককে নাড়া দেয় তাহলো একই ধাঁচের বাক্যের বারংবার ব্যবহার। কবি একদিকে “আমি কিংবদন্তির কথা বলছি” পঙ্ক্তিটি বারংবার প্রয়োগ করেছেন, অপরদিকে “যে কবিতা শুনতে জানে না/ সে...” কাঠামোর পঙ্ক্তিমালার ধারাবাহিক উপস্থাপনের মধ্য দিয়ে কবিতা আর মুক্তির আবেগকে তিনি একত্রে শিল্পর‚প প্রদান করেছেন। এখানে ‘কিংবদন্তি’ শব্দবন্ধটি হয়ে উঠেছে ঐতিহ্যের প্রতীক। কবি এ নান্দনিক কৌশলের সঙ্গে সমন্বিত করেছেন গভীরতাসঞ্চারী চিত্রকল্প। একটি কবিতার শিল্পসার্থক হয়ে ওঠার পূর্বশর্ত হলো হৃদয়স্পর্শী চিত্রকল্পের যথোপযুক্ত ব্যবহার।

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তর | একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির গাইড

চিত্রকল্প হলো এমন শব্দছবি যা কবি গড়ে তোলেন এক ইন্দ্রিয়ের কাজ অন্য ইন্দ্রিয়ের সাহায্যে করিয়ে কিংবা একাধিক ইন্দ্রিয়ের সম্মিলিত আশ্রয়ে; আর তা পাঠক-হৃদয়ে সংবেদনা জাগায় ইন্দ্রিয়াতীত বোধের প্রকাশসূত্রে। চিত্রকল্প নির্মাণের আরেকটি শর্ত হলো অভিনবত্ব। এ সকল মৌলশর্ত পূরণ করেই আলোচ্য কবিতায় চিত্রকল্পসমূহ নির্মিত হয়েছে। কবি যখন বলেন : “কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানা কবিতা”; তখন এই ইন্দ্রিয় থেকে ইন্দ্রিয়াতীতের দ্যোতনাই সঞ্চারিত হয়। নিবিড় পরিশ্রমে কৃষকের ফলানো শস্য একান্তই ইন্দ্রিয়গ্রাহ্য একটি অনুষঙ্গ। কিন্তু এর সঙ্গে যখন কবিতাকে অভেদ কল্পনা করা হয় তখন কেবল ইন্দ্রিয় দিয়ে একে অনুধাবন করা সম্ভব হয় না।

সার্বিক বিবেচনায় কবিতাটি বিষয় ও আঙ্গিকের সৌকর্যে বাংলা সাহিত্যের এক অনন্য সংযোজন। কবিতাটি গদ্যছন্দে রচিত। প্রচলিত ছন্দের বাইরে গিয়ে এটি প্রাকৃতিক তথা স্বাভাবিক ছন্দ।
 
'আমি কিংবদন্তির কথা বলছি' কবিতার সৃজনশীল প্রশ্ন-উত্তর
💕 কবি পরিচিতি
নাম : আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ
জন্ম তারিখ : ১৯৩২ খ্রিষ্টাব্দ।
জন্মস্থান : বরিশাল শহর। 
পিতার নাম : আবদুল জব্বার খান 
শিক্ষাজীবন প্রাথমিক শিক্ষা : ম্যাট্রিক (১৯৪৮), ময়মনসিংহ জিলা স্কুল।
মাধ্যমিক : ইন্টারমিডিয়েট (১৯৫০), ঢাকা কলেজ।
উচ্চতর শিক্ষা : বি.এ অনার্স (১৯৫৩),এম.এ (১৯৫৪), ইংরেজি, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
গবেষণা : "Latter Poems of Yeats; The influence of Upanishads"  কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়, যুক্তরাজ্য।
ডিপ্লোমা : উন্নয়ন অর্থনীতি, কেমব্রিজ বিশ্ববিদ্যালয়।
পেশা/কর্মজীবন লেকচারার : ইরেজি বিভাগ, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়।
সচিব : বাংলাদেশ সচিবালয়; মন্ত্রী : কৃষি ও পানি সম্পদ মন্ত্রণালয়, বাংলাদেশ সরকার (১৯৮২); রাষ্ট্রদূত ওয়াশিংটন, যুক্তরাষ্ট্র।
মহাপরিচালক : FAO, এশিয়া প্যাসিফিক অঞ্চল; 
চেয়ারম্যান : বাংলাদেশ সেন্টার ফর এডভান্সড স্টাডিজ; 
ফেলো : হার্ভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সেন্টার ফর ইন্টারন্যাশনাল অ্যাফেয়ার্স এবং জন এফ কেনেডি স্কুল অব গভর্নমেন্ট।
কাব্যগ্রন্থ : ‘সাত নরীর হার’, ‘কখনো রং কখনো সুর’, ‘কমলের চোখ’, ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’, ‘বৃষ্টি ও সাহসী পুরুষের জন্য প্রার্থনা’, ‘আমার সময়’ প্রভৃতি।
পুরস্কার ও সম্মাননা : একুশে পদক, বাংলা একাডেমী পুরস্কার (১৯৭৯) ইত্যাদি।
মৃত্যু তারিখ : ১৯ মার্চ, ২০০১ খ্রিষ্টাব্দ।

💕 উৎস পরিচিতি
 কবিতাটি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহর বিখ্যাত কাব্যগ্রন্থ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কাব্যগ্রন্থের নাম কবিতা।
 
💕 বস্তু সংক্ষেপ
 আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ বাংলা কাব্যের আঙ্গিক গঠনে ও শব্দযোজনার ক্ষেত্রে স্বাতন্ত্র্যের স্বাক্ষর রেখেছেন। সুতীক্ষè জীবনদৃষ্টি, ইতিহাস সচেতনা, স্বদেশপ্রেম তাঁর কবিসত্তার অন্যতম বৈশিষ্ট্য। তাঁর কবিতার উপমায়, চিত্রকল্পে ও বিষয় নির্বাচনেও স্বাতন্ত্র্যের পরিচয় পাওয়া যায়। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাটি তাঁর অন্যতম প্রধান ও জনপ্রিয় কবিতা। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি আবহমান বাংলার ইতিহাস ও ঐতিহ্যকে স্মরণ করে বাংলার মানুষের সহজ-সরল অনাড়ম্বর কৃষিনির্ভর জীবনের কথা তুলে ধরার প্রয়াস পেয়েছেন। কবি গর্বভরে তাঁর পূর্বপুরুষদের কথা বলতে চান যাদের জীবন ছিল নদীবিধৌত বাংলার উর্বর ও আর্দ্র মাটির মতোই শান্ত এবং অকৃত্রিম।

