G

HSC সিরাজউদ্দৌলা নাটক অনুধাবনমূলক প্রশ্নের উত্তর pdf download

একাদশ-দ্বাদশ শ্রেণির বাংলা ১ম পত্র নাটক গাইড
এইচএসসি পরীক্ষার পূর্ণাঙ্গ প্রস্তুতি
HSC Sirajuddaula Natok Srijonshil Question and Answer. Sirajuddoula Natok Srijonshil Proshno O Uttor for HSC Exam Preparation. HSC Sirajuddaula Drama Comprehension Questions Answers pdf download.

বাংলা সহপাঠ নাটক
সিরাজউদ্দৌলা
সিকান্দার আবু জাফর

বাছাইকৃত অতিরিক্ত
খ. অনুধাবনমূলক প্রশ্ন

১. মিরমর্দানের পরিণতি কেমন হয়েছিল?
উত্তর: যুদ্ধক্ষেত্রে মৃত্যুই মিরমর্দানের শেষ পরিণতি হয়েছিল।

পলাশীর যুদ্ধক্ষেত্রে ইংরেজদের বিরুদ্ধে প্রচণ্ড যুদ্ধ চলাকালে নবাবের সৈন্যদলের বিভিন্ন সেনাপতি যখন বিশ্বাসঘাতকতা করেছে তখন মিরমর্দান অমিতবিক্রমে দেশের জন্য যুদ্ধ করে গেছেন। সেনাপতি মিরজাফরও যুদ্ধক্ষেত্রে কাঠের পুতুলের মতো দাঁড়িয়ে যুদ্ধ দেখছে। ইতোমধ্যে বৃষ্টিপাতের ফলে গোলাবারুদ ভিজে অকেজো হয়ে যায়। অন্য উপায় না দেখে মিরমর্দান শুধু তরবারি নিয়ে মুখোমুখি যুদ্ধ করে যান। আর এভাবে যুদ্ধ করতে করতেই যুদ্ধক্ষেত্রে তিনি শহীদ হন।

২. ‘আশা করি নবাব আমাদের উপরে অন্যায় জুলুম করবেন না'- হলওয়েলের নবাবের প্রতি এ বিশ্বাসের কারণ কী?
উত্তর: নবাব হলওয়েলকে তার কৃতকার্যের উপযুক্ত প্রতিফল নেবার জন্য তৈরি হতে বললে কাতর স্বরে হলওয়েল উদ্ধৃত আবেদন জানায়।

নবাব বাহিনী ইংরেজ সৈন্যদের ওদ্ধত্যের প্রতিশোধ নেবার জন্য ফোর্ট উইলিয়াম দুর্গে হামলা চালালে ইংরেজ বাহিনী বিপর্যস্ত হয়ে পড়ে। ক্যাপ্টেন ক্লেটনসহ সেনা কর্মকর্তাদের অনেকেই প্রাণ ভয়ে পালিয়ে যায় দুর্গ থেকে। ইংরেজ বাহিনীর পক্ষে যুদ্ধ চালিয়ে যাওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সার্জন হলওয়েল। এমন সময় সিরাজউদ্দৌলা সসৈন্যে ইংরেজ দুর্গে ঢুকে ভর্ৎসনার সুরে হলওয়েলকে বলে কোম্পানির ঘুষখোর ডাক্তার রাতারাতি সৈন্যধাক্ষ্য হয়ে বসেছ।

৩. মার্টিন কেন ড্রেকের কাছে তাদের ভবিষ্যৎটা জানতে চেয়েছে?
উত্তর: সিরাজউদ্দৌলা ইংরেজদের কাছে জিনিসপত্র বিক্রি করতে নিষেধ করলে ভাগীরথীতে এক জাহাজ থেকে মার্টিন ড্রেকের কাছে তাদের ভবিষ্যৎটা জানতে চেয়েছে।

মার্টিনরা ভাগীরথীর যে জাহাজে সেখান থেকে হাটবাজার অনেক দূরে। নবাব ইতোমধ্যে তাদের কাছে যেকোনো জিনিসপত্র বিক্রি করতে নিষেধ করেছে। চারগুণ দাম দিয়ে অতি সঙ্গেপনে জিনিস কিনতে হয়। এ অবস্থা কত দিন চলবে এবং শেষই বা কোথায়। ধৈর্যহারা মার্টিন তা আজ জানতে আগ্রহী। এখানে ইংরেজদের দুর্দশার চিত্র অঙ্কিত হয়েছে।

৪. ইংরেজ সৈন্যরা তাদের দুর্দশার জন্য ড্রেককে দায়ী করলেন কেন?
উত্তর: সকলের ধারণা ড্রেকের ভুল পদক্ষেপের জন্যই ইংরেজদের দুর্দশা। এ কারণে সবাই ড্রেককে দায়ী করলেন।