সে মানুষগুলো বাংলার অপেক্ষাকৃত উঁচু, অর্থাৎ পাহাড়ি এলাকায় এসে বসতি স্থাপন করেন এবং পরে তারা সমতলে এসে চাষাবাদ শরু করেন। কবি মনে করেন তাঁদের জীবন ছিল কবিতার মতো আবেগময় এবং গীতিপ্রবণ। সেই কবিতাকে যারা শুনতে চায় না, অর্থাৎ বাঙালির পূর্বের ঐতিহ্যমÐিত সরল জীবনকে যারা ভালোবেসে মনে করতে চায় না তারা বাংলা প্রকৃতির অধিকার থেকে বঞ্চিত হবে। তারা আজন্ম ক্রীতদাস থেকে যাবে। কবি তাঁর পূর্বপুরুষদের নদীর মতো গতিময় জীবনের কথা শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করেন। কবি বলেছেন, যে সাঁতার জানে না সে মাছ ধরতে, অর্থাৎ বর্তমানকে বুঝতে পারবে না। পূর্বপুরুষদের, অর্থাৎ বাঙালি ঐতিহ্যকে যারা ভালোবাসে না সে মা'কে অস্বীকার করে।

কবি সেই ঐহিত্যকে ভালোবাসেন তাই তাদের কথা, তাদের ঐতিহ্যময় জীবনের কথা গর্বভরে স্মরণ করেছেন এ কবিতায়। কিংবদন্তির মধ্যেও সত্যের উপস্থিতি থাকে, বাস্তবতার স্পর্শ থাকে। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি আমাদের পূর্বপুরুষদের সংগ্রামী চেতনা ও কবি চেতনার বাস্তবতা নিঃসঙ্কোচে ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা ছিলেন নির্ভীক ও সাহসী, কর্মোদ্যোগী ও সৃজনশীল এবং স্বাধীনতাপ্রিয় স্বতন্ত্র সত্তার অধিকারী। তাই চির তারুণ্যের সবুজ স্বদেশে তারা লাল সূর্যকে হৃদপিন্ডে ধারণ করে ক্রীতদাসের বিড়ম্বনা থেকে বেরিয়ে আসতে পেরেছেন-যশস্বী হতে পেরেছেন। এখানেই তাদের সার্থকতা যা আমাদের জন্য অনুসরণীয়।
 
💕 নামকরণ
 বিষয়বস্তুর ওপর ভিত্তি করে আলোচ্য কবিতার নামকরণ করা হয়েছে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি।’ লোকপরম্পরায় শ্রুত এবং কথিত কথার নাম কিংবদন্তি। কবি যে কিংবদন্তির কথা বলছেন তাহলো, তার পূর্বপুরুষেরা ক্রীতদাস ছিলেন। যে কারণে তাদের পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল। তারা পাহাড় এবং স্বাপদসঙ্কুল অরণ্য অতিক্রম করে এসেছিলেন। তারা পতিত জমি আবাদ করতেন। তাই তাদের করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল। তাদের উচ্চারিত প্রতিটি সত্যই কবিতা, কর্ষিত জমির প্রতিটি শস্যদানাই কবিতা। প্রাণের স্ফ‚র্র্তি এবং চিরকাল ক্রীতদাস থেকে যেতে হবে।

কবিতা সত্য-স্বপ্নের মতো স্বপ্লীল উনুনের আগুনের উজ্জ্বল আলোর মতো উদার, প্রবাহমান নদীর মতো গতিশীল, মাছের সঙ্গে খেলা করার মতো আনন্দময়, মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শোনার মতো স্বাচ্ছন্দ্য। কবিতা বিচলিত স্নেহের কথা বলে, গর্ভবতী বোনের মৃত্যুর কথা বলে, ভালোবাসার কথা বলে। মাতৃভূমিকে ভালোবাসার কারণে সর্বত্র ষড়যন্ত্র দেখা দেয়, মায়ের ছেলেরা যুদ্ধে যোগ দেয়। সন্তানদের জন্য মায়ের মৃত্যু হয়। ভাই হারিয়ে যায়। কবিতাকে ভালোবাসে বলেই তারা সূর্যকে হৃদপিন্ডে ধারণ করে মাতৃভূমিকে স্বাধীনতা এনে দেয়।

কিংবদন্তির মতো শোনালেও এসব কথা কবিতার মতোই সত্য-বাস্তব। বহু শতাব্দী ধরে এদেশ পরাধীন ছিল বলেই এদেশের মানুষ ক্রীতদাস ছিল। কিন্তু তারা কবিতাকে ভালবেসে অর্জিত স্বাধীনতার কথা বলার সক্ষমতা অর্জন করবে যাতে তা কিংবদন্তি না হয়ে কবিতার মতো বাস্তব সত্য হয়ে স্পন্দিত হয় প্রজন্মের পর প্রজন্মে, হৃদয় থেকে হৃদয়ে। তাই এর নামকরণ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ যথার্থ ও সার্থক হয়েছে।
 
💕 শব্দার্থ ও টীকা
কিংবদন্তি ✑ জনশ্রুতি। লোকপরম্পরায় শ্রুত ও কথিত বিষয় যা একটি জাতির ঐতিহ্যের পরিচয়বাহী।
পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ✑ মানুষের ওপর অত্যাচারের ইতিহাস তুলে ধরা হয়েছে এখানে। সেই অত্যাচারের আঘাত যে এখনও তাজা রয়েছে তা বোঝাতেই রক্তজবার প্রসঙ্গ ব্যবহৃত হয়েছে। আরও লক্ষণীয়, আঘাত রয়েছে পিঠে। অর্থাৎ, শত্রুরা ভীরু কাপুরুষের মতো পিছন থেকে আক্রমণ করেছে কিংবা বন্দি ক্রীতদাসের ওপর ঝাঁপিয়ে পড়েছে, মুক্ত মানুষের সঙ্গে সম্মুখ লড়াইয়ের বীরোচিত সাহস দেখায় নি।
শ্বাপদ ✑ হিংস্র মাংসাশী শিকারি জন্তু। 
উনুনের আগুনে আলোকিত 
একটি উজ্জ্বল জানালা ✑ আগুনে সবকিছু শুচি হয়ে ওঠে। তাই আগুনের উত্তাপে পরিশুদ্ধ হয়ে সকল গ্লানি মুছে ফেলে আলোয় ভরা মুক্তজীবনের প্রত্যাশা জানাতে উজ্জ্বল জানালার অনুষঙ্গ ব্যবহৃত হয়েছে।
বিচলিত স্নেহ ✑ আপনজনের উৎকণ্ঠা। মুক্তিপ্রত্যাশী মানুষের আসন্ন বিপদের আশঙ্কায় তাদের স্বজনরা উদ্বিগ্ন হন। ভালোবাসা আর শঙ্কা একসঙ্গে মিশে যায়।
সূর্যকে হৃৎপিন্ডে ধরে রাখা ✑ সূর্য সকল শক্তির উৎস। তাই এ সর্বশক্তির আধারকে হৃদয়ে ধারণ করতে পারলে মুক্তি অনিবার্য। কবির মতে, এ সামর্থ্য অর্জনের একমাত্র উপায় হলো কবিতা শোনা; কবিতাকে আত্মস্থ করা। কেননা, কবির কাছে শুধু কবিতাই সত্য আর সত্যই শক্তি।

💕 বানান সতর্কতা
 পূর্বপুরুষ, অতিক্রান্ত, স্বাপদ, জিহবা, ক্রীতদাস, দিগন্ত, কর্ষিত, অরণ্য, বঞ্চিত, উজ্জ্বল, স্বপ্ন, স্নেহ, হৃদপিন্ড, সম্ভার, দীর্ঘদেহ, প্রজ্বলিত, সুকণ্ঠ, স্বাধীনতা, আশীর্বাদ, পুরস্কার, দীর্ঘায়ু, সশস্ত্র, ইস্পাত, অভ্যুত্থান।