নবাব সিরাজউদ্দৌলার বাহিনীর সঙ্গে যুদ্ধে পরাজিত ইংরেজ সেনা পালিয়ে আশ্রয় নিয়েছে ভাগীরথীর জলে ভাসমান জাহাজে। কলকাতার গভর্নর রজার ড্রেকও কাপুরুষের মতো ভয়ে সেখানে পালিয়ে গেছেন। জাহাজে আশ্রয়রত সকলের অবস্থা পানীয় ও খাদ্যের অভাবে এবং নিরাপত্তার অভাবে উৎকণ্ঠায় অসহনীয় হয়ে ওঠেছে। এ রকম পরিস্থিতিতে সকলেই ড্রেককে দায়ী করেছে।

৫. ঘসেটি বেগম কেন সিরাজউদ্দৌলার বিরুদ্ধে গেলেন?
উত্তর: নিঃসন্তান বিধবা মাতৃস্থানীয়া সিরাজের খালা ঘসেটি বেগমের বাংলার শাসনভার নিয়ন্ত্রণে অভিলাষী ছিলেন বলেই সিরাজের বিরুদ্ধে গেলেন।

নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করার জন্য ঘসেটি বেগম গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত ছিল। তার বাড়িতেই সে সিরাজ বিরোধী গোপন ষড়যন্ত্রের বৈঠক করে শওকত জঙ্গকে নবাব হিসেবে সিংহাসনে বসানোর প্রয়াস নিয়েছেন। সিরাজ থাকতে সে যে সুবিধা পাচ্ছে না শওকত জঙ্গ নবাব হলে সে সেই সুবিধা ভোগ করতে পারবে। তাছাড়াও ঘসেটি বেগমের এ ক্ষমতার প্রচণ্ড লোভ ছিল বলেই সিরাজের বিরুদ্ধে তার হিংস্র মনোবৃত্তির পরিচয় পাওয়া যায়।

৬. ঘসেটি বেগম সিরাজউদ্দৌলাকে অভিশাপ দিলেন কেন?
উত্তর: জলসা ভেঙে দিয়ে ঘসেটি বেগমকে প্রাসাদে চলে যাওয়ার নির্দেশ দেয়ায় ঘসেটি বেগম ক্রোধে সিাজউদ্দৌলাকে অভিশাপ দেন।

ঘসেটি বেগম কৌশলে নবাবকে সিংহাসনচ্যুত করে শওকত জঙ্গকে নবাব হিসেবে সিংহাসনে বসানোর ষড়যন্ত্র করেন। গুপ্তচরের মাধ্যমে এ ষড়যন্ত্রের কথা জানতে পেরে সিরাজউদ্দৌলা আকস্মিকভাবে সেখানে উপস্থিত হন এবং জলসা ভেঙে দিয়ে ঘসেটি বেগমকে প্রাসাদে চলে যাবার অনুরোধ করেন। সিরাজের এ আচরণে ক্রুদ্ধ ঘসেটি বেগম তাঁকে বন্দি করতে আসার অভিযোগে সিরাজকে অভিশাপ দেন।

৭. নবাব সিরাজউদ্দৌলা নিজেকে নিজেই অভিযুক্ত করেছেন কেন?
উত্তর: বাংলার প্রজা সাধারণের সুখ স্বাচ্ছন্দ্যের ব্যবস্থা করতে পারেন নি বলেই নবাব সিরাজউদ্দৌলা নিজেকে নিজেই অভিযুক্ত করেছেন।

প্রজাবৎসল দয়ালু শাসক সিরাজউদ্দৌলার সার্বক্ষণিক চিন্তা ছিল কীভাবে প্রজাদের সুখ ও শান্তি হয়। অথচ তাঁর রাজ্যের প্রজারাই আজ কোম্পানির প্রতিনিধিদের হাতে নিষ্ঠুর নির্যাতনের শিকার হচ্ছে। অতিরিক্ত কর প্রদান করে তারা সর্বস্বান্ত হচ্ছে। শাসক হয়ে প্রজাদের কুঠিয়ালদের অত্যাচার থেকে রক্ষা করতে পারেন নি বলেই নিজে নিজেকে অভিযুক্ত করে বলেছেন- “আপনাদের বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ জানার বাসনা আমার নেই। আমার নালিশ আজ আমার নিজের বিরুদ্ধে।”

৮. নবাবের প্রতি ক্লাইভের ভয় না থাকার কারণ কী?
উত্তর: ক্লাইভ জানেন পরিষদবর্গের বিশ্বাসঘাতকতার কারণে নবাব শক্তিশূন্য ও অবলম্বনহীন তাই নবাবের প্রতি তাঁর কোনো ভয় নেই।