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
সৃজনশীল প্রশ্ন-০১
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
মোরা একটি ফুলকে বাঁচাবো বলে যুদ্ধ করি
মোরা একটি মুখের হাসির জন্য অস্ত্র ধরি
মোরা নতুন একটি কবিতা লিখতে যুদ্ধ করি
মোরা নতুন একটি গানের জন্য যুদ্ধ করি
মোরা একখানা ভালো ছবির জন্য যুদ্ধ করি
মোরা সারা বিশ্বের শান্তি বাঁচাতে আজকে লড়ি
ক. প্রবহমান নদী কাকে ভাসিয়ে রাখে?
খ. ‘ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়’ বলতে কবি কী বোঝাতে চেয়েছেন?
গ. ‘উনোনের আগুনে আলোকিত একটি উজ্জ্বল জানালার কথার’ সাথে উদ্দীপকের চেতনার ঐক্য নির্দেশ কর।
ঘ. উক্ত ঐক্যের প্রেক্ষাপট উপস্থাপনে কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ “আমি কিংবদন্তির কথা বলছি” কবিতায় অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছেন- মন্তব্যটি মূল্যায়ন কর।

১ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ প্রবহমান নদী যে সাঁতার জানে না তাকেও ভাসিয়ে রাখে।

খ. অনুধাবন
✍ “ভালোবাসা দিলে মা মরে যায়” বলতে বোঝানো হয়েছে পরিবারকে ভালোবেসে পরিবারের গন্ডিতে আবদ্ধ থাকতে মাতৃভূমির ওপর নেমে আসে নির্মমতা।

✍ মা ও মাতৃভূমি একইসূত্রে গ্রথিত। মাকে ভালোবেসে পরিবারের গন্ডিতে আবদ্ধ থাকলে দেশরক্ষা হয় না। দেশকে শত্রুর আক্রমণ থেকে রক্ষা করতে হলে মায়া, ভালোবাসার বন্ধনকে ছিন্ন করে শত্রুর বিরুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়তে হয়। আর তা হলে দেশমাতার ভাগ্যে নির্ধারিত হয় মৃত্যু।

গ. প্রয়োগ
✍ ‘উনোনের আগুনে আলোকিত একটি উজ্জ্বল জানালার কথার’ সাথে উদ্দীপকের ঐক্য হলো মুক্ত জীবনের প্রত্যাশার চেতনা।

✍ প্রতিটি মানুষই মুক্ত, স্বাধীনভাবে বেঁচে থাকার প্রয়াসী। পরাধীনতা কারোরই কাম্য নয়। স্বাধীনতা, মুক্ত জীবনের প্রত্যাশায় মানুষ সকল ভুল-ভ্রান্তি, দুঃখ-বেদনাকে মুছে ফেলতে চায়, ভেঙে-গুঁড়িয়ে দিতে চায় সকল অপশক্তিকে। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় এবং উদ্দীপকে এ বিষয়টির প্রতিফলন ঘটেছে।

✍ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় ‘উনোনের আগুনে আলোকিত ‘একটি উজ্জ্বল জানালার কথা’ এ চরণের মধ্য দিয়ে মুক্ত জীবনের আকাক্সক্ষা ব্যক্ত হয়েছে। আগুন সবকিছুকে শুচি-শুদ্ধ করে তোলে। আগুনের উত্তাপেই মুছে যাবে মানুষের জীবনের সকল গ্লানি। মানুষ দেখা পাবে এক মুক্ত জীবনের। উদ্দীপকেও একটি নতুন দিনের সূচনা, মুক্ত জীবনের কথা বলা হয়েছে। আর এ কারণেই মানুষ অস্ত্র ধারণ করে যুদ্ধ করে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উক্ত ঐক্যের প্রেক্ষাপটে কবি আবু জাফর ওবায়দুল্লাহ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় অসাধারণ সাফল্য দেখিয়েছেন-মন্তব্যটি সত্য।

✍ পরাধীন সে মানুষই হোক আর জাতিই হোক সে নির্জীব। এ ভাবে বেঁচে থাকা মৃত্যুরই নামান্তর। যেখানে স্বাধীনতা নেই সেখানে বেঁচে থাকার আনন্দও নেই। তাই প্রত্যেকে মুক্ত ও স্বাধীন জীবনের প্রত্যাশী। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতা এবং উদ্দীপকে এ বিষয়টিই ফুটে উঠেছে।

✍ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি মানবমুক্তির আকাক্সক্ষা করছেন। এ আকক্সক্ষা থেকেই এ কবিতায় তিনি মুক্তির প্রতীকরুপে ‘কবিতা’ শব্দটিকে ব্যবহার করেছেন। কবি বার বার ‘কবিতা’ শব্দটিকে ব্যবহার করে মুক্তির আবেগকে শিল্পর‚প দিয়েছেন। এ মুক্তির পূর্বশর্ত হলো সংগ্রাম, যুদ্ধ বা বাঙালির রক্তের মধ্যেই আছে। উদ্দীপকেও আমরা এই মুক্ত জীবনচেতনারই প্রতিফলন লক্ষ করি। এ মুক্ত জীবনকে পেতে হলে যুদ্ধ করতে হয়।

✍ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় মুক্ত জীবন প্রত্যাশার প্রেক্ষাপট হলো বাঙালি পুর্বপুরুষদের লড়াই করে টিকে থাকার ইতিহাস। আর এটি এ কবিতায় উপস্থাপন করে কবি অসাধারণ শিল্প-সফলতা দেখিয়েছেন।

এইচএসসি (HSC) বোর্ড পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতির জন্য পড়ুন সৃজনশীল প্রশ্ন ও উত্তরসহ: বাংলা ১ম পত্র গাইড


আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
সৃজনশীল প্রশ্ন-০২
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
বিদেশের অপরিচিত পরিবেশে একাকি মিজান সাহেব তার মাকে খুব অনুভব করেন। বিশেষ করে ছোটবেলায় মায়ের কোলে শুয়ে গল্প, কবিতা ও ছড়া শোনার স্মৃতি তাকে খুব আলোড়িত করে।
ক. যে কবিতা শুনতে জানে না সে কোথায় ভাসতে পারে না?
খ. কে মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতে পারে না? কেন?
গ. উদ্দীপকে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার কোন দিকটি প্রতিফলিত হয়েছে?-আলোচনা কর।
ঘ. মায়ের কোলে শুয়ে গল্প, কবিতা ও ছড়া শোনার স্মৃতি তাকে খুব আলোড়িত করে। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার আলোকে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

২ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ যে কবিতা শুনতে জানে না, সে নদীতে ভাসতে পারে না। 

খ. অনুধাবন
✍ যে কবিতা শুনতে জানে না, সে মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতে পারে না-কারণ কবিতা শোনার ক্ষমতা না থাকলে মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শোনার মানসিকতাও থাকে না।