সতেরো বছর বয়সে ভারতবর্ষে আগত ক্লাইভ ফরাসি এবং মারাঠাদের সঙ্গে যুদ্ধ করে সঞ্চয় করেন প্রকৃত অভিজ্ঞতা সম্মুখ যুদ্ধের চেয়ে নেপথ্য যুদ্ধ যে অনেক কার্যকর তা ধূর্ত ক্লাইভ মনে-প্রাণে বিশ্বাস করেন। পলাশী যুদ্ধে বাংলার নবাব সিরাজউদ্দৌলা তাঁর পরিষদবর্গের ষড়যন্ত্রের শিকারে পরিণত হয়েছে। এজন্যই উৎকণ্ঠায় রবার্ট ক্লাইভ ঘোষণা করেছেন তাঁর নিজের নির্ভয়ের কথা।

৯. ‘আমরা এমন কিছু করলাম যা ইতিহাস হবে।” কথাটির ভাবার্থ কী?
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে ইংরেজ সেনাপতি রবার্ট ক্লাইভের এ উক্তিটি নানা দিক থেকে তাৎপর্যপূর্ণ।

নবাব সিরাজউদ্দৌলাকে সিংহাসনচ্যুত করে বাংলার সিংহাসন করায়ত্ত করতে নিজ নিজ সংকীর্ণ স্বার্থকে বাস্তবে রূপদান করতে সংঘবদ্ধ বিশ্বাসঘাতকদের সবাই ইংরেজদের সাথে সন্ধি করে। সন্ধিপত্রে এক এক করে জগৎশেঠ, মিরজাফর, রাজবল্লভ সবাই স্বাক্ষর দেয়। আর এর দ্বারাই সূচিত হয় বাংলার পরাধীনতার সনদ। এ সনদই শত্রুদের বিজয় বার্তা ঘোষণা করে ১৭৫৭ সালে ২৩ জুন ঐতিহাসিক পলাশীর প্রান্তরে।

১০. ঘসেটি বেগম কেন বলেছেন ‘বসতে আসিনি দেখতে এলাম কত সুখে আছ তুমি।”
উত্তর: নবাব সিরাজউদ্দৌলার কাছে ঘসেটি বেগমের স্বরূপ স্পষ্টভাবে উন্মোচিত হওয়ায় ক্ষুব্ধ ও ক্রুদ্ধ হয়ে তিনি তার ছোট বোনকে উপরি-উক্ত উক্তিটি করেছেন।

নিঃসন্তান ঘসেটি বেগম ছোট বোন আমিনার মধ্যম পুত্র এক্রামউদ্দৌলাকে পোষ্যপুত্র হিসেবে গ্রহণ করে রাজমাতা হওয়ার অভিলাষ ছিল। কিন্তু বসন্তরোগে এক্রামউদ্দৌলার মৃত্যুর সাথে সাথে তার সেই আশা অপূর্ণ থেকে যায়। এছাড়া তার প্রিয় ভাজন সেনাপতি হোসেন কুলী খাঁকে আলীবর্দীর নির্দেশে হত্যা ও তার গতিবিধি পর্যবেক্ষণের জন্য গুপ্তচর নিয়োগ করায় সিরাজের প্রতি তিনি ছিলেন বিরূপ প্রতিহিংসা পরায়ণ। তা কনিষ্ঠ ভগিনীর রাজমাতা হওয়ার সৌভাগ্য ঈর্ষাকাতর ঘসেটি বেগম তার ছোটবোন আমিনাকে এ উক্তিটি করেছেন।

১১. ‘সিরাজ আমার কেউ নয়'- ঘসেটি বেগম কেন একথা বলেছে?
উত্তর: নবাব মহিষী লুৎফুন্নিসার কক্ষে নবাবের খালা ঘসেটি বেগম প্রচণ্ড আক্রোশ, বিদ্বেষ ও অনুশোচনায় নবাবের মা ও স্ত্রীর সামনে এ উক্তিটি করেছিলেন।

ঘসেটি বেগম ছোট বেলায় সিরাজউদ্দৌলাকে স্নেহ, আদর ও কোলে পিঠে করে মানুষ করেছিলেন। নিজের স্বার্থের অন্তরায় হওয়ার কারণে ঘসেটি বেগমের অন্তরে আর কোনো øেহ অবশিষ্ট নেই। তিনি এখন সিরাজের মৃত্যু চান, তিনি তাই ষড়যন্ত্রকারীদের দলে যোগ দিয়েছেন। ঘসেটি বেগমের এ আচরণে তার নিজের ব্যক্তিগত স্বার্থ, লোভ ও হীনম্মন্যতা তীব্রভাবে ফুটে উঠেছে।