✍ মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শোনা যেকোনো মানুষের জীবনের অন্যতম আনন্দের দিক। মূলত মাতৃ-হৃদয়ের আবেগ যাকে টানে না, সে মায়ের গল্পকে ভালোবাসে না, মায়ের কোলের আকর্ষণ অনুভব করে না। যে কবিতা শুনতে জানে না, তার হৃদয় আবেগহীন জড় পদার্থের মতো, এ কারণেই কবিতাহীন মানসিকতার মানুষ মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতে পারে না। 

গ. প্রয়োগ
✍ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার কবি তাঁর মায়ের মুখে গল্প শোনার যে কথা বলেছেন, তার সাথে উদ্দীপকের মিজানের স্মৃতিকাতরতার সাদৃশ্য রয়েছে।

✍ মা সকলের জীবনেই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ একজন মানুষ। মানুষের শৈশব ও কৈশোর মায়ের সাথে জড়িয়ে থাকে এবং এ স্মৃতি মানুষ কখনোই ভুলতে পারে না। মায়ের মমতামাখা স্মৃতি মানুষকে সবসময় অনুপ্রাণিত করে।

✍ উদ্দীপকের মিজান সাহেব বিদেশে থাকেন। সেখানে তাঁর মনে পড়ে মায়ের কথা। ছোটবেলায় কোলে শুয়ে শুয়ে তিনি গল্প, কবিতা শুনতেন। সেসব আজ তাঁর স্মৃতিতে জীবন্ত হয়ে ওঠে। এ স্মৃতির কথা ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাতেও পাওয়া যায়। কবি তাঁর মায়ের মুখে অনেক শুনতেন প্রবহমান নদীর কথা এবং অন্যান্য অনেক গল্প, অর্থাৎ আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় এ দিকটিই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ “মায়ের কোলে শুয়ে গল্প, কবিতা ও ছড়া শোনার স্মৃতি তাকে খুব আলোড়িত করে”-উক্তিটি ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার আলোকে তাৎপর্য বহন করে।

✍ শৈশব ও কৈশোরে মানুষ মায়ের আদরে বড় হয়। জীবনের প্রাথমিক শিক্ষাও মানুষ মায়ের কাছে পায়। মা বিভিন্ন কবিতা, গল্প, উপন্যাস ইত্যাদি দিয়ে সন্তানের মনে মানবতাকে জাগিয়ে তোলেন।

✍ উদ্দীপকে প্রবাসী মিজান সাহেবের কথা বিধৃত হয়েছে। মিজান সাহেব তাঁর শৈশব ও কৈশোরের কথা ভাবেন। তাঁর মায়ের কাছে শোনা গল্প, কবিতা, ছড়া- এসব তাঁর কানে বেজে ওঠে, মনে আলোড়ন সৃষ্টি করে। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার মধ্যেও কবি এর‚প স্মৃতিচারণ করেছেন। মায়ের গল্প শোনাকে কবিতাপ্রেমী মানসিকতার বহিঃপ্রকাশ হিসেবে উপস্থাপন করেছেন ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায়। কবির মতে, যে কবিতা শুনতে জানে না, সে মায়ের কোলে শুয়ে গল্প শুনতে জানে না। যেহেতু কবি এবং উদ্দীপকের মিজান সাহেব দুজনেই মায়ের কাছে গল্প শোনার স্মৃতিকে তুলে ধরেছেন, সেহেতু বলা যায় হাসান সাহেবও কবিতা শোনার মানসিকতা রাখেন।

✍ মিজান সাহেবের মনে কবিতার প্রতি ভালোবাসা আছে। সেই ভালোবাসা থেকেই তিনি সময়ের কাছে শোনা গল্পের স্মৃতিতে আলোড়িত হন। এর দ্বারাই প্রমাণিত হয়, প্রশ্নোক্ত উক্তিটি ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার আলোকে তাৎপর্যপূর্ণ হয়েছে।


আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৩
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
ছোট ভাইটিকে আমি আর কোথাও দেখি না
নোলক-পরা বোনটিকে কোথাও দেখি না
কেবল উৎসব দেখি, পতাকা দেখি।\
ক. কবি কার মৃত্যুর কথা বলেছেন?
খ. ‘আমি বিচলিত স্নেহের কথা বলছি’-এখানে ‘বিচলিত স্নেহ’ বলতে কী বোঝায়?
গ. উদ্দীপকে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার কোন অনুষঙ্গটি প্রতিফলিত হয়েছে ব্যাখ্যা দাও।
ঘ. ‘যুদ্ধ মানে স্বজন হারানোর কান্না’-উদ্দীপক ও ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৩নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ কবি তাঁর গর্ভবতী বোনের মৃত্যুর কথা বলেছেন।

খ. অনুধাবন
✍ ‘আমি বিচলিত স্নেহের কথা বলছি’-এখানে ‘বিচলিত স্নেহ’ বলতে আপনজনের উৎকণ্ঠাকে বোঝানো হয়েছে।

✍ কেউ সামান্য বিপদে পড়লে আপনজনের উৎকণ্ঠার শেষ থাকে না, কবি সেই উৎকণ্ঠাকে স্মরণ করেন, যা তাঁর মা, বাবা, ভাই, বোনের মধ্যে অসংখ্যবার প্রকাশ পেয়েছে। এখন তারা কেউ নেই। কিন্তু তাদের সেই বিচলিত স্নেহ কবিকে আবেগতাড়িত করে। ‘বিচলিত স্নেহ’ বলতে এটাই বোঝানো হয়েছে।

গ. প্রয়োগ
✍ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় স্বজন হারানোর যে বিষয়টি রয়েছে, সেটাই উদ্দীপকে প্রতিফলিত হয়েছে।

✍ ১৯৭১ সালে আমরা পশ্চিম পাকিস্তানের সাথে স্বাধীনতা যুদ্ধে অবতীর্ণ হই। যে যুদ্ধে স্বাধীনতার জন্য অসংখ্য মানুষ প্রাণ হারিয়েছে। প্রায় দুই লক্ষ মা-বোনের জীবনে নেমে এসেছে অসহনীয় অপমান আর মৃত্যু।

✍ উদ্দীপকের কবি মুক্তিযুদ্ধে তাঁর স্বজনকে হারিয়েছেন। তাঁর যে ভাইটি যুদ্ধে গেছে, তাঁকে আর কোথাও পাওয়া যায় না। নোলক-পরা বোনও পৃথিবী থেকে বিদায় নিয়েছে। কবি শুধু উৎসব আর স্বাধীনতার প্রতীক হিসেবে পেয়েছেন লাল সবুজের পতাকা। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার কবিও ভাই আর বোন হারানোর বেদনা প্রকাশ করেছেন। কবির গর্ভবতী বোন মারা গেছে। ভাই যুদ্ধ করেছেন মহান স্বাধীনতা অর্জনের জন্য। অর্থাৎ, ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার এ দিকটাই উদ্দীপকে প্রকাশ পেয়েছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘যুদ্ধ মানে স্বজন হারানোর কান্না’ -উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করা যুক্তিযুক্ত।

✍ ন্যায় আর অন্যায় এ দুইয়ের মধ্যে যখন দ্ব›দ্ব লাগে, তখন শুরু হয় যুদ্ধ। যুদ্ধ মানে মত আর মৌলিক চাহিদা প্রতিষ্ঠার জন্য প্রাণপণ সংগ্রাম করা। এ সংগ্রামের মধ্য দিয়ে যেমন হারানোর বেদনা আসে তেমনি পাওয়া যায় বিজয়ের মাধ্যমে অধিকার প্রতিষ্ঠার দলিল।

✍ উদ্দীপকের কবি তাঁর স্বজনদের মুক্তিযুদ্ধে হারিয়েছেন। যুদ্ধের পরে তিনি সাধারণ মানুষের মধ্যে অনাবিল বিজয়ের উৎসব দেখেছেন। কিন্তু আপন ভাই আর বোনকে কোথাও খুঁজে পাননি। তারা যুুদ্ধে মারা গেছে। এই স্বজন হারানোর প্রবল যন্ত্রণা ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাতেও পাওয়া যায়। কবি যুদ্ধে তাঁর ভাই আর বোনকে হারিয়ে শোকাতুর। যুদ্ধ মানুষের জন্য ভালো ও খারাপ, দুই-ই বয়ে আনে। যুদ্ধের মাধ্যমে আমরা অর্জন করেছি মহান স্বাধীনতা। কিন্তু এ যুদ্ধই কেড়ে নিয়েছে অসংখ্য প্রাণ।

✍ উদ্দীপকের কবি হারিয়েছেন আপন ভাই আর বোনকে। এই হারানোর সুর ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবির কণ্ঠেও একই হাহাকারে প্রকাশ পেয়েছে। তাই বলা যায় যে, ‘যুদ্ধ আনে স্বজন হারানোর কান্না’ উক্তিটি যথার্থ হয়েছে।


আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৪
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
সারাদিন ক্ষেত-খামারে কাজ করে আর পুকুরে মাছ চাষ করে সময় কাটে ফজু মিয়ার। এসব কাজে কষ্ট হলেও যখন ক্ষেতে হলুদ ফসল ফলে আর পুকুর মাছে ভরে যায়, তখন তার আনন্দের সীমা থাকে না।
ক. শস্যের সম্ভার কাকে সমৃদ্ধ করবে?
খ. জননীর আশীর্বাদ কাকে, কেন দীর্ঘায়ু করবে?
গ. উদ্দীপক ও ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. ‘পরিশ্রমে যে ফসল ফলে তা অনাবিল আনন্দের- উদ্দীপক ও ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ কর।

৪ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ যে কর্ষণ করে, শস্যের সম্ভার তাকে সমৃদ্ধ করবে।

খ. অনুধাবন
✍ যে গাভীর পরিচর্যা করবে, জননী তাকে দীর্ঘায়ুর জন্য আশীর্বাদ করবেন।

✍ গাভী মায়ের মতো, পরোপকারী এ গৃহপালিত প্রাণী এ অঞ্চলের কৃষিজীবী মানুষের অন্যতম অবলম্বনগুলোর একটি। গাভী পরিচর্যার মাধ্যমে কৃষিজীবী সমাজ অর্থনৈতিক সমৃদ্ধি সাধন করে। এখানে জননী বলতে ‘গো-মাতা’ -কে বোঝানো হয়েছে। যে গো-মাতার পরিচর্যা করবে, গো-মাতা তার দীর্ঘায়ু কামনা করবে।

গ. প্রয়োগ
✍ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় চাষি ও মৎস্য পালনকারীর প্রতিফলনের কথা বলা হয়েছে, যা উদ্দীপকের সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

✍ শ্রমের বিনিময়ে সুফল আসে। বেঁচে থাকার জন্য পরিশ্রম করা আবশ্যক। পরিশ্রম ছাড়া কোনো প্রকার উন্নতি করা সম্ভব নয়। যে যতো পরিশ্রমী, সে ততো বেশি ফলাফল ভোগ করতে পারে।

✍ উদ্দীপকের ফজু মিয়া একজন কৃষিজীবী মানুষ। সে জমিতে ফসল ফলানোর জন্য উদয়াস্ত পরিশ্রম করে এবং পুকুরে মাছ চাষ করে। কঠোর পরিশ্রমের ফল হিসেবে ফজু মিয়া পায় ফসল এবং সফলতা লাভ করে উৎপাদিত মাছের মাধ্যমে। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাতেও দেখা যায়, যে জমি চাষ করে, সে ফসল পেয়ে সমৃদ্ধ হয়, যে মাছ চাষ করে, বহমান নদী তাকে মাছ দেয় ইত্যাদি বলা হয়েছে। কবিতার এ দিকের সাথেই উদ্দীপকের সাদৃশ্য বিদ্যমান। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘পরিশ্রমে যে ফসল ফলে, তা অনাবিল আনন্দের’-উক্তিটি উদ্দীপক ও ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করা যুক্তিযুক্ত।

✍ মানুষ পরিশ্রম করে ফলাফল লাভের আশায়। যার পরিশ্রম যতো যৌক্তিক ও নিষ্ঠাসমৃদ্ধ, সে তত উন্নত ফলাফল লাভ করবে। আর যে পরিশ্রম-বিমুখ, সে ফলাফল লাভ করে না, বরং তার জীবন দৈন্যের আঘাতে জরাজীর্ণ হয়ে পড়ে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, ফজু মিয়া সারাদিন মাঠে পরিশ্রম করে এবং মাছ চাষ করে। সে প্রচুর ফসল পায় এবং সুখে জীবন যাপন করে। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাতেও বলা হয়েছে, যে কর্ষণ করে, সে শস্যের সম্ভার লাভ করে। যে মাছ চাষ করে, বহমান নদী তাকে মাছ দিয়ে পুরস্কৃত করে। মানুষ পরিশ্রম করলে শক্তি খরচ হয়, কখনো কখনো বিরক্তি উৎপাদন হয়। কিন্তু যে জন্য পরিশ্রম করা হয়, সে ফলাফল ভোগ করতে আবার আনন্দও লাগে।

✍ মূলত পরিশ্রমের শেষ ফলাফলের পাশাপাশি মনে আসে দারুণ আনন্দ। এ কারণেই কৃষক খেতে-খামারে হাড়ভাঙা খাটুনির পরও ফলাফলের কথা ভেবে মনের আনন্দে গান গায়। সমস্ত ক্লান্তি ভুলে যায়। 
 

আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৫
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
পুকুর ঘাটে বসে কবিতার বই পড়ছিল সাজেদ। হঠাৎ তার বন্ধু হাবিব এসে বিদ্রƒপভরা কণ্ঠে বললো, এত কবিতা পড়ে কী হবে? চল পুকুরে সাঁতার কাটি। সাজেদ মাথা তুলে বলল, শোন, যে কবিতা পড়ে না, সে সাঁতার কাটার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়।
ক. প্রবহমান নদী কাকে ভাসিয়ে রাখে?
খ. যে কবিতা শুনতে জানে না, সে মাছের সঙ্গে খেলা করতে পারে না কেন?
গ. উদ্দীপক ও ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার সাদৃশ্য তুলে ধর।
ঘ. “যে কবিতা পড়ে না, সে সাঁতার কাটার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়”-‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার আলোকে উক্তিটির তাৎপর্য বিশ্লেষণ কর।