১২. ঘসেটি বেগম কেন সিরাজের জন্য দোয়া করতে পারলেন না?
উত্তর: প্রতিহিংসাপরায়ণ ঘসেটি বেগম সিরাজকে কখনো নবাব হিসেবে মনেপ্রাণে মেনে নিতে পারেন নি বলেই সিরাজের জন্য দোয়া করতে পারলেন না।

ঘসেটি বেগম নবাব সিরাজউদ্দৌলার খালা কিন্তু সে নবাবের বিরুদ্ধে গভীর ষড়যন্ত্রে লিপ্ত। নবাব মাতৃস্থানীয়া এ নারীর অর্থসম্পদে হস্তক্ষেপ করেছেন বলে তিনি বিরক্ত। সিরাজের বিরুদ্ধে যুদ্ধে জয় নিশ্চিত করার জন্য শওকত জঙ্গের পেছনে ব্যয় করেছেন অজস্র অর্থ। সিরাজকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলেই ঘসেটি বেগমই সবচেয়ে বেশি খুশি হবেন বলেই লুৎফুন্নিসার প্রতি তিনি বলেছেন এ দোয়া কার্যকর হলে এটি হবে ঘসেটি বেগমের প্রতি আত্মঘাতী।

১৩. ‘তুমিও আমার বিচার করতে বসলে'- সিরাজউদ্দৌলা কেন লুৎফাকে একথা বলেছেন?
উত্তর: নানা ষড়যন্ত্রের শিকার সিরাজউদ্দৌলা যখন তাঁর বিশ্বাসের শেষ আশ্রয় সহধর্মিনী লুৎফার কাছে আসে তখন স্ত্রীর অনুযোগের উত্তর দিতে গিয়ে বিপর্যস্ত নবাব এ উক্তিটি করেছেন।

নবাবের প্রতি তীব্র বিদ্বেষ ও স্বার্থান্ধ ঘসেটি বেগমের সাথে নবাবের উত্তপ্ত বাক্য বিনিময়ের পর নবাব পত্নী স্বামীকে কিঞ্চিৎ অভিযোগের সুরেই ঘসেটি বেগমের মর্মাহত হয়ে ফিরে যাওয়ার কথা বলেন। নবাব স্ত্রীর কাছে বলেন, “আমাকে ক্ষমতাচ্যুত করতে পারলে খালাম্মা খুশি হবেন সবচেয়ে বেশি।” প্রত্যুত্ত্বরে লুৎফা বেগম বলেন, তার সম্পত্তিতে বার বার হস্তক্ষেপ করতে থাকলে ভরসা নষ্ট হওয়ারই কথা। স্ত্রীর এ কথার উত্তর দিতে গিয়েই অভিমানী সিরাজ প্রশ্নোল্লিখিত সংলাপটি করেছেন।

১৪. পলাশীর যুদ্ধে নবাব পক্ষের পরাজয়ের কারণ কী?
উত্তর: রাজ অমাত্যদের ষড়যন্ত্রের কারণেই পলাশীর প্রান্তরে নবাব পক্ষের পরাজয় ঘটেছিল।

পলাশী যুদ্ধে নবাব সিরাজউদ্দৌলার পরাজয়ের মূল কারণ দুটি- প্রথম কারণ, বয়সে তরুণ হওয়ার কারণে সিরাজ রাজনীতিতে অভিজ্ঞ ছিলেন না, এর ফলে তাঁর বিভিন্ন কূটনৈতিক পদক্ষেপ হটকারী হয়েছিল। দ্বিতীয় ও প্রধান কারণ, নবাবের প্রতি বিশ্বাসঘাতকতা। নবাবের প্রধান সেনাপতি মিরজাফর ক্ষমতার লোভে গোপনে ইংরেজদের সাথে ষড়যন্ত্রে লিপ্ত হন এবং যুদ্ধক্ষেত্রে প্রধান সেনাপতির ভূমিকা পালন না করা।

১৫. ফরাসি সেনাপতি নবাবের পক্ষ হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন কেন?
উত্তর: প্রতিপক্ষ ইংরেজদের ঘায়েল করে ব্যবসায়ের জগতে তাদের আধিপত্য বিস্তারের জন্য ফরাসি সেনাপতি নবাবের পক্ষ হয়ে যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেছেন।

ভাগ্যানে¦ষণে আগত ফরাসি বণিকরা এ ভারতবর্ষে এসেছিল নিজেদের ভাগ্য পরিবর্তনের প্রত্যাশায়। ইংরেজদের মতো তাদের মধ্যে এক সময় জেগে ওঠে রাজ্য জয়ের প্রবল ইচ্ছা। ইচ্ছা পূরণের প্রত্যাশায় ইংরেজ বণিকদের সাথে ফরাসিরা যুদ্ধে জড়িয়ে পড়ে। তাই ইংরেজদের ঘায়েল করার উদ্দেশ্যই সেনাপতি নবাব পক্ষের সহযোগী হিসেবে পলাশীর প্রান্তরে সংঘটিত যুদ্ধে অংশগ্রহণ করেন।

১৬. “আমার শেষ যুদ্ধ পলাশীতেই।” উক্তিটি বুঝিয়ে লেখো।
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে নবাবের বিশ্বস্ত সেনাপতি মোহনলাল নবাবের উদ্দেশ্যে এ উক্তিটি করেছিলেন।

মোহনলাল যুদ্ধের ব্যর্থ পরিণতি উপলব্ধি করতে পেরেছিলেন। তাই যুদ্ধক্ষেত্র থেকে আবার আসেন নবাব শিবিরে। তিনি নবাবকে রাজধানীতে ফিরে যেতে উদ্বুদ্ধ করেন এবং নিজে ফিরে যেতে চান যুদ্ধক্ষেত্রে কারণ তার যুদ্ধ তখনো শেষ হয় নি। তিনি জীবিত থাকবেন অথচ শত্রু দ্বারা পরাজিত হবেন- এ বাস্তবতা বীরি সেনাপতির পক্ষে মেনে নেয়া অসম্ভব ছিল।

১৭. যুদ্ধের শেষদিকে মোহনলাল সিরাজকে মুর্শিদাবাদ যেতে বলেন কেন?
উত্তর: শত্রু মোকাবেলায় পুনঃপ্রস্তুতির জন্য যুদ্ধের শেষদিকে মোহনলাল সিরাজকে মুর্শিদাবাদ চলে যেতে বলেন।

মোহনলাল যুদ্ধের ব্যর্থ পরিণতি উপলব্ধি করে শেষদিকে ফিরে আসেন নবাব শিবিরেই তিনি নবাবকে জানান যে, মিরজাফর ইংরেজদের সাথে যোগ দেবার অপেক্ষায় আসেন। এ অবস্থায় নবাব যেন মুর্শিদাবাদ চলে গিয়ে পুনঃপ্রস্তুতি নেন শত্রু মোকাবেলায়। দেশপ্রেমের অনন্য দৃষ্টান্ত স্থাপনকারী মোহনলাল দেশের ভবিষ্যৎ সম্পর্কে উদ্বিগ্ন হয়েই সিরাজকে উদ্ধৃত অনুরোধটি করেছিলেন।

১৮. “গুপ্তচরের কাজ করেছি দেশের স্বাধীনতার খাতিরে।”- রাইসুল জুহালা কেন এ মন্তব্যটি করেছে?
উত্তর: দেশপ্রেমিক রাইসুল জুহালার কাছে নিজ জীবনের চেয়ে দেশ বড়, তাই দেশের স্বাধীনতা রক্ষার্থে উক্ত মন্তব্যটি করেছে। যখন নবাবের বিশ্বস্ত গুপ্তচর ছদ্মবেশি নারায়ণ সিংহকে মৃত্যুদন্ডের আদেশ দিয়েছেন, তখন গুলিবিদ্ধ নারায়ণ বিশ্বাসঘাতকতার দায়ে সিরাজউদ্দৌলার এ সব অমাত্যকে অভিযুক্ত করে বলেছিলেন যে, তাদের বেঈমানী ও মোনাফেকির চেয়ে এ মৃত্যু শ্রেয়। কারণ তিনি মারা যাচ্ছেন দেশের স্বাধীনতার জন্য।

১৯. পলায়নপর জনতাকে উদ্বুদ্ধ করতে নবাব কেন আকুল আবেদন জানান?
উত্তর: পলাশীর যুদ্ধে পরাজয়ের পর মুর্শিদাবাদে উপস্থিত ভীতসন্ত্রস্ত ও পলায়নপর জনতাকে দেশ রক্ষার সংগ্রামে আত্মনিয়োগে উদ্বুদ্ধ করতে নবাব আকুল আবেদন জানান।

নবাব ভীরু ও দ্বিধানি¦ত জনতাকে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে, দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা না গেলে সাধারণ মানুষ অনির্দিষ্ট কালের জন্য দেশদ্রোহী ও বিদেশি দস্যুদের হাতে উৎপীড়িত হতে থাকবে। তিনি অভয়দান করে বোঝাতে চেষ্টা করেন যে পলাশীর যুদ্ধে পরাজয় চূড়ান্ত ব্যর্থতা নয়। এখনই যদি সম্মিলিত জনতা প্রতিরোধ গড়ে তোলে এবং হিতৈষী জমিদারবর্গ যদি প্রতিশ্রুত সেনাদল প্রেরণ করেন তাহলে এদেশের স্বাধীনতা রক্ষা করা সম্ভব।