৫ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ যে সাঁতার জানে না, প্রবহমান নদী তাকে ভাসিয়ে রাখে।

খ. অনুধাবন
✍ যে কবিতা শুনতে জানে না, সে মাছের সঙ্গে খেলা করতে পারে না, কারণ তার মধ্যে খেলা করে আনন্দ লাভের প্রবণতা নেই।

✍ মাছের সঙ্গে খেলা বলতে জীবনের তুচ্ছ নিরর্থক, কিন্তু আনন্দ উদ্রেককারী কাজকে বোঝানো হয়েছে। যার মনে আনন্দের বাসনা নেই, সে কখনোই আনন্দ লাভের জন্য কোনো নিরর্থক কাজ করবে না। এছাড়া ছোটবেলায় মানুষ মাছের সঙ্গেও খেলা করে। যার মনে কবিতার ভালোবাসা নেই। মাছের সঙ্গে সে খেলা করার মানসিকতাও বহন করতে পারে না। 

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকের সাজেদ ও ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার কবি দুজনেই কবিতা না শুনলে সাঁতার কাটার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন বলে মতামত দিয়েছেন, যা পরস্পর সাদৃশ্য।

✍ কবিতা হলো সৃজনশীল মনের আনন্দের বহিঃপ্রকাশ। যার মনে সজীবতা নেই, যে মননশীলতার চর্চা করে না, তার কাছে কবিতার কোনো মূল্য নেই।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, সাজেদ পুকুরঘাটে বসে কবিতা পড়ছে। তার বন্ধু হাবিব কবিতা নিয়ে বিদ্রƒপ প্রকাশ করলে সে প্রতিবাদ করে। কবিতায় যে আনন্দ পায় না, সাঁতারেও সে প্রকৃত আনন্দ পাবে না বলে অভিমত দেয়। উদ্দীপকের এ বিষয়টিতে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার সাদৃশ্য রয়েছে। কবির মতে, যে কবিতা শুনতে পারে না, সে সাঁতার কাটার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হবেন বলে মতামত দিয়েছেন, যা পরস্পর সাদৃশ্য।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ ‘যে কবিতা পড়ে না, সে সাঁতার কাটার আনন্দ থেকে বঞ্চিত হয়’-এ উক্তিটি ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার আলোকে বিশ্লেষণ করার দাবি রাখে।

✍ মানুষ কাজ করে কখনো শুধু কাজের জন্যে, আবার কখনো মনের আনন্দ নিয়ে। যার মনে সঞ্জীবনী শক্তি আছে, আনন্দ আহরণের ক্ষমতা রাখে, সে সমস্ত কাজ আনন্দ নিয়ে করতে পারে।

✍ উদ্দীপকে দেখা যায়, সাজেদ পুকুর ঘাটে বসে কবিতা পড়ছে এবং তার বন্ধু এ নিয়ে ব্যঙ্গ করে। তখন সাজেদ প্রতিবাদ করে এবং কবিতার আনন্দ না নিতে পারলেও সাঁতারে আনন্দ নেয়াও সম্ভব নয় বলে মতামত দেয়। একই মতামত পাওয়া যায়, ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায়। কবির মতে, যে কবিতা শুনতে পারে না, সে সাঁতারও কাটতে পারে না। সাঁতার কাটা একটা আনন্দঘন কাজ। প্রত্যেকেই সাঁতার কাটে। কিন্তু সাঁতার কাটার যে অন্তর্নিহিত আনন্দবোধ, তা অনুধাবন করার জন্য প্রয়োজন সৃজনশীল ও আনন্দগ্রাহী মন। বস্তুত প্রশ্নোক্ত উক্তিতে সাঁতার একটা প্রতীকী কাজ। এর দ্বারা সমস্ত আনন্দঘন কাজকে বোঝায়।

✍ উদ্দীপকের সাজেদের মনে সৃজনশীলতা আছে, যা হাবিবের মনে নেই। ফলে সাঁতারের প্রকৃত আনন্দ লাভ করলেও হাবিব তা টের পাবে না। এ আনন্দ আহরণের দিক থেকে প্রশ্নোক্ত উক্তিটি ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার আলোকে তাৎপর্যপূর্ণ।


আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৬
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
সুজানগর গ্রামের যুবক মতিন সবসময় তাঁর পূর্বপুরুষদের নিয়ে গর্ব করে। তাঁরা একসময় অনেক শৌর্য-বীর্যের অধিকারী ছিলেন। তাঁরা অনেক সাহস আর অধ্যবসায়ের মাধ্যমে জীবনে অভিনবত্ব, মহিমা ও উন্নতি সাধন করেছিলেন। তাঁরা হিংস্র পশু ও বন্যশ্বাপদময় পরিবেশ উপেক্ষা করে জীবনের শীর্ষ জয়গান গেয়েছিলেন।
ক. ‘অতিক্রান্ত’ শব্দের অর্থ কী?
খ. ‘আমি আমার পূর্বপুরুষের কথা বলছি’-কবি এটি কেন বলেছেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার কোন দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ?-ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকের মতিন ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবির চিন্তাকে আংশিক প্রতিফলিত করে। -মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৬ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ অতিক্রান্ত শব্দের অর্থ অতিক্রম করা হয়েছে এমন।

খ. অনুধাবন
✍ পূর্বপুরুষদের শৌর্য-বীর্য তুলে ধরতে কবি প্রশ্নোক্ত চরণটি ব্যবহার করেছেন।

✍ একসময় বাংলা অঞ্চলের লোকেরা অধ্যবসায়ী ও সাহসী ছিলেন। তাঁরা নিজেদের চেষ্টায় অনেক সাফল্য লাভ করেছিলেন। যুগোপযোগী কর্মপরিকল্পনা ও বীর্যবত্তা তাঁদেরকে সাফল্য এনে দিয়েছিল। এ কারণেই কবি পূর্বপুরুষদের কথা বলেছেন।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার বাঙালি পূর্বপুরুষদের কর্মোদ্দীপনার দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ।

✍ নিজের কাজ নিজ হাতে করার মাঝে যে আনন্দ ও স্বাধীনতা আছে তা অন্যকিছুতে নেই। নিজের কাজ নিজে করার মাঝে কোনো অসম্মান নেই, বরং সম্মানের প্রাচুর্য লক্ষণীয়। সঠিক কর্মপরিকল্পনা ও কঠোর সাফল্য লাভের অদ্বিতীয় পথ হলো কাজ করে যাওয়া।

✍ উদ্দীপকে বর্ণিত মতিন পূর্বপুরুষদের নিয়ে গর্ব করতেন। তাঁদের সততা, সাফল্য তাকে ব্যাপকভাবে অনুপ্রাণিত করে। তাঁরা বন্যশ্বাপদকে উপেক্ষা করে জীবনপথের প্রয়োজনীয় উপাদান সংগ্রহ করতেন। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় দেখানো হয়েছে বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষেরা সৎসাহস, অধ্যবসায় আর কর্মোদ্দীপনার মাধ্যমে নিজেদের জীবনকে গৌরবান্বিত করেছিলেন। সাহস ও আত্মবিশ্বাস তাদের জীবনকে পাল্টে দিয়েছিল। এভাবে উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষদের কর্মোদ্দীপনার দিকটির সাথে সাদৃশ্যপূর্ণ হয়ে উঠেছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপকের মতিন ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাটির কবির চিন্তাকে আংশিক প্রতিফলিত করে- মন্তব্যটি যথাযথ।