২০. মুর্শিদাবাদের ভীতসন্ত্রস্ত নাগরিকেরা কেন পালাচ্ছেন?
উত্তর: পলাশীযুদ্ধে নবাবের পরাজয়ের সংবাদ দ্রুত রাজধানীতে পৌঁছে যাওয়ার সাথে সাথে মুর্শিদাবাদের ভীতসন্ত্রস্ত নাগরিকেরা পালানো শুরু করেছে।

নবাবের পরাজয়ের সংবাদ মানুষের মধ্যে দেখা দিয়েছে ভীতি। শহরবাসী অনেকেই নিজেদের মূল্যবান সামগ্রীসহ শহর ছেড়ে চলে যাচ্ছেন। যারা সেনাবাহিনী পুনর্গঠনের জন্য নবাবের কোষাগার থেকে অর্থ গ্রহণ করেছেন তারাও শামিল হয়েছেন পলায়নকারীর দলে। অসহায় নবাবকে ফেলে রেখে তারা একে একে সবাই নবাবের দরবার কক্ষ পরিত্যাগ করে চলে যায়। এ অবস্থায় দু’হাতে মুখ ঢেকে বিপন্ন ও অবসাদগ্রস্তভাবে বসে থাকেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা।

২১. “এই প্রাণদান আমরা ব্যর্থ হতে দেব না।”- উক্তিটির ভাবার্থ কী?
উত্তর: ‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকে এ উক্তিটি করেছেন বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলা।

পলাশীতে যুদ্ধের নামে হয়েছে শুধু প্রতারণা আর অভিনয়। মুষ্টিমেয় দেশপ্রেমিক তাতে প্রাণ দিয়েছে। পুনরায় যুদ্ধ করে জয়ী হয়ে, দেশের স্বাধীনতা রক্ষা করে বীরদের এহেন প্রাণদানকে তিনি অর্থবহ করে তুলতে চান। তাই দেশের জন্য যারা শহিদ হয়েছেন তাদের আত্মত্যাগকে নবাব মহিমানি¦ত করে রাখতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।

২২. ক্লাইভ আসা অবধি নবাব সিংহাসনের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন কেন?
উত্তর: ক্লাইভের প্রতি কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্যের কারণে মিরজাফর কর্নেল ক্লাইভ আসা অবধি সিংহাসনের হাতল ধরে দাঁড়িয়ে থাকেন।

পলাশীর প্রান্তরে সংঘটিত প্রহসনমূলক যুদ্ধে কর্নেল ক্লাইভের নেতৃত্বাধীন কোম্পানির সৈন্যদের সহায়তায় মিরজাফর জয়লাভ করে। সিরাজউদ্দৌলার পতন ঘটলে পূর্ব প্রতিশ্রুতি অনুসারে ক্লাইভ মিরজাফরের সিংহাসনে আরোহণ নিশ্চিত করেন। মিরজাফর সিংহাসনে আরোহণ উপলক্ষে আয়োজিত সভায় অমাত্যবর্গের সামনে ক্লাইভের অনুপস্থিতিতে দাঁড়িয়ে থাকেন। তিনি কৃতজ্ঞতা ও আনুগত্যে বিগলিত ক্লাইভের প্রতি নিজের ঋণ সর্ব সমক্ষে ঘোষণা করেন এবং মসনদে বসতে হলে ক্লাইভের হাত ধরে বসার মনোবাসনা ব্যক্ত করেছেন।

২৩. “ইনি কী নবাব না ফকির।” মিরজাফর সম্বন্ধে ক্লাইভের এ উক্তির কারণ কী?
উত্তর: কর্নেল ক্লাইভ দরবারে প্রবেশ করে নতুন নবাবকে দাঁড়িয়ে থাকতে দেখে বিস্মিত হন এবং ব্যঙ্গ করে বলেন ইনি কী নবাব না ফকির।

বাংলার শেষ স্বাধীন নবাব সিরাজউদ্দৌলার পতনের পর পূর্ব চুক্তিমতো নবাব হন বিশ্বাসঘাতক ক্ষমতালোভী মিরজাফর। রাজ দরবারে এসে মিরজাফর সিংহাসনে না বসে সিংহাসনের হাতল ধরে কর্নেল ক্লাইভের জন্য অপেক্ষা করতে থাকেন। তখন নতুন বিশ্বাসঘাতক নবাবকে দেখে ক্লাইভ উপরি-উক্ত উক্তিটি করেছিলেন।

২৪. উমিচাঁদ মিরজাফরকে খুন করে ফেলার কথা কেন বলেছিলেন?
উত্তর: প্রতারিত উমিচাঁদ চুক্তির অর্থ না পেয়ে উন্মাদের মতো উপর্যুক্ত কথা বলেছেন।

উমিচাঁদ নবাবের বিরুদ্ধাচরণ এবং ইংরেজদের সাহায্য করতে এ শর্তে রাজি হয়েছিলেন যে নবাব সিরাজের পতন হলে তাকে ২০ লক্ষ টাকা অর্থ পুরস্কার দেয়া হবে। লর্ড ক্লাইভের সঙ্গে তার এ চুক্তি হয়েছিল। কিন্তু পরে ক্লাইভ এ চুক্তির টাকা প্রদান করতে অস্বীকৃতি জানায়। তখন উমিচাঁদ উন্মাদের মতো বলেছিল ম্যাড বানিয়েছ এখন খুন করে ফেল।

HSC সিরাজউদ্দৌলা নাটক অনুধাবনমূলক প্রশ্ন ও উত্তর (বাংলা সহপাঠ)

২৫. মিরন সিরাজকে মোহাম্মদি বেগকে দিয়ে হত্যা করিয়েছিল কেন?
উত্তর: মদ্যপ ও নারীলোলুপ মিরন সিরাজের পত্নী লুৎফুন্নিসাকে পাওয়ার জন্য মোহাম্মদি বেগকে দিয়ে সিরাজকে হত্যা করিয়েছিল।

অন্ধকার কারাকক্ষে হতভাগ্য নবাব যখন সামান্য আলোর পরশ পেতে লুৎফা ও বাংলার মানুষের জন্য শুভ কামনা করছিলেন তখন মিরন মোহাম্মদি বেগকে নিয়ে কারাকক্ষে প্রবেশ করে। মিরনের ধারণা সিরাজকে সরিয়ে দিলেই লুৎফাকে সে পাবে। কিন্তু শেষ পর্যন্ত তার এ আশা নিরাশায় পরিণত হয়।

২৬. মোহাম্মদি বেগ সিরাজকে হত্যা করবে, এ কথা সিরাজের কাছে কেন অবিশ্বাস্য মনে হয়েছিল?
উত্তর: শৈশবে অনাথ মোহাম্মদি বেগকে সন্তান স্নেহে লালন- পালন করেছিলেন সিরাজের পিতা- মাতা, ঐ স্নেহের ঋণের কথা স্মরণ করে সিরাজের মনে হয়েছিল মোহাম্মদি বেগ তাকে হত্যা করবে না।

ঘাতক মোহাম্মদি বেগ কারাকক্ষে বন্দি সিরাজের দিকে লাঠি হাতে এগিয়ে আসতে থাকলে সিরাজ যুগপৎ ভীতি ও বিমূঢ় হয়ে পড়েন। মোহাম্মদি বেগের মতো ব্যক্তি, যে শৈশব থেকে উপকার পেয়েছে সিরাজের পিতা- মাতার কাছ থেকে, সে সিরাজকে হত্যা করতে আসবে এটি তাঁর কাছে অবিশ্বাস্য বলে মনে হয়েছিল।

২৭. “সে নবাবি পেলে প্রকারান্তরে আপনারাইতো দেশের মালিক হয়ে বসবেন”- উক্তিটি বুঝিয়ে দাও।
উত্তর: সিকান্দার আবু জাফর বিরচিত ‘সিরাজউদ্দৌলা' নাটকের উদ্ধৃত উক্তিটি করেছিলেন নবাবের বড় খালা ঘসেটি বেগম।

সিরাজউদ্দৌলাকে ক্ষমতাচ্যুত করে শওকত জঙ্গকে নবাব বানালে জগৎশেঠ তার প্রাপ্তি সম্পর্কে দ্বিধাহীন হতে পারে না। তাই ষড়যন্ত্রকারীদের নেতৃত্বদানকারী ঘসেটি বেগমের কাছে সে জানতে চায়। “শওকত জঙ্গ নবাব হলে আমি কী পাব আমাকে পরিষ্কার করে বলুন।” জগৎ শেঠের প্রশ্নের উত্তরেই ঘসেটি বেগম আলোচ্য মন্তব্যটির অবতারণা করেছিলেন।

২৮. কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটস্কে সিরাজ কেন অভিযুক্ত করেছেন?
উত্তর: কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটস্কে সিরাজউদ্দৌলা প্রজাদের ওপর নিষ্ঠুর আচরণ ও অত্যাচারের অভিযোগে অভিযুক্ত করেছেন।