✍ সাফল্য তাদেরই হয় যারা সঠিক কর্মপরিকল্পনায় অধ্যবসায় সহকারে কাজ করতে পারঙ্গমতা দেখায়। সাফল্যই জীবনের উদ্দেশ্য। তাই মাঝে মাঝে সফল ব্যক্তিদের সান্নিধ্যে যাওয়া উচিত।

✍ উদ্দীপকে বর্ণিত মতিন তাঁর পূর্বপুরুষদের মর্যাদাসম্পন্ন জীবনকে উপস্থাপন করেছে। তাঁরা সততা, সাহস, কর্মপরিকল্পনা, কর্মোদ্দীপনা আর কঠোর অধ্যবসায়ের চ‚ড়ান্ত লক্ষে পৌঁছতে পেরেছিলেন। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি, কবিতায় কবি শুধু বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষদের বীর্যবত্তার দিকটিই বর্ণনা করেননি, অন্যান্য প্রসঙ্গও বর্ণনা করেছেন। এ কবিতায় কবি বৈচিত্র্যভাব, কৃষক স¤প্রদায় ও সত্য বাক্য উচ্চারণে অসীম সাহস ইত্যাদি প্রসঙ্গক্রমে ব্যবহার করেছেন।

✍ উদ্দীপকে মতিন শুধু তাঁর পূর্বপুরুষদের মর্যাদাসম্পন্ন জীবনকে উপস্থাপন করেছেন। অন্যদিকে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি শুধু বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষের জীবনকাহিনী বর্ণনা করেন নি; অন্যান্য বিষয়ও বর্ণনা করেছেন। তাই এ কথা বলা যায়, উদ্দীপকের মতিন ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাটির কবির চিন্তাকে আংশিক প্রতিফলিত করে।


আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৭
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
বাংলাদেশের উত্তরাঞ্চলের দিনাজপুর জেলার মফিজের সঙ্গে আমার কথা হলো। তিনি তার পূর্বপুরুষদের শ্রমলভ্য সফল জীবন এবং ঔপনিবেশিক শাসনাধীন নিপীড়িত জীবনের কথা বললেন। তিনি বললেন, তার পূর্বপুরুষরা শ্রম-সাধনা আর যুগোপযোগী চাষাবাদে সোনার ফসল ফলিয়ে এক গৌরবময় জীবন রচনা করেছিলেন। পাশাপাশি তাদের সহ্য করতে হতো ঔপনিবেশিক শাসনের চরম নিষ্পেষণ। তাদের শরীরে আজও সেই নিপীড়নের, অপমানের চি‎হ্ন বিদ্যমান।
ক. পূর্বপুরুষের পিঠে কীসের মতো ক্ষত ছিল?
খ. “তার করতলে পলিমাটির সৌরভ ছিল” -কেন?
গ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার কোন দিককে নির্দেশ করেছে?
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয় ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার সমগ্র ভাবকে প্রকাশ করে না।-মন্তব্যটি বিশ্লেষণ কর।

৭ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ পূর্বপুরুষের পিঠে রক্তজবার মতো ক্ষত ছিল।

খ. অনুধাবন
✍ বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষেরা কঠিন মাটিতে সোনার ফসল ফলাতেন চরণটি দ্বারা কবি সেটিকে বুঝিয়েছেন।

✍ বাঙালি জাতির গৌরবময় জীবন বৈচিত্র্যপূর্ণ। তাঁরা কঠিন মাটির বুকে কঠিন শ্রমে সোনার ফসল ফলাতেন। কবির মনে হয়, সেই ফসলের মাঠের পলিমাটির স্নিগ্ধ এখনও বিদ্যমান। এ বিষয়টিকে উপস্থাপন করতেই তিনি প্রশ্নোক্ত চরণটি ব্যবহার করেছেন।

গ. প্রয়োগ
✍ উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার সোনার ফসল ফলানোর এবং বাঙালি জাতি নিপীড়িত হওয়ার দিকটিকে নির্দেশ করছে।

✍ এমন একটি সময় ছিল যখন মাঠে বিপুল পরিমাণ ফসল জন্মাত। এতে জীবনে আনন্দ ও হাসি লেগে থাকত। অন্যদিকে এ শ্রমনির্ভর সফল মানুষের ওপর নেমে আসত ঔপনিবেশিক শাসনের ব্যাপক নিষ্পেষণ।

✍ উদ্দীপকের মফিজের বর্ণনা থেকে জানা যায়, তার পূর্বপুরুষের জীবনকাহিনি। তিনি বলেন, তাঁরা শ্রম, অধ্যবসায় আর সঠিক কর্মোদ্দীপনায় মাঠে ফসল ফলিয়ে বেশ গৌরবময় জীবন রচনা করেছিলেন। কিন্তু তাদের সহ্য করতে হতো ঔপনিবেশিক শাসনের কঠিন নিপীড়ন। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় কবি বাঙালি জাতির গৌরবময় কৃষি উৎপাদনের বিষয়টি বর্ণনা করেছেন। তাদেরকে ঔপনিবেশিক শাসনাধীনের নানারকম নির্যাতন সহ্য করতে হতো। তাই বলা যায়, উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয়টি ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার বাঙালি পূর্বপুরুষের শ্রমনির্ভর জীবন ও ঔপনিবেশিক শাসনাধীনের নিপীড়িত জীবনের দিকটিকে উপস্থাপন করেছে।

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয় ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার সমগ্র ভাববে ধারণ করে না-মন্তব্যটি যথাযথ।

✍ সাহস, আত্মবিশ্বাস ও অধ্যবসায় জীবনের সাফল্য আনতে ভূমিকা রাখে। সফল মানুষের ইতিহাসই পৃথিবীতে বেঁচে থাকে। তাই সাফল্য লাভে সময়সচেতন, কর্মোদ্দীপ্ত ও অধ্যবসায়ী হওয়া প্রয়োজন।

✍ মফিজ রংপুর জেলার অধিবাসী। সে তার পূর্বপুরুষের জীবন থেকে অনেক কিছু জেনেছে। তারা কঠিন পরিশ্রমে সোনার ফসল ফলিয়ে জীবনে প্রাচুর্য আনতেন এবং পরাধীন শাসনের নির্যাতন তাদের সহ্য করতে হতো। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’, কবিতাতেও বাঙালি-পূর্বপুরুষের ফসল ফলানোর বিষয়টি জানা যায়। আর ঔপনিবেশিক শাসনের নির্যাতনের ক্ষতও তাদের পিঠে চিহ্ণিত হয়ে আছে। এছাড়াও কবিতায় অন্যান্য বিষয়, যেমন-বাঙালির নির্ভীক জীবনযাত্রা, মাতৃভূমি ও ভাষার প্রতি সচেতনতা এবং মানুষের কষ্টের দিক ইত্যাদিও বর্ণিত হয়েছে।

✍ উদ্দীপকের বর্ণিত বিষয়ে শুধু পূর্বপুরুষদের কঠিন সাধনায় ফসল ফলানোর ও ঔপনিবেশিক শাসনাধীনের ক্ষত জীবনের চি‎হ্ন প্রধান হয়ে উঠেছে। অন্যদিকে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’, কবিতায় বাঙালি-পূর্বপুরুষদের শ্রমপ্রচেষ্টায় ফসল ফলানো এবং ঔপনিবেশিক শাসনের যাঁতাকলে নিষ্পেষণের চিত্রই উপস্থাপিত হয়নি মাত্র, অন্যান্য বিষয়ও প্রধান হয়ে উঠেছে। অতএব, উদ্দীপকে বর্ণিত বিষয় ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার সমগ্র ভাবকে প্রকাশ করে না-মন্তব্যটি যথার্থ।


আমি কিংবদন্তির কথা বলছি
সৃজনশীল প্রশ্ন-০৮
নিচের উদ্দীপকটি পড় এবং সৃজনশীল প্রশ্নগুলোর উত্তর দাওঃ
জহির মনে করতেন তার পূর্বপুরুষেরা মননশীলতা, সৃজনশীলতা ও অধ্যবসায়ের স্বাধীনচেতা মানসিকতা প্রকাশে যে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ ছিলেন তা আজ ইতিহাস, কারণ তারা ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে ক্রীতদাসে পরিণত হয়ে নানা নিপীড়ন সহ্য করলেও স্বাধীনতার বাক্য উচ্চারণ করতে দ্বিধা করেন নি। আর জহিরও তাদের মনোভাব আঁকড়ে ধরে সামনের দিকে এগোতে চায়, সত্য প্রকাশ করতে চায়। 
ক. ‘কিংবদন্তি’ শব্দের অর্থ কী?
খ “আমরা কি তাঁর মতো কবিতার কথা বলতে পারব” -চরণটি বুঝিয়ে দাও।
গ. ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার কোন দিকটি উদ্দীপকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে? ব্যাখ্যা কর।
ঘ. উদ্দীপকে বর্ণিত জহিরের পূর্বপুরুষের চিত্র মূলত ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতারই সারাংশ। -বিশ্লেষণ কর।

৮ নং সৃজনশীল প্রশ্নের উত্তর
ক. জ্ঞান
✍ ‘কিংবদন্তি’ শব্দের অর্থ জনশ্রুতি।

খ. অনুধাবন
✍ বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষদের ঐতিহ্যময়, স্বাধীনচেতনায় উদ্দীপ্তময় জীবনকে বর্ণনা করতে কবি চরণটি ব্যবহার করেছেন।

✍ ঔপনিবেশিক শাসনাধীনে বাঙালি জাতি ক্রীতদাসে পরিণত হয়েছিলেন। তারপরও তারা সত্যের কথা, জীবনের কথা, স্বাধীনতার কথা বলেছিলেন দ্বিধাহীনভাবে। তাদের সহ্য করতে হয়েছিল অসহনীয় কষ্ট। বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষের জীবনের চেতনা ধারণ করতেই কবি প্রশ্নোক্ত চরণ ব্যবহার করেছেন। 

. প্রয়োগ
✍ ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতার বাঙালির স্বাধীনচেতা মনোভাবের দিকটি উদ্দীপকে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে।

✍ স্বাধীন হয়ে বেঁচে থাকার স্বাদ অমৃতসমান। স্বাধীনতার এই স্পর্শই একজন ব্যক্তিকে সততা, সাহস, বিশ্বাসে সাফল্যের দিকে এগিয়ে নিয়ে যায়। তাই হতাশা-নিরাশা আর গ্লানিকে মুছে ফেলে স্বাধীনতার চেতনায় উজ্জীবিত হয়ে অভিনব সুন্দর জীবনের সান্নিধ্যে যাওয়া উচিত।

✍ উদ্দীপকের জহিরের পূর্বপুরুষ স্বাধীনতার শক্তিকে হৃদয়ে লালিত করে বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়। যদিও অনেক অত্যাচার তাদের সহ্য করতে হয়েছিল। তারপরও স্বাধীন মনোভাবের বিকাশকে কেউ তিল পরিমাণও ঠেকিয়ে রাখতে পারেনি। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাতেও বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষদের ক্রীতদাস হিসেবে জানা যায়। কিন্তু তারা সততা, নিষ্ঠা, স্বাধীন হওয়ার উদগ্র বাসনা দিয়ে সকল ঔপনিবেশিক শোষণ উপেক্ষা করে সত্যের কথা বলতেন। ফলে স্বাধীন হয় তাদের জীবন ও জীবনবাসনা। এভাবে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতায় বাঙালি জাতির স্বাধীনচেতা মনোভাব উদ্দীপকের বর্ণিত বিষয়ে স্পষ্ট হয়ে উঠেছে। 

ঘ. উচ্চতর দক্ষতা
✍ উদ্দীপকে বর্ণিত জহিরের পূর্বপুরুষের চিত্র মূলত ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতারই সারাংশ।-মন্তব্যটি যথার্থ।

✍ ইতিহাস মানুষই রচনা করে, আবার সেটাকে মানুষই হৃদয়পটে উজ্জীবিত করে রাখে। নিপীড়ন, নিষ্পেষণ আর গ্লানির শেষ চি‎হ্নটুকুও মুছে ফেলে মানুষ আবার স্বাধীনতায় উদ্দীপ্ত হয়।

✍ জহিরের পূর্বপুরুষরা স্বাধীনচেতা ছিলেন। তারা সকল নিপীড়ন, নির্যাতন ও জীবনযন্ত্রণাকে উপেক্ষা করে স্বাধীনভাবে সত্যকথা বলেছেন সবসময়। পূর্বপুরুষের গৌরবই কামরানের জীবনে দিশারি হয়ে পথ দেখায়। ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাটিতে কবি বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষদের জীবন কথা তুলে ধরেছেন। তারা নিপীড়ন ও অধীনতা উপেক্ষা করে জীবনের প্রকৃত সৌন্দর্য অবলোকন করে সত্যকে হৃদয়ে স্থান দেন। পূর্বপুরুষদের গৌরবোদ্দীপ্ত জীবনই বাঙালিকে অভিনব দিকের সন্ধান দিতে পারে।

✍ উদ্দীপকে জহিরের পূর্বপুরুষদের সফল জীবনের দিকটি উপস্থাপিত হয়েছে। একইপভাবে ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতাটিতেও বাঙালি জাতির পূর্বপুরুষের জীবন-কথা আলোচিত হয়েছে। তাই বলা যায় যে, উদ্দীপকে বর্ণিত জহিরের পূর্বপুরুষের চিত্র মূলত ‘আমি কিংবদন্তির কথা বলছি’ কবিতারই সারাংশ- মন্তব্যটি যুক্তিসংগত।

1 comment:

  1. Anonymous6:58:00 AM

    অনেক ভালো লাগছে ধন্যবাদ আপনাকের কোন এ্যপস আছে কিনা

    ReplyDelete