জনৈক প্রজা অল্পমূল্যে কোম্পানির প্রতিনিধির কাছে লবণ বিক্রি না করায় কোম্পানির লোকজন তার বাড়ি ঘর জ্বালিয়ে দিয়েছে পাঁচ ছয়জন মিলে তাঁর সন্তানসম্ভাবা স্ত্রীকে অত্যাচার করে হত্যা করেছে। অত্যাচার আর নিষ্ঠুরতার এ বিবরণ শুনে নবাব সভা ডেকে কোম্পানির প্রতিনিধি ওয়াটসের কাছে অভিযোগ উত্থাপন করেছেন।

২৯. দরবারে মিরজাফরের উপস্থিত হতে বিলম্ব দেখে অমাত্যরা কৌতুক করেছিলেন কেন?
উত্তর: দরবারে মিরজাফরের উপস্থিত হতে বিলম্ব দেখে অমাত্যরা অধৈর্য হয়ে কৌতুক করেছিলেন।

পলাশীর ষড়যন্ত্রমূলক যুদ্ধে জয়লাভ করে মিরজাফর বাংলার মসনদের অধিকারী হয়েছেন। ষড়যন্ত্রের হোতা প্রায় সকলেই মিরজাফরের দরবার কক্ষে উপস্থিত হয়েছেন। ক্লাইভ তখনও দরবারে এসে পৌঁছান নি, অন্যদিকে দরবার কক্ষে প্রবেশে বিলম্ব ঘটছে নতুন নবাবের। অধৈর্য অমাত্যরা এ সুযোগে কৌতুক আলাপে লিপ্ত হয়ে পড়েন।

৩০. ‘কেউ নেই. , কেউ আমার সঙ্গে দাঁড়াল না লুৎফা।' লুৎফার কাছে সিরাজের এ আকুতির কারণ কী?
উত্তর: আপদকালে বিপন্ন নবাবের কাছে কেউ না দাঁড়ালে হঠাৎ প্রকাশ্য দরবারে লুৎফার আগমনে হতাশ, বিহবল ও নিঃসঙ্গ নবাব এ আকুতি করেছেন।

রাজধানী রক্ষার জন্য সংগ্রামে ঝাঁপিয়ে পড়ার উদাত্ত আহবান উপেক্ষা করে দরবারে সমাগত নাগরিকবৃন্দ নবাবকে ফেলে রেখে একে একে চলে গেছে। হাতে মুখ ঢেকে হতাশাবিহবল নিঃসঙ্গ নবাব দরবারে নিজ আসনে বসে আসেন। এ সময়েই প্রথা লঙ্ঘন করে প্রকাশ্য দরবারে উপস্থিত হয়েছেন নবাবের সহধর্মিনী লুৎফুন্নিসা। বিপদে বিপন্ন নবাবের পাশে কেউ দাঁড়াল না তখন সেখানে আকস্মিকভাবে লুৎফার আগমনে নৈঃসঙ্গ্যপীড়িত নবাবকে করেছে সচকিত।

৩১. ‘লোকবল বাড়ুক আর না বাড়ুক আহার্যের অংশীদার বাড়ল তা অবশ্যই ঠিক।' হ্যারী একথা বললেন কেন?
উত্তর: নবাব সৈন্য কর্তৃক তাড়া খেয়ে ভাগীরথী নদীতে ভাসমান জাহাজে বসে নিজেদের চরম দুরবস্থা এবং আহার্যের অভাব প্রসঙ্গে মার্টিন ও ড্রেককে উদ্দেশ্য করে হ্যারী আলোচ্য উক্তিটি করেছেন।

জাহাজে অবস্থানরত কোম্পানির সৈন্যদের এ দুরবস্থার মধ্যেও মাদ্রাজ থেকে ফিরে এসে কিলপ্যাট্রিক সংবাদ দিয়েছে নবাবের বিরুদ্ধে যুদ্ধ করার জন্য সেখান থেকে বেশ কিছু সৈন্য শীঘ্রই জাহাজে করে কলকাতায় পৌঁছাবে।। একথা শুনে ড্রেক ব্যতীত কেউ খুশি হতে পারে নি। যে কজন সৈন্য আসবে, তারা আদৌ কোনো লোকবল বৃদ্ধি করবে না। বরং উল্টো তারা খাদ্য সংকট সৃষ্টি করবে। এ সংলাপের মাধ্যমে ইংরেজদের দুরবস্থার স্বরূপ এবং হ্যারীর মননশীল কৌতুক পরিচয় একসঙ্গেই পাওয়া যায়।

No comments:

Post a Comment